অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-১২+১৩

0
191

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের আজ রেক ডে সেই সুবাদে কলেজে অনেক বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে, অনুষ্ঠান বলতে শুধুমাত্র সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা থাকবে।এই সুযোগ মিস করার নয় ভেবে ছয় জন মিলে প্ল্যান করলো তারাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। কিন্তু সমস্যা তখন দেখা দিল যখন জানতে পারলো অন্য ব্যাচের স্টুডেন্ট এলাও না।
নাক মুখ কুঁ’চকে নেয় কন্ঠ,সান কে উদ্দেশ্য করে বলে।

” দেখলি তোর প্ল্যান কোনো কাজের না, আমরা চাইলেও যেতে পারব না।”

রিয়া মলিন মুখে বলে।
” ধুর কই ভেবেছিলাম এত দিন পর একটা প্রোগ্রাম হবে, কিচ্ছু হলো না ছে।”

তারিফ মুখের সামনে হাত দুটো মাইকের মত ধরে নাটকিয় ভাবে বলে।

” শুনো জনগন্স আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।”

সান তারিফের মাথায় চা’টি মে’রে বলে।
” অভিনয় ছাড় আসল কথাটা বল।”

ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে তারিফ, বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে।
” এই শুন একদিন দেখবি আমি ঠিকই খুব বড় সুপার স্টার হয়ে গেছি।”

তাহিয়া হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
” গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল,হা হা হা।”
“ভাই তুই কী বলবি?”

রিয়া বেশ রাগান্বিত স্বরে বলে উঠে, অবশেষে তারিফ বলল।
” আমারা সবাই মুখে রং দিয়ে মেখে যাবো কারন ওখানে সবাই রঙ লাগাবে। আমাগো কেউ চিনতেই পারব না হি হি।”

সোহার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে উঠে।
” ওরেএএএএ তারিফ তোকে চুম্মা,চল রেডি করি সব কিছু।”
_________
ফ্লাইট কিছুক্ষণ আগেই ল্যান্ড করেছে,ব্যাগ নিয়ে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তুফায়েল কিন্তু তার মধ্যে একটা শপে গিয়ে সাধারণ কো’ল্ড ড্রিং নিয়ে নেয়।এখন পর্যন্ত কিছু খাওয়া হয়নি,আপাতত এতটাই যথেষ্ট। কিন্তু এর-ই মধ্যে যে বিশ্রী একটি কান্ড ঘটে যাবে তা একদমই ভাবেনি।
” এইইইইইইইইইইইইইইইইই আপনি এটা কী করলেন হুঁ?ছে ছে আমাকে কো’ল্ড ড্রিং দিয়ে মাখো মাখো করে দিলেন?”

লম্বা এলোকেশী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, চোখের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত টেনে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,হাত ভর্তি বাহারী রঙের চুড়ি। আঁখি যোগল কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে।

” এই যে আপনি কি শুনতে পাননি??”

তুফায়েলের ধ্যান ভঙ্গ হয়, নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে, অতঃপর কিছু একটা ভেবে বলে।
” আ’ম ভেরি সরি।”

উল্টো পথে হাঁটতে লাগে তুফায়েল,মেয়েটিও নাছোড়বান্দা,তুফায়েলের সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
” এইইইইইইইইইইইইইইইইই আপনি আমাকে নোং’রা করেছেন সো জরিমা’না প্লিজ?।”

কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে নেয় তুফায়েল।
“জরিমা’না?”
” ইয়েস ইয়েস, আপনি সরি বলে যে চলে যাচ্ছেন আমি কী সরি এক্সসেপ্ট করেছি? না তো?সো গিভ মি জরিমা’না।”

” সো সিলি।”
” যাই হোক জরিমা’না প্লিজ, আমার লেইট হচ্ছে।”

তুফায়েল মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার নোট দিতেই মেয়েটি দৌড়ে চলে যায়, বিরক্ত হয় তুফায়েল।বিড় বিড় করে বলে উঠে।
” এখানের মেয়েরা এমন?যতটা দেখলাম মনে হচ্ছিল বাঙালি,কী একটা অবস্থা?”
___________
” কন্ঠ কিন্তু বেশ মিষ্টি মেয়ে কী বল ছোট?”

অহনা খানের কথায় মাথা দুলায় শাহা খান, কিন্তু তবুও তিনি যেন কোনো একটা ভাবনায় বেশ ব্যস্ত।

” কী রে কী ভাবছিস?”

খানিকটা চমকে উঠে শাহা খান, এলোমেলো ভাবে বলে।
” কই কিছু না তো আপা? আসলে আমার তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।”

অহনা খান হাতের বাটি গুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে রাখতে বলল।
” হ্যা বল কী বলবি?”

শাহা খান আমতা আমতা করে বলে।
” আপা কন্ঠের সাথে তো তূর্যের বিয়ে দিয়ে দিলে, কিন্তু ওরা কী সুখী হবে?”

বিরক্ত হয় অহনা খান,শাহার এই একটা স্বভাব ওনার বেশ বিরক্ত লাগে। ভালো কিছুর মধ্যে হুট করে খারাপ কিছু বলে বসে।
” হঠাৎ এমন কথা বলছিস যে?”

শাহা খান একটু নড়ে চড়ে উঠলো।
” আপা সহিতা তো তূর্য কে পছন্দ করে,এটা তো আমরা সবাই জানি।”

” হ্যা তো কী হয়েছে?”
” কী হয়নি সেটা বলো? তূর্য যে বিয়ে করে নিয়েছে তা জানলে কী হবে বুঝতে পারছো?”
” দেখ ছোট সহিতা তূর্য কে পছন্দ করতো এটা ঠিক, কিন্তু তূর্য তো পছন্দ করতো না? তূর্য আমাকে বলেছে,সে বরাবরই সহিতা কে ভালো বন্ধু ভেবে এসেছে।কারণ দু’জনেই ছোট থেকে এক স্কুলে একই কলেজে পড়াশোনা করেছে।”

” আপা তুমি যা বলছো ঠিক আছে, কিন্তু আমি ভাবছি সহিতা আসলে এগুলো শুনে কী করবে?”
” আপাতত তুই এত চিন্তা করিস না, এখন ওকে এসব জানানোর প্রয়োজন নেই।”

শাহা খান মনে মনে ভাবেন।
” কী যে বলো আপা?এইটা কী না জানালে চলে?”
_____________
সন্ধ্যা বেলা,চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে,পাখিরা যে যার নিড়ে ফিরে যাচ্ছে। অন্ধকার ঘরে আলো জ্বে’লে দেয় কন্ঠ,বাইরে থেকে সবে মাত্র বাড়িতে ফিরেছে তূর্য।এসেই সোফায় গা এলিয়ে দেয় সে,শাহিনা খান পাশেই বসে ছিলেন।উনি কন্ঠ কে ডাকেন।
” ছোট নাত বউ কই তুমি? ছেলেটা মাত্র আইছে,কই গোঁ তুমি?”

কন্ঠ তড়িৎ গতিতে ছুটে নিচে আসে।
” জ্বী দাদী?”

শাহিনা খান বেশ বিরক্ত নিয়ে বলেন।
” আমার নাতিটা মাত্র আইছে তুমি কই থাকো?যাও ওর জন্য পানি নিয়া আসো।”

কন্ঠ এক নজর তাকায় তূর্যের দিকে,মলিন মুখে বসে । সত্যি বোধহয় বড্ড বেশি ক্লান্ত লোকটা।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে তূর্য, শরীর ভালো নেই তার।
রুমে এসে কন্ঠ দেখে তূর্য শুয়ে আছে রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। বাথরুমে গিয়ে জমা বদলে পাতলা একটা কামিজ ও প্লাজু পড়ে বেরিয়ে আসে কন্ঠ। কারো কঁকিয়ে উঠার শব্দ কর্ণ স্পর্শ করতেই থমকে যায় কন্ঠ।
” তূর্য স্যারের আবার কী হয়েছে?”

বিছানার কাছে এগিয়ে এলো কন্ঠ, হ্যা তূর্য শব্দ করছে। কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অবাক হয় কন্ঠ। লোকটার কী হয়েছে? বিকেলে বাসায় আসার পর ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল, আবার রাতেও তেমনটাই লাগছিল।তার উপর কিছুই মুখে তুলেনি।
কাছে গিয়ে কন্ঠ ডাকে।
” স্যার?স্যার কী হয়েছে আপনার?”

তূর্য নিজের মনে বিড় বিড় করে চলেছে, কন্ঠ তূর্যের মাথায় হাত রাখল।তাতেই যেন তার হাত ঝলসে গেছে এমন অনুভব করেছে।
” ওনার তো ভীষণ জ্বর।”

বেশ চিন্তিত হয় কন্ঠ, এখন কী করবে?এত রাত হয়ে গেছে, সবাই তো ঘুমাচ্ছে। এখন কী করবে? চিন্তারা এসে ভিড় জমাচ্ছে কন্ঠের মস্তিষ্কে।
অবশেষে কিছু না ভেবে রান্না ঘরে গিয়ে বড় বাটি পানি আসে, রুমাল ভিজিয়ে মাথায় দেয় সে। তূর্য একদম অচেতন হয়ে পড়ে আছে।
কন্ঠ ড্রয়ার থেকে জ্বরের ওষুধ বের করে নিয়ে আসে।
” ওনাকে এটা খাওয়াতে হবে, কিন্তু তার আগে কিছু একটা খাইয়ে এরপর এই ওষুধ খাওয়াতে হবে।”

যেই ভাবনা সেই কাজ, কন্ঠ রান্না ঘরে যায়, সামান্য সোপ তৈরি করে নিয়ে আসে।

” তূর্য স্যার?উঠুন প্লিজ?”
কন্ঠ অনেক কষ্ট করে উঠে বসায় তূর্য কে, মুখে তুলে খাইয়ে দেয় গরম গরম সোপ।
লোকটার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অনেক কষ্টে ওনাকে খাইয়ে শুইয়ে দেয় কন্ঠ।

রাত আড়াইটা বাজে, এখনও জ্বর কমেনি তূর্যের , এখন বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে কন্ঠ।কী করবে? অবশেষে বাথরুম থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে আসে। শরীর মুছে দিলে হয়তো জ্বর কমবে।
সেই আগের মত করে তূর্য কে উঠে বসায়, এবার বেশ ইতস্তত লাগছে তার। এভাবে কারো জামা খুলে দেবে ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে সে। কিন্তু এটা তো লজ্জা পাওয়ার সময় নয়, ওনার জ্বর তো এখন ওনাকে ভালো করার দায়িত্ব আমার।
কন্ঠ তূর্যের ট্রি-শার্ট খুলে দিল, শার্ট খোলা মাত্র বুকেল লোমকূপ উঁকি দিচ্ছে।তাকাতে পারছে না কন্ঠ,কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে।আলতো হাতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছিয়ে দেয় সে।এরই মধ্যে তূর্য আকস্মিক ভাবে কন্ঠের হাত টেনে নিজের উপর নিয়ে আসে।ভড়কে যায় কন্ঠ,মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ‘উফ্’ শব্দটি।
” স্যার,,
” হুস।”
নিজের পুরুষালী বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে ধরে কন্ঠের অধরে,নেশা’ক্ত দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে কন্ঠের দিকে।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে।
” একটু শান্তি চাই।”

নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে কন্ঠের, নিস্তব্ধ রাতে এক পুরুষ এতটা কাছে এসে শান্তি চাই বলে,তার মানে কী দাঁড়ায়? আলগোছে বিছানার উপর রাখে কন্ঠ কে,হুট করে ওর উপর চড়ে বসে।
কন্ঠ খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, অকপটে জড়িয়ে ধরে তূর্য কন্ঠ কে।খনিকের জন্য কন্ঠও পৃথিবীর সবথেকে সুখময় মূহুর্ত অনুভব করে। পরমুহূর্তে বুঝতে পারে কোনো জ্বলত লাভা খানিকটা যেন তার উপর ছেড়ে দিয়েছে কেউ, তূর্যের শরীর ততটাই তাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
” আমি তোমাকে ভালোবাসি।আরো কাছে চাই, অনেক কাছে লাগবে।প্লিজ আমাকে একটু শান্তি দাও?”

চলবে……………✨।

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১৩]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

সূর্যের তীব্র আলো জানলার পর্দা ভেদ করে মুখশ্রী ছুঁয়ে দিচ্ছে কন্ঠের,নাক মুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নেয় সে।
বিছানা ছেড়ে উঠা মাত্র খেয়াল করলো তূর্য বিছানায় নেই, ভ’য়ে আড়ষ্ট হয়ে গেল কন্ঠ, আশপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজে।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে তূর্য,পরনে তার কালো রঙের ট্রাউজার ও একটা ট্রি-শার্ট।
তূর্য কে দেখে মুচকি হাসে কন্ঠ,তা মুচকি হাসি হলেও তূর্যের কাছে ভুবন ভোলানো হাসির ন্যায় বুকে গেঁ’থে যায়।
কন্ঠের হাসি সেকেন্ডের মধ্যে মিলিয়ে যায়, মলিন মুখে এগিয়ে আসে তূর্যের কাছে।ত্বরিতে তার কপালে হাত রেখে চিন্তিত ভঙিমায় আওড়াল।

” আপনার তো জ্বর কমে নি, আপনি কেন গোসল করেছেন?”

নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়ায় তূর্য,সে তো কন্ঠের প্রতিটি ভঙিমা পরখ করতে ব্যস্ত। কন্ঠ ফেল জিজ্ঞেস করে।
” কী হলো? আপনার কী সুস্থ হওয়ার ইচ্ছা নেই?”

তূর্য আনমনেই বলে বসলো।
” না।”
” কী?”
” না মানে এমনি, শরীর বেশ ভার লাগছিল। তাই ভাবলাম শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে।”

কপালে ভাঁজ পড়ল কন্ঠের, বিরক্ত হলো সে।হয়তো সে এমন কোনো উত্তর একদম আশা করেনি।

” আপনার কী মনে হয় আমি সারা দিন রাত আপনার সেবা করতেই থাকব?”

ঠোঁট কামড়ে হাসে তূর্য, কন্ঠ রাগান্বিত হয়ে যায়। তূর্যের হাত টেনে ধরে,আড় চোখে তাকায় তূর্য।সে একদিন খেয়াল করেনি কন্ঠ, সে তূর্য কে টেনে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। হাতের টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলল।
” বেশী বেশী হয়ে যাচ্ছে, আমি আজকে মায়ের কাছে নালিশ করব সাথে দাদীর কাছেও।”

তূর্য নাটকীয় ভাবে বলে উঠে।
” এই না না, আমি খুব ভয় পাই।”
কন্ঠ তূর্যের ওমন আচরণে খিল খিল করে হেসে উঠলো।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তূর্য।
” মজা করছেন আপনি?জ্বর বাড়লে কী করবেন?”

তূর্য নিশ্চুপ ভাবে বসে রইল, কন্ঠ মাথা মুছে টাওয়াল বেলকনিতে মেলে দেয়।
আবার আগের জায়গায় এসে বেশ কঠিন স্বরে বলল।
” চুপচাপ এখানেই বসে থাকুন, আমি এখুনি আসছি। একটুও নড়বেন না।”

তূর্য সুচা’লো দৃষ্টিতে তাকায় কন্ঠের দিকে,এতে ভেতর কেপে উঠল কন্ঠের।শুকনো ঢুক গিলে বাইরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

অহনা খান এবং শাহা খান রান্না ঘরে রান্না করতে ব্যস্ত,ভেতরে গেল কন্ঠ।অহনা খান অধরে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলল।
” কিছু লাগবে?”
” জ্বি মা, আসলে আপনার ছেলে একটু অসুস্থ হয়েছিল রাতে। এখন অনেকটাই সুস্থ আছে, ওনার জন্য হালকা খাবার নিতে এসেছি।”

চিন্তিত হয় অহনা খান।
” কী বলছো? তূর্য অসুস্থ?কী হয়েছে ওর?”

কন্ঠ শান্তনা স্বরে আওড়াল।
” মা আপনি চিন্তা করবেন না,উনি এখন ঠিক আছে।”
” আচ্ছা আচ্ছা, তুমি বরং ওর জন্য খাবার নিয়ে যাও। আমি একটু পরে আসছি।”
” ঠিক আছে।”

কন্ঠ তূর্যের‌ জন্য স্যুপ নিয়ে নিল কারণ তূর্য স্যুপ খেতে বেশ পছন্দ করে।এটাতে বেশ বিরক্ত কন্ঠ,তার একটুও পছন্দ নয় স্যুপ,তাই এটার সাথে রুটি ও আলু তরকারি নিল।
_____________
সকাল সকাল হাঁটতে বের হয়েছে তুফায়েল,ফ্ল্যাটের চারিদিকে একবার দেখে নিচ্ছে। কাল থেকে অফিস জয়েন করবে,তাই আজ একটু নিজেকে টাইম দিচ্ছে।

সামনে যাওয়া মাত্র একজন বৃদ্ধ মহিলা তার সামনে চলে আসলো।বেশ অবাক হয় তুফায়েল, বৃদ্ধ মহিলা ইংরেজি ভাষায় আওড়াল।
” থ্যাংক ইউ মাই সান।”

আশ্চর্য হয় তুফায়েল, মহিলা কী তাকে চিনে! কিন্তু চেনার তো কথা নয়।মহিলাটি আবারও বলল।
“তোমার জন্য দোয়া করি।”

তুফায়েল আশ্চর্য হয়ে ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করে।
” আপনি কি আমাকে চেনেন?আসলে আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।”

মহিলা স্ফীত হেসে বললেন।
” তুমি তো সে,যে আমাকে টাকা দিয়ে কাল সাহায্য করেছো,ওই যে একটা মেয়ে কে দিয়ে টাকা পাঠিয়েছিলে।”

এবার আশ্চর্যের সপ্তম আকাশ অতিক্রম করে ফেলে তুফায়েল,সে কবে টাকা দিল?আর কোন মেয়ের কথা বলছে?
এরই মধ্যে মহিলা তাকে হাতের ইশারায় সামনের বড় পার্ক দেখিয়ে বলল।
” ওখানে আছে ও।”

তুফায়েল বড় বড় পা ফেলে সেদিকে রওনা দিল, হয়তো তার মনে মেয়েটিকে দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগেছে।
এলোমেলো চুলে পার্কের একটি বেঞ্চে বসে আছে অরিন, সামনের বাচ্চা গুলোকে দেখতে ব্যস্ত সে।
পার্কে প্রবেশ করা মাত্র তুফায়েল সেদিনের মেয়েটিকে দেখে চমকে উঠলো।
” তুমি?”

পুরুষালী কন্ঠ শুনে পিছন ঘুরে তাকায় অরিন,তুফায়েল কে দেখে অধর প্রসারিত করে হাসে।
হয়তো হাসিতে কিছু একটা ছিল,তাই তো তুফায়েল ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিয়ৎক্ষণ।
” হ্যালো মিস্টার হ্যান্ডসাম।”

চমকে উঠে তুফায়েল, কিন্তু সময়ের মধ্যেই নিজেকে শান্ত করে বলল।
” তুমি এখানে কী করছো?বাই দা ওয়ে ওই মহিলা কে তুমি টাকা দিয়েছো?”

অরিন আবারো হাসলো, তারপর বললো।
” না তো ওইটা তো আপনি দিয়েছেন।”

তুফায়েল সামান্য ভেবে বলল।
” আশ্চর্য! আমি কখন দিলাম?”

খিল খিল করে হেসে উঠে অরিন, অতঃপর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলে।
” আরে ওইযে জরি’মা’না নিয়েছিলাম,ওই টাকা ওনাকে দিয়েছি,আর বলেছি আপনি দিয়েছেন।”

থমকে গেছে তুফায়েল।
” আমার নাম কেন বললে তবে?”
” ওহো,বুঝলেন না? আচ্ছা শুনুন,আসলে কী হয়েছিল আমার কাছে টাকা ছিল না। ওদিকে ওনার সাহয্য দরকার ছিল,যার দরুন তখন আপনার সাথে দেখা হয়। আমি আমি আমাকে নোংরা করার জন্য জরি’মা’না নিলাম।আর সেই টাকা ওনাকে দিয়েছি।”

তুফায়েল ছোট্ট করে জবাব দিল।
” ও আচ্ছা।”
” হুম।
” কিন্তু আমার নাম বলার কী দরকার ছিল?”
আবারো হাসলো অরিন।
” ইচ্ছে হয়েছিল তাই বললাম।”

কথাটা বলে দৌড়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে গেল অরিন,এক প্রকার বলা যায় পালিয়ে গেছে। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা দেয় তুফায়েলের, কিন্তু তা বেশী সময় স্থায়ী হয় না।

“আজকে কী কষ্ট কলেজে আসবে না?”

বেশ বিরক্ত নিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করে সান,রিয়া সম্মতি জানিয়ে বলল।
” না ও তো সকালে বলল সেকেন্ড ক্লাসে জ’য়েন করবে ।
তারিফ মজা উড়িয়ে বলল।
” ওয় মনে হয় ওর জামাইয়ের লগে ইস্কু ইস্কু করতে ব্যস্ত,হা হা।”

তারিফের কথা শুনে সবাই হুঁ হুঁ করে হেসে উঠে।

” এই গুলো আমি খাবো? আর ইউ সিরিয়াস?”

কন্ঠ স্ফীত হেসে বলে।
” অবশ্যই, এগুলো খেলে কী হয়?”
” নো ওয়ে, কন্ঠ আমি এগুলো খেতে পারব না।”
” আশ্চর্য!এটা তো একটা খাবার, খেলে কী হবে? রুটি তরকারি খেয়ে দেখুন কেমন লাগে?”
” নো, আমার স্যুপ ঠিক আছে।”
” আরে খেয়েই দেখুন না, আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

কন্ঠ এক প্রকার জোর করেই রুটির একটা টুক’রো মুখে পুরে দেয় তূর্যের।
” ইস্।”

শব্দটি করে উঠে তূর্য, কন্ঠ খিল খিল করে হেসে উঠে।
” কেমন খেতে?”
তূর্য নাক মুখ কুঁ’চকে বলে।
” ভীষণ অয়েলি?”
” ধুর,কাকে কী দিচ্ছি, কু”ত্তা”র পেটে কখনো ঘি হজম হয় না।”

কথাটা বলে জ্বিভে কা’ম’ড় বসায় কন্ঠ,কাকে কী বলে দিলো?
তূর্য বেশ কড়া গলায় বলল।
” কী বললে?”

কন্ঠ জোরপূর্বক হেসে বলে।
” হে হে, আমি তো কিছুই বলিনি। আর না আপনি কিছু শুনেছেন। গেলাম কলেজে যেতে হবে।”

কন্ঠ দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়, তূর্য শব্দ করে হেসে উঠে। সত্যি পাগল বাচ্চা বউ তার।

চলবে………… ✨।