#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
ব্যাস্ততম দিন করছে উৎসা। ভাই আর বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা। দুদিকের দায়িত্বই ওর কাঁধে পড়েছে। তানজিলার কোনো বোন না থাকায় অনেক কিছুই উৎসার করতে হচ্ছে। এই যেমন তানজিলার কেনা কাঁটা থেকে শুরু করে জিনিস পছন্দ করে দেওয়া সবই উৎসা কে করতে হচ্ছে। সব দিক সামলে উৎসা হাপিয়ে উঠছে। দিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যাচ্ছে ব্যাস্ততায়। তাও উৎসার র আনন্দের শেষ নেই। নিজের ভাইয়ের সাথে বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়েতে ওর আনন্দটা যেন একটু বেশিই। সব কিছু নিজ হাতে সামলাচ্ছে।
মেহরাব বেচারা উৎসার রুমের ব্যালকনিতে মুখ লটকে কোলের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। ব্যাস্ত হাত চলছে ল্যাপটপের কীবোর্ডে। ওর আর কি করার! করার মতো তেমন কিছুই নেই। ইদানিং বউটাও পাত্তা দিচ্ছে না ঠিক মতো। যেই থেকে তানজিলা আর তিয়াসের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেদিন থেকেই প্লানিং করতে শুরু করে দিয়েছে। কি করবে, কি পড়বে, কিভাবে সব সাজাবে? সব যেন ওর একারই চিন্তা। মেয়েটা নিজেও পা*গল হচ্ছে ওকেও পা*গল করে তুলছে। এইযে মেয়েটার বিহরে মেহরাব শুকিয়ে যাচ্ছে সেই খেয়াল কি আছে মেয়েটার? উঁহু, একটুও নেই। মাঝে মাঝে তো মেহরাবে মনে হচ্ছে মেয়েটা ওকে দিব্যি ভুলে বসেছে। জামাই নামক কেউ যে ওর আশেপাশে আছে তা বেমালুম ভুলে বসেছে। দুদিন বাদেই তিয়াস তানজিলার বিয়ে। সব কাজের দায়িত্ব মহা রানী একা নিয়ে বসে আছে। এইযে দেখতে দেখতে রাত বারোটা পার হতে চলল তার কোনো খেয়াল আছে? তার রুমে যে জামাই নামক একজন বেচারা প্রাণী আছে সেই খবর কি ম্যাডামের আছে? মোটেও না! থাকলে নিশ্চই এতো রাতেও রুমের বাহিরে টই টই করে বেড়াতো না।
ড্রয়িং রুম থেকে সবার কথার আওয়াজ ভেসে আসছে। উৎসার কাজিনরা অনেকেই চলে এসেছে। তাদের সাথেই আড্ডা দিচ্ছে মেয়েটা। মেহরাবের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। নাহ! আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এবার বউ কে তুলে নিয়েই আসতে হবে। নাহলে মেয়েটা আসবে বলে মনে হচ্ছে না! অন্তত সেই লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। কোলের ওপর থাকা ল্যাপটপটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালো। গট গট পায়ে হাঁটা লাগালো ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে।
ড্রয়িং রুমে যেন মিলন মেলা বসেছে। যে যার মতো যেখানে পেরেছে সেখানে বসেই আড্ডা দিচ্ছে। সবার মাঝে উৎসা মধ্যে মনি হয়ে বসে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও গুরু আর বাকিগুলো শিষ্য। সবাই এমন ভাবে বসে আছে। মেহরাব যেয়ে সোজা উৎসার সামনে দাঁড়ালো। এতে অন্তত যদি বউয়ের চোখ পরে ওর ওপর। হলোও তাই। উৎসা নিজের সামনে খাম্বা রূপে মেহরাব কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। বলল,
“আড্ডার মাঝে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কি সমস্যা?”
মেহরাবে সোজা সাপ্টা জবাব,
“আমার সমস্যা তুমি?”
উৎসা অবাক হলো। ও আবার কখন কি করলো? ও তো মানুষটার আশেপাশেই ঘেসেনি বহুক্ষন। সেখানে সমস্যা হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“আমি? আমি কি করলাম?”
“তুমি কি করেছো জানো না?”
উৎসা মেহরাবের কথার মানে বুঝতে না পেরে দুপাশে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ও সত্যিই জানে না ও কি করেছে। মেহরাব সেটা দেখে মনে মনে হাসলো। বুকে হাত গুঁজে বলল,
“বউকে জাপ্টে ধরে না ঘুমলে আমার ঘুম আসে না জানো না? এতো বড় একটা কথা জানার পর ও তুমি বরকে রুমে ফেলে একা একা আড্ডা দিচ্ছ এটা তো রীতিমতো জুলুম। এতো বড় জুলুম করতে তোমার একটুও বুক কাঁপলো না?”
মেহরাবের কথায় উৎসার কাজিনরা মিটিমিটি হাসা শুরু করলো। উৎসা বেচারি পড়েছে লজ্জায়। ও তো সরল মনে জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু কে জানতো এই বেহায়া লোক সবার সামনে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে এসব বলবে! আগে জানলে ভুলেও উৎসা মুখ খুলতো না। লজ্জা সাইডে ফেলে চোখ রাঙিয়ে তাকালো মেহরাবের দিকে। মেহরাব ওর চোখ রাঙানো কে পাত্তা ও দিলো না। উৎসা পড়েছে মাইনকার চিপায়। না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। মেহরাব হেসে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমরা কি বলো? তোমাদের বোন আমার ওপর অন্যায় করেছে না?”
সবাই একসাথে সায় জানালো। মেহরাব যেন এতে আরেকটু মজা পেল। ভাবুক কণ্ঠে বলল,
“তাহলে এখন তাকে কি করা দরকার বলো তো?”
সবার মাঝ থেকে উৎসার কাজিন মিলি বলে উঠলো,
“শাস্তি দেওয়া দরকার”
“হ্যাঁ! এইতো ঠিক ধরেছো শা*লিকা। তোমার বোনকে শাস্তি দেওয়া দরকার”
উৎসা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এই আপনার ফাও কথা শেষ হলে যান তো। ভাগেন আমরা আরো গল্প করবো”
“বউ ছাড়া আমি এক পাও নড়ছি না”
উৎসা মেহরাব কে পাত্তা দিলো না। গল্পে পুনরায় মজে গেল। মেহরাব বউয়ের কাছে পাত্তা না পেয়ে অভিনব পদ্ধতি খুঁজে বের করলো। কাশি দিয়ে মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করলো। বলল,
“গার্লস! আইসক্রিম পার্টি হলে কেমন হয়?”
মেয়ে গুলো লাফিয়ে উঠে বলল,
“হেব্বি হবে”
“আইসক্রিম পার্টি হতে পারে তবে একটা শর্তে”
সবাই একসাথে জিজ্ঞেস করলো,
“কি শর্ত?”
“আমার বউকে আমার হাতে তুলে দেও, তার বদলে
জিতে নেও আইসক্রিম পার্টি। রাজি?”
উৎসা বসে বসে ওদের কাহিনী দেখছে। ওকে আড্ডা থেকে ওঠানোর জন্য কতই না বাহানা করছে লোকটা। কিন্তু মেহরাব তো জানে না ওরা এই শর্ত মানবে না। উৎসাও দেখতে চায় মেহরাব আর কি কি করতে পারে। সবাই একে অপরের দিকে তাকালো। চোখে চোখে কথা বিনিময় হলো ওদের। হুট্ করে হুড়মুড় করে সব গুলো এসে টেনে তুললো উৎসাকে। টেনে টুনে মেহরাবের হাতে উৎসার হাত গুঁজে দিয়ে বলল,
“এইতো আপনার বউ আপনাকে দিয়ে দিলাম, এবার আমাদের আইসক্রিম পার্টি চাই”
মেহরাব উৎসার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলল,
“কালকে তোমরা তোমাদের ট্রিট পেয়ে যাবে। এখন গুড নাইট”
সবাই একসাথে বলে উঠলো,
“গুড নাইট”
উৎসা মীরজাফর গুলোর কাহিনী দেখলো এতক্ষন যাবত। ওদের জন্য ও এতক্ষন রুমে গেল না, আড্ডা দিলো। সেখানে এরা ওর সাথে এমনটা করতে পারলো? সব কয়টা এক নাম্বারের মীরজাফর। উৎসা মেহরাবের হাতের মাঝ থেকে নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টা করে বলল,
“আপনি বললেই হলো নাকি? আমি তো এখন আড্ডা দিবো”
মেহরাব গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল,
“শা*লিকরা…”
মেয়ে গুলো ওকে কথা শেষ করতেও দিলো না। তার আগেই বলে উঠলো,
“এই সবাই চল। আজ আর আড্ডা দিতে হবে না। কাল ভাইয়ার গাঁয়ে হলুদ কতো কাজ। চল এখন যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি”
কথা শেষ করতে দেরি হলেও সবার কেটে পড়তে দেরি হলো না। মিনিটের মাথায় ড্রয়িং রুম ফাঁকা। উৎসা হতোভম্ব হয়ে গেল। মিনিটের মাথায় কি থেকে কি হলো সবটা ওর মাথার ওপর দিয়ে গেল। মিলি যাওয়ার আগে উৎসার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে গেল,
“গুড লাক বনু”
উৎসা ক্যাবলাকান্তের ন্যায় ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সবাই মিনিটের মাঝে হাওয়া। মেহরাব ঝুঁকে এলো উৎসার দিকে। কণ্ঠ নামিয়ে বলল,
“কি ম্যাডাম? এবার যাওয়া যাক?”
উৎসা রেগে মেগে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বলবে তার আগেই মেহরাব পাঁজা কোলে তুলে নিলো ওকে। সোজা হাঁটা দিলো সিঁড়ি বেয়ে রুমের দিকে। হুট্ করে আক্রমণে উৎসা ঘাবড়ে গেল। নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে আঁকড়ে ধরলো মেহরাবের গলা। মেহরাব কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা এসে থামলো বিছানার কাছে। আলতো করে উৎসাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দরজা লাগাতে চলে গেল। ঝড়ের বেগে দরজা লাগিয়ে এসে ঝুঁকলো উৎসার দিকে। শীতল কণ্ঠে বলল,
“এখন কোথায় পালাবে ম্যাডাম? কয়েক দিন যাবত বেশ জ্বালিয়েছো। আজ সব জ্বালানোর হিসেবে নিবো। তাও আবার গুনে গুনে, আর ইউ রেডি মিসেস?”
উৎসা কিছু বলতে পারল না। শুকনো ঢোক গিললো কেবল। দৃষ্টি যেয়ে আটকালো মেহরাবের নেশালো দৃষ্টিতে। ঘোলা আঁখিদয়ে এক অদ্ভুত মাদকতা মেশানো। উৎসা সেই দৃষ্টিতে নজর মিলাতে পারলো না। চোখ নামিয়ে নিলো অগত্যা। মেহরাব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। দুজনের নিঃশ্বাস একে অপরের মুখের ওপর আছড়ে পড়ছে। উৎসা কিছু বলতে পারলো না। ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল মেহরাবের ভালোবাসার শহরে। একটু একটু করে দুজনেই মুড়িয়ে গেল ভালোবাসার চাদরে।
—————
অবশেষে কাঙ্খিত দিন খানা চলে এলো। তিয়াস আর তানজিলার বিয়ের দিন। সকাল সকাল উৎসা চলে এসেছে তানজিলাদের বাড়িতে। ও মেয়ে পক্ষ। আর মেহরাব ছেলে পক্ষ। মেহরাব ওদিকটা সামলাবে আর এদিকটা উৎসা। তানজিলার কিছু কাজিন ও আছে উৎসার সাথে। সবাই মিলে মেহরাবদের ঘোল খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করছে। সব শেষে উৎসা গেল তানজিলার রুমে। তানজিলা কে ওর রুমে সাজানো হচ্ছে। উৎসা যেয়ে তানজিলার পাশে বসে খোঁচা দিয়ে বলল,
“কোথায় ভাবলাম বর যাত্রী পটের বিবি সেজে এসে বান্ধবীর বিয়ে খাবো তা না বান্ধবীর বিয়েতে এসেও আমায় কাজ করতে হচ্ছে। এই জন্যই কি আমি তোর বিয়েতে এসেছি? কামলা দিতে?”
“খেপিস কেন? তু্ই না আমার জানু। তু্ই কাজ করবি না তো করে করবে বল? তু্ই নিজেই তো বলেছিস আমার বিয়েতে নাকি তোর অনেক দায়িত্ব, এখন সামলাও দায়িত্ব”
“ভুলে বলে ফেলেছিলাম ভাই। আমার ভুল হয়েছে আমায় ক্ষমা করে দিন”
তানজিলা হো হো করে হেসে ফেলল উৎসার কথায়। সাথে উৎসাও হাসলো। খানিক পরে মুখটা গম্ভীর করে বলল,
“তোদের বাড়িতে এসে আমার লস হলো রে জানু”
তানজিলা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন?”
উৎসা বেশ উদাস গলায় বলল,
“তোর একটা বড় ভাই নাই যে লাইন মারবো। তু্ই যেমন আমার ভাইয়ের সাথে লাইন মেরে আমার ভাবি হয়ে গেলি, তোর একটা বড় ভাই থাকলে তো আমিও একটু লাইন মারতে পারতাম। কিন্তু আফসোস আমার কপাল পোড়া”
মেয়েটা এমন ভাবে কথা গুলো বলল যেন ওর কতো দিনের কষ্ট, আক্ষেপ এক সাথে বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এলো। তানজিলাও ওর মতো নাটক করে বলল,
“কে বলল আমার বড় ভাই নেই? আছে তো”
উৎসা চমকিত কণ্ঠে সুধালো,
“কে? তাড়াতাড়ি নাম বল”
তানজিলা দাঁত কেলিয়ে বলল,
“মেহরাব ভাই। তিনি তো আমার ভাইয়েরই মতো। তু্ই চাইলে তার সাথে লাইন মারতে পারিস”
উৎসা নাকি সিটকালো। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“ছিঃ! ঔ বেটা প্রেমিক ম্যাটারিয়াল নাকি? ওনার সাথে গু*ন্ডামি যায়, প্রেম না”
“তু্ই একবার তাকে বল তুই তার সাথে প্রেম করতে চাস দেখবি তোকে প্র্যাকটিকালি এতো সুন্দর করে প্রেম করা শিখিয়ে দিবে এই জীবনে আর প্রেম করার নাম নিবি না”
উৎসা তানজিলা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“থাক ভাই আমার প্রেম করার দরকার নাই”
তানজিলা খোঁচা দিয়ে বলল,
“কেন বান্ধবী? আমিও মেহরাব ভাইকে বলছি তোর প্রেম করার শখ জেগেছে। আমার ভাই আবার অনেক দয়ালু। তু্ই চাইলেই তোকে প্রেম করা শিখাবে”
“থাক বইন তোর এতো বড় উপকার করতে হবে না”
“হয়েছে তু্ই এখন রেডি হতে যা, নাহয় পরে মেহরাব ভাই বলবে আমরা তার বউকে খাঁটিয়েছি, সাজতে দেইনি। পরে আমার বকবে”
উৎসা ভেংচি কেটে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছুক্ষনের মাঝে বর যাত্রী চলে এলো। গেটের কাছে তুমুল কথা কাটাকাটি হচ্ছে। টাকা ছাড়া গেট ছাড়া হবে না। মেহরাব সবার দৃষ্টির আড়ালে উৎসার উদ্দেশে চুমু ছুঁড়ে দিলো। উৎসা সাথে সাথে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। এই লোকটা কি এই লোক সমাগমেও ওর মান সম্মান রাখবে না? এখানেও তাকে বেলাজ পনা দেখাতে হবে? বেলাজ লোক একটা! তিয়াস বলল,
“তু্ই বোন হয়ে ভাইয়ের কাছে চাঁদাবাজি করছিস? একটুও লজ্জা লাগছে না? কোথায় ভাইয়ের পকেট বাঁচাবি তা না করে ভাইয়ের পকেট মারছিস?”
“আমি এখন মেয়ে পক্ষ। সো, জ্ঞান না দিয়ে টাকা ছাড়ো। নাহয় ভিতরে ঢুকতে দিবো না”
কি আর করার? তিয়াস মেহরাব কে ইশারা করলেও টাকা দিয়ে দিলো। টাকা পেয়ে উৎসাদের খুশির শেষ নেই। গেটের ফিতা কাঁটা হলে এবার মিষ্টি খাওয়ানোর পালা। উৎসা ইচ্ছে করে একটা মিষ্টি তুলে মেহরাবের সামনে ধরলো। এক গাল হাসি নিয়ে বলল,
“বেয়াই সাহেব শুধু আপনার জন্য”
মেহরাব কিছু ভাবলো না। সরল মনে এক কামড়ে পুরোটা মুখে পুড়ে নিলো। চাবাতে শুরু করলে ধীরে ধীরে টের পেল উৎসার ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠা মুচকি হাসির কারণ। মিষ্টির মধ্যে মরিচের গুঁড়ো দেওয়া। মেহরাব কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করলো না। চুপচাপ পুরোটা খেয়ে নিলো। উৎসা অবাক হলো। এই লোক এতো ঝাল খেল কি করে? মেহরাব ঝুঁকে এলো উৎসার দিকে। ফিসফিসে কণ্ঠে বলল,
“এর হিসাব তুলে রাখলাম বেয়াইন সাহেবা, সময় এলে সুধে আসলে ফেরত দিবো”
বলে দুস্টু হাসি দিলো। উৎসা শুকনো ঢোক গিললো। মেহরাব যে ওর হাল কি করবে কে জানে? যখন করবে তখন দেখা যাবে। এখন যে বেটাকে জব্দ করতে পেরেছে এই অনেক।
—————
তানজিলা তিয়াসের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছেন। তানজিলা বসে আছে তার সামনে। ওর অপর দিকে তিয়াস বসা। তানজিলার পাশে ওর বাবা। উৎসা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কাজি সাহেব যখন কবুল বলতে বলল উৎসার মনে পরে গেল ওর বিয়ের ঘটনা। তানজিলার পাশে ওর বাবা আছে ভরসার হাত হয়ে। উৎসার বিয়েতে ও ওর বাবাকে পাশে পায়নি। অনুভূতি গুলোও কেমন এলোমেলো ছিলো। পরিস্থিতি ছিলো ভিন্ন। উৎসা এসব ভাবছে এমন সময় ওর পাশে এসে দাঁড়ালো মেহরাব। উৎসার কাঁধে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কি ভাবছেন বেয়াইন সাহেবা? চলুন আপনি আর আমিও এই আসরে শুভ বিয়েটা সেরে ফেলি। আর কতো কাল সিঙ্গেল থাকবো বলুন?”
উৎসা মেহরাবের কণ্ঠে পাশ ফিরে তাকালো। এই লোকের মাথা খারাপ হলো নাকি? মেহরাব চোখ টিপে দিলো। উৎসার মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চেপে বসলো। বলল,
“আপনি জানেন আমার বর কে? আপনি আমায় বিয়ে করতে চান জানতে পারলে আপনাকে মে*রে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে”
মেহরাব গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
“আরে কিছু হবে না। আমি আছি না?”
“আপনি জানেন না….”
উৎসাকে থামিয়ে দিয়ে মেহরাব বলে উঠলো,
“চলুন বেয়াইন পালাই দুই জনে, ফিরে আসবো তিনজনে”
বলেই ফ্লায়িং চুমু ছুঁড়ে দিলো উৎসার দিকে। উৎসা হতচকিয়ে গেল। ওর মুখ হা হয়ে গেল। এই লোকের মাথার তার টার কেটে গেল নাকি? নাহলে এমন কথা বলছে কেন?
#চলবে?