অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-২৬+২৭

0
1

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব২৬

ইরাকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে তৎক্ষণাৎ অগ্নি বুঝতে পারে যে ইরার লেবার পেইন শুরু হয়েছে।

অগ্নি যখন ইরাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে বলে কোলে ওঠাতে নেয়, তখন দেখে বিছানার সাদা চাদরের অনেকটা জায়গা জুড়ে রক্তে লাল হয়ে আছে।
বিছানায় এতটা রক্ত দেখে অগ্নি আতকে ওঠে।

অগ্নির আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ইরার বেশ অনেকটা ব্লিডিং হয়েছে।

অগ্নি যে কাউকে ডাকবে সে উপায়ও নেই,
কারণ আজ সকাল থেকে অগ্নির বড় খালু মৃত্যু শয্যায় রয়েছে বলে আজ বিকেলে শেখ বাড়ির সবাই তাকে দেখতে গিয়েছে।

শেখ বাড়িতে বর্তমানে এমন কোন বয়স জ্যেষ্ঠ মহিলা কাজের লোকও নেই যার কাছ থেকে অগ্নি কোন সাহায্য নেবে, তাই অগ্নি বেশি কিছু না ভেবে ইরাকে নিয়ে রওনা হয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

এখন ইরার ওজন প্রায় ৭৫ কেজি, ইরা আগের তুলনায় অনেকটা গুলুমুলু হওয়ায় অগ্নির রুম থেকে শেখ বাড়ির পার্কিং এরিয়া পর্যন্ত ইরাকে কোলে করে নিয়ে যেতে অগ্নিকে অনেকটা বেগ পোহাতে হলো।

অল্প কিছু সময়ের মধ্যে অগ্নি নিজেই ড্রাইভ করে ইরাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে থাকে।

ইরাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে অগ্নি ইরার হাত ধরে বারে বারে বলতে থাকে :-

-জান তুমি ভয় পেয়ো না,
আমি আছি তোমার সাথে।
তোমার কোন ভয় নেই,
দেখবে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে এবং আমার সন্তানদেরকে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসবো।
(অগ্নি)

অগ্নি ইরাকে নিয়ে হসপিটালের যাওয়ার সময় মিমি এবং স্বাধীন কে কল করলো হসপিটালে আসার জন্য।

অগ্নি ইরাকে যে হসপিটালে নিয়ে গেছে মিমিও সেই হসপিটালের ডক্টর, সেই সুবাদে মিমির বাসা হসপিটাল থেকে খুব একটা বেশি দূরে না।

তাই অগ্নি কল করার সাথে সাথেই মিমি এবং স্বাধীন হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়।

মিমি অনেকটা সময় নিয়ে ইরার কন্ডিশন দেখল,
কিছুক্ষণ পরে মিমি তাড়াহুড়ো করে ডেলিভারি রুম থেকে বেরিয়ে এসে অগ্নিকে বলল:-

-ভাইয়া অনেকটা ব্লিডিং হওয়ার কারণে ইরার অবস্থা তেমন একটা ভালো না, আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সিজার করতে হবে। (মিমি)

অগ্নির হাত-পা থরথর করে কাঁপছে, সে কোন রকমে মিমিকে বলল :-

-যা করতে হয় করো, আমি শুধু ইরা আর আমার বেবিদের সুস্থ অবস্থায় দেখতে চাই। (অগ্নি)

মিমি আমতা আমতা করে জবাব দিল :-

-ইরার অনেকটা ব্লিডিং হয়েছে জানিনা কি হবে।
তবে ভাইয়া আমাদের দিক থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, বাকিটা আল্লাহর হাতে। (মিমি)

কথা শেষ হতেই মিমি তাড়াহুড়ো করে O.T.-র দিকে চলে যায়।

ইরাকে অপারেশন থিয়েটার নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অগ্নি শারমিন শেখকে কল করে সমস্ত কিছু বলে দিয়েছিলো, তাই এক ঘণ্টার মাথায় শারমিন শেখ সহ শেখবাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়।

পুরো দুই ঘন্টা পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন নার্স বেরিয়ে আসে,
ফুটফুটে একটি বাচ্চা।

নার্সকে বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখে অগ্নি সহ শেখ পরিবারের সকলেই তার দিকে এগিয়ে যায়।

স্বাভাবিক ভাবেই ডেলিভারির পরে পরিবারের লোকজনের কাছে বাচ্চা দেওয়ার সময় হাসি-খুশি ভাবে নার্সরা মিষ্টিমুখ করার জন্য কিছু অর্থ দাবি করে।

তবে তাদের ক্ষেত্রে এমন কিছুই ঘটল না,
নার্সটি বিষন্ন ভাব নিয়ে শারমিন শেখের কোলে বাচ্চাটাকে তুলে দিয়ে অগ্নিকে উদ্দেশ্য করে বলে :-

-স্যার আপনার ২টা কন্যা সন্তান হয়েছে। (নার্স)

জমজ কন্যা সন্তান হয়েছে শুনে শেখ বাড়ির সকল সদস্য খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল, বহু বছর পরে শেখ বাড়িতে কন্যা সন্তানের আগমন হল।
শেখবাড়ি শেষ কন্যা সন্তান ছিল ইরার মা।
আর এবার ঘর আলো করে এলো অগ্নির দুই মেয়ে।
অভ্র এবং শুভ্রসহ সকল সদস্য এগিয়ে এসে বাচ্চাটিকে দেখছে এবং কখন অন্য বাচ্চা টিকে আনা হবে সেই অপেক্ষায় রয়েছে।

কিন্তু অগ্নি একবারের জন্যেও বাচ্চাটির দিকে না তাকিয়ে, উতলা হয়ে নার্স কে জিজ্ঞেস করল :-

-আমার ওয়াইফ কেমন আছে? (অগ্নি)

-স্যার, আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছে।
দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে ওনাকে কেবিনে শিফট করা হবে। (নার্স)

ইরা সুস্থ আছে শুনে সবার মুখে খুশির ঝলক দেখা গেল।

নার্সের মুখে ইরা সুস্থতার কথা শুনে অগ্নির দেহে যেন প্রাণ ফিরলো।

তখনই শারমিন শেখ নার্সটি কে জিজ্ঞেস করল :-

-আমাদের আরেকটা বাচ্চাকে নিয়ে আসেন। (শারমিন শেখ)

নার্সটি তখন মাথা নিচু ফেলল,
কিছুক্ষণ পরে আমতা আমতা করে বলল :-

-sorry ম্যাম, আমরা এখন ওই বাচ্চাটিকে দিতে পারব না।
বাচ্চাটির অবস্থা খুব খারাপ, তাই তাকে I.C.Uতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
আমাদের হাতে আর কিছু নেই,
আপনারা আল্লাহকে ডাকুন। (নার্স)

এই কথাটা শোনাও মাত্রই যেনো সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অগ্নি ধুপ করে সেখানেই বসে পড়ে।
এই ছোট্ট একটা কথা শেখ বাড়ির প্রতিটা সদস্যের বুক চিরে যায়।

শারমিনও ভেঙে পড়েন,
তাই অভ্র এগিয়ে এসে শারমিন শেখের কাছ থেকে বাচ্চাটিকে নিজের কোলে তুলে নেয়। শুভ্র গিয়ে শারমিন শেখকে ধরে একটা চেয়ারে বসায়।

তারপর অগ্নি এবং শারমিন শেখকে সান্তনা দিয়ে শুভ্র বলে :-

-তোমরা একদম টেনশন করো না,
বেবির কিচ্ছু হবে না।
আল্লাহতালা সব ঠিক করে দিবে।
তোমরা ধৈর্য ধরো, ভেঙ্গে না পড়ে আল্লাহকে ডাকো। (অভ্র)

শুভ্র কথা শুনে অগ্নি সেখান থেকে উঠে চলে গেল হসপিটাল এর নামাজ ঘরের দিকে।

তারপর অজু করে এসে একটা জায়নামাজ নিয়ে নামাজে বসে পড়ল।

তারপর নফল নামাজ পড়ে মোনাজাত করার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ল।
কান্না করতে করতে আল্লাহর কাছে বলল:-

-হে আল্লাহ তুমি সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী,
তুমি সব পারো। দয়া করে তুমি আমাকে সন্তান হারানোর বেদনা দিও না। এই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার মাঝে নাই।
আমি যখন শুনেছি আমার সন্তানের জীবন সংকটে আছে, তখনই আমি পৃথিবীর অন্য কারো কাছে সাহায্য নাচেয়ে তোমার সেজদা লুটিয়ে পড়েছি।
তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিও না।
আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দাও। ওকে তোমার সৃষ্টি এই অসীম সৌন্দর্যময় পৃথিবীটাকে দেখার সুযোগ করে দাও।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ, হে আল্লাহ তুমি দয়া করে এই কষ্ট আমায় দিও না। (অগ্নি)

কথাগুলো বলতে বলতে অগ্নি কান্নায় ভেঙে পড়ল।

ওদিকে কয়েক ঘণ্টা পরে যখন ইরার জ্ঞান ফিরে,
তখন ইরা বারে বারে তার বাচ্চাদের দেখতে চাইছিল।
শারমিন শেখ একটি বাচ্চাকে নিয়ে আসলে ইরা অন্য বাচ্চার খোঁজ করতে শুরু করে।
উপায়ান্তর না পেয়ে শারমিন শেখ এটা ওটা বলে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এক বাচ্চা কান্না করলে অন্য বাচ্চার ঘুম ভেঙ্গে যায় তাই অন্যজনকে নিয়ে অভ্র এবং অগ্নি পাশের কেবিনে রয়েছে।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরেও যখন অন্য বাচ্চাটিকে ইরার কাছে আনা হচ্ছিল না, তখন ইরা বুঝে যায় যে তার আরেক বাচ্চার কোন একটা সমস্যা হয়েছে।
তারপর ধীরে ধীরে ইরাও জানতে পারে যে তার অন্য সন্তানটিকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

কথাটা জানার পরে ইরার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল এক বুকফাটা আর্তনাদ।
তবে সদ্য সিজার হওয়ায় ইরার এমন একটা অবস্থা ছিল যে সে তার সন্তানের শোকে কান্নাও করতে পারছিল না। কষ্টগুলো তার বুকে দলা পাকাতে শুরু করল।

এভাবেই কেটে যায় তিনটা দিন।

এই তিনটা দিনে পরিবারের সকল সদস্য সুস্থ সন্তানটিকে কোলে নিলেও অগ্নি একবারের জন্যেও তার মেয়েকে কোলে নেয়নি।

সিজারের তিনদিন পরে ইরাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়, তাই সবাই মিলে জোর করে ইরাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
ইরা কোনোভাবেই যেতে চাইছিলো না হসপিটাল থেকে। এক সন্তানকে হসপিটালে ফেলে রেখে অন্য সন্তানকে নিয়ে যাওয়াটা একটা মায়ের পক্ষে মেনে নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ইরাও এটা মানতে পারছিল না।

__________

মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে জন্মের ১০ দিন পরে অগ্নির দ্বিতীয় সন্তান সুস্থ হয়ে মায়ের কোলে ফেরে।

অগ্নিও সেই দিনই তার দুই মেয়েকে একসঙ্গে কোলে নেয় এবং বলে :-

-আমার সুখ-পাখি। (অগ্নি)

অগ্নির এক মেয়ে যেহেতু হসপিটালে মৃত্যুর মুখে ছিল, তাই তার মেয়েদের আকিকা জন্মের সপ্তম দিনে করা হয়নি।
তবে একজন আলেমের সঙ্গে কথা বলে,
পরবর্তীতে অগ্নির মেয়েদের আকিকা করে নাম রাখা হয়, একজনের নাম-সুখ আর অন্যজনের নাম-পাখি।

অগ্নির মেয়ে দুটো দেখতে একদম মায়ের মতো চোখ ধাঁধালো সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েছে।

শেখ বাড়ি সেদিন আনন্দে মেতে ওঠে।

তারপর দুই মেয়েকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে কেটে যেতে থাকে অগ্নি এবং ইরার দিনগুলো।
______________

দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো চারটা বছর,

মায়া খুব ভালোভাবে তার পড়াশোনা শেষ করেছে।

আতিয়া বেগম এবং আরাফ খানের বয়স হয়েছে, তাই তূর্য এখন বাংলাদেশে থেকেই তার ব্যবসা সামলায়।

খুব বেশি প্রয়োজন হলে তবেই দেশের বাইরে যায়।

মায়া এবং তূর্যও এখন সুখের সংসার করছে, তবে তাদের সংসারে রয়েছে অপূর্ণতার ছায়া।
সব থেকেও তারা নিঃস্ব।

গত পাঁচটা বছর ধরে মায়া একটা সন্তানের জন্য নামাজে বসে আল্লাহর কাছে আহাজারি করে কাঁদে।
তবু আল্লাহ মায়াকে একটা সন্তানের সুখ দেয়নি।

তূর্য নিজেও খুব করে একটা সন্তান চায়,
তবে মায়া কষ্ট পাবে ভেবে মুখে কখনো প্রকাশ করেনি।

ছয় দিন আগে তূর্য লন্ডনে গিয়েছে তার কোম্পানির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে।

এমন সময় তূর্যর বড় ফুফি এসে উপস্থিত হয় শেখ বাড়িতে।

তূর্যর বড় ফুপি পারভিন বেগম যেহেতু আগের থেকেই মায়াকে সহ্য করতে পারে না,
তাই সুযোগ পেলেই সে মায়াকে কটু কথা বলতে শুরু করেন।
আতিয়া বেগম এবং আরাফ খানের সামনে মায়ের সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করলেও, তাদের চোখের আড়ালে মায়াকে অপয়া, অলক্ষী এবং বন্ধ্যা বলে গালি-গালাজ করেন।

এমনই একদিনে ড্রয়িং রুমে মায়া কে একা পেয়ে, পারভিন বেগম মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলছিল :-

-অপরা অলক্ষী মেয়ে কোথাকার প্রথমে নিজের বাপ-মাকে খেয়েছে, তারপর এসে আমার ভাইয়ের ঘাড়ে পড়েছে। আমার ভাইয়ের ঘাড়ে পড়ে খেয়েও শান্তি হয়নি তাই আমার হীরার টুকরো ভাতিজাটার জীবন নষ্ট করেছে।
বন্ধ্যা মেয়ে কোথাকার বিয়ের এত বছর হয়ে গেলো এখনো আমার ভাতিজাটাকে একটা সন্তানের মুখ দেখাতে পারল না।
তুর্য এবার বাড়ি ফিরলে ওকে আমরা আবার বিয়ে করাবো। এভাবে ওর জীবনটা নষ্ট হতে দিব না।
এবার তূর্য বাড়ি ফিরুক, আমি জুইয়ের সঙ্গে তূর্যর বিয়ে দেব। (পারভিন বেগম)

মায়া এসব কথা শুনে নীরবে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল।
তখনই হঠাৎ সদর দরজায়…..

চলবে….

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব২৭

বন্ধ্যা মেয়ে কোথাকার বিয়ের এত বছর হয়ে গেলো এখনো আমার ভাতিজাটাকে একটা সন্তানের মুখ দেখাতে পারল না।
তুর্য এবার বাড়ি ফিরলে ওকে আমরা আবার বিয়ে করাবো। এভাবে ওর জীবনটা নষ্ট হতে দিব না।
এবার তূর্য বাড়ি ফিরুক, আমি জুইয়ের সঙ্গে তূর্যর বিয়ে দেব। (পারভিন বেগম)

মায়া এসব কথা শুনে নীরবে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল।
তখনই হঠাৎ সদর দরজায় তূর্য এবং ইমনকে দেখা যায়।

আজ মায়ার জন্মদিন,
তাই তুর্য মায়াকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎই ইমনকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।

তবে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই যে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে তা তুর্য স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।

তুর্য কখনো চিন্তাও করতে পারেনি যে তার অবর্তমানে তার বাড়িতেই তার বউ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।

তূর্যর ফুপির এমন ব্যবহার দেখে ইমন ও স্তব্ধ হয়ে গেল।

কথায় আছে “কিছু কিছু সম্পর্ক নাকি রক্তের সম্পর্ককেও হার মানায়”, ইমন এবং মায়ার সম্পর্কটাও ঠিক ঐরকম।

মায়া লন্ডনে যাওয়ার এক বছর পরে, একদিন কথায় কথায় ইমন কে বলেছিল যে :-

-আমার বাপের বাড়ির সম্পর্কে বলতে গেলে,
এই পৃথিবীতে আমার মামনি ছাড়া কেউ নেই।
না আছে বাবা-মা, আর না আছে কোন ভাই বোন।
এক কথায় আমি পিওর অনাথ একটা মেয়ে। (মায়া)

মায়ার কথা শুনে সেদিন ইমন মায়া কে ধমক দিয়ে বলেছিল :-

-এই পাগলি মেয়ে,
কে বলেছে তোর কেউ নেই?
এই পৃথিবীতে এখনো তোর এই ভাই বেঁচে আছে।
আর কখনো যদি বলেছিস তুই অনাথ,
তাহলে চাপরে তোর গাল লাল করে দেব। (ইমন)

সেই থেকে মায়া এবং ইমন দুজনেই একে অপরকে ভাই বোন হিসেবে মেনে নিয়েছে।

তাই আজ ছোট বোনকে এভাবে মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে দেখে ইমনেরও চোখ ভিজে ওঠে।

তখনই তূর্য জোরে জোরে চিৎকার করে তার মাকে ডাকতে থাকে।

আতিয়া বেগম একটু ঘুমিয়ে ছিল, এমন সময় হঠাৎ ছেলের চিৎকার শুনে আতিয়া বেগম কোনো রকমে তার রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

ড্রয়িং রুমে হঠাৎ এত রাগী ভাবে তুর্যকে দেখে আতিয়া বেগম অবাক হয়ে তুর্যকে জিজ্ঞেস করল :-

-কি হয়েছে বাবা?
কখন এসেছিস তোরা?
কাল রাতেও তো তোদের সঙ্গে কথা হলো,
তোরা যে আসবি বললি নাতো। (আতিয়া বেগম)

তূর্য রাগী চোখে পারভিন বেগমের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল :-

-আমরা যে আসবো সেটা কাল রাতে তোমাকে বললে কি আজ তোমার ননদের আসল রূপটা দেখতে পারতাম?
আমি যদি তোমাকে জানিয়ে আসতাম,
তাহলে তো আমি কখনো জানতেই পারতাম না যে আমার নিজের বাড়িতে আমার স্ত্রী কতটা নির্যাতিত।
(তূর্য)

তূর্যর এমন কথা শুনে আতিয়া বেগম কিছুই বুঝতে পারে না তবে পরক্ষণে মায়ার দিকে তাকিয়ে আতিয়া বেগমর বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে ওঠে।

কারণ মায়া তখনো ড্রয়িং রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল।

আতিয়া বেগম তাড়াহুড়ো করে মায়ার কাছে গিয়ে মায়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে, মায়াকে জিজ্ঞেস করে :-

-কিরে মা, কি হয়েছে তোর?
তুই কান্না করছিস কেন? (আতিয়া বেগম)

তূর্য তখন আতিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল:-

-মায়া কান্না করছে কেনো তা তোমার ননদকে জিজ্ঞেস কর, সে খুব ভালোভাবেই জানে যে মায়া কেন কান্না করছে। (তূর্য)

তূর্যর কথা শুনে আতিয়া বেগম সোফায় বসে থাকা তার ননদ পারভিন বেগমের দিকে তাকালো।

ওদিকে তূর্যকে দেখার সাথে সাথেই পারভিন বেগমের সমস্ত তেজ-নিমেষে উধাও হয়ে গেছে।

পারভিন বেগম তো স্বপ্নেও ভাবেনি যে হঠাৎ তুর্য খান বাড়িতে উপস্থিত হবে। সে তো মায়াকে একা পেয়েছে ভেবে মনের আনন্দে তার সব ক্ষোভ মায়ার উপর ঝারছিল। হঠাৎ এভাবে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে কে জানতো?

তাই কি করবে বুঝতে না পেরে পারভিন বেগম ভেজা বিড়ালের মত কাচুমাচু হয়ে ড্রয়িং রুমের সোফার উপরে বসে আছে।

তূর্যর এমন চেঁচামেচির শব্দ শুনে লাইব্রেরীতে বই পড়তে থাকা আরাফ খানও এবার বেরিয়ে এলো।
আরাফ খান সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে জোর গলায় বলল :-

-কি হয়েছেটা কি?
বাড়িটাকে কি মাছের বাজার পেয়েছ?
এত চিৎকার চেঁচামেচি কিসের? (আরাফ খান)

আরাফ খান নিচে আসতেই তূর্য তাকে সবকিছু খুলে বলল, তূর্য রাগী গলায় বলল সেই সবকিছু যা সে নিজে দেখেছে এবং শুনেছে।

ওদিকে ভাইকে দেখে পারভিন বেগম যেন একটু জোর ফিরে পেল, তাই সে সোফার থেকে উঠে এসে আরাফ খানের সামনে দাঁড়িয়ে তুর্য এবং বাড়ির সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল:-

-আমি কি ভুল কিছু বলেছি নাকি?
তূর্য এই খানবাড়ির একমাত্র ছেলে,
ও যদি এই বন্ধ্যা মেয়েকে নিয়ে সারা জীবন পড়ে থাকে তাহলে আর ৫০ বছর পরে তো খান বাড়ির কোন অস্তিত্বই থাকবে না।
আমাদের বংশ এগোনোর জন্য সন্তান প্রয়োজন,
যা এই মেয়েটা দিতে পারবে না। (পারভিন বেগম)

তুর্য এবার ঠান্ডা গলায় পারভিন বেগমকে জিজ্ঞেস করল :-

-আপনাকে কে বলেছে যে মায়া সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম? (তূর্য)

-ও যদি বন্ধাই না হতো তাহলে তো গত ছয় বছরে আমরা একটা বংশধর পেয়ে যেতাম।
এখনো সময় আছে তুর্য, তুই আবার বিয়ে কর।
তুই রাজি থাকলে আমি জুঁইকে তোর সঙ্গে বিয়ে দেব। (পারভিন বেগম)

আতিয়া বেগম চমকে উঠল পারভিন বেগমের মুখে এমন কথা শুনে, সে কোন রকম নিজেকে সামলে বলল :-

-আপা আপনি এসব কি বলছেন?
ওদের এই সুন্দর সংসারে আপনি কেন আগুন লাগাতে চাইছেন?
আপনি একজন মা হয়ে কিভাবে এই এতিম মেয়েটার সংসার ভাঙার পরিকল্পনা করেন? (আতিয়া বেগম)

-আমি তো ওর সংসার ভাঙ্গার কথা একবারও বলিনি, আমি বলেছি তূর্যকে আবার বিয়ে করাতে।
তোমার ভাইজিও এ বাড়িতেই থাকবে।
আমি কি তোমার ভাইজি কে এবার থেকে বের করে দিতে বলছি নাকি?
ও পড়ে থাকবে এবাড়ির এক কোণে।
(পারভিন বেগম)

তখনই তূর্য আরাফ খানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো :-

-বাবা, আমি চাইলে অনেকক্ষণ আগেই তোমার বোনের জিভ টেনে ছিড়ে দিতে পারতাম, কিন্তু আমি চেয়েছিলাম তোমার বোনের আসল রূপটা তোমার সামনে তুলে ধরতে।
আশা করি আমি তা পেরেছি।
এবার তুমি থাকো তোমার বোনকে নিয়ে,
কিন্তু যে বাড়িতে তোমার বোন থাকবে সেই বাড়িতে আমি আর মায়াকে রাখবো না।
আমি আজই মায়াকে নিয়ে লন্ডনে চলে যাবো।(তূর্য)

তূর্যর এহেন কথা সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।

তূর্য আবার মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল :-

-মায়া যাও, রুমে গিয়ে তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। আমরা আজ রাতেই লন্ডনে ব্যাক করব। (তূর্য)

_বেশি ঢং করিস না ঐ মেয়েকে নিয়ে, শেষে দেখা যাবে…. (পারভিন বেগম)

পারভিন বেগম তার কথা শেষ করার আগে আরাফ খান সজোরে চর বসিয়ে দিল বোনের গালে।
আরাফ খানের এমন কাজে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলেও তূর্য মনে মনে খুব খুশি হলো।

বড় ভাইয়ের হাতের চর খেয়ে পারভিন বেগম কান্না করতে করতে বলল :-

-ভাইজান আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন? (পারভিন বেগম)

-হ্যাঁ, এই কাজটা আমার অনেক আগেই করা উচিত ছিল। বাপ মা মরা ওই এতিম মেয়েটাকে কম অত্যাচার করিসনি তুই। তুই যখনি আসিস, তখনই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিস, ওকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করিস।
কি ক্ষতি করেছে মেয়েটা তোর?
কিসের এত ক্ষোভ ওর প্রতি তোর? (আরাফ খান)

তূর্য পারভিন বেগমকে কোন কথা না বলতে দিয়ে, নিজেই বলল :-

-জানো না বাবা কিসের ক্ষোভ?
মায়া আমার জীবনে এসেছে বলে উনি ওনার নষ্ট এবং দুশ্চরিত্রা মেয়েকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারেনি।
সেই ক্ষোভ থেকে উনি মায়ার সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন। (তূর্য)

-একদম আমার মেয়ের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। (পারভিন বেগম)

-সিরিয়াসলি?
আমি উল্টাপাল্টা কথা বলছি?
আপনি কি ভেবেছেন? আমি লন্ডনে থেকেও আপনার লন্ডনে থাকা মেয়ের কোন খোঁজ খবর রাখেনি?
আপনি কি মনে করেন যে আমি আপনার মেয়ের সম্পর্কে কিছুই জানিনা?
লন্ডনে আপনার মেয়ে যে দুই বছর একটা ছেলের সঙ্গে লিভ ইন রিলেশনশিপে ছিল এবং লন্ডনে থাকতে একবার এবরশন করিয়েছে তার কিছুই আমি জানিনা? (তূর্য)

পারভিন বেগমের মুখটা এবার কাচুমাচু হয়ে গেল।
এতদিন সে ভেবেছিল তূর্য হয়তো জুইয়ের ব্যাপারে কোন কিছুই জানে না। তাই সে তূর্যর সঙ্গে জুইয়ের বিয়ে দেবে বলে উঠে পড়ে লেগেছিলেন কিন্তু এবার সে বুঝতে পারল যে, মায়া থাকুক আর নাই থাকুক জুঁই কখনো এ বাড়ীর বউ হতে পারবেনা।

ভাগ্নির এমন কুকীর্তির কথা শুনে আরাফ খান ও নিচু করে ফেললেন।

পারভিন বেগমও লজ্জায় মাথা নিচু করে তার রুমে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরে তার সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে সে খান বাড়ি থেকে চলে গেল।

আজ সারা দিনের সমস্ত ঘটনা নিয়ে মায়ার মনটা খুব খারাপ হয়েছিল, তাই রাতে বাড়ির সবাই মিলে মায়ার মন ভালো করার জন্য খুব সুন্দর ভাবে মায়ার বার্থডে সেলিব্রেট করলো।

রাতে তূর্য ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে মায়াকে রুমে পেল না।
তূর্য মায়াকে খুঁজতে খুঁজতে বেলকনিতে গিয়ে দেখল বেলকনির রেলিং ধরে আকাশ পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া।

তূর্য প্রথমে ধীরে ধীরে মায়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো, তারপর পেছন থেকে আলতো করে মায়ার কোমর জড়িয়ে ধরে মায়ার কাধে থুতনি ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করল :-

-এত রাতে এখানে কি করো?(তূর্য)

মায়া তূর্যর কথার জবাব না দিয়ে উল্টো তূর্যকে প্রশ্ন করল :-

-আচ্ছা, আমি কি কখনো তোমার থেকে কোন কিছু চেয়েছি? (মায়া)

-না। (তূর্য)

-আজ তো আমার বার্থডে, আজ যদি আমি তোমার থেকে কিছু চাই তাহলে কি তুমি আমাকে তা দেবে? (মায়া)

-অবশ্যই, কেন দিব না?
তুমি আমার কাছে যা চাইবে, আমি তাই দিব।
তোমার জন্য তো আমার জানও হাজির। (তূর্য)

মায়ার চোখ দুটো এবার ভিজে উঠল, কান্না মাখা কন্ঠে মায়া তুর্য কে বলল :-

-তুমি আর একটা বিয়ে করো। (মায়া)

মায়ার মুখে এমন কথা শুনে, তূর্য এবার মায়ার থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। তারপর কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে মায়াকে বলে :-

-স্বামীকে আবার বিয়ে করানোর মানে জানো তুমি?
তোমার শরীরে আমার যে স্পর্শগুলো তুমি অনুভব করো, সেই একই স্পর্শ নিজের হাতে অন্য এক নারীর শরীরে এঁকে দেওয়া।
স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করানোর মানে শুধু একটা বাচ্চা পৃথিবীতে আনার পথ খোজা না, এটার মানে হলো :- আমার প্রতি থাকা তোমার সব হক, তোমার সব অধিকার, সমস্ত কিছুর ভাগ অন্য একজনকে দিয়ে দেওয়া। (তূর্য)

-আমি জানি, আমি সবকিছু জেনে বুঝেই কথাটা তোমাকে বলেছি। (মায়া)

-sorry, আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না। (তূর্য)

-তুমি তো এইমাত্র আমাকে বললে, আজ আমি যা চাইবো তাই দিবে। (মায়া)

-তুমি আমার কাছে আমার জীবনটা চাইলে
আমি হাসতে হাসতে তোমাকে দিয়ে দিতাম।
কিন্তু তুমি আমার ভালবাসাকে তুচ্ছ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছ, তুমি আমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি আনার কথা বলেছ। তাই আমি তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। (তূর্য)

-এভাবে আর কতদিন থাকবে? (মায়া)

তূর্য ঠান্ডা গলায় জবাব দিল :-

-দেখি না আর কটা বছর,
তারপর প্রয়োজন হলে, যে সকল বাচ্চারা বাবা-মার অভাবে এতিম খানায় বেড়ে ওঠছে তাদের মদ্ধে থেকে ১টা বাচ্চাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসবো। (তূর্য)

তুর্যর মুখে এমন কথা শুনে মায়া শক্ত করে তুর্যকে জরিয়ে ধরলো এবং কান্না করতে করতে বলল:-

– তুমি যখন আট বছর পরে দেশে ফিরে হঠাৎ আমাকে দেখেই আমার সাথে সংসার করবে বলে উঠে পড়ে লেগেছিলে, তখন আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে আমার পেছনে পড়েছ।
কিন্তু তোমার সঙ্গে থাকতে থাকতে আমি একটা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে :-তোমার ভালবাসার গভীরতা ঠিক কতখানি, তখন জেদের বসে তোমাকে হারালে হয়তো জীবনে আর কখনো প্রকৃত ভালোবাসার সন্ধানই পাওয়া হতো না। আর অবাক করার বিষয় হলো #অপ্রিয়_সেই_তুমি কখন যে আমার এত প্রিয় হয়ে উঠলে, আমি বুঝতেই পারলাম না।
আমার জীবনের সকল অপূর্ণতার মাঝে তুমি এক সীমাহীন পূর্ণতা।
ভালোবাসি তোমায় (মায়া)

-আমিও এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসি তোমায়। (তূর্য)

_________________

আবারও পার হয়ে যায় কয়েকটা মাস,

তূর্য এবং মায়া আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের কোম্পানির বিভিন্ন কাজে।

এমনই একদিন কোম্পানিতে মোটা অংকের প্রফিট হওয়ায়, তূর্য তার কোম্পানির সকল স্টাফদের লাঞ্চে মাটন বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছিল।
তূর্য এবং মায়াও তূর্যর কেবিনে বসে একসাথে লাঞ্চ করছিল। কিন্তু মায়া কিছুটা খাবার খেয়েই অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করে।
খাবারটা জোর করে আর একবার মুখে নিতেই হঠাৎ মায়ার বমির ভাব চলে আসে। চেয়ার থেকে উঠে মায়া দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়, এবং ওয়াশরুমে গিয়েই গড় গড় করে বমি করতে শুরু করে।

মায়া বমি করছে এটা বুঝতে পেরে তূর্য খাবার রেখে মায়ার কাছে এসে মায়ার পিঠে হাত বুলাতে থাকে।
একটু পর মায়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে তূর্যকে বলে :-

-তুমি খাবার রেখে উঠে আসতে গেলে কেন? (মায়া)

-তুমি পাগল হয়েছ?
তুমি অসুস্থ হয়ে এখানে বমি করছ,
আর আমি ওখানে বসে বসে খাবার খাবো?(তূর্য)

-আমার না সত্যি খুব খারাপ লাগছে,
আমি বরং বাসায় চলে যাই। (মায়া)

তূর্য উতলা হয়ে বলল :-

-Ok, চলো তোমাকে বাসায় নিয়ে যাই। (তূর্য)

মায়া তূর্যর কথায় অসম্মতি প্রকাশ করে বলল :-

-তোমাকে যেতে হবে না, আমি ড্রাইভারকে নিয়ে চলে যাবো। তোমার তো একটু পরে মিটিং আছে। (মায়া)

তূর্য তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিল, তারপর কপাল কুঁচকে বলল :-

-হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।
তবে তোমার যদি বেশি খারাপ লাগে,
তাহলে আমি মিটিং ক্যানসেল করে দেই? (তূর্য)

-না,না, তেমন কিছু না।
একটু খারাপ লাগছে,
কিছুক্ষণ রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
আর আমি ড্রাইভারকে নিয়েই চলে যেতে পারবো।
তুমি মিটিং ক্যানসেল করো না। (মায়া)

তারপর কথা অনুযায়ী তূর্য মায়ার হাত ধরে মায়াকে গাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে ড্রাইভার কে বলল মায়াকে বাসায় রেখে আসতে।

বাসায় পৌঁছানোর আগে মায়া কিছু একটা ভেবে একটা ফার্মেসির সামনে গাড়ি থামিয়ে কি যেন একটা কিনে নিল।

তারপর আবার রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

কিছুক্ষণ পরে মায়া পৌঁছে গেল খান বাড়িতে।

বাড়ির ভেতরে ঢুকেই মায়ার দেখা হলো ড্রয়িং রুমে বসে থাকা আতিয়া বেগমের সঙ্গে।
আতিয়া বেগম এই অসময়ে মায়াকে বাসায় দেখে খানিকটা অবাক হলেন।
কিছু হয়েছে কিনা মায়াকে জিজ্ঞেস করতেই মায়া তার অসুস্থতার কথা জানালেন আতিয়া বেগমকে।

আতিয়া বেগম মায়াকে খাবার খেতে বললে, মায়া জানিয়ে দিল যে ও অফিস থেকে লাঞ্চ করে এসেছে।

তারপর মায়া নিজের রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নিলো।

রাতে তূর্য বাসায় ফিরে দেখলো মায়া ঘুমিয়ে পড়েছে তাই সে আর মায়াকে ডাকল না।
সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ার পাশে শুয়ে পড়লো।

কিন্তু সকালবেলা ঘুমের মধ্যেই তূর্যর কানে মায়ার কান্নার আওয়াজ এলো।

মায়ার কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই তূর্যর ঘুম উড়ে গেল, তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো মায়া রুমে নেই।

তখনই হঠাৎ তূর্য খেয়াল করল কান্নার আওয়াজটা ওয়াশরুমের ভেতর থেকে আসছে।
তাই তূর্য আর দেরি না করে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল।
ওয়াশরুমের দরজা তখন ভেতর থেকে খোলাই ছিল,
তূর্য দরজা ঠেলে ওয়াশরুমের ভেতরে যেতেই দেখল মায়া ওয়াশরুমের এক কোণে বসে কান্না করছে।

তূর্য মায়ার কাছে গিয়ে মায়ার কান্নার কারণ জানতে চাইলে, মায়া তূর্যর দিকে কিছু একটা এগিয়ে দেয়।

তূর্য প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে খেয়াল করে দেখে মায়ের হাতে একটি
“হোম প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট” যা পজিটিভ দেখাচ্ছে।
সেটা দেখে তূর্য ধুপ করে ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে পড়ে। তূর্য হাতে রয়েছে “প্রেগনেন্সি কিট”, এই ছোট্ট জিনিসটাকে ধরতেই তূর্যর হাত রীতিমতো থরথর করে কাঁপছে।
হঠাৎই তুর্য মায়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, সেই সঙ্গে তুর্যর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা অশ্রু জল।
অশ্রু কষ্টের নয়, এ অশ্রু যে বড়ই সুখময়।

চলবে…..