অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-৩৫+৩৬

0
790

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৫
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
কিছুক্ষন পর আরো দুইজন এক্সট্রা ডক্টর এর সাথে তারাতারি ভেতরে ঢুকে গেলেন। আর বাহিরে রেখে গেলেন তিনজন চিন্তায় অপেক্ষারত আপন দের।।।।
.
প্রায় আরো এক ঘন্টা পর ও.টি. এর লাইট নিভে গেলো আর মেইন ডাক্তার সহ বাকি দুইজন ও বেরিয়ে এলেন। মেইন ডাক্তার এর দিকে এগিয়ে যেতেই তিনি বললেন

– চিন্তার কোনো কারণ নির্ভান ইজ অল রাইট। আমরা সেই ক্যান্সার এর কোষ গুলো নষ্ট করে দিয়েছি পুনরায় তা ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই কিন্তু সবসময় চেকাপ করাতে হবে যে এটা আবার ফিরে আসছে কিনা। এখন উনাকে বেড এ দেয়া হবে আর ও ইঞ্জেকশন এর কারণেই অজ্ঞান আছে কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরবে।

– থ্যাংক ইউ ডক্টর ভালো খবর দেয়ার জন্য।

– ওয়েলকাম।। হ্যাঁ আপনাদের কথা মতো আমরা তাকে কেউ এটা জানাবো না যে উনার ক্যান্সার এর অপারেশন হয়েছে। এবং হ্যাঁ মিস সানভি আপনার কথা মতে যেহেতু সে সেলেব্রিটি তাই তার রুমে শুধু স্পেশাল এবং হাতে গোনা কয়েকজন স্টাফ ই সেখানে এলাউড তা আমরা নিশ্চিত করেছি।

– থ্যাংক ইউ ডক্টর।
.
কিছুক্ষন পরই নির্ভান কে ওর রুমে সিফট করে দেয়া হলো কিন্তু ওরা ভেতরে যাওয়ার পারমিশন টা পেলো না। বাহিরে থেকেই ওরা অপেক্ষা করছিলো কিন্তু সানভি কে নিচে যেতে হলো মেডিসিন আনার জন্য তখনই নিচে যাওয়ার সময় লিফট এ ডক্টর এর সাথে আবার দেখা হলো এখন তার ডক্টর এর এপ্রোন টা তার সাথে নেই সাধারণ মানুষই লাগছে।

– হ্যালো সানভি।

– হ্যালো ডক্টর।

– সানভি আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।

– জি ডক্টর বলুন।

– এখনই তো নেমে যেতে হবে লিফট থেকে। আচ্ছা চলুন হসপিটালের ক্যানটিনে একটু কফি খেতে খেতে বলি।

– কিন্তু আমি মি.কে এর জন্য মেডিসিন নিতে এসেছি।

– ওইটা তো দুপুরের জন্য এখন ও সময় আছে। আর তাছাড়া এটা নির্ভান কে রিলেটেড ই।

– ওহ ওকে ডক্টর।

– ওয়াহ নির্ভানের নামে তো আপনাকে দিয়ে সব করানো যাবে!! বলেই হেসে দিলেন ডক্টর।
ক্যানটিনে বসে দুটো কফি নিলেও সানভির মোটেও ইচ্ছে করছে না ওর খেতে যা বলবে ডক্টর তা শুনে ব্যাস চলে যেতে ইচ্ছে করছে ওর।

– তো কথা হচ্ছে আমরা যতোটা ডিজিটাল এবং এডভান্স ভাবে সম্ভব অপারেশন টা করেছি। কিন্তু তার গলায় একটা ছোট্ট দাগ আছে যেইটা সময়ের সাথে মুছে গেলেও এখন সেটা তাকে অনেক ভাবাতে পারে।

– মি.কে এসব নিয়ে খুবই খুতখুতে ব্যাপারটা অনেক ভাবাবে তাকে। এটাই বলতে চেয়েছিলেন?

– হ্যাঁ। আরেকটা কথা আপনি খুব সিম্পল তবুও এরকম একটা রকস্টার এর সেক্রেটারি হয়েছেন ভাগ্যের ব্যাপার আর রকস্টার এর পছন্দের মানুষ হওয়ায় ভাগ্য হাতছাড়া করোনা।

– মানে!

– তেমন কিছুই না কিন্তু আমি জানি তুমি বুঝতে পেরেছো।

– এক্সকিউজ মি ডক্টর আপনি কি বলছেন এসব? সিম্পল, পছন্দের মানুষ, ভাগ্য! এসব কি ছিলো???

– কিছুদিন পরই বুঝতে পারবে এখন আসি।
বলেই উঠে চলে গেলেন তিনি ক্যানটিনে বসে ছিলো তাই ডাকতে ও পারছিলো না।
তাই উঠে চলে গেলো মেডিসিন নিতে।
.
মেডিসিন নিয়ে উপরে এসে দেখে ম্যাক্স এসেছে তারপর ওর সাথেও এই অপারেশন এবং মিডিয়া কে কিভাবে সামলাতে হবে তা ডিসকাশ করে নিলো ওরা। নির্ভান কে ওরা এটা জানাবে যে কয়েক মাস গান গাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে তাই সব রেকর্ডিং, কন্সার্ট সব ক্যান্সাল করে দেয়া লাগবে। আর এই কয়দিন ফুল রেস্ট ও নিতে হবে।

– আন্টি তার জন্য আমি মনে করি কি সানভি যদি আপনাদের সাথে বা খুব কাছাকাছি কোথায় থাকতো এবং বেশি সময় দিতো নির্ভান কে তো ভালো হতো কারণ ও একটু বেশি সেনসটিভ ও ওর গান নিয়ে তাই যতো বেশি মানুষ ততো ভালো কেয়ার হবে এবং মিডিয়ার থেকেও দূরে রাখা যাবে। ( ম্যাক্স)

– আ আমি কিভাবে হ্যান্ডেল করতে পারি আংকেল আন্টি ভালো পারবে সেটা আমার থেকেও বেশি ভালো। ( সানভি)

– হ্যাঁ ম্যাক্স ঠিক বলছে আমিও এটাই ভাবছিলাম তুমি থাকলে আমাদের একটু সুবিধা ই হতো। ( মিসেস খন্দকার)

– বাট আন্টি….

– দেখো মা যদি পসিবল হয় তো প্লিজ না করোনা। আই প্রমিজ তোমার কোনো প্রবলেম হবে না। আর তুমি আমাদের বাসা কতো টা সিকিওর তা ও জানো প্লিজ না করোনা। আমরা তোমাকে ডাবল পে করবো ডোন্ট ওয়ারি।

– নাহ আংকেল পেমেন্ট এর জন্য না। আসলে আমি….

পেছনের থেকে একজন নার্স এসে বলে গেলো নির্ভান এর জ্ঞান ফিরেছে তাই সানভি ওর কথা থামিয়ে দিলো। তখনই সবাই কে যেতে দেখে নার্স বললেন,, যেকোনো দুইজন যেতে পারবেন এখন। বেশি মানুষ এলাউড না এবং শুধু দেখতে পারবেন কোনো কথা বলতে পারবেন না। এবং পেসেন্ট ও যেন কথা না বলে।
ম্যাক্স থেমে গিয়ে বললো আংকেল আন্টিকে যেতে আর সানভি তো যাওয়ার জন্য আগায়নি।

– সানভি।

– জি।

– দেখো প্লিজ এটা একটা রিকুয়েষ্ট তুমি এই কথা টা রাখো। আমি জানি নির্ভান তোমাকে পছন্দ করে এবং তুমি হয়তো করোনা। ইটস ওকে কিন্তু ওকে কিছুটা দিন সময় দাও এখনি জব টা ছেড়ে দিয়োনা। ওর এখন তোমাকে প্রয়োজন তুমি এখন বুঝেশুনে মিডিয়ার সাথে এবং ওর বাকি যারা ক্লায়েন্ট তাদের সাথে কথা বলতে পারবে।

– আমি থাকলে কি হবে আর না থাকলেই বা কি হবে।

– তুমি না থাকলে কি হবে!! ওইটা তুমি ভালো করেই জানো। আরে একটা লজিক্যাল পয়েন্ট দেখাই! সেটা হলো তুমি যদি এখন জব ছেড়ে দাও নির্ভান তো ভেঙে পরবেই আর ওকে দেখানোর জন্য হলেও ওর বাবা মায়ের নিউ সেক্রেটারি রাখতে হবে তখন সে যদি ভালো ভাবে মিডিয়া হ্যান্ডেল করতে না পারে বা যদি ফ্রড হয়! নির্ভান আর গান গাইতে পারবেনা এই কথা মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়? ওর ক্যান্সার এর কথা ছড়িয়ে দেয় তখন তো তুমি জানোই কি হবে।।

সানভি ব্যাপার টার গভীরতা টা বুঝতে পারলো কল্পনা ও করছিলো কি কি হতে পারে নির্ভান এর মতো একটা মানুষ এটা হ্যান্ডেল করতে পারবে না। সবচেয়ে প্রিয় জিনিস বা মানুষ গুলোকে হাড়ানোর কষ্ট সানভি জানে। তাই ওদের কথায় আর না করতে পারলো না রাজি হয়ে গেলো। নির্ভান কে ও মাঝ নদীতে রেখে যাবে না তীরে পৌছে দিয়েই যাবে।
.
ভেতরে নির্ভান ওর বাবা মা কে দেখছে কি যেনো বলার চেষ্টা করছিলো তারা না করে দিলেন।

– সব ঠিক আছে বাবা তুই চিন্তা করিস না। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।

নির্ভান মাথা নাড়লো ওর মা বাবা হাসি দিয়ে ওর পাশে বসলো।
.
নির্ভানের পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ওই মাসের বাকি দিনগুলো ও শেষ হয়ে গেলো। আর সানভি জব এর রিজাইন লেটার লিখে অফিসে দিয়ে ও এসেছে কিন্তু কাউকে জানায়নি।
নির্ভান আজ বাসায় ফিরছে প্রায় দুই সপ্তাহ পর অসুস্থ হওয়ায় এখন থেকে ও এখানেই থাকবে স্টুডিও থেকে ওর সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বই সব মেইন বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আর সাথেই এসেছে সানভি ও, নির্ভানের ভালোর জন্যই করেছে জব ছেড়ে দিয়ে এখন নিজের দায়িত্ব হিসেবে কাজ টা করছে।
.
সানভির জন্য একটা গেস্ট রুম রেডি করা হয়েছে ওইখানেই নিজের ব্যাগ এর কাপড় গুলো বের করে আলমারি তে রাখছিলো তখনই নির্ভানের চিৎকার শুনতে পেলো মা কে ডাকছিলো ও খুব চিৎকার করে। সবার আগেই সানভি দৌড়ে এসে দেখে নির্ভান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আর সানভির পেছনেই ওর মা বাবা ও এটাই দেখলো।

– মা মা… পাপা এ এটা কি! আমার গলায় এই দা…দাগ কিভাবে হলো? অপারেশন তো সেই দুই সপ্তাহ আগে হয়েছে এই দাগ এখনো যায়নি কেনো??
তিনজনই একে অপরকে দেখছে কারণ উনারা জানেন নির্ভান ওর বডি ফেস সব কিছু নিয়েই সেনসিটিভ হটাৎ এরকম কিছু কিভাবে মেনে নিবে!

– মি. কে দাগ টা অপারেশন এর কারণেই ঠিক হতে একটু সময় লাগবে কিন্তু চলে যাবে আপনি চিন্তা করেন না। আর এভাবেও কয়েক মাস আপনাকে রেস্ট নিবেন এর মধ্যে দাগ চলে যাবে।

– Sure?

– yes Mr. K.

– আমার আর ভালো লাগছে না কবে যে এই সমস্যা যাবে আর আমি আবার স্টেজ এ পারফর্ম করতে পারবো গান গাইতে পারবো। এই ঘরে বসে থাকা আর ভালো লাগেনা।

– হুম সব ই ভালো লাগবে। এখন রেস্ট নিন আমরা আসি।

– হ্যাঁ বাবা তুই এসব চিন্তা করিস না রেস্ট নে।
বলেই তারা গেইট লাগিয়ে বাহিরে এসে দাড়ালেন। তিনজনই দিশেহারা অবস্থায় নির্ভানের বাবা মা তো আরো বেশি চিন্তিত তারা তো জানেন ছেলের জন্য গান কি!!!
.
.
.
চলবে।

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৬
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
– হুম সব ই ভালো লাগবে। এখন রেস্ট নিন আমরা আসি।

– হ্যাঁ বাবা তুই এসব চিন্তা করিস না রেস্ট নে।
বলেই তারা গেইট লাগিয়ে বাহিরে এসে দাড়ালেন। তিনজনই দিশেহারা অবস্থায় নির্ভানের বাবা মা তো আরো বেশি চিন্তিত তারা তো জানেন ছেলের জন্য গান কি!
.
দুপুরে খাবার টেবিলে এলো নির্ভান আর ওর জন্য পাতলা খাবার স্যুপ রান্না করা হয়েছে কিন্তু বাকি দের খাবার দেখে ওর খারাপ লাগবে দেখে তারা সবাই স্যুপ খাচ্ছিলেন।

– আমার সাথে তোমরা ও স্যুপ খাবে?

– হ্যাঁ আমাদের ছেলে যা খাবে আমরা ও তাই খাবো। ( মি.খন্দকার)

– স্যুপ টা হেলদি আমাদের সবার জন্য। ( মিসেস খন্দকার)

– সানভি তুমিও কিছু বলো মা পাপা দুইজনই কিছু না কিছু তো বললেন।

– হাহা… (হাসি দিয়ে বললো) আমি তো স্যুপ টা এতো টেস্টি যে কথা বলতে গিয়ে টাইম ওয়েস্ট করতে চাইছি না।

– হয়েছে হয়েছে তোমাদের এসব এক্সকিউজ দেয়া লাগবে না। I am not a baby. তোমরা নরমাল খাবার খেতে পারো ইটস ওকে।

– একটা টাইম স্যুপ খেলে আমরা অসুস্থ হয়ে যাবো না মি.কে।

– ওকে। তোমাদের ইচ্ছা।

তারপর খাওয়া শেষে আবার বলে উঠলো,,,, এই মিস সান আমার এই কয়েকদিন এ কি কি আপডেট মিস হয়েছে? আই মিন কি কি আমার জানতে হবে সব আপডেট নিয়ে আমার রুমে এসো।

– জি মি.কে।
ও রুমে চলে যেতেই ওর বাবা মা জিজ্ঞেস করলো এখন কি বলবে কি জানাবে সব বুঝে শুনে জানাতে হবে। সানভি ও ব্যাপার টা বুঝে নিয়ে খাওয়া শেষ করে ট্যাব টা নিয়ে নির্ভানের রুমে গেলো গেইট নক করতেই নির্ভান বললো,,,, কাম ইন।
সানভি ভেতরে গিয়ে দেখে নির্ভান সোফায় বসে আসে গিটার নিয়ে

– গান তো এখন কিছুদিন গাইতে পারবেনা ভাবছি গিটার ই প্র‍্যাকটিস করি।

– বাট মি.কে গিটার বাজালে গান গাইতে ইচ্ছা করবে আর আপনি কিন্তু এখন ভুলেও গান গাইতে পারবেন না।

– সেটা আমি জানি সান। এখন বসো। বলেই ওর দিকে তাকিয়ে রইলো,,, আমি তো জানতামই না যে তুমি আমার জন্য এতো চিন্তা করো যে আমার টানে তুমি আমার বাসায় এসে থাকতেও রাজি হয়ে গেলে?

– আংকেল আন্টি একা সামলাতে পারতেন না তাই তারা ই সাজেস্ট করলেন থাকতে।

– চাল ঝুটি।।

– জি??

– আরে হসপিটাল এ বসে বসে কয়েকটা বাংলা নাটক আর হিন্দি ছবিও দেখেছিলাম ওইখান থেকেই ওয়ার্ড টা ভালো লাগসে।
সানভি হেসে দিলো।

– আরেকটু হাসো আমি দেখি।

– মি.কে আপডেট গুলো এই যে…সানভি কে থামিয়ে দিলো

– তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমাকে আপডেট জানার জন্য ডাকিনি। এই কয়দিন আমি তোমার এতো কাছে থাকা টাই তো মিস করেছি। তোমাকে মন ভরে দেখা টাই তো মিস করেছি তোমার সাথে কথা বলাটা মিস করেছি। সানভি জানি না কেনো ভালোবাসি তোমাকে কিন্তু ভালোবাসি তোমার সাথে সময় কাটানো টা ভালো লাগে। ভাগ্যিস তুমি আছো নাহলে গানহীন সময় গুলো আমি যে কি করতাম।।

– মি.কে আপনি সুস্থ হলেই আমি এই জব ছেড়ে দিবো।

নির্ভান কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবলো (এতো আনরোমান্টিক ও মানুষ হতে পারে) তারপর বললো,,,,, তাহলে তো যেন আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাই যে প্রবলেম আছে তা যেন কখনো ঠিক ই না হয় আর….. নির্ভানের ঠোঁটে হাত দিয়ে চেপে।

– মি. কে!!!! আল্লাহ মাফ করুক এমন কথা বলতে নেই। তারপর সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নিয়ে সানভি উঠে দাড়ালো,,,, আপডেটস এই ট্যাব এ আছে দেখে নিয়েন আমি আসি।
ও চলে যাচ্ছিলো নির্ভান ওর হাত ধরে থামিয়ে কিছু না বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলো সানভি সরে যেতে চাইলে ও নির্ভান ছাড়লো না।,,, প্লিজ প্লিজ একটু থাকি তুমি তো জানো আমি খারাপ না ব্যাস থাকতে দাও কিছুক্ষন এভাবে শান্তি লাগছে। জানো ভেতর টা না কেমন অস্থির করে সবসময় মনে হয় কি যেনো হারিয়ে ফেলছি। কেনো এমন মনে হয় সবই তো আছে তাহলে কেনো এমন হয়!!
এখন সানভির ও কান্না পেলো ওর মনে হচ্ছিলো ও সব বলে দেক কিন্তু ও যেই কষ্ট পাচ্ছে তার থেকেও যে বেশি কষ্ট পাবে নির্ভান তাই খুব কষ্টে নিজেকে এবং নিজের কান্না থামিয়ে রেখে নির্ভান কে সান্তনা দেয়ার জন্য ওকে বললো,,,,ইটস ওকে মি.কে এটা জাস্ট অপারেশন হয়েছে তো তার জন্যই এমন মনে হচ্ছে। তাছাড়া সব ঠিক আছে।
নির্ভান ওকে ছেড়ে দিতেই সানভি একটা হাসি দিয়ে বললো,,,, ফিলিং বেটার??

– হ্যাঁ।

– তাহলে এখন একটু রেস্ট নিন আপডেট আমি পরে এসে দেখিয়ে দিয়ে যাবো।

– ঠিকাছে।
.
নির্ভানের রুম থেকে বের হয়ে এসে তারাতারি ওর রুমে চলে এলো খুব কান্না পাচ্ছে বারবার ডাক্তার এর বলা কথা গুলো মনে পরছে আর শেষে নির্ভানের কথা গুলো। দিশাহীন মনে হচ্ছে নিজেকে নির্ভানের কষ্ট ওর সহ্য হচ্ছে না কি করবে বুঝতে না পেরে ইলা কে কল করলো। বাহিরের মানুষ দের মধ্যে শুধু ইলা ই জানে নির্ভানের অসুস্থতার কথা কারণ ও কখনোই এই কথা বাহিরে যেতে দিবে না এই বিশ্বাস আছে সানভির।
কয়েকবার রিং হতেই কল টা পিক করলো ইলা

– হ্যাঁ সানু ইম্পর্ট্যান্ট কিছু? না হলে আমি একটু পরে কল দেই এখন একটু বিজি।
ইলা নিশ্চয়ই কাজের চাপ তাই ওকে এখন কিছু বললে ও কাজে মন দিতে পারবে না। তাই ওকে এখন কিছু বললো না।
– নাহ এভাবেই কল করেছিলাম। পরে কথা বলবো তুই ফ্রি হলে।।

– ওকে টাটা বাই।
সানভি বাই বলে রেখে দিলো ফোন। মনের কথা মনেই রয়ে গেলো শেয়ার ও করতে পারলো না কারো সাথে। এখন নিজেকেই সিদ্ধান্ত টা নিতে হবে ওর সাথে থাকায় যদি নির্ভান ভালো ফীল করে তো কেনো নয়! ওর ও তো একজন ভরষা করতে পারার মতো মানুষ লাগবে। আংকেল আন্টি ও তো ওকে অনেক পছন্দ করেন নির্ভানের খুশির কথা ভেবে মেনে নিতেই পারেন। ও তো আর তাদের সাথে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা করছে না তারা নিজেই তো রাইসা কে নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন! এতো সবের মাঝে বড় কথা

– আমি কি উনাকে ভালোবাসি? হয়তো না হয়তো হ্যাঁ!! তার কিছু হলে খারাপ তো আমার ও লাগে তার মতো সে ও তো আমার জীবনের একটা অভ্যাস হয়ে গেছেন যেমন আমি তার অভ্যাস হয়ে গেছি। ওইদিন ডক্টর বলেছিলেন এমন ভাগ্য হাতছাড়া করতে না। লাইফে এ একজন অর্নব কে ও তো সুযোগ দিয়েছিলাম আর মি.কে তো আমার এতো বছরের পরিচিত একজন।। দেয়া কি ঠিক হবে!

কিছুক্ষন ভাবলো সানভি অনেক দোটানা শেষে এই নির্ভান কে আপন করতেই রাজি হয়। নির্ভানের মতো মানুষ কে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার আর ওর সম্পর্কে সবই তো জানে সানভি।।
– হ্যাঁ এখনই বলতে হবে তাকে এখনই তাকে বলতে হবে যে কিছুই হারায়নি সব আছে তার কাছে তার বাবা মা এর পাশে এখন সানভি ও তার পাশে থাকতে রাজি।। তাই তারাতারি ওর রুমে যাওয়ার জন্য বের হলো কিন্তু রুমে এসে নক করলো কোনো সাড়া পেলো না তবুও গেইট খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে ও নেই।,,,,, রেস্ট নিতে বলেছিলাম কোথায় চলে গেলো আবার। ওয়াশরুমে হতে পারে ওয়েট করবো? নাকি চলে যাবো। এটা কি না বলার সংকেত তাকে কি বলবো না তাহলে?
আবার বের হয়ে এলো মন খারাপ করে আন্টি রুমে ঘুমাচ্ছেন আংকেল অফিসে চলে গিয়েছেন। তারপর নিজের রুমে চলে এলো গেইট লক করে আবার ইলা কে কল করার জন্য ফোন টা হাতে নিতেই ওর গেইট এ নক করার শুব্দ পেলো। গেইট খুলতেই দেখে নির্ভান দাঁড়িয়ে আছে।

– রুমে গিয়েছিলে? ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি তুমি গেইট খুলে চলে যাচ্ছো।

– হ্য হ্যাঁ গিয়েছিলাম।

– কিছু কাজ ছিলো? বলতে বলতে রুমে ঢুকলো,,,, কখনো গেস্ট রুমে আসিনি কোনো অসুবিধা?

– নাহ।

– তো?
বলেই ওর দিকে ঘুরে তাকালো চোখে প্রশ্নবোধক চাহনি।

– মি.কে আসলে.. আসলে…

– কি আসলে?

– আমি আমি…. আমি আপনার গানহীন এই সময়গুলোতে আপনার পাশে থাকতে চাই মানে স..সবসময় আপনার পাশে থাকতে চাই। বলেই চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।
নির্ভান কিছুক্ষন কথা গুলো ভেবে বললো,,,, আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখছি!??,,,, তারপর সানভির মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আছে কি না তা দেখার চেষ্টা করলো,,,,তুমি কি অসুস্থ??

সানভি কিছু বলছে না দেখে নির্ভান ওর দুই গালে হাত দিয়ে ধরে উপরে তুলে বললো,,,, আমি বাস্তবেই আছি তুমি ও আছো।
সানভি একদম নির্ভানের চোখে চোখ রেখে বললো,,,,আপনাকে কষ্টে দেখতে আমার ও ভালো লাগে না। ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু আপনিও আমার এক অভ্যাস হয়ে গিয়েছেন হয়তো আপনাকে ছেড়ে আমিও ভালো থাকতে পারবো না।।।

– তুমি শুধু আমার পাশে থাকো আমাদের দুইজনের জন্য আমার ভালোবাসাই অনেক হবে। বলেই ওর কপালে একটা চুমু একে দিলো।
সানভির ও অনেক ভালো লাগছে এখন তারপর হটাৎই নির্ভান কে যে এখনো ও গানের কথা টা বলেনি তার জন্য ওর খারাপ লাগছিলো কিন্তু সমস্যা নেই সঠিক সময় দেখে ও বলে দিবে আর ওর বাবা মা আর ও মিলে নির্ভান কে সামলে নিতে পারবে।।।
.
তখন তো নির্ভানের মা ওকে খুজছিলো তাই চলে এসেছিলো। কিন্তু এরপর থেকে সানভির লজ্জা লাগা শুরু করেছিলো নির্ভানের সামনে পরলেই বা যেতে হলেই কেমন যেন লাগতে শুরু করলো। ভাবতেই অবাক লাগে ওর মি.কে এখন থেকে ওর নির্ভান হয়ে গেছে। কিন্তু আবার সামনে যাওয়ার চেষ্টা ও করেছে কখনো ওষুধ নিয়ে, কখনো ফল নিয়ে বা পানি নিয়ে বা মিউজিক নিয়ে সব আপডেট দেয়ার বাহানায়। এর মধ্যে নির্ভান হয়তো কখনো হাত ধরে বসে থাকতো বা কখনো সানভির কোলে মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে সানভি খুব ভয় পেতো কেউ দেখে ফেলবে বলে আর সেই সুযোগেই নির্ভান বারবার ওর পাপা মা কে জানিয়ে দেয়ার কথা বলতো কিন্তু সানভি ই থামিয়ে দিতো।
এভাবেই আরো এক মাস কেটে গেলো নির্ভান এখন গান গাইতে চায় খুব জেদ করে কিন্তু প্রতিবারই ওর বাবা মা সানভি আরো কিছুদিন লাগবে বলে পিছিয়ে দিতো।
আজকে নির্ভানের বাবা ওকে কোম্পানির বিভিন্ন টার্মস এন্ড কন্ডিশন জানালেন ও বললো তার কি প্রয়োজন তো তিনি বললেন উনারা বুরিয়ে গেলে ওকেই তো হাল ধরতে হবে। আসলে তারা ওকে গানের জগৎ থেকে দূরে রাখতে অফিসের কাজে ব্যাস্ত রাখতে চাইছেন।
.
বিকেলে সানভি আবার আপডেট দিতে এসেছে আসলে এটা ওদের সময় কাটানোর আপডেট টাইম হয়ে গেছে। সানভি এখন অনেক টাই ফ্রী হতে শুরু করেছে নির্ভানের সাথে ওর সাথে কাটানো সময় গুলো ওর কাছে অনেক মূল্যবান মনে হয়।

– সানভি তোমার মনে আছে আমাদের ফার্স্ট কিস কিভাবে হয়েছিলো???
সানভির মনে ছিলো কিন্তু না মনে থাকার ভান করলো

– আমাদের ফার্স্ট কিস মানে কি বলছো এসব?

– মনে নেই তোমার??

– যেটা হয়নি সেটা মনে রাখবো কিভাবে?

– হয়নি? ওহ আচ্ছা তাহলে তো আমাদের একটা ফার্স্ট কিস থাকা দরকার বিয়ের আগে। বলেই নির্ভান আগে বাড়তে লাগলো

– না না মনে আছে মনে আছে। ওইদিন কিচেনে যে হটাৎ করে…. এটুকু বলেই থেমে গিয়ে মুখ চেপে বসে রইলো।
তারপর নির্ভান হেসে বললো

– আমি তোমাকে পেয়েছি এটাই অনেক তুমি আমার পাশে আছো তাই আমার সব। ওইটা তো হটাৎ কিছু একটা ছিলো বাকি যা কিছু ফার্স্ট হওয়ার সব বিয়ের পরই হবে। তুমি ও নাহয় আমাকে বিয়ের পরে ভালোবেসো।।

সানভি নির্ভানের কথায় মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছিলো

– এভাবে সেন্টি হয়ে তাকালে চলবে না তখন কিন্তু আমাকে কেউ থামাতে পারবেনা। বলেই দুষ্টুমি ভরা হাসি দিলো। তারপর কি একটা মনে পরতেই যেন উঠে চলে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এলো।

– কি করে যে আমি তোমাকে পেলাম। মাঝে মাঝে ভয় হয় তোমাকেও হারিয়ে ফেলবো না তো।।
হটাৎই মন খারাপ হয়ে গেলো সানভির তাই দেখে নির্ভান উঠে চলে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এসে সানভি কে বললো ওর দিকে পিঠ দিয়ে বসতে। সানভি প্রশ্ন নিয়ে ওইদিকে ঘুরে বসলো তারপরই চোখের সামনে একটা রিং সহ চেইন দেখতে পেলো আর চোখের পলকেই তা ওর গলায় পরিয়ে দিলো নির্ভান।

– ভেবেছিলাম কিছুদিন পর দিবো কিন্তু তুমি যা শুরু করলে আমি চান্স নিতে চাইনা আগেই নিজের বুকিং দিয়ে রাখলাম।
সানভির ঘুরে ওর দিকে তাকালো চোখে পানি।

– ওই দামী পানি গুলো জমিয়ে রাখো পরে কাজে লাগবে। মানে যখন এই রিং টা লকেট হিসেবে নয় তোমার হাতে সোভা পাবে তখন কাদতে পারো।।।
বলেই চোখের পানি গুলো মুছে দিলো।।।।
.
.
.
চলবে।