অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-৩২+৩৩

0
178

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [৩২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

“কী?কান ধরবো? মানে এইটার জন্য কান ধরতে হবে?”

রিয়া কাদু কাদু কন্ঠে বলে উঠে, কন্ঠ কিছুই শুনে না।বেশ কড়া কন্ঠে বলে উঠে।
“ধরবি কী না?এই তারিফ তুইও ধর কানে।”

তারিফ আর রিয়া দু’জনেই কান ধরে আছে, ওদিকে কন্ঠের কোনো ভাবান্তর নেই।
“ভাই আমার পায়ে ধরে গেছে এখন তো ছেড়ে দে?”

তারিফ প্রায় কেঁদে দেবে এমন অবস্থা।সান শব্দ করে হেসে উঠলো।
“হুঁ হুঁ হুঁ হা হা হা।ভাই রে ভাই তোরা কী ভাবছিস এভাবে লুকিয়ে রিলেশন করবি আর আমরা জানবো না?”

তাহিয়া মেকি রাগ দেখিয়ে বলে।
“এটা আমি একদম মানতে পারছি না।রিয়া তুই আর তারিফ রিলেশনে আছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজনও বোধ করলি না?”

সোহা বেশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে।
“ভালো হয়েছিল আমরা ওদের সেদিন রাস্তায় দেখেছিলাম, তাই তো জানতে পেরেছি।”

তারিফ ফট করে নিচে বসে গেলো।
“ভাই তোরা রাগ করিস না,ট্রাস্ট মি আমরা তোদের বলতাম, কিন্তু সঠিক সময়ে।”

কন্ঠও নিচে বসে,সে সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে।
“ভাই রিলেশন করেছিস ঠিক আছে, কিন্তু ছোট মামী?রিয়া তুই তো জানিস উনি কেমন কঠোর?”

তারিফের মুখ খানি চুপসে গেল।
“তাহলে কী বলছিস? আমি খুব একটা যোগ্য নই রিয়ার জন্য?”

কন্ঠ ত্বরিতে বলে উঠে।
“না তারিফ তুই যোগ্য না এটা আমি বলিনি, আমি বলব তুই আর সানের মতো ছেলে হয় না।তুই আমার বোনের জন্য ঠিক আছিস, কিন্তু তোকে রিয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে। ছোট চাচী কে মানাতে হবে।”

তারিফ খানিকটা ভেবে বলে।
“হুম, আচ্ছা ঠিক আছে আমি মানিয়ে নেবো। কিন্তু তার আগে তোদের কে আরেকটা কথা বলার আছে।”

সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাস করে।
“কীঈ?”

তারিফ বেশ ভাব নিয়েই বলে।
“ভাই আমি একটা মুভির জন্য সিলেক্ট হয়েছি ভাই,পরশু থেকে শুটিং শুরু হবে।”

রিয়া চিৎকার করে উঠল।
“ও মাই গড।”

রিয়া উঠে গিয়ে তারিফ কে জড়িয়ে ধরে,বাকি সবাই ভ্রুকুটি করে তাকালো। লজ্জা নিজেকে গুটিয়ে নেয় রিয়া,ওর এমন অবস্থা দেখে সবাই ফিক করে হেসে উঠলো।

সকাল সকাল রান্না করছে অরিন,আনিকা আহমেদ নিজের হাতে ছেলের বউ কে রান্না শেখাচ্ছেন। ভীষণ আগ্রহ নিয়ে শিখছে অরিন, ওদিকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মা এবং স্ত্রীর এত সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ তুফায়েল।
“কী দেখছিস?”

পিছন থেকে বলে উঠেন তনয়া আহমেদ,তুফায়েল মৃদু হেসে বলল।
“সত্যি চাচী ভাবতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি মা অরিন কে মেনে নেবে!”

তনয়া আহমেদ মুচকি হেসে বলল।
“তোর মা সেই অবুঝ রয়ে গেছে,কাল পর্যন্ত কী না করলো?আর আজ দেখ নিজ হাতে বউ কে রান্না শেখাচ্ছে।”

তুফায়েল আর তনয়া আহমেদ শব্দ করে হেসে উঠলো, অরিন কিয়ৎক্ষণ পরেই সবাই কে চা দেয়। সবাই বেশ প্রশংসা করে অরিনের।
“দেখলেন সবাই আমার কত প্রশংসা করলো?”

অরিন বিছানায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে কথাটা বললো, অফিসের জন্য তৈরি হয় তুফায়েল।অরিনের কথা শুনে মুচকি হাসে।
“হুম দেখলাম তো,তবে ম্যাম আপনি সারা দিন কী এসবই করতে চান? না কী চাকরি করবেন?”

অরিন গাল ফুলিয়ে বলে।
“না না আমি চাকরি করব না, আমি তো সংসার করব, বাবু সামলাব।”

তুফায়েল শব্দ করে হেসে উঠলো।
“আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আপনি না হয় সংসার সামলান আর আমি সামলাব আপনাকে।”

অরিন খিলখিলিয়ে হেসে বলে
“উম্মাহ্।”
“উম্মাহ্ টু।”
_______________
“আপা তোমার আদরের বউ মা কী কলেজ থেকে ফিরেনি?”
কথাটা বেশ পিঞ্চ মে’রে বললো শাহা খান অহনা খান কে।
“তোমার বউমা’র তো সংসারে কোনো মনই নেই, এরচেয়ে যদি সহিতা কে বিয়ে করিয়ে আনতে তাহলে কত্ত ভালো হতো।”

অহনা খান চোখ গরম করে তাকালো, মূহুর্তে চুপসে গেল শাহা খান।
“এসে গেছিইই।”

কন্ঠ দৌড়ে রান্না ঘরে গেলো, তূর্য ওর ব্যাগ নিয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। অহনা খান বলে উঠে।
“কী করছো তুমি?সবে মাত্র এলে যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।”

শাহা খান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, কন্ঠ হাসি মুখে বলে।
“কোনো সমস্যা নেই মা, আমি পারব বলো কী করতে হবে?”

শাহা খান আলগোছে বলে উঠে।
“আমি বাইরে যাচ্ছি আপা, পোয়াতি বউ কে একটু খেয়াল রাখতে হবে?”

শাহা খান রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে নীলার কাছে গেলো। কন্ঠ তাড়াতাড়ি এঁটো বাসন গুলো ধুয়ে ফেলে,এসব দেখে অহনা খান বলেন।
“এভাবে এসে রেস্ট না নিয়ে কাজ করলে শরীর খারাপ করবে, আমাদের এত দেখা শুনা করতে হবে না। বেশী করতে গেলে অসুস্থ হবে আর তখন কে দেখা শুনা করবে?”

কন্ঠ খিলখিলিয়ে হেসে বলল।
“তোমার ছেলে দেখবে, আমি দেখবো তোমাদের আর তোমার ছেলে দেখবে আমাকে।”

কন্ঠের কথায় হাসতে বাধ্য হয় অহনা খান।
“পাগলী মেয়ে একটা।”

দু মাস যেতে না যেতেই আবারও পরীক্ষা চলে এসেছে কন্ঠদের। ওদিকে বড় সড় ঝামেলা হয়েছে।রিয়া ধরা পড়ে গিয়েছে,তারিফের সাথে সম্পর্কের কথা পুরো আহমেদ বাড়ি জেনে গিয়েছে।
প্রিয় মেয়ের গালে ঠাস করে একটা থা’প্প’ড় দিলেন আনিকা আহমেদ।
“তোকে কী আমি কলেজে এসব করতে পাঠিয়েছি? পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছিস?”

রিয়া গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো নিজের মায়ের দিকে। আনিকা আহমেদ কপালে হাত রেখে সোফায় ধপাস করে বসে পড়েন।

“কী মেয়ে জন্ম দিয়েছি? আল্লাহ মান সম্মান সব শেষ করে দিলো।”

রিয়া কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে গেল, ওদিকে কন্ঠ সব কিছু জেনে তো ভয়ে রিতিমত নির্বাক।

“কী হয়েছে তোমার বই পত্র এভাবে পড়ে আছে যে?”
“স্যার রিয়া ধরা পড়ে গেছে?”

তূর্য কিছুই বুঝতে পারলো না, কিসের ধরা পড়েছে?
“কী বলছো তুমি?ধরা পড়েছে মানে?কী করেছে রিয়া?”

কন্ঠ কাঁপা কন্ঠে তারিফের সাথে রিয়ার সম্পর্কের কথা বলে, তূর্য ভাবুক হয়ে যায়।
“তাহলে খুব বড় সমস্যা আছে,কী করবে এখন?”
“আপনি তো দেখেছেন তারিফ,সান ওরা কতটা ভালো?”
“হ্যা, তোমার বন্ধুরা আর যাই হোক কোনো বাজে অভ্যাস নেই,বা খারাপ স্বভাব তো আমি কখনো দেখিনি।”

কন্ঠের চোখ দুটো চকচক করে উঠে।
“তাই না! তাহলে এখন আপনিই ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবেন।”

তূর্য ভ্যাবাচ্যাকা খায়,সে কী করবে?
“এই কন্ঠ এক মিনিট, কোথাও তুমি আবার গো’লমা’ল করবে না তো?”

কন্ঠ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
___________

ড্রয়িং রুমে বড়সড় সমাবেশ বসেছে, সেখানে উপস্থিত আছে তারিফ, সান,সোহা,তাহিয়া। কন্ঠ আছে তূর্যের সাথে। কন্ঠ এক প্রকার তূর্য কে টেনে নিয়ে এসেছে।
ওদিকের সোফায় বসে আছে আহাদ আহমেদ,সাহাদ আহমেদ। আনিকা আহমেদ এবং তনয়া আহমেদ।

সান আর রিয়া নিচু মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে।
সাহাদ আহমেদ তূর্য কে উদ্দেশ্য করে বলেন।
“তূর্য বাবা তুমি বলো তোমার কী মতামত?”

তূর্য শুকনো ঢুল গিলে কন্ঠের দিকে তাকালো, কন্ঠ চোখের ইশারায় বলে কথা বলতে।তূর্য নিজের স্বভাব সুলভ বলে উঠে।

“ছোট মামা আমি যত দূর আমি জানি তারিফ খুব ভালো ছেলে।কাজ কর্মের দিকেও বেশ ভালো।ওই তো ওর নতুন মুভির কাজ শুরু হবে, পড়াশোনার পাশাপাশি এভাবে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করছে তাহলে বুঝতেই পারছেন ছেলেটা কেমন?”

আহাদ আহমেদ বেশ গম্ভীর স্বরে বলল।
“হুম।”

সাহাদ আহমেদ এক নজর তারিফের দিকে তাকালো,ছেলেটা ভয়ে চুপসে গেছে।

কন্ঠ ভ’য়া’র্ত কন্ঠে বলল।
“ছোট মামা বড় মামা তোমাদের আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তারিফ খুব ভালো ছেলে।ও রিয়া কে ভালো রাখবে।”

আনিকা আহমেদ মুখ ভার করে আছে,তনয়া আহমেদ শান্তনা দিয়ে বলল।
“এত চিন্তা করেছিস কেন?দেখ সত্যি তো তারিফ ছেলেটা দেখতে শুনতেও ভালো।তার উপর তূর্য, কন্ঠ দুজনেই তো বলছে ওর স্বভাব চরিত্র সবই ঠিকঠাক। তাহলে তোর আর কী চাই?”

আহাদ আহমেদ এবং সাহাদ আহমেদ দু’জনে পরামর্শ করে,তারিফ যেহেতু ভালো তাহলে তাদের বিয়েতে আর সমস্যা নেই। সবাই রাজী হয়,আনিকা আহমেদও আর না করলো না। সবাই ঠিক করে এইচএসসি পরীক্ষার পরেই ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে।

তারিফ কে বলা হয়েছে যাতে তার বাবা কে দেখা করতে,মা যেহেতু নেই তাহলে তার বাবার সাথেই বিয়ের সব কথা বলবে।

“থ্যাংক ইউ সো মাচ কন্ঠ তুই না থাকলে তারিফ আর আমার সম্পর্ক টিকতো না।”

কন্ঠ ফিক করে হেসে উঠলো।
“আমি কিছু করিনি,সব করেছে তূর্য স্যার।তুই দাঁড়া আমি ওনার সাথে কথা বলে আসি।”

কন্ঠ দৌড়ে বাইরে যায়, তূর্য কারো একটা সাথে কথা বলছিল ফোনে। কন্ঠ কে আসতে দেখে ফোন পকেটে রেখে দেয়, কন্ঠ এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তূর্য কে।

“ধন্যবাদ #অপ্রিয়_মাস্টার সাহেব।”

তূর্য ম্লান হাসে।
“এখনও অপ্রিয় রয়ে গেছি?”

কন্ঠ মুখ তুলে তাকায়,ঘাড় নাড়িয়ে বলে।
“উঁহু, এখন তো আপনি খুব প্রিয় । অপ্রিয় এটার মধ্যে প্রথম অক্ষর ‘অ’ বাদ দিলেই আপনি প্রিয়।”

“পাগলী একটা।”
“ইয়েস, আপনার জন্য পাগল আমি। আচ্ছা এখন বলুন তো আপনি আমাকে কখন থেকে ভালোবাসেন?”

তূর্য খানিকটা ভেবে বলল।
“উহুম,যখন প্রথম কলেজে সেই অবুঝ কন্ঠ কে দেখেছিলাম সেদিন থেকে।”

কন্ঠ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো,ওর সাথে তূর্য শব্দ করে হাসে।
দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখে আহাদ আহমেদ,যাক তাহলে মেয়েটা সুখে আছে।

চলবে…………….।✨

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [৩৩]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

পরীক্ষার আর বেশীদিন নেই।সামনের পঁচিশ তারিখ পরীক্ষা শুরু হবে।
তার আগে থেকেই তূর্য কন্ঠ কে ভালো ভাবে পড়াচ্ছে, আবার নতুন একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।
সান একটা পার্ট টাইম জব পেয়েছে,তাতেই দুজনের সংসার ভালোই চলেছে। মূলত তূর্যের জন্য এই চাকরি পেয়েছে সান,এই কথাটা জানার পর কন্ঠ অনেক খুশি হয়। তূর্য কে যতটা চিনেছে তার চেয়েও বেশী ভালো সে।

“কী ব্যাপার হঠাৎ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছো যে?”

বেলকনিতে একা দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ, তূর্য এসে দাঁড়ায় তার পাশে।
কন্ঠ আনমনে বলে উঠে।
” মা কে মিস করছি।”

তূর্য পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কন্ঠের দিকে।
“মা!”
“হুম,আজ তো মাদারস ডে। কিন্তু আমার মা কাছে নেই তো।”

তূর্য কন্ঠের হাত ধরে।
“মায়ের কী হয়েছিল?”

কন্ঠ মলিন হাসলো।
“মা আর বাবা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে,ওরা লুকিয়ে বিয়ে করেছিল।বড় মামা এটা মেনে নেই নি, নিবেই বা কী করে? আদরের বোন কে এভাবে খারাপ মানুষের হাতে কে তুলে দিতে চায়? কিন্তু মা সে তো বাবা কে ভীষণ ভালোবাসে।তাই বিয়েটা করেই নিলো। এরপর কিছুদিন পরেই নাকি আমার জন্ম,তার পরপরেই বাবা অন্য একটা মেয়ের সাথে কানাডা চলে গেছে মা কে ফেলে রেখে।
ছোট মামা আর বড় মামা মা কে ওদের কাছেই রেখেছিল। কিন্তু মা এত কষ্ট কটু কথা স’হ্য করতে পারেনি,পরেই সুই’সাইড করেছে।যার জন্য বড় মামা আমাকে দোষী করত।”

কথা গুলো বলে ফুস করে শ্বাস ছাড়লো কন্ঠ।
“মা কে খুব মিস করছি আমি।”

কন্ঠের কাঁপা গলায় এমন কথা শুনে তূর্য খানিকটা কষ্ট অনুভব করে। কন্ঠ কে টেনে আলতো হাতে বুকে নিয়ে আসে।
“ইটস্ ওকে,এত কষ্ট পেতে হয় না।”

কন্ঠ আদুরে ভাবে বুকে চলে গেল তূর্যের।

সন্ধ্যা রিতিমত চমকে উঠে কন্ঠ,ওর পুরো ফ্যামিলি ওর সাথে আছে।বাড়ির ছেলেরা মিলে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে,আর ওদিকে তনয়া আহমেদ, আনিকা আহমেদ,শাহা খান এবং অহনা খান সবাই মিলে আ’ড্ডা দিচ্ছে। সবাই কন্ঠ কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো, কন্ঠ যেনো আজ কোনো ভাবেই মন খারাপ না করে তাই সবাই এত কিছু করছে। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবই হচ্ছে,সব শেষে প্রিয় পুরুষের বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির ঘুম দেয় কন্ঠ।
___________
“সামনের মাসে তো আপনার পরীক্ষা আপনি কেন এসব করছেন? গিয়ে পড়ুন।”

তোহার কথা শুনে মুচকি হাসে সান, কলেজ থেকে ফিরে এসে ঘরের কিছু কাজ সে করে দিচ্ছে।এটা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না তোহার।সান এসে তোহা কে জড়িয়ে ধরে।
“সবসময় তো তুমিই কাজ করো, আমি না হয় আজ একটু সাহায্য করলাম।”

তোহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। অতঃপর দুই কপোত কপোতী মিলে রান্না থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ শেষ করে নেয়।

সন্ধ্যায় সবাই নিজেদের বাড়ি ফিরে এলো, ওদিকে অরিন তেমন একটা বেশি খাবার রান্না করেনি। সবাই খেয়ে এসেছে তাই আর কষ্ট করে রান্না করে নি।
তুফায়েল অফিস থেকে আসার সময় অরিনের পছন্দের বিরিয়ানি নিয়ে আসে।

“আপনি এসে গেছেন? আসুন।”

তুফায়েল বাড়ির ভেতরে ঢুকে,অরিন ওর হাতের জিনিস গুলো নিয়ে গুছিয়ে রাখলো।চোখ পড়লো আরেকটা প্যাকেটে ,ভেতরে বিরিয়ানি।চোখ দুটো চকচক করে উঠে অরিনের।

“বিরিয়ানি!”
“হুম চটপট প্লেটে নিয়ে নাও, দু’জনে এক সাথে খাবো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
“আচ্ছা।”

অরিন ছোট্ট করে জবাব দিয়ে রান্না ঘরে গেলো। তৎক্ষণাৎ তুফায়েল ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। এরপর দু’জনে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে।
____________
প্রথম পরীক্ষা শুরু আজ থেকে, প্রথম দিনেও লেইট করে হলে গিয়েছে কন্ঠ।
“এই তোর এত লেইট কেন হয়েছে?”

তিন নম্বর বেঞ্চ থেকে ফিসফিস করে বলল সোহা।
কন্ঠ নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“আর বলিস, কাল সারারাত পড়ে এখন আমার এই অবস্থা। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি।”

কিয়ৎক্ষণ পরেই ক্লাসে স্যার চলে আসে, ইংরেজি পরীক্ষা তাই ইংরেজি স্যার আসেন। সবাই কে পেপার দেয়, পরীক্ষা শুরু হয়। দীর্ঘ তিন ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয় সবাই।হইচই পড়ে গেছে, সবার পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে।
কিন্তু অন্য দিকে তারিফ এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া কন্ঠ কে ইশারা করে দেখায়।

“কী রে তারিফ?কী হয়েছে তোর এত চুপচাপ?”

রিয়া মলিন মুখে বলে।
“এক্সাম ভালো হয়নি।”

কন্ঠ বুঝতে পারলো তাই তারিফের মন খারাপ, ছেলেটা সব দিকে দৌড়াচ্ছে,এই জন্য হয়তো পড়তে পারেনি।
“এতে খারাপ কি আছে?এটা তো লাস্ট টেস্ট, ফাইনালে অবশ্যই ভালো করবি।”

তারিফ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“শুনেছি এটাতে খারাপ হলে নাকি ফাইনালে বসতে দেবে না।”

সান তারিফ কে ভরসা দিয়ে বলে।
“চিন্তা করিস না,তোকে বললাম তো তুই যত মার্কের অ্যান্সার করেছিস পাশ করে ফেলবি তো!”

সবার কথায় খানিকটা চিন্তা মুক্ত হয় তারিফ।
___________
হাসপাতালে ভর্তি আছে নীলা, লাস্ট স্টেজে আছে। সকাল থেকে পেটে ব্যথা করছে নীলার,সেই জন্য কেউ রি’স্ক নেয়নি নীলা কে হসপিটালে নিয়ে যায়।

সাফিন প্রচন্ড রকম ভয় পাচ্ছে, তূর্য ওকে আশ্বাস দিচ্ছে কিছু হবে না। কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছে সাফিন এক পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছে। সেটা শুনার পর থেকে পুরো বাড়ি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে।
নাতনি হয়েছে শুনে খুশিতে গদগদ আনিকা আহমেদ,অরিনও খুব খুশি। আনিকা আহমেদ তাকে বলেছে সেও যেনো তারা নাতি নাতনির মুখ দেখায়।

শাফিন খানের মুখ থেকে কথাটা শুনে খুশি হন শাহিনা খান। ঢাকায় থাকার কারণে আসতে পারেনি আর।

বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছে তূর্য,ওর বুকের ঠিক মাঝখানে মাথা রেখে শুয়ে আছে কন্ঠ।মুখ ভার তার, তূর্য কন্ঠের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“কান্না পাচ্ছে আমার।”
“কেনো?”

তূর্যের প্রশ্ন শুনে আরো রাগ হয় কন্ঠের,লোকটা কী বুঝে না?
“আপনি কি বুঝতে পারছেন না কেন কান্না পাচ্ছে?”

তূর্য তির্যক হাসে, কন্ঠের গা জ্ব’লে গেল হাসি দেখে।
“আমি মা হবো।”

কাদু কাদু গলায় বলে কন্ঠ, তূর্য ওকে আরো শক্ত করে ধরে বলে।
“হবে তো, পড়াশোনা শেষ করো।”
“না, আমি এখুনি মা হবো।”
“হুস,কাল শেষ পরীক্ষা এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনা করো।”

কন্ঠ গাল ফুলিয়ে শুয়ে পড়লো, এবং কী সেই রাতে তূর্য কে কাছে আসতেও দেয়নি।
পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময় একাই বেরিয়ে গেলো কন্ঠ।অহনা খান বার কয়েক বলেছিল খেয়ে যেতে, কিন্তু কন্ঠ শুনেনি।
তূর্য ঘুম থেকে উঠে কন্ঠ কে না দেখে ড্রয়িং রুমে গিয়ে জানতে পারে কন্ঠ কলেজে বেরিয়ে পড়ল। সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে তূর্য। কলেজের জন্য তৈরি হয়ে সেও বেরিয়ে পড়ে।

সবাই অপেক্ষা করছে কন্ঠের, কিন্তু আফসোস কন্ঠ আসেনি। অন্য ক্লাসে বসে আছে সান এবং রিয়া,তারা জানতে পারলো না কন্ঠ যে আসেনি।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার পথে, সবাই অস্থির হয়ে উঠেছে। কেউই ঠিক করে পরীক্ষা দিতে পারেনি, কারণ সেদিন কন্ঠ আসেনি।
ক্লাসের শেষে সবাই অফিস রুমে যাম, তূর্য ওখানেই বসে ছিল।
“স্যার আসবো?”

রিয়ার কথা কর্ণ স্পর্শ করা মাত্র চোখ তুলে তাকায় তূর্য। মৃদু স্বরে বলল।
“কাম ইন।”

সবাই ভেতরে প্রবেশ করে,একে অন্য কে ধাক্কা দিয়ে বলে কথাটা বলার জন্য।
সান ফিসফিসিয়ে সোহার উদ্দেশ্যে বলে।

“এই সোহা বল না কথাটা?”

সোহা শুকনো ঢুল গিলে বলে।
“আমি পারব না তোরাই কর।”

কেউই কিছু বলতে পারছে না, সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপার টা বেশ বুঝতে পারছে তূর্য, অতঃপর সেই জিজ্ঞেস করে।

“তোমরা কী কিছু বলতে চাও? না মানে বলতে চাইলে বলতে পারো।”

তারিফ চট করে বলে উঠলো।
“না মানে বলছিলাম কী স্যার আজ কন্ঠ পরীক্ষা দিতে আসেনি কেন?”

তারিফের কথা কর্ণ স্পর্শ করা মাত্র চমকে উঠে তূর্য, আশ্চর্য হয় বটে।
“কী বলছো এসব? কন্ঠ পরীক্ষা দেয়নি?”

তূর্য কে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে কিছুই জানে না, সবাই অস্থির হয়ে উঠে। কন্ঠ তাহলে কোথায়?
কলেজের গেটে গিয়ে ওয়াচম্যান কে ডেকে জিজ্ঞেস করে কন্ঠ এসেছে কী না? ওয়াচম্যান বলেছে কন্ঠ এসেছে তো, সবাই খুঁজতে থাকে কন্ঠ কে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।
তূর্য নিজের চুল গুলো খাম’চে ধরে, কন্ঠ গেলো কোথায়?

“স্যার আপনি বরং কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করুন কিছু তো পাবেন?”

সানের কথায় সত্যি তূর্যের মনে হয় সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা উচিত। তূর্য এক প্রকার দৌড়ে হ্যাড কোয়ার্টারে গেলো, সেখানে অফিস স্টাফ সহন কে বলে আজকে সকাল থেকে কলেজে স্টুডেন্ট আসা পর্যন্ত সব গুলো সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে।
সহন আস্তে আস্তে সব গুলো ফুটেজ দেখায় তূর্য কে,তাহিয়া চেঁচিয়ে উঠলো।
“ওই তো তিন নাম্বার ক্যামেরায় কন্ঠ কে দেখা যাচ্ছে।”

তূর্য সহনের উদ্দেশ্যে বলে।
“কন্ঠ কোথায় কোথায় গিয়েছে সেগুলো দেখাও।”

সহন কন্ঠের চলাচল দেখায়, কন্ঠ ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে একটা মেয়ে এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেলো,মেয়েটা খুবই পরিচিত তূর্যের।ভ্রুকুটি করে তাকালো তূর্য, অতঃপর ওকে নিয়ে হাঁটতে থাকে কলেজের শেষে বন্ধ থাকা আরেকটি স্টাফ রুমের দিকে।

রিয়া কেঁদে উঠলো।
“স্যার কন্ঠ ওখানেই আছে হয়তো, প্লিজ চলুন।”

তূর্য ত্বরিতে ছুটে যায়,ওর পিছু পিছু বাকিরাও গেলো,সহন কে বলে এই বন্ধ স্টাফ রুমের চাবি আনিয়ে নেয়। দরজা খোলা মাত্র চমকে উঠে সবাই, তূর্যের হৃদয় স্পন্দন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
“কন্ঠ!”

ফ্লোরে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে কন্ঠ,হাতে থাকা পরীক্ষার ফাইল এক পাশে অবহেলায় পড়ে আছে। তূর্য এগিয়ে গেলো,চট করে কন্ঠ কে কোলে তুলে নেয় , কন্ঠের জ্ঞান নেই। তাড়াতাড়ি তাকে হসপিটালে নিতে হবে।
পুরো কলেজে রটে যায় প্রফেসর তূর্য খানের ওয়াইফ বন্ধ স্টাফ রুমে বেহুঁ’শ হয়ে পড়ে আছে।কেউ কেউ কানাঘুষা করছে নিশ্চয়ই খারাপ কোনো উদ্দেশ্যে ওখানে গিয়েছে কন্ঠ।

চলবে……………।✨