অপ্রিয় তুমি পর্ব-১৩+১৪

0
286

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব১৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গোধূলি বিকেলে উৎসা দাঁড়িয়ে আছে মেহরাবদের ছাদে। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। হাওয়ার তালে তালে উড়ছে উৎসার উন্মুক্ত করে রাখা কেশ গুচ্ছ। সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। আকাশ লাল আভায় সেজে উঠেছে ভিন্ন রূপে। উৎসা এক মনে আকাশ দেখছে। মেহরাব সেদিন রাতেই উৎসাকে নিয়ে এসেছিলো। উৎসার সেকি রাগ! গোটা একটা দিন মেহরাবের সাথে কথাই বলেনি। কেন বলবে কথা? লোকটা একটা দিন ওকে বাবার বাড়ি থাকতে দিলো না! তাই তার সাথে আড়ি। ওর উচিত ছিল আরো কয়েকদিন কথা না বলা কিন্তু ঐযে ওর দয়ার শরীর তাই অপ্রিয় মানুষটা কে ক্ষমা করে দিয়েছে। উৎসার ভাবনার মাঝেই ছাদে এলো রিনি। ছাদে শুকাতে দেওয়া কাপড় গুলো তুলতে তুলতে বলল,
“কিরে ঝগড়া করেছিস দুজন?”

উৎসা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
“না তো! তোমার হটাৎ এমন মনে হলো কেন?”

“নিচে যেয়ে দেখ তোর বর তোকে খুঁজে পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করছে। তাড়াতাড়ি নিচে যা”

উৎসা অবাক হলো। মেহরাব তো কখনো এই সময় আসে না। তাহলে আজ এই সময়?
“উনি কখন এলো?”

“এইতো দুমিনিট আগেই এসেছে। তাড়াতাড়ি যা নাহয় একটু পর তোকে না পেয়ে বেচারা মিসিং ডায়েরি করতে ছুটবে”

উৎসা সেদিকে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিলো না। হাতে আছে আচারের বয়াম। মেহরাবের আম্মু প্রায়ই আচার বানান। যখন যেই মৌসুম সেই মৌসুমে সেই আচার বানান। বাড়িতে আচার খাওয়ার তেমন কেউ নেই। রিনি ধরে না বলতে গেলে। মেহরাব, মাহিন ছেলে মানুষ ওরা তো ফিরেও তাকায় না। উৎসা সেদিন ঠান্ডা পানি খাওয়ার জন্য ফ্রিজ খুলতেই চোখে পড়ে আচারের বয়াম। উৎসা আচার পেয়েই বয়াম নিয়ে টেবিলে বসে। সালেহা বেগম রান্নার করছিলেন। টেবিলের কাছে আসতেই চোখে পড়লো তৃপ্তি করে আচার খাওয়া উৎসার পানে। এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আচার খাচ্ছ?”

উৎসা প্রথমে থতমত খেয়ে গেছে। অতঃপর মুখের আচার টুকু গিলে বলল,
“হ্যাঁ”

সালেহা বেগম উৎসাহের সহিত সুধালো,
“কেমন হয়েছে?”

উৎসা জিভে দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করলো। চোখ মুখ কুচকে আচারের স্বাদ নিতে ব্যাস্ত ও।
“অন্নেক মজা আম্মু। কোথা থেকে এনেছেন?”

সালেহা বেগম উৎসার কথা শুনে খুশি হলো। পাশের চেয়ার টেনে বসলো। উৎসাহের সহিত বলল,
“কিনে আনিনি। আমি বানিয়েছি”

উৎসা চমৎকার হেসে বলল,
“তাই! আচার গুলো বেশ মজা হয়েছে আম্মু। এই টুকু ছাড়া আর নেই?”

সালেহা বেগম মুখ ভার করে বলল,
“না, বাড়িতে কেউ তেমন খায় না। আগে সিঁথি পছন্দ করতো ওর জন্য বানাতাম। এরপর মেয়ে বিয়ে করে শশুর বাড়ি চলে গেল। তারপর আর কেউ খেত না। পড়ে থাকতো ফ্রিজে। মাঝে মাঝে এলে ও নিয়ে যেত। রিনিও আচার তেমন একটা পছন্দ করে না। তাই আর বানানো হয়না। গতবার সিঁথি নিয়ে যাওয়ার সময় এটুকু রেখে গেছে”

উৎসার মন খারাপ হলো। এতো টেস্টি আচার এটুকু খেলে কি মন ভরে? বাড়িতে ওর আম্মুও ওর জন্য আচার বানাতো। এক নাম্বারের আচার পা*গলী মেয়ে কিনা! উৎসা সেগুলো কয়েক দিনের মাঝেই শেষ করে ফেলতো। এই নিয়ে তনয়া বেগমের বকাও কম খেতে হয়নি। মাঝে মাঝে এক বসায় এক বয়াম শেষ করে ফেলতো অনায়াসেই। তনয়া বেগম তখন বলতেন,
“তোকে আর আচারই বানিয়ে দিবো না। আচার বানাতে খাটুনি হয় না বুঝি? একদিনেই শেষ করে বসে থাকিস। পড়ে শুধু বলিস আম্মু পেট ব্যথা করছে তখন দেখিস কি করি!”

উৎসা তখন খিল খিল করে হাসতো। তনয়া বেগমের কথা মতো পরের দিন পেট ব্যথায় নাজেহাল অবস্থা। তবুও সুধারানোর মতো মেয়ে না ও। তনয়া বেগম বকতে বকতে ফের আবার আচার বানিয়ে দিতেন। উৎসার মন খারাপ দেখে সালেহা বেগম সান্তনা দিয়ে বলল,
“মন খারাপ করিস না। আমি কাল তোর জন্য আচার বানিয়ে দিবো”

উৎসা ঝট পট সালেহা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি বেস্ট শাশুড়ি আম্মু”

কি বলেছে খেয়াল হতেই জিভে কামড় দিলো। মিন মিন করে বলল,
“সরি, আপনি। আম্মুকে সব সময় তুমি বলা হয় তো তাই মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে”

সালেহা বেগম উৎসার আচরণে হাসলো। হেসে বলল,
“আমি ও তো তোর মা’ই। নাকি আমায় মা ভাবিস না?”

উৎসার ঝট পট জবাব।
“না! না! তা হতে যাবে কেন?”

“তাহলে আজ থেকে আমায়ও তুমি করেই বলবি”

উৎসা মাথা নেড়ে সায় জানালো। সালেহা বেগম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। পরের দিন দারোয়ান কে দিয়ে আচারের সমস্ত জিনিস আনিয়ে আচার বানিয়ে দিয়েছেন। উৎসার তখন সে কি খুশি! ওর মনে হলো ও এক মায়ের কাছ থেকে আরেক মায়ের কাছে। মেহরাবের প্রতি ভালো লাগা কাজ করলো। ওই গু*ন্ডা লোকটার জন্যই তো ও এতো ভালো একটা শশুর বাড়ি পেয়েছে। মায়ের মতো শাশুড়ি, বাবার মতো শশুর, বোনের মতো জা, ভাইয়ের মতো ভাসুর। খালি জামাই টা একটু এদিক সেদিক। সমস্যা নেই এতো ভালোর মাঝে একটা বাজে লোক থাকলে কিছু হয় না। ওই বাজে লোকটার জন্যই তো এদের পেয়েছে। সেই সুবাদে মেহরাবের সাতখুন মাফ।
————

এই গোধূলি বিকেলে আচার খেতে বসেছে উৎসা। আচারের সাথে সূর্য ডোবা দেখতে ভালোই লাগছে। সাথে রিনির সাথে টুকটাক কথা বলছে। হঠাৎ রিনি খেয়াল করলো উৎসা অর্ধেক বয়াম শেষ করে ফেলেছে। কাছে এসে বলল,
“কিরে কি করছিস?”

উৎসা হঠাৎ রিনির এমন আচরণে অবাক হয়ে বলল,
“কি করেছি?”

রিনি রসিকতা করে বলল,
“কাহিনী কি বনু? এতো আচার খাচ্ছিস যে? সুখবর টুখবর আছে নাকি?”

এই মুহূর্তেই ছাদে পা রাখলো মেহরাব। রিনির কথা শুনে উৎসার হেঁচকি উঠে গেছে। চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। মেহরাবের ও সেম অবস্থা। বেচারা এসেই যেন সক পেল। রিনি উৎসার অবস্থা দেখে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেহরাব বিড়বিড় করে বলল,
“কাছে গেলেই দুই লাফ দেয়। সেখানে নাকি আবার সুখবর? সারাজীবন আমায় বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে মনে হচ্ছে”

রিনির নজর পড়লো মেহরাবের ওপর। ওকে দেখে জোর পূর্বক হেসে বলল,
“দেবর জি এইযে তোমার বউ। তুমি খুঁজছিলে না? আমার একটু কাজ আছে, আমি নিচে যাচ্ছি। তুমি তোমার বউকে সামলাও”

রিনি কোনো তে কেটে পড়লো। উৎসা এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। মেহরাব কাছে এসে বলল,
“তুমি এখানে? আর আমি তোমাকে পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেলেছি। এই সন্ধ্যা বেলা ছাদে কি করছো?”

উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। দেখছে না আচার খাচ্ছে তাও আবার প্রশ্ন করছে। ত্যাড়া জবাব দিলো
“তারা গুনছি, গুনবেন?”

মেহরাব অবাক হয়ে সুধালো,
“এই ভর সন্ধ্যায় তুমি তারা কোথায় পেলে? তোমার হাতে তো আচারের বয়াম”

“দেখেছেন যেহেতু, তাহলে আবার প্রশ্ন করছেন কেন?”

মেহরাব পকেটে হাত গুঁজে বলল,
“আমি রুমে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি এসো”

বলেই চলে গেল। উৎসাও উঠলো। নিচে নেমে আচারের বয়াম ফ্রিজে রেখে রুমে ঢুকলো। মেহরাব আগে থেকেই সেখানে আছে। কি যেন খুঁজে চলেছে। উৎসা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি খুঁজছেন?”

“সেদিন যে ফাইলটা রাখতে দিয়েছলাম সেটা কোথায় রেখেছো?”

“সরুন। আমি খুঁজে দিচ্ছি”

উৎসা খুঁজতেই মিনিটের মাঝে পেয়ে গেল। মেহরাবের হাতে ফাইলটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এই নিন আপনার ফাইল”

উৎসা চলে আসতে নিবে এমন সময় মেহরাব ওর হাত টেনে কাছে নিয়ে গেল। মেহরাবের প্রশস্ত বুকের সাথে উৎসার পিঠ ঠেকলো। মেহরাব পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। উৎসা চমকে উঠে বলল,
“এটা কি হলো?”

মেহরাবের সহজ সরল জবাব,
“আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরলাম”

উৎসা তেতে উঠে বলল,
“সারাদিন শুধু জড়াজড়ি করার ধান্দা। ধান্দাবাজ লোক একটা। ছাড়ুন আমায়, ছাড়ুন বলছি”

মেহরাব ছাড়লো তো নাই উল্টো আরো শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলো। ভাবুক কণ্ঠে বলল,
“একটা কথা ভাবছি”

উৎসা আগ্রহের সহিত জিজ্ঞেস করলো,
“কি?”

মেহরাব উৎসার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
“ভাবির কথা টা সত্যি প্রমাণ করলে কেমন হয় বলতো?”

উৎসার শিরদাড়া বেয়ে শিহরণ বয়ে গেল। অদ্ভুত অনুভূতি হলো। উৎসা আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না। মেহরাবের বন্ধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ছাড়া পাওয়া তো দূর উল্টো আরো গভীর বন্ধনে আটকে যাচ্ছে। উৎসা ফন্দি করে মেহরাবের পায়ে পারা দিলো। হটাৎ আক্রমণে হাতের বাঁধন শিথিল হলে উৎসা ছুটে পালালো। দরজার কাছে যেয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
“সেগুড়ে বালি। আপনি বসে বসে স্বপ্ন দেখতে থাকুন মিস্টার”

বলেই ছুটলো। পিছন থেকে মেহরাব চেঁচিয়ে বলল,
“তোমায় একবার বাগে পাই তারপর মজা দেখাবো বিচ্ছু মেয়ে”

উৎসা কথা গুলো শোনার আগেই কেটে পড়েছে।
—————

রোদের তীব্রতায় নাস্তানাবুদ অবস্থা একেক জনের। আজ যেন গরম একটু বেশিই পড়ছে। এতো বেশি রোদের তীব্রতা যে ওপর দিকে চোখ তুলে তাকানোর জো নেই। গরমে ঘেমে গেছে উৎসা আর তানজিলা। দুজনের কপালেই বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সেই সাথে পেয়েছে পানির তেষ্টা। গলা শুকিয়ে গেছে। কারো কাছেই পানি নেই। যেটুকু এনেছিল খাওয়া শেষ। মাত্রই ছুটি হলো। বেরিয়ে আশেপাশে মেহরাব কে খুজলো। তবে তার দেখা নেই। রাস্তার ওপারে কিছু মুদি দোকান দেখা যাচ্ছে। তানজিলা বলল,
“দোস্ত চল ওপার থেকে ঠান্ডা জাতীয় কিছু কিনে আনি”

“এই সময় যদি উনি চলে আসে?”

“আরে আসলে আসুক। দুমিনিটই তো লাগবে। চল না। গলা শুকিয়ে আসছে”

উৎসাও রাজি হয়ে গেল। দুজন রাস্তা পার হয়ে দুটো ক্যান কিনলো। সাথে সাথে খুলে খাওয়া শুরু করলো। এতক্ষনে মনে হয় জীবন ফিরে পেল। দুজন কথা বলছে আর হাটছে। এমন সময় উৎসার ধাক্কা লাগলো কারো সাথে। মেজাজ খারাপ হলো। দেখে চলতে পারে না নাকি? ঝাঁঝালো সুরে বলে উঠলো,
“কি সমস্যা? চোখে দেখেন না? নাকি চোখ আকাশে তুলে হাঁটেন? কোনটা?”

কথা গুলো বলে সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে তাকানো। ছেলেটা ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। উৎসার মেজাজ আরো চোটে গেল। একে তো ধাক্কা দিয়েছে তার ওপর এভাবে তাকিয়ে আছে।
“এই যে হ্যালো? ঘুমিয়ে গেলেন নাকি?”

সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার এতক্ষনে হুস ফিরলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“জি কিছু বললেন?”

“হ্যাঁ। চোখ কোথায় রেখে হাঁটেন? আসমানে? দেখে চলতে পারেন না?”

ছেলেটা হেসে বলল,
“সরি। একটু তারায় ছিলাম তো তাই আরকি খেয়াল করিনি”

“এরপর থেকে খেয়াল রেখে হাঁটবেন”

“জি অবশ্যই। তবে আপনি মনে হয় আমায় চিনতে পারেন নি?”

উৎসার ভ্রু কুঁচকে এলো। এই লোক কে কি ওর চেনার কথা? আগে কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। তানজিলার দিকে তাকালো। ওর অবস্থাও সেম। উৎসা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট?”

ছেলেটা উত্তর করলো,
“না”

“তাহলে ফেমাস সিঙ্গার?”

“না”

“তাহলে? আপনাকে চেনার কথা আসছে কথা থেকে ভাই?”

ছেলেটা উৎসার কথা বলার ধরনে হেসে দিলো। হেসে বলল,
“সেদিন রনির হাত থেকে আমিই আপনার হাত ছুটিয়েছিলাম। আপনি তখন কান্না করছিলেন”

উৎসার খেয়াল হলো। জিভে কামড় দিলো। ছেলেটা ওদিন ওদের বাঁচালো আর ও কিনা তাকে চিনতেই পারেনি। উল্টো কথা শুনিয়েছে।
“সরি, আসলে আমি সেদিন খেয়াল করিনি। ধন্যবাদ আপনাকে সেদিন গু*ন্ডাটার হাত থেকে আমাদের বাঁচানোর জন্য”

“ধন্যবাদ দরকার নেই। এটা আমার দায়িত্ব”

ছেলেটা আরো কথা বাড়াতে চাইলে তানজিলা ইশারা করলো উৎসাকে। মেহরাবের গাড়ি চলে এসেছে। দুজন বিদায় নিয়ে চলে এলো।

গাড়ির কাছে আসতে নজরে এলো গম্ভীর মুখে থাকা মেহরাবকে। উৎসাকে দেখে মেহরাব গাড়ির দরজার খুলে দিলো। উৎসা অবাক হলো। এমনি দিন তো কি সুন্দর করে হাসি মুখে কথা বলে আজ কি হলো? মুখটা অমন করে রেখেছে কেন? উৎসা উঠে বসতেই ধরাম করে দরজার লাগলো মেহরাব। উৎসা ভয়ে কেঁপে উঠলো। কি এমন হলো যে মেহরাব এমন ক্ষেপে আছে? ও তো কিছুই করেনি।

#চলবে?

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব১৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। কেমন যেন গুরু গম্ভীর ভাব। একটু পর পর গর্জন হচ্ছে। বৃষ্টি এলো বলে। এই মুহূর্তেও উৎসা ঠায় ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করেই রুমে যাবে না সে। বৃষ্টি আসলে ভিজবে, প্রচুর ভিজবে। একদম জ্বর বাধিয়ে ফেলার মতো করে ভিজবে। মেহরাব এখন রুমেই আছে। উৎসা রাগ করেছে মেহরাব নামক রাগী, বজ্জাত লোকটার ওপর। রেগে এখনো ফোঁস ফোঁস করছে। নাকের পাটা ফুলছে। এইতো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,

উৎসা গাড়িতে বসতেই মেহরাব এতো জোরে গাড়ির দরজা লাগিয়েছে সেই শব্দে বেচারি কেঁপে উঠেছে। ওর একটু খানি অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছে। বুকে ফুঁ দিয়ে নিজেকে সমলালো। হুট্ করে মেহরাবের অযাচিত রাগের কারণ বুঝতে অক্ষম সে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই হির হির করে ওকে টেনে নিয়ে এসেছে রুমে। মেহরাব যত চাইছে নিজেকে শান্ত রাখতে পরিস্থিতি যেন ততই বিগড়ে যাচ্ছে। অশান্ত হৃদয় শান্ত থাকতে দিচ্ছে না ওকে। চোখের সামনে বারবার উৎসা আর ছেলেটার হেসে হেসে কথা বলার দৃশ্য ভেসে উঠছে। নিজের বউ রুপী প্রেয়সীকে অন্য পুরুষের সাথে হেসে খেলে কথা বলতে দেখলে কোনো পুরুষেরই বা মাথা ঠিক থাকবে? মেহরাব চাইলো নিজেকে সামলে রাখতে। বেশি রিয়েক্ট করলে উৎসা ওর থেকে দূরে সরে যাবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ধড়াস করে আটকে দিলো রুমের দ্বার। উৎসা পুনরায় কেঁপে উঠলো। হাত মোচড়া মুচরি করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। মেহরাব ওর হাত এতটাই শক্ত করে ধরেছে মনে হচ্ছে এই বুঝি হাত কব্জি থেকে ছুটে এলো বলে। উৎসা হাত ছুটানোর চেষ্টা করতেই মেহরাব ওর হাত ছেড়ে বাহু চেপে ধরলো। অশান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“রাস্তার ওপারে কি করতে গিয়েছিলে?”

উৎসার সহজ সাবলীল উত্তর,
“তেষ্টা পেয়েছিলো। ব্যাগে পানি ছিল না তাই ঠান্ডা জাতীয় কিছু কিনতে গিয়েছিলাম”

মেহরাব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ঠান্ডা কিনতে গিয়েছিলে নাকি ছেলেদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলে?”

“আজব আপনি ছেলে পেলেন কোথায়?”

মেহরাব উৎসাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলল,
“একদম নাটক করবে না আমার সামনে! কি ভেবেছো আমি জানতে পারবো না? কে ওই ছেলে? কি হয় তোমার? এর আগে দেখেছি বলে তো মনে হয় না”

উৎসা অবাক হলো। কোনো ছেলে? কার কথা বলছে মেহরাব? কথার মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কার কথা বলছেন? কোথাকার ছেলে?”

এই একটা কথায় মেহরাবের মাথায় আগুন ধরে গেল। ছ্যাত করে উঠলো যেন। আরো শক্ত করে বাহু ধরে কাছে নিয়ে এলো। রাগান্নিত কণ্ঠে সুধালো,
“এখন চিনতে পারছো না তাই না? তখন তো দিব্যি ছেলেটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে। কই আমার সাথে তো কখনো এভাবে কথা বলনি? আমার সাথে কথা বলার সময় মনে হয় মুখ দিয়ে করল্লার রস ঝরে আর বাকিদের বেলায় মধু। সত্যি করে বলো ছেলেটা কে?”

উৎসা এবার ক্ষেপে গেল। তিরিক্ষী মেজাজে বলল,
“আপনি ক্লিয়ার করে বলবেন কার কথা বলছেন? আমি আপনার কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছি না”

“তা বুঝতে পারবে কেন? হেসে হেসে কথা বলার সময় তো আর হুস থাকে না”

উৎসা দ্বিগুন ঝাড়ি দিয়ে বলল,
“আরে ভাই বলবেন তো কার কথা বলছেন? আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলিনি”

“রাস্তার ওপারে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে? ওপারে তোমাকে কাজ কি? বলো? হাতে ক্যান নিয়ে হেসে হেসে কথা বলছিলে। ছেলেটা কে ছিল বলো?”

শেষের কথা গুলো এক প্রকার চিল্লিয়েই বলল। উৎসা ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো। ভাবতে শুরু করলো কে হতে পারে? সময় নিয়ে ভাবলো। কলেজে ও তেমন কোনো ছেলের সাথেই কথা বলেনি। তাহলে? মেহরাব কার কথা বলছে। খেয়াল হলো ওই দিনের ওই ছেলেটার কথা। হ্যাঁ! হাতে ক্যান নিয়ে তার সাথেই তো কথা বলছিলো।
“ও আচ্ছা। ওই ছেলেটার কথা বলছেন? ওই ভাইয়া টা সেদিন রনি আমার হাত ধরে যখন টানাটানি করছিলো তখন ভাইয়াটা আমার হাত ওর থেকে ছাড়িয়ে আমাদের বাড়ি চলে যেতে বলেছিলো। ভাইয়াটা অনেক ভালো। ঐদিন তিনি না থাকলে হয়তো আরো বাজে পরিস্থিতি হতো”

কথা শেষ করে উৎসা সামনে তাকাতেই আঁতকে উঠলো। মেহরাব রেগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। কপালের রগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। উৎসা মেহরাবের এই রূপ দেখে শুকনো ঢোকে গিললো। মেহরাব তেজি কণ্ঠে বলল,
“ব্যাস। তোমার মুখে অন্য কোনো ছেলের প্রশংসা আমি শুনতে চাই না। তোমার মুখে শুধু একটা নামেরই চৰ্চা হবে সেটা কেবল মেহরাব মির্জা। গালি দিলেও তাকেই দিবে, প্রশংসা করলেও শুধু তারই করবে। অন্য কারো না। অন্য কোনো ছেলের নাম তোমার মুখে শুনলো খু*ন করে ফেলবো”

উৎসা মেহরাবের এই রূপ দেখে ঘাবড়ে গেছে। তাই দ্বিমত পোষণ না করে মাথা নেড়ে সায় জানালো। মেহরাব ফের বলল,
“এরপর তোমার আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখলে আগে ছেলেটাকে মারবো তারপর তোমার ব্যবস্থা করবো। মনে থাকে যেন”

কথা গুলো বলেই গট গট পায়ে রুমে ত্যাগ করলো
উৎসা নিশ্চল দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। অভিমান হলো খুব। এই চিনলো মেহরাব ওকে? সামান্য একটা ছেলের সাথে কথা বলার জন্য এই আচরণ তার? এই জন্যই সাইকো টাকে বিয়ে করতে চায়নি ও। কিন্তু ওর ভাই নামক জ*ল্লাদটা টার ঘাড়েই ওকে গছিয়ে দিলো। সামান্য একটা ঘটনা তে এভাবে কেউ রিয়েক্ট করে? একটু তো কথাই বলেছে প্রেম তো করেনি? প্রেম করলে নিঃঘাত ওকে কুচি কুচি করার বানের জলে ভাসিয়ে দিতো। উৎসা এক বুক অভিমান নিয়ে বিছানায় বসলো। উল্টে পাল্টে হাত দেখছে। বা হাত টা কব্জির কাছে লাল হয়ে গেছে। মিনিট দুই বাদে মেহরাব বরফ নিয়ে রুমে এলো। উৎসার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। অতঃপর ওর নরম তুলতুলে হাত খানা নিজের হাতের মাঝে নিলো। বেশি জোরে ধরায় জায়গাটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। মেহরাব আলতো হাতে বরফ ঘষতে শুরু করলো। উৎসা তেতে উঠলো তাতে। একটু আগে নিজেই ব্যথা দিয়ে এখন আদিখ্যেতা দেখাতে এসেছে। উৎসা এক ঝাড়ি দিয়ে মেহরাবের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। উঠে চলে আসতে আসতে বলল,
“জুতা মেরে গরু দান করা লাগবে না”

ভেংচি কেটে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। মেহরাব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ভাবলো এখন রেগে আছে একটু পর বোধ হয় রাগ ভাঙবে। মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা পার হলো। উৎসার রুমে আসার কোনো লক্ষণই নেই। বাহিরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টির মাঝে মেয়েটা কোথায় গেল? মেহরাব খুঁজতে বের হলো।

ছাদে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মাঝে মাঝে বিকট শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো। তাও ও রুমে যাবে না। আকাশ পানে মুখ বাড়িয়ে দিলো। মুহূর্তের ব্যাবধানে বৃষ্টি শুরু হলো। একটু একটু করে ভিজে যাচ্ছে শরীর। তবুও উৎসার মাঝে নিজেকে বৃষ্টির ফোঁটা থেকে আড়াল করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেল না। ঠ্যাটার মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।

মেহরাব পুরো বাড়ি খুঁজে ফেলল কিন্তু উৎসা কে পেল না। যেই জোরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে এর মাঝে মেয়েটা কোথায় গেল। মেহরাব ভালো করেই জানে উৎসা বজ্রপাতের শব্দে ভীষণ ভয় পায়। ওই বাড়িতে থাকা কালীন বৃষ্টি হলে ওর আম্মুর রুমে বা কারো রুমে চলে যেত। মেহরাব নিজেকেই বকছে। ইচ্ছে করলো নিজের গালে নিজেই থা*প্প*ড় দিতে। জানে তো মেয়েটা প্রচন্ড অভিমানী তাও যে কেন এমন আচরণ করলো। মাথায় এলো রিনির কথা। ভাবলো হয়তো ওর রুমে গেছে। মেহরাব ভাবির রুমের সামনে যেয়ে দরজায় কড়া নাড়লো। রিনি রুমে থেকেই জবাব দিলো,
“কে?”

মেহরাব নরম কণ্ঠেও সুধালো,
“ভাবি উৎসা কি আপনার রুমে?”

“না তো!”

“সত্যি? নাকি আপনি আমার সাথে মজা করছেন”

রিনি বেরিয়ে এলো। বলল,
“সত্যিই ভাইয়া উৎসা আমার রুমে আসেনি”

মেহরাবের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো। রিনি জিজ্ঞেস করলো,
“কেন ভাইয়া? কোনো সমস্যা?”

মেহরাব ইতস্তত বোধ করলো। নিজের কর্ম কাণ্ডে নিজেই লজ্জিত। নত মুখে বলল,
“আসলে একটু রাগারাগি করেছিলাম তো তাই আরকি অভিমান করেছে পা*গলীটা”

রিনি হাসলো মেহরাবরের নত মুখ দেখে। ছেলেটা বয়সের ওর চেয়ে দুই তিন বছরের বড় হবে। এরপর ও ওকে অনেক সম্মান করে। কখনো চোখে তুলে তাকিয়ে কথা বলবে না। সব সময় নত মুখে নরম স্বরে কথা বলবে। সম্পর্কে মেহরাব ওর ছোটো হলেও রিনি সব সময় ওকে আপনি করে বলে। মুখ খুলে বলল,
“নিচে খুঁজেছেন?”

“হ্যাঁ। পুরো বাড়ি খোজা শেষ। কোথাও নেই”

রিনির কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়লো। চট করে মনে পড়লো ছাদের কথা। উৎসা মাঝে মাঝেই ছাদে যায়। ও খুব একটা যায়না। কাপড় তোলার জন্য মাঝে মাঝে যায় এই আরকি। ঝট পট উত্তর দিলো,
“ছাদে দেখেছেন?”

মেহরাব মাথা নেড়ে নাকোচ করলো। রিনি বলল,
“ছাদে গেছে মনে হয়”

“আমি এখনই যাচ্ছি”

রিনি পিছন থেকে ডেকে বলল,
“রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন ভাইয়া। মেয়েরা রাগী পুরুষ পছন্দ করে না। তাদের কোমল, কেয়ারিং পুরুষ পছন্দ। ও ছোটো একটা মেয়ে। এখনো কিশোরী। আবেগ অনুভূতি বেশি। ওর সাথে রাগ দেখালে হিতে বিপরীতে হওয়ার সম্ভব বেশি। পড়ে দেখবেন আপনার কাছে আসার বাদলে আপনার থেকে দূরে সরে যাবে। ওর সামনে যতো পারা যায় ততোটাই শান্ত থাকার চেষ্টা করবেন”

মেহরাব পিছন ফিরে চাইলো। মাথা চুলকে লাজুক স্বরে বলল,
“কি করবো বলেন? চেয়েও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি না। হুটহাট মাথা গরম হয়ে যায়। তবে আপনার কথাটা মাথায় রাখবো”

মেহরাব ছুটলো ছাদের দিকে। ছাদের দরজায় পা রাখতেই দক্ষিণ দিকে বৃষ্টিতে ভেজা এক বৃষ্টিবিলাসী কন্যাকে আবিষ্কার করলো। গাঁয়ে এখনো কলেজ ড্রেস। সাদা ড্রেস হওয়ায় বৃষ্টিতে ভিজে পুরো শরীরের ভাঁজ বোঝা যাচ্ছে। চট করেই মেহরাবের মাথা গরম হলো। মেয়েটার বুদ্ধি শুদ্ধি সব কি লোপ পেয়েছে? সাদা ড্রেস পড়ে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে? আশেপাশে চোখ বুলালো। দূর দুরন্তে কেউ নেই। কাউকে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ধপ করে জ্বলে ওঠা রাগটা নিমিষেই মাটি করে ফেলল। নিজেকে বারবার শাসালো। যে করেই হোক বউয়ের সামনে রাগ দেখানো যাবে না। এগিয়ে গেল উৎসার দিকে। আলতো করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

উৎসা নিজের খেয়ালে মজে ছিল। আচমকা কারো স্পর্শে চমকে উঠলো। ছিটকে দূরে সরে যেতে নিলে নিজেকে আবিষ্কার করলো শক্ত বন্ধনে। ঘাড় ঘুরিয়ে আলিঙ্গন করা মানুষটাকে দেখে নিলো। মেহরাব কে দেখে এতোক্ষনের সামলে রাখা অভিমান মাথা চারা দিয়ে উঠলো। আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পেতে ছুটো ছুটি শুরু করলো। কিন্তু এক ফোঁটা সরতে পারলো না। মেহরাব শান্ত কণ্ঠে বলল,
“বৃষ্টির মাঝে ছাদে কি করছো?”

উৎসার ত্যাড়া জবাব,
“তাথা থৈ থৈ করে নৃত্য পরিবেশণ করছি দেখতে পাচ্ছেন না?”

মেহরাব ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। মেয়েটা একদম তার কার্বন কপি। বউ সহজ সরল হলে মজা নেই। উৎসার সাথে নিজের সাদৃশ্য পায় বলেই মেয়েটাকে ওর এতো ভালো লাগে।
“কই? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না”

“তা দেখবেন কেন? দেখবেন তো আমি কার সাথে কথা বলছি, হাসছি এগুলো। আর কিছু দেখতে পারেন আপনি?”

মেহরাব প্রতি উত্তর করলো না। ধীর কণ্ঠে বলল,, “রুমে চলো”

উৎসা ছ্যাত করে উঠে বলল,
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না”

অতঃপর মোচড়া মুচরি করতে করতে বলল,
“আমাকে ধরছেন কেন? ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি”

মেহরাব ছাড়লো তো নাই। উল্টো আরো গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলো। কিছুটা ঝুঁকে উৎসার কানের সাথে ঠোঁট মিশালো। আলতো করে চুম্বন এঁকে দিলো কানের লতিতে। উৎসা কেঁপে উঠলো। বৃষ্টিতে ভেজা শরীর এমনিতে ঠান্ডায় কাঁপুনি দিচ্ছে। তার ওপর মেহরাবরের উষ্ণ ছোঁয়া ওর ছোটো হৃদয়ে ঝড় তুলে দিচ্ছে। মেহরাব নেশালো কণ্ঠে বলল,
“যেই অবস্থায় তুমি দাঁড়িয়ে আছো আমি সুপুরুষ বলে এখনো নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি। নাহয় তোমার ভাষায় তথা কথিত লুচু হলে তুমি এখনো এই অবস্থায় আমার সামনে সুশীল রূপে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতে না”

মেহরাবের কথা শুনে উৎসা একবার নিজের দিকে তাকালো। গাঁয়ের সাথে সেটে আছে পরনের সাদা কামিজ। ভিজে এতক্ষনে চুপ চুপে হয়ে গেছে। সাদা কামিজ ভেদ করে সব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গাঁয়ে ওড়নাও নেও। শুধু মাত্র ক্রস বেল্ট। নিজের হাল দেখে উৎসা নিজেই লজ্জা পেল। লজ্জায় গুটি শুটি মেরে গেল। মেহরাব ওর আচরণে শব্দ করে হেসে ফেলল।
“কি বলো ছেড়ে দিবো?”

উৎসা কোনো উত্তর করলো না। মেহরাব নিজের গাঁয়ের শার্ট খুলে উৎসাকে পরিয়ে দিলো। নিচে সেন্টু গেঞ্জি আছে। উৎসা কিছু বলল না। একটু ত্যাড়ামিও করলো না। মেহরাব হুট্ করে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো উৎসার ছোটো নরম দেহ খানা। উৎসা লজ্জায় আরো গুটিয়ে সেটে গেল মেহরাবরের বুকের সাথে। মেহরাব এগিয়ে গেলে ছাদের দরজার কাছে।

#চলবে?