অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-২৪+২৫

0
154

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

জর্জেটের শাড়ি পরেছে কন্ঠ,হাতে পাথর বসানো চুড়ি। আর সেই চুড়ির সাথে মিল রেখে গলায় সিমপল একটা নেকলেস পরেছে কন্ঠ‌।
আয়নায় নিজেকে বার কয়েক দেখে নিচ্ছে,বেশ লাগছে তাকে আজ।লাগবেই তো,সব কিছু তূর্য নিজে সিলেক্ট করে দিয়েছে।পরণে ব্ল্যাক স্যুট তূর্যের, দুজনে মিলে পার্টিতে মাত্র এসেছে।
এত দিন পর সব ফ্রেন্ডস দেখে বেশ ভালো লাগছে তার। এখন তো আগের মতো আর কথাই হয় না,যে যার কাজে ব্যস্ত থাকে। হোয়াইট ড্রেস পরে হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সহিতা। কন্ঠ এবং তূর্য কে এক সাথে আসতে দেখে প্রচন্ড রকম রাগ হয়।
তূর্য এবং কন্ঠ এক পাশে দাঁড়িয়ে ইফাত এবং আহনাফের সাথে কথা বলছে।
ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তূর্য কন্ঠ কে।
তারই মধ্যে সিনতা নামে তূর্যের এক মেয়ে বন্ধু ওর কাছে আসে।
“ও তূর্য তুই ওকে বিয়ে করেছিস?”

কথাটা বলার সময় বেশ নাক মুখ কুঁচকে বলে সিনতা, তূর্য বেশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে শুধায়।
“কেন কী হয়েছে সিনতা?”

সিনতা বেশ কাচুমাচু হয়ে বলে।
“না মানে আমরা তো জানতাম তোর আর সহিতার বিয়ে হবে, কিন্তু এখন তো দেখছি।”

কন্ঠ নিশ্চুপ, তূর্য কি বলে তাই দেখার অপেক্ষায় আছে সে। তূর্য সিনতা বেশ বেশ কড়া ভাবেই বলে।
“দেখ সিনতা আমি তোকে একটা কথা ক্লিয়ারলি বলে দিচ্ছি, কন্ঠ আমার ওয়াইফ। আমার ওর থেকে কোনো প্রবলেম না থাকলে আশা করি তোদেরও কোনো প্রবলেম থাকা উচিত নয়।এম আই রাইট?”

সিনতার মুখ মূহুর্তে চুপসে গেল,সে আড় চোখে তাকায় পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সহিতার দিকে।

কন্ঠ ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রকম শান্তি পায়, কিন্তু একদিক থেকে তার কষ্টও হচ্ছে।
আরো কিছুক্ষণ পার্টি চলে, কিন্তু তূর্য আর সেখানে থাকলো না।ক্লোজ ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করে চুপচাপ বেরিয়ে গেল।সহিতা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে স্থান ত্যা’গ করে।

একটানা অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি ড্রাইভ করছে তূর্য, কন্ঠ তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। কিন্তু তূর্যের কোনো ভাবান্তর নেই,সে গম্ভীর মুখ বানিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে।
কন্ঠ গলা খাদে নামিয়ে শুধায়।
“আপনার কী হয়েছে স্যার?”

তূর্য আড় চোখে তাকায় কন্ঠের দিকে। কন্ঠ বেশ কিছুক্ষণ পর কন্ঠ লক্ষ্য করলো তারা অন্য একটা পথে যাচ্ছে,বাড়ির ঠিক উল্টো পথটা হবে হয়তো।
“স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

তূর্য ড্রাইভ করতে করতেই বললো।
“অন্য কোথাও।”
“কেনো?”
“বাড়ি যেতে ভালো লাগছে না,অন্য কোথাও যাই।”

কথাটা বলে সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো তূর্য, কন্ঠ সারাক্ষণ তূর্য কে দেখলো।
আশেপাশে কেউ একটা নেই, মাঠের মত একটা জায়গা।তার একটু দূরে ঝোপঝাড়,তারা ঝোপঝাড়ের পাশে কাঠে আগুন ধরিয়ে বসে আছে।যেহেতু শীত কাল সেই জন্য বেশ ঠান্ডা পড়েছে,এই ঠান্ডায় উষ্ণতা ভীষণ প্রয়োজন ছিল।
“এদিকে এসো।”

হাতের ইশারায় তূর্য কন্ঠ কে কাছে ডাকে, কন্ঠ তূর্যের পাশে গিয়ে বসলো। তূর্য আলগোছে জড়িয়ে ধরে কন্ঠ কে, অতঃপর প্রাণ ফিরে পায় কন্ঠ।
____________
কোর্টে দাঁড়িয়ে আছে তুফায়েল, বারংবার হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিচ্ছে।কিয়ৎক্ষণ পর উপস্থিত হয় অরিন।তার সাথে আছে মিস ক্যাথিয়ান,অরিন কে বলা হয়নি তারা কোথায় যাচ্ছে?
সকাল সকাল মিস ক্যাথিয়ান অরিন কে নিয়ে বেরিয়ে আসে। অনেক বার জিজ্ঞেস করা সত্বেও কিছু বললেন না মিস ক্যাথিয়ান। হঠাৎ কোর্টের সামনে এসে তুফায়েল কে দেখে পিলে চমকে উঠে অরিনের।
“আপনি এখানে?”

তুফায়েল তাগিদ দিলো,অরিন কে নিয়ে ভেতরে গেলো। উকিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন। উকিল সাহেব একটা কাগজ দিলেন সই করার জন্য।
“এটাতে সাইন করো।”

অরিন ঠিক কিছুই বুঝতে পারলো না, কিসের পেপার এটা?তুফায়েল ফের বললো।
“কী হলো দাঁড়িয়ে রইলে যে?সাইন করো।”
“এটা কিসের পেপার?”

অরিনের কথার কোনো উত্তর দিলো না তুফায়েল, পেপার এবং প্যান দু’টো ওর কাছে দেয়।
“সময় খুব কম, তাড়াতাড়ি করো।”

অরিন আর কিছু বলল না ইভেন পেপার পড়েও দেখলো না একবারের জন্যও।সাইন করা মাত্র তুফায়েল বিড়বিড় করে বলে উঠলো “আলহামদুলিল্লাহ”

তুফায়েল আরো কিছু করলো, এবং কী মিস ক্যাথিয়ানও একটি পেপারে সাইন করেন।
কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বের হতেই অরিন কে নিয়ে তুফায়েল যেতে চাইলো।
“তাহলে মিস ক্যাথিয়ান আমরা আজ রাতেই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো।”

বাংলাদেশ যাওয়ার কথা শুনে আশ্চর্য হয় অরিন,সে তো কিছুই বুঝতে পারলো না।মিস ক্যাথিয়ান অরিনের মাথায় হাত রাখলেন।
“ও মাই ডিয়ার অরনী আই হোপ টুমি অলওয়েজ হ্যাপি ঠাকবে।টুমাকে আমি খুব ভালোবাসি মাই ডিয়ার, কখনো কোনো পেইন ফিল করটে ঢেইনি।আই হোপ টুফায়েল টুমাকে খুবই ভালো রাখবে।”

অরিন কিছু বুঝতে না পেরে মিস ক্যাথিয়ানের হাত শক্ত করে ধরলেন।
‘মাম্মা এসব কেন বলছো তুমি? আমি কী তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি নাকি?আর তুফায়েলও আপনিও তো কিছু বলছেন না!”

তুফায়েল কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই মিস ক্যাথিয়ান বললেন।
“টুমার এন্ড টুফায়েলের ম্যারিড হয়েছে।টুমি টুফায়েল কে লাভ করো,এটা সে ফিল করেছে।সো দ্যান হি ম্যারিড টু ইউ।”

অরিন আকাশ থেকে পড়ার মত তাকালো তুফায়েলের দিকে, তার মানে সে একটু আগে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করলো?

তুফায়েল আর দেরী করলো না,মিস ক্যাথিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।অরিনের মুখ ভার হয়ে আসে। মিস ক্যাথিয়ান তার সব কিছু ছিল,ওই অনাথ আশ্রম তার একটা বাড়ি।সব ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করতেই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার।
রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করার সময় অরিন বার কয়েক অনেক গুলো প্রশ্ন করেছে তুফায়েল কে, কিন্তু কিচ্ছু বললো না তুফায়েল। তাতে অভিমানের পা’ল্লা ভারী হয় অরিনের।

আকাশে রূপালী থালার মত একটা চাঁদ উঠেছে,ম্যা’সেজের টুং শব্দ শুনে রিয়া ফোন হাতে নিলো। কাউকে কল করলো,ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠে হাসি ভেসে আসলো। রিয়া শান্তি পেলো। ভীষণ শান্তি।
“এত হাসি?”

“জ্বি, আপনাকে মনে পড়ছে খুব।”

“তাহলে চলে আসুন,আর না হলে আমাকে নিয়ে যান।”
“নিয়ে যাবো,আর কিছু দিন অপেক্ষা করো। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবো।”

“আরো অপেক্ষা?”

“বেশি দিন না,আর মাত্র কয়েকটা মাস।”

“মিস ইউ।”

“মিস ইউ টু।”

এমন ভাবে আরো কিছুক্ষণ কথোপকথন চললো।এক সময় রিয়া ঘুমিয়ে পড়ে,ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটি ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করে।
____________
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে? আপনি কিছু একটা করুন না প্লিজ?”

কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে উঠে তোহা,ভেতরে থাকা এক দলা কান্না গলা চে’পে ধরেছে।সানের বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। তার প্রিয় নারী এভাবে চোখের পানি ফেলছে তা মোটেও সহ্য হচ্ছে না।
“প্লিজ তোহা কেঁদো না তুমি, আমি কিছু একটা করছি।”

তোহা আগের ন্যায় ফুপাতে ফুপাতে আওড়াল।
“আপনি বুঝতে পারছেন না,চাচা চাচী আমাদের বিষয়ে জেনে গেছে ‌। এবং কী তিনি ঠিক করেছে কিছু দিনের মধ্যেই আমার বিয়ে দেবেন,সেই জন্য কাল পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে।”

সান চমকে উঠে।
“কী? এত তাড়াতাড়ি কী করে?”
“চাচার এক আত্মীয় তারাই তাদের ছেলের কথা বলেছে, আমি কিছু জানি না আপনি আমাকে প্লিজ নিয়ে যান। আমি পারব না এখানে থাকতে।”

সান তোহা কে শান্তনা দেওয়ার স্বরে বলে।
“তুমি চিন্তা করো না,কাল আমি আসছি দেখা করতে।আর এটাও দেখছি কী করা যায়।”

তোহা খানিকটা শান্ত হয়ে ফোনটা রেখে দেয়, ওদিকে চিন্তার ভাঁজ পড়লো সানের কপালে।কী করবে সে এখন? এমনিতেই কেউ নেই তার,বড় আপুর ঘাড়ে বসে খায়। প্রতিদিন কতই না খোটা শুনতে হচ্ছে তাকে,সেই জন্য বাধ্য হয়ে টিউশনি করছে। এখন যদি তোহা কে নিয়ে আসে তাহলে শান্তি দিতে পারবে না মেয়েটাকে।

নানা চিন্তা মস্তিষ্কে হানা দিচ্ছে সানের,এক পর্যায়ে মাথা ব্যথা ধরেছে তার।সহ্য করতে না পেরে ঘুমের টেবলেট খেয়ে শুয়ে পড়ে।

অসুস্থ হওয়ার দরুন ত্বরিতে নীলা কে সাফিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে,ডাক্তার দেখানোর পরে জানতে পারলো নীলা এক সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট, কথাটা কর্ণ স্পর্শ করা মাত্র অবাক হয় সাফিন।সে বাবা হবে? বিষয়টি কতটা আনন্দের?তার ভাষা নেই প্রকাশ করার।
মা হওয়ার মধ্যে প্রশান্তি এবং তৃপ্তি আর কিছুতে নেই।সেই সুখ শান্তি সব এখন নীলার আঁচলে বাঁধা।
“তুমি এত সুন্দর একটা উপহার দিবে আমি কল্পনা করিনি নীলা।”

নীলা লজ্জায় আটখানা হয়ে গেছে,সে দেখতে চায় বাড়ির লোকদের। ওদের জন্য মন টানছে খুব।
সাফিন নীলার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে।
“আমরা দেশে ফিরবো, সামনাসামনি সবাই কে খুশির কথা বলব।”

নীলা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে সাফিন কে, লোকটা মুখ ফুটে বলার আগেই মনের কথা বুঝে যায়।
সাফিন আস্তে ধীরে নীলা কে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়, দু’জনে মিলে ঠিক করে পরের সপ্তাহে বাড়ি ফিরে যাবে তারা।

আনিকা আহমেদ ছেলে এবং মেয়ের জন্য মন কেমন করছে, অনেক দিন হচ্ছে দেখে না তাদের।
চোখ দুটো অজান্তেই ভিজে উঠলো তার, লক্ষ্য করে দেখলো রিয়া ঘুমিয়ে গেছে কখন। দরজা ভালো করে টেনে নিজের ঘরে চলে গেলেন উনি।

চলবে…………✨।

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

অসুস্থ হওয়ার করনে শাহিন খান শাহিনা খান কে ঢাকা হসপিটালে নিয়ে গেছেন, সকাল সকাল এমন খারাপ একটা খবর শুনার জন্য খান বাড়ির কেউই তেমন প্রস্তুত ছিলো না।
বাড়িতে এসে এই খবর শুনে তূর্য ত্বরিতে কলেজের প্রিন্সিপাল কে সব কিছু জানিয়ে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কন্ঠ বাকি সবাই কে সামলাতে ব্যস্ত।
সকাল থেকে সবাই কিছু খায়নি,সেই জন্য রান্না ঘরে গিয়ে অল্প করে খিচুড়ি রান্না করে আনে কন্ঠ।
সবাই অল্প বিস্তর খেয়ে নেয়,অহনা খান বেশ অসুস্থ অনুভব করছে,শাহা খান বাড়িতে না থাকার দরুন সবটা একাই করছে কন্ঠ।

সন্ধ্যার দিকে বিছানায় এসে মাত্র বসলো সে, তৎক্ষণাৎ মুঠোফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে সানের নাম্বার।
“হ্যা বল।”

সান বেশ অশান্ত হয়ে বলে।
“তোরা সবাই গ্রু’প ক’লে আয়, খুব জরুরী কথা আছে।”

কন্ঠ ফট করে গ্রুপ কল করলো, সবাই জ’য়ে’ন হয়।

সোহা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল।
“হায় গাইস কী অবস্থা সবার?আরেহ কন্ঠ আঙ্কেল কেমন আছেন এখন?”

কন্ঠ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলে।
“স্যার তো এখনো ফোন করেনি, জানি না কেমন আছে।”

তাহিয়া বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“এই তারিফ কোথায় রে?”

সান বলে উঠে।
“ওর একটা শর্ট আছে বললো, ইনশাআল্লাহ ও কাজ শুরু করেছে।”

সবাই এক সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে, কন্ঠ লক্ষ্য করে সানের মুখ খানি ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।
“কী রে সান কী হয়েছে তোর?এমন দেখাচ্ছে কেন?”

সান মাটির দিকে তাকালো, কষ্ট হচ্ছে তার। রিতিমত কান্না পাচ্ছে।

সোহা সান কে উদ্দেশ্য করে বলল।
“হ্যাঁ আমিও লক্ষ্য করলাম কেমন জানি লাগছে তোকে,বল না কী হয়েছে?”

সান কাঁপা কন্ঠে বলে।
“তোদের কে অনেক দিন ধরে বলব ভাবছিলাম কিন্তু সময়ের অভাবে আর বলা হয়নি। আসলে আমি একটা মেয়ে কে পছন্দ করতাম তোহা নাম।ইনফেক্ট দেখাও করাতাম। কিন্তু এখন অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গেছে।”

সবাই ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে সানের দিকে।তাহিয়া রাগে গজগজ করে বলে।
“আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার মামা তুই,তুই আমাদের থেকে এটা লুকাতে চাইলি?”

সোহা তাহিয়ার কথায় সায় দিয়ে বলে।
“ঠিক ঠিক,তুই কী করে পারলি?”

কন্ঠ ভালো করে লক্ষ্য করলো সানের মলিন মুখ খানি।
“থাম তোরা,আগে ওকে বলতে তো দে কী হয়েছে?”

সবাই চুপ করে বসে, কন্ঠ সানের উদ্দেশ্যে বলে।
“সান তুই বল তো হয়েছে টা কী?”

সান কাঁপা গলায় বলল।
“ভাই আমি পারছি না, আমার সহ্য হচ্ছে না।তোরা জানিস তোহার চাচা চাচী ওর বিয়ে ঠিক করেছে। ইভেন আজ ওকে দেখতে আসছে।”

কন্ঠ বিস্ময় নিয়ে শুধায়।
“কী? মানেটা কী?”
“হ্যা ভাই,তোরা তো জানিস আমি এমনিতেই আপুর ঘাড়ে বসে খাই।তার উপর এখন যদি তোহা কে নিয়ে আসি তাহলে আপু কী করবে আল্লাহ ভালো জানেন। ওদিকে তোহা কেঁদে কে’টে অবস্থা খারাপ,বার বার বলছে আমাকে ওকে নিয়ে আসতে। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না কী করব?”
কন্ঠ ভাবনায় পড়ে যায়,কী করবে এখন?সান ভীষণ ভাবে ভে’ঙ্গে পরেছে।
কন্ঠ সান কে শান্ত দেওয়ার জন্য বলে।
“তুই শান্ত হ আগে, আমি ভেবে বলছি কী করা উচিত?প্লিজ সান তুই ভে’ঙে পড়িস না, তাহলে তোহা কী করবে বল?”

সবাই মিলে সান কে আশ্বাস দেয়।

রাতের শেষ প্রহরে ফোন টুং টুং শব্দ করে বেজে উঠল,ঘুম ঘুম চোখে ফোন কানে ধরে কন্ঠ।
“হ্যলো কে?”
“আপনার অপ্রিয় মাস্টার।”

ফট করে চোখ মেলে তাকাল কন্ঠ, ফোন মুখের কাছে এনে দেখে নেয়। সত্যি তূর্য কল করেছে,এত রাতে? আচ্ছা কোনো বিপদ হয়েছে? মস্তিষ্কে দুশ্চিন্তা এসে নাড়া দেয়।
“কী হয়েছে আপনার?এত রাতে কল করেছেন? কোনো বিপদ হয়েছে?স্যার আপনি ঠিক আছেন তো, বলুন না? চুপ কেন?”

এপাশে চিন্তায় চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে কন্ঠের কিন্তু অপর পাশে তূর্য মনে মনে খুশি,কেউ একজন আছে যে তাকে নিয়ে চিন্তা করে।
কন্ঠ ফের বলে উঠে।
“আছেন?চুপ করে গেলেন? আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”

তূর্য মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক করে শ্বাস টেনে নেয়।
“আমি ঠিক আছি,এত চিন্তা করতে হয় না।”

কন্ঠ মলিন মুখে শুধায়।
“আমি কী করব?এত দূরে আছেন, আমার সত্যি ভালো লাগছে না।”

তূর্য নৈঃশব্দ্যে হাসলো।
“তাহলে বলেন ভালো লাগার মত কি করতে পারি?”

কন্ঠ বালিশে মাথা রেখে বলে।
“আপনার বুকে ঘুমাবো।”

তূর্য কিয়ৎক্ষণ চুপ রইল,তারও ভীষণ ইচ্ছে করেছে স্ত্রী কে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকতে। কিন্তু পারছে না তো!
“জান কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, আমি আসছি শিঘ্রই।”

কন্ঠ চুপ রইল, কাঁপা কন্ঠে বলে।
“আপনাকে একটা কথা বলার আছে আমার।”
“কী কথা?”
“আসলে,,,

তূর্য হাসলো, তবে কী আজ সেই কথাটি শুনবে যা শুনতে চেয়েছিল?
“কী হলো বলো বলো?”

কন্ঠ গলা খাদে নামিয়ে,এক পর্যায়ে কাদু কাদু কন্ঠে বলে উঠলো।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

ফোন বুকে চেপে ধরে তূর্য, শান্তি।কতটা শান্তি লাগছে তা বুঝানোর ক্ষমতা নেই তার।

সন্ধ্যার দিকে চুপিসারে তোহার সাথে দেখা করতে গিয়েছে সান। দরজায় টোকা পড়া মাত্র তোহা আস্তে ধীরে প টিপে টিপে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।সান কে দেখে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে তোহার।
সান তর্জনী আঙুলের সাহায্যে চুপ থাকতে বলে,হাত ধরে ওর রুমে যায়।
দরজা বন্ধ করা মাত্র তোহা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
“শুনেন না আমাকে নিয়ে যান, আমি এখানে থাকবো না।”

সান আলগোছে জড়িয়ে ধরে তোহা কে।তোহা অভিমানী কন্যার ন্যায়।
“আপনি কেন আসলেন না সকালে? আমাকে ওদের সামনে কেন বসতে হলো? কেমন প্রেমিক আপনি?”

সানের কষ্ট হচ্ছে,সে চেয়েছিল আসতে, কিন্তু পারল না। এখনও আসতো না, কিন্তু প্রিয় মানুষ কে একটি বার দেখার জন্য তাকে আসতেই হলো।
“কী হয়েছে কিছু বলছেন না কেন?”

সান তোহা কে ছেড়ে দেয়,খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বলে।
“আসলে তোহা আমার তোমাকে কিছু জরুরী কথা বলার আছে।”

তোহা ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলো।
“কী হয়েছে আপনার? এভাবে সরে গেলেন যে?”

সান বেশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো।
“আমি তোমাকে এটাই বলতে এসেছি যে, আমাকে ভুলে যাও।”তোমার চাচা চাচী যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করো।”

তোহা কিয়ৎক্ষণের জন্য থমকে যায়, নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
“এইই কী বলছেন এসব?কী ভুলে যাব? বিয়ে করব?”

সানের বাহু ধরা মাত্র সান ছিটকে দূরে সরে যায়।
“যা শুনছে তাই। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না, এটাই সত্যি।”

তোহা এক পর্যায়ে কেঁদে দেয়।
“কীঈ বলছেন এসব?প্লিজ এসব বলবেন না। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।”
“প্লিজ এসব বাদ দাও, আমার ভালো লাগছে না আর এই রিলেশন।তাই আমি চাই তুমি তোমার মত থাকো,আর আমাকে আমার মত থাকতে দাও।”

সান যেতেই চায় তৎক্ষণাৎ তোহা ওর হাত আঁকড়ে ধরে।
“না না এসব হতে পারে না, আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেন না। প্লিজ প্লিজ।”

সান কে বহু আটকানোর চেষ্টা করে তোহা, কিন্তু সে থামলো না।চলে গেলো,তোহা ফ্লোরে বসে পড়লো,সান বাইরে এসে মুখ চেপে কাঁদে। ছেলেদের কাঁদতে নেই, কিন্তু সে আটকাতে পারছে না।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি তোহাআআআ।”
______________
জামাকাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে নীলা,ওকে সাহায্য করছে সাফিন।পরশু ওদের ফ্লাইট, অবশেষে দুজনে আবার বাড়ি ফিরবে তাই ভেবে আনন্দ লাগছে তাদের।
“এই যে মহারানী এখন ঘুমান, সকালে উঠতে হবে তো!”

নীলা সাফিনের কথায় মুচকি হেসে বলল।
“আচ্ছা ঠিক আছে, বুকে নাও।”

সাফিন আলগোছে জড়িয়ে নেয় নীলা কে।

চলবে…………….✨।