অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-২৩+২৪

0
836

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ২৩
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.

– কি করছেন মি.কে! কি হয়েছে আপনার? ছাড়ুন আমাকে কেউ দেখে ফেলবে। আপনি কি ড্রিংক করেছেন আবার??

– কেউ দেখবে না। বলেই ওকে আরো শক্ত করে ধরলো সানভি অনেক বার ছাড়তে বললেও না ছাড়লে। সানভি এবার অনেক শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নির্ভান কে ধাক্কা দিলো যা সামলাতে না পেরে নির্ভান পরে গেলো।
.
সানভি… বলে উঠে বসতেই নিজেকে নিজের বেড এ আবিষ্কার করলো।

– আহহ! যাক এটা স্বপ্ন ছিলো। নির্ভান আবার শুয়ে পরছিলো,,,, ওয়েট এটা যদি সত্যি হয়ে যায়??,,, বলেই আবার উঠে বসলো।,,, নাহ এমন তো করবেনা। বলে এবার শুয়ে পরলো কিন্তু ঘুম এলো না বারবার এদিক ওদিক করছে।
.
সকালে উঠেই ইলা কে কল দিয়ে উঠালো সাড়ে আট টায় বের হবে ওরা সোনারগাঁও যাবে বলে ঠিক করেছিলো ওইখানের পানাম নগরে ঘুড়ে বেরাবে দুই ললনা শাড়ি পরে।
ইলা ও সানভির সাথে এসে একসাথে রেডি হলো দুইজন একে অপর কে সাজতে সাহায্য করলো সানভির শাড়িটা নীল রঙের আর ইলার শাড়ি টা লাল রঙের দুইজনেরই ম্যাচিং চুড়ি গহনা সব আছে দুইজনই ম্যাচ করে পরেছে। বের হওয়ার আগে ইলা সানভির থেকে ওর ফোন নিলো সেলফি তোলার জন্য কিন্তু তার সাথেই ও ওদের ছবি টা সানভির ফেসবুক আইডি তে পোস্ট করে দিলো ওকে না বলেই আর ক্যাপশন এ ও লিখে দিলো সোনারগাঁও যাচ্ছে সেই কথা।
বন্ধের দিন না হওয়ায় ওইখানে গিয়ে ভালো ভাবেই ঘুরতে পেরেছে, সানভির এই পরিবেশ এ এসে ভালোই লাগছে।। ঢাকার কোলাহল থেকে আলাদা এই জায়গা টা ঘুরে ফিরে এখন একটা বেঞ্চে বসেছে দুপুর হয়ে গেছে তাই একটা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলো খাওয়ার জন্য তখনই মাস্ক পরা একটা ছেলে কে দেখতে পেলো ইলা।

– সানভি দেখ লোক টা কিভাবে তাকিয়ে আছে!

– কোথায়? বলে লোকটার দিকে তাকাতেই সানভি চমকে গেলো,,,,,মি.কে???

– কি কে?? নির্ভান? কি বলছিস?

– হ্যাঁ সে ই তো।

– আরে ধুর….
বলতে বলতেই ওই মাস্ক পরা ছেলেটা এগিয়ে আসলো ইলা ভালো করেই জানে এটা নির্ভান আর ও যে আসবে এটাও লাগছিলোই। ও তো পোস্ট টা এই জন্যই দিয়েছিলো যাতে ও দেখতে পারে। ধরতে গেলে এটা ওর ফাঁদ ছিলো যাতে নির্ভান ধরা দিয়েছে আর এখন ইলা নিশ্চিত যে নির্ভান সানভি কে পছন্দ করে।
.
এদিকে নির্ভান এসেছে কিন্তু ভেবেছিলো খুজে পেলে ঘুরতে ঘুরতেই সানভি কে দেখে গিয়ে যাওয়ার ভান করবে কিন্তু সানভি কে শাড়ি তে দেখে তো চোখ ই সরাতে পারছিলো না যার কারণ এ সানভি আর ইলা ও ওকে খেয়াল করে ফেললো যে ও অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে ছিলো।।
– মি.কে? আপনি এখানে?

– হ্যাঁ ভাবলাম কিছু কাজ নেই তাই একটু আর কি ঘু..ঘুরতে আসি। আর এখানে এসে দেখি তুমিও.. তুমি এখানে কি করছো??

– আমিও ইলার সাথে ঘুরতেই এসেছিলাম।

– হাই ইলা।

– হেলো রকস্টার।

– শু.. বলোনা কেউ জানলে আর ঘুরতে পারবো না।

– বাট আপনি কোনো বডিগার্ড বা কাউকে সাথে কেনো আনেননি? এখন যদি কেউ বুঝে ফেলে তাহলে তো…

– ইটস মিস সান বুঝলে বুঝবে এখন ঘুরতে চাই।

– ওকে মি.কে আমরা তো রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি আপনি ঘুরে আসুন। কোনো প্রবলেম হলে যানাবেন।
বলেই ইলা কে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু তখনই ইলা আর নির্ভান একসাথে বলে উঠলো,,, সানভি।

– সান!
দুইজনের প্রায় চিৎকার করা ডাকে চমকে গেলো সানভি।

– কি হয়েছে। ওর বলার সাথে সাথেই নির্ভান বললো

– এসেছি যখন একসাথেই থাকি।

– হ্যাঁ হ্যাঁ সানু আমিও এটাই বলতে চেয়েছিলাম।

– তুই তো বলবি ই। বাট মি.কে আপনি তো এখানে ঘুরতে এসেছেন একা টাইম স্পেন্ড করতে এসেছেন আপনার এনজয় করা উচিৎ। আমরা থাকলে তো ডিস্টার্ব হবেন আপনি।।

– না না কোনো সমস্যা হবে না আমি এভাবেও খাওয়ার জন্যই যাচ্ছিলাম চলো একসাথে লাঞ্চ করি ইলা আমার এতো বড় ফ্যান! আজকের আমার ট্রিট এই রমনীদের জন্য।

– আহহহ সত্যি রকস্টার??
ইলার কথায় সানভি ওকে থামাতে চাইলেও তার আগেই নির্ভান বললো

– হ্যাঁ অবশ্যই।

– মি. কে…

– আরে চলো তোমরা সান আর কিছু বলতে হবে না।
ভেতরে গিয়েও অনেক বার না করার পর সানভি রাজি হলো কোনো উপায় না পেয়ে মোমেন্ট টা এনজয় করলো। একটু সাইডের একটা টেবিল নিয়েছে ওরা যাতে নির্ভান কে কেউ দেখতে না পারে। আজ কাজের বাহিরে নির্ভান এর সাথে লাঞ্চ করে ভালোই লাগছে আর সাথে ইলা থাকায় পরিবেশ টা ও গম্ভীর না আর নির্ভান ও খুব ভালো তাল মেলাচ্ছে আজ ওকে ফ্রেন্ড দের মতো লাগছে।
.
ইলা ওদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি সানভি আর নির্ভান কে খেয়াল করছে বেশি করে আর কেন যেনো আরো বেশি পজিটিভ হচ্ছে নির্ভান যে সানভি কে পছন্দ করে এই বিষয় টা অবশ্য সানভি ও উইক এটাও বুঝতে পারছে। সানভি সব কিছু জানে নির্ভানের ওর প্রতি খেয়াল রাখা সব কিছুই এক সময় প্রেমে তো পরিনত হবেই।
খাবার অর্ডার করার পর নির্ভান ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে চলে গেলে সানভি ওর ফোন চেক করতেই দেখে ওর নোটিফিকেশন এসেছে ফেসবুক থেকে অপেন করতেই পোস্ট দেখে ইলাকে জিজ্ঞেস করে

– ইলা তুই আমার আইডি থেকে পোস্ট করেছিলি?

– হ্যাঁ। কেনো?

– তুই ইচ্ছা করেই দিয়েছিলি?

– হ্যাঁ তো কি হয়েছে।

– কেনো দিয়েছিলি??

– কারণ তোর সামনেই আছে।

– মানে?

– ওইযে মি.কে। উনি তোর পোস্ট দেখেই এখানে এসেছেন আমি ড্যাম সিওর।

– কি ড্যাম সিওর ইলা? পেছনে থেকে নির্ভান এটা শুনে জিজ্ঞেস করতে করতে বসলো।

– আমি সানভি কে বলছিলাম যে….

– যে এখানের খাবার টা অনেক ভালো ও ড্যাম সিওর।

– ওহ হুম ভালোই মনে হচ্ছে। এইতো খাবার এসে গেছে।
খাবার হাসার পরই নির্ভান নিজেই আগে সানভি কে সার্ভ করে দিলো তারপর ইলা কেও দিলো। সানভি অনেক বার না করলো তবুও নির্ভান নিজেই সার্ভ করলো দুইজন কে।। খাবার শেষে কিছুক্ষন বসে বের হয়ে এলো সানভি এবার কোনো মতে ইলা কে নিয়ে আলাদা চলে এলো কিন্তু নির্ভান ও ছাড়বার পাত্র নয় আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছে।
কিছুক্ষন এগিয়ে গিয়ে সানভি ইলা কে থামালো

– ইলা এখন বল তুই কি বলছিলি তখন।

– সিম্পল আমি তোর পোস্ট দেখেই যে নির্ভান এখানে এসেছে তাই বলছিলাম আর আমি তো এ ও বলবো যে নির্ভান তোর জন্যই এসেছে তোকে দেখতেই এসেছে তোকে ভালোবাসে তাই এসেছে।

– ইলা আবার একই কথা। উনি আমকে ভালোবাসেন না উনি কোথায় আর আমি কোথায়! তিন বছর আগে আমাকে দেখতেও পারতেন না আর এখন ভালোবাসা অসম্ভব।

– এটাই তো তুই ই দেখ আগে দেখতেও পারতো না আর সেই এখন তোকে ছাড়া চলতেও পারে না। আর তুই বিশ্বাস করিস আর না করিস এটাই সত্যি যে তোর মি.কে তোকে ভালোবাসে আর তুই ও…..

– অনেক হয়েছে। উফফফ!! বলেই ও অন্য দিকে ঘুরে আবার ঘুরায় মন দেয়ার ভান করছে সানভি কিন্তু মনে শুধু ইলার কথা গুলোই ঘুরছে। ইলা ও আর কিছু বললো ওই কথা বাদ দিয়ে ঘুরে দেখতে লাগলো সানভিরে সাথেই কিন্তু ওর কল আসায় ও কথা বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেলো। সানভি ওইখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো কি হটাৎ কয়েকটা ছেলের শিষ বাজানোর শব্দ পেলো তাই ভাবলো একটু হাটতে হাটতে এখান থেকে এগিয়ে যাবে কিন্তু ছেলে গুলো পিছু নিলো সমস্যা হলো এখানে বেশি কেউ নেই তাই ও একটু ঘাবড়ে গেলো।
হটাৎ একটা বখাটে মতো ছেলে সামনে এসে বললো

– একা একা কোথায় যাচ্ছো? আমাদের ও নিয়ে যাও।
সানভি কিছু না বলে সাইড কেটে যাচ্ছিলো তখনই আরেকজন বলে উঠলো

– আরে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই চলো একসাথে ঘুরে আসি।
পেছনে থেকে নির্ভান ওর মাস্ক পরা অবস্থায়ই বলে উঠলো

– হ্যাঁ চলো সবাই একসাথে যাই।

– এই হিরো আমরা কথা বলছি তুই এর মাঝে পরিস না।

– কেনো পরবো না?

– ওহ তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি? কিরে এই জায়গা কি প্রেম করার জন্য সবাই এখানে ঘুরতে আসে আর তোরা দূর্নাম করস।

– তো আপনারা তো এর চেয়ে বেশি পরিবেশ নষ্ট করতেসেন।
সানভি এই সুযোগে ওদের মাঝখান থেকে সরে আসছিলো কিন্তু ওদের মধ্যে একজন ধরে ফেলে,,,,ভাই পরি তো উইরা যাইতেসে।
নির্ভান আর নিজেকে থামালো না গিয়ে থাপ্পর দিয়ে বসলো এই ছেলে টা কে যে সানভি কে ধরে আছে আর তখনই বাকি দুইজন নির্ভান কে মারার জন্য এগিয়ে এসে ওরাও ওকে মারে আর মারামারি লেগে যায়। হৈচৈ শুনে কয়েকজন এসে ওদের থামালো আর ওই ছেলে দের ধমক দিলো তারা হয়তো এখানেরই এইজন্য ছেলে গুলো ও আর কিছু বললো না চলে গেলো। বাকি লোকেরা ওদের বললো ওরা ঠিক আছে কিনা সানভি উনাদের থ্যাংক ইউ বলে নির্ভান এর হাত ধরে ওকে নিয়ে চলে এলো কারণ নির্ভান একটু ব্যাথা পেয়েছে। ইলা আবার সানভি আর নির্ভান কে চলে যেতে দেখে এগিয়ে গেলো না।

– মি. কে আপনার গাড়ি কোথায়?

– কি!… আ হ্যাঁ ও ওইদিকে রেস্টুরেন্টের পার্কিং এ।

– ঠিকাছে চলুন। আপনার হয়তো ফেইস এ একটু কাট লেগেছে এখনই মেডিসিন দিতে হবে। কি দরকার ছিলো মারতে যাওয়ার এখন ফেইস এ যদি দাগ পরে যায়।

– এই দাগ তোমার জীবনের কাছে কিছুই না। তোমার কিছু হয়ে গেলে তখন আমার তো….
সানভি আর শুনতে চাইলো না ওর মনে ইলার বলা কথা গুলো মনে পরে গেলো।

– মি.কে আগে মেডিসিন টা লাগিয়ে নেই তারপর। বলেই গাড়ি তে গিয়ে উঠলো নির্ভান কোনো ড্রাইভার ও আনেনি। পেছনের সীটে গিয়ে বসলো দুইজন সানভি ইমারজেন্সি ফার্স্ট এইড কিট এর থেকে একটু স্যাভলন নিয়ে আগে মুছে দিলো নির্ভানের কাটা জায়গা টা তে জ্বালা হচ্ছিলো দেখে সানভি একটু ফু দিতে লাগলো। নির্ভানের মনে হলো কোনো গানের ভিডিও শ্যুট করছে ও। ও তাকিয়েই আছে সানভির দিকে যা সানভিকে অস্বস্তি তে ফেলছে। ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ টা লাগিয়ে ও ইলা কে কল দেয়ার জন্য গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু ইলা জানায় ও নাকি ইফাজের সাথে অলরেডি রওনা দিয়ে দিয়েছে।

– মানে কি ইলা তুই চলে গেলি আমি কিভাবে যাবো??

……

– বাইকে! ওর বাইকে করে গিয়েছিস। আচ্ছা ঠিকাছে আমি ম্যানেজ করে নিবো হুম বায়। ( নিশ্চয়ই ইচ্ছা করে করছে এটা,, মনে মনে বললো)

– কি হয়েছে সান?

– ওই যে ইলা নাকি রওনা দিয়ে দিয়েছে ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে।

– কি? ওয়াও… নাহ মানে ওয়াট?

– হুম।

– সমস্যা নেই আমি তো আছিই, এখন যাবে নাকি আরো ঘুরবে??

– নাহ আর ঘুরবো না। কিন্তু আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।

– না আমার ঘুরার কারণ ও শেষ।

– কি?

– চলো চলো যাওয়া যাক।

– ঠিকাছে।
.
পুরো পথে নির্ভান গান গেয়েছে আর ড্রাইভ করেছে আর অনেক কথা বলেছে ও ভেবেছে সানভি কে বাসায় পৌছে দেয়ার সময় ওকে জানাবে ওর মনের কথা। কিন্তু সানভি তা আগেই জেনে গিয়েছে আর খুব চিন্তায় ও আছে। দুইজনের মধ্যে অনেক পার্থক্য নির্ভানের মধ্যে যদি এই খেয়াল এসেও থাকে তা কখনোই সম্ভব না। সানভি মনে মনে বলছিলো এটা যেন সত্যি না হয় ওর ভাবনা যেন ভুল হয়। কিন্তু যখন সানভির বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই নির্ভান বললো

– সান তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
সানভি জি স্যার বলার বদলে বললো,,, আমিও কিছু বলতে চাই মি.কে। নির্ভান আর কিছু বলার আগেই সানভি আবার বললো,,,,, আমি… আমি আর ওই জব কন্টিনিউ করতে চাই না। আমি জব ছেড়ে দিতে চাই।

– কি? কেনো???
.
.
.
চলবে।

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ২৪
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
সান তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
সানভি জি স্যার বলার বদলে বললো,,, আমিও কিছু বলতে চাই মি.কে। নির্ভান আর কিছু বলার আগেই সানভি আবার বললো,,,,, আমি… আমি আর ওই জব কন্টিনিউ করতে চাই না। আমি জব ছেড়ে দিতে চাই।

– কি? কেনো???
.

– মি. কে আসলে অনেকদিন ধরেই এই কথাটা বলবো ভাবছিলাম বিভিন্ন কারনে বলা হয়ে উঠেনি। আসলে আমি…

– এক মিনিট এক মিনিট তুমি কেনো এই জব ছেড়ে দিতে চাইছো??? হটাৎ কি হয়েছে?

– আমি আসলে আমি কিভাবে বলবো আমি বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে থাকতে চাই আপনাকে এর আগেও আমি বলেছি যে আমি ভবিষ্যতে নিজেকে এই কাজে দেখতে চাই না। এটার কারণে লাইফ থেকে আমি অনেক কিছু মিস করেছি আর চাই না তাই আমার পক্ষে এই জব করে যাওয়া সম্ভব না।

সানভির মুখে বিয়ে সংসার এই কথা শুনে নির্ভান তো যেন আকাশ থেকে পরলো কি বলবে বুঝতেই পারছিলো না

– সা..সান কি বলছো তুমি ভেবে বলছো তো? না মানে কি বললে? Are you kidding me??

– No Mr.K I am serious. আমি কালকেই আমি মাস শেষ হলে রিজাইন দিবো এর মাঝে আপনার জন্য ভালো সেক্রেটারি ও পেয়ে যাবো নিশ্চয়ই। ওকে মি.কে আসি তাহলে।। বলেই গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো নির্ভান পেছন থেকে ডাকলে সানভি পেছনে ফিরে মুচকি হেসে ওর বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। ভেতরে গিয়ে যদিও আর আগের ভাব টা ধরে রাখতে পারলো না তারাতারি ওর ফ্ল্যাট এ গিয়ে গেইট লক করে বসে পরলো কি করলো ও এটা! কিন্তু যদি মি.কে ওকে ভালোবাসে এই কথা টা বলে দিতো তখন ও ব্যাপারটা সামলাতে পারতো না। না করা টা সম্ভব না আর হ্যাঁ করা তাও অসম্ভব সেই পরিস্থিতি আসার আগেই নিজের বিয়ের মিথ্যে বাহানা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়াই ওর কাছে সহজ মনে হলেও নিচে নিজের গাড়ি তে বসে থাকা নির্ভানের কাছে এইটা তার চেয়েও বেশি কঠিন। কি শুনলো ও এটা এতো বছর যাকে প্রতিদিন নিজের পাশে দেখতে দেখতে যার প্রেমে পরেছে সে নাকি তার পাশে থাকা ছেড়ে দিবে! সে নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করবে!

– কিসের এতো তাড়া ছিলো সান আর কিছুটা দিন অপেক্ষা করলে তো আর…. আর আমিই বা কেন এতো দেরি করলাম বুঝতে?? এখন আমি এটা কিভাবে থামাবো সান কে কিভাবে থামাবো!! ম্যাক্স! ওর কাছে যেতে হবে বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে ম্যাক্স এর বাড়িতে রওনা হলো।
.
ইলার কথাই সত্যি। যা কোনোদিন আশা ই করেনি।

– কিন্তু এটা তো মি. কে এর নিজ আসক্তি ছাড়া কিছুই না। সে যেটাকে নিজের ভেবে নেন সেই জিনিস আর মানুষ কাউকেই তিনি দূরে যেতে দেন না এটা তার ভালোবাসা না। এর আগেও এমন অনেক হয়েছে যে তিনি কিছু নিয়ে খুব কেয়ার করলেও পতে তিনি নিজেই সেসব ফেলে দিয়েছেন। আমার ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে তিনি আমাকে ভালোবাসেন না এটা শুধুই কিছু সময়ের আসক্তি।
.
নির্ভান ও ম্যাক্স এর বাসায় গিয়ে ওকে জানালো সব শুনে ম্যাক্স ও অবাক হলো হটাৎ সানভি জব ছেড়ে দেয়ার কথা কেন যে বললো। তারপর নির্ভান একটু ব্যাস্ত হয়েই বললো আর সব বাদ এখন ওকে জব ছেড়ে দেয়া থেকে কিভাবে থামাবে তা ই জানতে চায় ও।। অনেকক্ষন ভাবার পর খুব স্ট্রং একটা পয়েন্ট ই পেলো আর কয়েকটা অপশন ও ঠিক করলো ওরা দুইজন যাতে নির্ভান ও খুশি হয়ে গেলো। তারাতারি বাসায় ফিরে গিয়ে একটা ফাইল থেকে কাগজ নিয়ে বসে পরলো।
.
সকালে সানভির যেতেই ইচ্ছে করছিলো না কালকেও তো সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো। নাস্তা না করেই বের হয়ে গেলো ও স্টুডিও তে গিয়ে দেখে নির্ভান ওর রুমে বসে গান এর টিউন প্র‍্যাকটিস করছিলো

– আরে সান তুমি এসেছো দেখো আমি নতুন একটা টিউন বানিয়েছি।

– মি.কে এই মাস শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি তাই ভাবছি আজকে রিজাইন পেপার টা দিয়ে দেই আর এর মাঝে নতুন কাউকে….

– ওয়েট মিস সান তুমি হয়তো ভুলে গেছো যা আমার তোমাকে মনে করিয়ে দেয়া উচিৎ তুমি বাবার সাথে একটা পেপার সাইন করেছিলে? ওইটা তে কি লিখা ছিলো মনে আছে? আচ্ছা আমিই বলে দেই ওই টাতে প্রথম পয়েন্ট এ লিখা ছিলো যদি আমি নির্ভান তোমাকে জব থেকে বের করে দিতে চাই তাহলে আমার তোমাকে তা তিন মাস আগে জানাতে হবে আর যদি তিন মাস আগেই বের করতে চাই তাহলে তিন মাসের বেতন দিতে হবে আমার তোমাকে। আর আরেকটা পয়েন্ট ছিলো তুমি যদি জব ছেড়ে দিতে চাও তাহলে তা আমাকে এক মাস আগে জানাতে হবে। তোমার কোনো ফাইন লিখা নেই কিন্তু তুমি রিজাইন দেয়ার এক মাস কাজ করবে দেন আমি এক মাস পর তোমার লেটার এ সাইন করবো তারপর তুমি যেতে পারবে। এখন তুমি যদি নেক্সট মান্থ পর্যন্ত জব না করো তাহলে তো তুমি বুঝতেই পারছো।

– মি.কে বাট আমি! প্লিজ আপনি এই পেপার এ সাইন করে দিন আমি আর এই জব করতে চাই না।

– আর একটা মাস ই তো এতো কি তাড়া তোমার বিয়ে করে সংসার করার? তোমার ছেলে খুজতে ও তো টাইম লাগবে। আর কে জানে এই মাসে তোমার মত বদলাতেও পারে।

– না মি.কে এই মত বদলাবে না।

– ঠিকাছে তো আর এক মাস জব কন্টিনিউ করো আর এতোদিনে আমিও নতুন সেক্রেটারি পেয়ে যাবো হয়তো তুমিও বিয়ে করার জন্য কাউকে পেয়ে যাবে।

– কিন্তু মি.কে…..

– তুমি কি সত্যিই বিয়ে করে সংসার করার জন্য এতো উৎসাহিত?
একটু চুপ থেকে সানভি বললো,,,, হ্যাঁ।

– তো একটা কাজ করি আমি এই পেপারে সাইন করে দেই কিন্তু তার বদলে তোমাকে অন্য একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।

– ছোট্ট কাজ কোনো সমস্যা নেই কিন্তু কাজ টা কি?

– আমি তোমার এই পেপার এ সাইন করে দিবো আর তুমি এই মাসেই জব ছেড়ে দিতে পারবে কিন্তু তার বদলে তোমার আমাকে বিয়ে করতে হবে।

– কি???

– চমকে গেলে? আমি তো মজা করছিলাম। বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
সানভি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো।,,,,, যাই হোক তোমাকে এই জব ছাড়তে হলে আরো এক মাস জব টা করতেই হবে।
সানভি কে রাজি হতেই হলো কিন্তু ও ঠিক করেছে মি.কে ওকে ভালোবাসুক আর না বাসুক ও তার থেকে দূরে চলে যেতেই হবে উনি ওর উপর একটু বেশিই নির্ভর হয়ে পরছে পরে এটা উনার জন্যই সমস্যার হবে সবসময় তো আর তার পাশে থাকা সম্ভব না।

– আচ্ছা সানভি শুনো একটা কথা বলার ছিলো?

– মি.কে আগে আমি এই ফাইল টা একটু দেখে নেই তারপর শুনবোনে।

– না না এইটা ওই সব এর থেকেই ইম্পর্ট্যান্ট আগে আমার কথা শুনো এদিকে আসো।

সানভি তো এই ভয় টাই পাচ্ছিলো কি না কি বলে এখন কে জানে!

– জি বলুন।

– আসলে আমার স্টুডিওর উপরে আরো একটা ফ্লোর বাড়াতে চাচ্ছিলাম তাই একজন ভালো আর্কিটেক্ট কে ডেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করিয়ে নাও। আর ডিজাইন টা এমন হবে যাতে উপরের ফ্লোরের সাথে নিচের ফ্লোর এ কানেক্টেড একটা সিড়ি হবে। আপাতত এইটুকুই তারপর আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বাকিটা ফাইনাল করবো। তুমি তারাতারি কাউকে খুজে দাও আর এই এক মাস শেষ হওয়ার আগে কাজ টা সেড়ে নাও।।

কথা টা শুনে সানভি হাফ ছেড়ে বাচলো,,,, এ…এ এটাই বলতে চেয়েছিলেন?

– হ্যাঁ কেনো তুমি অন্য কিছু ভেবেছিলে?

– নাহ। গাড়িতে ও এটাই বলতে চেয়েছিলেন?

– গাড়িতে? ওহ তখন হ্যাঁ তখন ও এটাই বলতে চেয়েছিলাম।।
আসলে ও তো এটা বলতে চায়নি কিন্তু নির্ভান এখন সেটা আর বুঝালো না।

– ওকে মি.কে আমি এই ফাইল এর কাজ টা শেষ করেই একটা বেস্ট আআর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বলছি।

– ওকে।
নির্ভান ওর রুমে আবার ওই নতুন টিউন টা বাজাচ্ছে সানভি ওর কাজ করছে আর শুনছে, ভালো লাগছে। মাথা থেকে একটা বোঝা যে নেমে গেছে তাই। মি.কে ওকে এটা বলতে চেয়েছিলো ভেবেই ভালো লাগছে।
.
আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা শেষে নির্ভান কে গিয়ে জানিয়ে আসলো,,, তার কিছুক্ষন পরই ইলার কল এলো ও কল রিসিভ করে বাহিরে চলে এলো

– হ্যাঁ ইলা বল।

– কি বলবো! মি.কে এর সাথে যে গেলে আর তো কল করলে না।

– তো আপনিও তো এই যে ইফাজের সাথে গেলেন আর কল করে জানলেন না আমি কিভাবে এসেছি!?

– না জানার কি আছে আমার রকস্টার আর তোমার মি.কে তো ছিলো তোমার সাথে তাই ভাবলাম ডিস্টার্ব না করি।

– তোকে কতোবার বলেছি এসব বলতে না। এরকম কিছুই না যা তুই ভাবছিস।

– আমি কি ভাবছি? বল বল।

– কিছু না ইম্পর্ট্যান্ট কিছু হলে বল।

– সবসময়ই এমন করিস তুই এড়িয়ে যাচ্ছিস এখন কিন্তু এটাই সত্যি।

– কি সত্যি? যাই হোক এখন শোনার টাইম নেই রাখি বায়।
ইলার সাথে কথা শেষ করে সানভি স্টুডিও তে গিয়ে নির্ভান এর ফেইস এর জন্য নতুন ব্যান্ডেজ নিয়ে গিয়ে লাগিয়ে দিলো। কাল ওর জন্যই তো এটা হলো আবার কালকের সব কথা মনে হলো। নির্ভান এখনো এভাবে তাকিয়ে আছে এই চাহনি টা ওকে এক অন্য রকম অস্বস্তি তেই ফেলছে ইদানিং।

– সানভি।

– মি.কে।

– অনেক ইচ্ছে করছিলো তোমাকে নাম ধরে ডাকতে। জব ছেড়ে দেয়ার পর দেখা হলে আমি তোমাকে এই নামেই ডাকবো।
সানভি একটু হেসে বেরিয়ে গেলো মেডিসিন বক্স হাতে থাকায় ফোন টা নির্ভানের ডেস্ক এই রেখে চলে আসলো।
.
এখানে আর কাজ নেই দেখে সানভি সিলেট থেকে আনা জিনিস গুলো নির্ভানের মা কে দিতে গেলো।। তিনি জিনিস গুলো নিয়ে রুমে চলে গেলেন আর আসতে সময় অন্য একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসলেন। এনে সানভি কে নিতে বললেন

– এটা কেনো আন্টি কাউকে দিয়ে আসতে হবে?

– হ্যাঁ ঠিকাছে আন্টি আমাকে এড্রেস টা দিয়ে দিন আমি দিয়ে আসছি।

– তোমার বাসায় দিয়ে আসতে হবে এটা।।

– মানে?

– এটা তোমার জন্য।

– কিন্তু আমাকে কেনো?

– আন্টি খুশি হয়ে দিচ্ছি রাখবেনা?
আন্টির কথায় প্যাকেট টা নিলো সানভি।
– এটা তে একটা শাড়ি আছে নির্ভানের বার্থডে আসছে এটা ওই দিন পরো।

– কিন্তু আন…..

– সানভি ম্যাডান আপনাকে স্যার ডাকছে এখনই যেতে বলেছে।

– ঠিকাছে তুম যাও আমি আসছি। বলেই আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে নির্ভানে রুমে গেলো

– মি.কে ডেকেছিলেনি?

– হ্যাঁ তোমার ক#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ২৪
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
সান তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
সানভি জি স্যার বলার বদলে বললো,,, আমিও কিছু বলতে চাই মি.কে। নির্ভান আর কিছু বলার আগেই সানভি আবার বললো,,,,, আমি… আমি আর ওই জব কন্টিনিউ করতে চাই না। আমি জব ছেড়ে দিতে চাই।

– কি? কেনো???
.

– মি. কে আসলে অনেকদিন ধরেই এই কথাটা বলবো ভাবছিলাম বিভিন্ন কারনে বলা হয়ে উঠেনি। আসলে আমি…

– এক মিনিট এক মিনিট তুমি কেনো এই জব ছেড়ে দিতে চাইছো??? হটাৎ কি হয়েছে?

– আমি আসলে আমি কিভাবে বলবো আমি বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে থাকতে চাই আপনাকে এর আগেও আমি বলেছি যে আমি ভবিষ্যতে নিজেকে এই কাজে দেখতে চাই না। এটার কারণে লাইফ থেকে আমি অনেক কিছু মিস করেছি আর চাই না তাই আমার পক্ষে এই জব করে যাওয়া সম্ভব না।

সানভির মুখে বিয়ে সংসার এই কথা শুনে নির্ভান তো যেন আকাশ থেকে পরলো কি বলবে বুঝতেই পারছিলো না

– সা..সান কি বলছো তুমি ভেবে বলছো তো? না মানে কি বললে? Are you kidding me??

– No Mr.K I am serious. আমি কালকেই আমি মাস শেষ হলে রিজাইন দিবো এর মাঝে আপনার জন্য ভালো সেক্রেটারি ও পেয়ে যাবো নিশ্চয়ই। ওকে মি.কে আসি তাহলে।। বলেই গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো নির্ভান পেছন থেকে ডাকলে সানভি পেছনে ফিরে মুচকি হেসে ওর বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। ভেতরে গিয়ে যদিও আর আগের ভাব টা ধরে রাখতে পারলো না তারাতারি ওর ফ্ল্যাট এ গিয়ে গেইট লক করে বসে পরলো কি করলো ও এটা! কিন্তু যদি মি.কে ওকে ভালোবাসে এই কথা টা বলে দিতো তখন ও ব্যাপারটা সামলাতে পারতো না। না করা টা সম্ভব না আর হ্যাঁ করা তাও অসম্ভব সেই পরিস্থিতি আসার আগেই নিজের বিয়ের মিথ্যে বাহানা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়াই ওর কাছে সহজ মনে হলেও নিচে নিজের গাড়ি তে বসে থাকা নির্ভানের কাছে এইটা তার চেয়েও বেশি কঠিন। কি শুনলো ও এটা এতো বছর যাকে প্রতিদিন নিজের পাশে দেখতে দেখতে যার প্রেমে পরেছে সে নাকি তার পাশে থাকা ছেড়ে দিবে! সে নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করবে!

– কিসের এতো তাড়া ছিলো সান আর কিছুটা দিন অপেক্ষা করলে তো আর…. আর আমিই বা কেন এতো দেরি করলাম বুঝতে?? এখন আমি এটা কিভাবে থামাবো সান কে কিভাবে থামাবো!! ম্যাক্স! ওর কাছে যেতে হবে বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে ম্যাক্স এর বাড়িতে রওনা হলো।
.
ইলার কথাই সত্যি। যা কোনোদিন আশা ই করেনি।

– কিন্তু এটা তো মি. কে এর নিজ আসক্তি ছাড়া কিছুই না। সে যেটাকে নিজের ভেবে নেন সেই জিনিস আর মানুষ কাউকেই তিনি দূরে যেতে দেন না এটা তার ভালোবাসা না। এর আগেও এমন অনেক হয়েছে যে তিনি কিছু নিয়ে খুব কেয়ার করলেও পতে তিনি নিজেই সেসব ফেলে দিয়েছেন। আমার ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে তিনি আমাকে ভালোবাসেন না এটা শুধুই কিছু সময়ের আসক্তি।
.
নির্ভান ও ম্যাক্স এর বাসায় গিয়ে ওকে জানালো সব শুনে ম্যাক্স ও অবাক হলো হটাৎ সানভি জব ছেড়ে দেয়ার কথা কেন যে বললো। তারপর নির্ভান একটু ব্যাস্ত হয়েই বললো আর সব বাদ এখন ওকে জব ছেড়ে দেয়া থেকে কিভাবে থামাবে তা ই জানতে চায় ও।। অনেকক্ষন ভাবার পর খুব স্ট্রং একটা পয়েন্ট ই পেলো আর কয়েকটা অপশন ও ঠিক করলো ওরা দুইজন যাতে নির্ভান ও খুশি হয়ে গেলো। তারাতারি বাসায় ফিরে গিয়ে একটা ফাইল থেকে কাগজ নিয়ে বসে পরলো।
.
সকালে সানভির যেতেই ইচ্ছে করছিলো না কালকেও তো সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো। নাস্তা না করেই বের হয়ে গেলো ও স্টুডিও তে গিয়ে দেখে নির্ভান ওর রুমে বসে গান এর টিউন প্র‍্যাকটিস করছিলো

– আরে সান তুমি এসেছো দেখো আমি নতুন একটা টিউন বানিয়েছি।

– মি.কে এই মাস শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি তাই ভাবছি আজকে রিজাইন পেপার টা দিয়ে দেই আর এর মাঝে নতুন কাউকে….

– ওয়েট মিস সান তুমি হয়তো ভুলে গেছো যা আমার তোমাকে মনে করিয়ে দেয়া উচিৎ তুমি বাবার সাথে একটা পেপার সাইন করেছিলে? ওইটা তে কি লিখা ছিলো মনে আছে? আচ্ছা আমিই বলে দেই ওই টাতে প্রথম পয়েন্ট এ লিখা ছিলো যদি আমি নির্ভান তোমাকে জব থেকে বের করে দিতে চাই তাহলে আমার তোমাকে তা তিন মাস আগে জানাতে হবে আর যদি তিন মাস আগেই বের করতে চাই তাহলে তিন মাসের বেতন দিতে হবে আমার তোমাকে। আর আরেকটা পয়েন্ট ছিলো তুমি যদি জব ছেড়ে দিতে চাও তাহলে তা আমাকে এক মাস আগে জানাতে হবে। তোমার কোনো ফাইন লিখা নেই কিন্তু তুমি রিজাইন দেয়ার এক মাস কাজ করবে দেন আমি এক মাস পর তোমার লেটার এ সাইন করবো তারপর তুমি যেতে পারবে। এখন তুমি যদি নেক্সট মান্থ পর্যন্ত জব না করো তাহলে তো তুমি বুঝতেই পারছো।

– মি.কে বাট আমি! প্লিজ আপনি এই পেপার এ সাইন করে দিন আমি আর এই জব করতে চাই না।

– আর একটা মাস ই তো এতো কি তাড়া তোমার বিয়ে করে সংসার করার? তোমার ছেলে খুজতে ও তো টাইম লাগবে। আর কে জানে এই মাসে তোমার মত বদলাতেও পারে।

– না মি.কে এই মত বদলাবে না।

– ঠিকাছে তো আর এক মাস জব কন্টিনিউ করো আর এতোদিনে আমিও নতুন সেক্রেটারি পেয়ে যাবো হয়তো তুমিও বিয়ে করার জন্য কাউকে পেয়ে যাবে।

– কিন্তু মি.কে…..

– তুমি কি সত্যিই বিয়ে করে সংসার করার জন্য এতো উৎসাহিত?
একটু চুপ থেকে সানভি বললো,,,, হ্যাঁ।

– তো একটা কাজ করি আমি এই পেপারে সাইন করে দেই কিন্তু তার বদলে তোমাকে অন্য একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।

– ছোট্ট কাজ কোনো সমস্যা নেই কিন্তু কাজ টা কি?

– আমি তোমার এই পেপার এ সাইন করে দিবো আর তুমি এই মাসেই জব ছেড়ে দিতে পারবে কিন্তু তার বদলে তোমার আমাকে বিয়ে করতে হবে।

– কি???

– চমকে গেলে? আমি তো মজা করছিলাম। বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
সানভি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো।,,,,, যাই হোক তোমাকে এই জব ছাড়তে হলে আরো এক মাস জব টা করতেই হবে।
সানভি কে রাজি হতেই হলো কিন্তু ও ঠিক করেছে মি.কে ওকে ভালোবাসুক আর না বাসুক ও তার থেকে দূরে চলে যেতেই হবে উনি ওর উপর একটু বেশিই নির্ভর হয়ে পরছে পরে এটা উনার জন্যই সমস্যার হবে সবসময় তো আর তার পাশে থাকা সম্ভব না।

– আচ্ছা সানভি শুনো একটা কথা বলার ছিলো?

– মি.কে আগে আমি এই ফাইল টা একটু দেখে নেই তারপর শুনবোনে।

– না না এইটা ওই সব এর থেকেই ইম্পর্ট্যান্ট আগে আমার কথা শুনো এদিকে আসো।

সানভি তো এই ভয় টাই পাচ্ছিলো কি না কি বলে এখন কে জানে!

– জি বলুন।

– আসলে আমার স্টুডিওর উপরে আরো একটা ফ্লোর বাড়াতে চাচ্ছিলাম তাই একজন ভালো আর্কিটেক্ট কে ডেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করিয়ে নাও। আর ডিজাইন টা এমন হবে যাতে উপরের ফ্লোরের সাথে নিচের ফ্লোর এ কানেক্টেড একটা সিড়ি হবে। আপাতত এইটুকুই তারপর আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বাকিটা ফাইনাল করবো। তুমি তারাতারি কাউকে খুজে দাও আর এই এক মাস শেষ হওয়ার আগে কাজ টা সেড়ে নাও।।

কথা টা শুনে সানভি হাফ ছেড়ে বাচলো,,,, এ…এ এটাই বলতে চেয়েছিলেন?

– হ্যাঁ কেনো তুমি অন্য কিছু ভেবেছিলে?

– নাহ। গাড়িতে ও এটাই বলতে চেয়েছিলেন?

– গাড়িতে? ওহ তখন হ্যাঁ তখন ও এটাই বলতে চেয়েছিলাম।।
আসলে ও তো এটা বলতে চায়নি কিন্তু নির্ভান এখন সেটা আর বুঝালো না।

– ওকে মি.কে আমি এই ফাইল এর কাজ টা শেষ করেই একটা বেস্ট আআর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বলছি।

– ওকে।
নির্ভান ওর রুমে আবার ওই নতুন টিউন টা বাজাচ্ছে সানভি ওর কাজ করছে আর শুনছে, ভালো লাগছে। মাথা থেকে একটা বোঝা যে নেমে গেছে তাই। মি.কে ওকে এটা বলতে চেয়েছিলো ভেবেই ভালো লাগছে।
.
আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা শেষে নির্ভান কে গিয়ে জানিয়ে আসলো,,, তার কিছুক্ষন পরই ইলার কল এলো ও কল রিসিভ করে বাহিরে চলে এলো

– হ্যাঁ ইলা বল।

– কি বলবো! মি.কে এর সাথে যে গেলে আর তো কল করলে না।

– তো আপনিও তো এই যে ইফাজের সাথে গেলেন আর কল করে জানলেন না আমি কিভাবে এসেছি!?

– না জানার কি আছে আমার রকস্টার আর তোমার মি.কে তো ছিলো তোমার সাথে তাই ভাবলাম ডিস্টার্ব না করি।

– তোকে কতোবার বলেছি এসব বলতে না। এরকম কিছুই না যা তুই ভাবছিস।

– আমি কি ভাবছি? বল বল।

– কিছু না ইম্পর্ট্যান্ট কিছু হলে বল।

– সবসময়ই এমন করিস তুই এড়িয়ে যাচ্ছিস এখন কিন্তু এটাই সত্যি।

– কি সত্যি? যাই হোক এখন শোনার টাইম নেই রাখি বায়।
ইলার সাথে কথা শেষ করে সানভি স্টুডিও তে গিয়ে নির্ভান এর ফেইস এর জন্য নতুন ব্যান্ডেজ নিয়ে গিয়ে লাগিয়ে দিলো। কাল ওর জন্যই তো এটা হলো আবার কালকের সব কথা মনে হলো। নির্ভান এখনো এভাবে তাকিয়ে আছে এই চাহনি টা ওকে এক অন্য রকম অস্বস্তি তেই ফেলছে ইদানিং।

– সানভি।

– মি.কে।

– অনেক ইচ্ছে করছিলো তোমাকে নাম ধরে ডাকতে। জব ছেড়ে দেয়ার পর দেখা হলে আমি তোমাকে এই নামেই ডাকবো।
সানভি একটু হেসে বেরিয়ে গেলো মেডিসিন বক্স হাতে থাকায় ফোন টা নির্ভানের ডেস্ক এই রেখে চলে আসলো।
.
এখানে আর কাজ নেই দেখে সানভি সিলেট থেকে আনা জিনিস গুলো নির্ভানের মা কে দিতে গেলো।। তিনি জিনিস গুলো নিয়ে রুমে চলে গেলেন আর আসতে সময় অন্য একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসলেন। এনে সানভি কে নিতে বললেন

– এটা কেনো আন্টি কাউকে দিয়ে আসতে হবে?

– হ্যাঁ ঠিকাছে আন্টি আমাকে এড্রেস টা দিয়ে দিন আমি দিয়ে আসছি।

– তোমার বাসায় দিয়ে আসতে হবে এটা।।

– মানে?

– এটা তোমার জন্য।

– কিন্তু আমাকে কেনো?

– আন্টি খুশি হয়ে দিচ্ছি রাখবেনা?
আন্টির কথায় প্যাকেট টা নিলো সানভি।
– এটা তে একটা শাড়ি আছে নির্ভানের বার্থডে আসছে এটা ওই দিন পরো।

– কিন্তু আন…..

– সানভি ম্যাডান আপনাকে স্যার ডাকছে এখনই যেতে বলেছে।

– ঠিকাছে তুম যাও আমি আসছি। বলেই আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে নির্ভানে রুমে গেলো

– মি.কে ডেকেছিলেনি?

– হ্যাঁ। তোমার কল এসেছিলো।
ফোন টা হাতে নিয়ে দেখতেই দেখে অর্নব দিয়েছিলো।
.
.
.
চলবে।