#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২৮]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
কন্ঠ,সোহা,তারিফ,তাহিয়া এবং রিয়া কে দেখে চমকে যায় তোহা।
“কন্ঠ আপু তারিফ ভাইয়া তোমরা!”
কন্ঠ তোহার দিকে এগিয়ে যায়, ওদিকে বৃদ্ধ মহিলা কন্ঠ কে থামিয়ে বলে।
“আপনারা এখানে আসার কারণ ঠিক বুঝতে পারলাম না।”
কন্ঠ বেশ ভদ্রতার সাথেই বললো।
“আসলে আন্টি আমরা তোহা কে নিয়ে যেতে এসেছি।”
বৃদ্ধ মহিলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তোহার দিকে, অতঃপর প্রশ্ন করে কন্ঠ কে।
“নিয়ে যেতে এসেছো মানে?ও কোথায় যাবে?”
কন্ঠ আগের ন্যায় বলে উঠে।
” সানের কাছে।”
সুফিয়া বেগম বেশ তেতে উঠল।
“ও কোথাও যাবে না, ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।আর ও যদি,,,
“আপনি থামুন।”
কন্ঠ সুফিয়া বেগম কে থামিয়ে দিল।
তোহার দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, ইতিমধ্যেই তোহা কেঁদে কে’টে একাকার অবস্থা।
“তুমি আমাকে বলো, তুমি কী যেতে চাও?”
তোহা এক পলক তাকালো সুফিয়া বেগমের দিকে,তিনি চোখ রাঙিয়ে বলল।
“যদি আজ তুই যাস তাহলে তোর সাথে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।এটা কিন্তু আমার শেষ কথা।”
তোহা মাথা নিচু করে নেয়, কন্ঠের হাত ধরে বলে।
“কার কাছে যাবো আপু?সান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।”
কন্ঠ তোহার বাহুতে হাত রেখে বলল।
“ও পরিস্থিতির স্বীকার, কিন্তু এখন ও আছে। তুমি বলো যাবে?”
তোহা সাহস করে কন্ঠের হাতে হাত রাখলো, কন্ঠে ওকে নিয়ে বের হতেই যাবে তখন সুফিয়া বেগম চেঁচিয়ে উঠলো।
“তুই কিন্তু আর কখনও এই বাড়িতে ফিরতে পারবি না মনে রাখিস।”
তোহা এক নজর বাড়িটা দেখে কন্ঠের সাথে এগিয়ে যেতে লাগল।
_________________
ফ্লাইট সবে মাত্র ল্যান্ড করেছে,একটা ট্যাক্সি ডেকে নেয় তুফায়েল।বাড়ির কাউকে জানাতে চাইছে না, ওখানে গিয়েই সবটা সবাই কে বুঝিয়ে বলবে।
“আমার হাতটা ধরে রাখবেন? আমার একটু ভয় লাগছে।”
তুফায়েল অরিনের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।আসলেই মেয়েটা খুবই সহজ সরল।
তুফায়েল অরিনের হাতটা শক্ত করে ধরে, গাড়িতে উঠে বসলো।
সকাল সকাল রান্না করতে ব্যস্ত আনিকা আহমেদ, ওনাকে সাহায্য করছে তনয়া আহমেদ।
সবে মাত্র চায়ের কাপে চুমুক দিলেন আহাদ আহমেদ তৎক্ষণাৎ বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠল।
“কে এসেছে গোঁ?”
রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো তনয়া আহমেদ,আহাদ আহমেদ উঠতেই যাবেন তখন সাহাদ আহমেদ এসে বললো।
“তুমি বসো ভাইয়া,আমি দেখছি।”
“আচ্ছা।”
সাহাদ আহমেদ এগিয়ে গেলেন সদর দরজার দিকে। দরজা খোলা মাত্রই তিনি চমকে উঠে।
“তুফায়েল,বাবা আমার।”
আবেগে ছেলেকে বুকে চেপে ধরলো সাহাদ আহমেদ। চেঁচিয়ে উঠলো।
“ভাইয়া দেখো কে এসেছে?”
আহাদ আহমেদ উঠে দরজার কাছে গেলেন,তুফায়েল কে দেখে অধর প্রসারিত করে হেসে উঠলো।
“তুফায়েল!আয় আয় ভেতরে আয়।তুই আসবি জানালি না?”
তুফায়েল ভেতরে আসলো না,হাত বাড়িয়ে কাউকে ডাকলো।অরিন হাত বাড়িয়ে দেয়, ওকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো তুফায়েল।
সাহাদ আহমেদ উৎফুল্ল কন্ঠে আনিকা আহমেদ কে ডাকতে লাগলো।
“কই গোঁ এসো দেখো কে এসেছে?ভাবি তুমিও এসো তাড়াতাড়ি।”
তনয়া আহমেদ এবং আনিকা আহমেদ দু’জনেই বেরিয়ে আসে,তুফায়েল কে দু’জনেই রিতিমত নির্বাক।ওরা সত্যিই এখন ওকে আশা করেনি, আনিকা আহমেদ আবেগে কেঁদে ওঠে।
তুফায়েল আলতো হাতে মা কে জড়িয়ে ধরে।
“কাঁদছো কেন?এই তো আমি এসে গেছি।”
তুফায়েলের কথায় আনিকা আহমেদের কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো।
“তুই এত দিন মায়ের সাথে কথা না বলে থাকতে পারলি?এত অভিমান?”
তুফায়েল মুচকি হাসে, ওদিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে অরিন।তনয়া আহমেদ ওর কাছে গিয়ে বাহু ধরে বলল।
“তুমি কে?তুফায়েল ও কে?”
সবাই এবার অরিনের দিকে লক্ষ্য করলো, আনিকা আহমেদ তুফায়েল কে উদ্দেশ্য করে বলেন।
“হ্যা রে তুফায়েল,ও কে?”
তুফায়েল অরিনের দিকে তাকিয়ে এক বাক্যে বলে উঠে।
“আমার স্ত্রী।”
আনিকা আহমেদ চমকে উঠেন।
“কী?তুই বিয়ে করেছিস?”
তুফায়েল কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই আনিকা আহমেদ চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে।
“ও মা গোঁ তুই এতই রাগ করলি যে কাউকে কিছু না জানিয়েই বিয়ে করে ফেললি,ছিহ্ তুফায়েল তোর থেকে আমি এটা আশা করি নি।”
তনয়া আহমেদ আনিকা আহমেদ কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে বলল।
“আহা ছোট আগে তুফায়েল কি বলতে চাইছে সেটা শুন।”
“না আপা আমি কিছু শুনতে চাই না, আমার যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।”
আনিকা আহমেদ রেগে দুতলায় চলে গেলো, ওদিকে তুফায়েল সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সবাই জানতে চায় সবটা।
একে একে সব কিছু খুলে বলে সে,তনয়া আহমেদ প্রচন্ড রকম খুশি হয়।অরিনের কাছে গিয়ে ওর হাতে ধরে বলে।
“অরিন মা, তুমি মন খারাপ করো না ছোট টা একটু অবুঝ। এখন রেগে আছে তাই এমন করছে,রাগ কমে গেলে ঠিক তোমাকে কাছে টেনে নিবে।”
অরিন নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে,তুফায়েল চোখের ইশারায় বললো শান্ত থাকতে।
✨
“হ্যালো কোথায় তুমি?কলেজ থেকে উধাও হয়ে গেলে হঠাৎ!”
সকাল থেকে কলেজে কন্ঠ কে দেখতে পাচ্ছে না,বার কয়েক ফোন করার পরেও কন্ঠ রিসিভ করে নি, অবশেষে লাস্ট বার কল করা মাত্র সে রিসিভ করলো। তাতেই ঝাঁ’ঝা’লো কন্ঠে কথা গুলো বলে উঠলো তূর্য।
“কী হলো কিছু বলছো না কেন? কোথায় আছো তুমি?”
কন্ঠ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলে।
“স্যার আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি ধানমন্ডির দিকে যে কোর্ট প্রাঙ্গণে আছে ওখানে চলে আসুন।”
তূর্য ভ্রুকুটি করে শুধায়।
“কোর্টে কেন?”
“প্লিজ আপনি আসুন আগে, এরপর সবটা বলবো।”
তূর্য তৎক্ষণাৎ কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো, ফোন কানে রেখেই গাড়িতে উঠে বলল।
“আসছি আমি।”
কন্ঠ অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে, অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রবেশ করলো তূর্য।
“কন্ঠ!কী হয়েছে তোমার? ঠিক আছো তুমি?”
কন্ঠ তূর্যের কাছে ছুটে আসে।
“হ্যা আমি ঠিক আছি। চলুন আপনি আমার সাথে।”
“কোথায়?”
“আহা এত প্রশ্ন না করে চলুন না।”
কন্ঠ তূর্য কে নিয়ে কোর্টের ভেতরে যায়।
সোহা,সান, তারিফ,তাহিয়া,রিয়া আর আরেকটা মেয়ে উপস্থিত আছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তূর্য কন্ঠের দিকে।
“কী হচ্ছে এখানে?”
“কন্ঠ তূর্যের সামনে একটা কাগজ ধরে বলল।
“এখানে সাক্ষী হিসেবে আপনি সাইন করে দিন।”
“কিসের সাক্ষী?”
“বিয়ের।”
“মানে!”
“আপনি সাইন করুন এরপর সব বলছি।”
কন্ঠ এক প্রকার তূর্য কে দিয়ে জোর করে সাইন করিয়ে নেয়, এরপর নিজেও সাইন করে।তারিফ দুটো বিয়ের মালা নিয়ে আসে,একে অপরকে মালা পরিয়ে দেয় তোহা এবং সান।
এত সময় পর তূর্য বুঝতে পারলো তোহা আর সানের বিয়ে হয়েছে। তূর্য কন্ঠের হাত টেনে নিয়ে সাইটে সরে গিয়ে দাঁড়ালো।
“কী হচ্ছে এগুলো? ওদের ফ্যামিলি কোথায়? এসবের মধ্যে তুমি?
কন্ঠ ফিক করে হেসে উঠলো।
“ভালোই তো করেছি, দু’জন ভালোবাসার মানুষ কে এক করে দিলাম।”
তূর্য কন্ঠের হাত ধরে বলে।
“যদি এসবের মধ্যে তোমার কিছু হলে তখন কী হতো?”
“কিছুই না,ভয় পাওয়ার দরকার নেই।আর এমনিতেই তো আপনি আছেন আমাকে রক্ষা করার জন্য।”
কন্ঠ আর তূর্য কথা বলছে, দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে সান,তারিফ তোহা।সান অকপটে বলে উঠে।
“আমরা সেই ছোট থেকে ফ্রেন্ড, কিন্তু কন্ঠ আর রিয়ার সাথে তো কলেজে এসে দেখা হয়েছে। তবুও মেয়েটা আমাদের কত আপন হয়ে উঠেছে।”
তারিফ সহমত পোষণ করে বলে।
“ঠিক বলেছিস,সব কিছুতে আগে আগে থেকে সব সমস্যার সমাধান খুঁজে দেয়।”
সান কী একটা ভেবে কন্ঠের দিকে এগিয়ে যায়। তূর্য কন্ঠ কে ইশারা করে, তৎক্ষণাৎ সান এসে কন্ঠ কে জড়িয়ে ধরে।
“থ্যাংক ইউ সো ম্যাচ কন্ঠ।”
কন্ঠ সানের ঘাড়ে হাত দিয়ে বাহুবা দেয়, কিন্তু ওদিকে অন্য একজন মুখ ঘুরিয়ে নেয়।তার বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যথা করছে।
“কন্ঠ আমাদের যেতে হবে?”
“কোথায় যাবো স্যার?”
“তোমাদের বাড়িতে,রিয়া তুমিও এসো।”
রিয়া আর কন্ঠ বেরিয়ে পড়লো, যাওয়ার পূর্বে তারিফ বলল আজকে রাতে তোহা আর সান কে ওদের কাছে রাখতে , কাল এসে ঠিক করবে কী করা যায়?
চলবে…………..।✨
#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [২৯]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
বাড়িতে এসে এমন কিছু দেখবে আশা করেনি কন্ঠ।অরিন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,এই সেই মেয়ে যার সাথে কিছু দিন আগে তার ফোনে কথা হয়েছে। কন্ঠ ছুটে যায় অরিনের কাছে।
“ও মাই গড তুমি এখানে? ভাইয়া নিয়ে এসেছে?”
অরিন কিছু বলতে পারলো না,তুফায়েল সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠলো।
“হ্যা তোর কথা শুনে নিয়েছি বোন।বউ বানিয়ে ফেলেছি।”
কন্ঠ অরিন কে জড়িয়ে ধরলো।
“ওয়াও, সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না।বাই দ্যা ওয়ে বিয়ে যখন করেছো তাহলে অবশ্যই পার্টি চাই কিন্তু ভাইয়া?”
“হ্যা হ্যা পাবি, তূর্য কেমন আছো?”
তূর্য সৌজন্য মূলক হাসি মুখে বলে।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?”
“এই তো ভালোই আছি, থ্যাংকস আমার এক কথায় বোনটাকে নিয়ে এসেছো।”
“ইটস্ ওকে।এসবে আমার থ্যাংকস দিতে হয় নাকি?”
কন্ঠ মাঝখান থেকে বলে উঠে।
“তোমরা কথা বলো, আমি বাকিদের সাথে দেখা করে আসছি।”
কন্ঠ দৌড়ে উপরের ঘরে যায়, তনয়া আহমেদ কে দেখা মাত্র জড়িয়ে ধরে।
“বড় মামী।”
তনয়া আহমেদও কন্ঠ কে জড়িয়ে ধরে।
“কেমন আছিস?”
“এই তো তোমাদের দেখা মাত্র ভালো হয়ে গেছি।”
“তাই!”
“হুম, আচ্ছা ছোট মামী কেমন আছে? কোথায় উনি?”
“তোর ছোট মামী সেই তুফায়েলের সাথে রাগ করে নিজের ঘরে বসে আছে।”
“তাহলে আমি দেখা করে আসি।”
“না এখন যাস না,ওকে একটু একা থাকতে দে। তুই বরং এই চা নিয়ে যা স্টাডি রুমে,ওরা খুশি হবে।”
কন্ঠ চায়ের ট্রে নিয়ে স্টাডি রুমে গেলো, ওখানে বসে আছে আহাদ আহমেদ এবং সাহাদ আহমেদ।
“আমি কী ভেতরে আসবো?”
কন্ঠের গলা শুনে আহাদ আহমেদ এবং সাহাদ আহমেদ দু’জনেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো।
কন্ঠ কে দেখে বেশ খুশি হয় দু’জনে, কিন্তু আহাদ আহমেদ খুশিটা চেপে যায়।
“আয় কন্ঠ।”
সাহাদ আহমেদ তাকে ভেতরে আসতে বলে, কন্ঠ ভেতরে এসে সেন্টার টেবিলের উপর চায়ের ট্রে রাখলো।
“কেমন আছেন আপনারা?”
দুজনেই বেশ ভালো করেই বলে, ভালো আছে।
আহাদ আহমেদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল।
“তা তুমি কী আজ এখানে থাকবে!”
কন্ঠ গলা খাদে নামিয়ে বলে।
“না স্যার আছেন ওনার সাথে ফিরে যাবো।”
আহাদ আহমেদ আনমনেই বলে উঠলো।
“ওহ্।”
কন্ঠ তাড়াহুড়ো করে বলল।
“আচ্ছা আপনারা থাকুন আমি নিচে যাচ্ছি।”
কন্ঠ রুম থেকে বের হতে যাবে,তখন আহাদ আহমেদ মৃদু স্বরে বলল।
“কাল একটা অনুষ্ঠান আছে তুফায়েল আর অরিন কে নিয়ে, তোমরা কিন্তু এসো। আমি অবশ্য জানিয়ে দিতাম, কিন্তু তোমরা যখন আজ এসেছো তাই বলে দিলাম।”
কন্ঠ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আহাদ আহমেদ ফের বললো।
“পারলে দু তিনদিনের জন্য এসো একেবারে, অনেক তো এখানে থাকো না!”
কন্ঠ থাকার কথা শুনে গদগদ হয়ে উঠে, খুশিতে।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে যায় কন্ঠ আর তূর্য, কন্ঠ কয়েক বার তূর্য কে ডাকলেও সে শুনে না। হঠাৎ রাগের কারণ বুঝতে পারলো না কন্ঠ।
নীলার সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো কন্ঠ, এরপর অহনা খান,শাহা, এবং কন্ঠ মিলে সবার জন্য খাবার বেড়ে দেয় টেবিলের উপর।সব তো ঠিকই খেয়ে নেয়, কিন্তু তূর্য বাদে। কন্ঠ কয়েক বার খাওয়ার জন্য ডেকেছিল তাকে, কিন্তু সে বলেছে খিদে নেই তার।তাই আর জোর করেনি কেউ।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় কন্ঠ, তূর্য বিছানার এক পাশে শুয়ে আছে। কন্ঠ আলমারি থেকে একটা ঢিলা দেখে একটা কামিজ বের করে পড়ে নেয়।লাইট অফ করে বিছানায় এসে শোয় কন্ঠ।
“কী হয়েছে আপনার?”
কন্ঠ তূর্য কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,কথাটা জিজ্ঞেস করে। তূর্য কন্ঠ কে সরিয়ে দেয়।
“কিছু হয়নি আমার,ঘুমাবো গুড নাইট।”
কন্ঠ আবারও জড়িয়ে ধরে তূর্য কে।
“উঁহু, ঘুম না।আগে বলুন মন খারাপ কেন?”
“মন খারাপ থাকলেও কি না থাকলেও কী?”
কন্ঠ ফিক করে হেসে উঠলো,হুট করে তূর্যের উপর উঠে বসে।
“কী করছো?নামো!”
“উঁহু,আগে বলতে হবে কী হয়েছে?”
“বললাম তো কিছুই না।”
“উহুম আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে জড়িয়ে ধরুন।”
তূর্য অকপটে বলে উঠে।
“কেনো তোমার সান আছে না! তোমাকে জড়িয়ে ধরতে বলো।”
কন্ঠ এই বার বুঝতে পারে তূর্যের রাগের কারণ,সে শব্দ করে হেসে উঠলো।
“হা হা হা,এই টা কারণ। আচ্ছা এই জন্য আপনার এত অভিমান হয়েছে?”
তূর্য দ্রুত বলে উঠে।
“না, আমার কোনো অভিমান নেই।”
কন্ঠ মেকি রাগ দেখিয়ে বললো।
“আপনি কী আমাকে জড়িয়ে ধরবেন? না কী সানের কাছে চলে যাবো?”
তূর্য সুচালো দৃষ্টিতে তাকালো কন্ঠের দিকে।
“এত্ত সাহস?”
বলেই কন্ঠ কে নিচে নিয়ে আসে।
“তুমি আমার, তাহলে আমি ছাড়া আর কেউ স্পর্শ করবে না।”
কন্ঠ তূর্যের গালে আদুরে স্পর্শ দেয়।
“ও তো বন্ধু হয়,এত রাগ করতে আছে?”
তূর্য বেশ গাল ফুলিয়েই বলে উঠল।
“যাই হোক, আমি যা বলেছি তাই। তোমাকে কেউ স্পর্শ করলে আমার কষ্ট হয়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে কেউ ধরবে না, এখন আমাকে জড়িয়ে ধরুন।ঘুমাবো আমি।”
তূর্য আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কন্ঠ কে। কন্ঠও সায় দেয়।
✨
জানালার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে তোহা, আজ তার মনটা ভীষণ খারাপ। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়!সে তো পেয়েছে, নিজের মনের মানুষ টা কে।তবে কেন তার মন খারাপ?কারণটা বোধহয় সেই ছেড়ে আসাটা।
সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে রুমের ভেতর আসে সান।কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তোহা।সান কে তার বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে উঠলো,লোকটা কী করে পারল তাকে?
“তোহা!”
সানের ডাক শুনেও মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকালো তোহা।সান তোহার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলো।
“খুব অভিমান করে আছো আমার উপর?”
তোহা অস্ফুট স্বরে বলল।
“না তো, আমি অভিমান করার কে?”
সানের গলা কাঁপছে,কথা বলতে পারছে না সে। সত্যি সে মেয়েটাকে বড্ডো বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
ফট করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।
“আমাকে ক্ষমা করে দেবে? আমি সত্যি অন্যায় করেছি, ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
তোহা সান কে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরল।
“এমন করে বলবেন না, আমিও তো আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।”
সানের হাতের বাঁধন দৃঢ় হয়,সে তোহা কে জড়িয়ে বলে।
“প্রমিজ করছি আমি আর কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”
______________
সকাল বেলায় সান তোহা কে নিয়ে তার আপুর বাড়িতে যায়।
কিন্তু সানের বোন তাসফিয়া তাদের ঢুকতে দেয় না।তার উপর আরো অনেক টা খারাপ কথা শুনিয়ে দেয়।
“তুই যা করেছিস নিজের ইচ্ছায়,তো এখন গিয়ে বউ পেলে দেখা।”
তাসফিয়ার কথা শুনে আশ্চর্য হয় সান।সেও হার মানতে রাজি নয়,সেও তাসফিয়ার মুখের উপর বলে দেয়।
” ঠিক আছে, তুমি দেখে নিও বউ পালবো আর ভালোও করব। আমি তোমাকে এত দিনেও চিনতে পারলাম না আপু,যাই হোক তোমরা ভালোই থেকো। যাচ্ছি আমরা।”
তাসফিয়া তাচ্ছিল্য করে বলে।
“যা যা,তোর বউ তুই পাল,যা ইচ্ছে কর।আপদ বিদায় হো।”
সান তোহার হাত শক্ত করে তাসফিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।কি করবে কিছুই জানা নেই তার,তবে সে একটা জিনিস ভালো করে ঠিক করে নেয়।যাই হোক আর কখনও কারো উপর বসে খাবে না।
তোহা কে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে সান।
চলবে…………..✨।