অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-১৯+২০

0
871

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ১৯
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
……আমি আবার! ওহ নো।

– হ্যাঁ।

– কি কি করেছি এবার?

– বের হয়ে আসেন তারপর বলছি। বলেই সানভি বের হয়ে এলো।
.
নির্ভান সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসতেই সানভি জিজ্ঞেস করলো কি করেছে! কিন্তু সানভি সব বললো না শুধু রিয়া কে মিস সান বলে স্টুডিও পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলো এটাই বললো। নির্ভান শুনে স্বস্তি পেলো।।

– মি.কে আমার এখন যাওয়া উচিৎ। আমি যাই কাল সকালে দেখা হবে।

– এতো রাতে একা কিভাবে যাবে! না না আমি মেইন বাড়িতে একটা রুম খুলে দিতে বলি ওইখানেই থাকো আজকে রাত টা।

– না না তার প্রয়োজন নেই আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো আমার নিজের রুম ছাড়া ঘুম আসেনা আর তাছাড়া এই পার্টি ড্রেস পরে ঘুমানো অসম্ভব।

– ওহ এই কথা! তো ঠিকাছে আমি দিয়ে আসি চলো।

– নাহ নাহ আপনার তো আজকে ঘুম দেয়া প্রয়োজন কাল রাতে আমরা ওই কনসার্ট এর জন্য সিলেট রওয়ানা হবো আপনার প্রোপার রেস্ট এর দরকার। আমি নাহয় কোনো ড্রাইভার কে নিয়ে চলে যাবো নে।
– নাহ আমি ই দিয়ে আসবো তোমাকে তো আমি একা যেতে দিবো না।। জাস্ট চিল আমি তোমাকে দিয়ে এসে সারাদিন রেস্ট করবো ইটস ওকে।

সানভি আরো না করলো কিন্তু অবশ্যই নির্ভানের কথায় না করা অসম্ভব।
আধা ঘণ্টার মধ্যেই বাসার সামনে পৌছে গেছে ওরা সানভি বের হয়ে বললো

– ওকে মি.কে বায় এন্ড গুড নাইট।

– মিস সান ওয়েট।

– জি।

– বলিনি আগে কিন্তু সুন্দর লাগছে তোমাকে এই ড্রেস টায়।

– থ্যাংক ইউ।
সানভির তখনের নিজের জ্ঞান এ না থাকা নির্ভানের জেলাস হওয়ার ব্যাপার টা মনে পরলো।

– ওকে তো মিস সান গুড নাইট। বলে নির্ভান ও গাড়ি স্টার্ট করলো আর সানভি ঘুরে হেটে ভেতরে চলে গেলো।
নিজের ঘরে গিয়েই ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আর কিছু ভাবার সময় পেলো না ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো।
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখে আট টা বাজে ঘুম টা ভালোই হয়েছে

– কাল রাত থেকে এই জানালা টা বন্ধ ছিলো! বলেই উঠে গিয়ে জানালা খুলতেই চমকে গেলো ,, একি মি. কে এর গাড়ি এখানে??? উনি এখানে এতো সকালে কি করছেন?
বলেই তারাতারি ওড়না টা নিয়ে গেইট লক করে নিচে চলে গেলো কি হয়েছে ব্যাপার টা বুঝতে কিন্তু ওই গাড়ির কাছে যেতেই চোখ কপালে উঠলো

– মি. কে??? বলেই গাড়ির জানালায় টোকা দিলো কিছুক্ষন পর নির্ভান তাকিয়ে গেইট খুললো,,,মি.কে আপনি? এতো সকালে এখানে কেনো নাকি আপনি সারা রাত এখানেই ছিলেন?

– হুম।। বলেই সোজা হতে নিলেই বলে আহ… আমার পিঠ!!

– সারা রাত এখানে কেন বসে ছিলেন? এভাবে বসে ঘুমালে তো এমনই হবে।

– মিস সান আই নিড সাম কফি প্লিজ।

– ওকে ওকে আপনি আসুন আমার সাথে আমি কফি বানিয়ে দিচ্ছি।
উপরে নিয়ে এসে দুই কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসে দেখে নির্ভান ওর বিছানায় গিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে আছে।

– মি. কে?

– হু…

– কফি।
নির্ভান আর কিছু বললো না উঠে বসে কফি টা নিয়ে খেয়ে নিলো

– মিস সান ড্রাইভার কে বলো আর একটা গাড়ি নিয়ে আসতে এটা তে কি যেনো হয়েছে।

– কি হয়েছে! ও এইজন্যই আপনি?

– হ্যাঁ।

– তো আমাকে বা কাউকে কল দিতেন।

– দিয়েছিলাম কেউ ধরেনি।
সানভি নিজের ফোন টা চেক করেই দেখে যে অনেক গুলো মিস কল উঠে রয়েছে

– সরি মি.কে ফোন সাইলেন্ট ছিলো।

– এখন কল দাও ড্রাইভার কে।
.
ড্রাইভার আসতে আসতে নির্ভান একটু সময় পেয়েছে সানভির রুম ঘুরে দেখার তাই ঘুরে ঘুরে দেখছে সানভি কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে তখনই নির্ভান কে বারান্দায় যেতে দেখে নিজেও তারাতারি ওর পেছনে যাওয়ায় হাতে থাকা বাটার নাইফ টা নিয়েই দৌড় দেয় কারণ বারান্দায় পুরো কাপড় দিয়ে এখন অগোছালো হয়ে আছে আর এমন কিছু ও আছে যা দেখে ফেললে ও লজ্জা ও পাবে খুব।। ও যেতে যেতে মি. কে বলে ডাকে আর নির্ভান ও ঘুরে দাড়াতেই ওর হাতে নাইফ দেখে ভয় পেয়ে যায় আর সানভি ও তারাতারি বারান্দায় গিয়ে ওকে রুমে যেতে বলবে কিন্তু আচমকা কিসে যেন পা বেঝে নির্ভানের উপরে গিয়েই পরলো আর সাথে সাথেই নির্ভানের ব্যাথায় আ… করে উঠলো কিন্তু সানভির ভয়ে চমকে যাওয়া চোখের দিকে তাকাতেই যেন ব্যাথা টা আর বোধ হলো না।
সানভির হটাৎই ভেবে উঠলো যেন ও ওর হাসবেন্ড এর সাথে এমন একটা খুনসুটি ই তো চাইতো যার মধ্যেই ছোট ছোট দুষ্টুমি আর অনেক অনেক ভালোবাসা ভাবতে ভাবতেই মুচকি হাসি দিয়েই খেয়াল হলো নির্ভান ও তাকিয়ে আছে আর ও তার উপর হুমরি খেয়ে পরেছে আর সে তো আগে থেকেই ব্যাথায় কাতর তাই উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো

– সো সরি মি.কে বেশি ব্যথা পাননি তো?

– হ্যাঁ… মানে না পায়নি ওই কাল রাতের পিঠের ব্যাথা তে ধাক্কা লাগায় এমন আওয়াজ করেছি।

– ওহ আমার ফোন বাজছে,,,, বলেই পরিস্থিতি টা ইগনোর করলো।
.
নির্ভান বাসায় ফেরার পথে ভাবছিলো ওর আর সানভির সম্পর্ক টা কতো বদলে গেছে এই সেই সানভি যাকে নাকি নির্ভান প্রথম দেখায় এতো টা অপছন্দ করেছিলো আর তার প্রতি ও এতো টা নির্ভর হয়েছে।
এদিকে সানভি ওর বাসায় বসে ভাবছে যে ও এসব কি ভাবছে নির্ভান কে নিয়ে।।
.
বিকেলে রেস্ট নিয়ে সিলেট এ যাওয়ার প্যাকিং সেরে ইলার সাথে দেখা করে নির্ভানের বাড়িতে গেলো। ও এখনো ঘুমাচ্ছে শুনে মিসেস খন্দকার এর সাথে দেখা করতে গেলো কি কি যেনো আনাবেন উনি তারই লিস্ট দিবেন। কথার মাঝে অর্নব এর কল এলো উনিও চা আনতে চলে গেলেন। আসতে সময় ওর কথা বলার ধরন দেখে জিজ্ঞেস করলেন

– কার সাথে কথা বললে?

– একটা ফ্রেন্ড।

– ফ্রেন্ড নাকি বয়ফ্রেন্ড। বলেই হেসে দিলেন,,,,,আমাকে বলতে পারো।।

– না আন্টি তেমন কিছুই না।

– তোমার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কি কিছু না তাই না?

– আসলে আন্টি… বলেই আমতাআমতা করে সব বলে দিলো শুনে তো তিনি মহা খুশি। অর্নবের সম্পর্কে সব জানতে চাচ্ছেন। সানভি কয়েকটা ছবি দেখালো ওর সম্পর্কে জানলো আর ও যে এখনো কনফিউজড তা ও জানালো ৷

– তুমি যদি সিওর না হয়ে থাকো তাহলে তোমার সময় নেয়া উচিৎ অবশেষে এটা পুরো লাইফের ব্যাপার। আর ছেলেটা ও তো ভালোই মনে হচ্ছে যেহেতু…….

– কোন ছেলে কে ভালো মনে হচ্ছে আম্মু?
মিসেস খন্দকার আর সানভি দুইজনই নির্ভানের কথায় ওর দিকে তাকালো।

– আরে ওই যে সানভির…
.
.
.
চলবে।

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ২০
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
তুমি যদি সিওর না হয়ে থাকো তাহলে তোমার সময় নেয়া উচিৎ অবশেষে এটা পুরো লাইফের ব্যাপার। আর ছেলেটা ও তো ভালোই মনে হচ্ছে যেহেতু…….

– কোন ছেলে কে ভালো মনে হচ্ছে আম্মু?
মিসেস খন্দকার আর সানভি দুইজনই নির্ভানের কথায় ওর দিকে তাকালো।

– আরে ওই যে সানভির…
.

মিসেস খন্দকার কে থামিয়ে দিয়ে বললো
– মি.কে আমার একটা ফ্রেন্ড এর ব্যাপারে কথা বলছিলাম। আপনার পিঠ এর ব্যাথা টা কমেছে?? নাকি ডাক্তার কে ডাকিয়ে কিছু পেইন কিলার প্রেসক্রাইব করতে বলবো?

– না না এখন ঠিক আছি। বাট মেডিসিন আনিয়ে নেয়া ভালো আগে ঢাকার বাহিরে গেলে যা যা নিয়ে যেতাম সেই ওষুধ গুলো নিতে ভুলো না।

– ওকে মি.কে।
নির্ভান হাম দিতে দিতে চলে গেলো কিচেনের দিকে আর ও যেতেই সানভি ওর মা কে জানালো

– এখন তো তাকে এটা জানালে তা তার কনসার্ট এ ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেহেতু সে এই কথায় এক্সাইটেড আবার আমাকে নিয়ে চিন্তায় ও থাকতে পারেন তাই আন্টি তাকে এখনো কিছু জানাতে চাচ্ছি না।

– হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো। আচ্ছা তো ডিসিশন নেয়ার আগে একবার আমার সাথে দেখা করো ওকে নিয়ে। তুমি আমার মেয়ের মতো আর তোমার গার্জিয়ান তো আমরাই তাই না!!

– জি আন্টি থ্যাংক ইউ।

– নাও নাও এখন চা টা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
.
রাতে সানভি আর নির্ভান রওনা হলো গাড়িতে সানভি নির্ভানকে ওর নেক্সট এ কি কি কনসার্ট করবে কয়দিনের কাজ আছে সব বুঝিয়ে দিলো। এগিয়ে চলছে গাড়ি ওদের আগে একটা গাড়িতে ওদের পার্সোনাল ক্যামেরাম্যান আর কনসার্ট এর কয়েকজন স্টাফ আর পেছনের গাড়িতে ওর বডিগার্ড আর মেকাপ আরটিস্ট আছে। রাতের নিরবতায় ধীরে ধীরে ঢাকা ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছে সিলেটের দিকে নিস্তব্ধতায় ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে সানভি ফোন এ কি একটা পোস্ট দিতে গিয়ে বারবার ঘুমে লিখা গুলিয়ে ফেলেছিলো আর অবশেষে ঘুম কে আর হারাতে পারলো না আর। ঘুমিয়ে গিয়েছে কিছুক্ষন হয়েছে আর সেই তখন থেকেই এই সব কিছু নির্ভান খেয়াল করছিলো আর হাসছিলো।
.
ভোরে গাড়ি ব্রেক করায় সানভির ঘুম ভাঙতেই দেখে নির্ভান ঘুমিয়ে আছে, হটাৎ ব্রেক করায় ড্রাইভার কে খুব কম শব্দে জিজ্ঞেস করলো

– কি হয়েছে? হটাৎ ব্রেক করলেন কেনো?

– স্যার বলেছিলো এইখানে আসলে গাড়ি থামাতে।

– ওহ কিন্তু উনি তো ঘুমাচ্ছেন। আচ্ছা ডেকে দেই।
কয়েকবার নির্ভান কে ডাকতেই ও উঠলো

– এসে গিয়েছি? ও এই খানে ।

– হ্যাঁ আপনি নাকি বলেছিলেন।

– হ্যাঁ আমার কিছু ছবি তুলবো এখানে আর আমার এই প্লেস টা অনেক ভালো লাগে অনেক আগে এসেছিলাম। আসো বের হও। বলে নির্ভান বের হয়ে এলো আসেপাশে কেউ নেই তাই ক্যাপ ছাড়াই বের হয়ে এলো। ওর পিছে সানভি ও বের হতেই মুগ্ধ হয়ে গেলো। ও এরকম কিছু প্রথম বারই দেখছে

– মি.কে এই জায়গা টা তো খুব সুন্দর।

– হ্যাঁ। এখান থেকে আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলে কয়েকটা চা বাগান ও আছে এইসব জায়গা ভোরে কিছু টা বিপদজনক হলেও মনোরম হয়।
নির্ভানের ক্যামেরা ম্যান টা এসে কয়েকটা পিক তুলছিলো তখনই সানভি আসেপাসের পরিবেশ টা উপভোগ করছিলো। কিছুক্ষন পর নির্ভান পেছনে থেকে এসে ওর গায়ে একটা গাছের পাতা ছুড়ে দিয়ে বললো

– মিস সান গাছে সাপ…
এই কথায় সানভি শরীর ঝাড়া দিয়ে চিৎকার করতে করতে ভয় পেয়ে তারাতাড়ি সরে আসতেই নির্ভান হেসে বলতে লাগলো,,, ভীতু মিস সান। বলতে না বলতেই ধপ করে কি যেন একটা পরে যাওয়ার শব্দে তাকাতেই দেখে সানভি পরে আছে,,,,, মিস সান। বলেই এগিয়ে গিয়ে দেখে ওর জ্ঞান নেই । তারাতারি বিজি ১ কে পানি আনতে বলে। সানভির মুখে পানির ছিটা দিতেই সানভি ধীরে ধীরে চোখ মেললো

– মিস সান… কি হয়েছিল তোমার??
কিন্তু সানভি কিছু বলতে পারছিলো না আর আবার চোখ বুজে ফেললো, দেখে ওকে তারাতারি গাড়িতে উঠিয়ে ড্রাইভার কে বললো হোটেলে যেতে। পথেও সানভি তেমন কিছু বলতে পারলো না। আর নির্ভান যেন আরো চিন্তায় পরে গেলো আসলে কি হলো আর কি কারনেই বা সানভি জ্ঞান হাড়ালো!

হোটেলের সামনে এসে নির্ভান নিজের ক্যাপ আর মাস্ক টা পরেই বের হয়ে সানভি কে বের করলো সানভি আবার জ্ঞান এখনো ফিরেনি । ক্যামেরা ম্যান এসে বললো এখন ওর কয়েকটা ছবি তুলতে হবে সানভি কে বডিগার্ড দের দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিতে কিন্তু নির্ভান কিছুতেই কান দিলোনা সানভি কে কোলে নিয়ে ওর জন্য বুক করা রুম টায় চলে গেলো আর ডাক্তার কেও আসতে বলা হলো। ভোরের সময় হওয়ায় প্রথমে ডাক্তার কে পাওয়া যাচ্ছিলো না কিন্তু নির্ভানের জোর দেয়ায় হোটেলেই থাকা একজন ডাক্তার কে জানানো হলো।
.
কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে চেক করে বললো সবই তো ঠিক আছে জাস্ট প্রেসার টা হটাৎ খুব বেড়ে গেছে আর হার্টবিট ও নরমাল নয় বলেই কিছু হয়েছিলো নাকি তা জানতে চাইলেন নির্ভান তখন সাপ নিয়ে প্র‍্যাংক করার কথা জানালে তিনি বললেন হয়তো এই জন্যই এরকম হয়েছে আমি একটা সিডেটিভ দিয়ে দিচ্ছি বিশ্রাম করলে কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরে আসবে।
যেতে সময় ডক্টর নির্ভান কে বললো তার ছেলে ওর অনেক বড় ফ্যান আর তা শুনে ও উনার আর তার ফ্যামিলির জন্য কনসার্ট এর চারটি ইনভাইটেশন পাস দিয়ে ধন্যবাদ দিলো এমন সকালে ইমারজেন্সি আসার জন্য।
ডাক্তার যাওয়ার এক ঘন্টা পরও যখন সানভি উঠেনি তখন নিজেকেই দোষ দেয়া শুরু করলো নির্ভান কোথায় ও মজা করতে গিয়েছিলো আর কি হয়ে গেলো এখন ওর নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে কি দরকার ছিলো এমন টা করার বেচারি কতোটা ভয় ই না পেয়েছে। এই বলেই রুমে পায়চারি করছিলো নির্ভান তখনই শুনতে পেলো সানভি ঘুমেই কি যেন বলছে সামনে গিয়ে দেখে ও পুরো ঘেমে গেছে

– না নাহ.. মাম মাম মামি আমি ভয় পাচ্ছি এটা এটা সরাও বাবা তুম কই আমি ভয় পাচ্ছি….
খুব অগোছালো ভাবেই বললো কিন্তু ও সব বুঝতে পেরেছে।

– মিস সান সান…. এই সানভি… বলতেই সানভি কিছুটা চোখ মেললো।,,,,, মিস সান তুমি ঠিক আছো??
সানভি মাথা দুলিয়ে উঠে বসতে নিলেই নির্ভান উঠতে না করলো।

– I am sorry Mr.K আমার জন্য আপনাকে সমস্যায় পরতে হয়েছে।

– না আসলে আমি সরি আমার জন্য তুমি ভয় পেয়েছো আর এসব। আমার এমনটা করাই ঠিক হয়নি কিন্তু আমিও তো বুঝতে পারিনি যে তুমি এতো টা ভয় পেয়ে যাবে।
সানভি আবার তখনের কথা ভেবে চুপসে গেলো।

– কিন্তু মিস সান তুমি এতো ভয় কেনো পেলে ওইটা তো জাস্ট একটা গাছের পাতা ছুড়ে দিয়েছিলাম।
কিছু একটা ভেবে সানভি খুব চিন্তিত হয়ে গেলো কিছুই বললো না।,,, মিস সান।

– হ্যাঁ মি.কে।

– তুমি উত্তর দিলে না যে?

– সাপ ভয় পাই আর প্রকৃতি তে ও হারিয়ে গিয়েছিলাম তো তাই হটাৎ ওইরকম সাপের কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

– সত্যি বলছো?

– হ্যাঁ । বলেই সানভি বেড থেকে উঠে বললো,,, আমি আমার রুমে টা তে যাই ওইখানে গিয়েই রেস্ট নিবো তারপর আমাদের এখানের একটা স্কুলে ও তো যেতে হবে।

– না না তোমার যেতে হবে না তোমাকে অনেক অসুস্থ মনে হচ্ছে।।

– না মি.কে আমি ঠিক আছি। চলে যাচ্ছিলো তখন আবার দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,,, আমার হ্যান্ড ব্যাগ আর রুম কি টা?

– রুম কি এইযে,,, বলেই ড্রয়ার থেকে বের করে দিলো,,,আর হ্যান্ড ব্যাগ তোমার রুমে। তুমি সিওর যেতে পারবে?

– হ্যাঁ। বলেই সানভি বের হয়ে এলো ওর রুম টা একদম নির্ভানের বরবার। আর বাকিদের টা একটু দূরে।
.
রুমে ঢুকেই সানভি সাওয়ার নিয়ে এসে বসলো

– এতো বছরের পুরোনো ভয় টা আজও দমিয়ে রাখতে পারলাম না। এই সাপের ভয় আমার পিছু কি ছাড়বে না!! বাবা ওইদিন তুমি না আসলে হয়তো আমার আর এই পৃথিবী তে থাকতাম না। বলতে বলতেই কান্না করে দিলো।
কল এর রিং বেজে উঠলো ও কোনো মতে চোখ মুছে গিয়ে কল রিসিভ করলো কল টা নির্ভান দিয়েছে ওর জন্য নাস্তা ওর্ডার করে ওর রুমে পাঠাতে বলেছে সানভি তাই করলো। তারপর গিয়ে ওর লাগেজ আনপেক করলো রুম টা ঘুরে দেখলো মন টা এখনো খারাপ দেখতে সময় ও খেয়াল করলো ওর রুম টা ও ঠিক নির্ভানের রুম টার মতোই। তাহলে কি মি.কে কে ভিআইপি রুম দেয়া হয়নি?? সিওর হওয়ার জন্য ও এই কনসার্ট এর ম্যানেজার কে কল করতেই যাচ্ছিলো কি আবার নির্ভানের কল এলো জলদি ওর রুমে যেতে বলেছে।
সানভি তারাতারি নির্ভানের রুমে গিয়ে দেখে ও ব্রেকফাস্ট নিয়ে টেবিলে বসে আছে

– মিস সান এসেছো এখন কেমন বোধ করছো??

– হ্যাঁ এখন ঠিক আছি। ফিট এন্ড ফাইন।

– ওকে তো আসো একসাথে ব্রেকফাস্ট করি।

– ট মি.কে এটা তো আপনি আপনার জন্য অর্ডার করতে বলেছিলেন।

– আমি দুইজনের জন্যই বলেছি কেনো এটাতে হবে না তোমার আরো কিছু অর্ডার কর‍তে বলবো?

– নাহ তার দরকার নেই।

– ঠিকাছে তো বসো।
সানভি ব্রেকফাস্ট টেবিলে গিয়ে বসলো দেখলো নির্ভান আগে দেখেই দুই প্লেট এর খাবার ভাগ করে দিয়ে রেখেছে।
ওরা দুইজন খাচ্ছিলো তখনই হটাৎ আবার সেই সাপ এর বিষয় টা নিয়ে কথা বললো

– সান তুমি তখন সাপের ব্যাপারটা নিয়ে এতো ভয় পেলে যে…

– মি. কে ওইটা আসলেই হটাৎ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বিলিভ মি।

– না আমি বিলিভ করতে পারছি না। আমি কিছুক্ষন আগে আমার পরিচিত এক ডাক্তার কে কল করেছিলাম। তিনি বললেন যে নিশ্চয়ই অন্য কোনো প্রবলেম আছে। সো তারাতারি বলো কি হয়েছিলো।

– না মি.কে কিছু হয়নি ।

– সান প্লিজ বলো। দেখো তুমি এমন চান্স পাবে না যে আমার মতো একজন রকস্টার এসে প্রতিদিন তোমাকে জিজ্ঞেস করবে না।
সানভি কথা টায় হেসে দিলো,,,দেখসো এখন বলো।

– মি.কে ব্যাপারটা তেমন বড় না তবুও কেন যেনো আমার কাছে খুব বড় মনে হয়। এটা অনেক আগের কথা আমি তখন খুব ছোট ছিলাম প্রায় ছয় বছরের ছিলাম তখন নানা নানি আমাকে বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন তাদের নাতিন তারাই বড় করতে চেয়েছিলেন । বাবার অনিচ্ছা সত্বেও তারা নিয়ে গিয়েছিলেন প্রায় অর্ধেক বছর তাদের সাথে ছিলাম। একদিন নানা নানি আমাকে মামির কাছে রেখে বাহিরে গিয়েছিলেন। আর আমি খেলছিলাম মামি ঘুমাচ্ছিলেন একসময় কোথায় থেকে যেন একটা সাপ এসে আমার সামনে ফস ফস করছিলো। আমি অনেক ডেকেছি মামি কে ভয়ে দৌড়াতে পারছিলাম না ভেবেছিলাম আমি ঘুরে চলে গেলেই ওইটা উরে এসে আমাক ধরে ফেলবে। সাপ টা হটাৎ আমার দিকে এগিয়ে আসায় খুব চিৎকার করছিলাম মামি কে ডেকেছিলাম কিন্তু মামি আসেনি কিন্তু শেষ এ নানা এসে সাপ টা দূরে ফেলে দিলেও আমার ভয় টা দূর করতে পারেননি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেদিনও এমন হয়েছিলো এর পরে আমার বাবা আমাকে এসে নিয়ে গিয়েছিলেন। দিন যেতে লাগে আমি ভালো ও হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এই ভয় টা মাঝে মাঝেই ফিরে আসতো আজ আবার অনেক বছর পর ফিরে এসেছিলো।
এসব নির্ভান পুরো গল্প শোনার মতোই মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।
– তাহলে তো এর জন্য ডাক্তার দেখানো উচিৎ। ঢাকায় ফিরে গিয়েই আগে এটার চিকিৎসা করাতে হবে।।

– এটার জন্য বাবা ডাক্তার দেখিয়েছিলেন এটা নাকি সময়ের সাথেই ঠিক হয়ে যাবে। তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,, ওহ নো মি.কে আমাদের তারাতারি করতে হবে তা না হলে আমরা স্কুলে যাওয়ার জন্য লেইট হয়ে যাবে।।

– মিস সান তুমি তো এভাবে বলছো যেন আমরাই স্কুলে পড়ি।।
.
স্কুলে গিয়ে নির্ভান একটা লেকচার দেয়ার পর বাচ্চাদের সাথে সময় কাটায় হান শোনায় ওদের সাথে অনেক আনন্দের মুহূর্ত কাটায় বাচ্চা রা খুব খুশি হয়েছিল। ফিরে আসার সময় ওদের মোটেও আসতে ইচ্ছে করছিলো না তবুও সময় হয়ে আসায় ফিরে এলো এসে দেখে হোটেলের সামনে অনেক ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু ওকে একনজর দেখার জন্য একটু কথা বলার জন্য।।
নির্ভান ও ওইভাবেই প্রস্তুত হয়ে বের হলো যাতে ওদের মন রাখতে পারে দুই পাশে সিকিউরিটি আর মাঝে ও সানভি ও সিকিউরিটির মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু নির্ভান ওকে টেনে ভেতরে ওর জন্য বানানো সার্কেল টার মধ্যে নিয়ে নিলো

– এখানে দাড়াও আমার পাশে এটাই তোমার প্লেস। তুমি আমার সিকিউরিটি মেম্বার না তুমি আমার…. আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি তুমি আমার পাশেই থাকবে।
.
.
.
চলবে।