অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-১১+১২

0
899

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ১১
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
অর্নব সানভির হাতটা ধরেই বলতেই নিচ্ছিলো কিছু কিন্তু নির্ভান এসে

– মিস. সান। বলে প্রায় হালকা চিৎকার করে উঠতেই সানভি ও ভয়ে ভয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাড়িয়ে বললো,,,, মি.কে আমি আসলে এখানে আসলে ইয়ে মানে ফে ফে ফ্রেন্ড এর সাথে এসেছিলাম।

নির্ভান আর কিছু বলার আগেই পেছনে থেকে একজন মহিলা বলে উঠলেন

– এই মেয়ে এখানে কি করছে নির্ভান??
.
কথাটি শুনে নির্ভান আর ম্যাক্স তো বুঝে গিয়েছে কে এসেছে তাই ওরা ওদের পেছনে ঘুরে মহিলা টির দিকে তাকালো আর সানভির তো মুখোমুখি ই একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মহিলা টি। এখন ওরা তিনজনই ভয়ে আর অর্নব কিছু বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
উনি এখনো সানভির দিকেই তাকিয়ে আছেন দেখে নির্ভান নিজেই এগিয়ে গিয়ে বললো

– খালামনি সো নাইস টু সি ইউ। কতোদিন পর দেখছি তোমাকে আর তুমি ও কি নিয়ে পরে আছো চলো খালামনি অনেক কথা আছে।

– তার আগে বল ও এখানে কি করছে।

– খালামনি ও আমাদের সাথে এখানে আসেনি ও ফ্রেন্ড কে নিয়ে এসেছে তুমি আসো আমাদের রিজার্ভেশন আলাদা করে করা ওইখানে চলো।

– ওহ ওয়ান্ডারফুল বাট এই মেয়ে যেখানে থাকবে ওইখানে আমি থাকতে পারবো না।

– খালামনি তুমি ওকে নিয়ে…..

– এক্সকিউজ মি মিস আমি জানি না আপনাদের কি প্রবলেম কিন্তু আপনি একটু বেশি রিয়েক্ট করছেন না? এটা একটা পাবলিক রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট প্রোপার্টি না। সো আমরা তো এখান থেকে যাবো না আপনার প্রবলেম হলে আপনি যেতে পারেন। বলেই অর্নব সানভির হাতে ধরে ওকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পরলো।

– Who is he? He is so rude. এখন তো আমি এখানে এক সেকেন্ড এর জন্য ও থাকবো না। বলেই নির্ভানের খালামনি তানি এখান থেকে চলে যেতে নিচ্ছিলেন সানভি নির্ভানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও কিছু বলছে না কিন্তু ও জানে নির্ভানের জন্য ওর খালামনি কি উনি যদি এখান থেকে চলে যান তাহলে ও অনেক কষ্ট পাবে তাই ও দাঁড়িয়ে বললো,,, ম্যাম আপনার যেতে হবে না। আমি এভাবে ও এখান থেকে চলেই যাচ্ছিলাম। বলেই অর্নব এর দিকে তাকিয়ে বললো,,,, সরি অর্নব কিন্তু আমার ও একটু কাজ আছে যেতে হবে। বলেই পার্স টা নিয়েই বাহিরে চলে গেলো আর দাড়ালো না।
ওর খালামনি সামনে থাকায় নির্ভান সানভি কে কিছু বলতে পারলো না শুধু ওর দিকে তাকিয়ে ওর যাওয়া দেখছে

– নির্ভান, ম্যাক্স এখন বলো আমাদের টেবিল টা কোথায়?

– হা? হ্যাঁ খালামনি চলো। বলেই নির্ভান ওর খালামনি কে নিয়ে চলে গেলো। আর অর্নব ও ওর পরিচিত ওয়েটার কে ডেকে বলে দিলো খাবার গুলো প্যাক করিয়ে রাখতে আর বিল ও ওর একাউন্ট এ লিখে রাখতে। তারাতারি বের হয়ে গিয়েও সানভি কে দেখতে পেলো না কারন ও তো বের হওয়ার সাথে সাথেই রিক্সায় উঠে চলে গিয়েছে। অর্নব পেছনে ফিরে দেখে নির্ভান ও আসছে তাই এগিয়ে গিয়ে ওকে বললো

– কি ইনসাল্ট আরো কিছু বাকি আছে নাকি রকস্টার নির্ভান?

– মিস.সান কোথায়?

– চলে গিয়েছে। থাকতে আর দিলেন কোথায়?

– এটা আমার খালামনি আর আমার সেক্রেটারির মাঝের ব্যাপার এটা আমি সোলভ করে নিবো আপনাকে এতো ভাবতে হবে না। বলেই নির্ভান ঘুরে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু অর্নব এর কথা শুনে থেমে গেলো

– অবশ্যই ভাবতে হবে ও আমার.. বলেই থেমে গিয়ে,,,, হোয়াটএভার বলেই চলে গেলো।
নির্ভান দাঁড়িয়ে ভাবছে ওই ছেলে পুরো টা কি বলতে চাইলো আমার ফ্রেন্ড নাকি আমার গার্লফ্রেন্ড!!! যেন কথা টা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলো কিন্তু ম্যাক্স এর কল আসায় আবার তারাতারি ভেতরে চলে গেলো কারন নির্ভান ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে এসেছিলো।
.
রিক্সায় বসে সানভির প্রায় কান্না ই চলে আসছিলো কিন্তু তবুও কান্না থামিয়ে রাখলো। এখন বুঝতে পেরেছে কেন মি. কে ওকে ছুটি দিয়েছেন কেনো রেস্টুরেন্টে সাথে আনেননি। ও জানে নির্ভানের খালামনি ওকে মোটেও দেখতে পারে না আর এর বড় একটা কারণ ও আছে। এখন আর ওর বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না ইলা কে না বলে ওর মনে শান্তি আসবে না আর অর্নব কে ও ইলা ই বুঝিয়ে দিবে তাই ভাবলো ইলার সাথে দেখা করবে। তাই ওকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো ও কোথায় আছে। ইলা এখন ওর বাসায় ই আছে তাই ও ইলার বাসায় ই যাচ্ছে।।
.
– খালামনি কেমন আছো বলো এখন? আর লন্ডন এ থাকো তোমার দেশের আর আমাদের কথা কি মোটেও মনে পরে না?

– ভালো আছি নিভু, আর দেশের কথা তো মনে পরেই কিন্তু তুই তো জানিস আমি কাজ পাগল মানুষ যেখানে আমার কাজ সেখানেই আমি। এখন বল তুই আর ম্যাক্স কেমন আছিস?

দুইজনই হাসি মুখে জানালো ওরা ভালো আছে। তারপর তিনি আবার
সানভির কথা বললেন

– নিভু তুই এখনো ওই মেয়েকে তোর সেক্রেটারি রেখেছিস? তোকে বলিনি ও অনেক খারাপ মেয়ে তোকেও ফাসিয়ে ছাড়বে।

– আরে খালামনি তুমি শুধু শুধুই চিন্তা করছো ও কিছু করবে না বিলিভ হার ও ওর পজিশন এ কাজ খুব ভালো ভাবে করে এন্ড তুমি আমাকে চেনোনা! আমাকে কি ফাসানো এতো সহজ।

– না তা জানি কিন্তু…

– ওকে ওকে খালামনি অনেক হয়েছে ওকে নিয়ে কথা এখন আমরা আমাদের কথা বলি।

– হ্যাঁ ঠিকাছে বল। এই বিগত দুই বছর কি কি হলো আমার অনুপস্থিতিতে।
নির্ভান হেসে ওর খালামনির উত্তর দিতে প্রস্তুত।
.
অর্নব সেই প্যাক করা খাবার গুলো নিয়ে আগের সেই বাচ্চাগুলোর কাছে চলে গেলো এখনো ঘুমায়নি ভালোই হয়েছে। বাচ্চাগুলো খাবার পেয়ে যা খুশি হয়েছে তা যেন ওর সব বিরক্তি ভুলিয়ে দিলো।

– ভাইয়া ওইটা কি আমাগো ভাবি আসিলো? একটা বাচ্চা এসে কথা টা জিজ্ঞেস করলো।

– নাহ ছিলো না। কিন্তু হলে মন্দ হয় না তাই না?

– হ হইবো ভাবি ও অনেক ভালো আপনের মতো একদম। বলেই আমরা নতুন ভাবি পামু,,,, বলে চিৎকার করতে করতে ওদের ওই দলে মিশে গেলো। আর এদিকে বসে অর্নব হাসছে ওদের দেখে।

.
সানভি ইলার রুমে বসে আছে ইলা পানি নিয়ে আসলো

– এখন বল কি হয়েছে।
সানভি শুরু থেকে সব জানালো শেষে নির্ভানের খালামনির হটাৎ এসে পরার কথায় থামতেই ইলা বলে উঠলো

– কি?? নির্ভান এর খালামনি সেই খালামনি?

– হ্যাঁ সেই খালামনি।

– তারপর কি হলো?

– উনি আমার কারনে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যেতে নিচ্ছিলেন কিন্তু আমি তো জানি সে মি.কে এর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাই আমিই অর্নব কে সরি বলে চলে এসেছি সেখান থেকে।

– এখানে তো নির্ভান এর একটু ভুল আছে ও তোকে বললেই পারতো যে উনি আসছেন।

– উনি এই জন্যই তো সারাদিন এর ছুটি দিয়েছিলেন তিনি কি আর জানতেন যে আমি ওই রেস্টুরেন্টেই যাবো।

– তাও ঠিক। আর হ্যাঁ অর্নব কল করে আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছে আর ও নিজেও খুব সরি ফিল করছে। এখন আমি ওকে কল করে আবার বলে দেই যে তুই ঠিক আছিস। ওকে?

– হু বল।
ইলা অর্নব এর সাথে কথা বলে সব ঠিক আছে বলে দিলো সানভি যে সামনেই আছে তা বলেনি।

– অর্নব তোর নাম্বার চেয়েছে দিয়ে দিলাম।

– নাম্বার!!

– দিয়ে দিয়েছি।।

– ইলিইইইইই… কেন দিলি?

– কেন পছন্দ হয়নি কথা বলবি না.???

সানভি কিছু বললো না দেখে ইলা আবার বললো,,, আহ লজ্জা পাচ্ছিস।

– নাহ তো।

– তো বল ভালো লেগেছে?

– হ্যাঁ…

– ওয় হয় হয়ে গেছে তাহলে,,, ব্যান্ড বাজা বারাত৷

– আরে আরে পুরো কথা তো শোন। হ্যাঁ মানে সে ভালো বাট একদম বিয়ে করার জন্য হ্যাঁ বলেছি তা তো না।

– বেটি আমি জানি। মজা করছিলাম আমি ওকে আগেই বলেছি সব কিছু তেই টাইম লাগবে সব জেনে বুঝে তারপর কথা আগাবো।

– তুই তো দেখি পুরোই ঘটক দের মতো কথা বলছিস।

– এতো সম্মান!! ম্যাচমেকার বল ম্যাচমেকার।

– হু ঘোড়ার ডিম। এখন আমি যাই টায়ার্ড লাগছে অনেক।

– তো এখানেই থাক।

– না না ব্যাস বাসায় যাবো এভাবেও বাসায় চলে যেতাম বাট তোর সাথে কথা টা শেয়ার না করে পারছিলাম না। এখন ভালো লাগছে আর থাকলে তুই ভেজা ফ্রাই করে ফেলবি। আজ উঠি আবার দেখা হবে।

– ঠিকাছে যা। চল এগিয়ে দিয়ে আসি।
.
সানভি অনেক টায়ার্ড হয়েই বাসায় ফিরছিলো অনেক টা ঘুম ঘুম ও পাচ্ছিলো তাই হা দিতে দিতে সিড়ি দিয়ে উঠে চাবি বের করছিলো তখনই নিজের ফ্ল্যাট এর সামনে থেকে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে,,, আহ। বলেই চিৎকার করে উঠতেই

– আরে আরে চিৎকার করছো কেনো? আমি মি. কে। বলেই এগিয়ে আসায় ও ফেস দেখেই বলে

– ওহ মা। যা ভয় পেয়েছিলাম এমন করে কেউ দাড়ায় মি.কে। তার মধ্যে এই ফ্লোর এর বাতি টা ও নষ্ট। বলেই নিজেকে শান্ত করছিলো,,,,, বাই দা ওয়ে আপনি এখানে কি করছেন?

– আমি এখানে তোমার ফ্লোর এর বাতি নষ্ট বললে না তা ঠিক করতে আসলাম আর কি।

– মি. কে।।

– মিস. সান ভেতরে গিয়ে কথা বলি?

– ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ। বলেই চাবি দিয়ে গেইট টা খুলে লাইট জ্বালিয়ে নির্ভান কে জায়গা করে দিলো।

– আমি হয়তো এই প্রথম তোমার ফ্ল্যাট এ আসলাম তাই না?

– জি মি.কে। এখন কি বলবেন বলেন।

– আসা করি তুমি আমার খালামনির কথায় রাগ করোনি।

– মি.কে আমি কিছু মনে করিনি উনাকে নিয়ে আপনার ক্ল্যারিফিকেশন দিতে হবে না। আপনি চাইলে আমি কিছুদিন আপনার বাসায় বা স্টুডিও তে যাবো না। আমি চাই না আর কোনো প্রবলেম হোক।

– না তা করতে হবে না খালামনি বাসায় ই থাকবে তুমি স্টুডিও তে যেতে পারবে তবুও আমি ও চেষ্টা করবো তোমরা যেন মুখোমুখি না হও।

– কিন্তু এভাবে কিভাবে হয় তিনি আমাকে ভুল বুঝছেন ওইদিন… ওইদিন আমার ভুল ছিলো না।

– আমি জানি মিস.সান সব টাইমিং এর কারনে।।।

– হু।

– যাই হোক ওই ছেলেটা কে ছিলো তোমার সাথে?

– কোন ছেলে! ওহ উনি, উনি আমার ফ্রেন্ড।

– ওহ! তুমি অনেক অনেক দিন পর আজ আবার ওই সেই আগের টাইপের ড্রেস পরেছো।

– হ্যাঁ ওই ড্রেস এ আমার ফ্রেন্ড এর প্রবলেম হয় না তাই।

– আহ না মানে খুব সুন্দর লাগছে আজকে তোমাকে লুকিং প্রিটি। মনে হয় ওইটা ফ্রেন্ড মিটিং না ডেটিং ছিলো….
সানভি কথা টার উত্তর দিতে চাইছিলো না তাই জিজ্ঞেস করলো,,, মি. কে এই প্রথম এলেন আমার বাসায় কফি বা চা কিছু করে দিবো?

– না না আমি যাচ্ছি কাল সকালে চলে এসো টাইম মতো।

– খালি মুখে যেতে নেই।

– তো তুমি কি আমার মুখে কফি দিয়ে বের করে দিতে?

– না না তা বলিনি।

– অন্যদিন আসবো তোমার বাড়িতে কফি টা পাওনা রইলো।

– ওকে মি.কে।
বলেই নির্ভান বের হয়ে যাচ্ছিলো সানভি ও বিদায় দিচ্ছিলো তখনই পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা ওদের দেখলো কিন্তু অন্ধকার থাকায় বুঝতে না পেরে সানভি কে বললো

– সানভি তুমি নাকি?

– জি আন্টি।

– কে তোমার সাথে এটা! বয়ফ্রেন্ড বুঝি?

– না নাহ আন্টি কি বলছেন এসব। আমার বস উনি।

– ওহ আচ্ছা। বলেই তিনি তার ফ্ল্যাট এ চলে গেলেন।

– এখন পুরো বিল্ডিং কাল এই কথা জেনে যাবে উফফ।।

– ইটস ওকে মিস.সান। আমার ফেস তো দেখেনি বলে দিও বয়ফ্রেন্ড ই ছিলো।

– এটা বললে আরো কতো কি যে রটিয়ে ফেলবে তারা।

– তাহলে অন্য কোথাও ফ্ল্যাট নিয়ে দেই।! আমি তো অনেক আগেই বলেছি এসব প্লেস নট গুড।

– মি. কে বায় বায়।

– এজ অলওয়েজ। এই কথায় তুমি এমনই করো।

সানভি আর কিছু বললো না। ভেতরে এসে গেইট লক করে ড্রেস চেঞ্জ করতে যাচ্ছিলো কিন্তু মি.কে এর কথায় আবার আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখে নিলো।।
.
পরেরদিন সকালে সানভি রেডি তো হয়েছে কিন্তু যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা

– ওই তানি ম্যাম জাস্ট হেট করে আমাকে সে যদি দেখে আজকেও!! উফফফ যাবোই না আমি। বলেই মি.কে কে জানানোর জন্য ফোন টা হাতে নিতেই দেখে এর আগেই তার থেকে মেসেজ এসেছে “” Don’t be late, it’s okay she will not be in the studio.And no excuse. “”” মেসেজ পরে ওর হাসি পেলো যে উনি আগেই ওয়ার্নিং দিয়ে দিয়েছেন তাই যাওয়ার ডিসিশন ই নিলো।
স্কুটি তে করে এসেছে সানভি তাই পার্কিং করতে গেলো ফার্স্ট এ। স্কুটি টা পার্ক করে বের হতে সময় একটি গাড়ি পার্কিং লট এ যাচ্ছিলো কিন্তু হটাৎ ওর সামনে ব্রেক মেরে কে যেন গাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে কিন্তু ও সাইড হয়ে চলে আসছিলো তখনই পেছন থেকে তার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলো

– মিস.সান মাই সান। আমাকে ভুলে যাওনি তো??
পেছনে ঘুরে ওই লোককে দেখেই কিছুটা ঘাবড়ে যায় সানভি। ও ঠিকই চিনেছে ছেলেটা আর কেউ না অমিয়!
.
.
চলবে…

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ১২
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
সানভি সাইড হয়ে চলে আসছিলো তখনই পেছন থেকে তার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলো

– মিস.সান মাই সান। আমাকে ভুলে যাওনি তো??
পেছনে ঘুরে ওই লোককে দেখেই কিছুটা ঘাবড়ে যায় সানভি। ও ঠিকই চিনেছে ছেলেটা আর কেউ না অমিও!
.
ওকে দেখেই সানভির সেই দিনগুলোর কথা মনে পরে গেলো যখন ও মি.কে এর অফিসে নতুন নতুন কাজ করতো এই তো তিন বছর আগের ই কথা তখন প্রথম এই অমিও এর সাথে দেখা হয়েছিলো যে আর কেউ না খালামনির ছোট ছেলে।

– অ অ অমিও!!

– Nice to meet you Myyyy San. আশা করি ভালোই আছো।
সানভি ঘুরে চলে আসছিলো অমিও তারাতারি দৌড়ে ওর সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।,,,,, কোথায় যাচ্ছো? এখনো আগের কথা ধরে বসে আছো! আমাকে ওয়েলকাম করবে না? আর যাই হোক আমি তোমার বস এর কাজিন।
সানভি কিছু বলছিলো না চুপ করে আছে দেখে ওই অমিও আরো আগে বেড়ে এসে দাঁড়িয়ে সানভির মুখের সামনের চুল গুলো সরাতে নিলেই সানভি সরে যাওয়ার আগেই নির্ভান অমিওর হাত ধরেই ওকে টেনে গলায় জরিয়ে বললো

– আরে ভাই কেমন আছিস?

– হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই ছাড় তারপর বলছি।
নির্ভান ছেড়ে দিলো আর সানভি এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না দৌড়ে স্টুডিও তে চলে গেলো। অমিও সানভির দিকেই তাকিয়ে আছে দেখে নির্ভান বললো

– অমি আবার!!

– ভাই কি করবো আমার কাছে ওকে খুব আকর্ষণীয় মনে হয়ে। বিদেশি মেয়ে দেখেও যা লাগেনা ব্রো।
নির্ভানের রাগ উঠলেও ও দমিয়েই রাখলো ও অনেক মেয়ের সাথেই ফ্লার্ট করেছে কিন্তু এভাবে কোনো মেয়েকে আকর্ষণীয় বলে হ্যারাস করা ওর মোটেও পছন্দ না।

– ভালো লাগলে বলতে পারিস হোয়াট ইজ আকর্ষণীয়? ও একটা মেয়ে অমি রেস্পেক্ট হার।

– ওকে ওকে চলো মাম্মি কোথায়? আর আংকেল আর আন্ট সবার সাথেই তো দেখা করতে হবে।।

– হু। বলেই নির্ভান ওকে মেইন বাড়িতে নিয়ে গেলো। ও ভালো করেই জানে তাদের সামনে অমি সানভি কে নিয়ে আর কিছুই বলবে না।
.
এদিকে সানভি স্টুডিও রুমে ওর ডেস্ক এ বসে ভাবছে। ওইদিন ও নির্ভান বাহিরে গিয়েছিলো ওর খালামনির সাথে সানভি কাজ করছিলো স্টুডিও তে তখন এই অমিও নির্ভানের সাথে দেখা করার জন্য এসে নির্ভান কে না পেয়ে সানভির সাথে কথা বলার বাহানায় ওর কাছে বসে কথা বলতে বলতে হটাৎ ই অনেক কাছে চলে এসে কথা বলার বাহানায়। এক পর্যায়ে তো ওকে কিস করার জন্য ওর সাথে জোড় করতে শুরু করে দেয় তখনই ধাক্কা দিলে অমিও উঠে এসে বলতে থাকে

– কি প্রবলেম? এমন করছো মনে হয় কখনো নির্ভান ভাই এমন করেনি? অবশ্যই করেছে আমি জানি ও কেমন! তুমি ওর পার্সোনাল সেক্রেটারি তোমার সাথে তো ওর আরো বেশি…..

– কি বলছেন এসব আপনি?

– আরে আর নাটক করতে হবে না জব এ পুরো এক বছর টিকেছো আমি সিওর এর বদলে কিছু তো দিয়েছো ই তা আমাকে ও দাও। আর তুমি চাইলে আমি তোমাকে এর বিনিময়ে অনেক কিছু দিতে পারি। বলেই ওকে জড়িয়ে ধরে আর সাথে সাথেই সানভি ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। হটাৎ কারো আসার শব্দে অমিও ওকে ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে যেতে নিলেই নির্ভান এসে পরায় অমিও নাটক শুরু করে দেয় বলে

– ভাই এটা কেমন সেক্রেটারি খুব চালবাজ।

– মি. কে উনি উনি…..

– তুমি চুপ করো। জানো ভাই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলো ও আমাকে নাকি লাভ করে। আমি বললাম কি বলছেন এসব সরুন, বলেই সরিয়ে দিতেই দেখোনা নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলো।

– না মি.কে উল্টো সে আমার সাথে জোরাজোরি করছিলো, কিস ও করতে চাইছিলো আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার পর উঠে এসে উনি কিসব বাজে কথা বলা শুরু করলেন আমাকে আর আপনাকে নিয়ে। ছিঃ

– ভাই বিশ্বাস করো আমি এরকম কিছুই করিনি।

– মিস.সান আই বিলিভ ইউ। অমিও আমি তোকে চিনি খুব ভালো করেই।

– ভাই তার মানে তুমি ওকেই বিলিভ করছো??

– আমার রুমে সিসি ক্যামেরা আছে এক নিমিষেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে এখন কি আমি সেই ফুটেজ টা খালামনির সাথেই দেখবো?

– তুমি আমাকে অবিশ্বাস করলে!

– নাহ আমি যেটা ট্রু সেটা বিশ্বাস করলাম। এখন বল তুই কি চাস??

অমিও আর কিছু না বলেই চলে গেলো। শুধু চলে গেলে তো ভালোই হতো গিয়ে এসব তো কিছু বলেনি কিন্তু সানভির নামে অনেক খারাপ কথা গিয়ে ওর মা কে বলেছে যার কারনে সে এখন সানভি কে দেখতেই পারেন না আর সুযোগ পেলেই বলতে থাকেন ওকে বের করে দিতে জব থেকে কারন ও নাকি ক্যারেক্টারলেস।

কিন্তু এতো কিছুর পরও নির্ভান ওকে কখনোই সন্দেহ করেনি। ও বলেছে ও বিশ্বাস করে সানভি কে। তাই তো আজও কখনো সেই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ টা দেখেনি আর খালামনি কেও দেখায়নি কারন ও চায় না বছরে একবার করে আসা এই খালামনি এসব ব্যাপার ভেবে এখানে আসা বন্ধ করুক বা তার ছেলে কে খারাপ ভাবুক খালামনি আর অমিও তো আর রোজ রোজ আসে না আর অমিওর জন্য তো নির্ভান ই যথেষ্ট।

ওইদিন এর পর থেকে নির্ভানের প্রতি থাকা ওর ধারণা পুরোপুরি বদলে যায় ও বুঝতে পারে নির্ভান যতোই মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করুক ও মেয়েদের রেস্পেক্ট করতে জানে ও ওর সীমা কতোটুক তাও জানে। সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকে এটা তো সানভি জেনেই গিয়েছে যে ও মানুষ টা মা……
হটাৎ নির্ভান এর কথায় ধ্যান ভাঙলো সানভির

– মিস.সান…. মিস.সান?? কোথায় হাড়িয়ে গেলে?

– জি জি মি.কে।

– ইটস ওকে যদি অমিও কে নিয়ে ভেবে থাকো তাহলে জেনে রাখো ও স্টুডিও তে আসবে না। আর বাড়িতে তুমি যাও না সো ওর টেনশন বাদ দাও। ওহ আর হ্যাঁ আমার দুইদিনের তেমন সিডিউল নেই তবুও যা আছে ক্যান্সাল করে দাও।

– সব ক্যান্সাল করে দিবো?

– হ্যাঁ খালামনি অমি আমরা সবাই নানুর গ্রামে যাবো। হ্যাঁ ট্রেন এর ৭ টা টিকেট কাটিয়ে দিয়ো। আজকে বিকেলের।

– ৭ টা?

– হ্যাঁ। ওহ ডোন্ট ওয়ারি তোমাকে যেতে হবে না বিজি ১ আর ২ কে নিয়ে যাবো।

– ঠিকাছে।

– আমি জানি খালামনি আর অমির সাথে যাওয়া টাফ তোমার জন্য। যাই হোক মিস.সান তুমি তো ব্যাক টু ব্যাক অনেক ছুটি পাচ্ছো ওয়াহ।

– হ্যাঁ আপনিও তো পাচ্ছেন।

– হুম সব মনে আছে তো কি কি বলেছি।

– ইয়েস মি.কে।

– ওকে দেন এখানের সব কাজ শেষ করে বাসায় চলে যায়। আমি মেইন বাড়িতে যাচ্ছি।

– Okay Mr.K bye and take care, best wishes for the trip.

– Thank you.
বলে নির্ভান চলে যাচ্ছিলো কিন্তু কি একটা নিতে যেন ওর রুমে গেলো। বের হয়ে আসতে সময় শুনে সানভি কার সাথে যেন কথা বলছে যাচ্ছিলো তখনই সানভির কিছু কথা শুনতে পেলো

– না না অর্নব তা করতে হবে না আমি ঠিক আছি। ওইদিনের চ্যাপ্টার ওইদিনই ক্লোজ হয়ে গেছে আর মি.কে হ্যান্ডেল করে নিয়েছেন।

………

– আরে কি দরকার। আহ… আচ্ছা ঠিকাছে আজকে না তাহলে কালকে ফ্রি আছি।

………

– ওকে বায়।
কথা শেষে নির্ভান কে খেয়াল করতেই

– মি.কে আপনি এখনো এখানে?

– হ্যাঁ আমার স্টুডিও আমি যখন ইচ্ছা তখন আসতে এবং যেতে পারি। বলেই বের হয়ে গেলো

– ও মা উনি এমন কেন করলেন!
হাসিখুশি মনে থাকা নির্ভান হটাৎ ই খিটখিটে কেন হয়ে গেলো বুঝতে পারছে না সানভি। এদিকে নির্ভান ও বাহিরে এসে ভাবলো এটা কেমন বিহেভ করলো ও কখনোই তো ও সানভির সাথে এভাবে কথা বলেনি। ভেতরে যাচ্ছিলো সানভি কে বলতে যে ও একটু বেশিই করে ফেলেছিলো কিন্তু ওর মা কল করে বললেন খালামনি ডাকছেন তাই আর যেতে পারলো না।
.
খালামনির সাথে কথা শেষে নির্ভান স্টুডিও তে ফিরে দেখে সানভি নেই কাজ শেষ করে ও সব সেটেল করে রেখে গেছে টিকেট কনফার্ম হয়েছে টাইম সব বিজি ১ কে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। এখন খারাপ লাগছে দুইদিন মেয়েটার সাথে দেখা হবে না আর ওকে নাকি আজ এমন করে কথা শুনিয়ে দিলো!
.
স্টুডিও থেকে বের হয়ে সানভি সোজা ইলার সাথে দেখা করতে এসেছে। লাঞ্চ ব্রেক হওয়ায় একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে

– কি?? অমিও! ওই ছেলেও এসেছে আহহ আল্লাহ।

– ভালো তো মি.কে এসে সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করে ফেলেছিলেন। তা নাহলে কি করতো কে জানে।

– কিছুই করতো না। আর নির্ভান তো আসলেই হিরো আমাদের তোকে তো সে সাপোর্ট করবেই।

– হু আপাতত তারা দুইদিনের জন্য ভ্যাকেশন এ যাচ্ছে এন্ড আমার ও অফ ডেএএএএ।।।

– ইয়েএএ… আমার ছুটি না। যাই হোক সানু কাল তো অনেক কথা হলো কিন্তু মেইন কথা টাই তো জিজ্ঞেস করা হলো না।

– কি কথা?

– পাত্র কেমন দেখলে??

– পাত্র!?? কোন পাত্র….. ও ও এক্সকিউজ মি,, কে পাত্র? বলেই একটু লজ্জা পাচ্ছিলো সানভি।

– ও পাত্রী দেখি লজ্জা পাচ্ছে।

– স্টপ ইট ইয়ার।

– আচ্ছা যাই হোক এখন বল অর্নব কে কেমন লেগেছে?

– হু ভালো মানুষ। যতোটুকু জেনেছি ভালোই জেনেছি আর বেস্ট পার্ট তো ছিলো সেই বাচ্চা গুলোর সাথে কাটানো সময় টা।

– হ্যাঁ আচ্ছা যাই রে আরেকটু থাকলে লেট হয়ে যাবো বাকি কথা রাতে বলবো নে যাই এখন।
দুইজনই উঠে বের হয়ে গেলো ইলা কে বুটিকের সামনে নামিয়ে দিয়ে সানভি বাসায় ফিরছিলো তখন নির্ভানের কল এলো স্কুটি টা সাইড করে কল রিসিভ করতেই

– হ্যালো।

– হ্যাঁ মিস.সান।

– জি মি. কে বলুন।

– মিস. সান ট্রেনের টিকেট বুক করেছো?

– হ্যাঁ বিজি ১ এর কাছে তো দিয়ে এসেছি আপনাকে দেয়নি কাগজ টা?

– ওহ বিজি ১ এর কাছে ওকে আমি দেখছি।

– জি মি.কে ওহ হ্যাঁ আপনার যে প্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজন হতে পারে গ্রামে গেলে সব আমি আপনার রুমে একটা ব্যাগ এ রেখে এসেছি।

– আমার লাগেজ??

– নাহ স্কিন কেয়ার, বিভিন্ন মেডিসিন, মাস্ক, ক্যাপ, সানস্ক্রিন, গ্লাসেস সব আছে কি ব্যাগ টা তে। বিজি ১ বা ২ এর কাছে দিয়ে দিবেন যাতে করে সেই ব্যাগ টা এই দুইদিন আপনার আশেপাশে থাকে কারন গ্রামে গেলে কোনো এলার্জি বা মশা বা কোনো প্রকার পোকা যেনো আপনার কোনো ক্ষতি না করতে পারে তাই এই ব্যাগ টা গুছিয়ে দিয়েছি।

– সিরিয়াসলি?? থ্যাংক ইউ সো মাচ মিস.সান তুমি সত্যিই আমার সান।

– ককি?

– ওকে বায় মিস.সান। বলেই নির্ভান ফোন টা কেটে দিলো, ট্রেনের টিকেট কনফার্ম হওয়ার কাগজ টা হাতেই ওর।
তুমি সত্যিই আমার সান কথাটা শুনা মাত্রই যেন সানভির পুরো শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো এমন মনে হলো ওর। বারবার কানে তুমি সত্যিই আমার সান কথাটাই বাজছে এখনো।

– আরে সান মানে সূর্য সান। সে ওইদিন ও পোস্ট এ কথা টাই বলে ছিলেন। নিজেকেই নিজে এটা বলে স্কুটি স্টার্ট দিয়ে বাসায় রওয়ানা হলো।।
.
দুইদিন পর নির্ভান গ্রাম থেকে ফিরে এসেছে ওর বডিগার্ড দের সাথে ওর মা, পাপা, খালামনি আর অমিও গ্রামেই থাকবে আরো একদিন। কিন্তু ওর একটা শ্যুট এর কারনে ও ফিরে এসেছে। সানভি এখন অর্নব এর সাথে দেখা করতে এসেছে। গতকাল দেখা করতে পারেনি ওরা অর্নব এর একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিলো বলে তাই আজকে সকাল সকাল এসেছে সানভির সাথে কথা বলতে আসলে ও খুব এক্সাইটেড থাকে সানভির সাথে কথা বলার জন্য।

– সানভি ওইদিন যেই কথা টা বাকি রয়ে গিয়েছিলো মানে আমাদের….

– ওইদিন?

– হ্যাঁ বল ছিলাম আসলে আমি…
তখনই সানভির ফোন বেজে উঠলো আর সানভি ও তারাতারি এই সিচুয়েশন থেকে বাচার জন্য কল টা পিক করলো

– মিস. সান ডিজাস্টার হয়ে আছে এখানে যলদি আমার স্টুডিও তে আসো যতো তারাতারি পসিবল।

– এখনি ঠিকাছে। ফোন টা কেটে গেলো।,,,, সরি অর্নব কিন্তু আমাকে যেতে হবে আমার মনে হয় মি.কে কোনো প্রবলেম হয়েছে। বাকি কথা আমরা অন্য কোনোদিন কন্টিনিউ করবো বাট আজকে না সরি বলেই এবার ও ওর ব্যাগ টা নিয়ে বের হয়ে এলো। আসলে ও জানে অর্নব কি বলতে চায় তাই বারবারই সিচুয়েশন টা ইগনোর করতে চাচ্ছে এখনো সিওর হতে পারছেনা তাই হয়তো!!
.
.
.
চলবে।