অপেক্ষার আঁচল পর্ব-০১

0
50

#অপেক্ষার_আঁচল
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০১

১.
কাঠগোলাপের গাছ দেখে শুভ্রতা আর লোভ সামলাতে পারলো না। বেশকিছুদিন যাবত মাকে বলছে একটা কাঠগোলাপের চারা কিনে দিতে কিন্তু তার কথায় তার মা পাত্তায় দেয় না। চারপাশে কেউ আছে নাকি তা দেখার জন‍্য শুভ্রতা আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলো। না কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। শুভ্রতা সর্তকতার সাথে পায়ের সেন্ডেল খুলে হাতে নিলো। ডাল ছিঁড়েই তো দৌড় দিতে হবে।

গাছটা বেশি উঁচু না হওয়ায় শুভ্রতার বেশ সুবিধা হলো। শুভ্রতা লাফিয়ে কাঠগোলাপের একটা ডাল ভেঙে নিলো। ভেঙেই একটা ভৌ দৌড় দিলো সে।

খানিকটা দূরে এসে হাঁপাতে লাগল সে। সেন্ডেল পড়ে নিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলো সে। না পেরেছে সে। বাগান প্রেমি হলে এমন একটু আকটু গাছের ডাল না সরালে হয় নাকি।

অন‍্যদিকে এক যুবক তীক্ষ্ণ চোখে এতটা সময় সবই খেয়াল করছিলো নিজের রুমের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দা থেকে। যুবকটি বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগল
“মেয়ে তুমি কে আমি জানি না! তবে আশা করছি তোমার সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে। অপেক্ষা করো মেয়ে।”

শুভ্রতা একরাশ আনন্দ বাসায় এসে ডালটা নিয়ে পানিতে রাখলো।

সন্ধ্যায় হয়ে এসেছে তাই শুভ্রতা আর দেড়ি না করে কিছু নাস্তা করে বইখাতা নিয়ে বসলো । কাল পরীক্ষা আবার আছে তার। তাও আবার ইয়ার চেন্স পরীক্ষা। এখন যদি পড়তে না বসে তাহলে তো তার মা তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

এককথায় পড়াশোনা ভালো লাগে না তার। কিন্তু কি আর করার পড়তে তো হবেই।

শুভ্রতা ফরহাদ আহমেদ আর মাহফুজা একমাএ মেয়ে। ওনাদের একটা ছেলেও আছে। অর্ণব শুভ্রতার পাঁচ বছরের বড়।

সে যাইহোক শুভ্রতা নাকমুখ বুজে পড়ছিল। মাঝে মাঝে আবার উপরে চেয়ে কি যেন ভাবছিলো নিজ মনে। তখনই অর্ণব পিছন থেকে এসে শুভ্রতার মাথায় গাট্টা মেয়ে বলল
“পরীক্ষার আগের রাতে পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি আবার। কি একটু পরপর উপরে তাকিয়ে ভাবছিস।”

শুভ্রতা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল
“ভাইয়া তোমার কি আর কোনো কাজ নেই। আমার পিছনে কেন লাগো। আম্মু, আম্মু..!”

মাহফুজা বেগম রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলেন। হাতে তার রান্না করার খুনতি। তিনি মূলত রাতের খাবারই রান্না করছিলেন।

তিনি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে বললেন
“কি হলো? এতো চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন? তোর ভাই তোকে বিরক্ত করছে?”

শুভ্রতা মুখ বাঁকিয়ে বলল
“হ্যাঁ আম্মু, দেখ আমি একটু পড়াশোনা করতে বসেছি আর ভাইয়া এসে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। আম্মু, তুমি কিছু বলো ওকে।”

অর্ণব হেসে বলল
“আরে মা, আমি তো শুধু একটু মজা করছিলাম। পরীক্ষা বলে এত টেনশন করার কি আছে? পড়াশোনা ঠিকঠাক করে ফেললেই তো হলো!”

মাহফুজা বেগম খুনতিটা হাতে নিয়ে হুমকি দিলেন
“অর্ণ তুই আর তোর বোনের পড়াশোনার মধ্যে দুষ্টুমি করবি না। আর শুভি তুই শান্ত মনে পড়, আমি রান্না শেষ করে এসে তোকে দেখব। আর তুই অর্ণ, তুই গিয়ে একটু বাজার থেকে দুধ নিয়ে আয় তো, শেষ হয়ে গেছে।”

অর্ণব মাকে রসিকতার সুরে বলল
“আচ্ছা মা। আর তুই চিন্তা করিস না। তোর জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবো বাজার থেকে, যাতে তুই পড়তে বসে আবার পাগল না হইস!”

শুভ্রতা ভাইয়ার কথা শুনে একটু হাসল। কিন্তু মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে, কালকের পরীক্ষা আর সেই কাঠগোলাপের ডাল। সে মনে মনে ভাবল, পরীক্ষার চাপ না থাকলে আজকেই সে ডালটা লাগিয়ে দিত। তবে এখন তো আর কিছু করার নেই, পরীক্ষাটা শেষ হলে প্রথম কাজ হবে সেই ডালটা মাটিতে পুঁতে দেওয়া।

মাহফুজা বেগম রান্না করতে ফিরে গেলেন আর অর্ণব বাইরে চলে গেল। শুভ্রতা আবার পড়ায় মন দিলো।

———————

রিদায়াত একটা কালো শার্ট আর নেভি ব্লু রঙের জিন্স পড়ে চুলটা সেট করে নিচে নামতেই ওর সায়মা বেগম রিদায়াতকে ডেকে বললেন
“কোথায় যাচ্ছিস এখন আবার! একটু আগেই না বাহিরে থেকে আসলি।”

রিদায়াত হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বলল
“আম্মু একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে যেতে হবে আমায়।”

সায়মা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
“আচ্ছা যা। সাবধানে যাস।”

রিদায়াত একটু হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
“চিন্তা করো না আম্মু, সাবধানে থাকবো। তোমার ছেলে তো আর ছোট নেই।”

সায়মা বেগম একপ্রকার মৃদু হাসলেন। কিন্তু চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। রিদায়াতের ব্যস্ত জীবনযাপন তাকে সবসময় চিন্তায় ফেলে দেয়। ছেলে যেন নিজের খেয়াল ঠিকমতো রাখে, সেটাই তার বড় চিন্তা।

রিদায়াত বাইকটা নিয়ে বের হয়ে গেল, মনের মধ্যে কিসের যেন একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কিছু একটা তাকে ভাবাচ্ছে, কিন্তু সে স্পষ্টভাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আজ সারাদিনই যেনো তার মনটা ছটফট করছে। রাস্তায় বাইক চালাতে চালাতে হঠাৎ সে নিজেই নিজের ভাবনার মধ্যে হারিয়ে যায়।

রিদায়াত বাইক চালাতে চালাতে নিজের মনেই কথাগুলো বলে
“কি জানি কেন এমন লাগছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।”

সড়কের পাশের গাছগুলোর ছায়া তার উপর দিয়ে হালকা করে যাচ্ছে, আর রাস্তার বাতাসের শীতলতা তাকে কিছুটা হলেও প্রশান্তি দিচ্ছে। কিন্তু মনের ভেতরের অস্থিরতা যেন সেই প্রশান্তিকে ম্লান করে দিচ্ছে।

রিদায়াতের মন যেন এক রহস্যময় অস্থিরতায় ঘেরা। বাইক চালাতে চালাতে সে আরও গভীরভাবে নিজের ভাবনার মধ্যে ডুবে যায়। এদিকে শুভ্রতা পরীক্ষার প্রস্তুতির মাঝেও কাঠগোলাপের ডালের কথা ভুলতে পারছে না। তার মনের কোণে এক আনন্দ লুকিয়ে আছে, সেই ডালকে নিয়ে যে আনন্দ ভবিষ্যতে হয়তো তাকে নতুন কোনো অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করাবে।

রিদায়াতের মনোযোগ আবারও রাস্তায় ফিরে আসে। সে হালকা করে গ্যাসের প্যাডেল চাপিয়ে গতিরোধক থেকে বাইকটা বাঁচিয়ে সামনে তাকায়। তার চোখে মুখে দৃঢ়তা ফুটে ওঠে, যেন সে ঠিক করে ফেলেছে—এই অস্থিরতা দূর করতে হবে।

আকাশের রঙ ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে আসছে। হালকা হাওয়ায় আশেপাশের গাছের পাতা নড়ছে, আর রাস্তায় লাইটগুলো একে একে জ্বলে উঠছে। রিদায়াতের মনে হচ্ছে, এমন কিছু হবে যা তার জীবনকে নতুন মোড় দেবে।

কিন্তু কী, কিভাবে? সে জানে না। শুধু জানে যে কিছু একটা অপেক্ষা করছে তার জন্য, আর সেই কিছু তাকে খুঁজে নিতেই হবে।

#চলবে কি?