#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২১
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
(প্রাপ্তবয়স্ক-প্রাপ্তমনস্কদের জন্যে)
রাতের আলো আঁধারের খেলায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে এক নারী অবয়ব। নারী অবয়বের পরনের শাড়ির ছেড়ে রাখা আঁচল বাতাসের ঝাপটায় উড়ে যাচ্ছে। খোলা চুল গুলো দুলছে হাওয়ার তালে তালে। নারীটির মাঝে কোনো হেল দোল নেই। সে গেট পেরিয়ে রাস্তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে তার চাতক পাখির ন্যায়। চোখের চাহনিতে আকুলতা। কাউকে তীব্র ভাবে দেখার উন্মাদনা, আকুলতা।
রাত তখন বারোটা নাগাদ। মেহরাব দীর্ঘএক সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরছে। এতো দিন পরিবারের থেকে দূরে থেকে নিজেও ভালো ছিলো না। সালেহা বেগম ছেলের জন্য পা*গলামি করছেন। একটা মেয়ের জন্য আর যাই হোক নিজের পরিবারের মানুষদের কষ্ট দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না! মেয়েটা যেখানে ওকে বোঝেই নি সেখানে ওর অভিমান, ওর অনুপস্থিতি তাকে ভাবাবে এটা ভাবাও ভুল। একজন মানুষের জন্য সবাইকে কষ্ট দেওয়া বোকামো ছাড়া আর কিছুই না। মেহরাব আর সেই বোকামি করবে না। রিনি ফোন দিয়ে বিকেলেই জানিয়েছে সালেহা বেগমের শরীর খারাপ। ছেলের জন্য চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। মেহরাব শুনেই চলে এসেছে। সদর দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। মেহরাব ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল বাবা-মায়ের রুমের দিকে। দরজার ভেতর থেকে আটকানো। তার মানে সবাই ঘুমিয়ে গেছে। এতো রাতে নিশ্চই জেগে থাকবে না! ওর আগেই বোঝা উচিত ছিলো। বিকেলে ঘটনা শুনে বের হতে নিলে কিছু কাজে আটকে যায়। কাজ শেষ করে আসতে আসতে এতো রাত হয়ে গেছে। মেহরাব ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। সিঁড়ি বেয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এলো। দরজা খুলতেই ধরা দিলো অনামিশা। পুরো রুম অন্ধকার। ব্যালকনিতে মৃদু আলোর বাতি খানা জ্বলছে। সেখানে থেকে স্বল্প আলো এসে পড়ছে রুমে। সেই আলোয় আবছা আবছা রুমের জিনিস পত্র দেখা যাচ্ছে। মেহরাবের কপালে ভাঁজ পড়লো কয়েকটা। রুমের লাইট বন্ধ, তাহলে ব্যালকনিতে লাইট কে জ্বালালো। মেহরাবের যতো টুকু মনে পড়ে ও লাইট অফ করে রেখে গিয়েছিল। তাহলে কে জ্বালালো? উৎসা? সেদিন ও যাওয়ার পর উৎসাই তো রুমে ছিলো। জ্বালালে জ্বালাবে তাতে ওর কি?
মেহরাব আবছা আলোয় হাতড়ে রুমের লাইট জ্বালালো। এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা কাবার্ড এর দিকে গেল। পরনের শার্টটা কুঁচকে যাচ্ছে তাই অবস্থা। সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে বেশ ক্লান্ত লাগছে। এই মুহূর্তে গোসল না করলেই নয়! মেহরাব কাবার্ডে কাপড় নিতে গিয়ে খেয়াল করলো পাশে উৎসার কাপড় রাখা। দুজন ভাগাভাগি করেই কাপড় রেখেছে। তাহলে কি মেয়েটা ওর কাপড় নিয়ে যায় নি? কার জন্য রেখে গেছে এগুলো? সে তো আর আসবে না! এগুলো দিয়ে মেহরাব কি করবে? উল্টো মেয়েটার স্মৃতি মনে পড়লে বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে। এইযে তার কাপড় গুলো দেখে মেহরাবের বুকে বিধছে। মেয়েটা কেন ওকে বুঝলো না? ও তো ভালোবাসতে জোর করেনি? ওর একার ভালোবাসাই যথেষ্ট দুজনের ছোট,দুস্টু মিষ্টি সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য। মেয়েটার ওকে ভালোবাসাও লাগবে না। ও একাই ভালোবাসে যাবে। শুধু মাত্র ওকে ভালোবাসার সুযোগ টুকু দিলেই হবে। ওর ভালোবাসা টুকু সাদরে গ্রহণ করলেই হবে। কিন্তু পা*গলী মেয়েটা আর বুঝলো কই? ওর বুকটা ফাঁকা করে দিয়ে গেল। এখন সারাটাজীবন ও কি নিয়ে কাটাবে? থাকবে কি করে মেয়েটাকে ছাড়া? এই মেয়েটাকে পাওয়ার জন্যই তো এতো উন্মাদনা, এতো কিছু। তবুও মেয়েটা বুঝলো কই?
মেহরাব আলতো হাতে উৎসার একটা ড্রেস তুললো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বুকের মাঝে। যতোটা শক্ত করে ধরা যায়। মনে হলো ও বুঝি উৎসাকেই জড়িয়ে ধরেছে। বুকের হাহাকার কিছুটা হলেও কমলো। জামাটা থেকে উৎসার গাঁয়ের ঘ্রান ভেসে আসছে। কি মিষ্টি, মন মাতানো সুভাষ। মেয়েটা হয়তো কখনোই ওর ভালোবাসা বুঝবে না! কতটা আকুলতা নিয়ে মেহরাব তাকে চেয়েছিলো সেটাও বুঝবে না, জানবে না মেহরাবের বুকের ভিতরে থাকা দহনের অস্তিত্ব। মেহরাব কিছুক্ষণ সেভাবেই কাটালো। অতঃপর জামাটা রেখে কাবার্ড বন্ধ করে দিলো। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। চোখ পড়লে ব্যালকনির দিকে। সেখানেই থমকে গেল দৃষ্টি। উৎসা দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। মেহরাব যেতে গিয়েও থেমে গেল। চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো। কেউ নেই সেখানে। নিজের মাথায় নিজেই চাপর দিলো। উৎসা নামক রমণী এখানে আসবে কি করে? এটা মেহরাবের কল্পনা ছাড়া কিছুই না! যেই রমণী তার সাথে থাকবে না বলে বাড়ি ছেড়েছে সে এখানে আসবে কি করে? মেহরাব ভালো করেই জানে উৎসার মাথায় একবার যেই বিষয়টা ঢুকবে সেটা আর পরিবর্তন হবে না। এইযে একবার ভেবে নিয়েছে মেহরাব সাইকো, খু*নি এখন ওকে শত বোঝানো হলেও ওর ধারণা পরিবর্তন করবে না। তবে মেয়েটা বেশ সহজ সরল। একবার কাউকে ভালোবাসলে তার পিছু ছাড়বে না। বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মেহরাব ভাবনা বাদ দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
উৎসা দাঁড়িয়ে আছে মেহরাবের ব্যালকনিতে। একটু আগে উঁকি দিয়ে মেহরাব কে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিলো এক প্রকার। শেষ যাত্রায় এবারের মতো বেঁচে গেছে। লোকটাকে সে নিজের অজান্তেই কতো খানি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সেটা ভেবেই হায় হুতাশ করতে লাগলো। একটু আগের মেহরাবের করা কাণ্ড দেখে নিজের মাঝেই অনুশোচনা জেগে উঠেছে মনে। রিয়াদের কথায় শুনে মানুষটাকে ভুল বোঝা ঠিক হয়নি। উৎসা তো তাকে কতো আজেবাজে কথা শুনিয়েছে। এমনকি সে যেটা করেনি সেই দোষও তার ঘাড়ে দিয়েছে। তারপরও মানুষটা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি, আর না একটা কথা শুনিয়েছে। কেবল ভালোবেসেই গেছে।
সেদিন রিনি আর তিয়াসের কথায় উৎসার বড্ড খারাপ লেগেছে। সত্যি কি ও এতো খারাপ? ও মেহরাব কে বোঝেনি? সময় নিয়ে ভাবে উৎসা। মন থেকে জবাব আসে, হ্যাঁ উৎসা বোঝেনি মেহরাবকে। মেহরাব ওকে ভালোবেসে কাছে রাখতে চেয়েছে আর উৎসা কিনা মেহরাবের কেয়ার, ভালোবাসা গুলোকে দিনের পর দিন অ*ত্যা*চা*র ভেবে গেছে। কথায় আছে,
“আমরা যাদের প্রতি যেমন অভিমত পোষণ করবো আমাদের তাদের কার্যকলাপ ও তেমনই মনে হবে”
এই যেমন মেহরাব ভালোবেসে উৎসার ভালোর জন্য রিয়াদকে কিডন্যাপ করেছে, এমনকি তুলো ধোনাও দিয়েছে। ইমনকে মে*রে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। ওর চোখের আড়ালে কতো জনকে এভাবে সরিয়েছে তার ঠিক নেই। মানুষটা ওকে ভালোবেসে আগলে রাখার জন্য এসব করেছে। সেখানে ও কিনা মানুষটাকে ভুল বুঝলো? ভুল বুঝে উল্টোপাল্টা শুনিয়েছেও। ভুল যেহেতু বুঝেছে সেহেতু সব কিছু ঠিক ওকেই করতে হবে।
বিগত দুটো দিন মেহরাবকে প্রচন্ড মনে পড়েছে। সময়ে অসময়ে লোকটা কল্পনায় এসে ওকে জ্বালিয়েছে। শান্তি মতো দুটো দিন ঘুমাতেও পারেনি উৎসা। আত্মগ্লানি তে ভুগেছে সব সময়। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে করেই হোক মেহরাবের মান ভাঙিয়েই ছাড়বে। সেই মতে মেহরাবের নাম্বারে ডায়াল ও করেছে কয়েকবার। প্রতি বারই মেয়েলি একই সুর ভেসে এসেছে। আশাহত হয়েছে বারবার। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে রিনি কে দিয়ে মিথ্যা বলিয়ে মেহরাবকে বাড়ি এনেছে। খট করে দরজা খোলার শব্দে উৎসা নিজেকে আড়াল করে ফেলল।
মেহরাব গোসল সেরে বেরিয়ে এসেছে। গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে। ভালো করে চুল না মোছার ফলে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ফর্সা মেদহীন উদরে জমেছে বিন্দু বিন্দু পানির অস্বস্তি। মেহরাব ব্যালকনিতে এগিয়ে গেল তোয়ালে মেলে দেওয়ার জন্য। তোয়ালে মেলে দিয়ে পিছনে ঘুরে চলে আসতে নিলে থমকে দাঁড়ালো। চোখের সামনে অপ্রত্যাশিত রমণীকে দেখে নিজের চোখকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। উৎসা মেহরাবের অবস্থা বুঝলো। মুখ টিপে হেসে এগিয়ে গেল। তোয়ালে নিয়ে হাত বাড়ালো মেহরাবের সিক্ত কেশের দিকে। লোকটা বেশ লম্বা। উৎসা মেহরাবের মাথা নাগাল পাচ্ছে না। মেহরাব নিচু হয়ে খানিকটা ঝুঁকলো। উৎসা এক মনে মেহরাবের মাথা মুছে দিতে দিতে বলল,
“অভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? মনে হয় এর আগে আমায় দেখেন নি!”
মেহরাব ঘোরের মাঝে থেকেই বলল,
“তুমি কি সত্যি? নাকি আমার কল্পনা?”
উৎসা কিছু বলার আগেই ফের বলল,
“নাহ তুমি আমার কল্পনাই। কারণ তুমি যেমন মেয়ে আমার তো মনে হয় এটা আমার কল্পনাই”
“এটা আমিই”
মেহরাব ব্যাক্কেলের মতো প্রশ্ন করে বসলো,
“তুমি এখানে কেন? তোমার তো বাবার বাড়ি থাকার কথা ছিলো”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“আমি এখানে কেন মানে? এখানে কি অন্য কারো থাকার কথা ছিলো?”
মেহরাব মাথা দুপাশে নাড়লো। অর্থাৎ না। উৎসা হেসে ফেলল মেহরাবের কাণ্ডে। মানুষটাকে দেখে মনে হলো বাচ্চা একটা ছেলে। কথা বলার ভঙ্গিও তেমনই। বাচ্চাদের মতো করে কথা বলছে, মাথা নেড়ে সায় জানাচ্ছে। কে বলবে এই ছেলেটা সারাদিন মা*রপিট করে বেড়াতো, গু*ন্ডামি করতো, পুরো এলাকায় তার রাজ চলতো। সে কিনা বউয়ের শোকে দুদিনে ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। মেহরাব আলতো কণ্ঠে বলল,
“এটা কি সত্যিই তুমি? নাকি আমার কল্পনা? আমি একবার তোমার ছুঁয়ে দেখতে পারি?”
উৎসা মাথা নেড়ে সায় জানালো। মেহরাব আলতো হাতে এগিয়ে গেল উৎসার পানে। হাল্কা ভাবে জড়িয়ে ধরলো। ভাবলো প্রতিবারের মতো আবারও বুঝি উৎসা হাওয়া হয়ে যাবে। কিন্তু যখন ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো, উৎসা একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো তখন মেহরাব মিনিট ও ব্যায় করলো না। শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো মেয়েটাকে। কতদিন পর শুকনো বুকে এক পশলা বৃষ্টি ছুঁয়ে গেল। সিক্ত হলো মেহরাবের উত্তপ্ত বুক। মেহরাব পারে না উৎসাকে বুকের মাঝে পিষে ফেলে। বেচারি উৎসা চুপচাপ পড়ে রইলো মেহরাবের বুকে। মেহরাব শক্ত করে জড়িয়ে ধরায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাও টু টা করলো না। এতদিন মানুষটাকে কম কষ্ট তো দেয় নি! আজ নাহয় এইটুকু কষ্ট তার হোক! মেহরাব উৎসাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। দুহাতে উৎসার গালে রেখে সারামুখে পা*গলের ন্যায় চুমু এঁকে দিলো। উৎসা চোখ বুজে পাগল লোকটার পাগলামো সহ্য করছে। মেহরাব করুণ কণ্ঠে বলল,
“এভাবে আর কখনো ছেড়ে যাবে না তো!”
“ছেড়ে তো আমি যাইনি, আপনি গিয়েছেন। আমায় একা ফেলে সকাল সকাল চলে গিয়েছেন। তাই আমিও চলে গিয়েছি”
মেহরাব ঠোঁট উল্টে বলল,
“আমি কি এমনি এমনি গিয়েছি নাকি? তুমি আমার ভালোবাসা বোঝোনি। আমায় অবহেলা করেছো, ভুল বুঝেছো সেই জন্যই তো অভিমান করে গিয়েছি”
“গিয়েছেন ভালো করেছেন এখন চুপচাপ রুমে চলুন। এতদিনে ভালো করে খেয়েছেন বলে তো মনে হয়না। মুখ চোখ কেমন শুকিয়ে গেছে”
মেহরাব অভিমানী কণ্ঠে বলল,
“আমার দিকে তাকানোর সময় তোমার আছে? তুমি তো সারাদিন শাশুড়িদের মতো আমার ভুল খুঁজতে থাকো আর আমার সাথে ঝগড়া করো। কথায় কথায় হু*ম*কি দেও আপনার সাথে থাকবো না, চলে যাবে”
মেহরাবের কথা বলার ভঙ্গিতে উৎসা হেসে দিলো। ওকে রুমে বসিয়ে নিজে ছুটলো রান্না ঘরের দিকে। ফিরে এলো মিনিট পাঁচেকের মাথায়। খাবার মাখিয়ে মেহরাবকে খাইয়ে দিতে লাগলো। মেহরাব অবাক হয়ে মেয়েটাকে দেখেছে। এই মেয়েটাই তো সপ্তাহ খানেক আগে তাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছিলো, আর আজ কিনা তার সামনে বসে তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। মেহরাব উৎসাকেও এখান থেকে খেয়ে নিতে বলল।
খাওয়া শেষে মেহরাব ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা প্লেট রাখতে নিচে গেছে। মেহরাব হিমেল হাওয়ায় দাঁড়িয়ে আছে। অশান্ত মনটা এতো দিনে শান্ত হয়েছে। এই কয়েকটা দিন কিভাবে কাটিয়েছে মেহরাব নিজেও জানে না। কেমন ঘোরের মাঝেই কেটে গেছে দিন গুলো। উৎসা এসে মেহরাবের পাশে দাঁড়ালো। মেহরাব সময় ব্যায় করলো না মুহূর্তের ব্যাবধানে উৎসাকে টেনে দুহাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো। উৎসা ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলো। বজ্জাত লোকটা এমনই। হুটহাট আক্রমণ করে বসবে। উৎসার পরনে লাল রঙা শাড়ি। রিনি পড়িয়ে দিয়ে গেছে। মেহরাবের মান ভাঙানোর সমস্ত প্ল্যানই রিনির। মেহরাব উৎসার ঘাড়ে থুতনি রাখলো। উৎসা কেঁপে কেঁপে উঠলো। মেহরাব শাড়ির আঁচল ভেদ করে হাত গলিয়ে দিলো উৎসার উন্মুক্ত উদরে। উৎসা শিউরে উঠেলো। মেহরাবের হাতের ছোঁয়া বেশামাল হচ্ছে ধীরে ধীরে। উৎসা খপ করে ধরে ফেলল মেহরাবের হাত। বেচারির অবস্থা শোচনীয়। মেহরাব ফিসফিসিয়ে বলল,
“থামালে কেন?”
“আমার যেনো কেমন কেমন লাগছে”
“পা*গল পা*গল মনে হচ্ছে নিজেকে?”
উৎসা ঘাড় নেড়ে সায় জানালো। মেহরাব দুস্টু হাসলো। কণ্ঠ খানিকটা নামালো। অতঃপর নেশালো কণ্ঠে বলল,
“চলো এতদিনের দুরত্বের বাঁধ ভেঙ্গে আমরা মিলে মিশে একাকার হয়ে যাই। এই দুরত্ব আর সহ্য হচ্ছে না আমার বউ”
উৎসা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো। ওর বুকের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দম আটকে আসছে। মেহরাব ফের একই কণ্ঠে বলল,
“ক্যান আই হ্যাভ ইউ?”
উৎসার গলা শুকিয়ে আসছে। কি জবাব দিবে বুঝতে পারলো না। ভয়ে হাত পা জমে আসছে। মেহরাব উৎসাকে ছেড়ে দিলো। সরে আসতে নিলে উৎসা মেহরাবের হাত আঁকড়ে ধরলো। মেহরাব তার কাঙ্খিত জবাব পেয়ে গেছে। এক ঝটকায় বউকে কোলে তুলে নিলো। ব্যালকনি থেকে রুমে এসে ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে পর্দা টেনে দিলো। উৎসা কে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। উৎসা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেছে। মেহরাব উৎসার ওপর ঝুঁকলো। এগিয়ে গেল উৎসার নরম গোলাপ রঙা ওষ্ঠের পানে। মুহূর্তেই ওষ্ঠে ওষ্ঠ মিলিয়ে দিলো। উৎসা জমে গেছে। মেহরাবের হাতের বিচরণ এলোমেলো। এদিক সেদিক অবাধ বিচরণ করছে। উৎসার শ্বাস প্রস্বাস বেশামাল হচ্ছে। মেহরাবের উন্মাদনা বেড়ে চলছে। উৎসা হিমশিম খাচ্ছে নিজেকে মেহরবারের পা*গলামো সামাল দিতে। আগে যদি ভুলেও জানতো মানুষটা এতটা উন্মাদ হয়ে উঠবে তাহলে ভুলেও উৎসা তাকে ধারে কাছে ঘেঁষতে দিতো না। ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতো। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। এখন ও পুরোপুরি মেহরাবের আয়ত্তে। চাইলেই নিজেকেই ছাড়িয়ে নিতে পারবে না।
রুমের পরিবেশ উত্তপ্ত। ভালোবাসার উত্তপ্ততা কক্ষ জুড়ে। মেহরাব নিজের সকল ভালোবাসা উজার্ কররে দিচ্ছে প্রেয়সীর মাঝে। উৎসা কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে নালিশ করলো,
“আপনি খারাপ, বড্ড খারাপ”
মেহরাব হাসলো। তৃপ্তির হাসি ওর মুখে লেগে আছে। ছোট্ট করে চুমু খেল উৎসার রাঙা ওষ্ঠে। ফিসফিস করে বলল,
“সরি বউ। বেশামাল হয়ে গিয়েছিলাম। সরি বউ, রাগ করে না। ওয়েট আমি তোমার কষ্ট কমিয়ে দিচ্ছি”
মেহরাব ছোটো ছোটো চুমু এঁকে দিতে লাগলো উৎসার ঘাড়ে। উৎসা সুড়সুড়ি পেয়ে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। মেহরাব মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো প্রেয়সীর খিল খিল হাসির পানে। এই ছোটো জীবনে এর চেয়ে আর বেশি কি চাই? মেহরাব চুমু এঁকে দিলো উৎসার কপালে। উৎসা আবেশে চোখ বুজে নিলো।
#চলবে?
#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
(প্রাপ্তবয়স্ক-প্রাপ্তমনস্কদের জন্যে)
নতুন সকাল, এক নতুন সূচনা। এক স্বচ্ছ, নির্মল, আলোয় মোড়া সতেজতা ঘেরা সকাল। আকাশ তখন স্নিদ্ধ নীল, সূর্য সবে পূর্ব দিগন্ত হতে উঁকি দিচ্ছে। তার কোমল রোদ গাঁয়ে মেখে ধরণী যেন একটু একটু করে জেগে উঠেছে ধীরে ধীরে। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে উৎসা। শেষ রাতে ঘুমিয়েছে বেচারি। অ*স*ভ্য মেহরাব ওকে ঘুমাতেই দেয়নি। তবে অবাক করা বিষয় হলো আজ নতুন করে নতুন এক মেহরাব কে আবিষ্কার করেছে উৎসা। যে কিনা সব সময় উৎসার কমফোর্ট জোন টাই দেখেছে। উৎসা মুড়িয়ে দিয়েছে ভালোবাসার চাদরে।
একে অপরকে সাপের মতো আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। উৎসার এর্লাম বাজছে। কলেজ আছে ওর। মেহরাব টের পেতেই হাতড়ে এর্লাম বন্ধ করে দিলো। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক। একদিন কলেজ না গেলে মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না! উৎসার কপালে উষ্ণ চুমু এঁকে দিয়ে পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।
সকাল তখন আটটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট। উৎসা পিট পিট করে তাকালো। নিজেকে আবিষ্কার করলো মেহরাবের শক্ত হাতের বাঁধনে। মেহরাব ওর কোমরে দু হাত রেখে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই বুঝি উৎসা পালিয়ে যাবে। আজকের নতুন ঘটনা না, বিয়ের পর থেকেই এই পরিস্থিতি সহ্য করে এসেছে উৎসা। বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত এমন দিন কমই গেছে যেদিন গুলোতে উৎসা নিজেকে মেহরাবের বুকে পায়নি। এটা যেন ওর পার্মানেন্ট ঠিকানা হয়ে গেছে। সকাল সকাল উঠে নিজেকে এই মানুষটার বুকে পাবেই পাবে। উৎসার মনো হলো এই প্রশস্ত বুকটা কেবল ওর। ও ছাড়া কারো ভাগ নেই এখানে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই জিভে কামড় দিলো। কলেজের টাইম পেরিয়ে গেছে। উৎসা মেহরাবকে খোচাতে শুরু করলো। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় মেহরাব বিরক্ত হলো, তবে সেটা মুখে প্রকাশ করলো না।
“কি সমস্যা? খোঁচা খুচি করছো কেন? আরো আদর লাগবে নাকি? লাগলে বলো। তাও খোঁচা খুঁচি করে আমার সাধের ঘুম টা ভাঙিও না”
উৎসা চাপর দিলো মেহরাবের বুকে। ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
“অ*স*ভ্য, লুচু লোক। লজ্জা লাগে না সকাল সকাল উল্টোপাল্টা বলতে?”
“আজিব! লজ্জা লাগবে কেন? বউ আমার, মুখও আমার তাহলে বলতে লজ্জা লাগার কি আছে? তুমি শোনোনি সব পুরুষই তাদের বউয়ের সামনে বেলাজ, লাজ লজ্জাহীন , অসভ্য পুরুষ হয়? কোনো পুরুষই তার বউয়ের কাছে সাধু পুরুষ হয়না। সব চেয়ে বড় কথা বউয়ের সামনে লজ্জা পেলে এই জীবনে আর বাবা ডাক শোনা লাগবে না”
উৎসার গাল দুটো লজ্জাও লাল হয়ে আসে। উৎসার মনে হলো লজ্জায় গাল গরম হয়ে উঠছে। কান চেপে ধরে বলল,
“আপনি চুপ করবেন? কখন থেকে বাজে কথা বকেই যাচ্ছে”
“তাহলে তুমিই কাজের কথা বলো”
“আমার কলেজ ছিলো। আপনি আমায় ডেকে দিলেন না কেন?”
“তোমার ক্লান্ত ঘুমন্ত মুখ দেখে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি, তাই”
“আজকের ক্লাসে যা পড়াবে সেটা আমি কোথায় পাবো? সামনে পরীক্ষা, ফেল করলে সব আপনার দোষ”
“একদিন কলেজে না গেলে কিছু হবে না। আমি জানি আমার বউ ব্রিলিয়ান্ট, পরীক্ষায় ফেল সে করতেই পারে না। তাও যদি দরকার হয় আমি নিজে তাকে পড়াবো, তবুও ফেল করতে দিবো না। এখন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ঘুমাও তো”
মেহরাব উৎসাকে পুনরায় চেপে ধরলো বুকে। এই বজ্জাত লোকটার একটাই কাজ। ধীরে ধীরে উৎসা তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।
————
মুখে ছিটা ছিটা পানির অস্তিত্ব টের পেতেই উৎসার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো মেহরাব সবে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। পরনে কেবল সাফেদ রঙা টাওয়াল। ভালো করে শরীর না মোছায় বুকে এখনো বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। এই লোকটার এটাই স্বভাব। ভালো করে চুল মুছবে না, শরীর মুছবে না। এরপর পুরো রুম ভেজাবে। উদাম শরীর মেহরাবের দুই হাতের পেশী স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মেহরাব চুল ঝাড়ার ফলে হাতের পেশী ফুলে ফুলে উঠছে। উৎসা শুকনো ঢোক গিললো। উৎসা চাদর সরিয়ে মুখ বের করে বলল,
“খালি গাঁয়ে ঘুর ঘুর করে কি দেখতে চাচ্ছেন? আপনার বডি আছে সেটাই দেখাতে চাচ্ছেন?”
উৎসার কথা শুনে মেহরাব ওর দিকে তাকালো। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
“দেখাতে তো অনেক কিছুই চাচ্ছি কিন্তু কপালে জুটেছে একটা আনরোমান্টিক বউ। যে চোখের সামনে এতো সুন্দর জামাই থাকতেও পাত্তা দেয় না”
উৎসা ধমক দিয়ে বলল,
“মডেল সেজে ঘুর ঘুর না করে তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পড়ুন”
“কেন?”
“যেটা বলেছিলাম সেটা করুণ”
“আমার রুম আমি যেভাবে ইচ্ছে ঘুরঘুর করবো তাতে তোমার কি? বাই এনি চান্স তুমি কি আমার এই লুক দেখে সিডিউস হচ্ছ? তাহলে বলো, আমি কিছু মনে করবো না”
উৎসার কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। ইচ্ছে করলো বেলাজ লোকটার মুখ চেপে ধরতে। এক রাতেই লোকটা চরম পর্যায়ের বেলাজ, লাগামহীন পুরুষের পরিণত হয়েছে। সামনে কি হবে সেটা ভেবেই উৎসা আঁতকে উঠলো।
“আপনি প্লিজ চুপ করবেন?”
“কেন? আমি কথা বললে তোমার কি?”
“আমার লজ্জা লাগছে। আপনার মতো বেলাজ তো আর আমি না। আমার লজ্জা আছে, লজ্জাও লাগে”
উৎসার কথা শুনে মেহরাব এগিয়ে এলো ওর দিকে। ঝুঁকলো উৎসার দিকে। কানের কাছে মুখ নিয়েছি ফিসফিস করে বলল,
“এতো কষ্ট করে রাতে লজ্জা ভাঙালাম কি এমনি এমনি? বেশি লজ্জা লাগলে বলো, আবার লজ্জা ভেঙ্গে দেই। আমি আবার এই কাজে এক্সপার্ট”
“আপনি! আপনি একটা অ*সভ্য! চরম লেভেলের অ*সভ্য। দূরে যান অ*সভ্য লোক”
“আপাতত দূরে যাচ্ছি, বাট নট ফর অল টাইম। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে নেও। তারপর খেতে চলো”
“আপনি আগে রুম থেকে বের হন তরপর আমি উঠবো”
মেহরাব দীর্ঘশাস ফেলে বলল,
“তোমার যেটা ইচ্ছে”
উৎসা চাদরে লুকিয়ে ফেলল নিজেকে। মেহরাব পাঁচ মিনিটের মাঝে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে উৎসা কে বলে গেল। মেহরাব যেতেই খরগোশের মতো মাথা বের করে আশপাশটা দেখে নিলো। মেহরাব নেই দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। উৎসার পরনে মেহরাবের সাফেদ রঙা শার্ট। যেটা ওর হাঁটু অবধি ঢেকে রেখেছে। এই অবস্থায় লোকটার সামনে পড়লে মেহরাব ওকে লজ্জা দিতে একটুও ভুলতো না। সেই ভয়েই মেহরাবের সামনে বের হয়নি। উঠে বিছানা থেকে নেমে একসেট কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ছুটলো।
মেহরাব নিচে নেমে এলো। সালেহা বেগমের সাথে দেখা করা প্রয়োজন। ওর টেনশনেই তো তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন। মাকে না দেখলে শান্তি লাগবে না। বাবা-মায়ের রুমে উঁকি দিয়েও যখন সালেহা বেগম কে পেল না তখন অবাক হলো। অসুস্থ শরীরে তিনি গেল কোথায়? রান্নার ঘর থেকে টুং টাং শব্দ আসছে। মেহরাব পা বাড়ালো সেদিকে। রান্না ঘরের সামনে এসে চক্ষু চড়ক গাছে হলো। সালেহা বেগম দিব্বি রান্না করছেন। মেহরাব বুঝতে একটও সময় লাগলো না এটা রিনি আর তিয়াসের চাল। দুজন ওকে মিথ্যা বলে এক প্রকার ব্ল্যাক মেইল করেই এনেছে। মেহরাব এগিয়ে গেল রান্না ঘরে। মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছো আম্মু?”
সালেহা বেগম ছেলের কণ্ঠ পেয়ে সাথে সাথে ঘুরে তাকালো। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলো। অভিমানী কণ্ঠে বলল,
“এতদিনে মায়ের খবর নেওয়ার সময় হয়েছে? এলি কেন? যেখানে ছিলি সেখানেই থেকে যেতি। এখন তো আর মাকে লাগবে না। বড় হয়ে গেছিস কিনা!”
মেহরাব মায়ের অভিমানে হাসলো। মেয়ে জাতির এই অভিমান জিনিসটা ওর কাছে বেশ লাগে। এইযে সুন্দর করে অভিযোগ জানায় মেহরাবের নিজেকে ধন্য মনে হয়। মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“তোমার খবর তো আমি সব সময় ভাইয়ার কাছ থেকে নিয়েছি। সন্তান যতোই বড় হোক মাকে ছাড়া কি তার চলে? এই জন্যই তো কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে এসেছি”
সালেহা বেগম ছেলের কান মুলে দিলেন,
“হয়েছে আর ফাপর দিতে হবে না। টেবিলে যেয়ে বস নাস্তা দিচ্ছি। উৎসা কোথায়? মেয়েটা রাতেও খায়নি। তোর জন্য বসে ছিলো”
“ও একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে, আসছে”
মেহরাব টেবিলে বসলো। রিনি ওকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। মেহরাব ধীর কণ্ঠে বলল,
“মিথ্যা কথা বলে আমায় এনে ভালো করেন নি ভাবি। এটা কিন্তু মোটেও ভালো কাজ নয়”
রিনি ধরা পড়ে যাওয়ায় কিছুটা লজ্জা পেল। নিজেকে সামলে বলল,
“একটা পবিত্র সম্পর্ক রক্ষার জন্য মিথ্যা বললে কিছু হবে না। তবুও আপনাদের সম্পর্কটা টিকে থাকুক। ভালো থাকুন দুজন, সুখে থাকুন। আমি এটাই চাই। আপনারা দুজন ছিলেন না মনে হচ্ছিলো বাড়িটা কেমন বিভীষিকা ময় হয়ে উঠেছে। এখন আগের মতো হয়ে গেছে। আমি মনে প্রাণে চাই আপনি আর বনু সব সময় ভালো থাকুন, সুখে থাকুন। তার জন্যই যদি একটু আকটু মিথ্যা বলতে হয় সেটা নাহয় বললাম”
মেহরাব হাসলো। এর মাঝেই নিচে নামলো উৎসা। নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরনে। এক মুহূর্তের জন্য মেহরাবের মনে হলো ওর সামনে দিয়ে নীল পরী হেঁটে আসছে। নীল রঙে উৎসাকে বেশ মানিয়েছে। রঙটা ফুটে উঠেছে ওর গাঁয়ে। উৎসা ও মেহরাবের দিকেই তাকিয়ে আছে। দুজনের অবস্থা দেখে রিনি মিটি মিটি হাসলো। গলা খাকারি দিয়ে বলল,
“চোখা চোখি পড়ে করবেন দুজন, আগে খাবার খেয়ে নেন। বেলা তো কম হয়নি”
উৎসা খাবার খেতে বসে গেল। রিনি ওকেও খাবার বেড়ে দিলো। মেহরাব খাওয়া শেষ করে ওপরে চলে গেল। রিনি পাকড়াও করলো উৎসাকে।
“কিরে মেহরাবের রাগ ভেঙেছে? মান অভিমান কমেছে দুজনের?”
উৎসা লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো। রিনি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“মান অভিমান শেষ হলেই ভালো। আর দুরত্ব বাড়াস না উৎসা। ছেলেটাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর। আমি তোকে জোর করবো না ওকে ভালোবাসতে, তু্ই শুধু ওকে একটু খানি বোঝার চেষ্টা কর দেখবি মেহরাব পুরো দুনিয়ার ভালোবাসা এনে দিবে তোর দুয়ারে। ছেলেটা তোকে পা*গলের মতো ভালোবাসে। তুই ছাড়া ওর দুনিয়া অন্ধকার। ও তোকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। বড্ড বেশি ভালোবাসে তোকে। তু্ই শুধু ওকে একটু বোঝ তাহলেই হবে। আমি চাই তোরা ভালো থাক, সুখে থাক”
উৎসা বুঝলো রিনির কথা গুলো। ও নিজেও ধীরে ধীরে টের পাচ্ছে মেহরাবের উন্মাদনা,ওর ভালোবাসা গুলো। মেহরাব যে সত্যি ওকে ভালোবাসে এতে উৎসার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। উৎসার নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হলো। একটা মানুষ ওকে পা*গলের মতো ভালোবাসে এর চেয়ে সুখের আর কি হতে পারে!
————
উৎসা দুহাতে ট্রে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো। তিয়াস আর মেহরাব মা*রা-মা*রি করছে। তাও আবার কিনা সোফার কুশন দিয়ে? ভাবা যায় এতো বড় বড় ছেলে গল্প বাচ্চাদের মতো কুশন দিয়ে মা*রা-মা*রি করছে? মেহরাব তিয়াসকে মা*রছে আর বলছে,
“শা*লা মিথ্যা কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে আনিয়েছিস”
তিয়াস উল্টে মেহরাব কে মে*রে বলল,
“এই মোটেও আমি তোর শা*লা না। তোর বউয়ের বড় ভাই হয়। সমন্ধি হই, সম্মান দিয়ে কথা বল”
“তোর সম্মানের গু*ল্লি মা*রি। তুই আমায় মিথ্যা বলেছিস কেন? ইতর”
“মিথ্যা না বললে তুই আসতি? তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি আমি”
“তাই বলে মিথ্যা বলবি?”
“অবশ্যই। বড় ভাই হিসেবে আমার দায়িত্ব আমার বোনের চোখে পানি আসতে না দেওয়া। আমার বোন তোর জন্য কষ্ট পাবে আর আমি বসে বসে দেখবো?”
“আমি যখন কষ্ট পেয়েছি তখন তো বোনকে বুঝাসনি! তুই বন্ধু নামের আস্ত একটা হা*রা*মি”
উৎসা দুজনের মা*রা-মা*রি দেখে হাপিয়ে উঠেছে। চি*ল্লিয়ে বলল,
“আপনারা দুজন চুপ করবেন? বাচ্চাদের মতো কি শুরু করেছেন?”
উৎসার ধমকে দুজনেই চুপ হয়ে গেল। চুপচাপ বসে পড়লো সোফায়।
“ভদ্র ছেলেদের মতো চা নাস্তা খান। আরেকবার যদি মা*রা-মা*রি করতে দেখি তাহলে খুন্তি নিয়ে আসবো আমি বলে দিলাম”
তিয়াস ফট করে বলল,
“দোস্ত তোকে বলেছে”
মেহরাব চোখ রাঙিয়ে তাকালো। তিয়াস চুপ করে গেল। উৎসা চলে গেল রান্না ঘরে। বিকেলে ওরা ওদের বাড়িতে এসেছে। মেহরাবও আজকে অফিস যায়নি। তাই বিকেল হতেই দুজন এ বাড়ি চলে এসেছে। উৎসা চলে গেলে তিয়াস বলল,
“আমি কিন্তু তোর কাছে একটা ধন্যবাদ পাই”
“ধন্যবাদ? কেন?”
“এইযে তোকে আর বনুকে মিলিয়ে দিলাম। আমি না বললে তো বনু বিশ্বাসই করতো না। আর না এতো তাড়াতাড়ি তোদের ঝগড়া শেষ হতো। সো ধন্যবাদ দে”
“শা*লা! দুদিন আগে বোঝাতে পারলি না? তাহলে আমায় সাত সাত টা দিন বউ রেখে একা একা থাকতে হতো না। বউ রেখে একা একা ঘুমানোর কষ্ট তুই কি বুঝবি? তুই তো সিঙ্গেল”
“হা*রা*মি! তোর বউয়ের বড় ভাই সেই সুবাদে আমার সামনে একটু তো লাগাম রাখ”
মেহরাব তিয়াসের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুই আগে আমার দোস্ত, তারপর বউয়ের ভাই”
“তাও ধন্যবাদ দিবি না?”
মেহরাবের কাট কাট জবাব,
“না। চাইলে আগামী বছর তোকে একটা ভাগিনা ভাগ্নি দিতে পারি কিন্তু ধন্যবাদ? এই জীবনে না”
তিয়াস উচ্চারণ করলো,
“শা*লা”
দুই বন্ধু হেসে উঠলো। উৎসা আরেকটা ট্রে হাতে করে স্নেক্স নিয়ে এসেছে। দুজন কে হাসতে দেখে অবাক হলো। এই একটু আগে না দুজন মা*রা-মা*রি করছিলো? এখন গলা জরাজোরি করে হাসছে। এদের কাহিনী উৎসা মাথায় ঢুকে না। দুটোই পা*গল!
#চলবে?