অপ্রিয় তুমি পর্ব-১৫+১৬

0
274

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব১৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

(প্রাপ্তবয়স্ক-প্রাপ্তমনস্কদের জন্যে)

বাহিরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। পরিবেশে রোমান্টিকতার ছোঁয়া। উত্তাল পাথাল হাওয়া বইছে। সাথে উথাল পাথাল হাওয়া বইছে উৎসার মন আঙিনায়। সিক্ত বদনে উৎসা লেপ্টে আছে মেহরাবের সাথে। দুজনই ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেছে। ঠান্ডায় উৎসাহ কেঁপে কেঁপে উঠছে খানিক বাদে বাদে। মেহরাবের নেশালো দৃষ্টি। ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসার তিরতির করে কাঁপতে থাকা গোলাপের ন্যায় অধরের পানে। মেহরাবের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে উৎসা শুকনো ঢোকে গিললো। উৎসার মনের মাঝে কঠিন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে বুকের ভিতরে। মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে। মেহরাব উৎসার গালে হাত রাখলো। আলতো করে উৎসার ভেজা অধরে বুড়ো আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলো। ধীর গতিতে স্লাইড করছে এপাশ থেকে ওপাশে। উৎসা কেঁপে উঠে চোখ বুজে নিলো। মেহরাব আঁকড়ে ধরলো উৎসার কোমর। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো উৎসার অধরের পানে। উৎসা চোখ বুজেও অনুভব করছে মেহরাবের বেসামাল হাতের ছোঁয়া। উৎসার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো। মেহরাব আঁকড়ে ধরলো উৎসার অধর জোড়া। উৎসা যেন জমে গেল। ভেজা শরীরে মেহরাবরের এমন পা*গলামো ওর ছোট্ট হৃদয় নাড়িয়ে দিচ্ছে। উৎসা নিজেকে সামলাতে আঁকড়ে ধরলো মেহরাবের বুকের কাছের শার্ট। মেহরাব উৎসার সারা পেয়ে আরেকটু ঘনিষ্ট হলো।

বাহিরে শীতলতায় চেয়ে গেলেও কক্ষের ভিতরে উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে। মেহরাব কিছুক্ষন বাদে ওষ্ঠ ছেড়ে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তুলে নিলো উৎসাকে। হঠাৎ আক্রমণে উৎসা ঘাবড়ে যেয়ে মেহরাবের গলা জড়িয়ে ধরলো। উৎসাকে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে। দুই হাতে ভর দিয়ে ঝুঁকে এলো উৎসার ওপর। মেহরাব এগিয়ে আসবে এমন সময় উৎসা হাঁচি দিয়ে উঠলো। বেচারির সর্দি লেগে গেছে। মেহরাব ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো। এতক্ষন যেন নেশার ঘোরেই ছিল। নিজে সরে এলো। এক টানে উৎসাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। একের পর এক হাঁচি দিয়েই চলেছে উৎসা। মেহরাব কাবার্ড খুলে একসেট কাপড় হাতে ধরিয়ে উৎসাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। যাওয়ার আগে বারবার সতর্ক করলো বেশি ভিজতে না। তাড়াতাড়ি বের হতে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর শরীর ও ভেজা। একবার ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে বিছানায় চাদর চেঞ্জ করতে নিলো। উৎসা ভেজা শরীর নিয়ে বিছানায় ওঠায় চাদর ভিজে গেছে। ঝটপট হাতে বিছানা ঠিক করলো।

উৎসা ওয়াশরুমের দরজার সাথে হেলান দিয়ে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। একটু আগে ঘটা ঘটনা গুলো মনে পড়তেই আঁতকে উঠে ঠোঁট দিয়ে জিভ ভেজালো। মেহরাবের বেসামাল আচরণে নিজেকে সামলাতে পারেনি। না বুজেই সায় দিয়েছে। এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে। এর মাঝেই বাহিরে থেকে মেহরাব হাক ছাড়লো,
“এতক্ষন কি করছো? তাড়াতাড়ি বের হও না হয় জ্বর চলে আসবে”

উৎসা ভাবনা বাদ দিয়ে ঝর্ণা ছাড়লো। ঝটপট শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে। উৎসা বেরিয়ে এসে খেয়াল করলো মেহরাব তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দ্রুত হাতে তোয়ালে চালালো ওর চুলের ভাঁজে। উৎসা মেহরাবের দিকে তাকালো। নিজে ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে আছে সেটা কিছু না।এদিকে ওকে ধমকা ধমকি করছে। তার সমস্ত খেয়াল উৎসার দিকে। উৎসা মেহরাব কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি চুল মুছে নিচ্ছি। আপনি চেঞ্জ করতে যান। নাহয় আপনার সর্দি লেগে যাবে”

মেহরাব ব্যাস্ত ভঙ্গিতে চুল মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,,
“তোমার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আমার এসবে অভ্যাস আছে”

উৎসা ভেংচি কাটলো। এই জন্যই বলে কারো ভালো করতে নেই। ভেঙিয়ে বলল,
“আমার অভ্যাস আছে”

মেহরাব ওর দিকে তাকাতেই চুপ মেরে গেল। আর কিছু বলল না।
————

গভীর রাত। ঘুম মগ্ন সবাই। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে উৎসা। আশেপাশে কোনো খেয়ালই নেই। খুব কাছ থেকে ভেসে আসছে কারো গঙ্গানোর শব্দ। উৎসার কানে এসে বাড়ি খেলেও পাত্তা দিলো না। কিন্তু বারবার একই শব্দ পেয়ে ঘুম হাল্কা হলো। নিজেকে আবিষ্কার করলো গরম উত্তপ্ত উপত্যাকায়। শরীর জ্বলে উঠলো। উৎসা ফট করে উঠে বসতে চাইলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। মেহরাব ওকে শক্ত আলিঙ্গনে বেঁধে রেখেছে। এই লোকের এই এক সমস্যা। ওকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে না ধরলে নাকি তার ঘুম হয়না। আর এদিকে এইভাবে উৎসার এভাবে কেউ সাপের মতো পেঁচিয়ে রাখলে ঘুম হয়না। তাও এখন নিজেকে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে। দৃষ্টি গিয়ে আটকালো মেহরাবের ঠোঁটে ওপর। তির তির করে কাঁপছে ঠোঁট জোড়া। সাথে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। উৎসার ভ্রু কুঁচকে এলো। এর আগে কখনো মেহরাবকে ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করতে দেখেনি। হাতের উল্টো পিঠ ছোঁয়ালো মেহরাবের কপালে। সাথে সাথে আঁতকে উঠলো। গাঁ প্রচন্ড গরম। জ্বরে গাঁ পুরে যাচ্ছে। উৎসার মাথা কাজ করলো না। মেহরাব শীতে কাঁপছে। উৎসাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিচ্ছে। উৎসা বিচলিত হলো। দিশেহারা লাগছে নিজেকে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রিনির কথা মনে পড়লো। ওকে ডেকে আনলে ও নিশ্চই কিছু না কিছু করতে পারবে। উৎসা নিজেকে মেহরাবের হাতের বাঁধন থেকে ছাড়াতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। মেহরাব শক্ত করে ধরে রেখেছে। উৎসা ভেবে পায় না এই অসুস্থ শরীরে এই লোকের গাঁয়ে এতো জোর এলো কিভাবে? মেহরবারে হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এই যে শুনছেন? ছাড়ুন”

মেহরেব জ্বরের ঘোরে বলল,
“কেন? কোথায় যাবে?”

“আপুকে ডেকে আনি। আপনার জ্বর এসেছে”

মেহরাব ছাড়া তো দূর আরো শক্ত করে ধরে বলল,
“কাউকে ডাকতে হবে না। আমার কিছুই হয়নি। তুমি শুধু এভাবে থাকো তাহলেই হবে”

উৎসা মেহরাবের চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিলো।
“এভাবে পা*গলামো করবেন না প্লিজ। আমায় ছাড়ুন আমি আপুকে ডেকে আনি”

“উহু, তুমি আমায় রেখে চলে যাবে”

“আমি কোথাও যাবো না। শুধু আপুকে ডেকে আনবো”

“তুমি আমায় বোকা পেয়েছো? আমি তোমায় ছাড়ি আর তুমি আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে যাও। ওটি হচ্ছে না”

মেহরাবের পা*গলামোর কাছে উৎসাকে হার মানতেই হলো। অন্য সময় এমন পা*গলামো করলে উৎসা খুশি হতো কিন্তু এখন খুশি হচ্ছে না। এমন কেউ করে? ঠোঁট উল্টো বসে রইলো উৎসা। মেহরাব ওকে এক বিন্দু ছাড়তে নারাজ। ধীরে ধীরে ওর গাঁয়ের তাপমাত্রা আরো বাড়ছে। উৎসার কপালে চিন্তার ভাঁজ। কি করবে ও? মনে পড়লো ওর ছোটবেলার কথা। ওর জ্বর হলে তনয়া বেগম মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিতেন এতে কিছুটা তাপমাত্রা কমে আসতো। উৎসা ভাবলো এখন আপাতত এটাই করুক। সকাল হলে কাউকে ডেকে আনবে। মেহরাব ততক্ষনে ঘুমের দেশে পারি জমিয়েছে। উৎসা চুপি চুপি ওর হাত ধরলো। বাঁধন কিছুটা শিথিল হয়েছে। নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে গেল। মগে করে পানি এনে মেহরাবের মাথায় জল পট্টি দিলো। আধা ঘন্টা দেওয়া পরও তাপমাত্রা কমার নাম নেই। উল্টো জ্বর তর তর করে বাড়ছে। ওয়াশরুম থেকে বলতি ভরে পানি নিয়ে এলো। চিন্তার বিষয় মেহরাব কে নড়াবে কি করে? শক্ত পোক্ত জিম করা পুরুষকে নড়ানো কি এতোই সহজ? উৎসা মৃদু সরে মেহরাবকে ডাকছে। ছেলেটা কোনো মতে চোখ টেনে খুলল। জ্বরের ঘোরে তাকাতেও পড়ছে না। ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে?”

উৎসা বলল,
“এদিকে মাথা ঘোরান। মাথায় পানি দিবো”

মেহরাব কথা বাড়ালো না। ভদ্র ছেলের মতো উৎসারে কথা শুনলো। উৎসা এক মনে মেহরাবের মাথায় পানি দিচ্ছে। খানিক ক্ষণ পর জ্বর কিছুটা কমলো। কিন্তু শরীর এখনো গরম। উৎসা ফের মেহরাব কে ডাকলো।
“কি?”

উৎসা মিন মিনে কণ্ঠে বলল,
“টি-শার্ট টা খুলুন। শরীর মুছিয়ে দিবো”

এই অসুস্থ শরীরেও মেহরাব দুস্টু হাসলো। দুস্টুমির ছলে বলল,
“ছিঃ! ছিঃ! বউ তুমি আমার অসুস্থতার সুযোগ নিতে চাইছো? একটু তো সরম রাখো”

“এই বেশি কথা বলবেন না তো? অসুস্থ শরীর নিয়েও তার মজা করতে হবে! যেটা বলছি সেটা করুন তাড়াতাড়ি”

মেহরাব কোনো মতে উঠে বসলো। টি-শার্ট খুলতে গেলে ঢোলে পড়তে নিলো। উৎসা পড়ার আগেই ধরে ফেলল। পুনরায় শুইয়ে দিলে। গামছা ভিজিয়ে শরীর মুছে দিলো। এতে কিছুটা কাজ হলো। তাপমাত্রা অনেকটাই কমেছে। এখন কিছু খাইয়ে ওষুধ খাওয়াতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ওষুধ পাবে কোথায়? উৎসা সন্ধানী দৃষ্টি চালালো রুম জুড়ে। চোখ পড়লো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের দিকে। কয়েকদিন আগে মেহরাব সেখান থেকে ব্যান্ডেজ বের করে ওর হাতে লাগিয়েছিলো। তাহলে হয়তো সেখানে ঔষধ থাকতে পারে। খুঁজে দেখলো ওষুধের বক্স আছে কিনা। একটু খুঁজতেই ওষুধের বক্স পেয়ে গেল। উৎসা খুশি হলো। চওড়া হলো ঠোঁটের কোণের হাসি।

ঝটপট নিচে ছুটলো। রান্না ঘরে এসে সুপ রান্নার প্রস্তুতি নিলো। এই অসুস্থ শরীরে হাল্কা কিছু হলেই ভালো হবে। তাড়াহুড়ো করে রান্না শেষ করে রুমে আসলো। রুমে ঢুকতেই নজর গেল বিছানায় সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকা মেহরাবের দিকে। জোর জবরদস্তি করে টেনে চোখ খুলে রেখেছে। তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। উৎসার যতদূর মনে পড়ে ও যাওয়ার সময় মেহরাব ঘুমিয়ে ছিল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল বিছানার কাছে। সুপের বাটিটা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে উৎকণ্ঠা হয়ে হাত চালালো মেহরাবের কপালে। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
“এই অসুস্থ শরীরে আপনি উঠে বসেছেন কেন?”

মেহরাব গাল ফুলালো। ঠোঁট উল্টে বলল,
“তুমি আমায় ভালোবাসো না বউ, একটু ভালোবাসো না”

উৎসা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“হটাৎ এমন কথা বলছেন?”

“তুমি আমায় ফেলে চলে গেলে? একটুও বুক কাঁপলো না তোমার? তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না”

উৎসা হাসলো মেহরাবের মিষ্টি অভিযোগ শুনে। এক চামচ সুপ তুলে মেহরাবরের মুখের সামনে ধরে বলল,
“হা করুন”

মেহরাব হা তো করলই না উল্টো উৎসার কোমর আঁকড়ে ধরলো। চঞ্চল কণ্ঠে বলল,
“আমি তোমায় কোথাও যেতে দিবো না। আর এক মুহূর্তের জন্য ছাড়বো না তোমায়”

“ঠিক আছে যেতে দিতে হবে না। এখন হা করুন”

“উহু, তুমি আমার কথা শোনোনি। আমায় রেখে চলে গেছো। আমি খাবো না, কিছুতেই খাবো না”

উৎসা বলল,
“এমন পা*গলামো করে না। আমি প্রমিস করছি, আর কোথাও যাবো না। তাও আপনি হা করুন প্লিজ”

“উহু। তুমি চলে যাবে। আমি তোমায় যেতে দিবো না”

“আমায় যেতে দিতে হবে না। আপনি এভাবেই থাকুন। শুধু হা করিম তাহলেই হবে। সুপটুকু খেয়ে তারপর ওষুধ খেতে হবে নাহলে জ্বর টা আরো বাড়বে”

মেহরাব মানতে নারাজ। ও কোনো মতেই হা করবে না। উৎসা বহু কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালো। একটু একটু করে উৎসা খাইয়ে দিচ্ছে। মেহরাব বাচ্চা ছেলের মতো খাচ্ছে। ওর মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা ছেলে বাহানা করছে। কখনো নাক সিটকাচ্ছে তো কখনো ঝালে হু হা করছে। মেহরাবের আচরণে উৎসার হাসি পেল। তবে হাসলো না। এখন গম্ভীর মুখে না থাকলে মেহরাব আবার এদিক সেদিক করবে। খাওয়ানো শেষ হলে উৎসা মেহরাব কে ওষুধ খাইয়ে দিলো।

উঠতে নিলে মেহরাব খপ করে আঁকড়ে নিলো ওর কোমর। উৎসা হঠাৎ আক্রমণে থতমত খেয়ে গেল। মেহরাব বাচ্চাদের মতো বলল,
“আমি আর ছাড়ছি না তোমাকে”

“বাটিটা রেখে আসি”

“দরকার নেই। এখানেই থাকো”

উৎসা আর উপায় পেল না। মেহরাবের পা*গলামো তে কিছুটা স্বস্তি লাগছে। ওর আজকের আচরণে উৎসার মনে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। ভালো লাগা কাজ করছে। মেহরাব মুখ গুঁজে দিলো উৎসার গলদেশে। উৎসা কেঁপে কেঁপে উঠলো। মুহূর্তের ব্যাবধানে মেহরাব ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। ওর গভীর নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে উৎসার ঘাড়ে। শিরদাড়া বেয়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। কখন যে উৎসার চোখ লেগে গেল ও নিজেও বুঝলো না।

#চলবে?

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব১৬

দুদিন মেহরাবের অ*ত্যা*চা*রে অ*ত্যা*চা*রিত হয়ে উৎসা বেচারির অবস্থা নাজেহাল। এক মিনিটের জন্য মেহরাবকে রেখে কোথাও নড়ার সুযোগ ও পাচ্ছিলো না। মেহরাব ওকে কোথাও যেতেই দেয়নি। একদম বাচ্চাদের মতো আচরণ যাকে বলে। যেমন বাচ্চারা অসুস্থ হলে মাকে ধরে রাখে তেমনই মেহরাব ওকে আটকে রেখেছিলো। পারে না উৎসাকে নিজের সাথে বেঁধে রাখে। যদিও সেই পরিকল্পনাও করেছিল। কিন্তু উৎসার চোখ রাঙানো দেখে আর কথা বাড়ায়নি। চুপ মেরে গেছে। বেচারিকে সারাদিন ওর পাশে বসে থাকতে হয়েছে। উৎসা পারে না হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করে। মেহরাবের পা*গলামো সব সীমা পার করে ফেলেছে। তবুও বেচারি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছে।

উৎসা একটু রুম থেকে বের হলেও মেহরাবের মনে হয়েছে এই বুঝি উৎসা ওকে রেখে চলে যাচ্ছে। দুটো দিনে উৎসা রুমের বাহিরে ভুলেও এক পা ফেলতে পারেনি। মেহরাবের সকল সেবা যত্ন উৎসা নিজেই করেছে। ঘন্টায় ঘন্টায় মাথায় পানি দেওয়া, কাপলে জল পট্টি দেওয়া, গাঁ মুছিয়ে দেওয়া, ওষুধ খাইয়ে দেওয়া সবই উৎসা একা হাতে করেছে। সালেহা বেগম ওকে সাহায্য করেছে। এই যেমন কি কি করতে হবে সেগুলো বলে দিয়েছে, খাবার রুমে এসে দিয়ে গেছে। আর রিনি! রিনি তো মেহরাবের পা*গলামো দেখে উৎসাকে ইচ্ছে মতো খুঁচিয়েছে। উল্টোপাল্টা বলে ওকে লজ্জা দিয়েছে। রীতিমতো টিটকারি করেছে। উৎসা বেচারিকে একদিকে মেহরাবের অ*ত্যা*চার আরেকদিকে রিনির খোঁচা সহ্য করতে হয়েছে। উৎসার দুদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মেহরাব এখন পুরোপুরি সুস্থ। জ্বর একটুও নেই।
————

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে মেহরাব। শার্ট এর বোতাম লাগাচ্ছে।রেডি হওয়ার মাঝে আড় চোখে বার বার দেখছে ঘুমন্ত প্রেয়সীকে। বাচ্চা একটা মেয়ে ঠোঁট উল্টে কোল বালিশ জড়িয়ে কি সুন্দর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। কোলবালিশটাকে দেখে মেহরাবের কাছে কেন যেন ওর সতীন সতীন ফিল আসতেছে। মনে হচ্ছে উৎসা কোল বালিশ না অন্য কোনো ছেলেকে জড়িয়ে আছে। মেহরাবের ইচ্ছে করলো কোলবালিশটা কে মে*রে ভর্তা বানিয়ে ফেলতে। যেভাবে এর আগে উৎসার পিছনে লাগা ছেলে গুলোকে মে*রে ভর্তা বানিয়েছে ঠিক সেরকম ভাবে। কই ওকে তো এত নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে না? উল্টো ওকে পারলে ঠেলে সরিয়ে দেয়। নিজে তো জড়িয়ে ধরেই না মেহরাব ধরতে গেলেও ছ্যাত করে ওঠে। মেহরাব টাই বাধঁতে বাধঁতে একবার উৎসার দিকে তাকালো। অতঃপর ঘড়ি দেখলো। উৎসার কলেজের টাইম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেহরাব ওকে ডাকবে না। বাচ্চা মেয়েটা দুদিন যাবত ওর অনেক সেবা করেছে। আজকে আর কলেজ যাওয়ার দরকার নেই, রেস্ট নেক। মেহরাব রেডি হওয়া শেষে ঘড়ি পড়তে পড়তে উৎসার দিকে এগিয়ে গেল। এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা। পরনের জামা কুঁচকে গেছে। কোমরের পাশটা সরে গেছে। উৎসার উন্মুক্ত মেদহীন পেট বেরিয়ে আছে। মেহরাব বেসামাল হতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে এখন আর জ্বালানো ঠিক হবে না। ওর যন্ত্রনায় দুটো দিন ঠিক মতো ঘুমাতেও পারেনি। মেহরাব উৎসার কোমর অবধি নেমে যাওয়া চাদর টা গলা অবধি টেনে দিলো। ছোটো চুল গুলো মুখের ওপর নেমে এসেছে। বিরক্তিতে উৎসা মাঝে মাঝে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছে। মেহরাব হাসলো উৎসার কাণ্ডে। ফুঁ দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিলো। এতে উৎসা কিছুটা নড়ে চড়ে উঠলো। মেহরাব উৎসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মেয়েটা ওর হাত মাথা থেকে সরিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো আবেশে। মেহরাব কিছুটা চমকে উঠলো। মুহূর্তের ব্যাবধানে উৎসা আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। মেহরাব সতর্কতা সহিত হাত খানা ছাড়িয়ে নিলো। অতঃপর ঝুঁকে উৎসার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে ব্লেজার হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার আগে একবার তার মিষ্টি বউটাকে দেখতে ভুললো না।
————

উৎসার ঘুম ভাঙলো দশটা নাগাদ। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে মেহরাবকে না পেয়ে অবাক হলো। মানুষটা গেল কোথায়? সুস্থ হতে না হতেই আবার কোথায় হাওয়া হলো? ওয়াশরুমের দিকে তাকালো। নাহ সেখানে কেউ নেই। উঠে ব্যালকনিতেও উঁকি ঝুঁকি দিলো সে খানেও নেই। উৎসার ভ্রু কুঁচকে এলো। এতো সকাল সকাল মেহরাব কোথায় গেল? চোখ পড়লো ঘড়ির দিলে। উৎসার মাথায় হাত! ঘড়িতে দশটা বেজে সাত মিনিট। এতো বেলা হয়ে গেল ওকে কেউ ডাকলোও না! আজকেও কলেজ মিস গেল।

উৎসা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। দেখলো রিনি টেবিল গুছাচ্ছে। এগিয়ে গেল ওর কাছে। উৎসাকে দেখে রিনি খোঁচা দিয়ে বলল,
“মহারানীর ঘুম ভাঙলো তবে? বর ছাড়লো তোকে? আমি তো ভাবলাম আরো দুদিন দোর দিয়ে থাকবি। রুম থেকে বেরই হবি না”

উৎসা ভেংচি কেটে বলল,
“এমন ভাবে বলছো যেন আমি তোমার দেবরের সাথে রোমান্স করতে রুমে ছিলাম। উনি অসুস্থ ছিল বলে ওনার কাছে কাছে ছিলাম”

রিনি উৎসার কাঁদে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বলল,
“আমরা কি বুঝিনা ভেবেছো? অসুস্থতা তো জাস্ট বাহানা ছিল। আসল কারণ তো ছিল…..”

একটু থেমে পুনরায় বলল,
“থাক বললাম না। তুই আবার লজ্জা পাবি”

“লজ্জার বাকি রেখেছো কিছু? বেশরম দেবরের বেশরম ভাবি। দুটো একদম একই দলের। আমি আর আমার ভাইয়া ভালো”

“হ্যাঁ ভালোর নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি। তবে একটা সত্যি কথা কি জানিস?”

উৎসা উৎসুক হয়ে সুধালো,
“কি? কি? তাড়াতাড়ি বলো”

“আমার পা*গল দেবরটা তোকে ভীষণ ভালোবাসে”

কথাটা শুনে উৎসা মুখ ভেংচি কাটলো। মুখ বাকিয়ে বলল,
“ভালোবাসে না ছাই। সব আমাকে জ্বালানোর পয়তারা। আমি ওনাকে চিনি না বুঝি!”

রিনি উৎসার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“কঁচু চিনেছিস। তোর ভাইয়া আমায় এতো ভালোবাসে তবুও কখনো এতটা পা*গলামো করতে দেখেনি। যতোটা মেহারব এই দুদিন তোর জন্য করেছে। তোকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়েনি, তুই যদি ওকে ছেড়ে যাস সেই ভয়ে। যেই মানুষটা নিজের অসুস্থ অবস্থায় ও তোকে আঁকড়ে রেখেছে সে যে তোকে ভালোবাসে না এটা আমি মানতেই পারবো না”

উৎসা কথা গুলো আমলেও নিলো না। এক প্রকার ইগনোর করে বলল,
“শুধু দেবরের প্রশংসাই করবে নাকি আমায় কিছু খেতেও দিবে”

রিনি ব্যাস্ত হাতে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,
“বস দিচ্ছি”

খাবার বেড়ে উৎসার সামনে দিতেই উৎসা জিজ্ঞেস করলো,
“আমি যে এতো বেলা অবধি ঘুমালাম ডাকলে না কেন? আজকেও কলেজ যেতে পারলাম না”

শেষের কথা গুলো মন খারাপ করে বলল। রিনি উত্তর করলো,
“আপনার সাহেবের কড়া নিষেধাজ্ঞা আপনাকে যেন না ডাকি। দুদিন আপনি তার সেবা করেছেন তাই রেস্ট নিতে বলেছে। না ডাকার জন্য ছোটো খাটো একটা হুমকিও দিয়েছে”

“এসব ওনার পা*গলামো কথা বার্তা”

“এরপরও বলবি আমার দেবর তোকে ভালোবাসে না?”

উৎসা খেতে খেতে জবাব করলো,
“আলবাত বলবো। একশো বার বলবো”

রিনি ওর মাথায় চাপর দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। উৎসা খাওয়া শেষ করে রুমে এলো। রুমে ঢুকতেই কানে বাজলো ফোনটা রিংটন। কেউ কল দিচ্ছে। উৎসা বিছানার পাশের টেবিলে অবহেলায় পড়ে থাকা ফোনটা তুলে নিলো। ফোনের স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে “My Loving Husband”। উৎসার ভ্রু কুচকে এলো। ও তো নাম্বার সেভ করেনি তাহলে কে করলো? মেহরাব? ভাবনার মাঝেই কলটা কেটে গেল। সেকেন্ডের ব্যাবধানে পুনরায় নতুন উদ্যোমে বেজে উঠলো ফোন। উৎসা সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো শান্ত কণ্ঠস্বর,
“ঘুম ভেঙেছে মহারানী”

“মহারানী”! মেহরাবের এরূপ সম্মোধনে উৎসার হৃদয় জুড়ে শীতলতা ছেয়ে গেল। মৃদু কণ্ঠে জবাব দিলো,
“হ্যাঁ”

অতঃপর খানিক ক্ষণ দুজনের মাঝে নীরবতা। উৎসা এবার নিজেই জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কোথায় গিয়েছেন? অফিসে?”

“হ্যাঁ”

উৎসা অভিমানী কণ্ঠে অভিযোগ করলো,
“এই অসুস্থ শরীরে যাওয়ার কি খুব দরকার ছিলো? আরো একটা দিন রেস্ট নিলে কি হতো?”

উৎসার অভিমানী কণ্ঠে মেহরাবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। এতদিনে মেয়েটা তার সাথে মানিয়ে নিতে পারলো তবে! দুস্টুমির ছলে বলল,
“আমারও ইচ্ছে করছিল না বউয়ের আদর, সেবা, যত্ন ছেড়ে আসতে কিন্তু কি করবো বলো? বাবা, আর ভাইয়া মিলে অফিস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই আসতেই হলো”

“খেয়েছেন?”

“হ্যাঁ, তুমি?”

“এইতো মাত্রই খেয়ে আসলাম। আপনি যাওয়ার সময় আমায় ডাকলেন না কেন? আজকেও ক্লাস মিস গেল”

মেহরাব ধীর কণ্ঠে বলল,
“তোমার ঘুমন্ত মুখ মায়াবী মুখখানা দেখে ডাকতে ইচ্ছে করলো না তাই ডাকিনি। এই দুদিন আমার সেবা করে ভালো মতো ঘুমাতে পারোনি। তাই আজকের দিনটা রেস্ট নেও। কালকে থেকে রেগুলার যেও”

আরো টুকটাক কিছু কথা হলো দুজনের মাঝে। ইদানিং উৎসা আর মেহরাবের সম্পর্ক টা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। উৎসা ধীরে ধীরে নিজেকে মেহরাবের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে।
————
শুক্রবার দিনটা সবারই ছুটি থাকে। সেই মতে উৎসাদের বাড়িতে চলছে জমজমাট আয়োজন। মেহরাবদের বাড়ির সবাই আসবে এই বাড়িতে। সবার আজকে দাওয়াত। হুট্ করে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল। এরপর এদিক সেদিক ব্যাস্ততায় দুই পরিবারের সেভাবে দেখা সাক্ষাৎই হয়নি। দুই পরিবারের মিল ঘটাতে এই আয়োজন। উৎসা সকাল সকাল বাবা বাড়ি এসে উৎফুল্ল মেজাজে আছে। ওর মনে হচ্ছে কতো বছর বাদে নিজের রুমটায় পা রাখলো। কিন্তু বেশি দিন হয়নি ও এ বাড়ি এসে গেছে। তবুও মনে হচ্ছে জনম জনমের দুরত্ব। বাড়িতে পা রেখেই আগে বাবার কাছে ছুটেছে। বাবা পা*গল মেয়েকে পেয়ে উজ্জ্বল সাহেবও মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। তার একমাত্র কলিজার টুকরো মেয়ে। ছেলেটার প্রতি তার এতো ভালোবাসা নেই যতোটা না মেয়ের প্রতি আছে। বরাবরই মেয়েকে আগলে রেখেছেন। ছেলে গোল্লায় যাক, কিন্তু মেয়ের গাঁয়ে একটাও আঁচড় আসতে দেন নি। উৎসা বাবার হাত ধরেই বাহিরে আসলো। সেই দৃশ্য দেখে মিজান সাহেব অভিমানী কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“এখন বাবাকে পেয়ে আমায় ভুলে গেছিস তাই না মা? এই বাবাকে আর বাবা বাবা লাগে না?”

মিজান সাহেবের অভিমানী কণ্ঠে উৎসা হাসলো। কাছে যেয়ে আরেক হাতে মিজান সাহেবের হাত জড়িয়ে বলল,
“ভুলবো কেন? এই বাড়িতে আমার এক বাবা, ওই বাড়িতে আরেক বাবা। দুটো বাবা আমার”

তিন একসাথে হেসে দিলো। উজ্জ্বল সাহেব, মিজান বসলেন ড্রয়িং রুমের সোফায়। দুজনে বেয়াই কিছুক্ষণের ব্যাবধানে মজে উঠলেন আড্ডায়। ওনাদের দেখে বোঝার উপায় নেই দুজনের এই প্রথম পরিচয়। এর আগে টুকটাক কথা হলেও সেভাবে আলাপ হয়নি। উৎসা গেল রান্না ঘরে মায়ের কাছে। তনয়া বেগম রান্না করছেন। হেল্পিং হ্যান্ড মেয়েটা তার হাতে হাতে সাহায্যে করছে। উৎসা মায়ের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে বের হলো।
আশেপাশে মেহরাবের দেখা নেই। উনি আবার কোথায় গেলেন? খেয়াল করলো ওপরে তিয়াস এর রুম থেকে হাসির শব্দ আসছে। দুই বন্ধু শুরু হয়ে গেছে। উৎসা তিয়াসের রুমের সামনে যেয়ে গলা ঝাড়া দিলো। তিয়াস মেহরাবের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত ছিলো। দরজার কাছ থেকে আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকালো। আদরের বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো। কাছে এসেই মাথায় গাট্টা মারলো।
“কিরে পে*ত্নী? কেমন আছিস?”

উৎসা অভিমানী কণ্ঠে অভিযোগ তুললো,
“আমাকে তো ভুলেই গেছো বন্ধুকে পেয়ে। তোমার একমাত্র বোন যে এসেছে সেই খেয়াল আছে তোমার?”

“তোর মতো পে*ত্নীর খবর নেওয়ার সময় আছে আমার? তাও বল কেমন আছিস?”

উৎসা কোমরে হাতে গুঁজে বলল,
“বাঁদরের গলায় ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করছো কেমন আছি?”

তিয়াস ভ্রু কুঁচকে বলল,
“বাই এনি চান্স তুই কি নিজেকে মুক্তোর মালা ভাবছিস? তাহলে তোর ধারণা ভুল বনু। তোকে দেখে শেওড়া গাছের পে*ত্নী ছাড়া আর কিছুই লাগে না”

উৎসা ক্ষেপে গেল। তিয়াসে চুল টেনে ধরে বলল,
“আমি পে*ত্নী? পে*ত্নী তোমার বউ”

“এই একদম আমার বউকে পে*ত্নী বলবি না। আমার বউ একদম পরীর মতো”

“পরিদের তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোমার মতো হনুমানকে তারা বিয়ে করতে যাবে কোন দুঃখে?”

তিয়াস ভাব নিয়ে বলল,
“করবে! করবে। দেখে নিস”

উৎসা ভেংচি কাটলো। তিয়াস এবার মেহরাবকে জিজ্ঞেস করলো,
“বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে বন্ধু?”

মেহরাব একবার আড় চোখে উৎসার দিকে তাকালো। উৎসা মেহরাবের দিকেই তাকিয়ে আছে।
“পে*ত্নী কপালে জুটলে আর কেমন জীবন কাটতে পারে বল বন্ধু”

মেহরাব উদাস, করুণ কণ্ঠে বলে উঠলো কথাগুলো। মনে হচ্ছে বেচারার কতই না দুঃখ। তিয়াস ওর সাথে তালে তালে মিলিয়ে বলল,
“এই জন্যই তোকে বারবার বলেছিলাম পে*ত্নী ঘাড়ে নিস না, নিস না। শুনেছিস আমার কথা? এখন বোঝো মজা”

মেহরাব উত্তর করলো,
“কি করবো বল? আমার তো আবার দয়ার শরীর, কারো কষ্ট দেখতে পারি না”

উৎসা রেগে মেগে তাকিয়ে আছে মেহরাবের দিকে। এর অর্থ হলো,
“আপনাকে একবার বাগে পাই তারপর দেখাচ্ছি মজা”

রাগে নাকের পাটা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। মেহরাব ভীতু চোখে তাকালো। বেশি বলে ফেলল না তো! উৎসা মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেল। উৎসা চলে যেতেই মেহরাব তরী ঘড়ি করে বলল,
“বন্ধু বেশি বলে ফেললাম নাকি? বউ আমার অমন মুখ ঝমটা দিলো কেন? কি করবে এখন? ”

তিয়াস গাঁ ঝাড়া দিয়ে ঝরঝরে কণ্ঠে বলল,
“বেশি কিছু করবে না। তোকে সপ্তাহ খানেক বউ ছাড়া থাকতে হবে এই আরকি। আমি বনুকে চিনি তো! এর কম হবার না। বেশি হলে হতে পারে”

মেহরাব করুণ দৃষ্টিতে চাইলে তিয়াসের পানে। তিয়াস সেসবে মোটেও পাত্তা দিলো না, শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল। পিছনে পড়ে রইলো বেচারা মেহরাব। কেন যে বউ আর শা*লার ঝগড়ায় ঢুকতে গেল? নিজের গালে নিজেই থা*প্পড় বসাতে ইচ্ছে করছে এখন। এমনি নিষ্ঠুর একটা বউ পেয়েছে। মায়া দয়া নেই বললেই চলে। তার মধ্যে এমন করলে মেহরাব থাকবে কি করে? একটা না দুটো না পূর্ব সাত সাতটা দিন! দেখা যাবে এই সাত দিনে বউয়ের অভাবে শুকিয়ে যাবে সে।

#চলবে?