অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-০১অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-০১

0
9

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব১
#cousin_related

দীর্ঘ ৮ বছর পরে ছোট বোনের বিয়ে উপলক্ষে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরছে ‘আব্রাহাম খান তূর্য’।
আট বছর আগে বাবা মায়ের করা ভুলের জন্য বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাকে।
এয়ারপোর্ট এর সামনে দারিয়ে থাকতে দেখা গেলো খান বাড়ির কিছু সদস্যদের, তু্র্য বার বার নিষেধ করার পরেও তুর্যর বাবা আহাদ খান, ছোট বোন তন্নি এবং তুর্যর ছোট বেলার বন্ধু ও তন্নির হবু স্বামী ‘ডক্টর নিরব এহসান’ তাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিতে এসেছে।
তুর্যকে বেরিয়ে আসতে দেখেই আহাদ খান এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। এত বছর পর ছেলেকে দেখে, আবেগের ভার সইতে না পেরে কান্না করে দিয়েছে সে।
সে এবং তার স্ত্রী আতিয়া বেগম বিবাহিত জিবনের প্রথম ১২টি বছর নিঃসন্তান ছিলেন, তারপর আল্লাহর অশেষ রহমতে তাদের ঘরে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়, এবং তারও ৮ বছর পরে জন্ম হয় একমাত্র কন্যা তন্নির।
তাই ছেলে তার বড্ড আদরের, একমাত্র ছেলে বলে কথা, বাবা আর ভাইয়ের এমন মুহূর্ত দেখে তন্নীও কান্নাকরে ফেলেছে।
তূর্য বোনের চোখের পানি মুছিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল: “এই পাগলি কান্না করছিস কেন?” তারপর নিরব ও তূর্য লাগেজগুলো গাড়িতে উঠিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে,
আর তুর্য ভাবছে অতিতের কথা,
কি হয়ে ছিলো ৮ বছর আগে?

★★★অতীত★★★
৯ বছর আগে, তূর্যর বয়স তখন ১৯ বছর,
সে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল চট্টগ্রামে। তখন তূর্যর বাবা তাকে ফোন করে জানায় গাড়ি এক্সিডেন্ট-এ তূর্যর মামা মিলন হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। মামার মৃত্যুর খবর শুনে সাথে সাথে তূর্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসে।
তার মামার লাশ দাফনের পরে সে এবং তার বাবা বাড়ি ফিরলেও, তার মা থেকে যায় ভাইয়ের ছোট্ট মেয়েটাকে সামলানোর জন্য। তূর্যর মামা মিলন হোসেনের একমাত্র মেয়ে মায়া। যেমন নাম ঠিক তেমনি মায়া ভরা তার মুখটা, মায়া ভরা ওই চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আতিয়া বেগমের দিকে।
মায়াকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মিলি পারি জমিয়েছিল পরপারে। আর এখন মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাও তাকে ছেড়ে চলে গেল। বাবার লাশ দেখে মেয়েটা যেনো পাথরে রুপান্তরিত হয়ে গেছে।
মায়ার দেখাশোনা করার মত কেউ না থাকায় ৩ দিন পরে আতিয়া বেগম মায়াকে নিজের সাথে নিয়ে আসে।
তারপর থেকে মায়া তাদের সাথেই থাকতে শুরু করে।

এভাবেই চলে যায় একটি বছর।

______________

মায়ার প্রতি তুর্যর ব্যবহারও খুব স্বাভাবিক, তুর্য তন্নির সাথে যেমন ব্যবহার করে, মায়ার সাথেও ঠিক একই ব্যবহার করে।
এই এক বছরের মধ্যে যতবারই তূর্যর ২ ফুপি ওদের বাড়িতে এসেছে, ততবারই মায়া কে আশ্রিতা বলে কটাক্ষ করেছে।
তাদের ভাষ্যমতে মায়া একটা আপয়া মেয়ে, যে নিজের বাবা-মাকে খেয়ে এখন তাদের ভাইয়ের ঘাড়ে এসে পড়েছে।
মায়া এগুলো শুনে কষ্ট পেলেও মায়ার কিছু করার নেই, সে যাবেই বা কোথায়? তার তো যাবার কোন জায়গা নেই।
মায়ার বাবা-মা পালিয়ে বিয়ে করেছিল সেই কারণে মায়ার নানা বাড়ির কেউ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি।

প্রতিবারের মতো এবারও তূর্যর বড় ফুফু কল্পনা খান আতিয়া বেগমকে বলছিল “কি দরকার ওরকম একটা অপয়া মেয়েকে বাড়িতে রাখার এতিমখানায় দিয়ে দিলেই তো হয়”
আতিয়া বেগম অশ্রুসিক্ত চোখে কল্পনা খানের দিকে তাকায় তারপর বলে “আমার মরহুম ছোট ভাইটার শেষ চিহ্ন হিসেবে ও আমার কাছে আছে, আমি সারা জীবন ওকে নিজের কাছে আগলে রাখবো।”
“তোমার একটা জোয়ান ছেলে আছে, ওই মেয়েটাও বড় হচ্ছে, দেখো পরের মেয়ের ভালো করতে গিয়ে নিজের ছেলের যেন বদনাম হয় না।” কল্পনা খান এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বল্লেন।
আতিয়া বেগম সব শুনে চুপ করে রইলেন।
_____________

রাত তখন ১০টা
মায়া ও তন্নি একটু আগেই ঘুমিয়েছে।
আরাফ খান এইমাত্র ফিরলো অফিস থেকে, রুমে এসে আতিয়া বেগমকে না পেয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো, তখনই দেখতে পেলো আতিয়া বেগম বেলকনির রেলিং ধরে দারিয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আতিয়া বেগমকে দেখি বোঝা যাচ্ছে বাইরের আকাশের মতো তার মনের আকাশেও মেঘ জমেছে।
আরাফ খান কি হয়েছে জিজ্ঞেস করা মাত্রই আতিয়া বেগম সব খুলে বল্লেন স্বামীর কাছে।
সব শুনে আরাফ খান বলেন:-
“মানুষের কাজই হলো অন্যের সমালোচনা করা, ওসব কথা তুমি গায়ে মেখো না।”

আতিয়া বেগম সাথে সাথে বলে উঠলেন :-
“আমি চাইনা আমার এতিম মেয়েটাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলুক”।
“মানুষের মুখ বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব?” আরাফ খান কথটি জিজ্ঞেস করতেই আতিয়া বেগম বললেন,
“অবশ্যই সম্ভব, তূর্যর সাথে মায়ার বিয়ে দিয়ে দিলে কেউ আর মায়াকে আশ্রিতা বলতে পারবে না।”

“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো আতিয়া? মায়ার বয়স মাত্র ১০ বছর, তুমি এখন এ ধরনের কথা কিভাবে বলতে পারলে? আর তূর্য! তোমার মনে হয় তুর্য এটা মানবে?তুমি যদি বলতে মায়া বড় হলে তুর্যর সাথে ওর বিয়ে দিবে তাহলে আমি আপত্তি করতাম না।”(আরাফ খান)

“এখানে তুমি ভুল কি দেখলে? আমি তো এখন ওদের সংসার করতে বলছি না, আমি শুধু চাইছি মায়াকে একটা পরিচয় দিতে। মায়া যেন এই সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, ওকে যেন কেউ আশ্রিতা বলে কটাক্ষ না করে সেই ব্যবস্থাটা শুধু করতে চাইছি। আর তুমি তুর্যর কথা ভাবছো তো? তুর্যকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।” (আতিয়া বেগম)
আতিয়া বেগমের কথা শুনে আরাফ খান একটু নরম হলেন, আরাফ খানকে নরম হতে দেখে আতিয়া বেগম চলে গেলেন ছেলের কাছে।

তুর্যর কাছে গিয়ে আতিয়া বেগম নিজের মাথা ছুঁয়ে ছেলের থেকে কথা আদায় করিয়ে নিলেন যে,
‘আজ আতিয়া বেগম তূর্যর কাছে যা চাইবে তূর্যকে তাই দিতে হবে’
তারপর আতিয়া বেগম তূর্যকে মায়া আর তুর্যর বিয়ের কথা বলাতে তুর্য যেন আকাশ থেকে পড়লো। সেই সাথে রাগও হচ্ছিল মায়ের ওপর, তার মা কিভাবে এরকম একটা কথা বলতে পারলো?

বিয়েতে তূর্য রাজি না হওয়ায় আতিয়া বেগম মনে করিয়ে দিলেন কিছুক্ষণ আগে মায়ের মাথা ছুঁয়ে তূর্যর কথা দেওয়ার বিষয়টি।

তখন আর কিছুই করার ছিল না তুর্যর, সে শুধু তার মাকে বলল
“মা কাজটা তুমি ঠিক করলে না তোমার এই ১টা ভুলের জন্য সারা জীবন তোমাদের সকলকে পস্তাতে হবে”।

আতিয়া বেগম সময় নষ্ট না করে পরদিন সকালেই কাজী ডেকে তুর্য এবং মায়ার বিয়ে দিয়ে দেয়।

বেচারী মায়া তার সাথে কি হচ্ছে, তা বুঝে ওঠার আগেই সে বিয়ে নামের এক পবিত্র বন্ধনে বাঁধা পড়ে যায় ।

বিয়ের ১মাসের মধ্যে তুর্য তার সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করে পাড়ি জমায় লন্ডনে।
কিন্তু ওই এক মাস তূর্য মায়াকে একদমই সহ্য করতে পারত না, মায়া যখনই তুর্যর সামনে যেতো তখনই তূর্য অকারণেই মায়ার উপর চেঁচামেচি করত,ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মায়া কে চড়-থাপ্পর লাগিয়ে দিত তুর্য।

মায়া তূর্যকে অনেক ভয় পেতে শুরু করলো,
ছোট্ট মায়া বুঝতেও পারে না তার তূর্য ভাইয়া হঠাৎ এভাবে বদলে গেল কেন?
মায়া ভাবতো কেন এত অপ্রিয় সে?

বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম দুই বছর তুর্য তার পরিবারের কারো সাথে কোন যোগাযোগ না করলেও, মায়ের হার্টের অপারেশনের কথা শুনে, বাবা-মা এবং ছোট বোনের সাথে ফোনে যোগাযোগ শুরু করে।
পরিবারের সকলের সাথে কথা বললেও গত ৮ বছরে কখনো মায়ার খোঁজ নেওয়া হয়নি।

এবার দেশে ফেরার পেছনে একটি বড় কারণ হলো মায়াকে ডিভোর্স দেওয়া।

কিছুদিন আগে আতিয়া বেগম নিজেই তুর্যকে ফোন করে বলেছে, “তন্নির বিয়েতে তুমি দেশে এসো, তুমি দেশে ফিরে মায়াকে দেখো, তার পরেও যদি তোমার মনে হয় তুমি মায়ার সাথে থাকতে পারবে না, তাহলে আমি নিজে তোমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দেবো।”

তুর্য নিজেও চায় বিয়ে নামক এই বন্দি-দশা থেকে মুক্ত হতে, তাইতো সব কাজ ফেলে দেশে ফিরছে সে।

_________________

★★★বর্তমান★★★

তুর্য খান বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপতেই ১টা মেয়ে এসে সদর দরজা খুলে দিলো,
কে এই মেয়ে?

চলবে।