অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-২০+২১

0
177

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২০]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

ল’জ্জা’য় জর্জরিত হয়ে উঠেছেন কন্ঠের মুখশ্রী,কী করবে সে? মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক করে ভেতরে চলে গেলে এই ল’জ্জা থেকে মু’ক্তি মিলবে তার
। সকাল সকাল একটুও নড়ার ক্ষমতা নেই কন্ঠের, শরীরে তীব্র ব্য’থা অনুভব করছে সে। কিন্তু আজ যেনো সে পূর্ণতা লাভ করলো, স্বামীর পরশে পূর্ন নারী হয়ে উঠেছে।
তূর্য ঘুম থেকে উঠেই কন্ঠ কে দেখতে লাগলো, তূর্যের এহন কান্ডে ল’জ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা কন্ঠের।
” আর ইউ ওকে?”

কন্ঠ ফুস করে শ্বাস টেনে বলল।
” হুম।”
তূর্য কন্ঠ কে উঠতে সাহায্য করলো, এবং কী তাকে ওয়াশরুম পর্যন্ত নিয়ে গেল।
বাইরে আসার পর আলতো ভাবে শুইয়ে দেয় তাকে তূর্য।
” আর ইউ ওকে কন্ঠ? তুমি কী সত্যি ঠিক আছো?”

কন্ঠ মাথা নাড়ল, অবশ্য যতই ল’জ্জায় বলুক সে ঠিক আছে কিন্তু শরীরে প্রচন্ড ব্য’থা অনুভব করছে।
সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে ড্রয়ার থেকে প্যারাসিটামল নিয়ে আসে সাথে এক গ্লাস পানি।
” এই নাও এটা খেয়ে নাও ব্যথা কমে যাবে।”

কন্ঠ চুপচাপ ওষুধ খেয়ে নিল এরপর যথা রীতি বসে রইল। তূর্য গ্লাস রেখে ফট করে কম্বলের ভেতর ঢুকে পড়ে,চমকালো কন্ঠ।
” এ কী?”
” কী আবার ঘুমাবো।!”

কন্ঠ বিস্ময় নিয়ে বললো।
” এখন?”
” ইয়েস,রাতে ঘুম হয়নি, আপনি ঘুমাতে দেননি।”

কন্ঠ ফিক করে হেসে উঠলো,তবে তা সাময়িক সময়ের জন্য।পরক্ষণেই অন্তঃপুরে ব্যথা অনুভব করলো।
” কী হলো?”

তূর্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলো, কন্ঠ ঘাবড়ে গেলো।কী করে বলবে?তখন তূর্য ডান হাতের আদুরে স্পর্শ গালে ছুঁয়ে বললো।
” স্যরি জান,আমি কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু কখন যে এত ইন্টিমেন্ট হয়ে গেছি।”

কন্ঠ আবারও ফিক করে হেসে উঠলো।
” আপনি ভীষণ খারাপ স্যার,ঘুমান আমি যাই।”

কন্ঠ যেতেই যাবে তার আগেই তূর্য ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বলল।
” দরকার নেই, আমি মা কে বলে দিয়েছি ওরা কাজ সামলে নেবে। তুমি আজ রেস্ট নিবে।”

কন্ঠ বেশ লজ্জা পেলো, সবাই কে ওভাবে বললো,কী না কী ভাবলো সবাই?
__________
” হেই মাই বয় টুমি কী এট্টু আসটে পারবে?”

সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিল তুফায়েল, হঠাৎ অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসাতে অবাক হন। ফোন রিসিভ করা মাত্র অপাশ থেকে ক্যাথিয়ান বলে উঠে কথাটা। মিস ক্যাথিয়ান কে এভাবে বিচলিত ভাবে কথা বলতে শুনে ঘাবড়ে গেল
তুফায়েল।
” কী হয়েছে? আপনাকে এত টেনশনে লাগছে কেন?”
” টুমি একবার আসো প্লিজ,আমি টোমাকে আসার পর সব বলবো ওকে?”

তুফায়েল কিছু বলতে যাবে তার আগেই টুট শব্দ করে ফোন কে’টে দেয় মিস ক্যাথিয়ান।
তুফায়েল ফোঁস করে শ্বাস টেনে সেই বাগান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

অরিন বাগান বাড়ির ভেতরে সাইটে যে বড় বেঞ্চ রাখা ছিল সেখানটায় বসে ছিল একা কি,তুফায়েল গাড়ি নিয়ে বাগান বাড়িতে প্রবেশ করলো।দূর থেকে অরিন কে দেখতে পেলো, কিন্তু অরিন হয়তো তাকে দেখেনি।

রকিং চেয়ারে বসে আছে মিস ক্যাথিয়ান, ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তুফায়েল।
” আপনি ডেকেছিলেন?”

মিস ক্যাথিয়ান জানালার কাছে বসেছিলেন,তুফায়েল কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
” টুফায়েল হাউ আর ইউ মাই স্যান?”

তুফায়েল নিজের নাম এমন অদ্ভুত ভাবে শুনে খানিকটা চমকালো, পরক্ষণে বললো।
” আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?”
” আ’ম ফাইন বাট আমার অরনীর মনটা ভালো নয় ডিয়ার।”

তুফায়েল ভ্রু কুঁ’চকে।
” আন্টি আপনি বুঝতে পারছেন না অরিন কী কী করছে?”
” কী করেছে মাই কিউট গার্ল,হি ইজ ভেরি কিউট এন্ড নাইস পার্সন।ইউ নো আমি যটদিন ধরে ওকে চিনি টটদিনে বুঝেছি ওর মট গুড গার্ল আর নেই।”

তুফায়েল ভাবলো,যত দিন মানে?অরিন কী ওনার মেয়ে নয়? আশ্চর্য! অবশ্য দু’জন কে একদম আলাদা লাগে।অরিন দেখতে একজন বাংলাদেশী নারী,আর মিস ক্যাথিয়ান একজন ব্রিটিশ তা ওনার গাঁয়ের রং দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
” মিস আপনি অরিনের মা নন?”
” এক্সুয়েলি অরিন আমার এট্রপটেট গার্ল মানে পালিত সন্তান বলটে পারো।অরিন কে সাম হাউ সেভেন ইয়ার এগ বাংলাদেশ ঠেকে আমি নিয়ে এসেছি।”
” কীঈ?”
” ইয়েস মাই বয়,টখন ঠেকেই অরনী আমার সাঠে ঠাকছে,ইভেন ওই ঠো আমাকে বাংঙা শিখাচ্ছে। না হলে টোমাদের সাঠে টক করটে পারটাম না।”

তুফায়েল নিশ্চুপ, মেয়েটার কেউ নেই? আশ্চর্য!দুনিয়াতে এমন মানুষ আছে?
” ওই প্রেমিক।”

প্রেমিক ডাক শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো তুফায়েল,অরিন কোমড়ে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ মুখ বেশ শ’ক্ত।
” এখানে কী করছেন?কী কু পরামর্শ দিচ্ছেন মিস ক্যাথিয়ান মাম্মা কে?”

তুফায়েল সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলল।
” তোমার মা বাবা নেই এটা তো বললে না, আমি তো ভেবেছিলাম মিস ক্যাথিয়ান তোমার মা।”

অরিন তুফায়েলের দিকে আড় চোখে তাকায়,হুট করে ফিক করে হেসে উঠলো।
” আরে উনিই আমার মা, ওনার থেকে ভালো মা কেউ হতেই পারে না। জানেন যখন বাবা নতুন মা এনেছিল তখন আমাকে দূর ছাই করতো, খুব কষ্ট হতো। একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই, এরপর কী ভাবে যেনো এয়ার পোর্টে চলে আসি।ওখানেই মিস ক্যাথিয়ান মাম্মার সাথে আমার দেখা হয়। উনাকে সেদিন জাপটে ধরে বলেছিলাম আমাকে নেমে?”

চমৎকার মেয়ে, ওকে দেখে চমকালো তুফায়েল। মেয়েটার এমন একটা অধ্যায় আছে তবুও কী চঞ্চল প্রাণোচ্ছল হাসি।
” আ’ম স্যরি, আমি জানতাম না এসব কিছু।”
“ইটস্ ওকে, কিন্তু এখন যখন জেনেই গেছেন তাহলে আমাকে বিয়ে করে নিন।আমিও এই সিঙ্গেল জীবনে বোরিং থাকতে থাকতে শেষ।”

তুফায়েল গম্ভীর মুখ করে তাকালো অরিনের দিকে, কিন্তু সে পাত্তাই দিল না।
” শুনেন তাড়াতাড়ি আপনার বাড়িতে কথা বলে নিন তার পর বিয়ে করে বাংলাদেশ হুররে।”

তুফায়েল কিছু বলতে যাবে তৎক্ষণাৎ কন্ঠের ফোন বেজে উঠল।
“হ্যলো কন্ঠ বল?”
” ভাইয়া কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো,তুই কেমন আছিস?আর তূর্য?”
” হ্যাঁ আমরা ভালো আছি, অনেক দিন তোমার সাথে কথা হয় না তাই ভাবলাম ফোন দেই।”
” ভালোই করেছিস।”

ওদিকে অরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সবটা শুনে বুঝতে পারলো কন্ঠ তুফায়েলের বোন।সেই সুযোগ ফট করে তুফায়েলের হাত থেকে ফোন ভি’ডিও কল করে দেয়। কন্ঠ ফোন ধরা মাত্রই অরিন বলে উঠলো।
” হেই ননদী আমি হলাম তোমার ভাবিইই।হে হে মানে হবু ভাবি আর কী?কেবা আছো তুমি?”

কন্ঠ আশ্চর্য হলো, হঠাৎ এমন ভাবে কাউকে দেখবে আশা করেনি।
” আরে কী করছো অরিন ফোন দাও।”

অরিন ফোন দিলো না।
“তুমি কে?”
অরিন মুচকি হেসে বলল।
” আমি অরিন,উরফে মিসেস অরিন তুফায়েলে আহমেদ।”

কন্ঠ ফিক করে হেসে উঠলো, মেয়েটা একদম তারই মতো।
” ওয়াও তাহলে ভাইয়া প্রেম করছে।”

অরিন মাথা নামিয়ে বলে।
” না না এখনো করেনি, কিছুক্ষণ পরেই করবে।”
” ওকে ওকে তাহলে আমি বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।”

তুফায়েল ছো মে’রে ফোন নিয়ে নেয়।
” কন্ঠ তুই ওর কথা বিশ্বাস করিস না একদম।”

কন্ঠ মেকি রাগ দেখিয়ে বলে।
” আমি যা বুঝার বুঝে গেছি, রাখলাম।”
কন্ঠ ফোন রেখে দেয়।

“কাল থেকে কলেজে তো টেস্ট শুরু হয়েছে, এবার আমাদের উপর কড়া নজরদারি হবে দেখিস।”

সোহার কথায় সহমত পোষণ করে বাকি সবাই, এখন থেকেই সবাই পড়াশোনায় মন দিচ্ছে। কিন্তু যতই দিক এই তারিফের মাথায় কিছু ঢুকছে না।
” ভাই আর কী কমু? আমার মাথায় এসব ঢুকে না।”

রিয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো,আড় চোখে তাকায় তারিফ।চুপ করে যায় রিয়া, সবাই সিদ্ধান্ত নেয় কাল কন্ঠের বাড়িতে যাবে পড়াশোনা নিয়ে সবাই একটু আলোচনা করবে।

চলবে………..।✨

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২১]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
” এবার একটু পড়াশোনা করো জানেমান, না হলে সামনের টেস্টে পাশ করবে কী করে?”

তূর্যের বুকের সাথে লেপ্টে আছে কন্ঠ, ঠান্ডার দিনে একদমই সে কম্বলের নিচ থেকে বের হতে চায় না। তূর্য এসে বিছানায় বসেতেই গুটিসুটি হয়ে তার বুকে লেপ্টে গেল কন্ঠ।
” পড়ব না, ভাল্লাগে না।”

তূর্য স্ফীত হাসলো, কন্ঠের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে।
” না পড়লে হবে?”

কন্ঠ তূর্যের গালের সাথে গাল ঘ’ষে দেয়, খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো লাগে কন্ঠের।
” উফ্ লাগছে তো!”

তূর্য হাসলো।
” এটা কি আমার দোষ?নিজেই তো গাল ঘ’ষেছো।”

কন্ঠ তূর্য কে জড়িয়ে ধরে, তূর্য কপালে চুমু দিয়ে চোখ বুঝে নেয় তৎক্ষণাৎ দরজায় টোকা দিল শাহা খান।
” তূর্য? বাবা তূর্য?”

তূর্য বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়,শাহা খান বাইরে দাঁড়িয়েই আওড়াল।
“সহিতা এসেছে তোর সাথে দেখা করতে।”

তূর্য সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলে।
” আচ্ছা আমি আসছি।”

শাহা খান বের হয়ে যেতেই কন্ঠ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, তূর্য ওর কাছে যেতেই দু পা পিছিয়ে গেল কন্ঠ।
“কী হলো?”
” কিছু না।”

কন্ঠ ওয়াশ রুমে চলে গেল, তূর্য মুচকি হেসে। বউটা তার বড্ড অবুঝ।

ড্রয়িং রুমে শর্ট ড্রেস পরে বসে আছে সহিতা, বারংবার হাতের ওয়াশে টাইম দেখছে।
” তুই এখানে হঠাৎ?”

তূর্য সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করে সহিতার উদ্দেশ্যে।সহিতা নড়ে চড়ে বসলো, নিজেকে ধাতস্থ করে বলে।
” তূর্য আমি বলছিলাম যে ইয়ান কল করেছিল, বলেছে বিকেলে কলেজ ফ্রেন্ড সবাই সার্কেল ক্যাফেতে আসবে। আমাদেরও যেতে হবে।”

তূর্য ভ্রু কুঁচকালো।
” তো!”

সহিতা মেকি হেসে বলে।
” বলছিলাম তুমি আর আমিও যদি যাই এক সাথে?”

তূর্য মূহুর্তে মুখের রঙ বদলে ফেলে, কিছুটা গম্ভীর্য টেনে আওড়াল।
” আমার ওয়াইফ থাকতে আমি হঠাৎ তোর সাথে যেতে যাবো কেন সহিতা?”

” তূর্য?এটা ফ্রেন্ডস আ’ড্ডা, ওখানে তোমার ওয়াইফ যাবে মানে?”

তূর্য ভাব নিয়ে সোফায় বসে তাচ্ছিল্য করে বলে।
” কী বলতো সহিতা আমি না বউ পাগল।বউ ছাড়া কোথাও যাই না,তাই ওকে সাথে নিয়ে যাবো।”

সহিতা চরম পর্যায়ে রে’গে গেলো, ওদিকে দুতলায় দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে কন্ঠ,কী কথা হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না। মাঝে মাঝে দেখছে তূর্য হাসছে,সহিতাও কথার পিঠে মুচকি হাসে। এগুলো ভীষণ ভাবে কষ্ট দিচ্ছে কন্ঠ কে।
কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো সহিতা, কিন্তু যাওয়ার আগে দুতলার দিকে নজর পড়তেই কন্ঠ কে দেখে বাঁ’কা হাসলো সে।
___________
” হ্যলো হ্যলো,এটা কিন্তু ঠিক নয়।আই লাভ ইউউউউউউউ।”

অরিন তুফায়েলের পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে, বার বার একটা কথাই বলছে,তুফায়েল অস্ফুট স্বরে বলে।
” আচ্ছা ঠিক আছে,বিকেলে দেখা করো তখন বলবো।”

অরিনের অধরে মিষ্টি হাসি খেলে গেল,চোখ দুটো চিক চিক করছে। তুফায়েল অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,যেতে যেতে এক বার তাকালো অরিনের দিকে, মেয়ে একটু বেশি মায়া ময়।
” মিস ক্যাথিয়ান মাম্মাআআআ।”

অরিন মিস ক্যাথিয়ান কে জড়িয়ে ধরে,অরিন কে খুশি দেখে উনি নিজেও খুশি হয়।
” ও মাই অরনী ওয়াট হ্যাপেন্ড?টোমাকে খুব হ্যাপি লাগছে?”

অরিন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।
” ইউ নো মাম্মা তুফায়েল বলেছে আজ বিকেলে ওনার সাথে দেখা করতে, আমাকে হয়তো এক্সেপ্ট করে নেবে।”

” ও মাই গড ইটস্ গ্রেট নিউজ।টাহলে টুমি টুমার লাভ আই মিন ভালোবাসা পাবো।”
” ইয়েস ইয়েস মাম্মা,আ’ম সো হ্যাপি।”

অরিন কে খুশি থাকতে দেখে বেশ আনন্দিত হয় মিস ক্যাথিয়ান।

” বিয়ে করবে আমায়?”

জনসম্মুখে এভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে আছে?এটা মোটেও ঠিক নয়। লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়েছে তোহা।
” ছিহ্ সবার সামনে এমন ভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে আছে?”

সান অধর টেনে হাসলো, মেয়েটা বড্ড অবুঝ।
” ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারলে সেটা কেমন ভালোবাসা?”

তোহা মাথা নুইয়ে অস্ফুট স্বরে বলল।
” বেশী প্রকাশ করলে তা হারিয়ে যায়।”

সান হাঁটু গেড়ে বসলো, টকটকে লাল গোলাপ গুলো তোহার সামনে বাড়িয়ে দিল।
” আগে ভালোবাসা গ্রহণ করো, এরপর দেখো যতই আমি প্রকাশ করি।হারাবো না।”

তোহা নিশ্চুপ এদিক ওদিক তাকায়,কেউ দেখছে কী না তাই লক্ষ্য করছে।
” আআসলে আমি,,,
” হুম বুঝেছি তুমি তোমার চাচা চাচীর মতামত ছাড়া কিছু করতে পারবে না তাই তো?”

তোহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো,সান স্ফীত হেসে বলল।
” সব সামলে নেব,আপাতত তোমাকে আমার বন্ধুদের সাথে মিট করাবো।”

তোহা আবারও আগের ন্যায় মাথা নাড়ল।
__________
তারিফ একটা মুভির অডিশন দিতে গিয়েছে স্টুডিওতে।এর আগেও বার কয়েক অডিশন দেওয়ার পরেও পারেনি তারিফ,তার পারফরমেন্স ভালো হওয়া সত্ত্বেও টাকার জন্য তাকে বরাবর রিজেক্ট করেছে। এবার পুরো কনফিডেন্স নিয়েই যাচ্ছে তারিফ।
স্টুডিওতে ঢুকা মাত্র দেখলো আর কিছু লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে আন্দাজ করতে পারলো অনেকেই অডিশন দিতে এসেছে, পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসলো তারিফ, কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।কী হবে জানা নেই,তবে নিজের উপর তার বিশ্বাস আছে।
“তারিফ?”

মেয়েলী কন্ঠে ভড়কে গেলো তারিফ,ঘুরে তাকাতেই চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল।
” তুমিই?”

আরিফা কে দেখে বেশ অবাক হয় তারিফ,আরিফা তাদের প্রতিবেশী ছিল, এবং কী তার সঙ্গে বিয়েও ঠিক হয়েছিল তারিফের। কিছু কারণ বশত সেই বিয়ে ভে’ঙে গেল, কিন্তু মনের এক কোণে সুপ্ত অনুভূতি ছিল আরিফার জন্য তারিফের মনে।
আরিফা তারিফ কে দেখে অধর বাঁকিয়ে বললো।
” তুমি এখানে কী করছো?বাই দা ওয়ে ইউ নো ইটস মাই হাসব্যান্ড স্টুডিও?”

তারিফ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলল,সে সত্যি জানতো না এই স্টুডিও আরিফার হাসব্যান্ডের ,যদি জানতো তাহলে হয়তো কখনোই আসতো না।
” আসলে আমি অবশ্য জানতাম না তোমার হাসব্যান্ডের স্টুডিও এটা, আমাকে এখান থেকে অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছিল তাই এসেছিলাম।”

আরিফা চিবুক শক্ত করে বললো।
” ওকে, তাহলে দাও তুমি অডিশন।”

আরিফা নিজের স্টাইলে ভেতরে প্রবেশ করলো,তারিফ নিষ্পলক চেয়ে থাকে,মেয়েটা খুবই স্বার্থপর। ভালো হয়েছে ওর সাথে বিয়ে হয়নি তাহলে কী থেকে কী হতো?
তবুও ভেতরে একটা খারাপ লাগা কাজ করলো তারিফের,যতই হোক একটা সময় তাকে ভালোবেসেছিল।
__________
বিকেলের দিকে সবাই কন্ঠের বাড়িতে গেলো পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতে, কন্ঠ প্রথম দিকে একটু ঘাবড়ে গেল এটা তার শশুর বাড়ী।যদি কেউ কিছু বলে? কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে অহনা খান সদারে আপ্পায়ন করে সবার।
কন্ঠ কে চোখের ইশারায় বলে ওদের ঘরে নিয়ে যেতে, কন্ঠ সবাই কে নিজেদের রুমে নিয়ে গেল।
সবার বিষয়টি ভালো লাগলেও শাহা খানের একদম পছন্দ হয়নি, তিনি ভীষণ বিরক্ত হয়।
বেলকনিতে বসে আছে সবাই, ওদিকটায় অনেকটা জায়গা থাকায় কারো বসতে অসুবিধা হয়নি।
” এই কন্ঠ তোর কী হয়েছে বল তো?”

তাহিয়ার প্রশ্ন রিতিমত এড়িয়ে গেলো কন্ঠ।
” কই কিছু না তো,তোরা কী খাবি বল আমি নিয়ে আসছি?”

ব্যাপারটা বেশ ধরতে পারলো সান, কন্ঠ যে তাদের থেকে কিছু একটা আড়াল করছে।
“এই কন্ঠ তুই এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন?”

ওর কথায় সায় দেয় সোহা।
“হ্যাঁ ভাই তোর হলো কি? ইদানিং গ্রুপ কলেও পাওয়া যায় না,মন খারাপ নাকি?”

রিয়া ফোড়ন কেটে বলল।
” আরেহ বুঝিস না? দুলাভাই ওর্রে সারা রাইত পড়াশুনা করায়,আহালে কী কষ্ট?”

কন্ঠ সরু দৃষ্টিতে তাকালো রিয়ার দিকে,রিয়া চুপ করে গেলো।
সকালে সহিতার ব্যাপারটা বলতে চায় না কন্ঠ,যতই হোক তূর্য স্যার তার স্বামী হয়,কী ভাবে কারো সামনে তাকে ছোট করবে? কখনও সম্ভব নয়।সবটা আড়াল করতে বলে উঠে কন্ঠ।
” আরে তেমন কিছু না,সামনে পরীক্ষা তাই নিয়ে একটু ভয় হচ্ছে আর কী?”
সবাই কন্ঠের কথা মেনে নেয়, এরপর একে একে সবাই নো’ট বের করে পড়তে শুরু করে।তারিফের ফোনে টুং করে একটা নোটিফিকেশন আসলো,ম্যা’সেজ চেক করতেই চমকে উঠে।
” এই ডিংকা চিংকা ডিংকা চিংকা।”

তারিফের নাম দেখে সবাই হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“মামা কী হইছে তোর?”

সোহা প্রশ্ন শুনে তারিফ চেঁচিয়ে বলল।
‘ মামা আমার সিলেকশন হয়ে গেছে ওররে।”

সবাই বেশ খুশি হয় তারিফের সিলেকশন হওয়াতে,রিয়া আড় চোখে তাকায় তারিফের দিকে, হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠল সে আনমনেই।
হাসিটা চোখ এড়ালো না কন্ঠের,ভ্রু উঁচিয়ে দু’জন কে পরখ করলো সে।

চলবে………….।✨