অপরাজিতা পর্ব-১৩+১৪

0
313

#অপরাজিতা
#১৩তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

রাজিতার চাচার বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেলো।সারারাস্তা রাজিতা আনানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। আনান ভাবে যে, এই মেয়েটা যে এত দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারে!

রাজিতারা ডিনার করে ফিরলেও এইটুকু আসতে আসতে রাজিতার আবার ক্ষুধা লেগে গিয়েছে। কিন্তু লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না। সবাই ভাববে, কি পেটুক মেয়েরে বাবা! খেয়ে আসতে না আসতেই আবার খেতে বসে!
রাজিতার চাচি আনানের মা-বাবার জন্য খাবার দিয়ে দিয়েছে। উনাদেরও যেতে বলেছিলো, কিন্তু নতুন আত্মীয় বাড়ি বলে উনারা যেতে রাজি হয়নি।

আনান আজ তাড়াতাড়ি-ই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ কোনো একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোনটা নিয়ে ঘড়িতে দেখলো যে, রাত তিনটা বাজে। ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানার অপরপাশে হাত দিতেই দেখে যে, সেখানে রাজিতা নেই।

এতরাতে মেয়েটা কোথায় যেতে পারে! নিশ্চয়ই বাথরুমে! এটাভেবে চোখ বুজতে যাবে তখন ওর পায়ের দিক থেকে একটা আলো এসে চোখে পড়ল। আনান উঠে বসে ওদিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।
ফোনের লাইট জ্বালিয়ে চেয়ারে বসে বসে রাজিতা কিছু একটা খাচ্ছে। আনান ওর পাশে গিয়ে দাড়ালো কিন্তু রাজিতার সেদিকে কোনো নজর নেই। ও একমনে আইসক্রিম খেয়েই যাচ্ছে।
আনান রাজিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,
–“এতরাতে কারা খায় জানো?”
হঠাৎ কানের কাছে কারো আওয়াজ শুনতে পেয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠল রাজিতা আর ওর হাতে থাকা আইসক্রিমের বাটিটা মেঝেতে পড়ে গেলো।
রাজিতা চেঁচাতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আনান একহাতে ওর মুখ চেপে ধরে আস্তে করে বলল,
–“আরে আমি! ভয় পেওনা। তুমি মাঝরাতে উঠে ভুতের মতো বসে-বসে আইসক্রিম খাচ্ছো। তোমাকে দেখে আমার ভয় পাওয়ার কথা! সেখানে তুমি উল্টো ভয় পাচ্ছো?”
কথাগুলো বলেই আনান রাজিতার মুখ ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাড়ালো। আনানকে সামনে দেখে লজ্জায় রাজিতা আমতা-আমতা করে বলতে লাগলো,
–“আসলে… আসলে আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছিল…তাই…”
রাজিতার এমন করে কথা বলতে দেখে আনান হাসতে হাসতে বলল,
–“মাঝরাতে ক্ষুধা পেয়েছে? নাকি ক্ষুধা নিয়েই ঘুমিয়েছিলে?”
রাজিতা এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলো,
–“ক্ষুধা আগেই পেয়েছিল। তবে..”
–“ক্ষুধা লেগেছিল, খেয়ে তারপর ঘুমাতে।”
–“আসলে আমরাতো ডিনার করেই এসেছিলাম। তাই..”
–“ডিনার করেছো বলে আবার ক্ষুধা লাগলে খাবে না? শোন, এটাই এখন তোমার নিজের বাসা। সো, কোনোকিছু নিয়ে হেজিটেশন করবে না। যখন যেটা করতে মন চায়, সেটাই করবে। মাতো এমনি-এমনি বাসা নেওয়ার কথা বলছে না! তোমার এই কান্ডের কথা শুনলে কালকেই বাসায় পাঠিয়ে দিবে! ভাববে উনারা থাকে জন্য তুমি ফ্রি হতে পারো না!”
রাজিতা তাড়াতাড়ি করে বলল,
–“আরে মাকে একদম এসব কথা জানাবেন না কিন্তু! উনি কি ভাববেন!”
–“আর তুমি রাতে খেয়ে ঘুমালে কি ভাবতো! আমার মাকে তোমার ওমন মনে হয়?”
–“আরে না। আচ্ছা ঠিক আছে, নেক্সট টাইম আর এমন ভুল হবেনা।”
আনান আরেকটা চেয়ার টেনে রাজিতার সামনে বসে বলল,
–“এতরাতে তুমি আইসক্রিম কেন খাচ্ছিলে?”
–“কি খাবো ভাবতে ভাবতে ফ্রিজের আইসক্রিম চোখে পড়ল। তাই খাওয়া শুরু করলাম।”
–“কেন? ফ্রিজে কি খাওয়ার মতো আর কিছু ছিলো না?”
–“ছিলো, তবে আইসক্রিম থাকতে অন্যকিছু খাওয়ার কথা ভাবি কি করে!”
–“আইসক্রিম এত প্রিয়?”
–“হুম।”
–“আমাকে বললেই পারতে।”
–“আপনাকে বললে কি হতো?”
–“আরো অনেক আইসক্রিম এনে রাখবো। ওটাতো মে বি শিমুলের জন্য এনেছিল বাবা। ও মাঝেমধ্যে এসেই আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরে।”
–“ইশ! আমি বাচ্চা ছেলেটার আইসক্রিম খেয়ে ফেললাম! আপনি কাল সকালেই আবার আইসক্রিম এনে রাখবেন। বাবা জানতে পারলে…”
–“বাবা জানতে পারলে আরো বেশি করে এনে রাখবেন, দুই বাচ্চার জন্য!”
বলেই আনান হাসতে লাগল। তারপর দুজনেই গিয়ে শুয়ে পড়ল। আনান রাজিতার মাথাটা নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
–“আমার রুমেই দেখছি একটা ফ্রিজ এনে রাখতে হবে।”
–“কেন?”
–“আমার বউ যদি রাত-বিরেতে রুমের বাইরে গিয়ে খাবার খোঁজে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না! রুমে ফ্রিজ থাকলে যখন যেটা খুশি নিয়ে খাবে!”
–“রুমে ফ্রিজ আনলে সবাই কি ভাববে! ”
–“কে কি ভাববে! মায়ের রুমেওতো একটা ফ্রিজ আছে। আমাদের রুমে থাকলে সমস্যা কি!”
–“মায়ের কথা আলাদা। বয়স হয়েছে! ”
–“আচ্ছা, বাদ দাও, ঘুমাও। কালতো তোমার সকালে ক্লাস৷ ”

ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাজিতাকে নিয়ন কল করছিল। কিন্তু আনান সাথে থাকায় রাজিতা ধরেনি। ওর চাচি আনানের মনে নিয়নকে নিয়ে যে সন্দেহের বীজ বুনে দিয়েছে তা অঙ্কুরিত হতে দেওয়া যাবেনা। ওর জীবনের এত ভালবাসাগুলো ও কোনো প্রকারেই হারাতে চায়না!

গাড়ি থেকে নামার পর রাজিতা ক্লাসে ঢুকেই নিয়নকে কল করল। নিয়ন কল ধরে বলল,
–“কেমন আছিস? কল ধরছিলি না কেন?”
–“না মানে, রাস্তায় ছিলামতো। তাই ধরতে পারিনি। আমি ভালই আছি। আপনি কেমন আছেন?”
–“আমিও ভালো আছি। আবার কোনো ঝামেলা হয়নিতো? তুই আমার সাথে কথা বলতে চাস না কেন? আমি কোনো ভুল করেছি?”
–“না ভাইয়া। আসলে ক্লাসের অনেক প্রেশারতো তাই আর কি!”
–“রিমির কাছেতো আনানের অনেক প্রশংসা শুনলাম। তোর মুখ থেকে কিন্তু এখনো কিছু শুনিনি! নাকি নিজের স্বামীর প্রশংসা করতে মানা!”
রাজিতা একটু হেসে বলল,
–“রিমিতো বলেছেই। আমি আর কি বলব!”
–“রিমিতো রিমির মতো করে বলেছে। ও যেটুকু দেখেছে সেটুকুই বলেছে। আমিতো তোর মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারি না।”
–“হুম। ”
–“হুম কি? কিছু বল৷ আনানকে তোর পছন্দ হয়েছে কিনা ভাই হিসেবে সেটা জানা আমার দায়িত্ব। ”
–“হুম, উনি অনেক ভালো। ”
–“তোর খেয়াল রাখেতো ঠিকঠাক? আমার কাছে নাম্বার নেই, নাম্বার থাকলে আমি নিজেই কল দিতাম। নাম্বারটা দিসতো, আর না হলে ওর সাথে আমার কথা বলিয়ে দিস।”
–“আচ্ছা। ”
–“আর শোন, আরেকটা কথা। নিশাদ ছেলেটা কেমনরে? আনানেরতো ফ্রেন্ড। ওরতো খুব ভালো জানার কথা৷ তোকে কিছু বলেছে?”
–“হুম, উনি নাকি অনেক ভালো একটা ছেলে। ”
–“ভালো হলেই ভালো।”
–“হুম।”
নিয়ন আরোকিছু বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু রাজিতার স্যার ক্লাসে চলে আসায় রাজিতা বলল,
–“ভাইয়া, আমি ক্লাসে আছি। স্যার চলে এসেছে, পরে কথা বলি?”
নিয়ন, “আচ্ছা” বলতে না বলতেই রাজিতা কল কেটে দিলো।

রাজিতা এখনো নিয়নকে জানায়নি যে, ওর চাচি ওদের নিয়ে কি বাজে কথা রটানোর চেষ্টা করছে। শুনতে পারলে নিয়ন ওর মাকে অনেক কথা শুনাবে। শেষে এটা নিয়ে আবার কোনো বড় প্রকারের ঝামেলা হতে পারে। রাজিতা ওর জীবনে আর কোনো ঝামেলা চায়না।

আজ হঠাৎ করেই কেন জানি রাজিতার ‘সুবহা’ নামটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ওর আবার কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে, এই নামটা ও ওর ভার্সিটিতেই কোথাও একটা শুনেছে। ও ভালো করে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না। ভার্সিটিতে শুনে থাকলে নেহার অবশ্যই জানার কথা। কারণ ভার্সিটির খবর সব নেহা ভালো রাখে। আর রাজিতাও ওর জীবনের অনেককিছুই নেহার সাথে শেয়ার করে। হতে পারে যে, সুবহা নাম এর আগে শুনে থাকলে নেহাকেও বলে থাকবে!আর নামটাও রাজিতার কাছে কেমন আনকমন লাগছে, তাই হয়ত নেহারও মনে থাকবে!

রাজিতার কপালটাই খারাপ! নেহা আজ ক্লাসেই আসলো না। তাই ও মালিহাকেই জিজ্ঞেস করল,
–“মালিহা শোন, তুই কি সুবহা নামের কাউকে চিনিস?”
মালিহা মাথা নেড়ে বলল,
–“নাতো। কেনরে?”
–“না, এমনিই জানতে চাইলাম। আচ্ছা এই নামটা তুই কখনো শুনেছিস?”
–“নামটা মনে হয় আমার আপুর মুখে শুনেছি।”
–“কি শুনেছিস?”
–“কিছুই না। শুধু নামটাই শুনেছিলাম, আপু ওর বান্ধবীর সাথে কি একটা আলোচনা করছিলো, তখন নামটা শুনেছিলাম।”
–“তোর আপু তাহলে চিনবে মনে হয় তাইনা?”
–“কিন্তু তুই এই নামটা নিয়ে পড়েছিস কেন?”
–“এমনি৷ তুই শুধু শুনবি যে, এই সুবহা বেঁচে আছে কিনা।… আর বেঁচে থাকলে সিওর হতে হবে যে, এই সুবহাই সেই সুবহা কিনা! আর যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলেতো ১০০% সিওর হওয়া যাবে !আর যারা ওকে চেনে তারা আমাকে দেখলেই বুঝে যাবে যে, সুবহা আসলেই আমার মতো দেখতে কিনা। উনিতো সেদিন বলেছিলেন যে, সুবহার চেহারা নাকি কিছুটা আমার মতোই, তাই নিশাদ ভাইয়া আমাকে দেখে সুবহা বলেছিলেন।”
শেষের কথাগুলো ও এত আস্তে বলল যে, নিজেই শুনতে পেলো না। ওর বিড়বিড় করা দেখে মালিহা বলল,
–“তুই এসব পাগলের মতো কি বকছিস? পাগল হয়ে যাসনিতো!”
–“তুই বুঝবিনা। তুই শুধু আমাকে খোঁজ নিয়ে দিবি, কে এই সুবহা!”
–“আচ্ছা ঠিক আছে। আপুকে জিজ্ঞেস করবনে!”

মালিহার সাথে কথা বলা শেষ হতেই রাজিতা ভাবতে লাগলো যে, ও কি বোকার মতো চিন্তা করছে!মালিহার বোনতো এই ভার্সিটির। সুবহা এই ভার্সিটির হলে তার সাথে নিশাদের পরিচয় কীভাবে হতে পারে! আর এই সুবহাই যে, সেই সুবহা হবে ওর এটা কেন মনে হচ্ছে! যা হওয়ার হয়েছে। মালিহা ওকে পাগল ভাবছে! শুধু-শুধু ওকে এসব বলতে গেলো৷ এই সুবহা নামটা কেন জানি ওকে পাগল করে দিচ্ছে।

রাজিতা ক্লাস শেষ করে আনানকে কল করতে লাগল, কিন্তু আনান কল ধরছে না। আরেকবার কল করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে কল করেই ফেলল। ২য় বার কল করতেই আনান রিসিভ করল৷
–“এতবার কল করছো কেন? দেখছই যে কল ধরছে না, তারমানে ব্যস্ত আছে। কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।”
আনানের এমন কণ্ঠ শুনে রাজিতা অভ্যস্ত নয়৷ দুইবার কল দিতেই আনান এমনভাবে কথা বলবে রাজিতা ভাবতেও পারেনি। ও আস্তে করে বলল,
–“আমার ক্লাস শেষ। ”
–“ক্লাস শেষ, তো চলে যাও। আমার আজ একটা মিটিং আছে। যেতে দেরি হবে।”
রাজিতা আবার আস্তে আস্তে বলল,
–“আমি কি অপেক্ষা করব?”
–“আমি কি বলেছি অপেক্ষা করতে! যেতে বলছি, চুপচাপ চলে যাও।আর হ্যাঁ, মাকে বলে দিয়েছি তোমার সাথে গিয়ে ফ্রিজ কেনার কথা।আমার ফিরতে দেরি হবে।”
–“কিন্তু…”
রাজিতার কথা না শুনেই খট করে কলটা কেটে দিলো আনান। রাজিতার চোখের কোণায় পানি টলমল করছে। কোনোমতে গাড়ির কাছে গিয়ে নিজেই দরজা খুলে বসতে বসতে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“মিজান ভাই, চলেন।”
মিজান আশেপাশে তাকিয়ে আনানকে খুঁজছিলো। রাজিতা বুঝতে পেরে বলল,
–“উনি যাবেন না। আপনি চলুন।”
–“কিন্তু স্যারতো বলেছিলেন যে, আজ যাওয়ার সময় ফ্রিজ কিনতে যাবেন। বাসায় যেতে দেরি হবে। ”
–“কখন বলেছিলো এ কথা?”
–“সকালে গাড়ি থেকে নামার সময়।”
–“আচ্ছা, আপনি চলুন।”

রাজিতা বুঝতে পারল যে নিশ্চয়ই আনানের কিছু একটা হয়েছে। না হলে রাজিতার সাথে এমন কড়া করে কথা বলার মানুষ সে নয়। সকালেও যে মানুষটা হাসিখুশি ভাবে গল্প করতে করতে আসলো, দুপুর গড়াতেই তার কি এমন হলো যে, কথার ভোল পাল্টে ফেললো! ওর চাচিরা কেউ কিছু বলেনিতো আবার ওর নামে! নাকি নিয়ন ভাইয়া কিছু বলেছে! কি এমন হতে পারে!

সারারাস্তা বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা করতে করতে বাসায় পৌঁছালো রাজিতা।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। তবুও আনানের বাসায় ফেরার নাম নেই। রাজিতার শাশুড়ী ওকে ফ্রিজ কিনতে যাওয়ার কথা বলেছিলো, কিন্তু ভালো লাগছেনা বলে ও মানা করে দিলো। অন্যদিন হলে এতক্ষণ একটা ঘুম দিয়ে দিতো। কিন্তু আজ রাজিতার চোখ থেকে কেন জানি ঘুম-পাখি উড়াল দিয়েছে। বারবার ফোন চেক করছে, এই বুঝি মিটিং শেষে আনান কল করলো! কিন্তু আনানের কোনো নাম-গন্ধও নেই।

রাজিতাকে এমন ছটফট করতে দেখে ওর শাশুড়ী সন্ধ্যার দিকে ওকে নিয়ে শিমলাদের বাসায় গেলো।শিমলা শিমুলকে পড়াচ্ছিল। রাজিতাদের দেখে একটু কথা-বার্তা বলে চা বানাতে চলে গেলো।

রাজিতা এর আগেও শিমলাদের বাসায় একবার এসেছে। রাজিতাদের ফ্লোরটা ছাড়া বাকিসব ফ্লোর দুই ইউনিটের বাসা। শিমলারা একটা ইউনিটে থাকে। তারপরেও অনেকটা বড় বাসা।

রাজিতা দেখল শিমুল পড়ছে। ওদিকটায় এগিয়ে গিয়ে শিমুলের পড়া শুনল। শিমুল পড়ছে,
–“আই লাভ মাই মাদার মানে, আমি আমার মাকে খুব ভালবাসি।”
রাজিতা ওরদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
–“এভাবে নয় বাবা, ‘আই লাভ মাই মাদার’ মানে, ‘আমি আমার মাকে শুধু ভালবাসি’ খুব হবে না।”
ওর কথাশুনে শিমুল পড়তে লাগলো,
–“আই লাভ মাই মাদার মানে, আমি আমার মাকে শুধু ভালবাসি।”
শিমুলের মুখে কথাটা শুনেই রাজিতা শব্দ করে হেসে ফেললো। তারপর আরো কয়েকবার শিমুলকে ও ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলো। ততক্ষণে শিমলা চা নিয়ে চলে এসেছে। চা-নাস্তা খেয়ে একটু গল্প-গুজব করে রাজিতারা নিজেদের বাসায় ফিরে আসলো।

রাজিতা রুমে ঢুকতেই আনানের উপস্থিতি টের পেলো। বিছানায় বসে ল্যাপটপে কোনো একটা কাজ করছিলো। রাজিতা ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
–“কখন এলেন?”
–“একটু আগেই।”
–“এতদেরি হলো কেন?”
আনান এইবার একটু রেগে গিয়ে বলল,
–“বললাম না একটা মিটিং ছিলো। আর সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে নাকি! তুমি আমাকে সব বলেছো কখনো! ”
–“কি বলব আপনাকে? আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি? ভুল করে থাকলে বলুন। আমি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। এভাবে রেগে থাকলে আমি বুঝব কি করে!”
রাগে আনানের চোখমুখ লাল হয়ে উঠেছে। রাগটাকে কন্ট্রোল করার বৃথা চেষ্টা করে বলল,
–“তোমার যে বয়ফ্রেন্ড ছিলো সেটা আমাকে কখনো জানিয়েছো?”
কথাটা শুনে রাজিতা যেন আকাশ থেকে পড়ল। বয়ফ্রেন্ড! তাও আবার ওর! ও চোখ দু’টো বড়-বড় করে বলল,
–“মানে…”

চলবে…….

#অপরাজিতা
#১৪তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

রাজিতা “মানে?” বলার সাথে সাথে আনান ল্যাপটপের থেকে মুখ তুলে বলল,

–“একদম ন্যাকা সাজবে না এখন। এইসব ন্যাকামি আমার একদম ভালো লাগে না। তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো তুমি একবার আমাকে জানাতে! আমি তোমাকে কখনো জোর করতাম না। ”

রাজিতা এবার রেগে গেলো৷ কারণ যে দোষ ওর নেই, তার অপবাদ ও কখনো মেনে নিবে না।

–“আপনি কিসের বয়ফ্রেন্ডের কথা বলছেন আর কিসের জোর করার কথা বলছেন? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

–“তোমার কোনো রিলেশন ছিলো না বিয়ের আগে? কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না?”

–“নিশ্চয়ই আপনার সাথে কেউ মজা করেছে। আপনি এটা বিশ্বাস করলেন কি করে? আমার রিলেশন থাকলে আপনাকে এতসহজে আপন করে নিতে পারতাম? আপনার বোঝা উচিৎ ছিলো।”

–“এটা কোনো মজা করার বিষয় হলো? আর এমনওতো হতে পারে যে, তুমি এতসব কিছু, এত ভালবাসা দেখে আগের সব ভুলে গেছো! আর এখন সবটা অস্বীকার করছো?”

রাজিতার রাগে-দুঃখে কান্না চলে আসলো। ও কান্না করতে করতে বললো,

–“আপনার থেকে আমি এমন কোনো কথা আশা করিনি৷ এই কয়দিনে আপনি আমাকে এই চিনলেন? আমি আমার সবটা উজার করে দিয়ে আপনাকে ভালবাসতে চাইছি, এটাই কি আমার অপরাধ? নাকি এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নেই, এটাই আমার অপরাধ!”

আনান রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকে না। এর আগে রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলেও আজ রাজিতার সাথে অন্য একটা ছেলের ছবি দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে না। ও বুঝতে পারছে যে, ওর এই কথাগুলোর জন্য পরে ও নিজেই অনুতপ্ত হবে, কিন্তু রাজিতার পাশে অন্যকেউ জাস্ট ও সহ্য করতে পারছে না। রাজিতার চোখের পানিগুলোও ওর সহ্য হচ্ছেনা। ও নিজেকে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করে রাজিতার কাঁধে হাত রেখে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললো,

–“তোমার বয়ফ্রেন্ড থেকে থাকলেও আমার কোনো সমস্যা নেই, কারণ সেটা তোমার অতীত ছিলো, আর আমি তোমার বর্তমান৷ কিন্তু তুমি আমাকে সেটা একবার জানাতে পারতে। আমি জানিনা ওই ছেলেটাকে তুমি কি বলে বুঝিয়েছো।তাকে সরি বলেছো কিনা। আর আমাকেও মন থেকে…”

এটুকু বলেই থেমে গেলো আনান। রাজিতা এক ঝটকায় নিজের কাঁধ থেকে আনানের হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,

–“আপনার বলা শেষ হয়ে থাকলে আমি কি কিছু বলতে পারি?”

আনান এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে। তাই শান্তস্বরে বলল,

–“হুম। বলো।”

–“আপনি কিসের ভিত্তিতে এতটা সিওর হলেন যে, আমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো?”

রাজিতার কথা শেষ হতে না হতেই আনান নিজের ফোনের গ্যালারি বের করতে করতে বলল,

–“আনান রেদোয়ান প্রমাণ ছাড়া কখনো কাউকে দোষী করেনা। ”

তারপর নিজের ফোনে রাজিতা আর অন্য একটা ছেলের সাথে একের পর এক ছবি দেখিয়ে যেতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

–“এগুলো কি মিথ্যা? এগুলোকে কীভাবে অস্বীকার করবে? এই ছেলেটার সাথে এত ছবি! দুজনের এই হাসিমুখ! এই আনন্দ! খুশি! এগুলো কি লুকানোর? আর এটাকে ইডিট কোনোভাবেই বলা যায়না। এইবার বলো! তোমার যদি এই ছেলেটার সাথে কোনো রিলেশন নাই থেকে থাকে, তাহলে এসব কি?”

রাজিতা এবার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

–“ওহ আচ্ছা, এই ব্যাপার! এতদিন তাহলে আপনিও আমার সাথে নাটক করেছেন। তাইনা?”

–“নাটক! কিসের নাটক? কি বলছো তুমি এসব?”

–“নাটক এটাই যে, আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন। এতটাই ঠুনকো ছিলো আপনার বিশ্বাস যে কয়েকটা ছবিই যথেষ্ট ছিলো তা গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য?”

–“তুমি কি বলতে চাইছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এই ছেলেটার সাথে যদি তোমার কোনো রিলেশন নাই থেকে থাকে, তাহলে এই ছবিগুলো এক্সপ্লেইন করো!”

–“এই ছবি! এই ছবি এক্সপ্লেইন করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। যাকে আমি নিজের ভাই মনে করি, যে আমাকে ছোটবেলা থেকে নিজের ছোট-বোনের মতো ভালবাসা দিয়ে আসছে, তারনামে এইসব নোংরা কথা বলতে আপনার বিবেকে একটুও বাধলো না? আর তখনতো ঠিক-ই বড় মুখ করে বলছিলেন যে, এসব ছোট-খাটো বিষয়ে নাক না গলাতে! যা করিনি তা নিয়ে মাথা না ঘামাতে! আর এখন কয়েকটা ছবি দেখেই আপনার মাথা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেলো? বাহ! আনান সাহেব! বাহ! এই আপনার বিশ্বাস! তারিফ করতে হয় আপনার বিশ্বাসের।”

বলেই আনানকে আরকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চোখ মুছতে-মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো রাজিতা। আনান হাঁ করে ওর চলে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে রইলো।

রাজিতার কথাগুলোর মানে বুঝতে আনানের বেশ খানিকটা সময় লাগলো৷ যখনি বুঝতে পারলো যে, ছবির ছেলেটা আর কেউ নয়, রাজিতার চাচাতো ভাই নিয়ন, তখন লজ্জায় নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আনানের।
না জেনে, না শুনে ও রাজিতার উপরে এতোবড় একটা মিথ্যে অপবাদ দিয়ে দিলো! শুধু তাই নয়, ওর ভালবাসা আর বিশ্বাসকে আঘাত করতেও ছাড় দেয়নি! এতটা কেয়ারলেস কি করে হয়ে গেলো আনান! জাস্ট অন্য একটা ছেলের সাথে রাজিতার কিছু ছবি দেখেই আজ ও নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি! যদি অন্যকিছু হতো তাহলে!
রাজিতার প্রতি ওর বিশ্বাস এতটা ঠুনকো কি করে হতে পারে! ও যে ওর জীবনের চাইতেও রাজিতাকে বেশি ভালবাসে! এমন একটা ভুল ও কি করে করতে পারলো!
রাজিতাকে ভুল বোঝার আগে ওকে ভালভাবে খবর নেওয়া উচিৎ ছিলো যে, ছেলেটা কে? ছেলেটার সাথে রাজিতার কি সম্পর্ক? ছবিটা কে পাঠিয়েছে?
এটুকু ভাবতেই আনান এইবার গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো এটা ভেবে যে, আসলেইতো ছবিগুলো কে পাঠালো আনানকে? সে নিশ্চয়ই রাজিতার ভালো চায়না। কে হতে পারে এটা! আসল আইডি থেকে অবশ্যই পাঠায়নি! রাজিতার সাথে এত শত্রুতা কার থাকতে পারে?
নিলা! নাহ! ওরতো এখন নতুন জীবন শুরু হতে যাচ্ছে, ও নিশ্চয়ই হবে না। তাহলে কি নিয়ন নিজে পাঠিয়েছে? কিন্তু ওতো রাজিতার ভালো চায়! নাকি রাজিতার চাচির কথাই ঠিক! নিয়ন রাজিতার অগোচরেই ওকে পছন্দ করে! আনান আরকিছু ভাবতে পারেনা।
এখন ওর প্রথম কাজ হবে রাজিতার রাগ ভাঙানো। আর দ্বিতীয় কাজ হবে ছবিগুলো কে পাঠিয়েছে তা খুঁজে বের করা৷ ছবিগুলো অন্যকারো হাতে পড়লে কি হতে পারে তা ভাবতেই আনানের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ও নিজেই যেখানে ছবিগুলো দেখে ধোঁকা খেয়ে গেছে, সেখানে অন্যকেউ দেখলে কি ভাববে!

রাজিতা গোমড়া মুখে ওর শাশুড়ীর রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো যে, উনি একাই আছেন রুমে, কোরান পড়ছেন। রাজিতা ফিরে আসতে লাগলো, তখন ওর শাশুড়ী কোরানের দিক থেকে মুখ না ঘুরিয়েই রাজিতাকে বলল,

–“চলে যাচ্ছিস কেন? ভেতরে আয়।”

রাজিতা চুপিসারে এসে ওর শাশুড়ীর পাশে বসল। ওর শাশুড়ীর মধুর কণ্ঠে কোরান তেলওয়াত শুনতে ভালই লাগছিলো।
কিছুক্ষণ পর ওর শাশুড়ী কোরান পড়া শেষ করলেন। রাজিতার বিবর্ণমুখ দেখে বুঝে গেলেন যে, নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করেছে৷ উনি রাজিতাকে আরো কাছে ডেকে নিয়ে ওর থুতনিতে হাত রেখে বললেন,

–“দেখি মুখটা! কান্না করেছিস?”
–“না, আসলে..”
–“আনান কিছু বলেছে?”
–“না, আসলে বাবা-মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছিলো।”

–“আমরা পাশে থাকতেও যদি বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে, তাহলেতো বুঝব যে, আমাদের এখানো আপন ভাবতে পারিস নি!”

রাজিতার চোখের পানিগুলো যেন একটু ভালবাসার অপেক্ষায় ছিলো, তার ছোঁয়া পেতে না পেতেই আবার বর্ষণ শুরু হলো।তারপর কেঁদে-কেঁদে বলতে লাগলো,

–“এক বাবা-মাকে হারিয়েছি, আরেক বাবা-মাকে হারালে হয়ত আমার বেঁচে থাকাটাই বৃথা হয়ে যাবে!”

–“তাহলে কান্না করছিস কেন? নিশ্চয়ই আনান কিছু বলেছে? ”

রাজিতা মাথা নাড়িয়ে, “হুম” বলতেই ওর শাশুড়ী বলল,

–“দাড়া, আমি এক্ষুণি আনানকে ডাকছি। কি এমন হয়েছে যে, মেয়েটাকে এভাবে বকাবকি করতে হবে। ও কি ভেবেছে! তোর কেউ নেই বলে যা খুশি তাই বলবে! আমাদের কি চোখে পড়ে না ওর!”

রাজিতা কান্না থামিয়ে অবাক চোখে ওর শাশুড়ীর কথাগুলো শুনছে।তারপর বলল,

–“তেমন কিছু হয়নি মা। আপনি শুধু-শুধু উনাকে ডাকছেন।”

–“সত্যিতো? আবার কিছু বললে সোজা আমাকে নালিশ জানাবি। আমি ওকে শিক্ষা দিবো।”

–“হুম।”

তারপর তিনি একটু নরমসুরে বললেন,

–“তোদের জীবনটা আমরা অনেক বছর আগেই পার করে এসেছি মা। এসব আমরা বুঝি। আর সন্তানেরা কখনও মায়ের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। আজ তোকে আমার একটা গোপন কথা বলি। শুনবি?”

রাজিতা অনেক আগ্রহের সাথে ওর শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে বলল,

–“অবশ্যই। বলেন।”

–“নিলাকে দেখতে গিয়ে তোকে দেখে যখন জানতে পারলাম যে, তুই এতিম! মা-বাবা কেউ নেই, তখন কেন জানিনা তোর প্রতি আমার একটা আলাদা মায়া জন্মে গিয়েছিল। কিছুদিন হলো আমার মা মারা গিয়েছেন, তাতেই আমার নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে। আর তুইতো ছোট থেকেই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত! ”

তারপর কিছুক্ষণ থেমে থেকে তিনি আবার বললেন,

–“আমি কেন জানি মন থেকে শুধু তোকেই বৌমা হিসেবে চাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো যে, এই এতিম মেয়েটাকে পেলে মায়ের মতো আদর দিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম। একটা এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেও যে অনেক অনেক পূণ্যরে মা! আল্লাহ হয়ত আমার মনে-মনে করা দোয়াটা কবুল করে নিয়েছিলেন। তাইতো যেভাবেই হোক, তোকেই আমার ঘরের লক্ষী করে পাঠালো। এইজন্যইতো বলে যে, আল্লাহর কাছে সব-সময় চাইতে থাকো, চাইতেতো আর ক্ষতি নেই। আল্লাহ দিলেওতো দিতে পারেন, কারণ সবকিছুতো তার-ই হাতে।”

রাজিতা কথাগুলো শুনে চোখের পানিগুলোকে আবার মুক্ত করে দিলো। তারপর ওর শাশুড়ীকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে কান্না করলো।

রাতে খাওয়া শেষে বইপত্র নিয়ে রাজিতা ওর শাশুড়ীর রুমে চলে গেলো। আনানকে কিছু বলার সুযোগ-ই দিলো না।

“বিয়ের পর থেকে পড়াশোনা করতে দেখিনি! আর আজ মায়ের রুমে বই নিয়ে যাচ্ছে পড়তে!” মনে মনে বলতে লাগলো আনান।

রাজিতার রাগ ভাঙানোর জন্য আনান ওর জন্য সুন্দর একটা নেকলেস কিনে এনেছে৷ ফেরার পথে একটা ফুলের মালাও এনেছে৷ মেয়েদের নাকি উপহার অনেক পছন্দ! তাও যদি রাজিতার রাগ ভাঙে! কিন্তু আনানের সাথে কথাই যদি না বলে ও রাগ ভাঙাবে কি করে! ওর মায়ের রুমে ঢুকে বসে আছে!

আনান রুম থেকে বের হতেই দেখলো যে, ওর বাবা নিজের বালিশ নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে। আনান ওর বাবাকে থামিয়ে বলল,

–“কি ব্যাপার বাবা! তুমি বালিশ নিয়ে কোথায় ছুটছ?”

ওর বাবা বিষন্ন গলায় বললেন,
–“দুই শাশুড়ী বউমা বায়না ধরেছে আজ একসাথে থাকবে! আমার আর কি করার আছে! তল্পিতল্পা নিয়ে ছুটছি! তুইও যা, ঘুমিয়ে পড়।”

আনানের খুব রাগ হচ্ছে রাজিতার ব্যবহারে। স্বামীর সাথে একটু রাগারাগি হয়েছে, সেটা পুরো পরিবারকে জানিয়ে বেড়াতে হবে! আজব মেয়ে একটা! কোনো কমনসেন্স নেই!

রাগে গজরাতে গজরাতে ওর মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো যে, রাজিতা ওর মায়ের পাশে শুয়ে আছে। আনানকে দেখে ওর মা বলল,

–“রাজিতার নাকি ওর মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। তাই ও আজ আমার কাছে থাকবে।”

তারপর আনানকে ইশারায় বুঝালেন চলে যেতে, উনি একটু পর রাজিতাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিবেন।

রাজিতা ওর শাশুড়ীর পাশে শুয়ে ভাবতে থাকে যে, মায়েরা বুঝি এমনি হয়!

আনান শুয়ে-শুয়ে রাজিতার জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ আস্তে করে দরজা খোলার শব্দে লাফ দিয়ে উঠে আনান। তারপর দেখে যে, রাজিতা আস্তে আস্তে চোরের মতো দরজা লাগাচ্ছে।

রাজিতা আনানকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আনান আস্তে করে বলল,

–“আমার বউটার রাগ কি কমেছে!”

রাজিতা তবুও চুপ করে আছে। রাজিতার এই ব্যবহার আনানের আর সহ্য হচ্ছেনা। ও একটু রাগান্বিত স্বরে বলল,

–“তুমি এসব কি শুরু করেছো? সবাইকে বলে বেড়াতে হবে যে, আমার সাথে রাগ করে আছো?”

রাজিতা এবার আস্তে করে বলল,

–“আপনাকে কে বললো যে, আমি সবাইকে এসব বলে বেড়াচ্ছি?”

–“তাহলে আমার থেকে দূরে-দূরে ছিলে কেন এতক্ষণ? আমি আসলেই জানতাম না যে, ওইটা নিয়ন ভাইয়ার ছবি। আমিতো ভেবেছিলাম যে, ওইটা অন্যকোনো ছেলের ছবি!”

–“আর আপনি ওমনি আমাকে সন্দেহ করা শুরু করে দিলেন? একবার আমার কাছে সত্যিটা জানারও প্রয়োজন মনে করলেন না?”

–“আচ্ছা, আমি মানছি আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমার জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে? তুমি কি আমায় ভুল বুঝতে না?”

রাজিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

–“জানিনা!”

–“কেন? এখন জানোনা কেন? আমার বেলায়তো ঠিক-ই বললে যে, ভুল বুঝেছি। তুমি হলে ভুল বুঝতে না?”

রাজিতা আরো একটু চুপ থেকে বললো,

–“হয়তো আমি আগে সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু আপনিতো কোনোকিছু না জেনেই, কোনোকিছু না ভেবেই আমাকে উল্টাপাল্টা বলতে শুরু করলেন।”

–“আমি বলছিতো, অন্যকোনো ছেলের সাথে তোমার ছবি দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। নেক্সট এমন হবেনা।প্লিজ!”

বলেই পকেটে রাখা নেকলেসটা বের করে রাজিতার গলায় পড়াতে গেলো আনান।

চলবে…….