অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-২২+২৩

0
181

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

বিকেলে সবাই মিলে ঠিক করলো কিছু একটা করা যাক যাতে সবাই এক্সামের‌ আগে আনন্দ করতে পারে। কিন্তু কী করবে তা কেউ ঠিক করতে পারলো না, অবশেষে সবাই কে অবাক করে দিয়ে তূর্য এসে বললো সামনের আট তারিখ কলেজ থেকে ট্যুরে যাওয়ার কথা বলেছে,সেটা শুনার পরে সবাই খুব আনন্দিত হয়। তূর্য বার কয়েক কন্ঠের দিকে তাকায়, কিন্তু কন্ঠ বার বার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তূর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসে,বউ এর রাগ ভাঙাতে হবে।
রাত আটটার দিকে বিছানায় শুয়ে আছে কন্ঠ, উল্টো পাশে শুয়ে আছে তূর্য।চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে সে, ওদিকে কন্ঠ এদিক সেদিক করছে। ঘুম আসছে না তার একদমই, হঠাৎ মনে পড়লো অনেক দিন ধরে ফেসবুকে কিছু পোষ্ট করে না সে।তাই বালিশের নিচ
থেকে ফোন বের করে ফেসবুক অন করলো।
একটা পোষ্ট লিখলো কন্ঠ ” কত ছেলে প্রপোজ করেছে কাউকে পাত্তা দেই না”
সাথে ছিল মুখ বাঁকানো একটা ইমোজি।
মূহুর্তে নোটিফিকেশনের টুং টুং শব্দ আসতে থাকলো, অনেকেই ক’মে’ন্ট করছে,তার মধ্যে একটা কমে’ন্টে চোখ আটকে গেলো।রাগে ফুঁসতে থাকলো, তূর্য কমেন্ট করেছে। পাবলিক প্লেসে তার ই’জ্জ’ত খেয়ে দিলো ষ,বড় বড় অক্ষরে লিখেছে “অথচ কলেজের প্রফেসর কে চিঠি লিখার অপরাধে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।”
কথাটা ভীষণ গায়ে লাগল তার, মূহুর্তে ফোন রেখে বিছানায় উঠে বসলো। তূর্য কে উদ্দেশ্য করে বললো।
” এই যে আপনি আমার সাথে লাগছেন কোন দুঃখে?”

তূর্য টান টেনে মিষ্টি কন্ঠে আওড়াল।
“কী করলাম গোঁ?”

কন্ঠ দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললো।
” কমে’ন্টে ওইসব কী বললেন?”

তূর্য ফিক করে হেসে উঠল।
” যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম!আর তুমি তো আমাকে চিঠি দিয়েছিলে মনে নেই?”

কন্ঠ নিজের ভাবমূর্তি বজায় রেখে বলল।
” ওইটা তো ডেয়ার ছিল, উঁহু আপনাকে চিঠি দিতে আমার বয়েই গেছে।”

তূর্য হাসলো,হা’মলে পড়লো কন্ঠের উপর। বিছানায় দুই হাত উপর দিকে চেপে ধরে নে’শা ভরা কন্ঠে বলে
“বউ ইচ্ছে করে,,

কন্ঠ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে।
” কী ইচ্ছে করে?ওই সহিতা ওরফে শা’কচু’ন্নী কে ভালোবাসতে?”

তূর্য শব্দ করে হেসে দেয় এবার, শা’কচু’ন্নী?
” তাহলে তুমি কী?”

কন্ঠের রাগ হলো।
” ও বাবা যেই আপনার গার্লফ্রেন্ড কে কিছু বললাম তাতেই আমাকে আপনি বকা দিচ্ছেন?”

তূর্যের ভাব ভ’ঙ্গি বদলে যায়, ছেড়ে দেয় কন্ঠ কে। উল্টো হয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।
________________
মেয়েটাকে সেই বিকেলে আসতে বলেছিলো তুফায়েল, কিন্তু অরিন আসেনি। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তুফায়েল,এই কয়েকদিনেই ক্লান্ত হয়ে গেলো।সে কী বুঝবে ভালোবাসার মানে?

কথাটা ভেবে বেলকনিতে চলে গেল তুফায়েল, মুঠোফোন বের করে ফোন করলো কন্ঠ কে।
” হ্যাঁ ভাইয়া বলো কেমন আছো কী অবস্থা?”

তুফায়েল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”
” হ্যাঁ আমিও ভালো আছি, আচ্ছা তোমার কাজ কবে শেষ হবে বলো তো?ফিরবে কবে?”
“খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো।”

কন্ঠ খানিকটা দুষ্টুমি করে বলে।
” সাথে আমার অরিন ভাবি কে নিয়ে এসো।”

কথাটা বলেই ফিক করে হেসে উঠলো কন্ঠ,তুফায়েলও হাসলো।
” আরে ছাড় তো ওর কথা,মেয়েটা পা গ ল।”

কন্ঠ বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
” উঁহু,ওই মেয়েটা কিন্তু একদম আমার মত।”

তুফায়েল আনমনেই বলে উঠলো।
“হুম, খুবই চঞ্চল। একদম তোর মত।”
* ওহো, তাহলে তাড়াতাড়ি ভাবী বানিয়ে নিয়ে আসো।”

তুফায়েল সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
” আচ্ছা রাখছি, আবার পরে কথা হবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে, গুড নাইট।”
“গুড নাইট।”

কিয়ৎক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে সময় কা’টালো তুফায়েল, এরপর ঘুমাতে চলে গেল।
_____________
তনয়া আহমেদ রান্না করছে,ওদিকে আনিকা আহমেদ সবাই কে খাওয়ার জন্য টেবিলে আসতে বলে।
আনিকা আহমেদের মন খারাপ,ছেলেটা কত দিন হলো বাড়ি নেই।
” মা আজকে কী রান্না হয়েছে?”

টেবিলের একটি চেয়ারে বসলো রিয়া,ওর পাশেই বসেছে সাহাদ আহমেদ এবং আহাদ আহমেদ।
আনিকা আহমেদ সবাই কে প্লেট দিতে দিতে বলল।
” আজকে তোর বড় মা রান্না করেছে,ঝাল ফ্রাই সাথে ফ্রাইড রাইস।”

রিয়া প্রচন্ড খুশি হয়।
” ওয়াও এত দিন পর,মা ভাইয়া তো এগুলো বেশ পছন্দ করে।”

সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলল আনিকা।
” কী জানি ছেলেটা ওখানে কী খাচ্ছে না খাচ্ছে?”

আহাদ আহমেদ আনিকা আহমেদ কে আশ্বাস দিয়ে বলেন।
” আনিকা বোন চিন্তা করো না,তুফায়েল আর মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই চলে আসবে।”
” হ্যাঁ ভাইয়া আমারও তুফায়েলের জন্য মনটা খারাপ করছে।”

সাহাদ আহমেদ বেশ মলিন মুখে কথাটা বললো।

রিয়া কী জেনো একটা ভেবে ফোন অন করলো, তাতে কারো একটা ম্যাসেজ আসতেই সে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল।
“আচ্ছা মা তোমরা খাও আমি এখুনি আসছি।”

রিয়া ত্বরিতে দুতলায় ছুটলো।
“আরেহ কোথায় যাস? খেয়ে নেয়,,

রিয়া শুনলো না উপরে চলে গেলো,মেয়ের এই খামখেয়ালি একদম পছন্দ নয় তার।
কিয়ৎক্ষণ পর তনয়া আহমেদ খাবার নিয়ে আসেন, সবাই কে দিতেই খেতে বসলো সবাই।

“ইয়েস জানেমান বলেন।”

তোহা হাসলো, ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার। বয়সের থেকে বড় এই পুরুষ তাকে কত ভালোবাসে,ভাবতেই আনন্দ লাগে।তোহা সান কে খানিকটা বিরক্ত করার জন্য বলে
তোহা মিনমিনে বলে।
” বলছিল আমার ভীষণ আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।”

সান ঠোঁ’ট কাম’ড়ে হাসছে।
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফোন রেখে দিল সান,তোহা অবাক হলো। ফোন রেখে দিল কেন?
আধঘন্টা পর আবার সান ফোন করলো তোহা কে,তোহা বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে।
” কী হয়েছে?”

সান স্ফীত হেসে বলল।
” বাইরে আসো, দাঁড়িয়ে আছি।”

তোহা পা টিপে টিপে বাইরে এলো,দু তিনটে ফ্লেভারের
দাঁড়িয়ে আছে সান।
“আইসক্রিম?”

তোহা বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাস করলো,সান টুপ করে তোহার কপালে চুমু এঁকে দেয়।
“আমার জানের একটা টু’করো কিছু চাইবে আর আমি দেব না এটা কী সম্ভব?”

তোহা মিষ্টি হাসি দেয়,সান এখানেই থেমে নেই।আচমকা জড়িয়ে ধরে তোহা কে।
” কী করছেন? চাচী জেগে যাবে।”
“উপ্স স্যরি, ভুলেই গেছি।”

এরপর দুই প্রেমিক যোগল বাইরের উঠানে বসে আইসক্রিম খায়।
_______
সারাদিন গা গুলিয়ে উঠছে নীলার, কেমন জানি লাগছে তার।বার বার বমি হচ্ছে তার, বিকেলের দিকে সাফিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখলো নীলা বিছানায় শুয়ে আছে
পরনের স্যুট খুলে ডিভানের উপর রেখে দেয় সাফিন।
“কী হয়েছে নীলা? শরীর খারাপ?”

নীলা পিটপিট চোখে তাকায় সাফিনের দিকে।
“ভালো লাগছে না, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।”

সাফিন কপালে হাত দেয় নীলার,জ্বর আছে কী না দেখতে?
“জ্বর তো নেই, তাহলে কী হয়েছে?”

নীলা আলতো হাতে আঁ’ক’ড়ে ধরে সাফিন কে।
“কষ্ট হচ্ছে খুব।”
“উঁহু, ঘুমাও,কাল সকালে ডাক্তারের কাছে যাবো।”

নীলা সাফিনের বুকে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকে ।

সহিতা নিজের ফ্রেন্ডস সার্কেলের কাছে বলে রেখেছে তূর্য এমন একটা ইডিয়েট মেয়ে কে বিয়ে করেছে যে অলওয়েজ বোকার মত কাজ করে, কোনো কিছুতেই পারফেক্ট নয়, এবং কী কলেজের পরীক্ষায় পাশ করতে পারে না।
সবাই বেশ মজা উড়ায় তূর্যের,সহিতা ঠিক করে সবার কাছে হ্যানোস্তা করবে তূর্য কে।
“এবার দেখো তূর্য আমি কী করি? খুব ভালোবাসা তোমাদের তা জানালা দিয়ে পালাবে।”

চলবে………….✨

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২৩]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে সবাই,সবে মাত্র একটা ক্লাস শেষ করলো। কন্ঠ সিডিউল চেক করে দেখেছে দ্বিতীয় ক্লাস তূর্য স্যারের,কেন জানি আজকে ওনার ক্লাস করতে একদম ভালো লাগছে না কন্ঠের।
বেল বেজে উঠলো, সবাই ক্লাসের দিকে ছুটে। তূর্য সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শেষ করে খানিকটি রেস্ট নিচ্ছিল,বেল শুনে ফির নিজের আরেকটি ক্লাস নেওয়ার জন্য অফিস রুম থেকে বেরিয়ে ক্লাস রুমের দিকে রওনা দেয়।
ক্লাসে ঢুকা মাত্র সবাই চুপ করে গেলো, তূর্য বই টেবিলের উপর রেখে বোর্ডে লিখতে শুরু করে, পুরোটা ক্লাস কন্ঠ অমনোযোগী ছিল,সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার সুদর্শন বরের দিকে।
বার কয়েক আড় চোখে তাকায় তূর্য, অতঃপর আবারও নিজের কাজে মন দেয়। ক্লাস শেষে সবাই নোটিশ বোর্ডে যায়,অ্যাসেস্টেন্ট বলেছে গেছে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সবাই ওখানে গিয়ে নোটিশ দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো,ট্যুরের প্রোগ্রাম নিয়ে লেখা হয়েছে। সম্পুর্ণ খরচ কলেজে কর্তৃপক্ষের ,যারা যাবে তারা নাম রেজিস্ট্রেশন করতে বলেছে।
সবাই নাম রেজিস্ট্রেশন করলেও কন্ঠ করলো না,এটা কেউ দেখেনি।
_______________
অফিসের একজন সহকর্মী এক্সিডেন্ট হওয়ার দরুন হসপিটালে ভর্তি আছে,তাকে দেখার জন্য হসপিটালে গেলো তুফায়েল,তার কথা হলো সে একজন কর্মী হলেও মানুষ তো? অবশ্যই একজন বস হওয়ার দরুন তাকে এক নজর দেখা উচিত।
হসপিটালে পা রাখতেই রিসেপশনে মিস ক্যাথিয়ান কে দেখতে পায় তুফায়েল, এগিয়ে গেলো ওনার দিকে।
“মিস ক্যাথিয়ান আপনি এখানে?”

পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মিস ক্যাথিয়ান,তুফায়েল কে দেখে বেশ খুশি হলেন।
“মাই বয় এঠো ডে টুমি আসোনি কেনো?হোয়াই?”
“আসলে মিস ক্যাথিয়ান আমি একটু বিজি ছিলাম,তা বলুন কেমন আছেন?আর অরিন কোথায়?”

মিস ক্যাথিয়ানের কপালে ভাঁজ পড়লো।ধরা গলায় বলল।
“ইউ নো অরনী হসপিটালে এডমিট আছে।”
“কীঈ?”
বিস্ময় নিয়ে বললো তুফায়েল।
” এক্সসুয়েলি টোমার সাঠে মিট করটে গিয়েছিল অরনী,দ্যান ওর এক্সিডেন্ট হয়।”

তুফায়েল চমকে উঠে, হঠাৎ কেন জানি তার ভীষণ ভয় করছে। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে।
“কেবিন নাম্বার বলুন।”
“কেবিন টুয়েলভ।”

তুফায়েল ত্বরিতে সেদিকে ছুটে।
কেবিনের বেডে শুয়ে আছে অরিন, মাথায় ব্যান্ডেজ করা আছে,হাতেও ব্যান্ডেজ করা।
“অরিন?”

ঘাড় ঘুরাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে অরিনের, তবুও কষ্ট করে দরজার দিকে তাকালো।তুফায়েল কে দেখে অধর টেনে হাসলো,ধরা কন্ঠে আওড়াল।
“আপনি এসেছেন? উফ্ সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না।”

অরিন নিজ থেকে উঠতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়,তুফায়েল ওর কাছে এসে বসে।উঠতে দিল না তাকে,খানিকটা রাগ মেশানো কন্ঠে শুধায়।
“তুমি এমন কেন মেয়ে? নিজের খেয়াল রাখতে পারো না? এত চঞ্চল হতে হবে কেন? খারাপ কিছু একটা হয়ে গেলে কী হতো?”

অরিন ফিক করে হেসে উঠলো।
“কী আর হতো আপদ বিদায় হতো।”

তুফায়েল ধমকের স্বরে হিসহিসিয়ে বলল।
“চুপ,এসব বললে থাপ্প’ড় দেব।”
অরিনের মুখটা মূহুর্তে অমাবস্যার রাতে মত হয়ে গেলো।
“ইস্ কী অবস্থা করেছে নিজের?ডক্টর কোথায় আমি কথা বলছি।”

তুফায়েল বের হয়ে ডক্টরের কাছে গেলো দেখা করতে,অরিনের ভীষণ শান্তি লাগছে,এই ছেলে নাকি তাকে ভালোবাসে না হুউ।
নিজের মনেই হাসতে থাকে অরিন।
___________
“ওই ডিংকা চিংকা,আহা ওহো।”

তারিফ নিজের মত নাচতে ব্যস্ত, হঠাৎ ওকে এমন খুশি দেখে সবাই জানতে চায় খুশির কারণ।তাফির অধর টেনে হাসে,বেশ আনন্দ নিয়েই বলে।
“মামাগন আমার সিলেকশন হয়ে গেছে আহা ওহো।”

“কীঈ?”
সবাই এক সাথে বলে উঠে, অবশেষে সবাই তারিফের আনন্দে আনন্দিত হয়, ছেলেটা অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে। অনেক গুলো অডিশন দেওয়ার পরেও ফল পায়নি,তবে এইবার হয়েছে।

কন্ঠ সবার মাঝখান থেকে বলে উঠে।
“দেখ তারিফ তুই যেহেতু চান্স পেয়েছিস সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা ট্রিট চাই।”

“হ্যা রে সবাই ট্রিট নিয়েই ছাড়বো।”
সবাই এক প্রকার চেপে ধরে তারিফ কে, অবশেষে সবাই কে শান্ত করতে বলে উঠে।
“ওকে ওকে, সবাই পাবি। কিন্তু এখন চল ক্লাসে যাই।”
____________
বাড়িতে আসা মাত্র দেখালো বিছানার উপর ব্যাগ গোছানো, দেখে অবাক হয় কন্ঠ।
“এগুলো কার?”

ব্যাগ খুলে দেখে ভেতরে কন্ঠের কিছু জামা কাপড় রাখা আছে।
“আশ্চর্য! এগুলো তো আমার। কিন্তু এগুলো ব্যাগে রেখেছে কে?”
“আমি।”

পুরুষালী কন্ঠ শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো কন্ঠ, তূর্য দাঁড়িয়ে আছে।
“এগুলো তোমার,আমিই গুছিয়ে দিলাম।”

কন্ঠ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলল।
“কেনো?”

তূর্য দরজার সাথে হেলান দিয়ে আওড়ালো।
“তুমি না কী ট্যুরে যাবে না? দেখলাম তো নাম নেই।”

কন্ঠ আগের ন্যায় বলে।
“হ্যা, ইচ্ছে নেই আমার।”

তূর্য স্ফীত হাসলো।
“তাই!যাই হোক তোমার কষ্ট করতে হয়নি। আমি তোমার নাম দিয়ে দিছি।”

কন্ঠ নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“কেন দিলেন? আমি তো যাবো না।”

তূর্য দুষ্টুমি করে বলে।
“আমি কোলে করে নিয়ে যাবো।”

কন্ঠ রাগে গজগজ করে উঠে।
“আপনি এমন কেনো করছেন স্যার?”

তূর্য বেশ ভাব নিয়েই বলে।
“কারণ আমি তোমার স্যার এবং হাসবেন্ড।”
কন্ঠ মুখ বাঁকিয়ে ফেললো, ভীষণ রাগ হচ্ছে।সে যে রেগে আছে তার তো কোনো পাত্তাই নেই।রাগ ভা’ঙানোর চেষ্টাই করলো না তার।
“আমি যাবো না।”
তূর্য কন্ঠের নিকটে আসে, কন্ঠের উড়নার শেষাংশ টুকু হাতে তুলে নিল।হাতের মধ্যে পেঁচিয়ে ধরে, কন্ঠ ভ্রুকুটি করে তাকালো।
“কী হচ্ছে এটা?”

তূর্য আরো খানিকটা কাছে আসলো, ফিসফিস করে বলল।
“বউ গোঁ এত রাগ কেন?”কন্ঠ চোয়াল শক্ত করে নেয়,চোখ দুটো তার চিকচিক করছে ইতিমধ্যে। অবশ্যই লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলো কন্ঠ,তা চোখ এড়ালো না তূর্যের।
“খুব কষ্ট হচ্ছে?”

তূর্যের এহেন প্রশ্ন শুনে টুপটাপ পানি পড়ছে কন্ঠের চোখ দিয়ে।রাগ মেশানো কন্ঠে বলে উঠে।
“আমার কাছে কী চাই আপনার? আমি আপনার বউ না বুঝলেন।”
“কী হয়েছে কন্ঠের?তুমিই তো আমার বউ।”

কন্ঠ ঝাঁ’ঝা’লো কন্ঠে বলে।
“আমি কেন বউ হবো?সহিতা ম্যাডাম আছে তো!”

তূর্য কন্ঠ কে আলগোছে জড়িয়ে ধরে, কন্ঠ এক পর্যায়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।
“কষ্ট পায় না,সহিতা আমার বন্ধু,ওর সাথে শুধু ফ্রেন্ডশিপের সম্পর্ক।আর তুমি আমার স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী হও।”

কন্ঠ ফুঁপিয়ে উঠলো।
“ওনার সাথে এত হাসাহাসি করলেন কেন?এত কিসের কথা?”

তূর্য কন্ঠের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলে।
“উঁহু,ও আমাদের ইনভাইট করতে এসেছিল। আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল সবাই আসবে। ওখানে ওর সাথে যেতে বলেছে, কিন্তু আমার তো বউ আছে।আমি তোমার সাথে যাবো।”
“সত্যি!”
“অবশ্যই, তুমি থাকতে অন্য কারো সাথে যেতে যাবো কেন?”

কন্ঠ বেজায় খুশি হয়ে উঠলো, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তূর্য কে। তূর্যের হাতের বাঁধন দৃঢ় হয়।পুরো রুম জুড়ে একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

চলবে………….।✨