অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-০৯

0
221

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [০৯]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

আজকেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান ভাবতেই চমকে উঠল কন্ঠ,চোখে পানি চিক চিক করছে। বুকের ভেতর ধ’ড়’ফ’ড় করে উঠলো,এত তা’ড়া কিসের? সবাই যেন ওকে বিদায় করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিজের গায়ে হলুদ সম্পর্কে জেনে কার কেমন অনুভূতি হতে পারে তা ঠিক জানা নেই কন্ঠের।

হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে স্টেজের মধ্যমনি হিসেবে বসে আছে কন্ঠ,কী থেকে কী হচ্ছে কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না। কয়েক বার রিয়ার সাথে কথা বলতে চাইছিল কিন্তু পারল না।রিয়া কে সকাল থেকে খুঁজেই পাচ্ছে না। কিছু দূর চোখ যেতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল সোহা কে। হালকা মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে,ওর পাশেই দাঁড়ালো তাহিয়া,সেও হলুদ রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।তারিফ,সান নাচতে নাচতে ওর কাছে এগিয়ে আসছে।

” আহা, ওহো আহা ওহো।”

সানের গান শুনে গায়ে আ’গু’ন লাগার মত ফিল হচ্ছে কন্ঠের।তারিফ কন্ঠের মাথায় চা’টি মে’রে বলল।

” কী রে কন্ঠ,কাল থেকে তুই বিয়াইত্তা মহিলা হুঁ হুঁ।”

কন্ঠ ধমক দিয়ে বলল।

” এই দেখ তোরা আমার সাথে কথা বলিস না,ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”

সান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কন্ঠ কে উদ্দেশ্য করে বলে।

” কন্ঠ সিরিয়াসলি তুই বিয়া করবি?তাও আমাগো রাইখা ছে।”

সবাই একে অপরকে নিয়ে হাসাহাসি করছ, কিন্তু তবুও কন্ঠের ভালো লাগছে না।সে জানে সবাই ওর মন ভালো করার জন্য এটা সেটা করছে।
______

ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছে সহিতা, ইমার্জেন্সির জন্য তাড়াতাড়ি আমেরিকা যেতে হবে তাকে।ওর পাতানো আঙ্কেল তরিকুল মির্জা সহিতা কে বলেছে,আজকেই ফ্লাইটের টিকিট নিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে।এত তাড়াহুড়া করার কারণে কাউকে জানাতে পারেনি যাওয়ার কথাটা।

মেহেদী হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে তনয়া আহমেদ, এরপর পার্লার থেকে আসা মেয়ে গুলো সবাই কে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে। কন্ঠের বন্ধুরা সবাই আজ এখানেই থাকবে,একে বারে বিয়ের পর যাবে।

সান এসে কন্ঠের পাশে বসে বলল।

” ভাই স্যার কিন্তু সেই সুন্দর বল,আর যাই হোক হ্যান্ডসাম ছেলে।”

তারিফ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।

” ওর জামাই প্রফেসর, এখানে তো ওরই লাভ হলো। আমাগো কিছুই হলো না।”

তারিফের কথায় কন্ঠ বেশ আন্দাজ করতে পারল তার বিয়ে যার সাথে হচ্ছে সে প্রফেসর। শব্দ কর্ণ স্পর্শ করতেই তূর্য খানের মুখশ্রী ভেসে উঠলো। মূহুর্তের মধ্যে এলোমেলো দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করল আশেপাশে।তাহিয়া উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠে।

” তূর্য স্যার তো,,,,

আর কিছু বলার আগে থামিয়ে দিল কন্ঠ।

” ওনার সম্পর্কে কিছু বলিস না প্লিজ ভালো লাগে না।”

বলেই উঠে গেল কন্ঠ,ওর হঠাৎ মাথা গরম হওয়ার কারণ কেউ ধরতে পারল না। হঠাৎ করে তারিফ নিয়ে কে টেনে নিয়ে গিয়ে গান গেয়ে উঠে।

” আসসালামুয়ালাইকুম বেয়ান সাহব।

রিয়া খিল খিল করে হেসে বলে।

” ওয়া আলাইকুমস সালাম বেয়াই সাহব।”
” কেমন আছেন বেয়ান সাহব?”
” বুকে বড় জ্বা’লা।”

” কিসের জ্বা’লা বেয়াই সাহব?”
” নয়া প্রেমের জ্বা’লা।”

হঠাৎ এত পুরোনো গান শুনে সবাই হেসে উঠে, এবং কী রিয়া তারিফের সাথে যোগ দেয়। কন্ঠ কে হাসতে বাধ্য করে এক প্রকার ওদের কাজ কর্ম।

হরেক রকম তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে রুম, বিছানার মাঝামাঝি গুটিসুটি হয়ে বসে আছে কন্ঠ, বুকের ভেতর ধ’ড়’ফ’ড় করছে কেমন।এটা কেমন অনুভূতি বোধগম্য হচ্ছে না কন্ঠের। নিজের কলেজের প্রফেসরের সাথে বিয়ে হয়েছে!ভাবা যায় না।
যার থেকে দূরে যেতে চাইছিল তার কাছেই আসতে হয়েছে। তূর্য খান, এখন ওনার সাথে নাম জুড়ে গেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলল কন্ঠ। বিয়ের পর এ বাড়িতে পা রাখতেই সব কিছু তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে অহনা খান কে দেখে।কী হবে এখন?উনি-ই বা কেন বিয়েতে রাজি হলেন?
নানা চিন্তা করছে কন্ঠ, তার মধ্যে দরজা খুলে কেউ ভেতরে প্রবেশ করল, তাতে ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেল কন্ঠের।নিজেকে আরও খানিকটা গুটিয়ে নিল।ভয় হচ্ছে তার,আগে তো কলেজে সারাদিন বকা ঝকা করত, এখন বাড়িতে কী করবে কে জানে!

তূর্য ভেতরে এসে ওয়াড্রফ থেকে ট্রাউজার আর একটা কালো রঙের ট্রি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মাথার ঘোমটা সরিয়ে পিটপিট চোখে আশপাশে দেখল কন্ঠ, তূর্য যাওয়াতে যেন স্বস্তি পেলো। কিছুক্ষণ পর তূর্য আবার এলো, সঙ্গে সঙ্গে ঘোমটা দিয়ে দিল কন্ঠ,স্ফীত কন্ঠে বলল তূর্য।

” ওয়াশরুম ওদিকে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। কিন্তু তার পর আমার তোমার সাথে কিছু কথা বলার আছে।”

ফট করে উঠে দাড়ালো কন্ঠ,ঘোমটা সরিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তূর্যের দিকে। তূর্য নির্নিমেষ চেয়ে আছে তার দিকে। কন্ঠ কান্নারত কন্ঠে বলল।

” স্যার গোঁ সত্যি আমি জানতাম না আপনার সাথে আমার বিয়ে,এ্যা এ্যা এ্যা দয়া করে আমারে ছেড়ে দেন।”

চোখ মুখ শক্ত করে নেয় তূর্য,কিয়ৎক্ষন পরখ করে কন্ঠ কে,পর মূহুর্তে বলল।

” যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।”

কন্ঠ তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে ঠাস করে ফ্লোরে হুম’ড়ি খেয়ে পড়ে।

” ওমা গো আমার কোমড়, ইশ্।”

তূর্য তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গেল ওর কাছে, কন্ঠ ফ্লোরে বসে কাতরাচ্ছে।
তূর্য কপাল চুলকে নেয়, অতঃপর টুক করে কোলে তুলে নেয় কন্ঠ কে।এক অজানা শিহরণ বয়ে যায় তার অঙ্গে , এলোমেলো দৃষ্টি ফেলতে থাকে চারিদিকে। অস্বস্তি লাগছে তার,এই প্রথম কোনো পুরুষের এতটা কাছাকাছি সে। হৃদয় যন্ত্রটা যেন ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে।
বিছানায় শুয়ে দেয় তূর্য কন্ঠ কে,মেয়েটা খুব বেশী চঞ্চল। ধীরে সুস্থে গেলে কী হতো?

” আসলেই তুমি একটি ইডিয়েট।”

মাথা নুইয়ে নেয় কন্ঠ, এটা হয়তো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে,বর তার নতুন বউ কে প্রিয়তমার বদলে ইডিয়েট বলল।বা এটাও হতে পারে বউ বাসর ঘরে হুমড়ি খেয়ে চিৎপটাং হয়ে গেছে। তূর্য মলম নিয়ে আসে, এগিয়ে দেয় কন্ঠের হাতে লাগিয়ে নিতে। কন্ঠ চেষ্টা করে কিন্তু আফসোস সফল হয়নি। অতঃপর তূর্য কোমড়ের কাছের কাপড় খানিকটা সরিয়ে আলতো করে ক্রিম লাগিয়ে দেয়। তাতে যেন প্রাণপাখি এখুনি বেরিয়ে যাবে এমন অবস্থা কন্ঠের,শ্বাস ফেলতে পারছে না। ভাগ্যিস লেহেঙ্গা পড়েছিল তাই তো কোমড় উন্মুক্ত ছিল,যদি শাড়ি পড়তো!ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠলো কন্ঠের। মধ্য খানে কিঞ্চিৎ দূরত্ব রেখে তূর্য শুয়ে পড়ে,আর কড়া গলায় বলে দেয় কন্ঠ কে।

” যদি কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে যেন তাকে ডাকে,একা কিছু করতে গিয়ে যেন কোনো অঘ’টন না ঘ’টিয়ে বসে।

রাতের দিকে বেশ হাঁসফাঁস লাগছিল কন্ঠের, এভাবে লেহেঙ্গা পড়ে ঘুমানো যায়? একদমই নয়, কিন্তু কী করার?
অতঃপর আর থাকতে পারল না কন্ঠ,আলতো হাতে তূর্য কে ডাকল।

” সস্যার শুনছেন?স্যার? আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন?”

তূর্য পাশ ফিরে আচমকা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কন্ঠ কে,চোখ দুটো যেন এখুনি মনিকোঠায় থেকে বেরিয়ে আসবে। তূর্যের গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে উপছে পড়ছে কন্ঠের। কিছু অনুভব করছে কন্ঠ, চেষ্টা করছে তূর্য কে সরানোর, কিন্তু তাতে যেন তূর্যের হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হয়। বৃথা চেষ্টা না করে ওভাবেই শুয়ে থাকে কন্ঠ, আজকে আর ঘুম আসবে না তার।
____________
” মেয়েটার কথা বড্ড মনে পড়ছে গোঁ।”

তনয়া আহমেদ আহাদ আহমেদের প্লেটে খাবার দিতে দিতে মন ম’রা হয়ে কথাটা বললেন।চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আহাদ আহমেদ।

” যেটা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে তনয়া, কন্ঠ তো আর অসুখী হবে না?”

তনয়া আহমেদ মাথা নাড়িয়ে বলল।
” তার ঠিক।”

আনিকা আহমেদ রান্না ঘরের আড়াল থেকে সবটা শুনলেন,মুখে বাঁকা হাসি ছিল।মনে মনে আওড়াল।

” যা হয়েছে ভালই হয়েছে,আপদ বিদায় হলো। কিন্তু যদি আমার মেয়ে দেশে থাকতো আর তখন বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দিতাম না। কিন্তু ভাগ্য ভালো আমার মেয়ে জামাই নিয়ে বিদেশে আছে।”

কলেজের ক্যাম্পাসে বসে আছে রিয়া,সোহা,সান,তাহিয়া,তারিফ। সবাই কন্ঠ কে ভীষণ মিস করছে।

” ভাই একটা আইডিয়া আসছে।”

সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় তারিফের দিকে,তারিফ বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে বলে।

” কাল তো আমাগো কন্ঠের ইয়ে ছিল, মানে বাসর রাত।”

সান ভাবলেশহীন ভাবে বলল।
” হ্যা তো?”
তারিফ বলল।

” তাহলে নিশ্চয়ই ওরা এখনো ঘুমাচ্ছে।”

সোহা বিরক্ত নিয়ে বলল।
” তারিফ যা বলার সরাসরি বল না?”

তারিফ বলল।

” আহা তোরা বুঝতে পারছিস না,ওরা ঘুমিয়ে আছে তার মানে ওদের মধ্যে কিছু মিছু হয়েছে,চল ফোন করে বিরক্ত করি।”

তাহিয়া ছট করে ফোন বের করে কন্ঠের ফোনে কল করল,ওকে থামিয়ে রিয়া বলে উঠলো।

” এহহহহহহহহহহহ এটা ভুলেও করিস না,যদি তূর্য স্যার মানে দুলাভাই ফোন ধরে আমাদের আচ্ছা করে শুনিয়ে দেয় তখন?”

মূহুর্তে চুপসে গেল তাহিয়া,সান ডেবিল মা’র্কা হাসি দিয়ে ফোন বের করল,ভ্রু কুঁ’চকে নেয় রিয়া।

চলবে…………. ✨।