#অপরাজিতা
#শারমিন_প্রিয়া
#পর্ব_পাঁচ
গ্রামের ফাঁকা রাস্তা। মানুষজনের চলাচল কম।রোশান আমার হাত ধরে মিনতি করছিল, “দয়া করে আরেকবার ভাবো।”
ভাই প্রচণ্ড রাগে রোশানের হাত টেনে সরিয়ে দিল।আমিও রোশানকে সাবধান করলাম, “আরেকবার যদি আমাকে আটকাতে আসো বা পিছু নাও, তাহলে চিৎকার করে গ্রামের মানুষ জড়ো করব। যেতে দাও প্লিজ!”
রোশান মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
আমি আর ভাই বাজারে এসে পৌঁছালাম। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করতে লাগলাম। এখান থেকে শহরে গিয়ে টিকিট কেটে তারপর বাসে উঠতে হবে।
ভাই এক বোতল পানি এনে দিয়ে বলল, “মুখ ধুয়ে নে।”
চোখের পানি মুছতে মুছতে ওড়না, জামা সব ভিজে গেছে আমার। মুখ ফোলা। তাও শুকরিয়া, এত বড় ধোঁকা খাওয়ার পরও আমি এখনো ঠিকঠাক আছি।
চোখেমুখে পানি দিলাম। একটু পানি খেলাম।
ভাই বলল, “চল, হোটেলে গিয়ে কিছু খেয়ে নিই।” আমি বললাম, “না, আমার খাওয়ার ইচ্ছা নেই। তুমি খেয়ে নাও।”
বিশ মিনিটের মতো কেটে গেল, কোনো বাস এলো না।ভাই তখন প্রাইভেট গাড়িতে যেতে চাইল। ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলল, কিন্তু কেউ যেতে রাজি নয়। তারা বলে, “রাত বারোটার কাছাকাছি, এত রাতে কেউ শহরে যাবে না। বাসও আর আসবে না।”
মহা বিপদে পড়ে গেলাম।চুপচাপ বসে থাকলাম। ভাইও চুপ করে বসে রইল। ভাবলাম, ওই বাড়িতে আর কোনোদিন ফিরব না।
রোশানের সামনে আর কোনোদিন দাঁড়াব না।
প্রয়োজন হলে এই বাজারেই সারারাত কাটিয়ে দেবো।
শেষ রাতের অনেক পথচারীরা আমাদের দেখে তাকাতে লাগল। অনেকে বলল, “এত রাতে এভাবে বাজারে থাকা ঠিক না। দিনকাল ভালো না।”
সত্যি তো, অচেনা অজানা একটা জায়গায় এভাবে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগছে।
ভয়ও করছে খানিকটা। কে জানে, সামনে আর কী বিপদ অপেক্ষা করছে। সময়ের উপর বিশ্বাস নেই এখন আর।
হঠাৎ মনে পড়ল, বাসে দেখা মেয়েটার কথা।
অদ্ভুত লাগল। মেয়েটা কি আগে থেকেই জানত আমি বিপদে পড়ব?জেনেশুনে নাম্বার দিয়েছিল?সে যাই হোক, এখন নিজের নিরাপত্তা জরুরি। রাতটা কাটানো দরকার।ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিলাম—কল করি।
দু’বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে নিভু নিভু কণ্ঠে উত্তর এলো,
“হ্যালো? কে?”
ইতস্তত করতে করতে বললাম, “আমি… ওই যে সকালে বাসে দেখা হয়েছিল…”
মেয়েটা বুঝি লাফিয়ে উঠল। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল, “জ্বি, জ্বি বলুন! একরাতে কল? কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“হ্যাঁ আপু, হয়েছে।স্বামীর সঙ্গে রাগারাগি হয়েছে। রাগ করে চলে এসেছি।এখন বাস পাচ্ছি না। রাতটা… কি আপনার বাসায় থাকা যাবে?”
“কেন নয়? অবশ্যই।
আপনারা এখন কোথায় আছেন?”
“কালিগঞ্জ বাজারে।”
“একটু ওয়েট করুন, আমি একটা গাড়ি পাঠাচ্ছি। চলে আসবেন।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ আছে, নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করার মতো মানুষ।
পনেরো মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌঁছালাম মেয়েটার বাড়ি। পুরো বাড়িটি দেয়ালঘেরা, বড় গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। মেয়েটি হাসিমুখে এগিয়ে এলো। বাসে ওর নেকাব ছিল, তাই মুখ দেখা হয়নি। এখন দেখলাম—ভীষণ মিষ্টি চেহারা।
ঘরে উঠতেই বেলিফুলের তীব্র ঘ্রাণ নাকে এলো।
চোখ ঘুরিয়ে দেখি, উঠোনজুড়ে নানা রকম ফুলের গাছ।বাহ্! কী সুন্দর পরিবেশ! রুচিশীল মানুষ বটে!
মেয়েটি বলল, ” ফ্রেশ হয়ে নিন, আপনারা।”
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো। ম্লান হেসে বললাম, “এসবের কী দরকার ছিল?”
“চুপচাপ খেয়ে নিন। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, খাওয়া হয়নি।”
আমরা খেলাম।খুব ক্ষুধা পেয়েছিল। পেট ভরে খেলাম। মেয়েটা পাশে বসে নিজ হাতে তরকারি তুলে দিচ্ছিলো।
খাওয়া শেষ হলে ভাইকে এক রুমে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলো। আমাকে বলল, “আপনি চাইলে আলাদা রুম দেবো, আবার চাইলে আমার সাথেও ঘুমাতে পারেন।”
আমি কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলাম, “এত বড় বাড়ি, এতগুলো রুম… কিন্তু কাউকে তো দেখলাম না! আপনি ছাড়া আর কেউ নেই?”
হেসে বলল, “এটা আমার শ্বশুরবাড়ি। আমরা চার-পাঁচজন থাকি।গতকাল সবাই বেড়াতে গেছে।এখন বাড়িতে আমি আর আমার ছেলে।
ও বিবাহিত শুনে চমকালাম। তার উপর আবার ছেলেও আছে। দেখে কখনও ভাবিনি বিবাহিত।
আমি জানি সারারাত আমার ঘুম হবে না। কেঁদেই কেটে যাবে সারারাত। তাই আমার সুবিধার জন্য তাকে বললাম, ‘এক্সট্রা রুম থাকলে সেখানে আমাকে জায়গা দাও, আপু।’ সে আমার কথামতো তাই করলো, জায়গা গুছিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো। আমি ডেকে বললাম, ” তোমাকে যে শুরু থেকে তুমি তুমি করে বলছি কিছু মনে করছো নাতো? আসলে সেম বয়সের মনে হচ্ছিল তাই তুমি করে বলা। আর এখন মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে ছোটই হবে।”
সে হেসে বলল, “না, না। কোন সমস্যা নাই।”
ভালো লাগলো তাকে। কি কেয়ারিং মেয়েটা!
তবে আশ্চর্য লাগলো একটা ব্যাপার, এতরাতে তার বাড়িতে আসলাম, সে জানে স্বামীর সাথে রাগ করে এসেছি। তবুও একবারও প্রশ্ন করলো না, কি ঝামেলা বা কি হয়েছে যে এতরাতে চলে যেতে চাচ্ছিলাম? সামান্য কাজলের জন্য যার এত কৌতূহল, এতবড় বিষয়ে তার কোন কৌতূহল নেই। কেমন যেন বেমানান বিষয়টা।
চিন্তাভাবনা এক সাইডে দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ঘুম আসে না। ব্যর্থ আমি। বারবার ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়ছে। চোখে ভাসছে। কি করে মানুষ এভাবে ঠকায়? ঠকাতে পারে? আমার জীবনেই বা কেন এত কিছু ঘটছে। সব ভুল মানুষে ভরা জীবন। নিজেকে নিজের কাছে অসহ্য লাগতে লাগল। মুখে কাপড় গুজে চিৎকার করতে লাগলাম। রোশানকে যদি শুধু বিয়ে করতাম, তবে এমনটা লাগতো না। তাকে তো আমি ভালোবেসেছি, মায়ায় পড়েছি তার, যার কারণে ভেতরটা একদম ছিড়ে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত পাগল হয়ে যাব। নয়তো মরে যাব। আমি এ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারব না।
ফোন বেজে উঠলো, রোশান কল করেছে, অনেক আগে থেকেই কল মেসেজ করেই যাচ্ছে সে। আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই কথা বলার, বরং কল দেখলে যন্ত্রণা বাড়ছে হুড়মুড় করে। তার নাম্বার ব্লক লিস্টে রাখলাম। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক নির্মম রাত পার করলাম আমি। অপেক্ষায় ছিলাম ফজর হওয়ার। একটু দিনের আলো ফুটতেই ভাইকে ডেকে তুললাম। মেয়েটা দেখি নাস্তা বানিয়ে হাজির। ফ্রেশ হয়ে খেলাম। বললাম, “তুমি এত কষ্ট করছো কেন? আমরা বাহিরে নাস্তা করে নিতাম।” সে মুচকি হাসি ছাড়া আর কিছু বলল না।
জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার নাম কি? নামটাই তো জানা হয়নি।”
“জাকিয়া।”
“সুন্দর নাম।”
আমরা বের হওয়ার সময় তার ছেলে উঠলো ঘুম থেকে। কি কিউট ছেলেটা! কি সুন্দর করে হাঁটে। আমি একবার কোলে নিলাম তাকে। চুমু খাই। আসার সময় তার হাতে টাকা দু’হাজার দিয়ে আসি। জাকিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। বলে আসি, ‘তুমি আমার ওখানে একবার যাবে, তোমার স্বামীকে নিয়ে, কেমন?’
বাস পেয়ে সকাল সকাল দ্রুত চলে আসি কাউন্টারে। টিকেট কাটার ঘণ্টা দুয়েক পর গাড়ি আসে। উঠে বসি। শরীর একদম ছেড়ে দিয়েছে, সিটে মাথা হেলিয়ে দিলাম। যত আগে বাড়ি গিয়ে পৌঁছাবো, তত শান্তি পাব, এমনটাই মনে হচ্ছে। মা-বাবা, বাড়ির সবাই কাল থেকে কল দিচ্ছে, তাদেরকে ভালো ভালো বলতেছি। ঝামেলা যে হচ্ছে সেটা আর শুনাচ্ছি না। লজ্জা লাগছে ভীষণ, কি করে বাড়ি গিয়ে সবাইকে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলব। আমার কপালটাই কেন এত খারাপ হতে গেলো? মেসেজের টুংটাং শব্দে ফোনে চোখ বুলাই, জাকিয়ার নাম্বার থেকে মেসেজ, লম্বা লেখা। আগ্রহ নিয়ে পড়তে লাগলাম। মেয়েটা আমাকে কি লিখতে পারে।
সে লিখেছে, ‘আপনি কি জানেন? আমি রোশানের স্ত্রী? প্রথম স্ত্রী। আমি আপনার বিষয়ে জানতাম না। গতকালই জানি আপনার মুখে সব কথা। পরে ননদের থেকে এক প্রকার ব্ল্যাকমেইল করে সব শুনি। খারাপ লাগা স্বাভাবিক, আমারও লাগছে। আমি গ্রাম্য মেয়ে, অত শিক্ষিত না। বাবা ও অত বড়লোক না। ভাগ্য করে এ বাড়িতে বিয়ে হয়েছে আমার। এই সংসার, এই বাড়িঘর সব আমার। হঠাৎ রোশানের অন্য বউ হাজির হলে আমি তার জন্য সব ছেড়ে দিতে পারি না। স্বার্থপর মেয়েরা অনেক আছে, যারা নিজের ভালো বুঝে। আমিও তাদের দলে। আমি আমার স্বামীকে সবকিছু থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করব। আমি ছেড়ে দেবো না তাকে। আমি তাবিজে বিশ্বাস করি। শীঘ্রই বড় হুজুর ধরে তাবিজ করে রোশানের মন থেকে আপনাকে ভুলাব। আপনাকে মন থেকে মুছে ফেলব। আমার প্রতি আকৃষ্ট করাব। আপনিও দূরে থাকবেন। কাছে আসতে চাইলে কষ্ট পাবেন, কিন্তু রোশানকে পাবেন না।”
মেসেজটা পড়ে থম মেরে গেলাম আমি। মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। মেয়েটা রোশানের বউ! তার বাড়িতে রাতে থেকেছি! সব জানতো মেয়েটা, অথচ কিছু বলেনি। কি ডেঞ্জারাস মেয়ে! কি খারাপ চিন্তাভাবনা। ছিঃ, ঘিন্না লাগতে লাগলো মেয়েটার উপর ও। সে সুন্দর করে মেসেজটা লিখতে পারত। ঝুম মেরে বসে রইলাম। কিছু চিন্তা করার শক্তি আর নেই। জীবন আমাকে এত অভিজ্ঞতা না দিলেও পারতো।
পুরো ১৩-১৪ ঘণ্টার জার্নি করে বাড়ি এসে পৌঁছালাম। সবার একি প্রশ্ন, ‘গিয়েই চলে আসলাম কেন?’ আমি সোজা রুমে গেলাম। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমার গলা আটকে যাবে, কেঁদে ফেলব। ভাই বলতে শুরু করল, তার কণ্ঠ আগুন। সে বলছে, ‘সবাই শুনছে।’ আর আমি রুমে বসে কাঁদছি। কতক্ষণ যে এভাবে রুমের ভেতরে থাকলাম, ঠিক নাই। কেউ খেতেও ডাকে নি। একবার এসে পাশেও বসেনি আমার। পুরো ঘরে কারোর মুখে তেমন কোন কথা নেই। দুই দিনের ঘুমহীন আমি। কি করে যে হঠাৎ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম, টের পাইনি।
ঘুম ভাঙে সকাল দশটায়। উঠে দাঁড়াই। শরীরটা ফ্রেশ লাগছিল। ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিলো আমার সাথে কিছুই হয়নি কখনও। সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু আবার মনে পড়ল। মাথা ঘুরাতে লাগল। বসলাম বিছানায়। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগলো, বাড়ির একটা মানুষ আমার খোঁজ নেয়নি কেন। না খেয়ে ঘুমালাম। আমার সাথে বাজে কিছু ঘটলো, তারপরেও কেউ কথা বলার জন্য আমাকে ডাকলো না। উঠে বের হলাম ঘর থেকে, মাকে বসা দেখলাম উঠোনে। রান্নাঘরে ঢুকে আগে ভাত নিলাম। খিদের জ্বালায় মরে যাচ্ছি। খেতে খেতে ভাবি ডুকলেন। জিজ্ঞেস করলাম, “আমার সাথে কেউ কথা বলছে না কেন, ভাবি? তুমিও বলছো না।”
ভাবি বলল, “কি আর বলব? যা যা হচ্ছে, কিছু বলার আছে?”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। খাওয়া শেষে মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। ডাকলাম, “মা, কথা বলছো না কেন কাল থেকে?” মা তাকালেন একবার আমার দিকে। আমি কিছু বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। কেঁদে কেঁদে বললাম, “মা, রোশানকে ছাড়ব না একদম। হাজতের ভাত খাইয়ে ছাড়ব। বাবা কোথায়? বাবাকে নিয়ে এখনই থানায় যাব।”
“কতজনকে থানায় নিবি আর? তোর সাথেই কেন এতসব ঘটে? ক্লান্ত আমরা।”
ধাক্কা খেলাম মায়ের কথায়। চোখ মুছে বললাম, “এমন করে বলছো কেন মা?”
“আগে একটা ঘটনা ঘটলো তোর সাথে। এখন আবার। একটু পরে মানুষ জানাজানি হলে থু দেবে আমাদের মুখে। মুখ লুকানোর জায়গা পাব?”
মায়ের কথায় ধাক্কার পর ধাক্কা খেতে লাগলাম আমি। হৃদপিণ্ড কাঁপতে লাগল। মা, এসব কি বলছেন। প্রশ্ন করলাম, “এসবের জন্য তুমি আমাকে দোষী করছো কেন মা?”
“বাড়ির সব মেয়েরা তো সুন্দরভাবে সংসার করছে। তোর কোন সংসার ঠিকে না কেন? এই সংসার ঠিকিয়ে রাখ। রোশানের আগের বউ আছে, তবু তো সে তোকে ছেড়ে দিতে চায়নি। সে তো বলেছে তার সাথে থাকতে। রোশানের সাথে কোন মামলা করার দরকার নাই। এইতো, তোরা বাহিরে যাবি, ওখানে গিয়ে সংসার কর। আগেকার কত মানুষ একসাথে দুই বউ ছিল, এখনও আছে।”
“পাগল হইছো মা। আমি থাকতে পারব না। কোন দিক দিয়ে আমার কমতি আছে যে, বউ থাকাস্বতেও থাকব। আমি পারব না।”
মা বড়বড় চোখ করে তাকালেন আমার দিকে, “সবদিক দিয়ে এত পরিপূর্ণ তুই, তাহলে সবাই এত ঠকায় কেন তোকে? শেষ কথা শুন, রোশানের সাথে সম্পর্ক ভাঙনের কোন দরকার নাই। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তোর বাবা ও বলেছে। তার বউ তার বাড়িতে থাকুক। তুই থাকবি বিদেশে। কোন ঝামেলা হবে না।”
“আমি পারব না। আমি তাকে ডিভোর্স দেবো। বেইমান একটা। এসব বেইমানের সাথে থাকা সম্ভব না আমার। আমি দম আটকে মরে যাব।”
“তাহলে এই বাড়িতেও তোর জায়গা নেই।”
কিহ্? বলে পিছু হটলাম আমি। মায়ের কি হলো? তখন থেকে কিসব বলে যাচ্ছেন আমাকে। আরও অনেক কথা কাটাকাটি হলো মায়ের সাথে। এই প্রথম মায়ের সাথে আমার ঝগড়া হলো। মায়ের সাথেও যে মেয়েদের ঝগড়া হয়, সেটা আমি বুঝতামই না। আজ এই মুহুর্তে বুঝলাম।
মায়ের সাথে কথা বলার একবিন্দু শক্তি নাই আমার। মায়ের এসব কথায় আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে আমার আর আপন কেউ নেই। কেঁদে কেঁদে ঘরে ডুকলাম। মায়ের নির্মম কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো। এতদিন যা যা কষ্ট পেয়েছি, তারচেয়ে সবচেয়ে বেশি আঘাত পাচ্ছি মায়ের কথাগুলো ভেবে। মায়েরা তো আপন হয়, তবে কেন যখন আমার পাশে দাঁড়ানোর কথা তখন আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছেন? তবে কি মেয়েরা একসময় মা-বাবার কাছে বোঝা হয়ে যায়?
চলমান…….!