অবশেষে তুমি পর্ব-২৪+২৫

0
564

#অবশেষে_তুমি
#লেখিকা_Nazia Shifa
#পর্ব_২৪
____________________
জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের কিরণ চোখেমুখে পড়ছে যার দরুন চোখমুখ কুচকে এলো নূরের।কপালে ভাজ পড়লো তার।নড়তে নিলেও নড়তে পারলোনা।কাব্যর এক হাত তার পেটের ওপর আর এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।নূরও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। নিজের অবস্থান টের পেতেই হাসলো নূর।একটু উঁচু হয়ে কাব্যর দিকে দৃষ্টি রাখলো।গত রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো সে। দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সাথে সাথে।তখনই ফোন বেজে উঠল কাব্যর।চমকে যেয়ে কেপে উঠলো নূর।ঘুম ভেঙে গেল কাব্যর।চোখ খুলে মুখে হাসি টেনে মিহি স্বরে বললো-

-গুড মর্নিং।

নিচু স্বরে নূরও বললো-

-গুড মর্নিং।ছা,ছাড়ুন,,

-কেন?

-ফোন বাজছে আপনার।

-ওহ হ্যা।

বেড থেকে উঠে এলোমেলো চুল গুলো খোপা করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকলো নূর।কাব্য ও ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো।
.
.
ছাদের বাম পাশে ছোট্ট খুপরির মতো ঘরটায় বসে আছে তিশা।ছোটখাটো হলেও গোছানো একেবারে।তার প্রিয় সব জিনিসগুলো ঠাই পেয়েছে এখানে।মেঝে থেকে উঠে সামনে এগিয়ে গেলো সে।সামনে থাকা ছোট্ট টেবিলটা হতে ছবির ফ্রেম আর ডায়েরিটা তুলে নিয়ে পুনরায় মেঝেতে এসে বসলো।ডায়েরি টা পাশে রেখে ফ্রেম টা হাতে নিলো। হাতে নিতেই চোখ ভিজে উঠলো তার।ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বললো –

-আপনাকে ভালোবেসে কি নিজের ক্ষতি করে ফেলেছি আমি?মনের কোণে আপনার জন্য জাগা সুপ্ত অনুভূতি গুলোকে ঠাই দেয়াটা কি অপরাধ হয়ে গেছে?বেশি কিছু তো চাইনি একটু ভালোবাসা চেয়েছি।অথচ আপনি এমনভাবে এড়িয়ে চলেন যেন কোনো তুচ্ছ বস্তু আমি।আপনি অনেক খারাপ, একটুও ভালোনা।জানেন কালকে না খুব করে ইচ্ছে করে ইচ্ছে করছিলো আপনার হাতে হাত রেখে বৃষ্টি দেখার কিন্তু আমার যে সেই অধিকার নেই।

কথাগুলো বলে থামলো তিশা।কিছুক্ষণ অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে।তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-আমার না হওয়া প্রিয়’।হাতের জিনিস গুলো জায়গা মতো রেখে চোখ মুছে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে।ছাদের সিড়ির কাছে আসতেই দেখা হলো ইরামের সাথে।তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলো সে।

-তুই এখানে কি করছিলি তিশু?

-ক,,কই কিছুনা। এমনিই এসেছিলাম।(নিচের দিকে তাকিয়ে)

-ওহ।তোকে ডাকছে সবাই নাস্তা করতে।আয়

-জ্বি।

তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইরাম।এই দীর্ঘশ্বাস ই যে হবে নিত্যসঙ্গী।করার কিছুই নেই।চাইলেই সবকিছু সম্ভব না।

-আপনি যাবেন না?

-হ্য,,হ্যা।
.
.
রুমে বসে ফোন স্ক্রোল করছিলো কাব্য।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলে তাকালো সে।তাকাতেই সামিরাকে দেখে মেজাজ চরম বিগড়ে গেল।তবুও শান্ত কণ্ঠে বললো –

-কি সমস্যা তোর।আমার রুমে আসার সাহস কি করে হলো।কেন এসেছিস

কাব্যর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হুট করে জড়িয়ে ধরলো তাকে।

-প্লিজ কাব্য আমি সত্যি ই অনেক ভালোবাসি আপনাকে।কেনো বিয়ে করলেন আপনি?তাও আবার ওই নূরের মতো মেয়েকে। তার চেয়ে শতগুণে ভালো আমি।প্লিজ

সামিরার কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলো তাকে।সোজা মেঝেতে যেয়ে পড়লো সে।তাকে কিছু বলবে তার আগে ই কাব্যর চোখ পড়লো দরজায় দাড়ানো আগুন্তকের দিকে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামিরা ও তাকালো সে দিকে।তাকাতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার।দরজায় দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা আর কেউ না বরং নূরই।তার দৃষ্টিও শান্ত তবে ভেতরে ভেতরে ফুুসছে সে।কাব্য শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।দেখা যাক সে কি করে।রুমে এসে সামিরার সামনে এসে তাকে টেনে দাড় করালো।তারপর শক্ত কণ্ঠে বললো –

-তুমি এখানে কি করছিলে?

আমতাআমতা করে সামিরা জবাব দিলো-

-আব,,ব ভাবি আম,আমি তো ভা,ভাইয়ার সাথে কথা বলতে এসেছিলাম।

-আচ্ছা।কিসের কথা আমিও একটু শুনি

-এমনেই একটু কথা ছিলো।তুমি শুনে কি করবে

-কিছু করবোনা।বলো দেখি।

-কিছু না বললাম তো ভাবি

-আরে বলো।

নাছোরবান্দা নূর।শুনেই ছাড়বে যদিও সে জানে কেনো এসেছে সামিরা।তাকে চুপ থাকতে দেখে নূর বললো –

-তোমার ক্যারেক্টার এত ঢিলা কেন সামিরা।কথায় কথায় জড়িয়ে ধরো কেন।ছোটো বেলায় মনে হয় ওই গানটা একটু বেশি ই শুনেছিলে।কি জানি নাম।উম,,,ওহ হ্যা “কেয়া কারু তো সালা ক্যারেক্টার ঢিলা হে”।তোমার সাথে একেবারে পারফেক্ট।

কাব্যর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-স্ক্রু টাইট করে কি দিয়ে জানি ওইটা আছে আপনার কাছে?

কিছু না বুঝে অবাক হয়ে তাকালো সামিরা নূরের মুখ পানে। জিজ্ঞেস করলো-

-ওইটা দিয়ে কি করবে?

নূর দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো-

-তোমার ঢিলা ক্যারেক্টার টাইট করে দিতাম যাতে যাকে তাকে জড়িয়ে না ধরো আর কাব্যর থেকে দূরে থাকো।

নূরের কথা শুনে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো কাব্য। সামিরা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো নূরের দিকে। তা দেখে নূর বললো –

-তুমি আমার ননদ শুধু এজন্যই তোমার গালে আমার আঙুলের ছাপ পড়েনি এখনো।এরপর থেকে কাব্যর থেকে দশ হাত দূরে থাকবে।বড় ভাইয়া বলে ডাকবে।আমার রুমে আসবেনা আর আমি না থাকলে তো একদমই না সেটা এখানে হোক আর ওখানে।এরপর যদি আশেপাশে দেখেছি তাহলে আমার হাত তোমার গাল।বুঝেছো?যাও

আর দাড়ালোনা সামিরা।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুম ত্যাগ করলো।সে যেতেই কাব্যর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো নূর।চোখে মুখে রাগ যেন উপচে পড়ছে।কাব্য কাচুমাচু হয়ে বাচ্চা বাচ্চা ভাব নিয়ে তাকালো নূরের দিকে।তারপর –

-আমি কিছুই জানিনা নূর।জান বিশ্বাস করো আমি একেবারে ইনোসেন্ট।

-নাটক কম করুন বুঝেছি আমি।ওর আশেপাশে ও ঘেঁষবেন না। শুধু ওর না অন্য কোনো মেয়ের ধারে কাছে ও যেনো না দেখি

ঠোট প্রসারিত করে হাসলো কাব্য।বোঝাই যাচ্ছে তাকে সামিরার সাথে দেখে জ্বলছে তার।সিরিয়াস ভঙ্গিতে নূরকে জিজ্ঞেস করলো-

-একটা জিনিস খেয়াল করেছো নূর?

-কি?

-তুমি ইদানিং একটু বেশি বেশি ই জেলাস ফিল করো।

চোখ রাঙিয়ে তাকালো নূর।

-ইন্সিকিউর ফিল করো যখন অন্য কোনো মেয়ে আমার পাশে থাকে।

-বেশি কথা বলেন আপনি

-উহুম সত্যি কথা এটা।আর জানো মানুষ কখন এমন করে

প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো নূর।তা দেখে কাব্য তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো-

-প্রেমে পড়লে।অনেক বেশি ভালোবেসে ফেললে।

কাব্যর কথা শুনে মাথা নত করলো নূর।কাব্য আবার বললো-

-তার মানে তুমিও আমাকে লাভ লাভ করো জান(চোখ মেরে)

লজ্জায় গাল দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে নূরের।সেখানে দাড়িয়ে থাকতে না পেরে চলে আসছিলো।বাধ সাধলো কাব্য। শাড়ির আঁচলে টান পড়লো বুঝলো কাব্য ই আটকেছে।পেছন ফিরলো নূর তাকালোনা কাব্যর দিকে।তার সামনাসামনি এসে দাড়ালো কাব্য।কাব্যর গরম নিঃশ্বাস চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে নূরের।আপনা-আপনি চোখ বুজে এলো তার।থুতনিতে হাত রেখে নত মাথা উপরে তুললো কাব্য।মিহি কণ্ঠে বললো –

-চোখ খোলো নূর

খুললো না নূর।কাব্য আবার বললো-

-নূর তাকাও।

এবার চোখ খুললো নূর। মাথা নত করতে নিলেই আটকালো কাব্য। জিজ্ঞেস করলো-

-তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো নূর?এজন্যই পালিয়ে বেড়াচ্ছো সকাল থেকে।নাস্তার সময়ও কোনোরকম একটু খেয়ে উঠে রান্নাঘরে চলে গেলে।সকাল থেকে রুমেও আসোনি বেশি। এত লজ্জা পাচ্ছো কেন বলতো। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে।এখন আর লজ্জা পেয়ে কি হবে। তোমার লজ্জা রাঙা মুখ দেখে তো আমার ইচ্ছে করছে আবার,,,

চকিতে কাব্যর দিকে তাকালো নূর। কোনোরকম নিজেকে ছাড়িয়ে ধুপধাপ পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।তার সামনে থাকলেই বিপদ।নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসলো কাব্য।
.
.
লাঞ্চ শেষে এঁটো প্লেট,গ্লাস গুলো গুছিয়ে সবে রুমে এসেছে নূর।বেডে বসতেই ফোন বেজে উঠল।সাইড টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিতেই এক চিলতে হাডি ফুটলো ঠোঁটে। ফোন রিসিভ করে –

-আসসালামু আলাইকুম আব্বু।কেমন আছো?

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো?

-আলহামদুলিল্লাহ। এত দিনে মনে পড়লো আমার কথা(অভিমানী স্বরে).

হালকা হেসে বললেন –

-কাব্যর সাথে তো প্রতিদিন কথা হয়। প্রতিদিন ই জিজ্ঞেস করি তোর কথা।

-বাহ মেয়েকে রেখে মেয়ের জামাইর সাথে প্রতিদিন কথা বলো আর আমার কোনো খবর নেই।

– আহা রাগ করছিস কেন?

-রাগ করিনি আমি

টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিলো নূর।কাব্যর দিকে ঘুরতেই কাব্য বললো-

-আমাকে ঠিক ই ফোন দেয় বাট কথা তোমারই হয়।

আর কিছু বললো না নূর।বেডে যেয়ে বসলো সে। ফেবুতে যাওয়া হয় না অনেকদিন। লগ ইন করে বালিশটা নিয়ে একটু আয়েশি ভঙ্গিতে শুতে যাবে তখনই ডাক দিলো কাব্য।

-কি?

-ফোন নিয়েছো কেন?ঘুমাও

-আমার দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই জানেন ই তো।

-সবাই ঘুমাচ্ছে তো তুমি কি করবে

-স্ক্রোলিং।

-পড়ালেখার খবর আছে কোনো, খালি তো উড়ছো।কালকে ফিরে যাবো ঢাকায়।

-কেন?আর দু’দিন থাকি না হয় একদিন

-নাহ কালকেই ফিরে যাবো।সব কিছু গুছিয়ে নাও।

-ঠিক আছে। (মন খারাপ করে)

নূরকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো-

-আবার আসবো মন খারাপ করছো কেন

-সত্যি তো?সেবার কিন্তু বেশিদিন থাকবো আর ঘুরতেও নিয়ে যাবেন ঠিক আছে?

হালকা হেসে জবাব দিলো কাব্য –

-ঠিক আছে।
.
.
.
বিকেল চারটা প্রায়।রান্নাঘরে কাজ করছে নূর আর তিশা।চা আর পটেটো নাগেটস বানাতে এসেছে।কালকের মতো ঝুম বৃষ্টি না হলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘলা আকাশ আর ঠান্ডা বাতাস।সব মিলিয়ে শীতল এক পরিবেশ।কথায় কথায় কালকে ইরাম বলেছিলো তার নাকি পটেটো নাগেটস পছন্দ তাই আজকেই বানিয়ে দিলো নূর। কালকে তো সকালেই ফিরে যাবে।ফিরে যাওয়ার কথা মনে হতেই মন খারাপ হয়ে গেলো তার। যাই হোক কাজে মন দিলো সে।তার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে তিশা।কাজ করতে করতে ই তিশা বললো-

-তোমরা চলে যাবে কালকে।মিস করবো অনেক।আর দুইটা দিন থেকে গেলে হয় না?বড় আব্বুকে বলি?

-না তিশা তোমার ভাইয়া বলে দিয়েছেন এখন শশুড় আব্বুও কিছু বলতে পারবেন না।আমিও তো মিস করবো তোমাদের।

-তাও কথা ভাইয়া বলে দিয়েছে মানে ওটাই ফাইনাল।

-হ্যা।তোমাদের এক্সাম শেষ হলে যেয়ো।ইরাম ভাইয়াকে বলে দিবো নিয়ে যাবে তোমাদের।

-হু,,যদি নিয়ে যায় যাবো

-নিয়ে যাবেনা কেন

আনমনে তিশা বললো-

-ওনার তো সময় নেই আমার পেছনে খরচ করার তাই

-মানে?

হুশ ফিরলো তিশার।বিচলিত কণ্ঠে বললো –

-আব,,ব কি কিছুনা ভাবি। যাবো এক্সাম শেষ হোক।

-হু।সব তো রেডি বড়দেরটা ড্রয়িং রুমে দিয়ে আসো। আমাদেরটা ছাদে নিতে হবে।

-হ্যা।দাড়াও মাদুর টা বের করে আনি।

-হুম।

ছাদে মাদুর পেতে গোল হয়ে বসেছে সবাই।ঈশা তো অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু তিশা একদম চুপচাপ আজকে।তন্নী তো রিদ কে দেখতেই ব্যস্ত।ঈশার বকবকানি শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে কাব্য বলেই ফেললো –

-বইন থাম কানের পোকগুলা এমনেই মরে গেসে। পোস্টমর্টেম করতে বডি অন্তত প্রয়োজন সেটা অক্ষত রাখতে দেয়।চুপ মার এখন।

কাব্যর হেন বাক্যে থতমত খেয়ে গেলো সবাই।তারপর ঈশাই বললো-

-ভাবি আপুরর কথা বলার ধরনও তোমার মধ্যে ডাউনলোড হয়ে গেছে।বাহ এফেক্টস অফ ওয়াইফ।হি হি হি।

-ঈশু চুপ করবি না মার খাবি

-কেনটাই না।

-ঠিক ই তো চুপ করবে কেন।ঠিক ই তো বলেছে(নূর)

নূরের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল কাব্য। সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করলো নূর।এত মানুষের মধ্যে তো তাকে কিছু করতে পারবে না।পরেরটা পরে দেখা যাবে।

ঘন্টা খানেক ছাদেই আড্ডা দিলো সবাই।অতঃপর ঠিক করলো যে সন্ধ্যার পরে বেরোবে সবাই।
.
.
কাবার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নূর।খুঁজছে মূলত কোন শাড়িটা পরবে।কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেনা।

-এমন সং সেজে দাড়িয়ে আছো কেন?

কাব্যর কণ্ঠ পেয়ে কাবার্ড থেকে চোখ সরিয়ে কাব্যর দিকে তাকালো।তারপর বললো –

-শখ জেগেছে আসুন আপনিও দাড়িয়ে থাকেন।

-নো থ্যাঙ্কস আমার অত শখ জাগেনি।

কাব্যর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবার কাবার্ডে দৃষ্টি রাখলো নূর।এত শাড়ির মাঝখানেও কোনোটা পছন্দ হচ্ছে না তার। আজিব ব্যাপার

-দেখি সরো।

কাব্যর কথায় তার দিকে তাকালো নূর।কাবার্ড থেকে পার্পল কালারের একটা শাড়ী বের করে নূরের হাতে দিলো আর বললো-

-ধরো,,এটা পরো।আমার প্রেয়সীকে আজকে পার্পল কালারে দেখতে চাই,,Like a Lavender.

-আচ্ছা। আপনি যান তাহলে

-হুম।চলে যেতে নিলেও আবার দাড়িয়ে পড়লো কাব্য। তাকে দাড়াতে দেখে নূর জিজ্ঞেস করলো-

-কি হলো দাড়িয়ে পরলেন কেন?

-তোমাকে শাড়ি পড়া শিখতে বলেছিলো কে? হ্যা।

অবাক হয়ে নূর জিজ্ঞেস করলো-

-কেন কি হয়েছে?

-কি হয়নি বলো।তুমি শাড়ী পরতে না পারলে আমি পরিয়ে দিতাম আর সে-ই ফাকে…

-দোহাই লাগে চুপ করুন আপন।যান প্লিজ।

-এখন যাচ্ছি। তবে একদিন কিন্তু

-যান।
.
.
নিস্তব্ধ পরিবেশ। কোলাহল একেবারে নেই বল্লেই চলে।এমনি তেই বৃষ্টির রাত তারওপর গ্রামের সাইড হওয়ায় কোলাহল মুক্ত।দু পাশে সারি সারি গাছ তার মাঝখানে সরু রাস্তা।সেই রাস্তাতেই হাটছে একদল মানব-মানবী।কেউ তার প্রিয় মানুষটার লাগামহীন কথাবার্তায় লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।কারো মন ছেয়ে আছে বিষন্নতায়,কারো বা মনের মাঝে রং-বেরঙের অনুভুতিরা ডানা ঝাপটাতে ব্যস্ত।তবুও এই মূহুর্তে গন্তব্য সবার একই।উদ্দেশ্যহীন এক গন্তব্য।
সবার সামনে কাব্য আর নূর।নূরের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে হাটছে কাব্য।তাদের পেছনে তন্নী আর ঈশা।তন্নীর বাম পাশে একটু দূরেই কাব্যর পেছনে রিদ।তাদের পেছনে তিশা আর ইরাম।ঈশা কথা বলছে তন্নীর সাথে কিন্তু তার মনোযোগ সম্পূর্ণ রিদের ওপর।তিশা আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে ইরামের দিকে। অথচ তার দৃষ্টি সামনের দিকে যেন পাশে কেউ ই নেই।আহত দৃষ্টিতে তাকালো তিশা আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।না চাইতেও চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সাথে সাথেই মুছে নিলো সে।দৃষ্টি স্থির করল সামনের দিকে। কিছুক্ষণ হাটার পর থামলো সবাই।এখন একটু থামা যাক। নূর কাব্যকে ফিসফিসিয়ে বললো-

-চা খাবো

-হ্যা জানি।সামনে তাকান আপনার জন্য ই এখানে থেমেছি

সামনে তাকালো নূর। টঙের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা।অথচ সে খেয়ালই করেনি। যাক সেসব। এখন খুশির ঠেলায় আপনাকে দুইটা পাপ্পি দিতে ইচ্ছে করছে।হায়। কত খেয়াল রাখে।(বিড়বিড়িয়ে)
চা অর্ডার দেওয়া হয়েছে।সেই ফাকে নূরকে আর একটু জ্বালনো যাক।

-নূর

-বলুন

-শক দিবো তোমাকে এখন

-মানে?

-ঝটকা খাবে এখন

-কিভাবে?

নূরের কপোলে(গাল)অধর ছুয়িয়ে দিয়ে বললো-

-এভাবে।

নূর সত্যি সত্যি ই শকড।সম্বিত ফিরতে ই চকিতে তাকালো আশেপাশে। না দেখেনি কেউ যে যার মতো ব্যস্ত।তারপর কাব্যর দিকে তাকালো অগ্নি দৃষ্টিতে।

-কি সমস্যা? হ্যা ঠিকঠাক মতো থাকতে পারেন না

-ঠিক মতোই তো আছি।কিছু করেছি তোমায়

-কিছু করেন নি

-নাহ আমার মনে পরছেনা।তুমি বলো

-জানেন না আপনি,একটু আগে তাহলে আমার গালে..

এটুকু বেই থেমে গেলো নূর।নিজের কথায় নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলো।তার অবস্থা দেখে চওড়া হাসি দিলো কাব্য। চাঁদের আলোয় তার হাসিমাখা স্নিগ্ধ মুখখানা স্পষ্ট নূরের কাছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। এই স্নিগ্ধ মুখশ্রীর,গম্ভীর স্বভাবের লাগামহীন কথা বলা মানুষটা তার একান্তই ব্যক্তিগত মানু।তার আপন মানুষ।ভাবতেই প্রশান্তির স্রোত বয়ে গেল বক্ষ পিঞ্জরে।

______________________
সকাল আটটা প্রায়।দাদু বাসা থেকে বেরিয়েছি প্রায়
দু’ঘন্টা।এ ক’টা দিন একেবারে বেস্ট ছিল।বিশেষ করে কাব্যর সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো। ভাবতেই এক চিলতে হাসি দখল করে নিল ঠোঁট। গাড়ির হেলেদুলে চলার দরুন বাইরে থেেকে দৃষ্টি সরিয়ে কাব্যর দিকে তাকালো নূর। এসি চলা অবস্থায় ও ঘামছে সে।দৃষ্টি তার সামনে।মুখশ্রী তে অস্থিরতা ভাব স্পষ্ট। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকালো নূর। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল নূরের। একটা ট্রাক দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে তাদের গাড়ির দিকে।কোনোরকম মোড় ঘুরিয়ে সেই ট্রাক থেকে বেচেও বাচলোনা।পেছন থেকে আরেকটা ট্রাক এসে দুমড়ে মুচড়ে দিলো তাদের গাড়ি।তবে কি তাদের পথ চলা এখানেই শেষ।কাব্যর সাথে বুঝি বাঁচা হলো না তার।

#চলবে

#অবশেষে_তুমি
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৫
______________________
ব্যালকনির একপাশে বসে আছে একজন মানব।পুরোপুরি নিশ্চুপ। মুখে কোনো রা নেই। চোখেমুখে স্পষ্ট অসহায়ত্ব আর কষ্টের ছাপ।মনে যে মেঘ জমেছে।বিশাল মেঘের স্তুপ।ধূসর রঙের আকাশ।মেঘ জমেছে আকাশে ও।প্রকৃতি ও বুঝি দুঃখ বিলাস করতে চায় এই নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ মানবের সাথে।চাপা কষ্টে বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা।একের পর এক চাপা নিঃশ্বাস ফেলছে।নির্জীব দৃষ্টি ওই ধূসর রঙের আকাশ পানে। সব যে এলোমেলো হয়ে গেল।তার ভুলের জন্য সাজানো গোছানো জীবনটা আবার তছনছ হয়ে গেল।

রুমে এসে কাউকে না পেয়ে ব্যালকনিতে গেল তন্নী।হাতে তার একটা পার্সেল।কিছুক্ষণ আগেই কুরিয়ার সার্ভিস থেকে দিয়ে গেছে। ব্যালকনির এককোনায় বসে আছে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা।পা টিপে টিপে তার সামনে যেয়ে দাঁড়াল সেটা নিয়েই।হাটু মু্ড়ে তার সামনে বসে নিচু স্বরে ডাক দিল-

-ভাইয়া?

কোনো সাড়া না পেয়ে আবার ডাকল-

-ভাইয়া?

ভাবনার রেশ কাটলো।আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো তার দিকে।প্রাণহীন সেই চাহনি।তার প্রাণ পাখি যে পাাশে নেই।দৃষ্টি সরিয়ে পূর্বের ন্যায় আকাশে রাখলো।ভারি কণ্ঠে ছোট্ট করে জবাব দিলো –

-বল।

-কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এসেছে এটা

-হ্যা ফোন দিয়েছিল আমাকে

-ওহ।এখানে বসে আছিস কেন?রুমে চল মেডিসিন নিয়েছিস?

-নাহ

-কেন?মাত্র আজকে সকালে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করেছে এখন ই অনিয়ম করলে হবে।ঠিক থাকতে হবে তো।এভাবে ভেঙে পড়লে কিভাবে হবে বল।আমি জানি আমার ভাইয়া সামলে নিবে নিজেকে।বাকিদের খেয়াল ও তো রাখতে হবে।মামা তো কেঁদেকেটে অস্থির। শাওন ভাইয়া বুঝিয়ে রাখতে পারছেনা। তোকেই সামলাতে হবে।তাই আগে নিজেকে শক্ত কর।তুই ভেঙে পড়া বা দুর্বল হওয়ার মতো ছেলে না আমি জানি।

-হুম তুই যা রেস্ট নেয়।

কিছু না বলে উঠে পড়লো তন্নী।হাতের পার্সেল টা সাথে নিতে নিলে বাধ সাধলো কাব্য। তার কাছেই রেখে আসলো।তন্নী যেতেই পার্সেলটা হাতে নিলো কাব্য। আনবক্স করতেই একে একে বেরিয়ে এলো সব জিনিসপত্র।সাদা,লাল পাড়ের শাড়ী তার মধ্যে সুতার কারুকাজ করা।দু’ মুঠ লাল রঙের কাচের চুড়ি। এক জোড়া ঝুমকো,একটা পায়েল আর একটা আর্টিফিশিয়াল গাজরা কাঠগোলাপ আর গোলাপের।আর একটা কাজল আর আলতার ছোট একটা শিশি।
নূরের জন্য অনলাইন অর্ডার করেছিলো প্যাকেজ। তার প্রেয়সীকে বঙ্গনারী রুপে দেখার ইচ্ছে জেগেছিল তাই।কিন্তু এখন যে তাকে দিতে পারলোনা।কবে দিবে তাকে? কবে দেখবে সে রুপে?প্রশ্ন গুলো মনে মনে আওড়াল কাব্য। তারপর আবার সবকিছু একটা একটা করে গোছালো।ফ্লোর থেকে উঠে বাম হাতে ব্যাগটা নিয়ে রুমে গিয়ে কাবার্ডে রাখল।বেডে বসতেই ফোন বেজে উঠল তার।ফোন রিসিভ করে-

-হ্যা রিদ বলো…

-স্যার সেই ড্রাইভারকে পেয়েছি।আমাদের পুরোনো গোডাউনে আছে এখন। গার্ডদের বলে দিয়েছি ওরা সামলে নিবে। আমি আসছি আপনাকে হসপিটালে নিতে।পাঁচ মিনিট লাগবে আমার।

কথাটা শোনা মাত্র ই চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো কাব্যর।বেশি কিছু বললো না সে শুধু ছোট্ট করে হুম বলে ফোন রেখে দিল।বেড থেকে উঠে আয়নার সামনে দাড়ালো কাব্য।কপালের বাম পাশে কাটা দাগ,গালেও আছে।ডান হাত প্লাস্টার করা।চোখমুখ শুকনো একেবারে।সেদিকে তোয়াক্কা না করে রুম ত্যাগ করে নিচে গেল।সদর দরজার সামনে যেতেই ডাক পড়ল তন্নীর।বিচলিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

-কোথায় যাচ্ছিস এই দুপুর বেলা।তাও একা একা।

-কাজ আছে।একা যাচ্ছি না তন্নী রিদ যাবে সাথে।

-ওহ।কিন্তু

-কিছু হবেনা চিন্তা করিসনা।আব্বুকে দেখিস কি দরকার হয়।আর তুই খেয়ে নিস।কোনো সমস্যা হলে ফোন দিস।আম্মুকে পাঠিয়ে দিব আমি।

-ঠিক আছে তুই সাবধানে যাস

-হুম।
.
.
.
টুলে বসে এক দৃষ্টিতে সামনের মানবীর দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য।ফ্যাকাসে মুখ,চোখের নিচে কালি,মাথায় ব্যান্ডেজ,মুখে অক্সিজেন মাস্ক আর হাতে ক্যানেলা লাগানো।তিন দিনেই এই অবস্থা হয়ে গেছে তার।তার ডান হাতটা নিজের বাম হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো স্বরে ডাক দিল-

-নূর?

কণ্ঠটা কানে পৌছাতেই চোখ খুলল নূর।ফ্যাকাসে মুখশ্রীতে মলিন হাসি দিল।কাপা কাঁপা হাতে অক্সিজেন মাস্কটা খুলতে নিলে আটকালো কাব্য।বাধা পেয়ে খানিক বিরক্ত হলো নূর।হাত সরিয়ে নিলো কাব্য। মাস্ক খুলে অভিমানী, নিচু স্বরে নূর বললো –

-দেরি করলেন কেন?অপেক্ষা করছিলাম আমি।

-সরি,আর করবোনা।

-হু।আজকে বাসায় নিয়ে যাবেন না আমায়?

-আজকে না।আর দু’টা দিন থাকতে হবে।

-কালকেও বলেছেন আর দু’দিন থাকতে হবে।আমার কি খারাপ কিছু হয়েছে?বিপদমুক্ত না এখনো?

হকচকিয়ে গেলো কাব্য।বিচলিত কণ্ঠে জবাব দিলো –

-না না খারাপ কিছু হতে যাবে কেন।ঠিক আছো তুমি শুধু মাথায় একটু চোট পেয়েছো আর শরীর দুর্বল।এসব বলবেনা।

-হু।তাহলে কালকে বাসায় নিয়ে যাবেন। আমি থাকবো না এখানে দমবন্ধ লাগে।

-ঠিক আছে আঙ্কেল আসুক কথা বলবো আমি।

-হু।খেয়েছেন?

-এবার মাস্কটা পড়ো

-এখনো খাননি কেন ?

-মাস্কটা পড় নূর।

-না।

-জেদ করোনা।

-বললাম তো পড়,,,এটুকু বলতেই কাশি উঠে গেলো নূরের।

-বেশি পাকামো করো তুমি।বলেছিলাম না পড়তে।
ধমকানো স্বরে উক্ত কথাটা বলতে বলতে ই অক্সিজেন মাস্ক টা পড়িয়ে দিল কাব্য। মিনিট দুয়েক পর স্বাভাবিক হলো নূর।

-এখন ঠিক লাগছে?

জবাব দিলো না নূর।মুখ ঘুরিয়ে রাখল।

তার হেন আচরণের কারণ বুঝল কাব্য। অনুনয়ের স্বরে বললো-

-আ’ম সরি প্লিজ। দেখ ডক্টর বেশি কথা বলতে নিষেধ করেছেন তারওপর তুমি অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে রেখেছিলে।কাশি উঠে গিয়েছিল তোমার ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।বারবার বললাম তোমাকে পড়তে কথা শোনোনি তুৃমি তাই রাগের মাথায় ধমক দিয়ে ফেলেছি তোমায়।সরি। তুমি একবার সুস্থ হও তারপর সারাদিন বকা দিও কিচ্ছু বলবো না আমি।যা বলবে তাই করব প্রমিজ।

মুখ ফেরালো নূর।ভ্রু উচু করে কিছু একটা প্রশ্ন করলো।বুঝলো কাব্য। বললো –

-একদম সত্যি। প্রমিজ।

পাশের ছোট্ট টেবিলটায় রাখা খাবারের বক্সটার দিকে ইশারা করলো।তার দৃষ্টি অনুসরণ করে কাব্য ও তাকালো।অতঃপর বললো-

-ঠিক আছে খেয়ে নিব

খুশি হলো না নূর। দুই পাশে মাথা নাড়ালো যার অর্থ না।

আবার বললো কাব্য –

-এখনই খাবো।

এবার খুশি নূর।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো তার। কাব্য ও হাসলো।তখনই কেবিনে আগমন ঘটলো মিসেস রেহেনা আর ডক্টর আশরাফ কবির এর।

সেদিন এক্সিডেন্টের পর আশপাশের লোকজনরা হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল কাব্য আর নূরকে।এক্সিডেন্টের প্রায় দু’ঘন্টা পর সেন্স ফিরেছে কাব্যর।হসপিটাল থেকেই রিদের সাথে যোগাযোগ করে কাব্য। তারপরের দিন ঢাকাতে নিয়ে আসে তাদের।আশরাফ কবির কাব্যর বাবার বন্ধু। এই হসপিটালটাও তার।ট্রাকের ধাক্কার বেগে সিট বেল্ট খুলে গিয়েছিল যার দরুন ছিটকে গিয়ে গাড়ির সামনের শক্তপোক্ত জায়গাটায় যেয়ে মাথায় বারি খেয়েছে নূর।একদিন পর সেন্স এসেছে তার।এখানে রেখেই ট্রিটমেন্ট করছে তার।হসপিটালের স্পেশাল কেবিনের মধ্যে একটা এটা।কেউ যাতে না জানে সেই জন্য ই কাব্য এই হসপিটালে রেখেছে নূরকে।

ড.আশরাফ কেবিনে এসে চেক করলেন নূরকে।তারপর মুখে হাসি টেনে নূরের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন –

-এখন কেমন লাগছে মামনি?

হালকা হেসে মাথা নাড়ালো নূর।

-কাব্য তুমি আমার সাথে কেবিনে আসো।

-জ্বি আঙ্কেল।আম্মু তুমি থাকো আমি আসি।

-ঠিক আছে।

ডক্টরের সাথে কেবিন ত্যাগ করলো কাব্য।

মিসেস রেহেনা নূরের পাশে টুল টেনে বসে মাথায় হাত দিলেন।

-জানিস কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমার ছেলেমেয়ে দুইটার ওপর দিয়ে এত বড় বিপদ গেলো।কাব্যর অবস্থা তো পাগলপ্রায় ছিল।তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা তোকে ছাড়া বাড়িটা আমার একেবারে নিশ্চুপ আর ফাঁকা পড়ে আছে।
.
.
বিকেল পাঁচটা প্রায়।মিসেস রেহানা বাসায় চলে গিয়েছেন একটু আগে।কাব্য বাইরে থেকে ফিরেই বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে জোর করে।কেবিনের একপাশে রাখা সোফায় বসে আছে কাব্য। বেডে ঘুমাচ্ছে নূর।ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে তাকে যার দরুন ঘুম ভাঙেনি এখনো।তখনই দরজা ঠেলে কেবিনে আসলেন নূরের বাবা।তাকে দেখে দাড়িয়ে পড়লো কাব্য। নিচু স্বরে বললো-

-আসসালামু আলাইকুম

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম।ঘুমাচ্ছে নূর ভুল সময়ে আসলাম।

-মেডিসিনের এফেক্ট বাবা।আপনি ফোন দিলেন না কেন?না করতাম আসতে।কালকেই ডিসচার্জ করে দিবে।কষ্ট করে আসতে হলো এমনিতেই তো অসুস্থ আপনি।

-দেখতে ইচ্ছে করছিলো আমার মা’টাকে।এতকিছু খেয়াল ছিলোনা বাবা।

কিছু বললো না কাব্য।নূরের বাবা কিছুক্ষণ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তারপর কাব্যর সাথে কথা বলে চলে গেলেন।

________________________
পিনপতন নীরবতা আর অন্ধকারে ছেয়ে আছে পুরো কামরা।দিন হলেও দরজা জানালা সব বন্ধ থাকায় আলোর প্রবেশ-ত্যাগ দু’টোই যেন নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। অগোছালো পুরো কামরা।এখানে সেখানে পড়ে আছে জিনিসপত্র। কাঁচের টুকরো ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একপাশে।আর বেডে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে একজন মানবী।মুখশ্রী তে তার ভয় আর অনুতপ্তের ছাপ।ভেতর থেকে কুড়িয়ে খাচ্ছে তাকে।হাত-পা কাঁপছে তার অনবরত। সেই সময়ই কর্কশ আওয়াজে বেজে উঠল ফোনটা।ভয়ে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো শরীর।কাপা কাপা হাতে ফোনটা হাতে নিল।ফোনদাতার নাম দেখে ভয়,অনুতপ্ততা ভুলে এখন রাগ হচ্ছে তার।প্রচুর পরিমাণে রাগ হচ্ছে।অগ্নির ন্যায় হয়ে উঠেছে চোখ সামনে পেলে যেন চোখ দিয়েই জ্বালিয়ে মারবে।ফোন রিসিভ করেই কর্কশ গলায় বললো-

-কু*ত্তা*র বা*চ্চা তোর জন্য শুধু মাত্র তোর জন্য আমার এই অবস্থা আজকে।কেন জড়াতে গেলি আমাকে এসবে?তুই যেয়ে মারতে পারলি না।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এখন। কুড়িয়ে কুড়িয়ে খাচ্ছে আমাকে।তোর জন্য এই দমবন্ধকর জীবন কাটাচ্ছি তিন দিন ধরে।কিছু কর না হলে…

ওপাশ থেকে –

-আরে জান টেনশন নিচ্ছ কেন?কিচ্ছু হবেনা।আর হলেই বা আমার কি। আমি তো কিছুই করিনি যা করার তুমি করেছো আমি এসবের কিছুই জানিনা।

ওপাশ থেকে বলা কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই যেন আকাশ থেকে পড়লো এ পাশে থাকা মানবী।ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে।কয়টা শুকনো ঢোক গিলে ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো –

-মা,,মানে আপ,,আপনি কিছু জানেন না মানে আপনি ই তো বলেছেন আমাকে তাদের এক্সিডেন্ট করাতে তাহলে

-সেটা তুমি আর আমি জানি ডার্লিং অন্য কেউ তো না।তাহলে? আর তোমাকে তো অপশন দিয়েছিলাম যে কিছুদিনের জন্য এখান থেকে চলে যাও কিন্তু তুমি যাওনি। সেধে ধরা দেয়ার ইচ্ছা তোমার আমার কি।

ওপাশ থেকে বলা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো সে।রাগে,ঘৃণায় গা রি রি করতে লাগলো তার।খট করে ফোনটা রেখে দিলো সে।ছুড়ে মারলো মেঝেতে। মূহুর্তেই ছিটকে পড়লো টুকরো হয়ে। রাগে, দুঃখে কাপছে সে।ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলতে লাগলো-

-এতটা খারাপ,পাষান কিভাবে হলি তুই।নিজেকে বাচাতে দুইটা মানুষকে জানে মেরে ফেলতে যাচ্ছিলি।ফেসে গেছিস তুই।কাব্য ঠিক ই খুজে নিবে তোকে।আগে থেকেই সন্দেহ তোর ওপর এখন পালিয়ে গেলে সিওর হয়ে যাবে পালাইনি তাই কিন্তু এখন

-কিন্তু এখন তো খুজেই নিলাম তোমাকে।

আচমকা কারো কণ্ঠ পেয়ে চকিতে তাকালো সামনের দিকে।বেড থেকে উঠে একটু আগালো সামনের দিকে।দরজার কাছে ছেলের ছায়া মতো কিছু দেখা যাচ্ছে। তা দেখে বললো-

-ভাইয়া আমি বলেছি তো একা থাকতে চাই আমি।ডিস্টার্ব কেন করছিস।প্লিজ যা।

জবাব এলো না কোনো।

-ভাইয়া,,যা।

এবারও জবাব এলো না।ছায়া মানবটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে তার দিকে।আবারো ভয় গ্রাস করল তাকে।তার আগানো দেখে সে পিছিয়ে যাচ্ছে।পেছাতে পেছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল তার।সামনের মানুষটা একেবারে তার মুখ বরাবর এসে থেমেছে।পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্লাশ অন করল সে।তার দিকে তাকাতেই চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো-

-আপনি?

(হ্যাপি রিডিং 💖)
(আসসালামু আলাইকুম)

#চলবে