অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-০৪

0
8

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব৪

মায়া যখন গাড়ি থেকে নামতে যাবে, ঠিক তখনই তুর্য গাড়ির ডোর লক করে ফেলল।
তূর্যর এরকম কাজ দেখে মায়া তূর্যর দিকে তাকিয়ে বলল
-সমস্যা কি আপনার?
-কই? আমার কোন সমস্যা নেই তো, বিশ্বাস না হলে তুমি চেক করে দেখতে পারো।(তুর্য)

তূর্যর কথা শুনে মায়ার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করলো। তবুও নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো -ভাইয়া প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
মায়ার কথা শুনে তূর্য রেগে গেল এবং তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো
-ভাইয়া ভাইয়া করছিস কাকে? তোর কোনো যোগ্যতা নেই আমার বোন হওয়ার।
তূর্যর এরকম কড়া কথা শুনে মায়া খুব কষ্ট পায় কান্নায় তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। কিন্তু তখনই তূর্য আবার বলতে শুরু করে
-আমার বোন হওয়ার যোগ্যতা তোর না থাকলেও আমার বউ হওয়ার সম্পূর্ণ যোগ্যতা তোর আছে। তুই নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে পারিস, সত্যি বলছি আমি কিচ্ছু মনে করব না।

বলেই তূর্য বাড়ির ভিতরে চলে গেল। কিন্তু মায়া একইভাবে বসে রইলো গাড়িরতে, মায়া যেন স্তব্ধ হয়ে গেল তুর্যর কথাগুলো শুনে, মায়া ভাবতেও পারেনি যে তূর্য তাকে এমন কথা বলবে।
মায়া তো ভেবেছিল যে তূর্য দেশে ফিরেই আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে, কিন্তু মায়ার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে তুর্য যেন অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কিছু মুহূর্ত পরেই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো মায়া।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল তূর্য ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে, তুর্যর চোখে চোখ পড়তেই মায়া চোখ নামিয়ে নিল। দ্বিতীয় বার আর তুর্যর দিকে তাকালো না পর্যন্ত,
মায়া সোজা চলে গেল নিজের রুমের দিকে। নিজের রুমে গিয়ে হাতের শপিং ব্যাগগুলো বিছানার উপরে রেখে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
মায়া এখন লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন বোধ করছে। পুরো আধাঘন্টা শাওয়ার নেওয়ার পরে বের হলো ওয়াসরুম থেকে, তারপর ভালো করে চুল মুছে বেলকনিতে গিয়ে টাওয়াল মেলে দিয়ে আসলো।
তারপর সোজা গিয়ে দাঁড়ালো আয়নার সামনে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো চিরুনি করতে করতে ভাবল এটা কি তার সেই তূর্য ভাই ছোটবেলায় যে কিনা বিনা কারণে মায়ার উপরে চেঁচামেচি করতো ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তাকে আঘাত করে বসতো যে কিনা মায়াকে বিয়ে করতে জোর করায় প্রথম দুটো বছর বাবা-মা সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি পুরো আটটা বছর পরিবার আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব সব ফেলে লন্ডনে পড়েছিল।

এত ভাবনার পরেও মায়া কোন ভাবেই তূর্যকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। আট বছর পরে দেশে ফিরে তূর্যর এই পরিবর্তন মায়ার কাছে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে।
মায়ার মন বলছে তূর্য প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মায়ার সাথে প্রেমের অভিনয় করে তারপর তাকে ছুড়ে ফেলে দেবে।

_________________

রাতে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছিল, তূর্যর সামনের চেয়ারটাতে বসে খাবার খাচ্ছে মায়া।

তূর্য দু বার নিজের পা দিয়ে মায়ার পায়ে খোঁচা মারলো। তা দেখে মায়া নিজের পা দুটো গুটিয়ে নিল।

আতিয়া বেগম বিকেলে তন্নির মুখ থেকে শাড়ির দোকানের সব ঘটনা শুনেছে। তাই আতিয়া বেগম ছেলেকে বলে উঠলেন :-
-তূর্য শুনলাম তুমি নাকি আজকে ১টা শাড়ির দোকান কিনে নিয়েছো? (আতিয়া বেগম)
-জি আম্মু…(তূর্য)
-কেনো?…(আতিয়া বেগম)
তূর্য তন্নির দিকে তাকিয়ে বলল :-
-দোকান কিনেছি এটা বলেছিস কেন কিনেছি সেটা বলিস নাই?
বলেছিলামতো আম্মু হয়তো ভুলে গেছে।
প্রশ্নটা আমি তোমাকে করেছি তূর্য,
তূর্য চোখ দিয়ে মায়া দিকে ইশারা করে বলল ওই -দোকানের ১জন মহিলা কর্মচারী ওকে অপমান করেছিল তাই। (তূর্য)
-তাই বলে পুরো দোকানটা কিনে নিতে হবে? (আতিয়া বেগম)
-তাহলে কি করতাম বলো আম্মু, মহিলাটা আমার ইগো হার্ট করেছে আর তুমি তো জানোই আমার কাছে সবচাইতে বেশি ইম্পর্টেন্ট হলো আমার ইগো। (তূর্য)
-মহিলাটা তোমাকে তো কিছু বলেনি তাহলে তোমার ইগো হার্ট হল কেন ? (আতিয়া বেগম)
-আম্মু তুমি কি বলতে চাইছো? মায়াকে কেউ অপমান করলে সেটা কি আমার অপমান না? (তূর্য)
-মায়া কে কেউ অপমান করলে সেটা কেন তোমার গায়ে লাগবে? মায়া তোমার কে হয়? (আতিয়া বেগম)
তুমি জানো না মায়া আমার কে?(তূর্য)
না, তুমি বলো (আতিয়া বেগম)
মায়া আমার মামাতো বৌ(তূর্য)
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে আতিয়া বেগম কপাল কুঁচকে বললেন,
এ আবার কেমন কথা?
মায়া ও তন্নি হা করে তাকিয়ে আছে তূর্যর মুখের দিকে। আরাফ খান তুর্যর মুখে এ ধরনের কথা শুনে বলে উঠলেন
-nice joke
-that’s not a joke
তাহলে এটা কি
এটা আমার আর মায়ার সম্পর্কের নাম, আম্মুর মত আমিও এটাই ভাবছিলাম মায়া আর আমার সম্পর্কটা আসলে কি? কেন ওকে কেউ কিছু বললে আমার এত গায়ে লাগে? তখনই আমার মাথায় এলো এটা।
তুর্যর এরকম উদ্ভট কথা শুনে মায়া রেগে উঠে গেল খাবার টেবিল থেকে।
মায়ার নিজের রুমে চলে যাওয়ার পরে আতিয়া বেগম তূর্যকে বলল
কাল দেশে আসতে আসতে আজই তোর মায়ের উপর এত দরদ উঠলে উঠছে কেন? তুই মায়া কে আজ সকালে দেখেছি মাত্র, একটা দিনও এখনো পার হয়নি। তুই কি কোন ভাবে মায়ার থেকে অথবা আমাদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এগুলো করছিস?
দেখ মায়ার আপন বলতে আমরা ছাড়া কেউই নেই, আমি আর তোর বাবা আমরা এই দুটো মানুষ মায়া আর তন্নিকে কখনো আলাদা চোখে দেখিনি।
বাবারে আমাদের ভুলের শাস্তি তুই মায়াকে দিসনা।

মা তোমরা কি আমাকে অমানুষ ভাবো?
নারে বাবা তা কেন হবে কিন্তু বাবা মা মরা মেয়েটাকে নিয়ে আমার খুব ভয় হয়
আচ্ছা মা এটা জানতে চাচ্ছ তো আমি মায়াকে নিয়ে এত অল্প সময়ের মধ্যে এতোখানি প্রসেসিভ কিভাবে হয়ে গেলাম। তাহলে শোনো, কাল রাতে আমি কফির জন্য নিচে নেমেছিলাম তখনই আমি মায়াকে দেখেছি, তখন আমি জানতাম না যে ওটাই মায়া। কিন্তু প্রথম দেখাতেই আমি মায়ার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। কফি নিয়ে রুমে যাওয়ার পরপরই তন্নি গিয়েছিল আমার রুমে। তন্নি মূলত আমার রুমে গিয়েছিল গত ৮ বছরে আমার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে মায়াকে কিভাবে কটু কথা শুনতে হয়েছে, আর ফুপুরা যখন এ বাড়িতে এসেছে তখন মায়াকে একলা পেলেই মায়ার উপর কেমন অত্যাচার করেছে এসব কিছু জানিয়ে মায়া সঙ্গে সংসার করার জন্য আমাকে অনুরোধ করতে।
আমি ওকে বলেছিলাম দেখ মায়ার সঙ্গে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না, কারণ আমি তখনও রহিমা খালার মেয়েকেই মায়া মনে করছিলাম। আমার একটা মেয়েকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে, তখন তন্বী আমাকে সেই মেয়ের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আমি ওকে বলে দেই যে পাশের রুমে থাকা মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
তার পর আমি ওকে জিজ্ঞেস করি আমার পাশের রুমে যে মেয়েটা থাকছে সে কে?
কিন্তু ও আমাকে কিছুই না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
তারপর সকালে নাস্তার টেবিলে যখন আমি জানতে পারি অন্য কারো নয়, আমি প্রথম দেখায় আমার বউয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছি।
তখনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছি,
আজ থেকে মায়াকে আমি এক চুল পরিমাণ কষ্টও পেতে দেবো না।
আমি নিজের সমস্তটা দিয়ে আগলে রাখবো ওকে।

তূর্যর কথা শুনে আতিয়া বেগমের বুক থেকে যেন বড় একটা পাথর সরে গেল।

তখনই আরাফ খান বলে ওঠে,
-সবকিছু যখন ঠিকঠাক হয়ে গেল তাহলে তন্নীর বিয়ের দিনই মায়া আর তুর্যর সামাজিক ভাবে একটা বিয়ের ওনুষ্ঠান করা যাক।

-আচ্ছা বাবা আল্লাহ তো তোমাকে অর্থ সম্পদের কোন কমতি দেয়নি, তাহলে তুমি এত কিপ্টা কেন?

-এখানে তুই কিপ্টামুর কি দেখলি?

-এই যে তুমি এক খরচে ছেলে মেয়ে দুজনের বিয়ে ছাড়তে চাচ্ছো এটা কি কিপ্টামু না?

-তাহলে তুই কি চাস?

-বাবা আমি একটু সময় চাই, আমি শুধু মায়াকে বোঝানোর কয়টা দিন সময় নিব। ও তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসে, তাই তোমরা যদি ওকে বল আমার সাথে সংসার করতে, তাহলে ও চুপচাপ আমার সাথে সংসার করার চেষ্টা করবে, আমার সাথে সবটা মানিয়ে নিতে চাইবে। কিন্তু আমি চাই ও মন থেকে আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করুক।

-ok, তুমি যেটা ভালো মনে করবে সেটাই হবে।
– ok, good night everybody.

তারপর সবাই যে যার রুমের দিকে চলে গেল।
কিন্তু তূর্যকে ঘুরঘুর করতে দেখা গেল মায়ার রুমের সামনে দিয়ে।
ঘন্টাখানেক পরে মায়া দরজা খুলে নিচে গেলো পানি আনতে।
সেই ফাঁকে তুর্য এসে ঢুকে পড়লো মায়ার রুমে।

মায়া রুমে এসে দরজা বন্ধ করে গায়ে জড়ানো ওড়নাটা পাশের একটা চেয়ারের উপরে রাখলো,
তারপর বিছানার দিকে ঘুরতেই দেখতে পেল তূর্য তার বিছানায় শুয়ে আছে।
মায়া তূর্যকে জিজ্ঞেস করল,
-আপনি এখানে কেন?
-তোমার সাথে একটু দরকার ছিল তাই এলাম,
-কি দরকার?
-ভাবছিলাম তোমার সাথে কাল যেটা করা হয়নি আজ সেটা করবো।
-ছি ছি এসব কি বলছেন আপনি? মামনি,বাব….

তূর্যর কথা শুনে মায়া চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে শুরু করেছিল, কিন্তু তখনই তুর্জ মায়ার মুখ চেপে ধরে
নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
আর বলতে থাকে :-
-এরকম ছি মার্কা চিন্তাভাবনা নিয়ে রাত্রে ঘুমাও কিভাবে? আমি ওটার কথা বলিনি, আমি তোমাকে বলতে চেয়েছি কাল আমাদের গল্প করা হয়নি তাই আজ সারারাত আমরা দুজন গল্প করব।

-আপনার সাথে করার মত আমার কোন গল্পই নেই
বের হন আপনি এই রুম থেকে।

এতটা কাছাকাছি থাকার ফলে, মায়ের মনে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে, মায়ার ঠোঁট দুটো তরতর করে কাপছে।

তখনই হঠাৎ তুর্য মায়ার ঠোঁট জোড়া…..

চলবে।