অপ্রিয় তুমি পর্ব-২৯

0
61

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৯ (প্রথম অংশ)
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গোধূলি বিকেলে সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। আকাশে পেঁজো মেঘেদের ভেলা। পেঁজো পেঁজো মেঘগুলো গুচ্ছ আকারে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। উৎসা ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাদের এ পাশ থেকে ওপাশে। আপাতত ওর কোনো কাজ নেই। মনটাও ফুরফুরে তাই তো এই বেলায় সূর্য ডোবা দেখতে চলে এসেছে। আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে এক ঝাঁক পাখি। পাখিদের মাঝে বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাড়া। দিন শেষে নির্দিষ্ট ঠিকানায় ফিরে আসতে হয় সবাইকে। তেমনই উৎসাহ ফিরে এসেছে নিজের গন্তব্যে। তানজিলা আর তিয়াসের বিয়েটা বেশ ভালো করেই কেটেছে। উৎসা অনেক আনন্দ করেছে ভাই আর বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়েতে। ওর সকল ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। যেটা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই হয়েছে। তাই উৎসার খুশির শেষ নেই। ওর আনন্দ টা যেন বাকি সবার চেয়ে একটু বেশিই। তানজিলা তিয়াসের বিয়ে শেষ করে বাড়ি ফিরেছে সপ্তাহ খানেক হয় য়ে গেছে। তিয়াসের বিয়ে থেকে এসে মেহরাব বেশ কয়েকদিন যাবত ব্যাস্ত সময় পার করছে। রিনি অসুস্থ থাকায় মাহিন অফিসে বেশি সময় দিতে পারছে না, সাথে মিজান সাহেব ও সব দুই ভাইয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। সব দিক একা সামলাতে হচ্ছে মেহরাব কে। বেচারা একা হাতে সব সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তবুও যতটা পারছে করছে।
————

মাঝে কেটে গেছে কয়েকটা মাস। দিন গুলো যেন চোখের পলকেই কেটে গেছে। কথায় আছে ভালো সময় খুব দ্রুত কেটে যায়। উৎসার কাছেও তেমনটাই মনে হলো। দিন গুলো যেন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাড়াতাড়িই চলে গেছে। এডমিশন কোচিং, পড়াশোনা, এডমিশন এক্সাম সব মিলিয়ে মাস গুলো খুব দ্রুতই কেটে গেছে। এই কয়েক মাসে মেহরাবের সাথে উৎসার সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। দুজনে মাঝে দুস্টু মিষ্টি একটা সম্পর্ক গড় উঠেছে।

উৎসা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে। কয়েকটা ক্লাস ও করেছে। তানজিলা আর ও একই ভার্সিটির একই ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হয়েছে। পাবলিকে দুজনের এক জনও চান্স পায়নি। যদিও উৎসা পাবলিকের জন্য সেভাবে পড়েনি। এডমিশন কোচিং এ ভর্তি হলেও পড়াশোনায় বেশ ফাঁকিবাজি করেছে উৎসা। পড়াশোনা বাদ দিয়ে রিনির কাছে যেয়ে বসে থাকতো, আড্ডা দিতো। পড়াশোনার ধারে কাছে তেমন ভাবে ঘেঁষেনি। মেহরাব ও ওকে বেশি প্রেসার দেয়নি। সেই মতে যতোটা ফাঁকিবাজি করা যায় ঠিক ততটাই ফাঁকিবাজি করেছে উৎসা। ফল স্বরূপ পাবলিকে চান্স পায়নি। পাবলিকে চান্স পাওয়া নিয়ে ওর মাঝে কোনো হেল দোল নেই। ওর ভাষ্য মতে এতো পড়ে পাবলিকে চান্স ও পাবে না। করণ ওর পক্ষে এতো পড়া সম্ভব না। মেহরাব ও বেশি জোর করেনি। কারণ এইচ এস সি’র সময় উৎসাকে বেশ প্রেসার দিয়েই পড়িয়েছে। পড়ায় ফাঁকিবাজ মেয়েটা যে এতটা পড়েছে এই অনেক। ওর সামর্থ আছে নিজের বউকে প্রাইভেট এ পড়ানোর। সেই মতে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।
—————

পর পর তিনটা ক্লাস শেষ করে ভার্সিটির ক্যান্টিনে এসে বসলো উৎসা আর তানজিলা। দুজনের অবস্থাই কাহিল। এখনো দুটো ক্লাস বাকি আছে। কিন্তু দুজনের একজনেরও ক্লাস করার মুড নেই। উৎসা তানজিলার দিকে তাকালো। তানজিলা বেশ আয়েসি মেজাজে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র ঘুরে ফিরে মুড ঠিক করে এসেছে। উৎসা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে পে*ত্নী? এখনো দুইটা ক্লাস বাকি সেই খেয়াল আছে? এতো ফুরফুরে মেজাজে আছিস কি করে?”

“চাইলেই থাকতে পারা যায়। আর ক্লাস দুইটা কেন হাফ ক্লাস ও হওয়ার চান্স নাই। সো চিল জানু। আমি তো চিল মুডে এখন বাড়ি যাবো”

“ক্লাস হওয়ার চান্স নাই মানে?”

“একটু পর বাস্কেট বল টুর্নামেন্ট শুরু হবে, তাই ক্লাস ক্যানসেল করা হয়েছে”

উৎসা ছোটো খাটো চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“ইয়াহু!”

হুট করে চিৎকার দেওয়ার আশেপাশের কিছু মানুষ ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। উৎসা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। অসস্তি হলো। সবাই পুনরায় নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত হলে উৎসা তানজিলার দিকে ঝুঁকে বলল,
“ক্লাস যেহেতু নেই, তাহলে চল বাড়ি চলে যাই”

তানজিলা কপাল কুঁচকে বলল,
“এই তু্ই ইদানিং বাড়ি বাড়ি করিস কেন রে? ভার্সিটি এসেও দুদন্ড শান্তিতে বসিস না। বাড়িতে কি তোর? বাড়িতে জামাই রেখে এসেছিস?”

“জানিসই তো রিনি আপুর শরীর ভালো না। আম্মু সারাদিন রান্না ঘর সামলায়। আমি থাকলে আপুর খেয়াল রাখতে পারবো। তু্ই গেলে চল, নাহয় আমি একাই চলে যাচ্ছি”

উৎসা উঠে দাঁড়ালো। তানজিলাও ওর সাথে উঠতে উঠতে বলল,
“আমার ও এখানে থেকে কাজ নেই। এর চেয়ে ভালো বাড়ি যাই। তোর ভাইয়ের সাথে একটু প্রেম আলাপ করি, কাজে দিবে”

উৎসা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো। বেস্ট ফ্রেন্ড কে ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে যেন ও ভুল করে ফেলেছে। শেষে কিনা নিজের বড় ভাইয়ের প্রমালাপ ওকে শুনতে হচ্ছে। তানজিলা উৎসার চাহনি পাত্তা দিলো না। এগিয়ে গেল সামনের দিকে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দুজন দুজনকে বিদায় দিয়ে দুই দিকে চলল। ভার্সিটি থেকে দুই দিকে দুজনের বাড়ি। তাই এখন আর একসাথে যাতায়াত হয়না দুজনের।

উৎসা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেই আগে ছুটলো রিনির রুমের দিকে। এটা ওর নিত্য দিনের কাজ। বাড়ি এসেই আগে রিনির কাছে যাবে। রিনি আগের চেয়ে বেশ মুটিয়ে গেছে। পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে বলা চলে। উৎসা তো শিওর রিনির যমজ পুচকু হবে। রিনি আর মাহিন এখন নিচের ঘরেই থাকে। রিনির ওপরে উঠতে কষ্ট হবে বলে অনেক আগেই ওরা নিচে শিফট হয়েছে। উৎসা রুমে ঢুকেই দেখতে পেল রিনি খিচ মেরে বসে আছে। চোখ মুখ কুঁচকে পেটে হাত রাখা। উৎসা ছুটে গেল রিনির কাছে। পাশে বসে হন্তদন্ত হয়ে ব্যাকুল কণ্ঠে সুধালো,
“আপু কি হয়েছে তোমার? কষ্ট হচ্ছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? বলো আমাকে”

ব্যাথার প্রকপের রিনি কিছু বলতে পারছে না। দাঁত খিচে রয়েছে। উৎসা বিচলিত হলো। কি করবে কিছু বুঝতে পারলো না।
“পেটে ব্যথা করছে? ভাইয়া কোথায়?”

রিনি কোনো মতে অস্ফুস্ট স্বরে উচ্চারণ করলো,
“পেটে প্রচন্ড ব্যথা করছে। তোর ভাইয়া অফিসের জরুরি মিটিংয়ে গেছে। ও যেতে চায় নি আমিই জোর করে পাঠিয়েছি”

“কি যে করো না তুমি! দাড়াও আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসছি”

উৎসা ছুটলো রান্না ঘরের দিকে। সালেহা বেগম নিশ্চই রান্না করছেন এই সময়। তড়িৎ গতিতে রান্না ঘোরে যেয়ে হুড়মুড় করে বলল,
“আম্মু দেখে যাও আপু কেমন করছে”

দুজন মিলে রিনির রুমে এলো। রিনির অবস্থা বেশি ভালো না। সালেহা বেগম উৎসাকে তাড়াতাড়ি করে মাহিকে ফোন করতে বললেন। এমন একটা সময় বাড়িতে কোনো ছেলে নেই। রিনিকে যতো দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নিতে হবে। উৎসা মাহিনের নাম্বার ডায়াল করবে এমন সময় তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকলো মাহিন। রুমে প্রবেশ করেই জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি ঠিক আছো তো?”

উৎসা বলল,
“আপুর পেটে ব্যথা করছে। এখনই আপুকে হসপিটালে নিতে হবে”

“এই জন্যই আমি বারবার করে যেতে চাইছিলাম না। আমার কথা শুনলে তো! এই সময় আমার তোমার পাশে থাকাটা জরুরি ছিলো। কিন্তু তুমি কি করলে?”

মাহিনের কথার মাঝে ওকে থামিয়ে দিলেন সালেহা বেগম। বললেন,
“মাহিন এটা বকাবকির সময় না। মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে। ওকে তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিতে হবে। তাড়াতাড়ি”

মাহিন কোনো দিকে তাকালো না। এক ঝটকায় রিনিকে কোলে তুলে বেরিয়ে গেল। ওদের পিছনে উৎসা আর সালেহা বেগমও ছুটলো।
—————

হসপিটালের করিডরে চিন্তিত মুখে বসে আছে সবাই। ভিতর থেকে কোনো শব্দ আসছে না। একটু আগেও রিনির চিৎকার ভেসে আসছিলো। রিনি মেয়েটা বেশ সাহসী এবং শক্ত মনের। সারা রাস্তায় দাঁতে দাঁত খিচে ছিলো। কিন্তু শেষ মেষ ব্যথার তীব্রতায় কান্না করে দিয়েছে। রিনির কান্নায় উৎসা নিজেও কান্না করে দিয়েছে।

মাহিনের মনের মাঝে ঝড় বইছে। নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর কান্না যেন ওর বুকে বিধছিলো। মেহরাব একটু আগেই এসে পৌঁছেছে। মিটিং কোনো মতে শেষ করে মাহিন বেরিয়ে এসেছিলো। মেহরাব মিটিং সম্পূর্ণ শেষ করে কাজ করছিলো এমন সময় উৎসার কল পেয়ে ছুটে এসেছে। ভাইকে সান্তনা দিয়ে এলো প্রেয়সীর কাছে। মেয়েটা এক কোণে বসে চুপচাপ কান্না করছে। মেহরাব পাশে বসে উৎসাকে বুকে টেনে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে সুধালো,
“কান্না করছো কেন বোকা মেয়ে?”

উৎসা কন্দনরত অবস্থায় বলল,
“আপুর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে কান্না করছিলো আপনি জানেন? আমার তো আপুর কান্নার আওয়াজে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি পারলো এক ঝটকায় আপুর কান্না থামিয়ে দেই। কিন্তু এখন আপুর কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না কেন? আপু চুপ হয়ে গেল কেন? কি হয়েছে আপুর?”

“কিছুই হয়নি। ভাবি ঠিক আছে। তুমি শান্ত হও”

মেহরাব উৎসাকে এটা সেটা বলে সান্তনা দিচ্ছে। এর মাঝেই ভিতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। মাহিনের মনে হলো ওর বুকের ওপর থেকে পাথর নেমে গেল। মিনিট দশেকের মাঝে নার্স শুভ্র রঙা তোয়ালে মুড়িয়ে ফুটফুটে শিশুকে নিয়ে এলো। মাহিন এগিয়ে গেল সামনে। কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে তুলে নিলো বাচ্চাটাকে। এর মাঝেই আরেকজন আরেকটা বাচ্চা কোলে নিয়ে বেরিয়ে এলো। সবার দৃষ্টিতে অবাকতার ছাপ। নার্স সবার রিয়েকশন দেখে বলল,
“কংগ্রাচুলেশন মিস্টার মাহিন। আপনি যমজ বাচ্চার বাবা হয়েছেন”

সবার অবাক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রিনি প্রেগনেন্ট থাকা অবস্থায় কখনো জানতে চায়নি ওর ছেলে বেবি হবে নাকি মেয়ে। ও সব সময় ডক্টর কে জিজ্ঞেস করতো,
“আমার বেবি সুস্থ আছে তো?”

ছেলে না মেয়ে ওর সেটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। যেটাই হোক ও তাতেই খুশি। উৎসা ওর ফোলা পেট দেখে প্রায় সই বলতো,
“দেখো তোমার যমজ বেবি হবে”

রিনি তখন হেসেই উড়িয়ে দিতো। যদিও ওর ও মাঝে মাঝে মনে হতো কিন্তু সেভাবে পাত্তা দেয় নি। মেহরাব আরেকজন কে কোলে তুলে নিলো। উৎসা ধীর পায়ে এসে মেহরাবের পাশে দাঁড়ালো। মিন মিনে কণ্ঠে বলল,
“আমি বাবুকে কোলে নিবো। আমায় দিন”

মেহরাব ওর দিকে ফিরলো। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“এক বাবু আরেক বাবুকে কোলে নিবে ব্যাপার টা এমন হয়ে গেল না?”

“এখানে আপনি আরেক বাবুর কোথা থেকে পেলেন?”

“এইযে আমার শাশুড়ির বাবু দাঁড়িয়ে আছে। যাকে আমি মানুষ করছি”

উৎসা লজ্জা পেল। লজ্জায় গাল লাল হয়ে উঠলো। লজ্জা কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“তাহলে তো আপনার জেল হওয়া দরকার”

মেহরাব কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন?”

উৎসা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে”

“বাহ্! ম্যাডাম আমার কথায় আমাকেই ফাঁসিয়ে দিলেন?”

উৎসা একটু ভাব নিয়ে বলল,
“দেখতে হবে না বউ টা কার! এখন পুচকু কে দিন তো আমার কোলে”

এক প্রকার ছিনিয়ে মেহরাবের কোল থেকে পুচকে কে কোলে তুলে নিলো উৎসা। কোলে নিয়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো বাচ্চাটার দিকে। মেহরাব তাকিয়ে আছে উৎসার হাসি মাখা মুখের দিকে। মেয়েটা বাচ্চা বেশ পছন্দ করে। যবে থেকে শুনেছে রিনির বাবু হবে সেই থেকেই বাবুদের নিয়ে তার কতো প্লানিং। ওর যেন আনন্দের শেষ নেই। এই যে ছোটো ছোট হাতে পুচকে কে কোলে আগলে রেখেছে। উৎসা পারছে না পুচকু কে বুকের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলে। মেহরাব মুগ্ধ নয়নে প্রেয়সীর পানে তাকিয়ে রইলো। উৎসা হুট করে মেহরাবের পাশে এসে দাঁড়ালো। মেহরাবের শার্ট খানিকটা টেনে ধরলো। ফিসফিসে কণ্ঠে বলল,
“একদিন আমাদেরও এমন একটা পুচকু হবে। আমি তাকে আদর করবো”

মেহরাব হাসলো মেয়েটার বাচ্চামো দেখে। ওর মতোই ফিসফিস করে বলল,
“আগে বড় হও তারপর”

উৎসা তেতে উঠে বলল,
“আমি বড়ই আছি”

মেহরাব একবার উৎসার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করলো। অতঃপর ব্যাঙ্গ করে বলল,
“বাচ্চা”

উৎসার ইচ্ছে করলো রাগে দুঃখে লোকটার মাথা ফাটিয়ে ফেলতে। ও কোন দিক দিয়ে বাচ্চা? ভার্সিটি তে পড়ুয়া মেয়ে আর যাই হোক বাচ্চা না। আর যদি বাচ্চাই হয়ে থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করেছে কেন? উৎসা রাগের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,
“আমি যদি বাচ্চা হয়ে থাকি তাহলে আমায় বিয়ে করেছেন কেন? আমাকে আমার বাবার বাড়ি দিয়ে আসুন”

“সেটা তো দেওয়া যাবে না বউ। এই বাচ্চা মেয়েটাকে ছাড়া যে আমার এক মুহূর্ত ও চলবে না। তাকে দিয়ে দিলে আমি কিভাবে থাকবো?”

উৎসা কোনো উত্তর করলো না। কেবল মুখ ভেংচি কাটলো। সব এই বজ্জাত লোকের ধান্দাবাজি। ধান্দাবাজ লোক একটা!

#চলবে?

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৯ (বাকি অংশ)
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

নিকষ কালো আঁধারের চাদরে আচ্ছাদিত ধরণী।
ব্যস্ত দিনের শেষে জ্বলতে থাকা হলুদ আলোয় পথঘাট আলোকিত, গাড়ির হর্ন কমে এলেও দূর থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসে এক-আধটু শব্দ। রাস্তার পাশে সোডিয়াম আলো জ্বলছে মিটি মিটি। ব্যালকনির রেলিং এ দুহাতে ভর দিয়ে বাহিরের দৃশ্য উপভোগ করছে মেহরাব। যদিও ওর সামান্য তম ইচ্ছে নেই বাহিরে দৃশ্য দেখার। তবুও দেখতে হচ্ছে। একা একা কার কতক্ষন ভালো লাগে? সেই সন্ধ্যা থেকে রুমে বসে আছে। বসে বলতে কোলে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কিছু কাজ করছিলো। সন্ধ্যা থেকে এই পর্যন্ত হাতে গোনা দুবার উৎসা নামক রমণীর দেখা পাওয়া গেছে। সে এখন সংসার সামলাতে পুরো পুরি গিন্নি হয়ে গেছে। সারাদিন রান্না ঘর, রিনির পুচকু দুটোকে নিয়েই তার বেলা কেটে যায়। মেহরাবের তো মাঝে মাঝে মনে হয়ে পুচকু দুটো রিনি আর মাহিনের না বরং উৎসার। উৎসা সারাটাদিন ওদের নিয়ে মেতে থাকে। রিনি একা দুজনকে সামলাতে পারে না তার ওপর অসুস্থ শরীর! উৎসা তাই সারাদিন ওর কাছে কাছে থাকছে। সারাদিন পুচকুদের নিয়েই কেটে যায় ওর বেলা। ইদানিং পড়াশোনায় ও মনোযোগ নেই মেয়েটার। ঠিক মতো ভার্সিটিও যাচ্ছে না। বাচ্চাদের নিয়েই মেতে আছে। মেহরাব ভেবে নিলো উৎসাকে কড়া করে কিছু একটা বলতেই হবে। নাহলে মেয়েটা শুধরানোর না।

মেহরাব একটা জিনিস কয়কে দিন ধরেই লক্ষ্য করছে। উৎসা ওকে কিছু একটা বলতে চাইছে। মেহরাব কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে সেই জন্যই ইচ্ছে করে বুঝেও না বোঝার ভান করছে। উৎসা কথায়, কাজে ইঙ্গিতে মেহরাব কে বুঝিয়ে দিচ্ছে তবুও ও এমন ভাব করছে যেন ও কিছুই বুঝতে পারছে না।

সব কাজ শেষ করে রুমে প্রবেশ করলো উৎসা। চোখ বুলালো পুরো রুমে। রুমের কোথাও মেহরাব কে না দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো। উঁকি দিয়ে দেখে নিলো ব্যালকনি। কাঙ্খিত মানুষটার দেখা পেতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। উৎসা একবার নিজের দিকে তাকালো। পরনের জামা ঘামে ভিজে গেছে। সাথে শরীর থেকে বমির গন্ধ ভেসে আসছে। পুচকু কে খাওয়াতে গিয়েছিল ও। খাওয়ার মাঝে পুচকু বমি করে নিজের শরীর সাথে ওকেও মাখিয়ে দিয়েছে। উৎসা এক সেট কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। মেহরাব ব্যালকনি থেকে এতক্ষন উৎসার কাণ্ডই দেখছিলো।

উৎসা বেরিয়ে এলো মিনিট দশের মাথায়। পা রাখলো ব্যালকনিতে। মেহরাবের থেকে দুই হাত দুরুত্ব রেখে দাঁড়ালো। মেহরাব ইচ্ছে করে ভান ধরে থাকতে চাইলো। কিন্তু সেটা হতে দিলো না উৎসা। মেয়েটা গোসল করে বেরিয়েছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। জামার পিছনের দিকটা ভিজে যাচ্ছে সেই খেয়াল তার আছে? সারাদিন সবার খেয়াল রেখে বেড়ায় আর নিজের বেলায় শুন্য। মেহরাব ব্যাস্ত হাতে উৎসার চুলের ভাঁজে তোয়ালে চালাতে চালাতে প্রশ্ন করলো,
“খেয়াল কোথায় থাকে তোমার? চুলের পানিতে যে জামা ভিজে যাচ্ছে সে খেয়াল আছে? সারাদিন সবার খেয়াল রাখলে হবে? নিজের খেয়াল কে রাখবে?”

উৎসা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। অতঃপর এক গাল হাসি নিয়ে বলল,
“আপনি! আমার খেয়াল রাখার জন্য তো আপনি আছেন”

মেহরাব এর পৃষ্ঠে বলার মতো কিছুই পেল না। মেয়েটা ভালোই কথার জবাব দেওয়া শিখেছে। তাকে এখন কোনো কথা বলে পার পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। মেহরাব চুল মুছতে মুছতে প্রশ্ন ছুড়লো,
“এতক্ষনে ঘরে আসার কথা মনে পড়লো? না এলেও তো পারতে, পুচকুদের কাছেই থেকে যেতে”

শেষের কথাটা তীব্ৰ অভিমান নিয়ে বলল মেহরাব। উৎসা বলল,
“এভাবে বলছেন কেন? আমি ইচ্ছে করে ছিলাম নাকি? আপু দুজন কে একা হাতে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তার ওপর আপু অসুস্থ তাই জন্যই তো আসতে দেরি হয়েছে”

“সবার জন্য আপনার সময় হয়, সবার জন্য আপনার চিন্তা হয়। সবাইকে আপনার চোখে পড়ে শুধু মাত্র একজন ছাড়া”

উৎসা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“সেই একজন টা কে?”

মেহরাব সেকেন্ড সময় ব্যায় করলো না। ঝট পট উত্তর করলো,
“কে আবার? আমি”

উৎসা হো হো করে হেসে উঠলো। গাঁ দুলিয়ে হাসছে মেয়েটা। হাসির দাপটায় পুরো শরীর দুলছে। ততক্ষনে উৎসার চুল মোছা শেষে টাওয়াল পাশে রেখে মেহরাব আঁকড়ে ধরলো উৎসার কোমর। মেয়েটা হেসেই যাচ্ছে। উৎসার খিল খিল শব্দ মেহরাবের বুকে সমুদ্ররের উত্তাল ঢেউয়ের ন্যায় আছড়ে পড়ছে। অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার হাসিতে। মেহরাব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে প্রেয়সীর হাসি মুখের পানে। উৎসা হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে থমকে গেল। মেহরাবের দৃষ্টিতে দৃষ্টি ঠেকতেই চুপ মেরে গেল। উৎসাকে থামতে দেখে মেহরাব জিজ্ঞেস করলো,
“কি হলো থামলে কেন?”

“কিছু না”

দুজনের মাঝে নীরবতা। উৎসা কিছু মনে পড়তেই মেহরাবের গলা জড়িয়ে ধরলো। হুট করে গলা জড়িয়ে ধরায় মেহরাব কিছুটা চমকালো। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলো না। উৎসা মিহি কণ্ঠে বলল,
“শুনুন না!”

“বলো, শুনছি”

উৎসা আরো কিছুটা নিকটে এলো। ধীর কণ্ঠে বলল,
“একটা জিনিস চাইবো, দিবেন?”

“দেওয়ার মতো হলে দিবো”

উৎসা গাল ফুলিয়ে বলল,
“তাহলে বলবো না”

মেহরাব ভ্রু কুঁচকে চাইল। ও হয়তো বুঝতে পারছে উৎসা কি চাইতে পারে। মুখে বলল,
“তাহলে বলো না”

“আপনি এমন কেন? কোথায় বউ একটা জিনিস চাইছে সেটা এনে দিবেন তা না করে কেমন করছেন”

“বউ উল্টো পাল্টা জিনিস চাইলেই এনে দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই”

“উল্টোপাল্টা জিনিস না তো”

“তাহলে কি?”

উৎসা থেমে গেল। মেহরাব কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করলো,
“কি চাও? ঝট পট বলে ফেলো”

উৎসা মেহরাবের দিকে এগিয়ে গেল। মুখটা মেহরাবের কানের কাছে নিয়ে ধীর কণ্ঠে বলল,
“পুচকু!”

মেহরাব থমকে গেল। মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। মেয়েটা নতুন পা*গলামো শুরু করেছে। রিনির পুচকু দুটোকে নিয়ে বাড়ি আসার পর থেকেই ওর মাথায় পুচকুর ভুত চেপেছে। হুটহাট একজনক কোলে করে নিয়ে এসে বলবে,
“আমাদের ও এমন একটা পুচকু হলে কেমন হবে?”

মেহরাব সে সব পাত্তা দেয়নি। আজ তো সরাসরি বলে বসলো। এখন কি উত্তর দিবে মেহরাব?
মেহরাব কে চুপ করে থাকতে দেখে উৎসা পুনরায় বলে উঠলো,
“কি হলো? কিছু বলছেন naনা কেন? দিবেন না আমায়? আমার পুচকু চাই”

“সময় হলে পাবে”

“কোনো সময় টময় না। আমার এখনই চাই”

“জেদ করে না উৎসা। আর না পুচকু মামা বাড়ির মোয়া, আমি চাইলাম আর তোমায় এনে দিলাম”

“আমার পুচকু চাই মানে চাই”

উৎসার এক জেদ। ওর চাই মানে চাই। কোনো কথা শুনছে না মেয়েটা। মেহরাব উৎসাকে নিজের কাছে টেনে বলল,
“দেখো, তোমার বয়স কম। ছোটো মানুষ তুমি। একটা বাচ্চা সামলানো এতো সহজ না। প্রেগনেন্সির সময় অনেক সমস্যা হতে পারে। আর বাচ্চা নেওয়ার সময় তো চলে যাচ্ছে না, তাই না? তুমি এখন ভাবির পুচকু দুটোকে সামলাও। ওদের থেকে ট্রেনিং নেও পড়ে আমাদের পুচকু এলে তাকে সামলাতে তোমার সুবিধা হবে”

উৎসা তির্যক দৃষ্টিতে মেহরাবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি আমায় পুচকে এনে দিবেন না?”

“আপাতত না”

“দিবেন না”

“বললাম তো না। এখন তুমি ছোটো। আগে বড় হও তারপর”

“আপনি এমন করছেন কেন? ভার্সিটিতে পড়ি আমি, ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে আর যাই হোক ছোটো না। তার চেয়ে বড় কথা আমি বাচ্চা সামলাতে পারবো”

“আমার কাছে তুমি বাচ্চাই”

উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। মেহরাবের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করছেন কেন? ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি”

মেহরাব উৎসাকে ছাড়লো না। বরঞ্চ আরো কাছে টেনে নিলো। উৎসা মেহরাবের হাতে চিমটি কাটলো। চিমটি টা এতটাই জোরালো ছিলো যে মেহরাব উৎসাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। ছাড়া পেতেই উৎসা গট গট পায়ে রুমে চলে গেল। মেহরাব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

ব্যালকনি থেকে রুমে প্রবেশ করলো মেহরাব। উৎসা গুটি সুটি মেরে বিছানার একপাশে ঘুমিয়ে আছে। মেহরাব রুমেই লাইট নিভিয়ে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো। অতঃপর এগিয়ে গেল বিছানার কাছে। মেয়েটা এমন ভাবে শুয়ে আছে একটু এদিক সেদিক হলেই পড়ে যাবে। মেহরাব উৎসাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আঁকড়ে ধরলো উৎসার কোমর। উৎসা ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়া মুচরি শুরু করে দিলো।
“মোচড়া মুচরি করছো কেন? সমস্যা কি?”

“সমস্যা আমার না আপনার। কাছে টেনেছেন কেন?”

মেহরাবের কণ্ঠ স্বর নেশালো শোনালো,
“রোমান্স করতে”

উৎসা মেহরাবের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“আপনার বউ এখনো ছোটো। তাই নো রোমান্স, অনলি দুরুত্ব। দূরে যান, দূরে যান বলছি”

মেহরাব ঠোঁট কামড়ে হাসলো। মেয়েটা তার কথার জালে তাকেই ফাঁসাচ্ছে। ভেবেই ওর ঠোঁটের কোণে দুস্টু হাসি ফুটে উঠলো। ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বলল,
“আমার কথায় আমাকেই ফাঁসাচ্ছ?”

উৎসা এর উত্তর করলো না। মেহরাবের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়াতে উদ্যত হয়ে বলল,
“যতদিন আমার আবদার রাখতে রাজি না হবেন ততদিন আমার আশেপাশে ঘেসবেন না বলে দিলাম। আশেপাশে ঘেসলে খবর আছে”

মেহরাবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দুজনের মাঝে কোল বালিশ দিয়ে দিলো। অতঃপর ওদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। পাশ থেকে মেহরাব বলে উঠলো,
“এখন এভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছ তো! যখন থাকবো না তখন খুঁজেও পাবে না”

উৎসা ওর কথায় পাত্তা দিলো না। যেই লোক ওর আবদার পূরণ করবে না তার সাথে কিসের ভালোবাসা? বেশি কিছু কি চেয়েছে? উঁহু! সামান্য একটা পুচকু চেয়েছে, দিয়ে দিলেই তো হয়। বজ্জাত লোকটা ওর কথা শুনলে তো! এখন বোঝো মজা!
—————

মাঝে কেটে গেল সপ্তাহ খানেক সময়। উৎসার দিন গুলো কিভাবে যেন কেটে যাচ্ছে। সব কাজ শেষ করে রুমে এসে ঢুকলো ও। পুরো রুমে কেউ নেই। থাকার কথাও না। মেহরাব অফিসের কাজে দুদিনের জন্য শহরের বাহিরে গেছে। মেহরাব না থাকায় রুমটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। উৎসার সারাদিনে রুমে আসতেই ইচ্ছে করে না। মেহরাব নেই ওকে জ্বালানোর ও কেউ নেই। মানুষটা কে ভীষণ মনে পড়ছে। তার পা*গলামো মিস করছে, হুটহাট জড়িয়ে ধরা মিস করছে। মাঝে রাগ করে দুদিন কথা বলেনি। দুদিনে তার কতো পা*গলামো। শেষ মেষ লোকটার কথাই ওকে মেনে নিতে হয়েছে। কি আর করার!

গভীর ঘুমে মগ্ন উৎসা। সারাদিনের কাজ শেষে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে মেয়েটা। ঘুমের রেশ এতটাই যে কতক্ষন যাবত বিছানার পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা ফোনটা সেই কখন থেকে বাজছে তার খেয়াল ওর নেই। ও ঘুমে মগ্ন। একে একে তিনবার বাজতে বাজতে ফোন কেটে গেল। চার বারের মাথায় যখন বেজে উঠলো উৎসার গভীর ঘুম ছুটে গেল। হাতড়ে ফোন খুঁজে কাজে গুজলো। ওপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
“ঘুমাচ্ছিলে?”

উৎসা ঘুম ঘুম কণ্ঠে জবাব দিলো,
“হু”

“সরি। তুমি যখন ফোন দিয়েছিলো আমি তখন মিটিংয়ে ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারিনি। হঠাৎ এতো গুলো কল দেওয়ার কারণ?”

উৎসা সহসা মনে করতে পারলো না। ও মেহরাব কে কল দিয়েছিলো? কিন্তু কেন? হ্যাঁ মনে পড়েছে। মানুষটাকে মিস করছিলো তাই। ইচ্ছে করছিলো মানুষটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখতে। সেই জন্যই পর পর পাঁচটা কল দিয়েছিলো।
“মিস করছিলাম”

মেহরাব অবাক হলো। অবাকতার রেশ ধরেই বলল,
“কি? আমি ঠিক শুনছি তো? মিসেস মেহরাব আমায় মিস করছে?”

“মিস করতে পারি না বুঝি?”

“তা পারো। কিন্তু এর আগে কখনো মিস
করোনি তো তাই অবাক হচ্ছি”

উৎসা ঠোঁট উল্টালো। আদুরে গলায় বলল,
“আজ আপনাকে ভীষণ মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে”

“কিন্তু আমি তো তোমার চেয়ে অনেক দূরে”

উৎসা মন খারাপ করে বলল,
“হ্যাঁ”

মেহরাব ভাবুক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
“তাহলে কি করা যায় বলুন তো মিসেস মেহরাব?”

“কি আর করার? আপনার কাজ কতদূর?”

“আজ রাতে শেষ মিটিং ছিলো। সেটা শেষ করেই এলাম”

“ও আচ্ছা”

মেহরাব বলল,
“তুমি এখন ঘুম দেও বউ, সকাল সকাল দেখবে তুমি তোমার বরের বুকে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছো”

“কিভাবে?”

“সেটা এলেই দেখতে পাবে”

“বলুন না, প্লিজ”

“তোমার কাছে আসার জন্য আমি বেরিয়ে পড়েছি। আশা করি সকালের আগে পৌঁছে যাবো”

উৎসা তড়িঘড়ি বলে উঠলো,
“পা*গল আপনি? সারাদিন কাজ করে এসে এখন রেস্ট নিবেন তা না করে এতটা রাস্তা ড্রাইভ করে আসবেন? এই পা*গলামির কোনো মানে হয়?”

“আমার বউ আমাকে মিস করছে আর আমি এখানে ঘুমাবো? তোমার কি মনে হয় আমার ঘুম হবে? তার চেয়ে ভালো ড্রাইভ করে চলে আসি। আর আমার সারারাত ড্রাইভ করার অভিজ্ঞতা আছে। সো নো টেনশন মিসেস”

“তাই বলে…”

“কোনো কথা না। আমি যেটা বলছি সেটা শোনো”

উৎসা মিন মিন করে বলল,
“এখন আর আমার ঘুম হবে না। তার চেয়ে ভালো আপনার সাথে কথা বলি”

“যেটা তোমার ইচ্ছে”

উৎসা বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসলো। দুজন জুড়ে দিলো রাজ্যের যতো কথা। যদিও বেশি কথা উৎসাই বলছে মেহরাব কেবল শুনে যাচ্ছে। উৎসার মনে হলো ও রাতে জেগে প্রেমিকের সাথে কথা বলছে। দুজনের কথার মাঝে দুস্টু মিষ্টি খুনসুটি হচ্ছে। উৎসা কি যেন বলতেই ওপাশে মেহরাব হেসে কুটি কুটি হওয়ার জোগাড়। উৎসা মন দিয়ে মানুষটার হাসির শব্দ শুনছে। মেহরাব কে সচরাচর এভাবে হাসতে দেখা যায় না। আচমকা অপর পাশে বিকট শব্দ হলো। সব যেন সেকেন্ডের ব্যাবধানে থমকে গেল। ওপাশ থেকে মেহরাবের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে না আর। থমকে গেছে চারপাশ। থমকে গেছে সব কিছু।

#চলবে?