#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব২২
#১৮+
[পর্বটা ১৮+,পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
ইরা এবং মায়ার ইচ্ছে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান একসাথেই হবে, তাই দুই পরিবারের মতামত সাপেক্ষে
আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরা (ICCB) (International Convention City Bashundhara)
-এ তাদের বিয়ের পুরো তিন দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।
বউ এর বায়না রাখতে তূর্য এবং অগ্নি দুজনে মিলে ঠিক করেছে যে তাদের গায়ে হলুদ, বিয়ে এবং বৌভাত তিনটি অনুষ্ঠানই একসাথে করা হবে।
সময় তার নিজের গতিতে চলতে থাকে।
গতকাল তাদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয়েছে।
দেখতে দেখতে চলে আসে সেই আনন্দময় সময়,
আজ তাদের বিয়ে,
অগ্নি এবং তূর্য দুজনেই বড় বেশে স্টেজের উপরে বসে আছে।
সেলফি তোলার জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে আত্মীয়-স্বজনরা।
আত্মীয়-স্বজনদের ছবি তোলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ছবি তুলতে না পারলে যেন বিয়েতে আসাটাই বৃথা হবে।
আত্মীয়-স্বজনদের এমন ব্যবহারে তূর্য এবং অগ্নি উভয়ই খানিকটা বিরক্ত হলেও তারা নিজেদের বিরক্তি প্রকাশ করল না।
কারণ তাদের কাছে এখন আত্মীয়-স্বজনদের ছবি তোলার চেয়েও বেশি বিরক্তিকর মনে হচ্ছে ইরা ও মায়ার আসতে দেরি হওয়াটাকে।
ওদিকে মেকআপ রুমে যখন ইরা এবং মায়াকে সাজানো হচ্ছিল তখনই মেকআপ রুমে প্রবেশ করে ইরার মা ‘ইতি শেখ’।
ইতি শেখ ধীরে ধীরে ইরার কাছে এগিয়ে আসতেই ইরা তার সামনে থাকা বড় আয়নায় তার মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।
অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে ইরা এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলেনি।
এতগুলো বছরে ইরা কখনো চাইনি এই মানুষটা সম্মুখীন হতে, কারণ মায়ের প্রতি রয়েছে ইরার অনেক অভিযোগ।
ইরার কাজিনরা সবাই জানে যে ইরার মায়ের সঙ্গে ইরার সম্পর্ক কেমন, তাই সবাই ইতি শেখ কে আসতে দেখে মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এরা চুপচাপ আয়নার দিকে তাকিয়ে বসেছিল, আর ইরার পাশেই ছিল মায়া।
তখনই হঠাৎ ইতি শেখ ইরার পা দুটো জড়িয়ে ধরল।
আকস্মিক ঘটনায় ইরা ভোরকে গেল,
কোনরকমে মায়ের থেকে পা দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে মায়ের কাছ থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ালো।
ইরাকে সরে দাঁড়াতে দেখে ইতি শেখ উঠে দাঁড়িয়ে আবারো ইরার কাছে চলে গেল,
ইতি শেখ এবার মেয়ের দু গালে হাত রেখে বলল:-
-বধু বেশে আমার মেয়ে টাকে একদম পূর্ণিমার চাঁদের মতো লাগছে।
মারে তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস জীবনযুদ্ধে আমি তোর পাশে থাকতে পারিনি।
আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। (ইতি শেখ)
ইরা মায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল:-
-তুমি পরিস্থিতির শিকার ছিলে কিভাবে?
তুমি আর বাবা তো তোমাদের জীবনের সব পেয়েছ।
তোমরা ডিভোর্সের পর যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছ, মাঝখান থেকে পরিস্থিতির শিকার হয়েছি আমি।
যখন আমার মাথার উপর বাবা-মায়ের ছায়ার প্রয়োজন ছিল তখন আমি না পেয়েছি তোমাকে আর না পেয়েছি বাবা কে।
তোমরা তো যে যার মত সুখী হয়েছো। (ইরা)
-মারে তুই আমাকে ভুল বুঝিস না,
বিশ্বাস কর এখানে আমার কোন দোষ ছিল না।
তোর বাবা হয়তো আমার জন্য সঠিক ছিল না,
তাই ভাগ্য আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে গিয়েছিল।
আমি তো খুব করে চেয়েছিলাম তোর বাবার সঙ্গে সংসারটা করতে, আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম তবুও পারিনি তার মনে একটু জায়গা করতে।
সে আমার জন্য সঠিক ছিল না,
জানিস মানুষের জীবনের সঠিক মানুষের প্রয়োজন খুব বেশি।
দেরিতে হলেও প্রতিটা মানুষের জীবনে সঠিক মানুষ আসুক।
তুই যাকে ভালোবাসিস তার কথা ভেবে জীবনটা নষ্ট করিস না, যে তোকে ভালবাসে তাকে মূল্যায়ন করতে শেখ।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। (ইতি শেখ)
কথাগুলো বলে ইতি শেখ কান্না করতে করতে মেকআপ রুম থেকে চলে গেল।
ইতি শেখ কে বেরিয়ে যেতে দেখে যেতে দেখে ইরা এবং মায়ার সকল কাজিন তাদেরকে নিয়ে যেতে আসে।
কিছুক্ষণ পরে (ICCB)-তে প্রবেশ করলো ইরা এবং মায়া।
তাদের দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল দুটি হৃদপিণ্ড।
ইরা এবং মায়া দুজনেই টকটকে লাল রংয়ের মধ্যে গোল্ডেন জরির কাজ করা ভারি লেহেঙ্গা পড়েছে,
সেই সঙ্গে ম্যাচিং অর্নামেন্ট, সব মিলিয়ে দুজনকেই একদম পরীর মতো লাগছে।
ইরা এবং মায়াকে এগিয়ে আসতে দেখে তূর্য এবং অগ্নি একসাথে বুকের বা পাশে হাত রাখল।
তারপর এগিয়ে গিয়ে যে যার বউকে হাত ধরে স্টেজে নিয়ে আসলো।
তন্বীর প্রেগনেন্সির দুই মাস চলছে,
তাই একমাত্র ভাইয়ের বিয়েতে আসার অনেক ইচ্ছে থাকা শর্তেও সে বাংলাদেশে আসতে পারেনি।
দেখতে দেখতে তাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেল,
বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে অগ্নি তার নিজস্ব সম্পত্তির মধ্যে থেকে ইরাকে দিয়েছে গুলশান-২ এ ৪টি ফ্ল্যাট এবং চট্টগ্রামের ২টি ফার্ম হাউস।
আর তূর্য মায়াকে মোহরানা হিসেবে দিয়েছে নিজের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির ৪০% শেয়ার।
তূর্যর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তূর্যর বাবা-মার কোন আপত্তি না থাকলেও তূর্যর ফুপিদের কপালে ভাজ দেখা গেল।
তূর্যর বড় ফুপি কোন ভাবে এটা মানতে পারছে না যে তার হাত থেকে সোনার হরিণ চলে গেল।
তূর্বর চেয়েছিল তার ছোট মেয়ের সঙ্গে তূর্যর বিয়ে দিতে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার সেই স্বপ্ন আর সত্য হলো না।
ওদিকে বিয়ে এবং খাওয়া দাওয়া সম্পূর্ণ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই গেস্টদের বিদায় জানিয়ে বর-কনেরা
রওনা হয় যার যার নিজেদের বাড়ির দিকে।
তূর্য এবং মায়া এখন খান বাড়িতে যাবে,
আর অগ্নি এবং ইরা যাচ্ছে গুলশান-১ এ থাকা অগ্নির একটি ফ্ল্যাটে।
__________________
তূর্যরা খান বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই আতিয়া বেগম আরাফ খান এবং তাদের কিছু নিকট আত্মীয়রা একটি গাড়িতে করে খান বাড়িতে পৌঁছেছে।
তূর্য মায়াকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামতে নিলে আতিয়া বেগম এগিয়ে এসে তূর্যকে নিষেধ করে মায়াকে নামাতে।
তূর্য প্রথমে বুঝতে পারেনা মায়াকে গাড়ি থেকে নামাতে নিষেধ করার কারণ, তবে পরক্ষণে আতিয়া বেগমের হাতে মিষ্টির প্লেট দেখে সে বুঝে যায় মায়াকে গাড়ি থেকে নামাতে বাধা দেওয়ার আসল কারণ।
আতিয়া বেগম নিজে এগিয়ে এসে প্রথমে মায়াকে একটু মিষ্টি খাইয়ে, তারপর বড় বড় নীল পাথর খচিত একটি বংশীয় সীতাহার মায়ার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলেন :-
-এটা আমাদের ছয় প্রজন্মের পুরনো হার, এটা আমি অনেক যত্ন করে রেখেছিলাম তোকে দেওয়ার জন্য।
এবার এটা আগলে রাখার দায়িত্ব তোর।
যখন তুই শাশুড়ি হবি, তখন এই হারটা দিয়ে আমার নাত বউকে বরণ করে নিস। (আতিয়া বেগম)
মায়া একটু লজ্জা পেলেও আতিয়া বেগমের কথার উত্তরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
তারপর সবাই মিলে মায়া কে নিয়ে গেলো তুর্যর রুমে,
তূর্যের রুমটা আজ অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,
সবাই মিলে মায়াকে খাটের উপরে বসিয়ে দিয়ে গেল।
তার কিছুক্ষণ পরেই তুর্য উপস্থিত হলো সেই রুমে।
তূর্যকে দেখেই মায়া খাট থেকে নেমে এসে তূর্যর পায় হাত দিয়ে সালাম করতে নিল,
কিন্তু তূর্য মায়াকে বাধা দিয়ে বলল :-
-সেজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য,
আমি চাইনা তুমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করো বা কারো পায়ে হাত দাও। (তুর্য)
-মামনি বলে দিয়েছিল আপনাকে সালাম করতে। (মায়া)
-এরপর থেকে আম্মু কাউকে সালাম করতে বললে তাকে মুখে সালাম দিয়ে দিও।
Ok? (তুর্য)
-Ok. (মায়া)
তারপর তূর্য ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল :-
-মায়াপরি তোমাকে যতবার দেখি,
ঠিক ততবারই নতুন করে তোমার প্রেমে উন্মাদ হই। (তুর্য)
তুর্যর এমন কথায় মায়া লজ্জা পেয়ে গেল,
তাই তুর্যর সঙ্গে বেশি কথা না বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসে পরে সমস্ত গহনা খোলার জন্য।
তখনই তূর্য মায়ার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আয়নার ভিতরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে :-
-can I help you? (তুর্য)
পরনে ভারী লেহেঙ্গা থাকার কারণে পেছনে থাকা সেফটি-পিন গুলো খুলতে মায়ার অনেক অসুবিধা হচ্ছিল, তাই তুর্য সাহায্য করতে চাওয়ায় মায়া সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
মায়ের সম্মতি পেয়ে তুর্যও ধীরে ধীরে মায়ার ওড়নায় থাকা সকল সেফটি-পিন ধীরে ধীরে খুলতে থাকে।
মায়া নিজের শরীরের সমস্ত গহনা খুলতে খুলতে তূর্যরও সেফটি-পিন গুলো খোলা হয়ে যায়।
লেহেঙ্গার ভারী ওড়নাটা খুলতে পেরে মায়া শরীরের উপর থেকে যেন অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেল।
মা এখন নিজেকে অনেক হালকা অনুভব করছে, তাই সে মনে মনে ভাবলো এখন সে ওয়াশরুমে গিয়ে লেহেঙ্গা টা চেঞ্জ করে নরমাল একটা ড্রেস পরে আসবে।
এগুলো ভেবে মায়া উঠতেই যাবে ঠিক তখনই সে অনুভব করলো তুর্য তার পিঠের কাছে থাকা হুক গুলো ধিরে ধিরে খুলে ফেলছে, হঠাৎ তুর্যর এমন কাজে মায়ার সারা শরীর জুড়ে এক শিহরন বয়ে গেলো।
ততক্ষণে তুর্য মায়ার উম্মুক্ত পিঠে এলো-মেলো ভাবে হাত চালাতে শুরু করেছে।
একটা সময় তুর্য মায়াকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে, এক টানে নিজের শরীর থেকে শেরওয়ানি টা খুলে ফেলল।
মায়া জানে তুর্য কি চাইছে,
তাই সে তুর্যর সঙ্গে সমান তালে ভালোবাসার সাগর পারি দিতে থাকলো।
_____________________
ইরা এবং অগ্নি অনেক আগেই এসে পৌঁছেছে তাদের ফ্ল্যাটে।
ইরা এবং অগ্নির কাজিনরা সবাই দুষ্টামি করে কালো রঙের একটা পাতলা শাড়ি ফ্ল্যাটে রেখে গেছে ইরার জন্য।
সারাদিন এই ভারি লেহেঙ্গা পড়ে থাকতে থাকতে ইরা এখন অসুস্থ বোধ করছে, তাই ইরার পক্ষে ওই লেহেঙ্গা পড়ে রাতে ঘুমানো সম্ভব না।
ইরা যখন আলমারি খুলে দেখলো সেখানে একটি মাত্র শাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তখন বাধ্য হয়েই ইরা ওয়াশরুমে গিয়ে ওই শাড়িটা পড়ে নিল।
ইরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল অগ্নি একটি গ্লাসে নিয়ে পানি খাচ্ছে।
পানি খেতে খেতে অগ্নির দৃষ্টি হঠাৎ ইরার দিকে যাওয়ায় অগ্নি একদম ফ্রিজ হয়ে যায়,
ইরার মতো সুন্দরী রমনী কালো রঙের পাতলা জর্জেট শাড়ি পড়ায় শাড়ির ভেতর দিয়েই তার শরীরের প্রতিটি ভাজ সুস্পষ্ট হয়ে রয়েছে।
অগ্নি ইরাকে দেখতে দেখতে হাতে থাকা গ্লাসটা টেবিলের উপরে রাখতে নিয়,
ভুল জায়গায় গ্লাস রাখার ফলে গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে ভেঙে যায়।
ইরা অগ্নিকে অপলক ভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা লজ্জা পায়।
লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে ইরা দ্রুত পায়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ইরা তার মায়ের বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে।
ইরা নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে :-
-আমি অগ্নিকে ঠকাচ্ছি না তো?
আমি নিজের ভালোবাসা পাইনি বলে কি ওকে ও নিজের ভালোবাসার থেকে বঞ্চিত করব?
তূর্য তো মায়াকে নিয়ে সুখের সংসার করছে,
আমারও কি অগ্নিকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ?
আমি তাকে ভালোবাসি না জেনেও সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে যাচ্ছে,
এমন একটা মানুষকে ঠকানো কি ঠিক হবে?
ইরার আর এতগুলো প্রশ্নের উত্তরে তার মন যেন বারবার তাকে বলছে :-
-তুই অগ্নিকে ঠকাচ্ছিস,
তোর উচিত অগ্নিকে একটা সুযোগ দেওয়া,
অগ্নিকে একটু ভালোবাসার চেষ্টা করা।
তার কিছুক্ষণ পরে অগ্নিও ধীরে ধীরে বিছানায় এসে মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে শুয়ে পড়ে।
এটা তাদের নিত্যদিনের কাজ,
যেহেতু ইরা এখনো অগ্নিকে স্বামীর অধিকার দেয়নি,
তাই অগ্নি প্রতিদিন তাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে দেয়, যাতে করে অগ্নি সঙ্গে এক বিছানায় থাকতে ইরা অস্বস্তি বোধ না করে।
ইরা বুঝতে পারছে যে অগ্নি অস্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
ওদিকে অগ্নি আজ যেন কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না, বারবার নিজের ভেতরে নিষিদ্ধ অনুভূতি জেগে উঠছে।
অগ্নির অনুভূতিগুলো খুব স্বাভাবিক,
ফাঁকা ফ্ল্যাট, সুন্দরী বৌ,
চারিদিকে শত শত ফুলের ঘ্রাণ।
এমন পরিস্থিতিতে পড়লে যে কোন পুরুষ মানুষ নিষিদ্ধ অনুভূতিকে আটকানোর চেষ্টায় নিজের কাছেই নিজে হেরে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে, এমন সময়ে অগ্নি হঠাৎ অনুভব করলো ইরা হয়তো মাঝখানে কোলবালিশটা সরিয়ে ফেলল।
অগ্নি এতক্ষণ অন্য পাস ফিরে শুয়ে ছিল,
এবার সে ধীরে ধীরে ইরার দিকে ঘুরতেই দেখল সত্যিই ইরা মাঝখান থেকে কোলবালিশটা সরিয়ে ফেলেছে,
অগ্নির কাছে এটা ইরার আহ্বান বলে মনে হলো।
তাই সে আর কোন কিছু না ভেবেই শক্ত করে ইরাকে জড়িয়ে ধরল।
তখনই ইরাও এক হাতে অগ্নির পিঠ এবং অন্য হাতে অগ্নির মাথার চুল খামচে ধরল।
ইরার এইটুকু কাজেই অগ্নি বুঝে গেল যে অকথিত ভাবে ইরা আজ অগ্নির স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে,
নিজের ভালোবাসাকে আপন করে নেওয়ায় আজ অগ্নির কোন বাধা নেই ।
তাই অগ্নি তার ভালোবাসার গভীর স্পর্শ একে দিতে থাকে ইরা সমস্ত শরীরে।
অগ্নির ভালোবাসাময় স্পর্শের গভীরতা যখন বাড়তে থাকে, তার একপর্যায়ে গিয়ে ইরার চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
অগ্নি যখন অনুভব করে যে ইরা কান্না করছে,
তখন সে কোন রকমে নিজেকে একটু সামলে ইরার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে :-
-বেশি কষ্ট হচ্ছে?
থেমে যাবো? (অগ্নি)
এরা তখন অগ্নির এমন করুন চাহনি দেখে নিজের কষ্ট অগ্নিকে বুঝতে না দিয়ে অগ্নিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবারো সম্মতি জানায়।
ইরার অনুমতি পেয়ে অগ্নি আবারও উন্মাদ হয়ে যায়,
কিছুক্ষণ পরে অগ্নির এত ভালবাসা নিতে না পেরে ইরা জ্ঞান হারায়।
চলবে……
#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব২৩
ইরার অনুমতি পেয়ে অগ্নি আবারও উন্মাদ হয়ে যায়,
কিছুক্ষণ পরে অগ্নির এত ভালোবাসা নিতে না পেরে ইরা জ্ঞান হারায়।
ইরাকে হঠাৎ জ্ঞান হারাতে দেখে অগ্নির হাত-পা অবশ হয়ে যায়।
অগ্নি কোনো রকমে নিজে বিছানা থেকে উঠে,
ইরার গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে পাগলের মত ইরাকে ডাকতে থাকে।
অগ্নি ইরার চোখে মুখে পানি দিলেও তাতে কোন ফলাফল পাওয়া যায় না।
অনেক চেষ্টা করেও যখন অগ্নি ইরার জ্ঞান ফেরাতে পারে না, তখন সে ইরাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়।
কিন্তু পরক্ষণে অগ্নিভাবে, সে যদি এই অবস্থায় ইরাকে নিয়ে কোন হসপিটালে যায় তাহলে কালকের খবরের কাগজের হেডলাইন এটাই হবে।
অগ্নির এখন কি করা উচিত তা সে বুঝে উঠতে পারে না,
কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ অগ্নির মনে পরে আজ তাদের বিয়েতে আসা মামাতো ভাইয়ের ওয়াইফ গাইনোলজি ডক্টর
তাই অগ্নি আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তার মামাতো ভাই স্বাধীনকে ফোন করল।
টানা ৩-৪ বার কল করার পরেও ওপাশ থেকে কেউ কল রিসিভ করল না।
যদিও স্বাভাবিক ভাবেই রাত তিনটার সময় কেউ কারো কল রিসিভ করার জন্য বসে থাকে না, তবুও অগ্নির খুব রাগ হলো স্বাধীনের উপর।
অগ্নি কোনরকমে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে আরো দুইবার কল করলো স্বাধীনকে,
প্রথমবার কল হতে হতে ফোনটা কেটে গেল, দ্বিতীয়বার কল হতেই ওপাশ থেকে স্বাধীন কলটা রিসিভ করল।
স্বাধীন কল রিসিভ করেছে এটা বুঝতে পেরেই অগ্নি চিৎকার করে বলল :
-শালা, মোরছিস নাকি তুই?
কখন থেকে কল করছি?
কল রিসিভ করিস না কেন? (অগ্নি)
-ওই শালা,
রাত তিনটার সময় কে ফোন নিয়ে বসে থাকে?
কি হয়েছে সেইটা বল। (স্বাধীন)
-ইরা খুব অসুস্থ।
আমি লোকেশন সেয়ার করছি,
তুই ভাবিকে নিয়ে তারাতাড়ি চলে আয়।(অগ্নি)
-টাইম দেখেছিস?
আমরা সকালে আসছি। (স্বাধীন)
-আমার বউ প্রায় এক ঘন্টা যাবত সেন্সলেস হয়ে আছে।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি,
কোনোভাবেই ওর সেন্স ফেরাতে পারছি না।
আর তুই বলছিস সকালে আসবি? (অগ্নি)
অগ্নির কথা শুনে এবার স্বাধীনের ঘুমের রেশ কেটে যায়। স্বাধীন অবাক হয়ে অগ্নিকে জিজ্ঞেস করে:-
-ইরা সেন্সলেস হলো কিভাবে? (স্বাধীন)
স্বাধীনের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে অগ্নি দাঁতে দাঁত চেপে বলল :-
-আজ আমাদের ফার্স্ট নাইট ছিল,
তুই দুই বাচ্চার বাপ আশা করছি তোকে পুরোটা ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। (অগ্নি)
অগ্নির কথা শুনে স্বাধীন বোকার মত মাথা চুলকাতে চুলকাতে প্রশ্ন করলো :-
-আচ্ছা তোদের বিয়ে তো প্রায় চার মাস আগে হয়েছে, তাহলে আজ তোদের ফার্স্ট নাইট হয় কিভাবে? (স্বাধীন)
অগ্নি স্বাধীনের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে বলল :-
-আমরা গুলশানেই আছি,
তাই তোদের আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
আমি আমাদের লোকেশন শেয়ার করে দিয়েছি,
তুই তাড়াতাড়ি ভাবিকে নিয়ে চলে আয়। (অগ্নি)
কথাগুলো বলে অগ্নি ফোন কেটে দিলো।
ফোন কেটে দেওয়া ঠিক ২৫ মিনিট পরে অগ্নির ফ্ল্যাটের এর কলিংবেল বেজে ওঠে।
অগ্নি তাড়াহুড়ো করে গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিতেই দেখল স্বাধীন এবং তার ওয়াইফ মিমি চলে এসেছে।
অগ্নির মতো পরিপাটি মানুষটাকেও আজ খুব এলোমেলো লাগছে, এসির ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও অগ্নি ঘেমে একাকার হয়ে আছে।
অগ্নি এবং স্বাধীন কে রুমের বাইরে রেখে মিমি চলে গেল ইরার কাছে।
মিমি স্বাধীনের মুখে শুনেছিল যে আজ ইরা এবং অগ্নির ফার্স্ট নাইট ছিল। তাই ইরার অজ্ঞান হওয়ার কথা শুনে মিমি সেই মোতাবেক নিজের সঙ্গে করে মেডিসিন নিয়ে এসেছিল।
প্রায় এক ঘন্টা পরে মিমি রুম থেকে বেরিয়ে এসে অগ্নিকে উল্লেখ করে বলল :-
-ভাইয়া ইরার জ্ঞান ফিরেছে,
এখন আপনি ওর সাথে দেখা করতে পারেন। (মিমি)
অগ্নি ইরার কাছে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই মিমি আবার অগ্নিকে ডেকে বলল :-
-ভাইয়া আর একটা কথা বলার ছিল, (মিমি)
-হ্যাঁ, বলো। (অগ্নি)
-আসলে কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।(মিমি)
-সমস্যা নেই তুমি বলো। (অগ্নি)
-ভাইয়া প্লিজ আপনি কম করে হলেও আগামী এক সপ্তাহ ইরার থেকে একটু দূরে থাকবেন।
আশা করি আমি কি বলতে চাইছি তা আপনি বুঝেছেন। (মিমি)
অগ্নি বয়সে স্বাধীন থেকে দেড় মাসের বড়,
তাই ছোট ভাইয়ের বউয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অগ্নি ভীষণ লজ্জা পেল।
লজ্জায় অগ্নি কোন রকমের মাথা নাড়িয়ে মিমির কথায় সম্মতি জানালো।
তারপর সেখানে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে গেল ইরার কাছে।
অগ্নি রুমের ভিতরে এসে দেখল এইটুকু সময়ের মধ্যে ইরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে ফজরের আযান হয়ে গেছে,
তাই মিমি ফ্রেশ হয়ে একটা রুমে ফজরের নামাজ পড়তে চলে গেল।
সেই ফাঁকে স্বাধীন অগ্নিকে বলল :-
-ভাই তুই কি মানুষ? (স্বাধীন)
অগ্নি ভুরু কুঁচকে বলল :-
-কেন আমাকে দেখে তোর কি মনে হয়? (অগ্নি)
স্বাধীন টিটকারীর স্বরে বলল :-
-দেখতে মানুষের মতো হলেই কি সবাই মানুষ হয়?
তোর কোন আইডি আছে যে তুই মেয়েটার কি হাল করেছিস? (স্বাধীন)
-মেয়েটা মেয়েটা করছিস কাকে?
তোর ভাবি হয়। (অগ্নি)
-ইরা আমার ছোট বোনের মতো।
ওর সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছিস তুই।
যদিও এটা তোদের পার্সোনাল ব্যাপার,
এটা নিয়ে আমার কথা বলা ঠিক হচ্ছে না।
তবুও কথাগুলো না বলে পারলাম না। (স্বাধীন)
অগ্নি এবার স্বাধীনের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল :-
-বেশি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করিস না।
তুই আমার থেকে দেড় মাসের ছোট,
অথচ তুই দুই বাচ্চার বাবা হয়ে বসে আছিস।
আর এদিকে আমি ৩৬ বছর বয়সে এসে নিজের ফার্স্ট নাইটস্পেন করলাম।
মানছি আমি ভুল করেছি।
তবে ৩৬ বছর বয়সে বিয়ে করলে এরকম ভুলের ঝুঁকি একটু বেশিই থাকে। (অগ্নি)
স্বাধীন আরো কিছু বলতেই যাবে তখনই সেখানে মিমি এসে পড়ে।
মিমি এবং স্বাধীনের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে এবং দুই বছরের একটি ছেলে আছে।
বাচ্চারা যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে বাবা-মা পাশে নেই তাহলে অনেক কান্না করবে।
তাই মিমি নামাজ শেষ করে আসতেই মিমিকে নিয়ে স্বাধীন বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
চলে যাওয়ার সময় স্বাধীন অগ্নির দিকে তাকিয়ে টিটকারি মূলক ভাবে বলে :-
-যারা নিজের বউয়ের কেয়ার করতে পারেনা,
তাদের উপর জনগণ দেশের দায়িত্ব কিভাবে দেয় আমি বুঝিনা। (স্বাধীন)
অগ্নি দাঁতে দাঁত চেপে স্বাধীনের কথাটা হজম করে নেয়।
সকালে দশটার দিকে ইরার ঘুম ভাঙ্গে।
এরা চোখ খুলতেই দেখে, অগ্নি তার পাশে বসে খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
এরা উঠে বসার জন্য একটু নড়াচাড়া করতেই অগ্নির ঘুম ভেঙে গেল।
তারপর ইরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অগ্নি হঠাৎ ইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
ইরা কোনরকমে ভাঙ্গা গলায় বলল :-
-কি হয়েছে?
এরকম করছেন কেন?
ছাড়ুন প্লিজ। (ইরা)
অগ্নি ইরাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই উত্তর দিল :-
-sorry baby.
আমি বুঝতে পারিনি তোমার এতটা কষ্ট হবে।
হঠাৎ আমি কিভাবে যেন কন্ট্রোললেস হয়ে গেলাম।
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দেই নি। (অগ্নি)
অগ্নির কথা শুনে ধীরে ধীরে রাতের ঘটনা গুলো ইরার চোখে ভাসতে শুরু করলো।
সেই সব কথা মনে পড়তেই ইরার গাল দুটো লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেল।
__________________
আজ বৌভাতের অনুষ্ঠানটাও খুব সুন্দর মতো কেটে গেল।
তবে মায়ার কাছে আজ ইরাকে খুবই অসুস্থ মনে হলো।
যদিও ইরাকে মায়া কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিল সে অসুস্থ কিনা।
কিন্তু প্রতিবারই ইরা বলেছে যে এত এত লোকজনের ভিড়ে তার নাকি অস্বস্তি হচ্ছে, এছাড়া কিছুই না।
সারাদিনের অনুষ্ঠান এবং সমস্ত ঝামেলা শেষে মায়া অনেকটা সময় ভিডিও কলে তন্বীর সঙ্গে কথা বলল।
মায়ার মিসক্যারেজ হওয়ার কথাটা তন্নি জানে,
তাই তন্নি এই কয়েক মাস যাবত প্রতিদিনই নিয়ম করে মায়ার সঙ্গে কথা বলে আসছে, যেন মায়ার মনটা একটু হালকা হয়।
এদিকে তন্বী প্রেগন্যান্ট এই কথাটা জানার পর থেকে খান বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
তন্নীর প্রেগনেন্সির কথা শুনে মায়াও অনেক খুশি হয়েছে।
তবে তন্বীর বাবু হবে এই কথাটা শোনার পর থেকেই মায়ার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
সেটা হল :-
তন্বীর বেবি হলে,
বেবি মায়াকে কি বলে ডাকবে?
মামি নাকি খালামণি ?
এই প্রশ্নটা মায়া বেশ কয়েকবার বাড়ির সবাইকে করেছে।
অবশেষে আতিয়া বেগম এটার একটা সমাধান বের করে দিয়েছে।
আতিয়া বেগম মায়াকে বলেছে,
তন্বীর বেবি হলে, মামির-মা এবং খালামনির-মনি যোগ করে মায়াকে মা+মনি অর্থাৎ মামনি বলে ডাকবে।
আতিয়া বেগমের এমন সমাধান বের করে দেওয়ায় মায়াতো মহা খুশি।
তবে এত আনন্দর মাঝেও যখনই সেদিনের দুর্ঘটনার কথা মনে হয়,
তখনই মায়ার বুকটা খা খা করে ওঠে।
মায়া নিজের মাঝে এক অসীম শূন্যতা অনুভব করে।
_______________
দেখতে দেখতে কেটে গেছে আরো দুটো দিন।
মায়া এবং তূর্য আজ লন্ডনে ফিরে যাবে।
মায়া এবং তূর্য দুজনে নিজেদের লাগেজ নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসতে বডিগার্ডরা লাগেজ গুলো তাদের হাত থেকে নিয়ে গাড়িতে রাখার জন্য চলে যায়।
মায়া এবং তূর্য ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখনই হঠাৎ……
চলবে……