অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-৩০+৩১

0
157

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [৩০]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রা’প্ত বয়স্কদের জন্য এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

ছোট্ট একটা বাড়ি ভাড়া করে নেয় সান, দু’টো রুম।একটা বসার ঘর এবং আরেকটি শোয়ার ঘর।শোয়ার ঘরের পাশে ছোট্ট করে আরেকটা কুঁড়ে ঘরের মতো আছে,ওইটা রান্না ঘর হিসেবে ধরা হয়।মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা। বাড়িটা পাওয়াতে বেশ স্বস্তি বোধ করে সান।

প্রায় ঘন্টাখানেক হয়েছে বন্ধুদের কারো সাথে কথা হয়নি সানের,তাই ভাবলো খাওয়া দাওয়া শেষে সবার সাথে কথা বলে নেবে।
আজ বাসায় রান্না হবে না,সবে মাত্র মেয়েটা এসেছে, এখুনি এসব করতে দিতে চায় না সান।আর এমনিতেও রান্না করার মতো কোনো জিনিস পত্র নেই তাদের।সান তোহা রেখে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসে। খাওয়া দাওয়া শেষে গ্রু’পে কল করে।
সবাই জয়ে’ন হয়।

তারিফ বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো।
“কী রে ভাই সকাল সকাল ওভাবে বেরিয়ে গেলি?”

কন্ঠ মেকি রাগ দেখিয়ে বললো।
“তুই কী তোর আপুর বাড়িতে গিয়েছি?”

সান ফুস করে শ্বাস টেনে সব কিছু বললো, সবাই সব শুনে ভীষণ ম’র্মা’হত হয়,একটা কথাই ভাবতে থাকে।কেউ কী করে নিজের আপন ভাইয়ের সাথে এমন করতে পারে?
“তোরা প্লিজ রাগ করিস না, আমি ঠিক আছি।”

সোহা বলে।
“আচ্ছা ঠিক আছে,তোহা কোথায়?”

সান পাশে তোহার দিকে তাকিয়ে বলল।
“ওই তো আমার পাশেই বসে আছে।”

কন্ঠ বলে উঠে।
“তুই আমাদের ঠিকানা দে বাড়ির, বিকেলে আসছি।”

সান বিব্রত বোধ করে,কী করে ওদের এই বাসায় আনবে?ঘরে একটা খাট পর্যন্ত নেই, তাহলে কী করে ওদের নিয়ে আসবে?সান কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বলে।
“আরে ছাড় তো,তোরা এসে কী করবি?”

তারিফ ধমকের স্বরে বলল।
“চুপ কর শা”লা, বেশি কথা কয়! চুপচাপ ঠিকানা দে।”

সান সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে ওদের ঠিকানা দিয়ে দেয়।
______________
রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে অরিন,ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে।আনিকা আহমেদ সুচা’লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে।
“এসো এদিকে।”

বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে অরিন কাছে ডাকলো আনিকা আহমেদ,অরিন ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।আনিকা আহমেদ চোখের ইশারায় পাশে বসতে বলে অরিন কে,সেও বাধ্য মেয়ের মত বসে পড়ল। তৎক্ষণাৎ আনিকা আহমেদ ওয়াড্রফ থেকে একটি লাল রঙের শাড়ি আর ম্যাচিং করা ব্লাউজ নিয়ে আসে,সাথে একটি বক্স।
“এই নাও, অনুষ্ঠানে এগুলো পড়বে।”

অরিন খুশিতে গদগদ হয়ে আনিকা আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে।
“থ্যাংক ইউ মা।”

আনিকা আহমেদ ভ্রু কুঁচকালো,তাতে অরিন সরে যায়।
“যাও যাও নিজের ঘরে।”

অরিন ছুট্টে তুফায়েলের ঘরে চলে গেল, উৎসাহ নিয়ে তুফায়েল কে শাড়ি আর বাকি জিনিস গুলো দেখায়।
“দেখুন দেখুন এগুলো শাশুড়ি মা দিলেন। ইস্ এগুলো আমাকে দিয়েছে ভাবতেই আনন্দ লাগছে আমার।”

অরিনের খুশি দেখে ভেতরে ভেতরে স্বস্তি পায় তুফায়েল,ওর হাত থেকে জিনিস গুলো নিয়ে বিছানার উপর রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়।
অরিন বোকা বোকা ভাবে জিজ্ঞেস করে।
“কী হলো? দরজা কেন বন্ধ করছেন?”

তুফায়েল ফট করে অরিনের কাছে এসে ওকে কোলে তুলে নেয়। কেবিনেটের উপর বসিয়ে দেয় তাকে, খুবই নিকটে এসে দাঁড়ালো তুফায়েল, ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় অরিন। শ্বাস প্রশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার।
“প্রেম প্রেম পাচ্ছে,চলো একটা খেলা করি।”

অরিন বেশ লজ্জা পায়,তুফায়েলের বুকে আলতো করে ধাক্কা দেয় সে। সরিয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে।তুফায়েল তার বলিষ্ঠ হাতে অরিনের কো’ম’ড় চেপে ধরে। মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে উঠে অরিন।
“উফ্।”

তুফায়েল অরিনের নাকের ডগায় কা’ম’ড়ে ধরে, অরিন তুফায়েলের চুল খামচে ধরে। এক সময় তুফায়েল অরিনের মুখে অসংখ্য চুমু দেয় তুফায়েল,নাক,মুখ কপাল,গাল।এক সময় বুকের দিকে অগ্রসর হয় সে।
অরিন তীব্র কাঁপুনি অনুভব করে অন্তঃপুরে ।তুফায়েল অরিনের বুকের মধ্যভাগে অধর চুম্বন এঁকে দেয়। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে অরিনের,এত সুখ সে কোথায় রাখবে?অরিন আলতো হাতে তুফায়েলের বুকে হাত রাখে,আবেশে চোখ বুজে নেয় তুফায়েল।এক এক করে শার্টের প্রতিটি বোতাম খুলে দেয় অরিন,বুকে চুমু দেওয়া মাত্র তুফায়েল অরিন কে টেনে পাঁজা কোলে তুলে নেয়।এক সময় বিছানায় নিয়ে যায় তাকে,সময় নষ্ট না করে অরিনের মাঝে ডুব দেয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ অরিন বাঁধা দেয় তুফায়েল কে।
“আপনি পা গ ল।”

তুফায়েল নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“আটকাচ্ছ কেন?”

অরিন তুফায়েলের কপালে চুমু দিয়ে বলল।
“দিন, বাড়িতে সবাই জেগে আছে,আসা যাওয়া হচ্ছে। আপনি কী ভুলে গেছেন? এভাবে আমরা দরজা বন্ধ করে রেখেছি!কী ভাববে সবাই?”

তুফায়েল নিজের চুল খা’ম’চে ধরেছে, বিরক্ত লাগছে তার। প্রচন্ড রকম,অরিন কে বুকে নিয়ে কিয়ৎক্ষণ শুয়ে রইলো সে।

রুমে এসে দরজার কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো কন্ঠ, তূর্য খালি গায়ে পুশ আপ করছে, কন্ঠ মুচকি হেসে বলল।
“আমি আসবো?”

তূর্য চোখের ইশারায় কাছে ডাকে, কন্ঠ তূর্যের কাছে গিয়ে ফট করে ওর পিঠের উপর বসে পড়ল। তূর্য কন্ঠ কে উপরে বসিয়েই পুশ আপ করতে লাগলো।

কন্ঠ অস্ফুট স্বরে বলল।
“আমি আপনার সম্পর্কে একটা সিক্রেট কথা জানতে পেরেছি স্যার।’

তূর্য থেমে গেল, কন্ঠ কে নামতে বলল পিঠ থেকে। কন্ঠ নেমে ফ্লোরে বসে পড়লো,ওর ঠিক পাশে তূর্য বসলো। কন্ঠ সাইটের চেয়ার থেকে টাওয়াল নিয়ে তূর্যের হাতে দেয়। তূর্য মুখ মুছে নিজেকে ধাতস্থ করে জিজ্ঞেস করলো।
“কী সিক্রেট জানতে পারলেন ম্যাডাম,যেটা আমি জানি না!”

কন্ঠ মুখে মুচকি হাঁসি ঝুলিয়ে বলে।
‘জানেন বিয়ের আগে একটা লোক আমাকে ফোন করে ভালোবাসি বলতো!”

কথাটা চমকে উঠে তূর্য, কেমন জানি লাগছে তার। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে। কন্ঠ ফট করে তূর্যের পায়ের উপর মাথা রেখে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।ওর দিকে তাকিয়ে বলল।
“আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন তাই না! সামনাসামনি বলতে পারেন নি তাই অচেনা নাম্বার থেকে কল করেছিলেন?”

তূর্য খানিকটা ঝুঁকে কন্ঠের কপালে চুমু দেয়।ফুস করে শ্বাস টেনে বলে।
“একটু বেশী ভালোবাসি,আর অচেনা নাম্বার থেকে কল করার বিষয়টি হলো দুষ্টুমি।যতই হোক আ’ম ইওর প্রফেসর।”

কন্ঠ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“এখন আমার কিছু চাই।”
“আচ্ছা,বলো কী চাই?”

কন্ঠ উঠে বসলো,পেটে হাত দিয়ে বললো।
“আমার পেট টা কেমন জানি খালি খালি লাগছে।”

তূর্য ফট করে বলে উঠলো।
“তুমি কিছু তো খাও নি তাই এমন লাগছে,চলো কিছু খেয়ে নাও।”

তূর্য উঠে দাঁড়ালো, কন্ঠ উঠে যায়।গাল ফুলিয়ে বলে।
“আরে এই খালি সেই খালি নয় রে বাবা, আমি তো অন্য কিছু বলছিলাম।”

ভ্রু কুঁচকে তূর্য।
“বুঝলাম না!”

কন্ঠ তূর্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
“আমারও নীলা আপুর মতো একটা ছোট্ট কিছু পেটে চাই।”

তূর্য কন্ঠ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
“সামনে পরীক্ষা, প্রস্তুতি নেও। এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলো।”

“না না চাই চাই চাই।”
“হুস, পড়াশোনা শেষ করো।”

তূর্য এক প্রকার কন্ঠ কে পাত্তা না দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,তাতে প্রচন্ড রাগ হয় কন্ঠের।

দুপুর তিনটার দিকে বাড়ি থেকে বের হয় কন্ঠ, যাওয়ার সময় তূর্য কে বলে যায় সে সানের বাড়ি যাচ্ছে। বাধা দেয়নি তূর্য।

সোহা,তারিফ,রিয়া তাহিয়া এবং কন্ঠ সবাই মিলে সানের বাড়িতে যায়।সোহা নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছিল,তাই ওদের আসতে তেমন একটা কষ্ট হয়নি।
বাড়ির দরজায় টোকা দিতেই দরজা এসে খুলে দেয় তোহা, সবাই কে দেখে অনেক খুশি হয়।
সান ভেতরেই ছিল,তোহা কে দরজায় দেখে সেও এগিয়ে যায়। বন্ধুদের দেখে চোখ মুখে খুশি উপচে পড়ছে তার,তারিফ সান কে জড়িয়ে ধরে।
“তোরা আসবি আমি সত্যি কল্পনা করিনি!”

কন্ঠ সানের মাথায় চা’টি মে’রে বলল।
“কেনো করিস নি সেটা বল?তুই কী ভেবেছিস দাওয়াত না দিলে আসবো না?”

সবাই জোরপূর্বক ওদের ঘরে ঢুকে গেলো, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে ঘরে একটা জিনিস পর্যন্ত নেই। শুধু একটা বড় মাদুর পেতে রাখা নিচে।

কন্ঠ সোহা কে ইশারা করে,সোহা তোহার উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
“তুমি আমার সাথে একটু বাইরে চলো তো কথা আছে।”

সোহা তোহা কে এক প্রকার টেনে বাইরে নিয়ে যায়।তারিফ বলে উঠে।
“এই সানুর বাচ্চা চল আমাগো সাথে কিছু উপহার দেই তোরে।”

সান অস্ফুট স্বরে বলল।
“তোরা এসেছিস আর আমি,,,

কথার পিঠে থামিয়ে দেয় রিয়া।
“তুই চল না বাইরে।”

ওরা বাইরে যাওয়া মাত্র তাহিয়া আর কন্ঠ মিলে গাড়ি থেকে আস্তে আস্তে ঘর সাজানোর সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নিয়ে আসতে থাকে, এমন ভাবে যায় যাতে সান আর তোহা কিছু টের না পায়।কথায় বুলিয়ে এক সময় চুপিসারে চলে আসে তারিফ। তারিফ কন্ঠ তাহিয়া মিলে খাট পালং গুলো পেতে দেয়।
সানের কিছু ঠিক লাগছে না,সে জোরপূর্বক রিয়া কে রেখেই ঘরে আসে। ওদিকে সোহা তোহা কে নিয়ে আসে। দু’জনে ঘরে এসে সব কিছু দেখে রিতিমত চমকে উঠে।
সান বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল।
“এসব কী করেছিস তোরা?”

সবাই এক সাথে বলে উঠে।
“সারপ্রাইজ।”

তারিফ বেশ ভাব নিয়েই বললো।
“দেখ ভাই কেমনে তোগো উল্লু বানিয়ে সব করে ফেললাম!”

সান বেশ রাগ নিয়েই বলে উঠল।
“কেন করছিস এসব তোরা? আমাকে বার বার মনে করাতে চাইছিস কেন যে আমি কিছু পারি না?”

কন্ঠ মেকি রাগ দেখিয়ে বললো।
“চুপ কর,বেডা শ’য়’তা’ন, কে বলেছে তোকে তুই কিছু পারিস না? আমরা তো তোকে বিয়েতে কিছু দেইনি তাই ভাবলাম সংসার সাজিয়ে দেই।”

সান কাদু কাদু কন্ঠে বলে।
“ভাই তোরা এত করিস না, আমাকে চেষ্টা করতে দে। আমি কিছু করতে চাই।”

তাহিয়া সানের বাহু তে বাহবা দিয়ে বলে।
“চিন্তা করিস না,সব পারবি তুই। আপাতত এখন এসব বাদ দে।”

সোহা তুড়ি মে’রে বললো।
“তোর তো বাসর রাত যায়নি তাই না!”
কথাটা শুনে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো সবাই। সবাই মিলে ঠিক করে আজ বাসর ঘর সাজাবে সান আর তোহার জন্য।

চলবে……………।✨

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [৩১]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রা’প্ত বয়স্কদের জন্য এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

ফুলের বিছানায় গুটিসু’টি হয়ে বসে আছে তোহা, আজকে তার জীবনের একটি বিশেষ রাত। প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়ার রাত।
রুমে প্রবেশ করে সান,হাতে তার তোফার পছন্দের ফুল রজনীগন্ধা। এগিয়ে যায় তোহার দিকে, বিছানার এক পাশে বসলো।ঘোমটা তুলে মুখ দর্শন করে সান, বিড়বিড় করে বলে উঠলো “মাশাআল্লাহ”।
তোহা মুচকি হাসে, একটু ভ’য় হচ্ছে তার।
“ধন্যবাদ।”

হঠাৎ ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ বোধগম্য হলো না তোহার।
“ধন্যবাদ?”
“হুম।”
“কিন্তু কেনো?”

সান মুচকি হেসে বলল।
“এই যে তোমাকে পুরোটা আমাকে দিয়ে দিয়েছো,আর ধন্যবাদ আমার সেই বন্ধুদের যারা আমার পাশে থাকছে সবসময়।ওরা না থাকলে হয়তো আজ অন্যের ঘরে থাকতে তুমি।”

কথাটা বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সান।তোহা সানের হাত শক্ত করে ধরে বলে।
“এমন করে বলবেন না, আপনিও পারবেন।”

সান তোহার কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয়,তোহাও প্রতিক্রি’য়া দেখায়।সান নিজের আদুরে স্পর্শ দেয় তোহার নরম তুলতুলে শরীরে , প্রতিটি স্পর্শে কেঁ’পে উঠে তোহা। তীব্র সুখানুভূতি হচ্ছে তার।
দু’জনে একে অপরের সাথে মিশে একাকার অবস্থা।
_____________
রাত প্রায় বারোটা কন্ঠ আর তূর্য কন্ঠের মামার বাড়িতে আছে। অরিন আর তুফায়েলের জন্য ছোট্ট করে এক রিসেপশন পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। কন্ঠ নিজের বন্ধুদের ইনভা’ইট করেছিল কিন্তু ওরা আসে নি। বরাবরই ওরা আহাদ আহমেদ কে বেশ ভয় পায়।আর এমনিতেও সানের বাসর ঘরের কাজ করে সবাই ব্যস্ত।এই জন্য কন্ঠ তেমন একটা জোর করলো, সেও বেশ ক্লান্ত। কিন্তু তবুও যেতে হবে, কারণ আহাদ আহমেদ বলেছেন।
“তোমার কী খুব শরীর খারাপ করছে?

ড্রাইভ করতে করতে জিগ্গেস করলো তূর্য, কন্ঠ বেশ ক্লান্ত গলায় বলে উঠে।
“হুম, সত্যি ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।’
“আচ্ছা চলো আমরা অল্প কিছুক্ষণ থেকে আবার ফিরে আসবো।”
“আচ্ছা।”

লাল রঙের শাড়ি, ম্যাচিং করা ব্লাউজ তার উপর খুবই সাধারণ নেকলেস সেট পড়েছে অরিন, তবুও তাকে বেশ সুন্দরী লাগছে।
বউ অপূর্ব সুন্দরী এত প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ আনিকা আহমেদ,তনয়া আহমেদ ছোটোর এমন আনন্দ দেখে বেশ খুশি হয়েছে।
কন্ঠ আর তূর্য বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে,আহাদ আহমেদ এসে তূর্য কে জড়িয়ে ধরে,সাহাদ আহমেদের সাথেও পরিচয় হয়। জমজমাট হয়ে উঠেছে বাড়ি। কন্ঠ গিয়ে অরিনের সাথে দেখা করে, ভালো করে দু তিনটে ছবিও তুলে ফেলে। আনন্দে মেতে উঠেছে সবাই,তুফায়েল আড় চোখে অনেক বার দেখেছে অরিন কে।মেয়েটা সত্যি খুব সুন্দর।কি সুন্দর হাসছে! এখন থেকে প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে তাকে জীবনের আসল সুন্দর উপভো’গ করাবো। ভালোবেসে ভরিয়ে দেবো।

রাতের শেষ প্রহরে অরিন কে তুফায়েলের ঘরে দিয়ে যায় কন্ঠ ও রিয়া। দু’জনে মিলে অরিন কে বেশ বিরক্ত করে কিয়ৎক্ষণ,তুফায়েল ঘরের দরজা এসে গলা খাঁকারি দিতেই কন্ঠ ও রিয়া হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।আর দেরী করে না দু’জনে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

অরিন আজ কোনো লজ্জায় লজ্জিত হলো না,নিজ থেকেই ঘোমটা সরিয়ে দেয়।তুফায়েল অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তার মুখ পানে। ওদিকে অরিন তুফায়েল কে দেখে চোখ মা’রে,ফিক করে হেসে উঠলো তুফায়েল। এগিয়ে যায়, কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেওয়া মাত্র অরিন তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।উঠে বসে উপরে,চোখে চোখ রেখে বলল।
“আমার আজ অনেক কিছু চাই,এই যে প্রেমিক পুরুষ। আপনি আজ সম্পূর্ণ আমার।”

তুফায়েল অস্ফুট স্বরে বলল।
“আর!”

অরিন ওর কাছে ঝুঁকে বলে।
“আর আর আর,সব।”

তুফায়েল অরিন কে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। শেরওয়ানি খুলে ফেলে,আলতো হাতে অরিন কে উন্মু’ক্ত করে দেয়।সময় নষ্ট না করে ডুবে যায়।

চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে,ঝড় উঠেছে হঠাৎ। বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে।গাড়ি এক সাইটে দাঁড় করিয়ে দেয় তূর্য, কন্ঠ বেশ ভয় পাচ্ছে।
“স্যার দেখুন না কত বৃষ্টি হচ্ছে,আমরা এখন বাড়ি যাবো কী করে?”

তূর্যের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে, সত্যি ওরা বাড়ি ফিরবে কী করে?
ধীরে ধীরে বৃষ্টির গতি বেড়েই চলেছে। ওদিকে কন্ঠের বেশ ঠান্ডা লাগছে, তূর্য নিজের স্যুট খুলে কন্ঠ কে দেয়। কন্ঠ গায়ে জড়িয়ে নেয়।
আশেপাশে গাছের ডালপালা ভে’ঙে পড়ছে, তূর্য কন্ঠ কে নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে যায়।
“কন্ঠ নামো গাড়িতে থাকা যাবে না।”
“কেনো?”
“দেখছো না গাছ ভে’ঙে পড়ছে,গাড়ির উপর পড়লে তো কিছু একটা হতে পারে। তার চেয়ে চলো নিরাপত্তা কোথায় যাই।”

কন্ঠ তূর্যের কথা মেনে নেয়, দু’জনে গাড়ি থেকে নেমে যায়।
ভিজে জুবুথুবু অবস্থা তাদের,জায়গাটা বেশ চেনে তূর্যের। পাশেই একটা রিসোর্ট আছে, কিন্তু এত রাতে তাদের অ্যা’লাও করবে কী না তা নিয়েই চিন্তিত।
রিসোর্টের কাছে যাওয়া মাত্র রিসেপশনিস্ট কে দেখতে পায়, এগিয়ে গেলো তার কাছে।
“এক্সকিউজ মি ম্যাম আমরা কী একটি রুম পেতে পারি?”

রিসেপশনের মেয়েটি সুচালো দৃষ্টিতে তাকালো কন্ঠ এবং তূর্যের দিকে।
“এত রাতে?রুম চাই কেনো?”

তূর্য নিজেকে বেশ শান্ত রেখে বললো।
“আসলে আমরা ঝড়ে আটকে গেছি,সো এখন বাড়ি ফেরা অসম্ভব।”

মেয়েটি কিছু বললো না,তবে কিছুটা স’ন্দেহের চোখে তাকালো ওদের দিকে।বেশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল।
“আইটি দেখি?”

তূর্য নিজের আইডি দেখায়, কন্ঠ আইডি আনেনি তবে ফোনে ছবি তোলে রাখার কারণে তেমন একটা ব্যাগ পোহাতে হয় না।
মেয়েটি আর কিছু বলল না কাগজ পত্র বের করে সব কিছু করে ওদের একটা রুম দিলো।বেশ ধাতস্থ হয় কন্ঠ।
রুমে গিয়ে শান্তি লাগছে কন্ঠের, কিন্তু বিরক্তিকর ব্যাপার হলো তার গায়ের যে শাড়িটা ছিল তা পুরো ভিজে জবজবে অবস্থা। তূর্য ভিজে গিয়েছে, তবুও উপরের স্যুট খুলে বিছানার এক পাশে রাখলো।বাইরে প্রচন্ড রকম বৃষ্টি হচ্ছে,হুট করে কারেন্ট চলে গেল।
তূর্যের চোখ আটকে গেল সামনে ভিজে জুবুথুবু অবস্থায় থাকা কন্ঠের দিকে। অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটি, তূর্য বারংবার শুকনো ঠোঁট দুটো জিভা দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে। কন্ঠ মিনমিনে গলায় বলল।
“স্যার কী পড়ব?”
“আমাকে!”

তূর্য আনমনেই বলে উঠে। কন্ঠ ভ্রু কুঁচকালো, তূর্য কপাল চুলকে নিজের পরনের শার্ট খুলে দেয়।
“এটা পড়ে নাও।”

কন্ঠ শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো, তূর্য হাত দিয়ে চুল গুলো ঝেড়ে নেয়। তৎক্ষণাৎ কন্ঠ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তূর্য হা করে তাকিয়ে আছে কন্ঠের দিকে।সাদা রঙের শার্ট পড়েছে শুধু,আর কিছু নেই। হাঁটুর উপর পর্যন্ত প্রায় বেশ অনেক জায়গা দেখে যাচ্ছে। তূর্যের বুকের দ্রিম দ্রিম শব্দ বাড়ছে।
কন্ঠ লজ্জায় তূর্যের‌ দিকে তাকাতে পারছে না, ওদিকে আবার বারংবার শার্ট নিচের দিকে টানছে কন্ঠ।
“ওয়াও!”

তূর্যের‌ মুখ থেকে এমন শব্দ শুনে বড় বড় চোখ করে তাকালো কন্ঠ। তূর্য এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো কন্ঠের দিকে। কন্ঠ বারংবার নিচের দিকে শার্ট টানছে, তূর্য ফট করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। চমকে উঠে কন্ঠ। তূর্য পেটের দিকের বোতাম খুলে ফেলে কন্ঠের । কন্ঠ লজ্জায় ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেছে,জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তৎক্ষণাৎ তূর্য তার পেটে অধর চুম্বন করতে ব্যস্ত।পা গলের মতো চুমু খাচ্ছে তূর্য,এক সময় কন্ঠ কে পাঁজা কোলে তুলে নেয় তূর্য। এখানেই ধাতস্থ হয়নি সে,অধর চুম্বনে ম’গ্ন হয়ে উঠে, বিছানায় শুইয়ে দেয় কন্ঠ কে। নিজেকে উ’ন্মু’ক্ত করে তুলে ধরে কন্ঠের সামনে। মেয়েটা কিঞ্চিৎ লজ্জা নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে, তূর্য দেরী না করে কন্ঠের শার্টের বোতাম খুলে দেয়। ডুবছে যায় কন্ঠের মাঝে,কুটকুট করে কাম’ড়ে দেয় বুকের উপরিভাগে।এই ম’র’ণ ব্যথাও যেনো এক প্রকার সুখ বলেই মনে হচ্ছে কন্ঠের। কন্ঠ ধা’ক্কা দিয়ে তূর্য কে বিছানায় ফেলে দেয়,উঠে বসে তার পেটের উপর।খানিকটা ঝুঁকে তূর্যের ঠোঁ’ট ঠোঁ’ট ছুঁইয়ে দেয়, তূর্য কন্ঠের চুলে হাত ঢুকিয়ে কাছে টেনে নেয়। আবারও টেনে কন্ঠ কে নিচে নিয়ে আসে,এক সময় শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দেয়। কন্ঠ মৃদু স্বরে কঁ’কিয়ে উঠে,খা’মচে ধরে তূর্যের পিঠে।
“জান আই লাভ ইউ।”

তূর্যের এই পাগলের প্রলা’প গুলো আরো উ’ন্মা’দ করে দিচ্ছে কন্ঠ কে।

আঁধার কে’টে গিয়ে ভোরের সূর্য উদয় হয়। নতুন একটি সকাল, নতুন কিছু শুরু।
শরীরে প্রচন্ড রকম ব্যথা হচ্ছে কন্ঠের কিন্তু তবুও তা প্রকাশ করেনি সে। তূর্য বাড়ি ফিরেই ওকে ব্যথার ওষুধ খাইয়েছে,সাথে একটা পিল দিয়েছে।যা মোটেও পছন্দ হয়নি কন্ঠের। কন্ঠ পিল নিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে ফুলের টবে রেখে দেয়।মনে মনে বিড়বিড় করে আওড়াল।
“আপনি আমাকে আম্মু হতে দিতে চান না তাই তো! এবার দেখুন মিস্টার প্রফেসর আমিও আপনার বউ।সব পারি হুউ।
নিজের মনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো কন্ঠ।
_______________

তোফা কে কলেজে নামিয়ে দিয়ে, নিজেদের কলেজে আসে সান,ওর সাথে আসে তারিফ।
সোহা কন্ঠ কে ফোন করে বলে দেয় আজ একটু তাড়াতাড়ি যেনো কলেজে আসে,খুব জরুরী কথা আছে।
কিছুক্ষণ পর কন্ঠ আসে, সবাই মাঠের মধ্যে জড়ো হয়ে বসেছিল।
“হাই গাইস কী রে তোদের মুখ বাংলার পাঁচের মতো হয়ে আছে কেন?”

তোহা বেশ কড়া কন্ঠে বলে।
“আজ তুই এমন সত্যি জানতে পারবি না তখন তোর মুখটাও এমন হয়ে যাবে।”

কন্ঠ বেশ আগ্রহ নিয়ে বসে পড়ল ওদের পাশে।
“বাহ্,তা বল কী এমন সত্যি যা শুনার পরে আমিও তোদের মতো বাঁ’কা হয়ে যাব।”

সান তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রিয়া আর তারিফের দিকে।
“তাই আমাগো মধ্যে একটা জুটি আছে যারা চুপিচুপি পেরাম, মানে প্রেম করে কিন্তু আমাদের জানায়নি।”

কন্ঠ আশ্চর্য হয়ে তাকায়, তাদের মধ্যে জুটি? কন্ঠ সন্দিহান দৃষ্টিতে সোহা,সান,তাহিয়া,আর রিয়ার দিকে তাকায়।
“চুপচাপ বলে ফেল, তোদের মধ্যে কারা রিলেশন করছিস?”

সবাই কন্ঠের মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুল গিয়েছে, তৎক্ষণাৎ ক্লাস শুরু হয়ে যায়, সবাই সেদিকে চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার পূর্বে কন্ঠ বেশ কড়া ভাবেই বলে উঠে।
“ক্লাস শেষে দেখে নেবো।”

চলবে……………।✨