অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-২০+২১

0
7

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব২০

অভ্র একটি মিষ্টির প্যাকেট থেকে মিষ্টি বের করে অগ্নির মুখে ঢুকিয়ে দেয়।

অগ্নি মিষ্টি খেতে খেতে অভ্রকে জিজ্ঞেস করে :-

-কি হয়েছে রে?
হঠাৎ মিষ্টি কেন? (অগ্নি)

সকলের মাঝে দাঁড়িয়ে অভ্র নির্দ্বিধায় বলে ওঠে :-

-তুমি বাবা হতে চলেছ তাই সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে। (অভ্র)

অভ্র মুখে এমন কথা শুনে অগ্নি বীষম খেলো,
সেই সাথে মিষ্টিটা অগ্নির গলায় আটকে গেল।
কাশতে কাশতে অগ্নির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল।
অগ্নির এমন অবস্থা দেখে অভ্র সহ সেখানে উপস্থিত সকলে অগ্নির দিকে এগিয়ে আসলো।
অভ্র এক হাতে অগ্নির দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে, অন্য হাত দিয়ে অগ্নির পিঠে হাত বুলাতে থাকলো।

অগ্নি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই, অভ্র অগ্নি কে জিজ্ঞেস করল :-

-কি হলো ভাইয়া?
সবাই বাবা হওয়ার খবর শুনলে খুশিতে পাগল হয়ে যায়, আর তুমি বাবা হওয়ার খবর শুনে বিষম খেয়ে মরতে নিয়েছিলে।
হায়রে কপাল। (অভ্র)

অগ্নিঅব্রকে চোখ রাঙানি দেখিয়ে, মিটিংরুমে থাকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে :

-আপনারা সবাই এবার যেতে পারেন। (অগ্নি)

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অগ্নি রেগে গিয়ে অভ্র কলার ধরে বলে :-

-তুই কি আবোল-তাবোল বলছিস এসব?
এগুলো কি ধরনের মজা?
ভুলে যাস না আমি একজন এমপি,
তুই আমার মান-সম্মান এভাবে ডুবালি? (অগ্নি)

অভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল :-

-এখানে মান সম্মান ডোবার মতো কি হলো?
আর তুমি একজন এমপি বলে কি হয়েছে?
তুমি কি পুরুষ না?
কোন আইনে লেখা আছে যে এমপিরা বাবা হতে পারবে না?
বাবাও তো এমপি ছিল, পাশাপাশি তিন সন্তানের জনকও হয়েছে, কই বাবার তো মান সম্মান ডোবেনি।(অভ্র)

-সেটা অন্য ব্যাপার ছিল,
আর মাত্র তিন মাস হলো আমি বিয়ে করেছি,
এর মাঝে আমি কখনো….. (অগ্নি)

অগ্নি কে বাকি কথা শেষ করতে না দিয়ে, অভ্র অগ্নি সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে করতে বলল:-

-কংগ্রাচুলেশন, ভাইয়া তোমার সিস্টেম অনেক স্ট্রং।
তাইতো বিয়ে তিন মাসের মাথায় তুমি আমাদের সুখবর দিয়ে দিলে। (অভ্র)

অগ্নির রাগে নিজের মাথার চুল টানতে টানতে বলল :-

-আরে পাগল আমার বিষয়টা তুই বুঝতে পারছিস না,
এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বাবা হওয়া সম্ভব না। (অগ্নি)

অগ্নির মুখে এমন কথা শুনে অভ্র সন্দেহজনক দৃষ্টিতে অগ্নির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল :-

-তোমার কি নিজের পুরুষত্বের উপরে সন্দেহ আছে? (অভ্র)

ছোট ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অগ্নি তড়িঘড়ি করে বলল :-

-ছি, ছি, কি বলছিস এগুলো?
এমন কিছু না। (অগ্নি)

-তো? (অভ্র)

অগ্নি এবার রেগে গিয়ে বলেই ফেলে :-

-একটা বেবিকে পৃথিবীতে আনার জন্য যে প্রসেসিং গুলো প্রয়োজন, আমি তার একটাও এখনো শুরুই করিনি। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে অভ্র চিৎকার করে বলে ওঠে :-

-কি? (অভ্র)

-হুম। (অগ্নি)

-এসব কথা বোলোনা ভাইয়া,
তুমি বাবা হবে বলে সেই খুশিতে আমরা পার্টি অফিস সহ আমাদের পুরো এলাকায় অলরেডি ১৭ মন মিষ্টি বিতরণ করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে তুমি বাবা হতে চলেছ। (অভ্র)

অভ্র কথা শুনে অগ্নি যেন আকাশ থেকে পড়ল।
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল :-

-এসব কি করেছিস তুই? (অগ্নি)

অভ্র কাচুমাচু মুখ করে উত্তর দিল :-

-বাবা আমাকে আর শুভ্রকে এই দায়িত্ব দিয়েছিল। (অভ্র)

অগ্নি কোনরকম নিজেকে শান্ত করে বলল :-

-আচ্ছা তোদের সবার হঠাৎ কেন মনে হল যে আমি বাবা হতে চলেছি? (অগ্নি)

-ইরা একটু পর পর বমি করছিল, এবং বমির একপর্যায়ে গিয়ে ইরা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।
তখন আম্মু আর মালেকা খালা বলল ইরা নাকি প্রেগন্যান্ট।
আর বাবা সেটা শুনে আমাকে আর শুভ্র কে সারা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করতে পাঠালো। (অভ্র)

ইরার অসুস্থতার কথা শুনেই অগ্নি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়ল সেখান থেকে।
অগ্নিকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে দেখে, অভ্রও অগ্নির পিছু পিছু বাড়ির দিকে রওনা হলো।

যাওয়ার পথে অগ্নি একটি ফার্মেসির সামনে গাড়ি থামিয়ে কিছু মেডিসিন কিনে নিলো।

বাড়ি ফিরে অগ্নি সোজা চলে গেল ইরার কাছে।
অগ্নি নিজের রুমে ঢুকতেই দেখল ইরার নিষ্পাপ মুখখানা।
দুর্বল শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে খুব আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে সে।

ইরার পাশে বসে অগ্নি আস্তে করে ইরাকে ডাকতে শুরু করল। স্বাভাবিকভাবেই দুই তিনটা ডাক দেওয়ার পরে ঘুম ভেঙ্গে গেল।

হীরা চোখ মেলে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্নি বলল :-

-এখন কেমন লাগছে? (অগ্নি)

ইরা নিজের দুর্বল শরীর নিয়ে কোনরকমে বলল:-

-এখন একটু ভালো লাগছে,
অনেকদিন পর স্ট্রেট ফুড খেয়েছি তো তাই ফুড পয়জনিং হয়েছিল।
আমার হয়তো অতগুলো ফুচকা খাওয়া উচিত হয়নি। (ইরা)

-আমি বারেবারে নিষেধ করেছিলাম তোমাকে,
কিন্তু তুমি আমার কথা শোনোনি।
এখন তোমার ফুচকা খাওয়ার চক্করে আমার মান সম্মান নিলামে উঠে গেছে। (অগ্নি)

অগ্নির কথার মানে বুঝতে না পেরে,
ইরা কপাল কুঁচকে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলল :-

-কি বলছেন এসব?
আমার ফুচকা খাওয়ার কারণে আপনার মান সম্মান নিলামে উঠল কিভাবে? (ইরা)

-তোমার ঘন ঘন বমি করা এবং মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া দেখে বাড়ির সবাই ভেবেছে তুমি প্রেগন্যান্ট।
ভেবে দেখো তো,
ভাগ্য কতটা খারাপ হলে একটা ভার্জিন ছেলেকে সবাই মিলে এভাবে বাচ্চার বাপ বানিয়ে দেয়। (অগ্নি)

অগ্নির কথা কানে আসতেই ইরার চোখ কপালে উঠে গেল।
ইরা চমকে উঠে বলল :-

কি?
আপনি কি সত্যি বলছেন? (ইরা)

-তোমাকে মিথ্যা বলে আমার লাভ কি? (অগ্নি)

-তাহলে চলুন আমরা নিচে গিয়ে সবাইকে সত্যিটা বলি। (ইরা)

-কি বলবে? (অগ্নি)

-নিচে গিয়ে সবাইকে বলব যে আমি প্রেগন্যান্ট নই। (ইরা)

অগ্নি এক পাশের ভ্রু উঁচিয়ে ইরাকে জিজ্ঞেস করল :-

-কাকে কাকে বলবে? (অগ্নি)

-বোকার মত প্রশ্ন করছেন কেন?
মামিকে বলবো। (ইরা)

-শুধু তোমার মামিকে বলে কি করবে?
তার চেয়ে বরং একটা মাইক ভাড়া করে পুরো এলাকায় জানিয়ে এসো। কারণ সুখবরের মিষ্টি তো এলাকার লোকজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পার্টি অফিসের সকলেই খেয়েছে। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে ইরা ধুপ করে বিছানায় বসে পড়ে।
তারপর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে :-

-এতকিছু কখন হয়ে গেল? (ইরা)

-গত দুই ঘন্টায়। (অগ্নি)

ইরা ভাবতেই পারছে না যে তাকে নিয়ে এত কিছু হয়ে গেল।
অথচ একই বাড়িতে থেকেও সে এসবের কিছুই জানলো না।

সব শুনে ইরা মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল, তখনই আগমন ঘটে শারমিন শেখের।
শারমিন শেখের পিছু পিছু অগ্নির ঘরে ঢুকলো অভ্র।
অভ্র এসে মায়ের পিছনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শারমিন শেখ তখন ইরার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করল :-

-কিরে মা, এখন কেমন লাগছে তোর? (শারমিন শেখ)

এরা একটু ইতস্ত হয়ে বলল :-

-ভালো। (ইরা)

শারমিন শেখ মুচকি হেসে হাতে থাকা বক্সের ভেতর থেকে একজোড়া স্বর্ণের বালা বের করে ইরার হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বলল :-

-এটা তোর নানীর বালা।
অগ্নি যখন আমার গর্ভে ছিল তখন তোর নানি খুশি হয়ে আমাকে দিয়েছিলেন।
আজ থেকে এই বালা জোড়া তোর,
তুই আমাদেরকে এত বড় একটা খুশির খবর দিলি তাই তোর জন্য এই ছোট্ট উপহার। (শারমিন শেখ)

ইরা তখন আমতা আমতা করে বলল :-

-মামী আমি এগুলো নিতে পারব না,
তুমি এগুলো তোমার কাছেই রেখে দাও।(ইরা)

-সে কি কথা?
এগুলো আমার কাছে থাকবে কেন?
এগুলো আজ থেকে তোর,
তুই নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখ। (শারমিন শেখ)

-না মামি আমি এগুলো রাখতে পারব না। (ইরা)

অগ্নি তখন পাশ থেকে বলে উঠলো :-

-হ্যাঁ মা, ইরা ঠিকই বলছে।
বালা জোড়া এখন তোমার কাছেই থাক।
সময় হলে ওকে দিয়ে দিও। (অগ্নি)

শারমিন শেখ ছেলে-মেয়েদের কথা বুঝতে না পেরে বলে :-

-তোরা কি বলছিস?
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। (শারমিন শেখ)

-মামী তোমরা ভুল ভেবেছো।
আমি প্রেগন্যান্ট নই। (ইরা)

শারমিন শেখ ইরার কথা শুনে স্থির হয়ে যায়।
গত দুই ঘন্টায় দেখা অনেক স্বপ্ন যেন এই একটা কথায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
তবুও শারমিন শেখ নিজেকে কিছুটা সংযত করে ইরার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল :-

-তাহলে তখন ওভাবে বমি করলি কেন?
আর মাথা ঘুরে পড়েই বা গেলি কেন? (শারমিন শেখ)

পাশ থেকে তখন ইরার হয়ে অগ্নি উত্তর দিলো:-

-আসলে সকালে যখন আমি ওকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম তখন ও রাস্তার পাশের একটা দোকানে দাঁড়িয়ে কয়েক প্লেট ফুচকা এবং চটপটি খেয়েছিল।
যার ফলস্বরূপ ওর ফুট পয়জনিং হয়েছিল। (অগ্নি)

অগ্নির কথা শুনে শারমিন শেখ নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। এবং সে অগ্নিকে বলল :-

-আসলে ভুলটা আমারই হয়েছিল,
মালেকা আপার কথা শুনে আমিও বোকার মতো ভেবে নিয়েছিলাম যে সত্যি হয়তো ইরা প্রেগন্যান্ট।
(শারমিন শেখ)

শারমিন শেখের কথা শেষ হতেই অভ্র বলে ওঠে :-

-তোমার মালেকা আপার চক্করে আমরা দুই ভাই নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে অলরেডি ১৭ মন মিষ্টি বিতরণ করে ফেলেছি। (অভ্র)

শারমিন শেখ তার ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল:-

-এভাবে বলতে হয় না বাবা,
মানুষকে খাওয়ালে কমেনা। (শারমিন শেখ)

ইতোমধ্যে ইরা হাতের বালা দুটো খুলে শারমিন শেখের দিকে এগিয়ে দিলে, শারমিন শেখ বালা দুটো না নিয়ে ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে :-

-সমস্যা নেই বালা দুটো তোর কাছেই থাক।
আজ না হয় কাল এটা তো তুইই পাবি। (শারমিন শেখ)

তাদের কথার মাঝেই অভ্র কল করলো শুভ্রকে, ওপাশ থেকে শুভ্র কল রিসিভ করতেই অভ্র বলল :-

-ভাই লোকজনকে মিষ্টি খাওয়ানো বাদ দে,
ইরা আসলে প্রেগন্যান্ট না। (অভ্র)

ফোনের ওপাশ থেকে এসব শুনে শুভ্র অবাক হয়ে বলল :-

-কি বলছিস এসব?
তখন না দেখলাম ইরা বমি করছে। (শুভ্র)

-এ কোন সাধারণ বমি নয়লা, এ হল ফুড পয়জনিং এর বমি। (অভ্র)

চলবে…

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব২১

[১৮+]

সেদিনের সেই মিষ্টি বিতরণের ৫ দিন পরেই সবাই মিলে ঠিক করল যে অগ্নি এবং ইরার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাটা এবার সেরেই ফেলবে।

আনুষ্ঠানিক বিয়ের বিষয়ে ইরাও অমত করেনি,
তাই ইরা এবং অগ্নির মতামত নিয়ে পরিবারের সবাই মিলে ওদের আনুষ্ঠানিক বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলে।

_________________

ইরার বিয়ের আর মাত্র সাতদিন বাকি।

ইরা চায় যে তারা সবাই মিলে
ইরার অনেক জোরাজুরির ফলে তূর্য, মায়া এবং ইমন আজ দেশে ফিরছে।

তূর্য কাজের চাপ সামলে অনেক কষ্টে দশ দিনের সময় বের করে বাংলাদেশে এসেছে।

তূর্য এবং মায়া যে বাংলাদেশে আসছে এটা এখনো খান বাড়ির কেউই জানে না।

তুর্য খান বাড়ির সদর দরজায় দারিয়ে দুই বার কলিং বেল বাজালো, তৃতীয় বারের মত কলিংবেলে হাত রাখতেই যাবে ঠিক তখনই সদর দরজা খুলে দিলো আতিয়া বেগম।

আতিয়া বেগম সদর দরজা খুলে দিতেই তুর্য, মায়া এবং ইমন তিনজন মিলে চিৎকার করে বলে উঠলো :-

-সারপ্রাইজ (তুর্য, মায়া, ইমন)

আতিয়া বেগমের পুরো বিষয়টা বুঝে উঠতে একটু সময় লাগলো।

আতিয়া বেগম যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে ভাবতেই পারছে না যে তার কলিজার টুকরাগুলো এভাবে তাকে না জানিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে।

আতিয়ার বেগম ছেলে-মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।

আতিয়া বেগমের কান্না দেখে মায়াও সমান তালে কেঁদে চলেছে।

কিছুক্ষণ পরে আতিয়া বেগম নিজেকে কিছুটা সামলে তূর্য মায়া এবং ইরাকে বলল ফ্রেশ হয়ে আসতে।

আতিয়া বেগমের কথা অনুযায়ী মায়া এবং তূর্য চলে যায় তূর্যর রুমে।

আর ইমন চলে যায় তুর্যর পাশের রুমে।

আরাফ খান ২দিন আগে ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে গেছে, সে থাকলে ওদেরকে এভাবে হঠাৎ করে আসতে দেখে অনেক খুশি হতো।

পুরো এক ঘণ্টা পরে সবাই ফ্রেশ হয়ে আবারো ড্রয়িংরুমে চলে আসে।

আতিয়া বেগম এতক্ষণ কাজের লোকদের সাহায্য নিয়ে কিছু রান্না-বান্না করে রেখেছে।

খাবার তৈরি থাকার ফলে আতিয়া বেগম সময় নষ্ট না করে ওদেরকে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলল।
তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া শুরু করল এবং খেতে-খেতে তারা অনেক কথা বলল।

কথা বলার এক পর্যায়ে আতিয়া বেগম জিজ্ঞেস করল:

-কিরে তোরা যে বাংলাদেশে আসছিস তা একবারও জানালি না কেন? (আতিয়া বেগম)

মায়ের কথার উত্তরে তূর্য বলল :-

-বললে কি সেটা সারপ্রাইজ থাকতো? (তুর্য)

-কই আগে তো কখনো আমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিস নি? (আতিয়া বেগম)

-এমনিতেই আমাদের বাংলাদেশ কথা ছিল।
আসলে ইরার বিয়ে হয়েছে প্রায় চার মাস আগে, তখন বিয়েটা পারিবারিকভাবে হলেও এবার তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাচ্ছে।
বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে আমাদের তো আসতেই হতো। বিয়ের এখনো সাত দিন বাকি আছে, আমাদের আসার কথা ছিল বিয়ের আগের দিন।
কিন্তু আজ কিছুদিন যাবত মায়া বলছিল:-
যেতেই যখন হবে তাহলে কিছুদিন আগেই যাই।
তোমাদের সঙ্গে কটা দিন সময়ও কাটানো যাবে। (তুর্য)

তূর্যর কথা শুনে আতিয়া বেগম মুখটা ভার করে বলল:-

-দেখ চার মাস আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে বলে এখন ওরা আনুষ্ঠানিক বিয়েটা সেরে ফেলছে।
আর আমি পারিবারিক ভাবে তোদের বিয়ে দিয়েছি নয় বছর আগে, অথচ তোদের এখনো মনে হচ্ছে না যে তোদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা সেরে ফেলা দরকার।
আমার একটা মাত্র ছেলে তুই, তোর বিয়ে নিয়ে আমার কথা আশা ছিল জানিস?
তুই আমার সে সব আশায় জল ঢেলে দিয়েছিস। (আতিয়া বেগম)

আতিয়া বেগমের কথা শেষ হতেই মায়া বলে উঠলো:-

-মামনি তুমি তো শুধু তোমার ছেলের কথাটাই ভাবছো, আমার কথাটা একবারও ভাবলেনা?
আমারও তো কত আশা ছিল বউ সাজার।
তোমারে নিরামিষ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে আমার সব আশায় তুমি ছাই ফেলে দিয়েছো।

মায়ার কথা শুনে তূর্য বললো :-

-তোমার বউ সাজার ইচ্ছে ছিল? (তুর্য)

-সে তো সব মেয়েরই থাকে। (মায়া)

-কই কখনো বলোনি তো। (তুর্য)

-এটা কি বলার মত কোন কথা?
বয়স তো কম হলো না,
এটাতো আপনার নিজেরই বোঝা উচিত ছিল। প্রতিটা মেয়েই তো চায় দুই হাত ভর্তি মেহেদি লাগিয়ে বেনারসি শাড়ি পড়ে বউ সাজতে। (মায়া)

তূর্য বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বিড়বিড় করে বলল :-

-দুদিন পরে বাচ্চার বাবা হবো এখন আবার বিয়ে করাটা কি রুচিসম্মত কাজ হবে? (তুর্য)

তূর্যর বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো পাশ থেকে ইমন শুনে ফেলেছিল, তাইতো তুর্যর কথার পৃষ্ঠে ইমন বলল :-

-ভাই তোর তো কপাল ভালো এমন একটা মা পাইছিস, যে কিনা ২০ বছর বয়সে তোকে একবার বিয়ে করাই ছিল, আর এখন ২৯-৩০ বছর বয়সে আবার বিয়ে করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
আর এদিকে আমার অবস্থা দেখ, ২৭ বছর বয়স হয়ে গেল এখনো কেউ একবারের জন্যও বলল না যে :-
বাবা ইমন তোর বয়স হয়েছে এবার বিয়েটা করে নে। (ইমন)

ইমনের কথা শুনে সবাই হু হু করে হেসে উঠলো।

ইমন আসলে এমনই ও একবার কথা বলতে শুরু করলে, কি বলছে না বলছে সেদিকে কোন হুশই থাকে না।

আতিয়া বেগম কোনো রকমে তার হাসি থামিয়ে ইমনকে বলল :-

-বাবা আমি তো শুধু তূর্যর মা না, আমি তোমারও মা। তোমার বিয়ের চিন্তাটাও আমার মাথায় আছে। (আতিয়া বেগম)

-সত্যি? (ইমন)

-হুম। (আতিয়া বেগম)

-কই তাহলে আপনি তো আমাকে একবারও বললেন না যে :-
বাবা ইমন বয়স তো কম হলো না এবার বিয়েটা করে নাও। অথবা একটা মেয়ে দেখিয়েও বললেন না যে এই মেয়ে টাকে বিয়ে করো। (ইমন)

-বাবা আমি তো জানি না তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ।(আতিয়া বেগম)

-আরে আন্টি আপনি যে কি বলেন না, আমার কোন পছন্দ অপছন্দ নাই। দেশি-বিদেশি, কালা-ধলা, ধনী-গরিব এসব নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথাই নেই, যেমনই হোক আমার একটা বউ হলেই চলবে। (ইমন)

ইমনের মুখে এমন কথা শুনে আতিয়া বেগম গোল-গোল চোখ করে ইমনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।

আতিয়া বেগমকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইমন কিছুটা অপস্তুত হয়ে পরল, তবুও নির্লজ্জের মতো বলল:-

-বেয়াদবি মাফ করবেন আন্টি।
আসলে বিষয়টা হয়েছে কি, তূর্য এবং আমি তো প্রায় সমবয়সী, তুর্য বিয়ে করেছে নয় বছর আগে আর আমি এখনো ঠিকমতো ১টা প্রেমই করতে পারছি না।
এই কথাগুলো মনে হলেই কচু গাছের সঙ্গে গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছা করে। (ইমন)

ইমনের কথা শুনে আবারও সবাই হু হু করে হেসে ওঠে।

ইমনের কথা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তূর্য সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে ওঠে :-

-আম্মু তুমি কি সত্যিই চাও আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা আবার বিয়েটা করি? (তুর্য)

-হ্যাঁ বাবা, আমি খুব করে চাই আমার মেয়েটাকে বধু বেশে দেখতে। ধুমধাম করে আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। (আতিয়া বেগম)

-ঠিক আছে আম্মু,
তোমার সব ইচ্ছা পূরণ হবে।
কিন্তু আমার হাতে সময় খুবই কম, আমি কোন রকমে ১০ টা দিনের জন্য দেশে এসেছি।
এর মধ্যে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলতে হবে আবার ইরার বিয়েটাও এটেন্ড করতে হবে। (তুর্য)

ছেলে মাত্র ১০ দিনের জন্য দেশে এসেছে কথাটা
শোনার পরে আতিয়া বেগমের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
তবে পরক্ষণেই আবার এটা ভেবে খুশি হয় যে:-
ছেলের বিয়ে নিয়ে তার সকল ইচ্ছা এবার পূরণ হবে।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাইকে রেস্ট নিতে বলে আতিয়া বেগম নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

খাওয়া শেষে যে যার রুমের দিকে রওনা হয়।

মায়া তূর্যর সঙ্গে তূর্যর রুমে গিয়ে নিজের লাগেজ টা নিয়ে তূর্য রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নেয়।

হঠাৎ মায়া কে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে তূর্য কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে :-

-কি ব্যাপার তুমি কোথায় যাচ্ছ? (তুর্য)

-আমার আগের রুমে। (মায়া)

-কেন? (তুর্য)

-রেস্ট নিব তাই। (মায়া)

-রেস্ট নেওয়ার জন্য ওই রুমে যেতে হবে কেন? (তুর্য)

-আমি এখন থেকে ওই রুমেই থাকবো। (মায়া)

তূর্য খানিকটা বিরক্ত হয়ে মায়াকে জিজ্ঞেস করল:-

-হঠাৎ এভাবে ঘর আলাদা করার কারণ জানতে পারি? (তুর্য)

-আপনি তো বললেন আমাদের আবার বিয়ে হবে।(মায়া)

-হ্যাঁ, তো? (তুর্য)

-তো আমি চাই এই কয়টা দিন আলাদা রুমে থাকতে।(মায়া)

তুর্য মায়ার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল :-

-বিয়ের সঙ্গে আলাদা রুমে থাকার সম্পর্ক কি? (তুর্য)

মায়া লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল :-

-বাসর ঘরে মেয়েদের একটু লজ্জা পেতে হয়,
আমি যদি সব সময় আপনার পাশেই থাকি তাহলে বাসর ঘরে নতুন করে লজ্জা পাবো কিভাবে?
তাই আমি আজ থেকে আমার রুমে থাকবো। (মায়া)

মায়ার কথা শেষ হতেই তুর্য মায়ার দিকে এগিয়ে এসে এক হাত মায়ার কোমর জড়িয়ে ধরল এবং অন্য হাতটা হঠাৎ করে মায়ার স্পর্শকাতর জায়গায় রাখল।

তূর্যর এমন কাজে মায়া লজ্জায় একদম লজ্জাবতী লতার মত কুঁচকে গেল।

মায়ার এমন অবস্থা দেখে তূর্য তার মুখে দুষ্ট এক হাসি এনে বলল :-

-দেখো আমি কাছে আসলে তুমি এমনিতেই সব সময় লজ্জা পাও। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাসর ঘরও আমি যখন কাছে আসবো তখন তুমি লজ্জা পাবে।
তারপরও যদি তোমার মনে হয় যে বাসর ঘরে তোমার আর একটু লজ্জা পাওয়া প্রয়োজন,
তাহলে তুমি আমাকে বলতে পারো।
ট্রাস্ট মি, বাসর ঘরে তোমাকে এতটা রুডলি আদর করবো যে সাত দিন তুমি আমার দিকে তাকাতেও লজ্জা পাবে। (তুর্য)

তূর্যর এমন লাগাম ছাড়া কথায় মায়া ভীষণ লজ্জা পেল এবং নিজের বু*কের উপর থেকে তুর্যর হাত সড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো।
তবে মায়া সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হলো,
মায়া কোনভাবেই তূর্য শক্তির সঙ্গে পেরে উঠল না।
উল্টো মায়ার শরীরে তূর্য স্পর্শ ধীরে ধীরে গভীর থেকে গভীর হতে শুরু করলো।

তবে মায়াকে ছটফট করতে দেখে হঠাৎ তূর্য মায়াকে ছেড়ে দিল।

তূর্য মায়াকে ছেড়ে দেওয়ায় মায়া যেন হাপ ছেড়ে বাঁচল।
মায়া মনে মনে ভাবছিল:-
যাক এবারের মত বেঁচে গেছি।

তখনই হঠাৎ মায়ার কানে আসলো দরজা লাগানো শব্দ।

মায়া ঘুরে তাকাতেই দেখল, তূর্য রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।

তূর্যর ওই ঘোর লাগা দৃষ্টি যেন মায়াকে অনেক কিছু বলে দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে মায়া বুঝে গেছে তুর্যর না বলা অনেক কথা।

তূর্যর মতলব বুঝতে পেরে মায়া পিছাতে পিছাতে বলতে শুরু করল:-

-NO, NO,
এখন না,
প্লিজ এখন না,
আমি অনেকটা জার্নি করে এসেছি,
এটা সঠিক সময় না। (মায়া)

কিন্তু কে শোনে কার কথা?
অল্প সময়ের ব্যবধানেই মায়ার পুরো শরীরে তুর্যর বিচরণ শুরু হয়ে গেল।

তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হলো আর একটা রৌদ্রময় দুপুর।

চলবে…..