#অপরাজিতা
#১৮তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
রুমে ঢুকেই আনানের চক্ষুতো চড়কগাছ! রুমটা ফুল দিয়ে পুরো ভর্তি করে রেখেছে। আনান অবশ্য বাইরে বিরক্তি প্রকাশ করলেও মনে-মনে খুশিই হলো।
রাজিতার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে যে, কে এই সুবহা!
সারাদিনের ক্লান্তি আর সন্ধ্যা থেকেই লোকজনের ভীড়ে রাজিতার মাথা-ব্যাথা হয়ে গেছে। আনানেরও একই অবস্থা! বাসায় এসেই আগে দুজনে ফ্রেস হয়ে নিলো।
আনান রাজিতাকে বলল,
–“মাথা-ব্যাথার কোনো ওষুধ খাবে? খুব বেশি খারাপ লাগছে? এই ফুলগুলো দেখে মনে হয় তোমার আরো বেশি বিরক্ত লাগছে?অসুস্থতায় ভালো জিনিসও খারাপ লাগে! আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো ভালো লাগবে। ”
রাজিতা একটু অসুস্থবোধ করলেও ফ্রেস হয়ে এখন একটু ভালো লাগছে। আনানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“আরে না, এখন একটু ভালো লাগছে। আসলে আপনাকে সরি! তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।”
–“যা বলার কাল বলো৷ এখন একটু রেস্ট নাও। ”
রাজিতা আনানের বুকে মাথা গুজে বলল,
–“না, আমাকে এক্ষুনি জানতে হবে। সুবহা কে?”
–“বলেছিতো, নিশাদের এক্স ছিলো। মারা গিয়েছে। আচ্ছা তুমি এই সুবহা নিয়েই পড়ে আছো কেন? ”
–“কারণ নিশাদ ভাইয়া বলেছে যে, তারতো কোনো এক্স ছিলই না! উনি নাকি কখনো কোনো সম্পর্কেই জড়ায়নি। আমি কার কথা বিশ্বাস করব বলো?”
–“তাই বলে তুমি আমাকেই অবিশ্বাস করছো? অবভায়াসলি নিশাদ মিথ্যে বলেছে! নিলাকে হয়ত ও এটাই বলেছে যে, ওর কখনো কারো সাথে রিলেশন ছিলো না। সেখানে তোমাকে যদি ওর এক্স এর কথা বলে তাহলে নিলাও ব্যাপারটা জেনে যাবে! আর এই ভয়েই ও মিথ্যে বলেছে।”
–“সরি! আমি ব্যাপারটা বুঝতেই পারিনি! আমিতো উল্টো তোমাকেই অবিশ্বাস করছিলাম।”
–“ইটস ওকে! নেক্সট টাইম আমাদের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝি হবে না। ওকে! এবার কথা না বলে চুপচাপ ঘুমানোর ট্রাই করো, দেখবে মাথা-ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে।”
রাজিতা “হুম” বলে আনানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ও শুধু-শুধু আনানকে ভুল বুঝছিলো!নিশাদ নিলার জন্য ওকে মিথ্যা বলেছে ভেবে একটু খারাপ লাগলো। এতবড় একটা সত্যি নিলার থেকে না লুকালেও পারতো। বলে দিলে কি এমন ক্ষতি হতো! একদিন না একদিনতো নিলা জেনেও যেতে পারে! তখন কি হবে! ভাগ্যিস সুবহা বেচারী বেঁচে নেই! নইলে নিলার হাতে পড়লে খবর ছিলো! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে শিউরে উঠে রাজিতা।
পুরো ছুটির দিন রাজিতা আর আনান বাসাতেই ছিলো। অন্যন্য ছুটির দিনে একটু বাইরে বের হয়। নইলে রাজিতার চাচার বাসা থেকে ঘুরে আসে। কিন্তু রাজিতার শরীরটা বেশি ভালো না থাকায় এই ছুটিটা বাসাতেই কাটিয়েছে।
রাজিতার প্রতি আনানের কেয়ার দেখে আনানের মা-বাবা ভীষণ খুশি হয়েছেন। উনারাতো ভয়ে ছিলেন যে, উনাদের পছন্দমতো মেয়েকে আনানের পছন্দ হবে কিনা! কিন্তু এখন দুজনকে দেখে উনারা খুব খুশি!
রাজিতা ক্লাসে ঢুকতেই মালিহা ওরদিকে এগিয়ে এসে বলল,
–“এত দেরি হলো কেন? আমিতো তোকে খুজঁছিলাম। ”
রাজিতা ব্যাগটা নামিয়ে বসতে বসতে বলল,
–“কই দেরি হয়েছে! ঠিক সময়েইতো এসেছি। আর তুই হঠাৎ আমাকে কেন খুঁজছিস?”
মালিহা ওর পাশে বসতে বসতে বলল,
–“আরে তুই সুবহার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলি না? আমি আপুর থেকে শুনেছি! হোয়াট এ ট্র্যাজেডি!”
–“মানে?”
–“উনি সুইসাইড করেছিলেন। তাও আবার আমাদের ভার্সিটিতেই। সবার সামনে, ছাদ থেকে ঝাপ! ঘটনাটা কল্পনা করতেই গা শিউরে উঠে!”
–“এমন ঝাপসা না রেখে সোজাসাপটা বল কীভাবে কি হয়েছিল? আর সুইসাইড কেন করেছিলো তা জানিস?”
–“আমার আপু যতটুকু বলল তাই তোকে বলছি। শোন, সুবহা আমাদের তিন বছরের সিনিয়র হবে হয়ত। আমাদের ভর্তির দুই বছর আগের ঘটনা! ”
–“আরে ঘটনাটা কি সেটা আগে বল। কবেকার ঘটনা সেটা পরে শুনলেও হবে৷ আসল ঘটনাটা আগে বল।”
–“আরে বাবা! সবুর কর। বলছিতো নাকি! সুবহা আপু অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো, দেখতেও মাশাল্লাহ! অনেক সুন্দরী ছিলো। তবে কারো সাথে তেমন মিশতো না। বন্ধু-বান্ধব বেশি ছিলো না, আর তেমন কেউ উনাকে চিনতোও না। পড়াশোনা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতো। ”
–“মালিহা! সুইসাইড কেন করেছিলো সেটা বলবি আগে! ”
–“আরে ভাই বলছি! কথার মাঝে এতো ফোড়ন কাটলে কথা শেষ হবে কি করে!”
–“আচ্ছা বল।”
–“উনি তখন সবে সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। রোজকার মতো সেদিনও সবার সাথে স্বাভাবিকভাবেই ক্লাস করেছে। ক্লাস শেষে যেখানে উনার বাসায় যাওয়ার কথা সেখানে ছাদে কেন গিয়েছিলো কেউ জানতো না। উনার তেমন বন্ধু-বান্ধবী না থাকায় কেউ তেমন খেয়ালও করেনি। হঠাৎ ছাদ থেকে কিছু একটা ঝুপ করে পড়ার আওয়াজ পেয়ে সবাই নিচে ছুটে আসে। একজন -দুইজন করে পুরো ভার্সিটির মানুষ জমা হতে থাকে। সাত-তলার উপর থেকে পড়ে মুখটা সাথে-সাথে থেতলে যায়। মৃত্যুও সাথে-সাথেই হয়। ”
এটুকু বলেই মালিহা চুপ হয়ে যায়। রাজিতার চোখ থেকে এক-ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। একটা অচেনা মেয়ের জন্য ওর চোখ থেকে কেন পানি পড়ল তা রাজিতা বুঝতে পারে না। রাজিতা চোখের পানিটুকু মুছে বলল,
–“তারপর?”
আর তখনি ক্লাসে স্যার চলে আসলো। পুরো ঘটনাটা শোনার জন্য রাজিতা ছটফট করতে থাকে। আজকের ক্লাসটা যেন শেষ হচ্ছেনা। আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সূত্রে ঠিকই বলেছে! কোনো-কোনো সময় আধাঘন্টাকেও বছর মনে হয়! আবার কোনো-কোনো সময় সারাদিনটাকে কয়েক মিনিট মনে হয়। এখন রাজিতার কাছে প্রতিটা মিনিট একেকটা ঘন্টার মতো লাগছে। সময় যেন কাটছে না!
স্যার ক্লাস থেকে যেতে না যেতেই রাজিতা মালিহাকে ক্লাসের বাইরে বারান্দার এক সাইডে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
–“এইবার পুরো ঘটনাটা সুন্দর করে বল। তারপর কি হলো? আর কেনই বা সুবহা সুইসাইড করেছিলো?”
মালিহা রাজিতার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
–“আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, এই সুবহাকে নিয়ে তোর এতো মাথাব্যথা কেন? মেয়েটা তোর কে হয়?”
–“আরে আমার কেউ নয়। তবে শুনেছি যে, মেয়েটা নাকি আমার মতো দেখতে। তাই তার সম্পর্কে জানার আমার এত আগ্রহ! এইবার বাকি ঘটনাটা বল।”
ক্লাস শেষ হতে না হতেই ওদের দুজনকে বাইরে আসতে দেখে নেহাও ওখানে চলে এসেছে। নেহা মালিহা আর রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“কিরে তোরা ক্লাস শেষ হতে না হতেই এভাবে হুড়মুড় করে বেড়িয়ে এলি কেন? তখন থেকে দেখছি যে, তোরা কি নিয়ে যেন ফুসুরফাসুর করছিস। কি হয়েছে আমাকেও বল। আমিও একটু শুনি।”
মালিহা তখন বলল,
–“সুবহা নামের একটা আপুর গল্প করছি। আমাদের ক্যাম্পাসেই পড়ত। সুইসাইড করেছিলো। দেখতে নাকি রাজিতার মতো ছিলো। যদিও আমি জানিনা।”
নেহা একটু চিন্তা করে রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“রাজিতা! তুই ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে আমাকে একদিন বলেছিলি না যে, তোকে কেউ সুবহা বলে ডেকেছিলো? ”
রাজিতার তখন মনে হলো যে, সে কোথায় সুবহা নামটা শুনেছিলো! ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই একটা মেয়ে ওকে সুবহা বলেছিলো। সেদিন ও এসে ঘটনাটা নেহাকে বলেছিলো। সেই মেয়েটা এটাও বলেছিলো যে, রাজিতাকে নাকি ওই সুবহা মেয়েটার মতই দেখতে, তাই ভুল করে ডেকে ফেলেছে। সেদিন রাজিতা কিছু না বুঝতে পারলেও আজ বুঝতে পারলো যে, তারমানে আনান ঠিক-ই বলেছে। সুবহা মেয়েটা কিছুটা রাজিতার মতো দেখতে ছিলো। আর এটাও সত্যি যে,মেয়েটা মারা গিয়েছে। কিন্তু আনান ওকে পুরো ঘটনাটা কেন জানায়নি! নাকি ঘটনাটা ও নিজেই জানেনা। তবে বন্ধুর জিএফ এর এতবড় ঘটনাটাতো ওর জানার কথা! নাও জানতে পারে, নিশাদতো এখন স্বীকার-ই করছে না যে, ওর গার্লফ্রেন্ড ছিলো! সে আবার তার মারা যাওয়ার ব্যাপারে এত ডিটেইলস আনানকে জানিয়েছে বলে মনে হয়না৷ হয়ত শুধু এটুকু জানিয়েছে যে, মারা গেছে৷ আর আনানতো কারো সম্পর্কে জানতে অতো আগ্রহী বলেও মনে হয়না।
রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে নেহা আবার বলল,
–“কিরে? মনে নেই তোর? আমার কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে। তুই আমাকে বলেছিলি। তা উনি কীভাবে মারা গেছেন?”
রাজিতা বলল,
–“হুম, এইবার মনে পড়েছে। আচ্ছা মালিহা বল, তারপর কি হলো?”
মালিহা এবার বলতে লাগলো,
–“লাশটা ছাদ থেকে পড়তে দেখেই কয়েকজন ছুটে ছাদে চলে গেলো, কেউ ওখানে আছে কিনা তা দেখার জন্য৷ কিন্তু ছাদে অন্যকেউ ছিলো না। আর ছাদ ছাড়া অন্যকোন তলা থেকে পড়ার কোনো চান্সও ছিলো না। কারণ সব তলাতেই স্টুডেন্ট ছিল।তারপর পুলিশ আসলো, ওর পরিবার আসলো। লাশ নিয়ে চলে গেলো। পুরো ভার্সিটিতে কয়েকদিন একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করতে লাগলো।”
রাজিতা এবার বলল,
–“ওর পরিবারে কে কে ছিল? জানিস কিছু?”
–“হুম। পত্রিকাতে ছাপানো হয়েছিলো, আর এমনি খবরেও দেখানো হয়েছিলো ঘটনাটা। তুই নেটে সার্চ করলেই পেয়ে যাবি। ওর আর কোনো ভাইবোন ছিলো না। মা মনে হয় একজন ডাক্তার আর বাবা কোনো একটা ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলো। আমার সঠিক মনে নেই। সুবহা উনাদের একমাত্র মেয়ে ছিলো। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে উনারা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো।”
–“তারমানে কি উনি আত্মহত্যাই করেছিলো? কিন্তু আত্মহত্যাই বা কেন করলো? ”
–“তা জানিনা। কিন্তু কারো সাথে উনারতো শত্রুতাও ছিলো না যে, হত্যা করবে! সবাই বলাবলি করছিলো যে, বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাগ করে নাকি সুইসাইড করেছিলো! কিন্তু উনার বয়ফ্রেন্ড আদৌ ছিল কিনা সেটাই কেউ জানতো না। আসল কথা উনার মৃত্যুটা একটা রহস্যই থেকে গিয়েছিল, সুইসাইড নাকি মার্ডার কেউ বলতে পারছিলো না৷ ফরেনসিক রিপোর্টেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গিয়েছিল না বলে শেষে আত্মহত্যা বলেই চালিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু…”
–“কিন্তু কি?”
–“কিছুদিন পর একইভাবে আরেকটা লাশ পাওয়া যায়। তবে সেটা ছিল একটা ছেলের লাশ। সবথেকে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, লাশটা ছিল সুবহা আপুর এক ক্লাসমেটের। আর রাতে গার্ড দেওয়া অবস্থায় ক্যাম্পাসের সিকিউরিটি গার্ড লাশটা দেখতে পান৷ ”
–“তারমানে ওই ছেলেটাও সেইমভাবে খুন হয়েছিলো?”
–“সেটাও কেউ বলতে পারেনি। কারণ রাতেতো পুরো ক্যাম্পাস বন্ধ থাকে। আর অতোরাতে ছেলেটা ছাদে কীভাবে আর কেন গিয়েছিল তা কেউ জানত না৷ আর সেটা কেউ বুঝতেও পারেনি! সবাই ধারণা করছিলো যে, ওই ছেলেটাই হয়ত সুবহার বয়ফ্রেন্ড ছিল। নিজের প্রিয় মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজেও সেইমভাবে আত্মহত্যা করে নেয়।”
–“ওই মৃত্যুটা নিয়েও কোনো তদন্ত হয়নি?”
–“হয়েছিলো৷ তবে ওগুলো ভার্সিটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সুইসাইড না বলে মার্ডার বললে বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হতো কর্তৃপক্ষকে, এমনিতেওতো দুইটা সুইসাইডের কেসে অনেকদিন অনেক ঝামেলা চলেছিল ক্যাম্পাসে৷ ক্যাম্পাসের মধ্যে এভাবে লাশ পাওয়া! নিশ্চয়ই কোনো রহস্য ছিলো এতে। সেটা পরে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। আপুর কথা এগুলো! আমি বুঝিনা এসব কিছু!”
–“আসলেই কি উনারা বয়ফ্রেন্ড -গার্লফ্রেন্ড ছিলো?”
নেহা বলল,
–“তোকে এসব নিয়ে ইনভেস্টিগেশন না করলেও চলবে৷ বোঝাইতো যাচ্ছে লাভ প্রবলেম! একজনের ভালবাসায় অন্যজনের জীবনদান! কি ভালবাসা!”
রাজিতা ওদের সাথে একমত হতে পারলো না। কারণ ও জানে যে, ওই ছেলেটা ওর বয়ফ্রেন্ড ছিলো না৷ ওর বয়ফ্রেন্ডতো ছিলো নিশাদ! তারমানে দুইটাই কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো না হয়ত।
রাজিতার ভাবনায় ছেদ করে নেহা বলল,
–“আরে স্যার অলরেডি ক্লাসে চলে গেছে! আর আমরা এখানে গল্পে মেতে আছি! তাড়াতাড়ি চল, আনান স্যারের ক্লাস এখন!”
রাজিতা ওদের সাথে তাড়াতাড়ি করে ক্লাসে চলে গেলো। এই নিয়ে আজ আনান নির্ঘাত ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে যে, ক্লাস বাদ দিয়ে কোথায় ছিলো! শেষমেষ এসে ওর ক্লাসেই দেরি হয়ে গেলো!
ক্লাস শেষে আনান রাজিতাকে ওর রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে চলে গেলো। রাজিতা বুঝতে পারলো যে, ক্লাসে দেরি করে ঢুকার জন্য নিশ্চয়ই লেকচার দিবে!
কিন্তু আনানের অফিসরুমে নিশাদকে দেখে রাজিতা অবাক হয়ে গেলো। সালাম দিয়ে নিশাদের পাশের চেয়ারটায় বসতে বসতে রাজিতা বলল,
–“আপনি এখানে? কি মনে করে? সব ঠিকঠাক আছেতো?”
নিশাদ একটু ইতস্ততভাবে বলল,
–“সরি এভাবে ভার্সিটিতে এসে তোমাকে বিরক্ত করার জন্য! আসলে তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য এসেছি। সেদিন তোমাকে মিথ্যে বলার পর থেকে আমার ভালো লাগছিলো না। তাই ভাবলাম তোমাকে সত্যিটা জানানো দরকার।”
রাজিতা একটু হেসে বলল,
–“আরে ভাইয়া, সমস্যা নেই। আপনার বন্ধু আমাকে সবটা বলেছে। আপনি নির্ভয়ে থাকবেন, আমি আপনি আর নিলা আপুর মধ্যে কোনো দেয়াল তৈরি হতে দেবো না! ”
–“আমি জানি তুমি বলবেনা। আসলে আমি নিলাকে বলতাম! কিন্তু ফার্স্টেই ইমপ্রেশন বাড়ানোর জন্য মিথ্যে বলে ফেলেছিলাম। তাই…”
–“আচ্ছা সমস্যা নেই৷ তবে আমি শুধু একটা কথাই জানতে চাই। বলবেন কি?”
আনান এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো। এবার মুখ খুললো,
–“রাজিতা! তোমাকে বলেছি না, কারো পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবে না। সুবহা মারা গিয়েছে অনেক বছর হলো। তুমি বারবার সেই নামটা নিলে নিশাদের পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠবে! তুমি বোঝোনা কিছু! পুরনো ক্ষতে আঘাত করতে নেই!”
রাজিতা এবার বলল,
–“আমিতো শুধু এটা জানতে চাচ্ছিলাম যে, সুবহা আপু সুইসাইড করেছিলো নাকি মার্ডার?”
আনান বলল,
–“তুমি এসব জানলে কি করে?”
–“কোনসব?”
–“এই যে, সুবহা কীভাবে মারা গিয়েছিলো?”
–“আমিতো কিছুই বলিনি এখনো। আমিতো শুধু জানতে চেয়েছি। কেন আপনি জানেন নাকি?”
আনান এবার আমতা-আমতা করে বলল,
–“আমি জানবো কী করে! নিশাদ এই ব্যাপারে আমাকে কিছু জানায়নি। ও শুধু বলেছিলো যে, ওর গার্লফ্রেন্ড সুবহা মারা গিয়েছে। এই!”
নিশাদ এবার ওদের দুজনকে লক্ষ্য করে বলল,
–“তোরা একটু চুপ করতো। আর রাজিতা, আমি নিজেও জানিনা যে, সেটা সুইসাইড ছিলো নাকি মার্ডার! তবে ওর মৃত্যুতে আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। সো, আশা করি এই নিয়ে তুমি আর কখনো কোনো কথা তুলবে না। আনানকেও জিজ্ঞেস করবে না। ও এই ব্যাপারে কিছু জানে না।…আরেকটা কথা! নিলা যেন এই ব্যাপারে কোনকিছু জানতে না পারে।”
তারপর আরোকিছুক্ষণ গল্প করে রাজিতা ক্লাসে চলে গেলো। এরপরে ওর আরো একটা ক্লাস আছে। আনানের আজকের মতো ক্লাস নেওয়া শেষ! তাই ও বসে-বসে নিশাদের সাথে গল্প করতে লাগলো।নিশাদ আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এখানে এসেছে!
চলবে…