অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-১৬+১৭

0
5

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব১৬

WhatsApp ওপেন করতেই মায়া দেখল, ইরার বধু বেশে থাকা এক ছবি এবং তার সাথে ছোট্ট একটি বার্তা:-
“কাল হঠাৎ করেই কিভাবে যেন বিয়েটা হয়ে গেল, পরিস্থিতির কারনে তোমাদের জানাতেও পারলাম না”।

মায়া যেন কোনোভাবেই ইরার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না।
মায়া ভাবতেই পারছে না কিছুদিন আগে পর্যন্ত যেই ইরা বিয়ে করবে না বলে বসেছিল, সেই ইরা কিভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে বিয়ে করে ফেলল?

মায়া ওই মুহূর্তেই ইরাকে কল করলো, কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই ইরা ওপাশ থেকে কল রিসিভ করল।

এরা কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে মায়া বলে উঠলো :-

-আপু তুমি কি আমার সাথে মজা করছো? (মায়া)

-মজা করতে যাব কেন? (ইরা)

-তাহলে কেন বলছো যে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে? (মায়া)

-বিয়েটা হয়ে গেছে তাই বলছি। (ইরা)

-সত্যি? (মায়া)

-হুম, সত্যি। কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? (ইরা)

-না। (মায়া)

-কি করলে বিশ্বাস হবে? (ইরা)

-ভাইয়ার পিক দাও, না না শুধু ভাইয়ার না,
তোমাদের কাপল পিক দাও। (মায়া)

-ওকে পাগলি, দিচ্ছি। (ইরা)

তখনই মায়ার ফোনে আবার একটা নোটিফিকেশন আসলো। মায়া ফোনটা কান থেকে সরিয়ে সামনে এনে দেখলো, সত্যি ইরা একটা কাপল পিক পাঠিয়েছে।

মায়া ছবিটিতে দেখল ইরা অফ-হোয়াইট কালারের জামদানি শাড়ি এবং তার সাথে ডায়মন্ডের জুয়েলারি পড়ে বধু বেশে সোফায় বসে আছে, তার পাশে বসে আছে ইরার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা শেরওয়ানি পরিহিত ১ সুদর্শন পুরুষ।
ইরা যে সত্যি বিয়ে করেছে, এবার মায়া তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো।

তাই মায়া আবারো ইরাকে জিজ্ঞেস করল :-

-ভাইয়া কি করে? উনার নাম কি? (মায়া)

-উনার নাম সাফোয়ান শেখ, ডাক নাম অগ্নি।
চট্টগ্রামের বর্তমান এমপি উনি। (ইরা)

ইরার কথা শুনে মায়া অবাক হয়ে বলে :-

-আপু তুমি তো দেখছি সেই একটা জিনিস।
বিয়ে করবো না, করবো না বলে সোজা গিয়ে সংসদ ভবনে ডাকাতি করে দিলে। (মায়া)

মায়ার মুখে বাচ্চাদের মত কথা শুনে ইরা হেসে ফেলল।
তখনই মায়া আবার প্রশ্ন করে উঠলো

-আচ্ছা আপু সত্যি করে বলতো এভাবে হঠাৎ তোমাদের বিয়েটা হলো কিভাবে? (মায়া)

-সে অনেক লম্বা ঘটনা, বলতে অনেক সময় লাগবে। (ইরা)

-আপু আমার কাছে অনেক সময় আছে তুমি বলো। (মায়া)

-মায়া আমি লন্ডনে ফিরে তোমাকে সব বলব, এখন এত কথা বলা যাবে না। (ইরা)

-Ok, এখন অন্তত আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। (মায়া)

-আবার কি প্রশ্ন? (ইরা)

-ফার্স্ট নাইট কেমন কাটলো?(মায়া)

-পাজি মেয়ে,
কানের নিচে দিব একটা।
পরে কথা হবে।,
এখন রাখছি আমি। (ইরা)

কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দেয় ইরা।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে মায়ের সাথে কথা বলছিল ইরা। সে এতক্ষণ মায়ার সাথে হেসে হেসে কথা বললেও এখন মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আপন মনে বলতে থাকে :-
ভাগ্য কেন কখনো আমার সহায় হয় না?
বাবা মাকে যখন খুব বেশি প্রয়োজন ছিল, তখনই তারা আমার থেকে দূরে চলে গেল।
প্রিয় মানুষটাকে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবেসেও পেলাম না।
আর সবশেষে যখন জীবনটা একা পার করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখনই পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করলো জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে।
আমার সাথেই কেন এমন হয়?

তারপর সে ভাবতে থাকে গত কয়েক দিনে তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার কথা।

——-★★★——

অতীত,

সাইদুল সেখ কিছুটা সুস্থ হওয়ায় ৩দিন আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
সেদিন ইরার মাও বাংলাদেশে আসে।

সাইদুল শেখকে কিছুটা সুস্থ দেখে গত পরশু ব্রেকফাস্ট করার সময় ডাইনিং টেবিলে বসে বাড়ির প্রতিটা সদস্যের উপস্থিতিতে ইরা তার বড় মামিকে বলে :-

-মামি তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। (ইরা)

-কি কথা? (শারমিন শেখ)

-কাল আমি লন্ডনে ব্যাক করব। (ইরা)

শারমিন শেখ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন :-

-কেন? (শারমিন শেখ)

-লন্ডনে আমার সব কিছু রয়েছে,
সেখানে তো আমাকে ফিরতেই হবে। (ইরা)

-না, তোমাকে আর লন্ডনে ফিরতে হবে না।
গত পাঁচ বছর যাবৎ তোমাকে দেশে ফিরতে বলছিলাম কিন্তু একবারের জন্য তুমি আমাদের কথা শোনোনি।
লন্ডনে গিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলে, তাই করতে দিয়েছি।
পড়াশোনা শেষ করার পরে দেশে না ফিরে ওখানে চাকরি নিয়ে বসলে, আমরা বারবার দেশে ফিরতে বলা সত্ত্বেও তুমি ফিরলে না।
কিন্তু এবার আর তোমাকে সে সুযোগ দেওয়া হবে না। (শারমিন শেখ)

-প্লিজ মামী, বোঝার চেষ্টা করো। (ইরা)

-আমি কোন কিছু বুঝতে বা শুনতে চাই না ইরা।
বাংলার মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি, সে জায়গায় তোমার ২৭ বছর বয়স।
লেখাপড়া চাকরি এসব অনেক হয়েছে, এবার একটু বিয়ে নিয়ে ভাবো।
আমরা তোমার সংসার দেখতে চাই। (শারমিন শেখ)

-sorry মামি, আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না। আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে আমি লন্ডনে ব্যাক করব। (ইরা)

ইরার কথা বলা শেষ হতেই অগ্নি শব্দ করে তার হাতে থাকা চামচটা প্লেটে রেখে দেয়, তারপর খাবার না খেয়েই চলে যায় সেখান থেকে।

ইরা সহ সবাই তাকিয়ে থাকে অগ্নির চলে যাওয়ার দিকে। কিন্তু কেউই বুঝতে পারে না অগ্নির হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণ।

—–

রাতে ইরা যখন তার লাগেজ গোছাচ্ছিল,
তখন শারমিন শেখ এসে ইরাকে বলল :-

-তোমার মামা ডেকেছে তোমাকে,
উনি তোমার সাথে কথা বলতে চায়।(শারমিন শেখ)

-ঠিক আছে মামি,
আমি আমি এই জিনিসগুলো লাগেজ-এ তুলে রেখেই আসছি। (ইরা)

শারমিন শেখ আর কিছু না বলেই চলে গেল।

—–

৫ মিনিট পরে ইরা গিয়ে উপস্থিত হলো সাইদুল শেখ এবং শারমিন শেখের রুমে।

সাইদুল শেখ তখন বিছানার ওপর আধসোয়া হয়ে বসেছিলেন।

সাইদুল শেখ ইরাকে আসতে দেখে খুব খুশি হলেন, তারপর সে ইরাকে তার পাশে বসতে বললেন।
ইরাও চুপচাপ তার মামার পাশে গিয়ে বসলো।
তারপর সাইদুল শেখ ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল :-

-মারে, তোকে কিছু কথা বলব (সাইদুল শেখ)

-হ্যাঁ, বলো না মামা (ইরা)

-মারে, জানিনা কি কারনে আল্লাহ তাআলা আমাকে কোন কন্যা সন্তান দেয়নি, তবে তোর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে আমি আর তোর মামি, তোকে নিজের সন্তানের মতই লালন পালন করার চেষ্টা করেছি।
জানিনা কতটুকু সম্ভব হয়েছে, তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তো সকল ইচ্ছে, সকল আবদার পূরণ করার। (সাইদুল শেখ)

-মামা তুমি এভাবে কেন বলছ?
আমি আমার জীবনে যা করেছি,
যতটুকু হয়েছি তার পেছনে তোমার অবদান সবচেয়ে বেশি। (ইরা)

-আমার সেই অবদানের বিনিময়ে যদি তোর থেকে কিছু চাই তাহলে কি তুই আমায় তা দিবি?
(সাইদুল শেখ)

ইরা তখন সাইদুল শেখের হাতের উপরে হাত রেখে, তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে:-

-কেন দেব না মামা?
তুমি একবার চেয়ে তো দেখো,
তোমার খুশির জন্য আমি আমার শেষ নিঃশ্বাসটাও তোমার নামে লিখে দিতে পারি। (ইরা)

-মারে, আমার শরীরের অবস্থা বেশি একটা ভালো না, জানিনা কখন খোদার ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমাতে হবে।
যদি বলি শেষ বেলায় শেষ ইচ্ছে হিসেবে আমি তোর আর অগ্নির বিয়ে দেখে যেতে চাই, তাহলে কি তুই রাখবি আমার কথাটা? (সাইদুল শেখ)

ইরা থমকে যায় তার মামার মুখে এমন কথা শুনে,
সে ভাবতেও পারেনি তার মামা এমন কিছু চেয়ে বসবে।
ইরা তখন সাইদুল শেখের হাতের উপরে রাখা হাতটা ধীরে ধীরে সরিয়ে নিতে থাকে।

ইরাকে হাত সরিয়ে নিতে দেখে সাইদুল শেখ বুঝতে পারে যে ইরা তার কথাটা রাখতে পারবে না,
তাই সে কান্না মাখা কন্ঠে বলল :-

-থাক, সমস্যা নেই। আমি হয়তো আমার সীমার বাইরে গিয়ে কিছু চেয়ে ফেলেছি। মানুষের জীবনের সব আশা তো আর পূরণ হয় না, শেষ বেলায় আমি না হয় এই আকক্ষেত্রের নিয়ে মরলাম। (সাইদুল শেখ)

ইরা জীবনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি সেই মামার মুখে এমন কথা শুনে ইরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না, সে তার মামার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল :-

-তুমি এভাবে বলোনা মামা, তোমার খুশির জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি। (ইরা)

ইরার মুখে এমন কথা শুনে সাইদুল শেখ হীরার দিকে তাকিয়ে বলল :-

-আমি চাই কালই তোমার আর অগ্নির বিয়ে দিতে। (সাইদুল শেখ)

ইরা কান্না করতে করতে বলল :-

-তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা কর, আমি রাজি আছি এই বিয়েতে। (ইরা)

তারপর কান্না করতে করতে সাইদুল শেখের রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইরা।
সাইদুল শেখের রুম থেকে নিজের রুমে যাওয়ার সময় ইরার দেখা হলো অগ্নির সাথে।

অগ্নি ইরাকে পাস কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল,
তখনই ইরা অগ্নিকে ডেকে বলে :-

-ভাইয়া আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। (ইরা)

-হুম, বল। (অগ্নি)

-এখানে বলা যাবে না, আমার রুমে চলুন। (ইরা)

-Ok (অগ্নি)

তারপর অগ্নি ইরার সাথে ইরার রুমের চলে গেল, রুমে ঢুকেই ইরা দরজা বন্ধ করে দিয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল :-

-ভাইয়া, মামা আপনার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছে। (ইরা)

-হুম, আমি জানি। (অগ্নি)

তারপর ইরা মাথা নিচু করে বলল :-

-মামা আমাকে এমন ভাবে কথাটা বলেছে যে আমি না করতে পারিনি।
আপনি প্লিজ মামাকে গিয়ে বলুন আপনি বিয়েটা করতে পারবেন না। (ইরা)

-আমার পক্ষে এসব বলা সম্ভব না। (অগ্নি)

-কেন ভাইয়া? আপনি তো চাইলেই পারেন এই বিয়েটা ভেঙে দিতে। প্লিজ আমাকে এটুকু সাহায্য করুন। (ইরা)

-ডক্টর বলেছে বাবা যেন কোন কারনে কষ্ট না পায়, বাবাকে সবসময় হাসিখুশি রাখতে,
এই মুহূর্তে বাবা কোন কষ্ট পেলে বাবাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে। আমি চাইনা আমার কারনে বাবার কোনো ক্ষতি হোক। (অগ্নি)

-কিন্তু আমি পারবো না ভাইয়া এই বিয়েটা করতে? (ইরা)

তূর্য তখন নরম স্বরে ইরাকে জিজ্ঞেস করল :

-কাউকে ভালোবাসিস?(অগ্নি)

ইরা মাথা তুলে অগ্নির দিকে তাকালো। তারপর অগ্নির চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল :-

-হুম (ইরা)

-তাহলে চল আমি আজকেই তার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দেবো। (অগ্নি)

-তা সম্ভব না ভাইয়া।
ভালো আমি তাকে বেসেছিলাম,
কিন্তু সে কখনো আমায় ভালোবাসেনি।
সে তো তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে সংসার করছে। (ইরা)

-তাহলে তোর বিয়ে করতে কি সমস্যা? (অগ্নি)

-আমি শুরু থেকেই জানতাম কখনো সে আমার হবে না, তবুও তার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
আমি নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি,
জীবনের ২৬-২৭ বছর তো পার করেই এলাম বাকি বসন্ত গুলো না হয় একাই কাটাবো। (ইরা)

-যখন তুই জানিস যে তুই ভুল ট্রেনে উঠে পড়েছিস,
তাহলে তোর উচিৎ সবচেয়ে কাছের স্টেশনে নেমে যাওয়া।
কারণ সফর যতটা লম্বা হবে ফিরে আসাটা হবে ঠিক ততটাই ব্যয়বহুল। (অগ্নি)

ইরা অগ্নির কথা শুনে কান্না করতে করতে বিছানায় বসে পড়লো।তারপর বলল :-

-পারছি না তো ফিরে আসতে,
সে অন্য কারো তবুও আমার মনে তারই অধিপত্য চলে
আর এদিকে মামা-মামি আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমি আর এগুলো নিতে পারছি না। (ইরা)

-তুই চাইলে আমি তোকে সাহায্য করতে পারি। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে ইরার কান্না থেমে গেল,
কান্না বন্ধ করে সে অগ্নিকে জিজ্ঞেস করল :-

-কিভাবে? (ইরা)

-তোকে বিয়ে করার মাধ্যমে। (অগ্নি)

-ভাইয়া কি বলছেন এসব?
আমি তো বিয়েটাই করতে চাইছি না। (ইরা)

-আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় শোন,
তুই যতদিন বিয়েটা না করবি ততদিন সবাই তোর পেছনে পড়ে থাকবে।
আর এই বিয়েটা না হলে বাবাও অনেক কষ্ট পাবে,
এই মুহূর্তে বাবাকে কোনো প্রকার স্ট্রেস দেওয়া ঠিক হবে না। তার চেয়ে ভালো তুই বিয়েটা করে নে,
তুই সবাইকে দেখাবি যে তুই নিজের ইচ্ছেই বিয়েটা করছিস।
বিয়ের পর পুরো দুনিয়া জানবে আমরা স্বামী-স্ত্রী, আমরা সুখী দম্পতি। কিন্তু চার দেয়ালের ভেতরে বদ্ধ ঘরে আমি কখনো তোর কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না। তারপর বাবা কিছুটা সুস্থ হলে তুই লন্ডনে ফিরে যাস, আমি তোকে বাধা দেব না। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে ইরাও এক পর্যায়ে গিয়ে রাজি হয়ে গেলে এই বিয়েতে।

ইরা বিয়েতে রাজি জেনে বাড়ির সবাই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দেয়, তারপর একদিনের মধ্যে ইরা এবং অগ্নির বিয়ে হয়ে যায়।

———★★★———

বর্তমান,

ইরা এতক্ষন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছিল গত দুই দিনে তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার কথা।

হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে এসে ইরার কোমড় জড়িয়ে ধরল, আকস্মিক ঘটনায় ইরা ভয় পেয়ে তড়িৎ গতিতে ঘুরে তাকালো।

ঘুরে তাকিয়ে ইরা দেখল তার পিছনে অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে।

অগ্নিকে দেখেই ইরার রাগী গলায় বলল :-

-এটা কি ধরনের অসভ্যতা? (ইরা)

-এখানে তুমি অসভ্যতার কি দেখলে? (অগ্নি)

-আপনি এভাবে আমাকে তুমি তুমি করছেন কেন? আর আপনি আমাকে টাচ করলেন কেন? (ইরা)

-বৌকে তুই-তোকারি করলে বিষয়টা খারাপ দেখায়। আর আমি তোমার হাজব্যান্ড, আমি তোমাকে টাচ করবো এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। (অগ্নি)

-না, এটা কোন স্বাভাবিক ব্যাপার না। (ইরা)

-কেন? (অগ্নি)

-আপনি জানেন না কেন?
ভাইয়া, আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
আপনি ভুলে গেছেন আপনার সাথে আমার কি কথা হয়েছিল? (ইরা)

-কি কথা হয়েছিল? (অগ্নি)

ইরা অবাক হয়ে বলে :-

-আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?
আপনি জানেন না আমাদের মাঝে কি কথা হয়েছিল?
আপনি আমাকে বলেছিলেন না? যে:-
“বিয়ের পর পুরো দুনিয়া জানবে আমরা স্বামী-স্ত্রী, আমরা সুখী দম্পতি। কিন্তু চার দেয়ালের ভেতরে বদ্ধ ঘরে আমি কখনো তোর কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না। তারপর বাবা কিছুটা সুস্থ হলে তুই লন্ডনে ফিরে যাস, আমি তোকে বাধা দেব না।”(ইরা)

অগ্নি ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল :-
-এ ধরনের কোন কিছু বলেছিলাম বুঝি?
হয়তো বলেছিলাম।
আসলে হয়েছে কি রাজনীতি করি তো, তাই নির্বাচনের আগে সাধারণ জনগণকে অনেক কথাই বলতে হয়, অনেক আশ্বাসও দিতে হয়। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে কয়টা কথা রাখি বলতো?
তোমার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে।
যা বলেছি তোমাকে বিয়ে করার জন্য বলেছি,
এখন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তাই ওসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে ইরা কান্না করতে করতে বলে :-
-আপনি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারেন না? (ইরা)

-আমি তোমাকে ঠকাইনি তো,
শুধু কয়েকটা মিথ্যা কথা বলেছিলাম।
নিজের পছন্দের মানুষেকে নিজের করে পাওার জন্য যদি দু-চারটা লাষও ফেলতে হতো তবুও সাফয়ান শেখ দ্বিতীয়বার ভাবতো না।
আর সেখানে দুটো মিথ্যা বলেছি তোমাকে,
এটা কেই তুমি এত বড় করে দেখছো?
আমি কি বলেছি না বলেছি সেসব ভুলে যাও,
আমাকে ভালবাসতে শুরু কর।
বিশ্বাস করো তোমাকে রানী করে রাখবো,
আমাকে একটা সুযোগ দাও নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য। (অগ্নি)

-ভাইয়া আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম,
আমি কখনোই বিয়েটা মানতে পারব না। (ইরা)

-তোমাকে মানতে হবে না।
আল্লাহর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।
আমাদের সম্পর্কটা যেহেতু পবিত্র, আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহ তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবে। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে ইরা থমকে যায়।
ইরা ভাবতেও পারেনি অগ্নি তাকে এভাবে ঠকাবে।

_____________

ওদিকে ইরার বিয়ের কথাটা তূর্যকে জানাবে বলে খুশিতে মায়া দৌড়ে কিচেন থেকে বের হতে নেয়, ঠিক তখনই কার্পেটে পা পিছলে পড়ে যায় মায়া।

তূর্য তখনও রুমে ঘুমাচ্ছিল, হঠাৎ মায়ার চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙ্গে তূর্যর।
ঘুম ভাঙতেই তূর্য দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মায়ার কি হয়েছে তা দেখার জন্য।

তুর্য দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে মায়া মেঝেতে শুয়ে পেট ধরে ছটফট করছে।

মায়াকে এই অবস্থায় দেখে তূর্য ভয় পেয়ে যায়,
দৌড়ে মায়ার কাছে যেতেই সে খেয়াল করল যে মায়ার প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।

তূর্য মায়ার এমন হঠাৎ করে ব্লিডিং হওয়ার কারণ বুঝতে পারে না। তবে…..

চলবে…..

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব১৭

তুর্য দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে মায়া মেঝেতে শুয়ে পেট ধরে ছটফট করছে।

মায়াকে এই অবস্থায় দেখে তূর্য ভয় পেয়ে যায়,
দৌড়ে মায়ার কাছে যেতেই সে খেয়াল করল যে মায়ার প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।

তূর্য মায়ার এমন হঠাৎ করে ব্লিডিং হওয়ার কারণ বুঝতে পারে না।
তবে তূর্য মায়াকে দেখে এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারে যে, সময় নষ্ট না করে এই মুহূর্তে মায়াকে হসপিটাল নিতে হবে।

ওই মুহূর্তেই তূর্য মায়াকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

_________________

প্রায় এক ঘন্টা যাবত তূর্য হসপিটালের করিডরে বসে আছে। তূর্যকে বড়ই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।

প্রায় এক ঘন্টা আগে মায়াকে ইমারজেন্সিতে ভর্তি করা হয়েছে।
অপেক্ষার প্রহর যেন কিছুতেই ফুরায় না,
এই একটা ঘন্টাকে তূর্যর কাছে এক বছর সমান মনে হচ্ছে।
তখনই হসপিটালে উপস্থিত হয় ইমন।
তুর্য হসপিটালে পৌঁছানোর পরে ইমনকে কল করে সব জানিয়ে দিয়েছিল।

তূর্য এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে,
মায়ার এমন অবস্থা দেখে সে যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে।

ইমন কোনরকমে তূর্যকে সামলানোর চেষ্টা করছিল তখনই ইমারজেন্সি রুম থেকে মায়ার চিকিৎসারত ডক্টর বেরিয়ে আসলো।
ডক্টর কে বেরোতে দেখেই তূর্য এবং ইমন দুজনেই এগিয়ে গেল ডক্টরের কাছে, তারপর তূর্য ডক্টর কে জিজ্ঞেস করল :-

-ডক্টর, আমার ওয়াইফ কেমন আছে? (তূর্য)

-উনি এখন বিপদ মুক্ত। তবে… (ডক্টর)

-কি হয়েছে বলুন? (তূর্য)

-তবে আমরা ওনার গর্ভে থাকা ভ্রুনটাকে সেভ করতে পারিনি। (ডক্টর)

ডক্টর মুখে এই কথাটুকু শুনেই তুর্যর বুকের ভিতরে নাম না জানা এক কষ্টের ঝড় বয়ে গেল। তূর্য কোন রকমের ডক্টর কে জিজ্ঞেস করল :-

-আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট ছিল? (তূর্য)

-হ্যাঁ, আপনারা জানতেন না?
ওনার প্রেগনেন্সির 7 week চলছিল।
আমরা ধারণা করছি হয়তো পেটে কোন ভারী আঘাত পাওয়ার কারণে ওনার মিস ক্যারেজ হয়েছে। (ডক্টর)

ডক্টরের কথা শুনে তূর্য যেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলল।
ইমন কোন রকমের তূর্যকে ধরে বসিয়ে দিলো পাশের একটা ব্রেঞ্চে।

তূর্যর কাছে আজকে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে।

যারা বলে পুরুষ মানুষ কখনো কান্না করে না,
তারা হয়তো কখনো তূর্যর মত অসহায় পুরুষকে দেখেনি।
সন্তান হারানোর বেদনায় তূর্যর মত স্ট্রং পার্সোনালিটি-সম্পূর্ণ পুরুষও আজ কাঁদলো।

তিন মাস আগে তন্বী এবং নীরব লন্ডনে এসেছিল,
তারপর থেকেই মায়া এবং তূর্য খুবই সুন্দর এবং স্বাভাবিক একটা দাম্পত্য জীবন পার করছিল।

যদিও মায়ার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটাতে চায়না বলে তূর্য এখনও বাচ্চার বিষয় নিয়ে ভাবেনি।
তবুও তূর্য কোন ভাবেই মানতে পারছে না যে, এভাবে তাদের অজান্তেই তাদের ভালোবাসার চিহ্ন তাদের মাঝে আসলো, আবার বাবা-মা তার অস্তিত্ব বুঝে ওঠার আগেই সে চলেও গেল।

ডক্টর তূর্যকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে বলল :-
-মিস্টার তূর্য, প্লিজ আপনি এভাবে ভেঙে পড়বেন না।
এটা শুধু একটা ভ্রুন ছিল, এর চেয়ে বেশি কিছু না। (ডক্টর)

ডক্টরের কথা শুনে তুর্য রেগে গিয়ে ডক্টরের কলার ধরে বলে :-

-ওটা শুধু একটা ভ্রুণ ছিল না,
ওটা আমার ভালোবাসার প্রথম চিহ্ন ছিল।
আমার সন্তান ছিল ওটা। (তূর্য)

ইমন কোনরকমে তূর্যকে সরিয়ে এনে, ডক্টর কে Sorry বলে তুর্যর এমন ব্যবহারের জন্য।

২ ঘন্টা পরে মায়ার জ্ঞান ফিরে এলো।

মায়ার জ্ঞান ফেরার খবর শুনে তূর্য এবং ইমন দুইজনেই মায়ার কাছে চলে গেল।

তূর্যকে আসতে দেখেই মায়া তার দুর্বল শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে তূর্য কে জিজ্ঞেস করলো :-

-কি হয়েছে? আপনাকে এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন? আর আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন কেন?
আমি তো ড্রয়িং রুমে একটু পড়ে গিয়ে পেটে ব্যথা পেয়েছিলাম, কিছুক্ষণ পর হয়তো ব্যথাটা কমে যেত।
না হয় দুটো পেইন কিলার খেয়ে নিতাম, এই সামান্য বিষয়ের জন্য কেউ হসপিটালে নিয়ে আসে? (মায়া)

মায়ার কথা শুনে তুর্য বুঝতে পারে যে মায়া নিজেও তার প্রেগনেন্সির ব্যাপারে কিছুই জানতো না।

তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় মায়াকে এ ব্যাপারে কিছুই জানাবে না।

___________________

বাংলাদেশে রাত ১১টা,
অগ্নি তখনো রুমের দরজা খুলে বসে আছে ইরা আসবে বলে।
কিন্তু ইরা ডিনার শেষে চলে গেছে নিজের সেই আগের রুমে।
অনেক রাত হয়ে গেলেও ইরা রুমে না আসায় অগ্নি বিছানা থেকে উঠে রওনা হলো ইরার রুমের দিকে,
অগ্নি ইরার রুমের সামনে গিয়ে দেখল রুম ভেতর থেকে লক করা রয়েছে।
অগ্নি দরজায় জোরে জোরে নক করতে থাকলো, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া গেল না।
এক পর্যায়ে গিয়ে অগ্নি ইরাকে ডাকতে শুরু করল, কিন্তু তখনও ইরা কোনো জবাব দিলো না।

তখনই অগ্নি দরজার বাইরে দারিয়ে বলতে থাকলো:-

-ইরা, দরজা খোলো। আমি জানি তুমি ঘুমাওনি। (অগ্নি)

ওদিকে সত্যিই ইরা ঘুমায়নি, সে এখনো জেগে আছে। তবে সে অগ্নির ডাকে সাড়া দেবে না।
অগ্নি তার সাথে যে বিশ্বাস ঘাতকতাটা করেছে এর পড়ে ইরা আর পারবেনা অগ্নিকে নতুন করে বিশ্বাস করতে।
তাই সে চুপ করে আছে, যাতে সে ঘুমিয়ে গেছে ভেবে অগ্নি চলে যায়।

তখনই দরজার ওপাশ থেকে গলায় বলল:-
-কাজটা তুমি ভালো করলে না ইরাবতী,
এর ফল খুব খারাপ হবে।
এখন আমি চলে যাচ্ছি,
তবে খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিয়ে যাব আমার কাছে।
ইটস মাই চ্যালেঞ্জ। (অগ্নি)

কথাগুলো বলে অগ্নি চলে গেল নিজের রুমে।

ইরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের ফোনটা হাতে নিল।
ইরা ফেসবুকে কিছু রিলস ভিডিও দেখছিল তখনই ইমনের কল আসলো, ইরা কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বললো :-

-কিরে নতুন সংসার কেমন চলছে? (ইমন)

-ভালো, কেমন আছিস তুই? (ইরা)

-এইতো আছি কোনরকম। (ইমন)

-কি করিস? (ইরা)

-এইতো হসপিটাল থেকে বের হচ্ছি,
এখন আবার অফিসে যাব।
তুর্যতো ২-১ দিন অফিসে সময় দিতে পারবে না,
তাই অফিসটা আমারই সামলাতে হবে। (ইমন)

ইমনের কথা শুনে ইরা ভাবলো তূর্যর হয়তো কিছু হয়েছে, তাই সে উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করল :-

-তুই হসপিটালে কেন?
তূর্য কি হয়েছে?(ইরা)

-তূর্য কিছু হয়নি, মায়া অসুস্থ।
তাই আমি মায়াকে দেখতে হসপিটালে এসেছিলাম।(ইমন)

-কি বলছিস এসব?
আমি তো দুপুরের দিকেও মায়ের সাথে কথা বলেছি।
তখন ওখানে হয়তো সকাল ছিল। (ইরা)

-হ্যাঁ, হয়তো তোর সাথে কথা বলার পরেই ঘটনাটা ঘটেছিল। (ইমন)

-কি ঘটনা?
তুই আমাকে ক্লিয়ার করে বলবি মায়ের কি হয়েছে? (ইরা)

-সকালে মায়া নাকি ড্রয়িং রুমে পড়ে গিয়েছিল,
তখন মায়ার অবস্থা খারাপ দেখে তূর্য মায়াকে হসপিটালে নিয়ে আসে।
তার কিছুক্ষণ পরে আমিও হসপিটালে চলে আসি।
তারপর ডক্টর থেকে জানতে পারি মায়া প্রেগন্যান্ট ছিল। কিন্তু ওরা কি আমি বিষয়টা বুঝতে পারিনি।
আর মায়া পেটে গুরুতর আঘাত পাওয়ার ফলে মায়া মিস ক্যারেজ হয়েছে। (ইমন)

ইমনের কথ শুনে ইরা আৎকে উঠলো, ইরা ভাবতেই পারছে না যে এইটুকু সময়ের মধ্যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে।
ইরা মায়াকে ছোট বোনের মত ভালোবাসে,
তাই মায়ার সাথে এরকম ঘটনা ঘটেছে শুনে ইরার বুকের ভিতর দুমড়ে-মুছে যেতে থাকে।

ইরা বেশি কথা না বাড়িয়ে, ইমনের থেকে বিদায় নিয়ে কলটা কেটে দেয়।

তখনই ইরার দরজায় আবার কেউ নক করল।

ইরা ভাবল হয়তো আবারো অগ্নি এসেছে,
তাই সে কোন সারা শব্দ করল না।
কিন্তু তখনই দরজার ওপাশ থেকে শুভ্র ইরাকে ডেকে বলল :-

-ইরা দরজা খোলো, (শুভ্র)

-কিছু বলবে ভাইয়া? (ইরা)

-হ্যাঁ, বাবা তোমাকে ডাকছে।
তোমাকে এক্ষুনি একবার বাবার রুমে যেতে বলেছে। তোমার সাথে নাকি বাবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। (শুভ্র)

এত রাতে সাইদুল শেখ ইরাকে ডাকছে শুনে ইরা কিছুটা অবাক হলো, তাই শুভ্র কে জিজ্ঞেস করল :-

-এত রাতে মামা আমাকে ডাকছে? (ইরা)

-হ্যাঁ। (শুভ্র)

-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি। (ইরা)

ইরা আসবে শুনে শুভ্র চলে গেল সেখান থেকে,
শুভ্র চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইরা বেরিয়ে আসলো রুম থেকে।

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল অগ্নি,
ইরা রুম থেকে বেরোতে অগ্নি এক হাত দিয়ে ধরে ইরাকে কাঁধের উপর ফেলে নিয়ে চলে গেল নিজের রুমের দিকে।
ইরা অনেকক্ষণ ছোটাছুটি করলো কিন্তু অগ্নির মতো বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী পুরুষ মানুষের সঙ্গে পেড়ে ওঠা সম্ভব হলো না।

অগ্নি ইরাকে নিজের বিছানার উপরে ফেলে ইরার একদম কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে :-

-দরজা খুলতে বলেছিলাম না?
খুলিস নাই কেন?
আমাকে পাগল পাইছিস?
আমাকে তোর পাগল মনে হয়?
দশ বছর আগেই তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার হিটলার বাপের জন্য করতে পারিনি,
সে তোকে পাঠিয়ে দিল লন্ডনে তোর স্বপ্ন পূরণ করতে।
আর আমাকে বলল, পাঁচ বছর পরে তুই পড়াশোনা শেষ করে দেশে আসলে তখন তোর সাথে আমার বিয়ে দিবে। আর লন্ডনে গিয়ে তুই মোজে গেলি অন্য পুরুষে।
তখনও আমি আমার হিটলার বাপকে সবকিছু জানিয়েছিলাম। আমি লন্ডনে গিয়ে তোকে তুলে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও আমার বাবা বাধা দেয়, সে আমাকে কসম দেয় আমি যেন কখনো তোর ভালোবাসার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়াই।
কারণ আমার বাবা চায় না তার ভাগ্নি সারা জীবন ভাবুক যে:- তার মাথার ওপর বাবা-মায়ের ছায়া ছিল না বলে তার মামা তার সাথে জুলুম করেছে।
জানিস সেই থেকে পাঁচটা বছর আমি আমার বাবার সাথে কথা বলিনি পর্যন্ত। (অগ্নি)

অগ্নির মুখে এসব কথা শুনে ইরা নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। কারণ সে এসবের কোন কিছুই জানতো না।

হঠাৎ অগ্নি ইরার গাল চেপে ধরে বলে :-

-এই ভালো করে আমার দিকে তাকাতো, ভালো করে আমার দিকে তাকিয়ে দেখ কি নেই আমার মধ্যে যা ওর মধ্যে আছে।
তুই কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছিস?
যে তোকে ভালবাসে না তার পিছনে হাত ধুয়ে পড়েছিলিস আর এদিকে আমি যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসি সেটা কখনো বোঝারই চেষ্টা করিস নি। তোর কি মনে হয় আমার বাবা-মা এমনি এমনি তোকে বিয়ের জন্য এত চাপ দিয়েছে?
না, আমার বাবার এই অবস্থার মধ্যেও আমি তাকে সুইসাইডের হুমকি দিয়ে আমার সাথে তোকে বিয়ে দিতে বাধ্য করেছি। (অগ্নি)

ইরা তখন অগ্নিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়, তারপর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে :-

-আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে আপনি এত নিচে নামতে পারেন। (ইরা)

-নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি।
আর তুই কি চাস বলতো,
তুই নিজের ভালোবাসা পাসনি বলে আমাকেও পেতে দিবি না?
আচ্ছা যা এটাও মেনে নিলাম, ভালবাসতে হবে না আমাকে।
তুইও নিজের ভালোবাসা পাসনি
আমিও আমার ভালোবাসা পেলাম না,
দুটি ভাঙা হৃদয়তো এক হতেই পারে।
ভালবাসতে না পারিস আমার সাথে বাকিটা জীবন মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর। (অগ্নি)

কথাগুলো বলার সময় অগ্নির চোখ দুটো পানিতে টলমল করছিল।

ইরা আজ তাকালো অগ্নির চোখের দিকে,
ইরা হয়তো বুঝলো ইরার প্রতি অগ্নির ভালোবাসায় কোন খুঁত নেই।

তাই ইরা অগ্নির গালে হাত রেখে বলল :-

-নেতা সাহেব, জনগণ যদি জানে তাদের এমপি বউয়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বাচ্চাদের মত কান্না করে,
তাহলে কি আপনার মান-সম্মান থাকবে? (ইরা)

অগ্নি ইরার হাতের উপর হাত রেখে বলল :-

-ভালোবাসা চাই না তো,
শুধু চাই বাকিটা জীবন আমার পাশে থেকে যা।
প্লিজ ছেড়ে যাস না আমাকে। (অগ্নি)

ইরা অগ্নির চোখের পানি মুছে দিয় বলল :-

-কথা দিলাম ছেড়ে যাবো না,
পাশে থাকব সারা জীবন।
জানিনা কখনো ভালবাসতে পারব কিনা,
তবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব আজীবন। (ইরা)

ইরার মুখে এমন কথা শুনে, অগ্নি যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল।

ইরার গালে হাত রেখে অসংখ্য চুমু খেলে ইরার সারা মুখে। তারপর যত্ন সহকারে ইরাকে বিছানার একপাশে শুয়ে দিল, এবং অন্য পাশে নিজে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

চলবে…..