অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-৩৩+৩৪

0
730

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৩
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
কি হয়েছে সানভি পিনাট হয়েছে তো কি হয়েছে?
রাইসার কথায় ও পেছনে ফিরে বলতেই নিচ্ছিলো যে নির্ভান পিনাট এ এলার্জিক কিন্তু ততক্ষণে নির্ভান সানভির উপর ঢলে পরেছে।

– মি.কে..!!!
.
গলা ধরে সানভির উপর হেলে পরেছে নির্ভান আর ওকে ধরার চেষ্টায় ওকে নিয়ে বসে পরেছে সানভি। সাথে সাথেই স্টেজ এ থাকা সবাই এবং এর আশেপাশে থাকা সবাই ভীড় জমাতে নিলেই বডিগার্ড আর সিকিউরিটি টিম তাদের সরিয়ে দিলো। নির্ভানের পাশে এখন ওর মা বাবা সানভি আর রাইসা আর ওর বাবা মা ই আছেন নির্ভান এর মাথা সানভির কোলে নিয়ে বসে ছিলো তখন কিন্তু নির্ভান একটু তাকাতেই ওকে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো সানভি আর রাইসা আরেক পাশে এসে বললো। নির্ভানের মা বাবা এখনো বুঝতে পারেননি যে ও অজ্ঞান কেনো হয়েছে। সানভি তাদের জায়গা দিয়ে গাড়ি সামনে আনতে বলার জন্য কল করতে উঠছিলো নির্ভান হাত ধরে বললো

– সা…সান।

– জি জি মি.কে!

– যে এ..যেয়োনা।। গলায় হাত দিয়ে কষ্টেই বললো।
তাই সানভি আর উঠলো না নির্ভান আর সানভির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,আমি কল দিচ্ছি।

– হ্যাঁ।
রাইসা কল করার জন্য উঠে যেতেই ওর মা এসে বসলেন তিনি বারবার নির্ভান কে ডাকছেন কিন্তু নির্ভান সাড়া দিচ্ছে না। ওর চোখ প্রায় বুজে আসছিলো তাই সানভি ওর গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলো

– মি.কে আপনি চোখ বন্ধ করেন না প্লিজ। আপনি আপনি কথা বলুন প্লিজ মি.কে আপনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আন্টি বলুন মি.কে কে।
কিন্তু তিনি নির্ভানের এই অবস্থা দেখে কি বুঝাবেন নিজেই কান্নায় ভেঙে পরলেন। তাই সানভি ই নির্ভানের দুই গাল ধরে বলতে লাগলো

– মি.কে ডোন্ট স্লিপ লুক এট মি। আমাকে দেখুন আমার চোখের দিকে তাকান প্লিজ তাকিয়ে থাকতে হবে আপনাকে।
কিন্তু নির্ভান পারলো না তাকাতে তাকাতেই চোখ বন্ধ হয়ে গেলো নির্ভান জ্ঞান হারালো। জোরে জোরে নির্ভানকে নাড়াচাড়া দিলেও কিছুই হচ্ছিলো না ।

– আমি এম্বুল্যান্স কে কল করেছি কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে পরবে। (রাইসা)

– কি? এম্বুল্যান্স! Didn’t we have cars?? why ambulance. সানভি তারপর নির্ভানের মা বাবাকে বললো যে ও নির্ভান কে নিয়ে যাচ্ছে তারা পরের গাড়ি তে তারাতারি চলে আসুক আর কোনো সাংবাদিক এর কোনো প্রশ্নের উত্তর যেন না দেয়া হয়। নির্ভানের বডিগার্ড দুইজন কে ডেকে বললো,,, মি.কে কে তুলে আমার পেছনে আসো কার এর কাছেই যেতে হবে আর টাইম ওয়েষ্ট করা লাগবে না।
বডিগার্ড দুইজন ওকে সাবধানে তুলে নিলো আর সানভি আগে যাচ্ছে সবাইকে সাইড করতে।
.
হসপিটালে এনে সাথে সাথেই এডমিট করা হয়েছে অনেক প্রাইভেসি আর সিকিউরিটির সাথে। সানভির খুব ভয় করছিলো নির্ভানের যদি কিছু হয়ে যায়! অনেক সময় লেগে গেছে ওকে হসপিটালে নিয়ে আসতে। নির্ভানের বাবা মা ওকে এডমিট করার কিছুক্ষন পর এসেছেন তাদের আসার পর সানভি একটু সময় চেয়ে হসপিটালে থাকা বারান্দায় চলে আসে ওর প্রোগ্রাম এ থাকা অনেক কিছু ঠিক করতে হবে। রিপোর্টার রা তখনই কতো নিউজ ক্রিয়েট করে ফেলছিলো কিন্তু তাদের থামাতে হবে। তাদের জানানো যাবেনা যে নির্ভান কি কারণে অসুস্থ হয়ে পরেছে ওকে এদিক টায় সব সামলাতে হবে।সানভি বিভিন্ন কল শেষ করে ফিরে এসে দেখে রাইসা নির্ভানের মা বাবা কে বলছে

– আমি বলে দিয়ে এসেছি রিপোর্টার দের যে নির্ভান ভুল কিছু খেয়ে ফেলায় ও এলার্জিক প্রবলেম হয়েছে আর কিছু না। আংকেল আন্টি আমি ঠিক করেছি না।

– কে বলেছে তোমাকে সাংবাদিক দের এটা জানাতে? কেনো বলতে গিয়েছো আমি তো বলেই এসেছিলাম ওইখানে যেন কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর যেন না দেয়া হয়।

– কেনো এটাতে তো অনেক সিমপেথি পাবে একটা ভালো পাব্লিসিটি পাবে তাই আমি জানিয়েছি।

– এটা তে পাব্লিসিটি বা সিমপেথি না এটা তে তার একটা উইকনেস সবাই পেয়ে যাবে। এন্ড যারা তাকে নিচে নামানোর জন্য চেষ্টা করছে তাদের জন্য একটা সুবর্ন সুযোগ তৈরি করে দেয়া ছাড়া আর কিছুই করোনি তুমি।।

– হ্যাঁ রাইসা তুমি এই কাজ টা মোটেও ঠিক করোনি। বলেই নির্ভান এর মা এগিয়ে আসলেন। ওর বাবা নির্ভান কে রাখা সেই কেবিনের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। রাইসা নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো

– এখন কি হবে?

– আমি সামলে নিয়েছি। ভাবতে হবে না আমি সামলে নিয়েছি।

– ঠিকাছে।

– কিন্তু সানভি আমার মনে হচ্ছে তুমি রাইসার এই কাজে একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলছো না?

– আন্টি আমি মোটেও বেশি রিয়েক্ট করছিনা। আপনি জানেননা রাইসা কি….

সানভি রাইসার সেই জোর করে পিনাট মিল্ক আনানোর কথাটা বলতে পারলো না এর আগেই ডক্টর বের হয়ে এলেন আর সবাই তার দিকেই ছুটে গেলেন।

– মি.নির্ভান পিনাট এ এলার্জিক ভুলে হয়তো তাই খেয়ে ফেলেছেন, আর তাকে এখানে আনতে একটু লেইট হয়ে গেছে তাই অবস্থা একটু খারাপ তো বটেই। তবুও আমরা এলার্জিক আইটেম টা বের করতে পেরেছি। এখন তাকে অবজারভেশনে রাখবো এবং কিছু টেষ্ট ও করতে দেয়া হয়েছে দেখি কি আসে।
কথাটা বলে ডক্টর চলে যাচ্ছিলেন কিন্তু রাইসা জিজ্ঞেস করলো,,,,আমরা কি এখন তাকে দেখতে যেতে পারি। ডক্টর না করলেন এখনও যাওয়া যাবেনা।
.
সানভি হটাৎ করে বুঝতে পারলো ও খুবই বেশি হাইপার হয়ে আছে। এখন ও ফোন আসছে কিন্তু তাদের সবাইকে ও এটা বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছে যে নির্ভান এখন ঠিক আছে আর ওর অসুস্থতার খবর যেন বাহিরে ছড়াতে না পারে তা ও খেয়াল রেখেছে ও। কথা শেষে ফিরে এসে দেখে রাইসা বলছে নির্ভানের মা কে

– আন্টি আমি সো সরি আমি জানতাম না যে ওর পিনাট এ এতো প্রবলেম আমি সত্যিই জানতাম না।

– হুম নেক্সট থেকে একটু সতর্ক থেকো।,,, সানভি। বলেই ওর দিকে ঘুরলে মিসেস খন্দকার।

– জি আন্টি।

– রাইসা কে একটা গাড়িতে করে বাসায় পাঠিয়ে দাও তো মা ওর মা বাবা চলে গেছে ও যাচ্ছেনা। আর হ্যাঁ তোমার আংকেল দেখো তো কোথায় গেলেন।

– ঠিকাছে আন্টি। বলেই ও যেতে নিচ্ছিলো কিন্তু তিনি ওর হাত ধরে থামিয়ে বললেন,,,,, তুমি না থাকলে আজ কি যে হয়ে যেতো।
তারপর সানভি অনেক বুঝিয়ে রাইসা কে নিয়ে নিচে একটা ট্যাক্সি করিয়ে দিলো। রাইসা ওকেও সরি বললো কিন্তু সানভি রাইসার ভুল টা মেনে নিতেই পারছেনা।
.
ফেরার পথে সানভি মি.খন্দকার কে খুজতে লাগলো কিন্তু পেলোনা দেখে কল করতেই দেখে রিংটোন পেছনেই বাজছে তাই পেছনে ফিরেই উনাকে দেখে এগিয়ে গেলো।

– আংকেল আমি আপনাকেই খুজছিলাম। আপনি ঠিক আছেন তো??

– হু।। বলেই সাইডে থাকা একটা বেঞ্চে বসার জন্য ইশারা করে নিজেও বসলেন।,,, তোমার মনে আছে লাস্ট বার যখন নির্ভান এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলো।

– হ্যাঁ আংকেল ওইটাই আমার করা ফার্স্ট এবং লাস্ট ভুল ছিলো।

– তখন নির্ভান খুব রেগে গিয়েছিলো তোমাকে রেগে চলে যেতে বলেছিলো।আর এবার নির্ভান তোমাকে যেতে না বলছিলো সময় কতো বদলে যায়!!

সানভি চুপ হয়ে গেলো উনি কি কিছু বুঝে গিয়েছেন যে নির্ভান ওকে পছন্দ করেন।

– তুমি তোমার যোগ্যতায় জায়গা টা পাকা করে নিয়েছো। আই এম প্রাউড যে আমি তোমাকে চুজ করেছি।
সানভি কিছুটা স্বস্তি পেলো।,,,,,আংকেল! আন্টি চিন্তা করছেন আমাদের এখন যাওয়া উচিৎ।
দুইজনই আর কিছু না বলেই ফিরে এলেন। নির্ভানের রুম থেকে একটা নার্স বের হয়ে এলো।

– কাল সকালে রিপোর্ট দেয়া হবে আর ডাক্তার কথা বলবেন এখন পেসেন্ট কে যেই ডোজ দেয়া হয়েছে তিনি আর রাতে সেন্স এ আসতে না ও পারেন। আর রাতের ভিজিটিং আওয়ার শেষ এখন আপনাদের যেতে হবে পেসেন্ট এর কাছে এখানে একজন থাকা যাবে শুধু।
নার্স চলে গেলে মি.খন্দকার বললেন উনি থাকবেন সানভি ও আপত্তি করলো না।। সব ঠিক ঠাক করে দিয়ে ও মিসেস খন্দকার কে নিয়ে চলে গেলো। কাল সকালে দুইজন ফিরে আসবেন।
.
মিসেস খন্দকার কে বাসায় পৌছে দিয়ে সানভি নিজেও বাসায় তো এসে পরেছে কিন্তু ঘুমাতে পারছিলো না। খুব ক্লান্ত তবুও ঘুম আসছে না তাই ইলা কে কল দিলো তিন বার রিং হওয়ার পর ইলা ঘুম ঘুম স্বরে বললো

– হ্যাঁ হ্যালো।

– ইলা…..
সাথে সাথেই যেন ইলার ঘুম ভেঙে গেলো

– এই কি হয়েছে তোর তুই এমন সাউন্ড করছিস কেনো?

– ইলা মি.কে হসপিটালে এডমিট।

– কেনো? কি করেছিস তুই??

– আমি কেন করতে যাবো! বলেই সানভি সন্ধ্যার থেকে ঘটে যাওয়া সব ওকে জানালো।
ইলা ও রীতিমতো শক খেলো ওর ফেভারিট রকস্টার এতো অসুস্থ আর ও জানেইনা।
– দেখিস ঠিক হয়ে যাবে রকস্টার এর কিছু হবে না। আর তুই ওই রাইসা কে একটু দেখে রাখিস কোনো বাজে মতলব নিয়ে আসেনি তো নির্ভানের ক্ষতি করতে?

– আমার তা মনে হয়না কিন্তু তবুও আমি খেয়াল রাখবো।

– হ্যাঁ আর প্লিজ নির্ভানের খেয়াল ও রাখিস ও তোকে ভালোবাসে এই অবস্থায় ও তোর হাত ছাড়েনি মানে বুঝিস ই তো….

– হুম এখন রাখি তুই ঘুমা।

– কাল কি হয় বলিস কিন্তু।
সানভি হ্যাঁ বলে কেটে দিলো। রাত টা না ঘুমিয়েই কাটবে প্রতি টা মুহূর্ত ওর কাছে খুব বড় মনে হচ্ছে সকাল হলেই ফিরে যেতে পারবে রিপোর্ট এ কি আসবে তা দেখতে পারবে!
.
সকালে ইলার কলে ঘুম ভাঙলো সানভির সোফায় বসেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো ও। ইলার সাথে কথা শেষ করে তারাতারি রেডি হয়ে রওনা হলো হসপিটালে। ওইখানে পৌছেই দেখে নির্ভান এর মা আর রাইসা দুইজনই এসে পরেছে আর নির্ভানের ও জ্ঞান ফিরেছে না বলতে গেলে ঘুম ভেঙেছে ইঞ্জেকশন এর রেশ কাটিয়ে। হয়তো নির্ভান এর চোখ দুটো ওকেই খুজছিলো তাই ওকে দেখেই উঠে বসতে নিচ্ছিলো কিন্তু গলায় কি একটা লাগানো তাই উঠতে পারলো না আর কথা ও বলতে পারছে না। একটু অসুস্থ দেখাচ্ছে ওকে নির্ভান এর দিকে সানভি এগিয়ে গিয়ে বললো

– মি.কে ইটস ওকে আপনাকে কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি সব সামলে নিয়েছি সাংবাদিকদের কাছে কিছু পৌছায়নি।

– হ্যাঁ বাবা তুই সেসব নিয়ে চিন্তা করিস না সানভি সব সামলে নিয়েছে।

পেছন থেকে একজন নার্স এসে বলে গেলেন ডক্টর রিপোর্ট পেয়েছেন কাউকে গিয়ে এখন ডক্টর এর সাথে কথা বলতে। নির্ভানের মা যেতে চাইলে সানভি বললো ও যেতে চায় আর রাইসা ও বললো ও যেতে চায়। কিন্তু নির্ভান এর মা সানভি কেই যেতে বললেন।
.
.
.
চলবে।।

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৪
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
পেছন থেকে একজন নার্স এসে বলে গেলেন ডক্টর রিপোর্ট পেয়েছেন কাউকে গিয়ে এখন ডক্টর এর সাথে কথা বলতে। নির্ভানের মা যেতে চাইলে সানভি বললো ও যেতে চায় আর রাইসা ও বললো ও যেতে চায়। কিন্তু নির্ভান এর মা সানভি কেই যেতে বললেন।
.
সানভি ডক্টর এর রুমে বসে আছে আর ডক্টর নির্ভান এর রিপোর্ট গুলো ভালো করে দেখছেন তার ভাব ভঙিতে সানভির ভয় করছে না জানে কি আসে রিপোর্ট এ! অবশেষে তিনি রিপোর্ট গুলো পাশে রেখে মাথা তুলে তাকালেন।।

– জি আপনি মি.নির্ভান এর কি হোন?

– আমি তার সেক্রেটারি।

– ফ্যামিলি থেকে কেউ আসেনি?

– হ্যাঁ এসেছে কিন্তু তারা ই আমাকে পাঠিয়েছেন আপনি আমাকে বলতে পারেন।

– আপনার নাম টা?

– সান। সানভি।

– ওহ আপনি সানভি!

– জি কেনো?

– নাহ এভাবেই। ঠিকাছে আপনাকেই বলি উনার রিপোর্ট এ সব নরমাল এসেছে সেই এলার্জিক আইটেম এর জন্য কোনো ক্ষতি হয়নি কিন্তু!

– কিন্তু কি ডক্টর?

– আমার কাছে একটা বিষয়ে সন্দেহ ছিলো তার জন্য আমি তার ব্লাড টেস্ট ও করিয়েছি এবং সেটা তেই একটু প্রবলেম ধরা পরেছে।

– কি প্রবলেম?

– তার গলায় একটা ক্যান্সার এর কোষ ধরা পরেছে এবং সেটা এখনো আর্লি স্টেজ এই আছে যার জন্য সেটা কে যতো তারাতারি সম্ভব বের করে ফেলতে হবে তা নাহলে সেটা আরো ছড়িয়ে পরবে। আর তার জন্য একটা অপারেশন করতে হবে।

– ক.. ক…ক্যান্সার তার গলায়?

– জি। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা এই অপারেশন এর পর তিনি আর তার গলায় তেমন প্রেসার দিতে পারবেন না আর তার মানে হলো তাকে তার ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়ে নিতে হবে যেহেতু সে একজন গায়ক।।

– অঅবসর? মানে অবসর কেনো নেবেন? গান কেনো গাইতে পারবেন না।

– অপারেশন এর কারণে এটা হবে। আর যদি এই অপারেশন সময় মতো না করা হয় তাহলে ক্যান্সার এর কোষ আরো বাড়তে থাকবে এবং প্রবলেম আরো বাড়বে কমবে না। তাই অপারেশন টা যতো তারাতারি সম্ভব করে ফেলাই ভালো।

– দরকার হলে অপারেশন তো করাতেই হবে। আমি তার ফ্যামিলির সাথে কথা বলে নেই।

– জি যেটা ভালো মনে করেন।
সানভি বের হয়ে এলো চোখের সামনেই সব গুলিয়ে যাচ্ছে কি হচ্ছে এসব! মি.কে হয়তো কখনো আর গান গাইতে পারবেন না! তার ক্যান্সার হয়েছে কিভাবে বলবে ও এটা সবাইকে মি.কে কে তো জানানোই যাবে না উনি জানতে পারলে হয়তো অপারেশন করতেই দিবে না। কিন্তু গান ছাড়া তিনি কিভাবে থাকবেন! ভাবতে ভাবতে সামনে থাকা সীটে বসে পরলো চোখের পানি ও চলে এলো ও ভেবেই পাচ্ছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো নির্ভান গান ছাড়া থাকবে কল্পনা ও করতে পারছে না ও।
এখনো ওইখানেই বসে আছে চোখের পানি গুলো থামছেই না। তাই মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে মাথা ধরে বসে আছে। যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে কান্না করছে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে এসে ওকে এভাবে কান্না করতে দেখে বললেন

– জব চলে যাবে তাই হয়তো এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন!

– জি?? মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো সানভি।

– না মানে বলছিলাম যে এমন কান্না কি জব চলে যাবে এইজন্য কাদছেন? কারণ নির্ভান আর রকস্টার না থাকলে সেক্রেটারির ও তো প্রয়োজন হবে না জব চলে যাবে।
সানভি কিছু বললো না।

– নাহ হয়তো স্পেশাল কিছু হারিয়ে ফেলার কারণে।

– কি?

– ওহ আমার যেতে হবে সরি। বলেই ডাক্তার চলে গেলেন।
ও তো নির্ভানের গান তেমন পছন্দই করতো না তাহলে গান গেতে না পারায় এতো কষ্ট কেন লাগছে ওর হয়তো নির্ভান কষ্ট পাবে কথা টা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।

– নাহ তারাতারি তাদের বলতে হবে। বলেই উঠে দাড়ালো।
.
এসে দেখে মি.খন্দকার ও আছেন সবাইকে গিয়ে কথা টা বলতেই তারা যেন আকাশ থেকে পরলেন। কি জন্য এলো আর কি খবর জানতে পারলেন তারা হটাৎ নির্ভান এর এই রোগের কথায় ওর মা সামলাতে পারলেন না নিজেকে, তাই চেয়ারে বসে পরলেন।

– সানভি তুমি নিশ্চিত তো তুমি ঠিক শুনেছো? ডাক্তারের কোনো ভুল হয়নি তো? তুমি বুঝতে পারছো তো তুমি কি বলছো? নিনির্ভান এর এই অপারেশন হলে ও আর কখনো গান গাইতে পারবেনা এটা কি করে সম্ভব ও গান ছাড়া কিভাবে থাকবে?

– আংকেল ডক্টর ভুল কিছু বলেনি তবুও আমরা চাইলে অন্য কোথাও রিপোর্ট চেক করাতে পারি বা আবার কোনো হসপিটালে নতুন ভাবে চেকাপ করাতে পারি।

– হু। তাই করতে হবে ওকে সবসময় যে ডক্টর দেখে থাকেন সে দেশের বাহিরে আছেন তাই তার সবচেয়ে কাছের স্টুডেন্ট এখন ডক্টর সে দেখছে আমার মনে হয় না কোনো ত্রুটি আছে। অপারেশন যদি করাতেই হয় যতো তারাতারি সম্ভব তাই করাবো।

– তুমি কি বলছো এসব! আমার ছেলে ওর ক্যান্সার কি করে হতে পারে আর ও গান ছাড়া কিভাবে থাকবে?? কি বলছো তোমরা এসব? (মিসেস খন্দকার)

– আন্টি সরি বাট এটাই ট্রু….
নির্ভানের মা কান্না করতে করতে ওকে ধরে কান্না শুরু করে দেয় আর সানভি ও তাকে সান্ত্বনা দেয়। রাইসার এসব মোটেও ভালো লাগছিলো না নির্ভানের ক্যান্সার আর ও কখনো গান গাইতে পারবে না! ও এই নির্ভান কে তো পছন্দ করেনি ওর গান না থাকলে ওর কি থাকবে। তাই ও একদম চুপ করে সাইডে দাড়িয়ে ছিলো। আর ওর মা বাবা আর সানভি অনেকক্ষন কথা বলে ভেবে চিন্তে ওরা অপারেশন টা কিছুদিন এর মধ্যেই করানোর সিদ্ধান্ত নিলো এবং নির্ভান কে যে জানানো হবে না এই কথা টা তাও ঠিক করলো। কিন্তু মাঝখান দিয়ে রাইসা আর কথা না বলে থাকতে পারলো না

– আংকেল আন্টি আমরা যদি অপারেশন এর আগে আরো দুই মাস টাইম নেই এবং নির্ভানের কয়েকটা শো এবং গান রেকর্ড করে রাখি তাহলে আই থিংক ভালো হবে। নেক্সট প্রযেক্ট গুলো সেড়ে তারপর অপারেশন টা করিয়ে নেয়া টাই ঠিক এতে ওর ক্যারিয়ার আরো কিছু দিন থাকবে।

রাইসার কথায় অবাক হলো সানভি এ তো শুধু নির্ভানের গানেরই পাগল আগে।ওর কথা শুনে ওকে ম্যাচ্যুর মনে হয়েছিলো কিন্তু এ তো একজনের লাইফের থেকে তার ক্যারিয়ার নিয়ে আছে।

– রাইসা তুমি এসব কি বলছো? আমার ছেলের লাইফের থেকে বেশি আর কিছুই না ক্যারিয়ার তো দূরেই থাক। (মা)

– রাইসা আমরা যা ডিসিশন নিয়েছি তাই হবে। হ্যাঁ সানভি এখন আমরা ডক্টর এর কাছে যাচ্ছি তুমি ভেতরে গিয়ে বসো। আর রাইসা মা তুমি চাইলে চলে যেতে পারো অনেক সময় হয়ে গেছে তুমি এসেছো।

– জি আংকেল। বলে সানভি নির্ভানের রুমের দিকে আগালো আর রাইসা ওই রুমে আর গেলো না।,,,,, আমি আসি বলেই ওই খান থেকে চলে গেলো।
নির্ভানের মা থামাতে গেলে ওর বাবা হাত ধরে থামিয়ে বলে

– আমরা ভুল মেয়ে কে বেছে নিয়েছিলাম। বাদ দাও এখন চলো ডক্টর এর সাথে কথা বলতে হবে।
.
সানভি এর পরের কথা আর শুনেনি রুমের ভিতরে ঢুকে দেখে নির্ভান ঘুমিয়ে আছে তাই কোনো শব্দ না করে রুমের ভেতরে গিয়ে নির্ভানের সামনে রাখা চেয়ার টায় বসলো। রুম টার বেড সাইড টা বাদে আর কিছুতেই হসপিটাল মনে হচ্ছে না এসি, ফ্রিজ, টিভি রঙিন পর্দা লাগানো এরকম হসপিটাল রুমে থাকলে যে কেউ সুস্থ হতে বাধ্য। এসব থেকে চোখ সরিয়ে যখন বেড এ থাকা নির্ভানের দিকে তাকালো ভাবলো কাল রাতে ও কতো উৎসাহ নিয়ে গান গাইলো আর এখন! ওইদিন ও বলছিলো গান কে ও কখনো ছাড়তে পারবে না আর আজকেই!!
যতই নির্ভানের মলিন চেহারায় তাকাচ্ছে ততই খারাপ লাগছে ওর। একজন গায়ক কে থাকতে হবে গান ছাড়া! এবার চোখের পানি চলেই এলো অনেক চেষ্টার পর ও থামলো না।
.
নির্ভান এর ঘুম ভাঙতেই দেখে ওর সামনে সানভি বসে আছে, চোখে পানি। আর নির্ভান কে তাকাতে দেখেই সানভি তারাতারি চোখ মুছে ফেললো কিন্তু ততক্ষণে নির্ভান তা খেয়াল করেই ফেলেছে। আর তাই খুব ধীরে ধীরেই বললো

– আমার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করা হচ্ছে!

– মি.কে এখন কেমন বোধ করছেন।

– তোমাকে দেখলাম এখন ভালোই লাগছে ব্যাস গলায় একটু ব্যাথা করছে। আচ্ছা আমার গলায় কিছু হয়নি তো??

কিছুক্ষন চুপ থেকে ভেবে নিয়ে বললো

– নাহ কিছু হয়নি। কিন্তু হ্যাঁ এটা ঠিক কিছুদিন আপনি গলায় বেশি জোর দিতে পারবেন না মি.কে। আপনি এখন রেস্ট নিন কথা কম বলুন।

– আচ্ছা কথা বলবো না কিন্তু তুমি বসো তোমাকে একটু দেখি।
সানভি কিছু বললো না চুপ করে রইলো কিন্তু এভাবে তাকিয়ে থাকায় অস্বস্তি লাগছিলো তাই উঠে বললো,,, একটু কাজ আছে নিউজ চেক করতে হবে। আমি সোফায় বসছি।
বলেই উঠে যাচ্ছিলো তখনই নির্ভান হাত ধরতে নিলো কিন্তু গেইট খুলে যাওয়ার শন্দে ছেড়ে দিলো আর সানভি ও উঠে সাইড হয়ে দাড়ালো ওই চেয়ারে ওর মা এসে বসলেন। তাই সাইড হয়ে পেছনে চলে গেলো।

তারপর ওর বাবা ওকে বুঝিয়ে বললো যে গলায় ইনফেকশন হয়ে যাবে যদি একটা ছোট্ট অপারেশন করা না হয় তাহলে প্রবলেম আরো বাড়বে তাই অপারেশন টা করাতে হবে যতো তারাতারি সম্ভব আর এটাও বললেন যে এর জন্য ও নেক্সট কয়েক মাস গান প্র‍্যাকটিস বা রেকর্ড কিছুই করতে পারবেনা। প্রথমে ও একটু ইতস্তত করলেও রাজি হলো। যদি ও জানতো যে এরপর ও কখনোই গান গেতে পারবে না তাহলে না জানি কি করতো। কিন্তু আপাতত এটাই ওর জন্য ভালো যে ও না জানুক।
.
কাল সকালেই অপারেশন টা করা হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা কোনো প্রকার ত্রুটি চান না তারা। এক মাত্র ছেলে ও বাচলেই হলো আল্লাহ যা করেন ভালোই করেন সেই এলার্জির এই প্রবলেম টা না হলে এক সময় খুব বিপদেই পরতে হতো প্রথমেই ধরা পরায় কোনো বড় বিপদ আর হবে না। রাতেই সব প্রিপারেশন কমপ্লিট করে ফেলেছেন সকালেই অপারেশন, জিনিস টা যে কতো বড় এখনো জানে না নির্ভান। সানভির সাথে আর কথা বলার সু্যোগ পায়নি নির্ভান বাবা মা ডক্টর তারপর তো সানভি কে বাসায় যেতে হয়েছে।
.
পরেরদিন সকালে প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করে নির্ভানকে অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তখনই সানভি একটু বলেছিলো,,, বেস্ট অফ লাক মি.কে। নির্ভান শুধু শুনতেই পেরেছে ঘুমের ইঞ্জেকশন এর কারণে কিছু বলতে পারেনি এক রকম ঘোরে চলে গিয়েছে ও। ওকে ও.টি. নিয়েছে প্রায় দুই ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে এখন ও কোনো ডাক্তার বা নার্স কেউ বের হয়ে আসছেন না।
সানভি আর নির্ভান এর বাবা মা বাহিরেই অপেক্ষা করছেন প্রতিটা মুহূর্ত খুব দীর্ঘ মনে হচ্ছে তাদের কাছে। তখনই একজন নার্স তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে এলেন কিন্তু তিনি ও কাকে যেন বলতে বলতে যাচ্ছেন ইমার্জেন্সি। যার জন্য তাকেও কিছু জিজ্ঞেস করা গেলো না। কিছুক্ষন পর আরো দুইজন এক্সট্রা ডক্টর এর সাথে তারাতারি ভেতরে ঢুকে গেলেন। আর বাহিরে রেখে গেলেন তিনজন চিন্তায় অপেক্ষারত আপন দের।।।।
.
.
.
চলবে।