অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০৩

0
1100

#অবশেষে_ভালোবেসে

পর্বঃ ০৩

লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
.
.
নিজের স্বপ্নের ভাবনা বাদ দিয়ে সানভি ফাইল টা পরতেই নিচ্ছিলো কি ঠিক তখনই গেইট খোলার শব্দে পিছনে ফিরতেই দেখে নির্ভান রুমে ঢুকছে। নির্ভান এর দিকে তাকিয়ে আছে সানভি।

রুমে যে ওর বাবা নেই এবং অন্য একটি মেয়ে বসে আছে তা খেয়াল করেনি নির্ভান তাই গেইট খুলেই বলতে শুরু করে

– পাপা এসব কি?? আমার স্টুডিও তে যে মিটিং টা ছিলো তা তুমি ক্যা… ( সানভি কে খেয়াল করে) আপনি?? পাপা কোথায়?

– স্যা.. স্যার একটা মিটিং এ গিয়েছেন।

– তো আপনি এখানে কি করছেন? বলতে বলতেই রুমে থাকা সোফা টায় গিয়ে বসলো নির্ভান। সানভি যেখানে বসে ছিলো সেখান থেকে ওর নির্ভানের উত্তর দিতে কেমন যেন লাগছিলো তবুও বললো

– স্যার এখানে বসে থাকতে বলেছেন।

– কিন্তু আপনি কে জানতে পারি?

– আমি…

তখনই আবার রুমের গেইট খুলে গেলো এবং এবার মি.খন্দকার নিজেই এসেছেন।

– আরে নির্ভান তুমি এখানে? (মি.খন্দকার)

– হ্যাঁ তুমি আমার আজকের মিটিং সব ক্যান্সাল করে দিয়েছো?? কেনো?

– আমি চাই না আমার ছেলে তার সেক্রেটারি কে ছাড়া কোনো মিটিং একা হ্যান্ডেল করুক। তোমার একটু তে রেগে যাওয়ার অভ্যাস টা আমার জানা আছে। ( কথা টা শুনে কেমন যেন চিন্তায় পরে গেলো সানভি অল্পতেই রেগে যায়!!)

– তো কোথায় আমার সেক্রেটারি? তুমি কাকে চুজ করেছো দেখাও।

এইতো তোমার সামনেই বসে আছে বলেই সানভি কে দেখালেন সানভি ও খুব কষ্টে একটা হাসি ম্যানেজ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো

– হ্যালো স্যার।

– পাপা! ও আমার সেক্রেটারি? আর ইউ কিডিং মি?

– নো। একটু ও না।

বাবার এই কথা শুনেই নির্ভান ওর বাবা কে উনার কেবিনেই থাকা একটা রুমে নিয়ে গেলো। আশ্চর্য! সানভি এটা কে ওয়াশরুম ভেবেছিলো কিন্তু এটা একটা রুম।।

অনেকক্ষন বসে থেকেও সানভি দেখছে তারা বের হয়ে আসছে না।

রুমের ভিতরে নির্ভান ওর বাবার সাথে কিছুক্ষন ওকে না জানিয়ে ওর নতুন সেক্রেটারি রাখার ব্যাপার এ কথা বললেও ওর বাবা তা মানতে মোটেও রাজি নন। তাই নির্ভান এর সকল কথাই বিফলে গেলো। নির্ভান এর মতে সানভির আগের কোনো এক্সপিরিএন্স নেই ও তেমন মর্ডান না দেখতে তাই ও একটা রকস্টারের লাইফে এডজাস্ট করতে পারবে না। কিন্তু ওর বাবা ওর সব কথাই উরিয়ে দিয়ে শুধু এটুকুই বললেন যে

– মেয়ে টা তোমার ক্যারিয়ার এর টার্নিং পয়েন্ট হবে ও কাজ পাগল তোমার চুজ করা আগের সেক্রেটারি গুলোর মতো নির্ভান এর পাগল না। তাই এবার আমার চুজ করা সেক্রেটারির সাথে কাজ করেই দেখো। আর না করলে বুঝে নিয়ো। বলেই বের হয়ে এলেন।

অবশেষে সানভি মি. খন্দকার কে বেরিয়ে আসতে দেখে স্বস্তি পেলো। তিনি এসেই বললেন

– মিস. সানভি ফাইল টা দেখা কমপ্লিট?

– জি স্যার।

– কোনো প্রবলেম?

– আপাতত না স্যার।

– খুব ভালো। যাই হোক এটা তো প্রাইমারি আরো অনেক কিছু জানার আছে তোমার। তবুও তুমি টেনশন করো না যেকোনো হেল্প লাগলে তুমি আমার কাছে এসে জানাবে আমি যতোই বিজি থাকি না কেনো তোমাকে আমার ছেলের জন্য পারফেক্ট করার দায়িত্ব আমার।

কথা টায় সানভি নির্ভরতার ছোয়া পেলো তাই একটু হাসি দিলো। তিনি আবার বলে উঠলেন

– আচ্ছা অনেক তো হলো প্রফেশনাল কথা এখন বলো তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?
প্রশ্ন টায় ওর হাসি টা যেন মূর্ছে গেলো

– বাড়িতে! কেউ নেই আমি একাই থাকি।

– ওহ ইন্ডিপেন্ডেন্ট?

– নাহ স্যার আমাকে জন্ম দিতেই মা মারা গেছেন, আর ছয় মাস আগে বাবা ও একটা এক্সিডেন্ট এ…

– ওহ আই এম সো সরি। আমি ব্যাপার টা জানতাম। সো সরি।

– ইটস ওকে স্যার এতে আপনার সরি বলার দরকার নেই। যা হওয়ার ছিলো তা হয়েছে।

– তোমার বাবা মা আজ অনেক খুশি হবে তারা তোমার মতো এতো বুঝের মেয়ে পেয়েছে। আর আমার ছেলেটা সব পেয়ে যেন একদম বিগড়ে গিয়েছে।
তখনই নির্ভান বের হয়ে ওর নামে বলা কথা টুকু শুনেই বলে

– তুমি পারো ও বাবা আমার নতুন আসা সেক্রেটারির কাছে আমার নামে বদনাম করছো!!!

– আরে না না।

– যাই হোক,,, এই যে মিস সেক্রেটারি?
শুনেই সানভি উঠে দাঁড়িয়ে বললো

– জি স্যার!

– Hi this is Rock star Nirvan Khandaker নাম তো সুনা হি হোগা,,, আর তুমি? বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক এর জন্য।
সানভি ও ইতস্তত করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো

– Hi sir I am your new secretary Sanvi Ibnat Karim. Nice to meet you.

– সানভি ইবনাত করিম? ওকে তো আমি তোমাকে এখন থেকে মিস.সান বলে ডাকবো। আর তুমি ও আমাকে এই স্যার স্যার বলা অফ করো আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারো।

– বাট স্যার!!!

– নো স্যার। এটাতে প্রবলেম হলে তুমি আমাকে আ… আমাকে মি. কে বলে ডাকবে? ওহ ওয়াও! হ্যাঁ এখন থেকে আমাকে মি. কে বলেই ডাকবে।

– ওকে স্যার… আই মিন মি. কে।

– Papa all good?

– ইয়েস ভেরি গুড। আশা করি তুমি এমন গুড বয় ই থাকবে।

– তাহলে আমি আমার সেক্রেটারি কে নিয়ে যেতে পারি!

– পারো তো বাট নির্ভান আজকে তো তোমার কোনো মিটিং নেই তো?

– ফার্স্ট ডে তে মিটিং এ নিয়ে গেলে তো ও হিমশিম খেয়ে যাবে তার আগেই তো ওকে প্রিপেয়ার করা লাগবে তাই না পাপা?
কথা টায় মি. খন্দকার এর একটু সন্দেহ লাগলো যদি ও কোনো অন্য ফন্দি আটে! তবুও তিনি যানেন ও খারাপ না তাই বললেন

– ঠিকাছে যাও।।
নির্ভান বের হয়ে গেলো,, লেটস গো মিস.সানভি।। বলে। সানভি ওর সাথে বের হতেই দেখে গেইটের দু পাশেই দুইজন সুঠাম দেহি বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছে। নির্ভান এর পেছনেই ও যেতে নিলেই ওকে থামিয়ে দেয়ায় নির্ভান ঘুরে বলে

– Take it easy man, she is my new secretary Ms. Sanvi.

নির্ভান এর কথা শুনা বডিগার্ড গুলো হাত সরিয়ে বললো,, সরি ম্যাম।

– ইটস ওকে। বলেই দাঁড়িয়ে ছিলো দেখে নির্ভান সানভির হাত ধরে নিয়ে হাটা শুরু করলো আর সানভি আসতে করে হাত ছাড়িয়ে নির্ভান এর সাথে তাল মিলিয়ে হাটা শুরু করলো আর নির্ভান হাত ছাড়িয়ে নেয়া দেখে ওর দিকে তাকালো।
ওর বাবার অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই নির্ভান মাথায় ক্যাপ এবং সানগ্লাস টা পরে নিলো যাতে বাহিরে কারো নজরে না পরে। এরপর গাড়ির সামনে এসে দাড়াতেই বডিগার্ড এর একজন এগিয়ে এসে গাড়ির গেইট টা খুলে দিতেই নির্ভান ডান হাত দিয়ে নিজের এসে পরা চুল গুলো সাইড করে সানভি কে আগে ভিতরে যেতে বললো।

– নো স্যার আই মিন মি.কে আপনার আগে যাওয়া উচিৎ।

– ওকে এস ইউ উইস বলেই ও উঠে এই গেইট লাগিয়ে ওকে ওই পাশ দিয়ে আসতে ইশারা করতেই আরেক জন বডিগার্ড গিয়ে ওই পাশের গেইট খুলে দিতেই ও ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো

– আমি ই খুলে নিতে পারবো আমার জন্য করতে হবে না।
তখন নির্ভান বলে উঠলো

– অবশ্যই করতে হবে তুমি আমার সেক্রেটারি এরকম অনেক কিছুই হবে এখন থেকে।
.
নির্ভান এর গান ও কখনোই শুনেনি ইলা ও কতো এক্সাইটেড থাকে এই রিসেন্ট ক্রাশ নিয়ে আর সেই নির্ভান এর পাশেই সেক্রেটারি হিসেবে বসে আছে ও বিশ্বাস করতে পারছে না! জীবন কিভাবে পালটে যায়। ও খেয়াল করেনি যে ও অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে আছে নির্ভান ওর চোখের সামনে হাত দিয়ে ইশারা করলেই ব্যাপার টা বুঝতে পেরেই সরি বলে অন্য পাশে তাকাতেই নির্ভান বলে

– নো নো তুমি চাইলে দেখতে পারো আমার চার্ম টাই এমন বুঝেছো? I have an extraordinary aura. Aura মানে আভা you know!

– এ.. হ্যাঁ। (এই সব আমি কিভাবে সামাল দিবো আল্লাহ)

হটাৎ গাড়িটা থামলো সানভি বের হয়ে দাড়াতেই দেখে একটা বাড়ির সামনে থেমেছে বাড়ি টা দেখতে খুব সুন্দর সানভি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো তখন পেছন থেকে নির্ভান ও বের হয়ে এসে বললো,,, চলো।
‍সানভি ও আর কিছু না বলে তার পেছনে হাটছিলো তখন নির্ভান ঘুরে বললো

– লিসেন, আমার পিছে আমার বডিগার্ড রা থাকে তুমি আমার সাইডে থাকবে তুমি আমার সেক্রেটারি আমার বডিগার্ড না মনে থাকে যেন।

– জ জি স্যা… মি. কে। বলেই সাইডে এসে দাড়ালো।
সানভি খেয়াল করলো ওই বাড়ির মেইন গেইট দিয়ে ঢুকতেই বডিগার্ড গুলো আর পেছনে আসছে না। নির্ভান মেইন যে বিল্ডিং সেটায় না গিয়ে সাইডে ই একটা ছোট এক তালার বিল্ডিং এ ঢুকতে ঢুকতে বললো

– এটা আমার পারসোনাল স্টুডিও এখানে আমি প্র‍্যাকটিস করি। প্রায়ই আমি এখানেই থাকি আর আমার সাথে এখন তোমাকেও এখানে থাকতে হবে আমার সাথে।

– জি!? ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ।
নির্ভান কিছু বললো না কল আসায় কাকে যেন বলছে,, এসে পরেছিস গ্রেট।
এরপরই দেখতে পেলো একজন বডিগার্ড এসেছে সাথে একটি ছেলে আর সাথে কিছু জিনিস নিয়ে পেছনেই একজন খুবই স্টাইলিস মেয়ে এসেছে।

– Oh Max thanks yaar thanks for coming. সব এনেছিস?

– হ্যাঁ এনেছি boss সব এনেছি. ক্লায়েন্ট কোথায়?

– এইযে। বলেই দেখিয়ে দিলো সানভি কে,,,, উনিই মিস.সান উনারই মেকওভার করতে হবে।
আর সানভি ও চমকে গেলো। কি বলছে নির্ভান! কিসের ক্লায়েন্ট!!
.
.
.
চলবে।