অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০৪

0
1043

#অবশেষে_ভালোবেসে

পর্বঃ ০৪

লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা

…… হ্যাঁ এনেছি সব এনেছি Boss. ক্লায়েন্ট কোথায়?

– এইযে। বলেই দেখিয়ে দিলো সানভি কে,,,, উনিই মিস.সান উনারই মেকওভার করতে হবে।
আর সানভি ও চমকে গেলো। কি বলছে নির্ভান! কিসের ক্লায়েন্ট!!
.
– কি কিসের ক্লায়েন্ট? কিসের মে.. মেকওভার মি. কে?

– তোমার মেকওভার তুমি আমার সেক্রেটারি তোমাকে অবশ্যই আমার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী থাকতে হবে আমার পাশে।

– কিন্তু আমি তো আমার মেকওভার করাবো এমন কিছু বলিনি।

– তুমি বলোনি বাট আমি বলেছি And Don’t worry আমি এতো চেঞ্জেস আনাবো না জাস্ট তোমার ড্রেস আপ আর স্টাইলিং সেন্স টা একটু আপগ্রেড করা দরকার বুঝতেই পারছো একজন রকস্টার এর পাশে সাইড সিথি সাইড বেনি এমন সালওয়ার কামিজ স্যান্ডেল এর সেক্রেটারি মানায় না ইউ নো। বলেই ওর সেই ফ্রেন্ড ম্যাক্স কে বললো,,, ড্রেস গুলো দেখা। বলেই ওর পেছনেই সোফায় গিয়ে আরাম করে বসলো। তারপরই ওই ছেলে মেয়ে টাকে ইশারা করলো আর সাথে সাথেই মেয়ে টা একটা ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে এসে সানভি কে বললো,,, আসুন ম্যাম।
এরপরই প্রায় ওকে ধরে নিয়ে একটা রুমে নিয়ে বললো,,,, ম্যাম এই নিন এই ড্রেস টা পরে নিন। সানভি ড্রেস টা হাতে নিয়ে ভালো করে নিয়ে দেখে ড্রেস টা হাতা কাটা আর সর্ট ও সাথে একটা প্লাজো টাইপ প্যান্ট। সাথে সাথেই ড্রেস টা মেয়েটার হাতে দিয়ে বললো

– আমি এই ড্রেস পরবো না। বলেই বের হয়ে নির্ভান এর সামনে গিয়েই বললো,,, মি.কে আমি এই সব ড্রেস পরতে পারবো না।

– ওকে তাহলে ড্রেস বাদ heel টা দাও ওকে ওইটা পরলেই কিছুটা স্ট্যান্ডার্ড লাগতে পারে দেখি।
তারপর মেয়ে টা ওকে বসিয়ে ওর জুতা টা খুলে হিল টা পরিয়ে দিলো। কিন্তু সানভি যেই ওই হিল টা পরে দাঁড়িয়ে হাটতে নিলেই কিসের সাথে যেনো হিল আটকে থাকায় আগাতে না পেরে পরে গেলো। আর এটা দেখে যেন নির্ভান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উঠে সানভির সামনে দাঁড়িয়ে বললো

– মিস.সান হয়তো ভুল পথে হাটছিলে তাই তো এভাবে হোচট খেলে। এখন ও সময় আছে ওই পথ ছেড়ে দাও তা নাহলে এমন হোচট বারবার খেতে হবে।
সানভি নির্ভান এর কথা টা বুঝতে পারছে যে ও আসলে নির্ভানের সেক্রেটারি হওয়ার জন্য পারফেক্ট না এটাই বুঝাতে চাইছে। সানভি উঠে দাড়াতে চাইলেই বুঝতে পারলো কোমড়ে আর বাম পায়ে খুব ভালো করেই ব্যাথা পেয়েছে তবুও কষ্ট করে দাড়ালো আর সবাই তাকিয়ে দেখছে কিন্তু কেউ হেল্প করলো না। তারপর নিজেই হিল গুলো খুলে নিজের স্যান্ডেল পরে নিয়েই ছলছল চোখে বললো,, বুঝতে পেরেছি আপনার কথা টা স্যার সবসময় মনে থাকবে কথা টা। আজ আসি স্যার। বলেই বের হয়ে গেলো।
সানভি বের হয়ে যেতেই নির্ভান ওর পিছে বায় বায় ইশারা করলো আর বললো

– Plan worked perfectly.
পেছন থেকে ম্যাক্স বললো

– কিরে তোর প্লান টা কি এর আগে তো কখনোই তোর সেক্রেটারির সাথে তুই এমন আচরণ করিস নাই ওর সাথেই কেন? দেখতেও সুন্দর কথা উচ্চারণ সব পারফেক্ট।

– তুই তো জানিস ই আমি ই আমার সেক্রেটারি চুজ করি। আর ওকে বাবা চুজ করেছে তাই।

– তবুও…

– আরে ম্যাক্স বাদ দে তো। I don’t want her that’s it.
.
নির্ভানের স্টুডিও থেকে বের হয়ে এলো সানভি খুব কষ্ট হচ্ছে হাটতে তবুও এখানে আর থাকবেনা। এখান থেকে বের হয়েই সানভি ইলার কাছে গেলো ওকে এমন অবস্থায় দেখে ইলা ওর বসের থেকে একটু সময় নিয়ে এক সাইডে ওকে নিয়ে বসলো

– কি হয়েছে সানু? তোকে এমন কেনো লাগছে?

– ইলা আমার মনে হয়না এই কাজ টাও আমি পারবো করতে।

– কেনো পারবি না কি হয়েছে বলবি তো?
তারপর সানভি শুরু থেকে সব কিছু ইলা কে খুলে বললো। ইলা তো শুনেই থ! নির্ভান সম্পর্কে এমন কোনো বাজে ব্যবহার ও তো কখনো শুনেনি

– এটা কি বলছিস তুই? নির্ভান তো কখনোই কাউকে ইনসাল্ট করেনা। আর ও যদি তোকে একটু স্টাইলিশ হতে বলে তাতে ক্ষতি কি তুই তো আগেও টপস পরেছিস স্কার্ফ দিয়ে আর হিলস তো তোর জন্য কোনো ব্যাপার ই না!

– তোর চোখে তো নির্ভান দা রকস্টার এর পট্টি পরে আছে। তুই বুঝতে পারছিস কি করেছে।

– হ্যাঁ পারছি তাই তো বলছি ওকে দেখিয়ে দে তুই কেমন তুই তো আসলেও এরকম না।। তুই যেকোনো পরিস্থিতি তেই তো মানিয়ে নিতে পারিস৷ আর ও কিছু বলছে তাতে তুই যদি কাজ ছেড়ে দিস তখন বুঝিস ও ই জিতে যাবে আর তুই….
বলেই চুপ করে রইলো। সানভি ও,,, আমি আসি। বলে বের হয়ে গেলো পেছনে থেকে ইলা ডাকছে কিন্তু সানভি দাড়ালো না।
.
রাতে নির্ভান ওর মা বাবার সাথে খেতে বসেছে এরকম সাধারণত খুব কম হয় ওর বিভিন্ন প্রোগ্রাম এর কারনে তাই ওর মা অনেক খুশি অনেক কিছু ওর পছন্দের রান্না হয়েছে। ও ওর মায়ের সাথে বিভিন্ন কথা বলছিলো তখনই কথার মাঝে মি.খন্দকার বললেন

– সানভি কখন গিয়েছে নির্ভান।

নির্ভান একটু ভেবে নিলো কিভাবে কি বলবে,,,,, ওকে তো আমাদের এখানেই এনেছিলাম স্টুডিও তে যাওয়ার পর হটাৎ কি যেনো হলো চলে গেলো। হয়তো বুঝে গেছে আমার লাইফ স্টাইল এ এডজাস্ট হতে পারবে না।

– সানভি! নাম টা মেয়েদের কে সে?? ( মিসেস খন্দকার)

– ওর নতুন সেক্রেটারি রেখেছিলাম।

– কেনো রেখেছিলে??

– আহা তোমাদের না বলেছি খাওয়ার সময় এসব কাজ নিয়ে কথা না বলতে।

– হ্যাঁ ঠিক মা। বাবা তুমি এসব পরেও তো বলতে পারো। এখন লেট মি এনজয় মাই ডিনার।

– হ্যাঁ এনজয় তো করবেই মেয়ে টা কে তো সরিয়ে দিয়েছো এখন তো এনজয় করবেই।

– আহা তুমি কি লাগিয়ে দিলে ছেলেটার সাথে।

– কি করেছে শুনলে তো তুমিও এরকম করবে। এতো বিগড়ে গিয়েছে ছেলেটা।

– পাপা এসব তোমাকে ওই মেয়ে বলেছে!

– নাহ ও বলেনি মেয়ে টা তো কিছুই বলেনি ওকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন লাগলো প্রথম দিন। মেয়ে টা উলটো বললো খুব ভালো কিন্তু ও নাকি এই কাজে নিজেকে মানিয়ে চলতে পারবেনা।

– ওহ ( নির্ভান ভাবলো হয়তো পাপা এটার জন্যই বলছে) হ্যাঁ তাই তো ও কাজ গুলো বুঝে উঠতে পারছিলো না।

– বুঝে উঠতে পারছিলো না!! আমি জানি সব রেজা আমাকে বলেছে কি হয়েছে।

– হোয়াট! রেজা আংকেল? উনি কিভাবে জানবেন সানভির কি হয়েছ।
তারপর ওর বাবা ওর মা কে বলতে লাগলেন ও যা যা করেছে,,,,তারপর জানো ওই মেয়ে এখান থেকে রেজার বুটিক এ গিয়েছে ওইখানে ওর এক ফ্রেন্ড কাজ করে। আর ওকে দেখেই রেজা আমাকে কল করেছে যে সানভি এসেছে খুব টেনশনে ছিলো আর ওর ফ্রেন্ড ইলার সাথে কথা বলছে। আমি তখনই বুঝতে পেরেছি যে এই তোমার ছেলেই কিছু একটা করেছে তাই আমি রেজা কে বললাম নির্ভান রিলেটেড কিছু হলে ও যেন আমাকে জানায়। আর হ্যাঁ সেটাই হলো।
নির্ভান তো এই কথা শুনে পুরোই থ!! মানে কথা কোথা থেকে কোথায় এসে পৌছেছে। আহা নির্ভান ব্যাচারা।

– তারপর ওই মেয়ে আর কিছু বলেছে? কাজে করবে না আর?

– না আমি ফোন দিয়েছিলাম বললো সবই ঠিক কিন্তু ও ই নাকি মানিয়ে নিতে পারবে না। মনে হয় না আর আসবে। ভালো মেয়ে ছিলো নাহলে ও যেই সেক্রেটারি ই না রাখতো।

– পাপা আগের সেক্রেটারি গুলো তে কি প্রবলেম ছিলো ব্যাস একটু আমার কেয়ার বেশি করতো তাই আমার কাজের কেয়ার করতে পারতো না আর নিজের জব হারাতো।

– এটাই তো প্রবলেম এখন তোমার তো একজন কাজে মনোযোগি এরকম সেক্রেটারি ই দরকার। তোমার ক্যারিয়ার ঠিক রাখতে চাইলে এখন তোমাকে একজন ভালো সেক্রেটারি রাখতে হবে নির্ভান তোমার সিরিয়াস হতে হবে।

– আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে এখন ক্যারিয়ার, বিজনেস এসব বাদ দাও তো ছেলেটা এভাবেও সময় পায় না আমাদের সাথে খাওয়ার আর তুমি শুরু করলে।
.
রাতে নিজের রুমে গিটার নিয়ে নতুন গানের টিউন বানানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারছিলো না বারবার পাপার কথা টাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো আর সানভির সাথে করা সকালের বিহেভ করার কারনে এখন অসস্থি লাগছে আর সানভির সেই ছলছল চোখের কথা মনে পরলে তো আরো অসহায় হয়ে যাচ্ছে। তাই আর না পেরে ম্যাক্স কে কল করলো নিজের এই অবস্থার কথা জানাতে। কারন ম্যাক্স একজন স্টাইলিষ্ট এর পাশাপাশি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ও যার সাথে ও ওর লাইফের প্রায় হুকস টু নুকস সব ই শেয়ার করে।
ম্যাক্স কে ওর অবস্থা শেয়ার করে এখন ভালো লাগছে আর ম্যাক্স ও বলেছে কালকে যদি সানভি আসে ও যেন ভালো বিহেভ করে যেমন টা ওর বাকি সেক্রেটারি দের সাথে করে। কিন্তু তা তো হবে যদি ও আসে না আসলে তো!
.
পরেরদিন সকালে কোনো সিডিউল ছিলো না দেখে ওর পাপার অফিসে গিয়ে হাজির হলো সানভির কথা জানতে, কিন্তু গিয়ে জানতে পারলো সানভি মি. খন্দকার এর কল আর ধরেইনি। তারপর ওর পাপার কাছে সরি বলে বললো এখন উনি যাকে সিলেক্ট করবে ও ই ফাইনাল।
ওইদিন সারাদিন আর সানভি আসে ও নাই কোনো কিছু জানায়নি। তাই মি.খন্দকার নিউ সেক্রেটারি রাখার অফিসিয়াল একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দিতে বললেন নির্ভানের ম্যানেজার কে ।

…দুই দিন পর… নির্ভানের নতুন সেক্রেটারির জন্য ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে আজকে আর সেটা ওর স্টুডিও তেই রাখা হয়েছে।

– পাপা এখানে আমার নিজেকেই উপস্থিত থাকতে হবে?

– সেক্রেটারি কি আমার জন্য রাখছি? যেহেতু ইন্টারভিউ নেয়া ই হচ্ছে সেহেতু তোমাকে উপস্থিত থাকতে হবে। অবশ্য এখানে আমার থাকা টা জরুরি না তবুও আছি আর তুমি!!

– হুম। কখন শুরু হবে? আর কয়জন ক্যান্ডিডেট?

– এইতো আর দশ মিনিটের মধ্যেই। তোমার জন্য নিজের কোম্পানি রেখে এখানে বসে আছি। You dare reject this secretary, so choose perfectly okay? যাকেই চুজ করো পার্মানেন্ট যেন হতে পারে অন্তত কয়েক বছরের জন্য।

– yes papa I will. Lets start.
ওর ইশারায় ওর বডিগার্ড গেইট খুলতেই প্রথম ক্যান্ডিডেট ভেতরে আসে। আর মেয়ে টাকে দেখেই নির্ভান বলে উঠলো

– তুমি???
.
.
.
চলবে।