অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-০৪

0
245

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [০৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

ক্লাসে তূর্য স্যার ঢুকা মাত্রই সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেছে, তূর্য হাতের ফাইল গুলো এবং মার্কার টেবিলের উপর রেখে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল।

” গুড মর্নিং স্টুডেন্ট।”

সবাই একত্রে গুড মর্নিং বলে, অতঃপর তূর্য জিজ্ঞেস করে কারা কারা হোম ওয়ার্ক করেছে, ক্লাসের কেউই কোনো উত্তর দেয় না।
” ওকে ফাইন,যারা যারা হোম ওয়ার্ক করোনি তারা ভালো বাচ্চাদের মত দাঁড়িয়ে পড়ো।”

সবাই একে একে দাঁড়িয়ে পড়ল,পিছন ফিরে তাকাতেই কন্ঠ আর ওর বন্ধুরা সবাই দেখে ক্লাসের প্রায় অর্ধেক স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর মাথা বসে আছে তাদের কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন তূর্য স্যার।

” তোমরা যারা আছো নিজেদের খাতা টেবিলের উপর এসে দিয়ে যাও।”

গুটি কয়েক স্টুডেন্ট মাত্র তারাই দিয়েছে খাতা জমা,সব মিলিয়ে সাত আটটা খাতা মাত্র জমা পড়ল।একে একে সবার খাতা দেখছে তূর্য স্যার, ভয়ে হাত কচলাতে শুরু করেছে কন্ঠ।একের পর এক স্টুডেন্ট কে কান ধরতে হচ্ছে,মানে সবার ভুল হচ্ছে।কিছু না কিছু ভুল হচ্ছেই। অবশেষে সেই শুভক্ষণ চলেই এলো বার বার লাস্ট খাতা গুলো তূর্য স্যার দেখছেন আর তার পর পরই আমাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। হাতের ইশারায় আমাদের কে ডাকলেন, এখন সমস্যা হচ্ছে কাকে ঠিক ডাকল তা বুঝতে পারছি না। অবশেষে তিনি বললেন।

“‌এই যে তোমরা ছয়জন এদিকে এসো”

কন্ঠ, রিয়া,সান ,সোহা,তারিফ,তাহিয়া এগিয়ে যায়। তূর্য মুখে হাসি নিয়ে বলে।

” তোমরা তো একদম সঠিক ভাবেই হোম ওয়ার্ক সল্ব করেছো।”

স্যারের কথা শুনে সবার মুখে বিশ্ব জয়ী হাসি খেলে গেল,তারই মধ্যে তূর্য স্যার বলে উঠেন।

” তা এখানে এটা আসলে করলটা কে? সবার খাতায় একই রকম উত্তর।আর আমি যতটা জানি তোমরা নিশ্চয়ই টুকি করেছো, এবার বলো অংক করেছে কে?”

সান তড়িৎ গতিতে বলে উঠে,ওর কথার পিঠে সোহা,তারিফ বলে।

“‌এই এটা তো আমারা করেছি তুই কেন নিজের নাম দিচ্ছিস?”

ওদের মধ্যে রিয়া বলে বসে।

” স্যার কে করেছে জানি না তবে আমি শুধু লিখেই গেছি,হি হি।”

অবশেষে কন্ঠ কাঁদু কাঁদু গলায় চেঁচিয়ে বলে উঠে।

‘ এ্যা এ্যা ভ্যা ভ্যা,তোরা মিথ্যা বলছিস কেন?”

শুকনো ঢুক গিলে নেয় সোহা,তারিফ,সান এবং,তাহিয়া।ভ্রুকুটি করে বলে।

” কী মিথ্যা বলছে ওরা?”

কন্ঠ আগের ন্যায় বলে উঠে।

” স্যার গোঁ সত্যি কথা বলছি এই অংক আমি করেছি,ওরা তো মেসেঞ্জারে আমার থেকে ছবি নিয়ে টুকি করল।আর এখন নিজেদের নাম দিতেছে এ্যা ভ্যা।”

তূর্য সবার অচিরে ঠোঁট কামড়ে হাসে, অতঃপর আবারো মুখে থমথমে ভাব নিয়ে বলে উঠে।

” ইডিয়েট সব কটা, এখন গিয়ে কানে ধরো।”

একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে কন্ঠ আর ওর বন্ধুগন,তাহিয়া কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।

” স্যার আপনি যে বললেন আমাদের টা হয়েছে? তাহলে কানে ধরব কেন স্যার?”

তূর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়াল,বুকে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ায় অতঃপর বলে।

” লাস্ট 5.36 হলেই কী অংক কারেক্ট? সিরিয়াসলি?”

সবাই তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে কন্ঠের দিকে, বেচারি বোকা বোকা চাউনি দেয়। অবশেষে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো সবাই কে।
_______
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নীলা দেখলো সাফিন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাফিন কে দেখা মাত্র চোখ দুটো চিক চিক করে উঠলো নীলার,ধীর গতিতে এগিয়ে যায় তার দিকে।

” সাফিন তুমি এখানে হঠাৎ?আসবে বললে না যে?”

সাফিন অধর চওড়া হাসি দিয়ে বলল।

” আমার প্রেয়াসির সাথে দেখা করতে বুঝি বলে কয়ে আসতে হবে?”

ম্লান হাসে নীলা,কথার পিঠে বলে উঠে।

” প্রেয়াসি তো শুধু মুখে মুখেই,ঘরে নেওয়ার কোনো চেষ্টাই নেই।”

নীলার ডান হাত মুঠো করে ধরে।

” খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো,আর কিছু দিন অপেক্ষা করো?”

মুখে অভিমান নিয়ে বলে উঠল নীলা।

” না আর অপেক্ষা করতে ভালো লাগছে না।”

অধর টেনে হাসলো সাফিন,মেয়েটা বড্ড বেশী মায়াবী, শুধু মায়াবী বললে ভুল হবে। সুন্দর মনের মানুষ,যাকে এক নজরে ভালো লেগেছিল।

” কী হলো কি ভাবছো?”

সাফিন নীলার কথায় কিছুটা ধাটস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।

” যাবে?”

নীলা বলে।
” কোথায়?”

সাফিন ধরে থাকা নীলার হাত আরো শক্ত করে ধরে বললাম।

” আমি যেখানে নিয়ে যাবো?”

নীলা স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো, অতঃপর সাফিন নীলা দু’জনেই রওনা দিল অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
_____________

রান্নাবান্না শেষ করে সবে মাত্র সোফায় বসেছে কন্ঠ, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার।আজ তনয়া মামী না থাকায় তাকেই সবটা করতে হয়েছে, ওদিকে আনিকা আহমেদ তাকে সকাল থেকে হুকুমের উপর হুকুম করেই চলেছে। একটুও পড়ার সময় পাইনি সে,ড্রয়িং রুমের ফ্যান ছেড়ে বসে পড়ল কন্ঠ,যা গরম পড়েছে তাতে বেশিক্ষণ গ্যাসের কাছে থাকলে সে সেদ্ধ হয়ে যাবে, শীত আসার আগে বেশ গরম লাগে,এআ তো আর কিছু দিনের মধ্যেই শীত পড়বে।। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ওয়াল ঘড়িতে চোখ পড়ল,ছয়টা বেজে গেছে। হঠাৎ কেউ কলিং বেল বাজল,উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই দেখলাম আহাদ আহমেদ এমন সাহাদ আহমেদ এসেছেন।একটু সরে গিয়ে ওদের ভেতরে আসার জায়গা করে দিলাম।

আহাদ আহমেদ এক নজর দেখে নিল কন্ঠ কে, নিশ্চুপ ভঙি’মায় দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ।

আহাদ আহমেদ এবং সাহাদ আহমেদ গিয়ে সোফায় বসে পড়লেন।সাহাদ আহমেদ কন্ঠ কে ডেকে বলে।

” কন্ঠ মা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দে তো।”

কন্ঠ রান্না ঘরের দিকে যায়,ফ্রিজ থেকে দুজনের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসছে।তার মধ্যে আহাদ আহমেদ তনয়া আহমেদ কে ডেকে বলে।

” তনয়া?এই তনয়া কোথায় তুমি?”

” বড় মামী বাসায় নেই বড় মামা।”

পানি সেন্টার টেবিলের উপর রেখে কথাটা বলে উঠে কন্ঠ,আহাদ আহমেদ পানি খেয়ে কন্ঠ কে জিজ্ঞেস করেন।

” ও আবার কোথায় গিয়েছে?”

কন্ঠ ধীর কন্ঠে বলে উঠে।

” বড় মামী একটু দাদুর বাড়িতে গিয়েছে,আর বলেছে তোমরা আসলে যেন খেতে দিতে।”

আহাদ আহমেদ তেমন কিছু আর বলল না,উঠে যেতে লাগল।তখন কন্ঠ পিছন থেকে ডেকে বলে উঠে।

” বড় মামা খাবার কী দেব? তুমি কী খাবে?”

আহাদ আহমেদ তপ্ত শ্বাস ফেলে আমতা আমতা করে বলেন।

” ঠিক আছে দে।”

অধরে হাসি ফুটে উঠে কন্ঠের।


সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে বসছে সমাবেশ, আলোচনা হচ্ছে নীলার বিয়ে নিয়ে।

সিঁড়ির সাইটে দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ রিয়া, সোফায় বসে আছেন আহাদ আহমেদ,সাহাদ আহমেদ, তনয়া আহমেদ এবং আনিকা আহমেদ।

” হ্যা ছোট আমার মনে হয় সাফিনের সাথে নীলার বিয়ে হলে মন্দ হবে না।”

আহাদ আহমেদ সাহাদ আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলেন কথাটা। আহমেদ বাড়ির সবারই বেশ পছন্দ সাফিন কে, কন্ঠ ওই একবারই নীলা আপুর সাথে সাফিন কে দেখেছিল।
সাহাদ আহমেদ বলেন।

” হ্যা ভাইয়া আমিও ভাবছি বিয়েটা দিয়ে দেওয়াই উচিত হবে।”

সাফিনের বিষয়ে বাড়ির সবাই জানে, এখন শুধু ওদের বিয়ে টা হওয়ার বাকি।সাফিন কাল নীলা কে ফোন করে বলেছে সে বাড়িতে কথা বলেছে,নীলা নিজের মা বাবা বাড়িতে আসতে চায়।

“‌শুনো আমার মনে হয় আর দেরী করা উচিত নয়,নীলা তো আমাদেরও মেয়ে।”

আনিকা আহমেদ তনয়া আহমেদের হাত ধরে বলে।

” আমি তো বুঝতে পারছি না আপা, তোমরাই একটু সবটা যদি দেখতে তাহলে আমি নিশ্চিত হতাম।”

তনয়া আহমেদ অধর টেনে হেসে বলেন।

” তুই চিন্তা করিস না সবটা ঠিক হবে, আমরা আছি তো।”

সবাই ঠিক করে কাল সাফিনের বাড়ির সবাই কে আসতে বলবে।

বাড়িতে আসা মাত্র দেখল সনিতা দাঁড়িয়ে আছে, তূর্য তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে,তখনি সনিতা তূর্যের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে।

” তূর্য তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আসো আমরা বাইরে যাবো।”

তূর্য থমথমে মুখ নিয়ে বলে।

” প্লিজ সনিতা মাত্র এসেছি একটু রেস্ট নিতে দাও।”

সনিতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্য কে বলে।

” প্লিজ প্লিজ চলো না?”

তূর্য হুট করে বলে দিল।

” আচ্ছা ঠিক আছে, আমি রেডি হয়ে আসছি।”
______

” হ্যলো?”
” ভালোবাসি।”

হুট করে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে কন্ঠের ফোনে। ফোন রিসিভ করা মাত্র ফোনের ওপাশ থেকে এমন কিছু শুনবে একদমই আশা করেনি কন্ঠ।

ক্ষী’প্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।

” কে বলছেন?”

” ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।”

” অস’ভ্য ,কী বলছেন এসব? কে আপনি আমার?”,
টু টু শব্দ করে ফোন কে’টে গেল।

” আজব তো,কে ছিল এটা?”

চলবে………… ✨।