অবশেষে তুমি পর্ব-২৩

0
517

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা_Nazia Shifa
#পর্ব-২৩
———————————–
গোধুলী লগ্ন।ব্যালকনির গ্রিল ধরে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নূর।পাখিরা ফিরে গেছে আপন নীড়ে, সূর্য ও ডুবে গেছে পশ্চিমা আকাশে।মাগরিবের আযান দিয়ে দিবে এখনই।হাতে থাকা কাঠগোলাপের গাজরাটার দিকে আর একবার তাকালো নূর। কাব্য কিনে দিয়েছে ফেরার সময়।তবে অদ্ভুত বিষয় তার যে কাঠগোলাপ পছন্দ সেটা কাব্য কি করে জানলো?এই প্রশ্ন টা মাথায় ঘুরপাক খেলেও জিজ্ঞেস করেনি নূর।থাক না হয় অজানা কোনো একদিন সুযোগ হলে তার বুকে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করবে- আচ্ছা আপনি আমার পছন্দের কথাগুলো কিভাবে জানলেন?না বললেও কিভাবে এত কিছু বুঝেন আপনি?সেদিন ই না-হয় উত্তরটা পাওয়া হলো।মুচকি হেসে রুমে আসলো নূর। হাতের গাজরাটা সন্তপর্ণে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে নামায পড়ে নিলো।নামায শেষে রুম ত্যাগ করে নিচে গেলো।রান্নাঘরে ছিলেন মিসেস রেহেনা আর নিয়তি।সবে মাত্র নামাজ পরে এসেছেন তিনি।তাকে দেখে মৃদু হাসলো নূর।রান্নাঘরে ঢুকেই নূর বললো-

-মামনি,ফুপ্পি রাতের রান্নাটা আমি করি?

-কোনো দরকার নেই। তুই বাইরে যা তো নূর।পেছন থেকে রাগী গলায় বললেন মিসেস রাহেলা।

উনি ছিলেন না বিধায় সাহস করে বলেছিলো নূর।কিন্তু লাভ হলো না।তারপরও দমে না গিয়ে নূর বললো-

-আমি করি ছোট আম্মু। কিছু হবে না।

-বলেছি তো না।না মানে না।এসেছিস মায়ের কাছে তার হাতের রান্নাই খাবি।আমার একটা মাত্র ছেলের বউ এসেছিস দুই দিনের জন্য আর তাকে দিয়ে রান্না করাবো পাগলে পেয়েছে আমাকে।যখন আরেক ছেলের বউ আসবে তখন দুজনকে রান্না করতে দিবো তখন দেখবো।বুঝেছিস এখন যা।

-আচ্ছা তাহলে সন্ধ্যায় খাওয়ার জন্য কিছু করি?

-নুডুলস আর মালাই চা করেছি আমি।

-সেটাও হয়ে গেছে?(মন খারাপ করে)

-হ্যা।এখন তন্নীদের ডেকে নিয়ে আয়।

-হুম।

কাব্য, রিদ আর ইরাম রাও ফিরে এসেছে মসজিদ থেকে।সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছে
শুধু তিশা আর নূর নেই।কাব্য খেয়াল করতেই এদিক সেদিক তাকালো।তাকাতেই দেখলো নূর আর তিশা তাদের দাদিকে দু দিক দিয়ে ধরে নিয়ে আসছে।দাদিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তারাও বসে পড়লো।

কাব্যকে উদ্দেশ্য করে দাদি বললো-
-তোর বউ জোর করে নিয়ে আসলো আমারে।কত বললাম আমি যেয়ে কি করবো ও বলে -আমরা সবাই ওদিকে একসাথে আর আপনি এখানে একা একা বসে থাকবেন কেমন দেখায়।সবার সাথে বসলে ভাল্লাগবে।নিয়ে আসলো জোর করে।

-এটা কি ঠিক হলো আম্মা আমরা কত করে বললাম আসলেন না আর নূরের সাথে এসে পড়লেন(মিসেস রাহেলা)

মৃদু হাসলেন বৃদ্ধা।তার ছেলের বউগুলোও মায়ের মতো ভালোবাসে তাকে। তাই তো অভিমানের স্বরে কত কিছু বলে তার কাছে।হাসি বজায় রেখেই বললেন-

-তোমরা তো ছেলের বউ।ও হচ্ছে আমার নাত বউ সাথে নাতনী আবার দুই দিন পর আামকে বড় মা ও তো বানাবে।ওর কথা তো শুনতেই হবে আমাকে।

দাদির কথায় বিষম খেলো নূর।তার অবস্থা দেখে তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো কাব্য।কটমট চোখে তাকালো নূর।দাদী নাতি দু’জন ই তাকে লজ্জা দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে মনে হচ্ছে।পরিস্থিতি সামলাতে প্রসঙ্গ পাল্টালো কাব্য নিজেই।হাফ ছাড়লো নূর।পরে দেখে নিবে কাব্যকে। আজকে রুমে আসুক।
.
.
.
-ভাবিআপু তুমি আজকে আমাদের সাথে ঘুমাবে।ঈশার মুখ থেকে নিঃসৃত কথাটা কাব্যর কর্ণধার হতেই ঝট করে জবাব দিলো কাব্য –

-কেন?তোদের সাথে ঘুমাতে যাবে কেন?আমার রুমে কি হরতাল পড়েছে যে তোদের রুমে ঘুমাবে।আমার বউ আমার সাথে ঘুমাবে।

ডিনার শেষে সব গুছিয়ে সবে ড্রয়িং রুমে বসেছিলো সবাই।ঈশা কথাটা বলার পর যে কাব্য এমন প্রতিউত্তর করবে সেটা ধারনার বাইরে ছিলো সবার।বেচারি নূরতো লজ্জায় শেষ।কি একটা অবস্থা।ভাগ্য ভালো কাব্যর বাবা আর ছোট আব্বু আগেই খেয়ে উপরে চলে গেছেন।আর তার আম্মু, ছোট আম্মু ফুপ্পি রান্নাঘরে। না হলে আরও লজ্জায় পড়তো হতো।নূরের পাশেই ছিলো কাব্য। নূর কটমট চোখে তার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো-

-আপনার কি আক্কেল নেই।কি বলেছেন কি মনে করবে এখন।

নূরের ডান হাতটা নিজের বাম হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো-

-মনে করলে করুক।তাও আমার বউ আমার সাথে ই ঘুমাবে।

কাব্যর অবস্থা দেখে ইরাম শব্দ করে হেসে দিল। ঈশা ও হাসতে হাসতে বললো-

-থাক ভাই তোমার বউ তোমার সাথেই ঘুমাবে।আমাদের সাথে ঘুমালে ছোট খাটো ঝড় ও যেতে পারে আমার ওপর। তার চেয়ে বরং তোমার সাথে ই ঘুমাক।

-হ্যা ঠিক বুঝেছিস।ঘুমাতে যা সকালে বেরোবে ভোরে।গুড নাইট।কথাটুকু বলে নূরের হাত ধরে রুমের দিকে অগ্রসর হলো কাব্য।সিড়িতে দাড়িয়ে দেখছিলো সামিরা।সেই সকালের পর রুম থেকে বের হয়নি সে।নিচেও নামেনি।কাব্যকে নূরের সাথে এত বেশি খুশি খুশি দেখতে ভাল্লাগছেনা তার।
.
.
রুমে এসে নূর কাব্যর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-কি সমস্যা? কি বলছিলেন বাইরে?

-কিছুই বলিনি আর কোনো সমস্যা ও নেই।ঘুম পেয়েছে আসো

-ঘুৃমাবো না আপনার সাথে।আমি ওদের সাথেই ঘুমাবো।আপনি রিদ ভাইয়া ইরাম ভাইয়া দের সঙ্গে ঘুমান

-রাগিয়ো না নূর।প্রচুর ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো।

-ঘুমান আমিতো না করিনি।আমি ওদের সাথেই ঘুমাবো গেলাম আমি

নূর চলে যেতে ধরলেই পাঁজা কোলে করে নিয়ে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিলো।নূরকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে পাশে শুয়ে পরলো কাব্য।ঘটনা এতটাই দ্রুত ঘটলে যে বুঝতে সময় লাগলো নূরের।বোধগম্য হতেই হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করলো নূর।তা দেখে থমথমে গলায় কাব্য বললো –

Don’t spoil my mood Nur.চুপচাপ ঘুৃমাও।নাহলে..

কাব্যর শান্ত, থমথমে গলায় বলা ছোট্ট দুইটা বাক্যেই দমে গেলো নূর। রাত বিরাতে ধমক বা বকা খাওয়ার মতো শখ নেই তার।চুপ করে গুটিশুটি মেরে রইলো কাব্যর বুকে। মূহুর্তেই ঘুম এসে ধরা দিল ক্লান্ত আখি জোড়ায়।
___________________________________
মেঘলা আকাশ।চারিদিকে হিম শীতল করা শো শো আওয়াজে বাতাস।সাথে অঝোর ধারায় বৃষ্টি।সময় এখন সকাল ৮টা ৪৩।আয়নার সামনে বসে চুল মুছছে নূর।ভোরে বের হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির জন্য সম্ভব হয় নি।তবে বৃষ্টি দেখে লোভ সামলাতে পারেনি নূর।ছুটে গিয়েছিলো ছাদের উদ্দেশ্যে।কিন্তু তার আগেই ধরা পড়েছে কাব্যর হাতে।ধরে এনে তার সাথে বেঁধে রেখেছে।ছোটবেলায় তো মাও এমন করতো।বৃষ্টি হলেই ছুটে যেত সে মায়ের অগোচরে ভিজতে কিন্তু মা কোনো না কোনো ভাবে টের পেয়ে যেত।কান ধরে নিয়ে আসতো বাসায়।মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে উঠলো নূরের।

-কাঁদছ কেন?
আচমকা কাব্যর গলার স্বরে কেঁপে উঠলো নূর।চোখ মুছে বললো-

-আপনি না ঘুমিয়ে ছিলেন?

-জেগে ছিলাম।কেউ একজন তার ভেজা চুলের মন মাতানো সুগন্ধে জাগিয়ে তুলেছে।এখন বলো কাঁদছ কেন?

মলিন হাসলো নূর।কিছু বললো না।

এদিক আসো।

হাতের তোয়ালে টা রেখে এগিয়ে গেলো নূর। সামনে যেতেই তার ডান হাত টা টেনে নিজের কোলে বসালো কাব্য।তারপর নরম স্বরে বললো-

-কি হয়েছে বলবেনা

মাথা নিচু করে জবাব দিলো নূর –

-আম্মুর কথা মনে পড়ছে অনেক।

কিছু বললো না কাব্য। কি-ই বা বলবে।তার নিজেরই তো খুব করে মনে পরে তার ফুপ্পির কথা।নিজের মায়ের থেকে বেশি ফুপ্পির নেউটা ছিলো সে।সেই ফুপ্পির আচমকা মৃত্যুর খবরটা নিতে সময় লেগেছে অনেক।এত বড় ধাক্কা সামলাতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে।যেখানে তার ই এ অবস্থা নূরকে কি বুঝাবে। চুপ করে রইলো সে।দু হাত দিয়ে কাব্যর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো নূর।উদাস কণ্ঠে বললো –

-আম্মু যদি বেচে থাকতো তাহলে কি হতো কাব্য।কেন চলে গেলো আম্মু আমা,,

কথার মাঝখানে কাব্য থামিয়ে দিলো নূরকে।তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো-

-এভাবে বলতে হয় না নূর।আল্লাহ যাকে যতটুকু হায়াত দেন সে ততটুকু ই বাঁচে। ফুপ্পিকেও আল্লাহ অতটুকু হায়াত দিয়েই পাঠিয়েছিলেন আর তারপর নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। কেউ চাইলেও কিছু করতে পারবেনা নূর তাই এসব বলবেনা।ফুপ্পি যেন ওপারে ভালো থাকে সবসময় সেটাই চাইবে।

-হুম।
আজ এতো সুন্দর আবহাওয়া থাকা সত্ত্বে বিষন্নতায় ছেয়ে আছে তার মন।চোখ মুছে কাব্যর কাঁধ থেকে মাথা উঠালো নূর। তারপর বললো-

-ফ্রেশ হয়ে নিন।চা কি দিয়ে যাবো?

-উহুম আমি আসছি।

-আচ্ছা। কাব্যর কোল থেকে উঠতে নিলেও থেমে গেলো নূর। এক হাত কাব্যর গালে রেখে কপালে উষ্ণ স্পর্শ একে দিলো।কালকের মতো অবাক না হলেও এই মূহুর্তে এটা আশা করে নি সে।মুচকি হেসে রুম ত্যাগ করলো নূর।কাব্য ও খুশি মনে ওয়াশরুমে ঢুকলো।তাকে অবাক করে দিয়ে যদি প্রতিটা সকালের শুরু এমন মিষ্টি হয় তাহলে মন্দ কি।
.
.
রান্নাঘরে দাড়িয়ে আছে তিশা আর নূর।উদ্দেশ্য ভুনা খিচুড়ি আর গরু গোশত ভুনা রান্না করা।বৃষ্টির দিন হওয়ায় সবাই এটাই ডিসাইড করেছে।নূর রান্না করবে সেটার জন্য রাজি করাতে পারছিলো না সে। শেষে কাব্যকে দিয়ে রাজি করিয়েছে।তন্নী আর ঈশা দুই টাই রান্নায় একেবারে ডিম।ঈশা তো রান্নার ‘র’ টাও জানেনা।তিশা পারে টুকটাক রান্না করতে।তাই সে হেল্প করবে।
চপিং বোর্ডে পেঁয়াজ কুঁচি করছিলো তিশা।তখন ই কাব্য এসে বললো-

-তিশু তোকে তন্নী ডাকছে।

-কাজ শেষ হোক পরে যাবো।

-এখন ই যেতে বলেছে।

-আচ্ছা। ভাবি আপু আমি দেখে আসি যেয়ে।

-যাও।

তিশা যেতেই কিচেনে ঢুকলো কাব্য। নূর তাকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-কী চাই?

-তোমাকে।

বিষম খেলো নূর।আজকাল ঠোঁটকাটা স্বভাবের হয়ে গেছে।কিছু জিজ্ঞেস করলেই সোজাসাপটা উত্তর অথচ সবার সামনে এমন ভাব যেন দুনিয়ায় তার থেকে বেশি গম্ভীর আর শান্ত মানুষ একটাও নেই।
পাল্টা প্রশ্ন করলো নূর।

-আমাকে দিয়ে কি করবেন?

-সামনে বসিয়ে রাখবো।চোখ ভরে দেখবো।টুপটাপ চুমু খাবো কিন্তু কেউ কিছু বলবে না।

-আমাকে না রোবট লাগবে আপনার।সামনে বসিয়ে রাখবেন,চোখ ভরে দেখবেন আর টুপটাপ চুমু খাবেন কিন্তু সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না কারন তার মধ্যে সে ফিচার নেই।বুঝেছেন?যান হারিকেন দিয়ে খুজুন পেয়ে যাবেন।

-বেশি কথা বলো তুমি।মানুষ এত কথা কিভাবে ব’লে

-আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন না

-তোমাকে না দেখলে জানতাম ই না।

-সেটাই। কাজ করুন এই কাঠি টা নিন চুলগুলো খোঁপা করে দিন।

-হুম।

নূরের পেছনে যেয়ে যত্ন সহিত চুলগুলো খোঁপা করে দিলো কাব্য।

-কাব্য ভাই মিথ্যে বললে কেন তুমি?তন্নীপু তো ডাকে নি আ,,,

তিশার কণ্ঠ পেতেই তাড়াহুড়ো করে সরে আসলো কাব্য।

-উপপসস সরি ভুল সময়ে আসলাম।আমি কিন্তু দেখিনি কিছু।

-হ্যা তোদের কাজ ই তো এগুলো।কথা খানি বলেই দাঁত কিড়মিড় করতে করতে কিচেন থেকে চলে গেলো কাব্য। কাব্য যেতেই তিশা শব্দ করে হাসলো।কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে নূর। হাসতে হাসতে তিশা বললো-

-আরে ভাবি আপু এত লজ্জা কেন পাচ্ছো বলোতো। আমি ই তো।আর চুলটাই বাধছিলো অন্য কিছু তো না।

-অনেক পেকে গেছো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে দেখা যায়।

হুট করেই হাসি থামিয়ে চুপ হয়ে গেলো তিশা।হাসিমাখা মুখ খানা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো তার।

-কি হয়েছে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলে যে?

-কই কিছু না ভাবি এমনিতেই।

কথা বাড়ালো না নূর।কাজে মন দিল।
.
.
দুপুরের খাবারের পর এখন যার যার রুমে সবাই।বরাবরের মতো নূরের রান্নার প্রশংসা করেছে সবাই।রান্না করাটা তার শখ বটে।আর প্রশংসা শুনতে কার না ভাল্লাগে।যা-ই হোক এখন একটু বিশ্রাম দরকার।ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিল বেডে।পাশেই কাব্য ল্যাপ্টপে কি যেন করছে।তার এক হাত টেনে মাথার নিচে দিলো নূর।হুট করেই মাথা ব্যথা করছে তারওপর তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ঘুমাতে বদ অভ্যাস হয়ে গেছে এখন।

-মাথা ব্যথা করছে?

-হুম একটু একটু।

কোল থেকে ল্যাপ্টপ টা নামিয়ে নূরের মাথাটা নিজের কোলে নিলো সন্তপর্ণে। তারপর আস্তে আস্তে মাথা টিপে দিতে লাগলো কাব্য। মুচকি হাসলো নূর।তার ভাগ্য যে আসলেই ভালো না হলে এমন বর ক’জনের হয়।আলহামদুলিল্লাহ বলা যায় হাসিমুখেই।
___________________________
বিকেলের দিকে কমেছিলো বৃষ্টি এখন আবার বৃষ্টি হচ্ছে।আকাশটা একেবারেই মেঘাচ্ছন্ন।চাঁদ টাও লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে।বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে নূর। দৃষ্টি তার দূর আকাশে নিবদ্ধ।ক’টা বাজে কে জানে।দেখার জন্য রুমে যেতেও ইচ্ছে করছে না তার।দশটার থেকে একটু বেশি হবে হয়তো।বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি চোখেমুখে এসে পড়ছে নূরের।খানিক ভিজেও গেছে সে।তবে সে সব কিছুর তোয়াক্কা করলো না।ভালো লাগছে তার এই পরিবেশটা তবে মনের কোণে খানিক অস্থিরতা অনুভব হচ্ছে। কিন্তু কেন?সে উত্তর জানা নেই তার।কাব্যর দেয়া কাঠগোলাপের গাজরা টা তার খোপায় গোজা।একটু আগেই পড়েছে।পরনে শুভ্র রঙা শাড়ী।হাতে এক মুঠ শুভ্র রঙের চুড়ি।গত জন্মদিনে তন্নী দিয়েছিলো তাকে।আজকে প্রথম পড়েছে।

রুমে এসে নূরকে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি মারলো কাব্য। নির্ঘাত মেয়েটা বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।কাব্যর ধারনা ই ঠিক। বারান্দার দিকে অগ্রসর হলো কাব্য।নূরের পাশে যেয়ে দাড়ালো সে। সে পাশে দাড়াতেই তার দিকে ঘুরলো নূর।নূরকে দেখেই থমকে গেলো কাব্য।রুমের ভেতর জ্বলতে থাকা হলুদ
ফেইর‍্যি লাইটের আলো পড়ছে নূরের মুখের ওপর।মুখশ্রীতে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানিকণা গুলো জ্বলজ্বল করছে হলুদ আভায়।হিম শীতল করা বাতাসে থেমে থেমে কাঁপুনি ও দিচ্ছে শরীরে সেটাও ভালো করেই বুঝতে পারছে কাব্য।সবকিছু মিলিয়ে তাকে চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করছে নূর।তাড়াতাড়ি করে চোখ ফিরিয়ে নিলো কাব্য। কোনো ভুল করা যাবে না।নিজেকে ধাতস্থ করলো।নূরকে জিজ্ঞেস করলো-

-এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? ভিজে যাচ্ছো যে সে খেয়াল আছে?

-ভালো লাগছে

-ঠান্ডা লেগে যাবে।

-আপনি আছেন না।যত্ন নিবেন ভালো হয়ে যাবো।

হাসলো কাব্য।খানিকক্ষণ নিশ্চুপ দুজন। হুট করে কাব্যর দিকে তাকালো নূর।কাব্য আর বারান্দার গ্রিলের মাঝখানে কিঞ্চিৎ দূরত্ব ছিলো।সেই সুবাদে কোনোরকম কাব্যর সামনে দাঁড়ালো নূর।নূরের হেন কান্ডে খানিক হকচকিয়ে গেলো কাব্য।তবে স্বাভাবিক কণ্ঠে ই জিজ্ঞেস করলো-

-কি হয়েছে? কিছু বলবে

কিছু বললো না নূর। শুধু মাথা ওপর নিচ করলো যার মানে হ্যা।

-বলো তাহলে

নূর চুপ।নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে।বুকের ভেতর তার ধুকপুক করছে।তবুও সামলে নিলো নিজেকে।নত মস্তক উপরে উঠালো।তাকালো কাব্যর দিকে।দুই পায়ের পাতায় ভর করে কাব্যর কাধে দুই হাত রেখে অধর ছুয়ে দিলো অধরে।সরে আসলো নূর। আবারো মাথা নত করে দাড়ালো।নূরের হেন কান্ডে হতবাক কাব্য। বিশ্বাস হচ্ছে না তার এখনো।কি হলো?হেলুসিনেশন ছিলো তার?নাহ নূরের ভেজা ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ পেয়েছে সে।উপলব্ধি করেছে।ভ্রম তো মোটেও না।নূরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো কাব্য।মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করলো নূর। মাথা তুলে তাকালো কাব্যর দিকে।তারপর নিচু স্বরে বললো –

-আপনি অনেক ভালো এত্তগুলা ভালো।আপনার কথা আপনি রেখেছেন। এখন পর্যন্ত আমার অনুমতি ছাড়া কিছু করেন নি।জোর ও করেন নি আমায়।তবে এখন যে আমি নিজেই চাই নিজেকে আপনার কাছে বিলিয়ে দিতে।আপনার প্রেমের রঙে রাঙাতে চাই নিজেকে। আপনার স্পর্শ গুলো গভীরভাবে অনুভব করতে চাই।খুব করে চাই আপনাকে।নিজেদের মধ্যকার সব দূরত্বের ইতি ঘটাতে চাই।আজ যদি আমাকে একটু বেশি আদর করে দেন তাহলে কি বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে?

এক দমে কথাগুলো বলেই মাথা নত করে পূর্বের ন্যায় দাড়িয়ে রইলো নূর। নূরের কথাগুলো শুনে থমকালো কাব্য। মুখে ফুটে উঠলো প্রাপ্তির হাসি।ঠোট প্রসারিত করে হাসলো। নূরের মুখখানা নিজের দুই হাতের আজলে নিলো কাব্য।ফিসফিসিয়ে বলল-

-আমিও যে চাই আমার বৈধ প্রেমিকাকে নিজের ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে।তাকে গভীরভাবে নিজের স্পর্শে ভড়িয়ে দিতে।তার সবটা জুড়ে থাকুক শুধু আমার বিচরণ।আজ কি তবে সেই অনুমতি দিচ্ছে সে।

কাব্যর হাতের ওপর হাত রাখলো নূর।সম্মতি পেতেই
পরপর দুটো চুমু খেলো নূরের কপালে।তারপর আলতো করে অধর ছোয়ালো চিবুকে।চিবুক থেকে নামতে নামতে ঘাড়ে এসে থামলো কাব্য। সেখানটায় ছোট্ট চুমু খেলো। তারপর কোলে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।নূরকে বেডে শুয়িয়ে তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল-

-আমার মায়া মোহিনী।যার মায়ার জালে খুব করে জড়িয়ে গেছি আমি।যাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নিতেও দম বন্ধ লাগে আমার।

#চলবে