অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-৩৭+৩৮

0
818

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৭
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
ভেবেছিলাম কিছুদিন পর দিবো কিন্তু তুমি যা শুরু করলে আমি চান্স নিতে চাইনা আগেই নিজের বুকিং দিয়ে রাখলাম।
সানভির ঘুরে ওর দিকে তাকালো চোখে পানি।

– ওই দামী পানি গুলো জমিয়ে রাখো পরে কাজে লাগবে। মানে যখন এই রিং টা লকেট হিসেবে নয় তোমার হাতে সোভা পাবে তখন কাদতে পারো।।।
বলেই চোখের পানি গুলো মুছে দিলো
.
নিজের রুমে আসার পর সানভির মনে হলো ওর ও নির্ভান কে কিছু গিফট করা উচিৎ। কিন্তু কি করবে তা ই ভেবে পাচ্ছে না অনেক ভাবার পর ঠিক করলো কালকে শপিংমল এ যেয়ে চুজ করবে। কিন্তু তবুও রাতে বারবার কি দেয়া যায় তা ই মাথায় চলে আসছিলো। অনেক সব যল্পনা কল্পনা শেষে ঘুম এলো তার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠতে ও লেইট হয়ে গেলো যার ফল হিসেবে নির্ভান নিজেই এসেছে ওকে উঠাতে। সাথে এনেছে কফি আর ওর সব রোমান্টিকতা।

– সানভি… মাই সানভি….

ঘুমের ঘোরেই বলছে,,,,, এই ইলা যা তো ঘুমাতে দে। বলেই আবার ঘুমের দেশে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু পরে নির্ভান ডাকছে এটা বুঝতে পেরেই তারাতারি উঠে বসলো,,,, আ আপনি এখানে?

– তোমাকে গুড মর্নিং কফি নিয়ে এসেছি।

– কিন্তু আন্টি কি বলবে?

– মা! মা কি বলবে? মা কে তো বললাম তোমার ভবিষ্যতে ছেলের বউয়ের জন্য কফি নিয়ে যাচ্ছি।

– আহ.. মি. কে।

– তুমি জানোই যে মা কে বললে পাপা কে বললে তারা ও খুশি হবেন।

– তবুও আমি আরেকটু সময় নিতে চাই।

– কেনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না?

– না মি.কে।

– কিহ পারছো না???

– না না আমি তা বলছি না। বলছি যে সেটা না আমি বিশ্বাস করি আপনাকে কিন্তু আপনি সুস্থ হয়ে নিন তারপর নাহয় জানাই।

– উফফ আর কতো সুস্থ হবো গান ও গাইতে দাও না সত্যি কথা ও বলতে দাও না।

নির্ভানের কথা শুনতে শুনতে সানভি কফি টা নিয়ে মুখে দিতে নিলেই নির্ভান থামিয়ে দিয়ে বললো,,,, এটা ঠান্ডা হয়ে গেছে এটা বাদ দাও।

– এতো তারাতারি ঠান্ডা হয়ে গেলো?

– হ্যাঁ হবেই তো আমি তো অনেকক্ষণ হয়েছে এসেছি কিন্তু তোমার ঘুমন্ত চেহারা দেখে আর উঠাতে পারিনি। খুব ভভয়ংকর লাগছিলো।

– কিহ? ভয়ংকর?? বলেই আলমারির সাথে থাকা আয়নায় তাকিয়ে দেখে। সানভির এমন রিয়েকশনে নির্ভান এর খুব হাসি পায় তারপর আয়নায় তাকিয়ে থাকা সানভির কানের কাছে গিয়ে বললো

– ভয়ংকর সুন্দর লাগছিলো এখন ও লাগছে। জানো তখন কি ভাবছিলাম?
নির্ভানের এই প্রশ্নে সানভি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নির্ভানের দিকে তাকালো।

– ভাবছিলাম সেই সময় টা কখন আসবে যখন প্রতি টা সকাল তোমার সাথে হবে। ঘুমন্ত সান আমার পাশে থাকবে আমি চোখ খুলেই তোমাকে দেখবো।
কথা গুলো সানভির কাছে সুরুসুরির মতো লাগছিলো কিন্তু নির্ভান তখনই সরে উঠে দাড়ালো।।
– তোমার এরকম চাহনি তে তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছা টা আরো তীব্র হয়ে যায়। সান এভাবে তাকালে আই কান্ট কন্ট্রোল। তাই আমার এখন চলে যাওয়া টাই ভালো।
এটা বলেই নির্ভান বের হয়ে চলে গেলো। এদিকে সানভি ও নিরবে নির্ভানের বলা কথা গুলো ভাবতে লাগলো ইদানীং ওর কাজই এটা নির্ভান কে নিয়ে ভাবা।
.
সানভি বাহিরে থেকে ফিরে আসছে সকালের নাস্তা শেষে নির্ভান আর ওর মা কে বলে একটু কাজ আছে বলে বাহিরে গিয়েছিলো। একটা রিং চুজ করেছে ওইটা তে নির্ভান ওকে যেই নামে বেশি ডাকে তাই লিখিয়েছে ডিজাইন সহ দিয়ে এসেছে কাস্টমাইজ করে ডেলিভারি পেতে দুই থেকে তিন দিন লাগবে। তারাতারি পেলে ভালো হতো এটা ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে ব্যাগ রাখতেই পেছন থেকে নির্ভানের কথায় চমকে বিছানায় বসে পরলো নির্ভান ওর বরাবরই একটা চেয়ারে বসে আছে।

– কি ম্যাডাম কার খেয়ালে এতো হারিয়ে আছো যে আমাকে দেখছো না তোমার মি.কে কে দেখছো না??

– না দেখেছি তো। ( ও তো আসলে গিফট এর খেয়ালে থাকায় নির্ভানকে খেয়াল করেনি।)

– তার মানে তুমি আমাকে ইগনোর করছো? এখনই এমন করবে ভালো তো।

– না তো আসল একটা জিনিস নিয়ে ভাবছিলাম।

– কি সেটা? কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস।

– তেমন কিছুই না। বলেই উঠে গিয়ে নির্ভানের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো।

– ঠিকাছে মানলাম তোমার কথা। আচ্ছা এখন শুনো না।

– হ্যাঁ বলেন।

– চলো না আজকে রাতে বাহিরে ডিনারে যাই।

– বাহিরে ডিনার ঠিকাছে কিন্তু দুইটা প্রবলেম এক বাসায় কি বলবো আর দুই এটাই মেইন প্রবলেম আপনি এখনো বাহিরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত না।

নির্ভানের মুখ টা বাচ্চাদের মতো ফোপা হয়ে আছে। এটা দেখে সানভির খুব হাসি পাচ্ছিলো

– আপনি আমার সাথে ডিনার করবেন নাকি বাহিরের খাবার খাবেন?

– তোমার সাথে ডিনার এটা তো আমরা রোজ ই করি।

– একা একা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা বুঝো।

– এখন দুইজন একা কিভাবে?

– হ্যাঁ সেজন্যই বাহিরে যেয়ে ডিনার করতে চাই।,,,হ্যাঁ মা পাপাকে একজন প্রডিউসার এর সাথে দেখা করার কথা বলে বের হবো তাহলে কোনো প্রবলেম ই হবে না।

– প্রডিউসার এর কথা! (এটা কিভাবে সম্ভব!)

– হ্যাঁ আর এটা করবে তুমি।

– আমি মানে না না। এই প্লান ই তো ঠিক না আবার আংকেল আন্টি কে আমি মিথ্যা বলবো অসম্ভব।

– সান।

– না মি.কে।

– ঠিকাছে তাহলে সব ক্যান্সাল। বলেই উঠে চলে গেলো আর সানভি ডাক দিলেও শুনলো না।

নির্ভান রাগ করেছে বুঝতে পেরে সানভি ওকে কি করে খুশি করবে তা ভাবতে থাকলো এই সবই ওর জন্য নতুন তবুও অনেক ভাবতে ভাবতে একটা বুদ্ধি পেলো এখন তো রাতেই উনার মেজাজ ঠান্ডা করবে ও।
.
সন্ধ্যার দিকে আন্টির সাথে কথা বলছিলো আর টিভি দেখছিলো তখনই হটাৎ ওর ফোন এ কার যেনো কল এলো, হ্যাঁ হ্যাঁ চাচি আমি এক্ষনি আসছি,, বলেই কল কেটে নির্ভানের মা কে বললো

– আন্টি আমি যে বাসায় থাকি সেই বাড়িওয়ালা চাচী কল করেছেন তার নাকি কি জরুরী কথা আছে এখনি যেতে হবে।

– এ সময়!

– হ্যাঁ।

– ঠিকাছে যাও পৌছে কল দিয়ো।

– ঠিকাছে আন্টি। বলেই উঠে রুম থেকে পার্স নিয়ে বের হয়ে চলে গেলো। আসলে কেউ ই কল করেনি ও ই এলার্ম সেট করে রেখেছিলো এই সময়ের যাতে আন্টির সামনে এই কথা বলে বের হয়ে আসতে পারে। এখন ও কিছু কেনাকাটা করে বাসায় যাবে সব প্রিপারেশন করে তারপর রান্না শুরু করবে যেসব ভেজিটেবলে নির্ভানের কোনো প্রবলেম হবে না সেসব দিয়েই চাওমিন রান্না করবে আর সাথে চিকেন ফ্রাই করবে আর একটা হোম মেড জুস করবে পরে তা সব টিফিন বক্সে করে বাসায় নিয়ে গিয়ে নির্ভান কে একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার সারপ্রাইজ দিবে।
.
যেই ভাবা সেই কাজ কিন্তু তার আগে বাসায় এসেই আগে আন্টি কে কল করে জানালো যে ও পৌছে গেছে আর চিন্তা করতে না ও এসে পরবে। তারপরই সব ঠিকঠাক মতো রান্না করে ফয়েল পেপার দিয়ে প্যাক করে টিফিন বক্সে নিয়ে নির্ভানের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলো।
.
নির্ভান ওর রুমেই শুয়ে ছিলো মন খারাপ হয়তো ডিনার করছে না ওরা তাই। আবার চিন্তা ও করছে সানভি আসছে না কেনো এখনো রাগ করেছে তাই কল করতে পারছে না কিন্তু মায়ের কাছে অনেকক্ষন আগে শুনেছে ও ওর বাসায় ই আছে আসতে একটু দেরি হবে কারণ বাড়িওয়ালা চাচী নাকি রাতে খেয়ে আসার জন্য বসিয়ে রেখেছেন।

– হাহ!! করো চাচীর সাথেই ডিনার করো।
বলেই শোয়া থেকে উঠে বসলো তখনই ওর ফোন বেজে উঠতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখে সানভি কল করছে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ও কল টা পিক করলো না। কল কেটে যেতেই সানভি আবার কল করলো এবার ও পিক করতে চাইছিলো না রাগ দেখানোর জন্য তবুও ভাবলো কোনো সমস্যা হলো না তো তাই পিক করলো

– হ্যাঁ বলো।

– মি.কে একটু কষ্ট করে আমি যে রুমে থাকছি তাতে গিয়ে দেখবেন যে আলমারির ফার্স্ট ড্রয়ারে আমার ব্যাংক এর চেকবুক টা আছে কি না! আমি যেখানে থাকি সে রুমে কোথাও খুজে পাচ্ছি না একটু দেখুন না প্লিজ।

– আমাকে দিয়ে কা…

– প্লিজ প্লিজ একটু দেখুন।

– হুম। বলেই কল কেটে নিজের রুম থেকে সানভির রুমে গিয়ে গেইট খুলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কারণ পুরো রুমে ছোট ছোট মোম জ্বলছে। এটা সানভির কাজ বুঝতে পেরে হেসে ভেতরে ঢুকে আর তারপরই পেছনে থেকে সানভি রুমে ঢুকে নিরবে গেইট লাগিয়ে দিয়ে পেছন থেকে ওকে জরিয়ে ধরে বলে

– সারপ্রাইজ!!!
.
.
.
চলবে।

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৮
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
এটা সানভির কাজ বুঝতে পেরে হেসে ভেতরে ঢুকে আর তারপরই পেছনে থেকে সানভি রুমে ঢুকে নিরবে গেইট লাগিয়ে দিয়ে পেছন থেকে ওকে জরিয়ে ধরে বলে

– সারপ্রাইজ!!!
.
– সারপ্রাইজ!!! এখন হ্যাপি??

– রাগ করলে যদি এভাবে সারপ্রাইজ দাও তাহলে তো প্রতিদিন ই রাগ করবো।

– প্রতিদিন এমন রাগ ভাঙাবো না আমি। এখন আসুন সব নিভে যাওয়ার আগে এবং আন্টি আংকেল কিছু বুঝতে পারার আগে ডিনার সেরে নেই।
.
চাওমিন চিকেন ফ্রাই আর আর জুসের বোতল দেখে নির্ভান বলে

– এসব তো রেস্টুরেন্টে ও খেতে পারতাম!

– বাট সেটা তো আমার হাতে রান্না করা হতো না।।

– এগুলো তুমি রান্না করেছো??

– হুম।

– আগে বলবানা! বলেই তারাতারি নিয়ে খাওয়া শুরু করতে নিচ্ছিলো কিন্তু থেমে গিয়ে নিজেই সানভি কে সার্ভ করে দিলো সানভি দেখছে ওকে দুইজনের প্লেট নিয়ে একসাথে বরাবর বসে খাবার খেতে খেতে মোমেন্ট টা এনজয় করলো। খাওয়া শেষে নির্ভান তো ওর খাবারের প্রশংসা করে থামে না

– এতো মজার রান্না করতে পারো আর আমাকে আজকে জানালে! এটা ঠিক না।

সানভি শুধু একটু মুচকি হাসি দিলো,

– যাক এখন থেকে তো সামনে সারা জীবন ই পরে আছে। বলেই উঠে গিয়ে নিজের ফোন থেকে একটা রোমান্টিক গান ছেড়ে ফোন টা খাটে রেখে সানভির দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত এগিয়ে দিলো সানভি ও সাদরে ওই হাত ধরে দাড়িয়ে ওর সাথে ডান্স করার জন্য প্রস্তুত।
.
সময় টা ভালোই কাটলো একটা গানে ডান্স করে বসে আবার কিছুক্ষন কথা বললো আর যার মধ্যে নির্ভান সানভির দিকে তাকিয়েই সময় টা কাটিয়েছে আর এর মধ্যে সানভি ওর ছোট কালের বিভিন্ন ঘটনা বলেছে নির্ভান ও ওকে দেখতে দেখতে গল্প গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। তারপর বাবা মা এর নজরে আসার আগেই নিজেদের এই রোমান্টিক ডিনার শেষ করলো যদিও যেতে ইচ্ছে করছিলো না নির্ভানের তবুও যেতে হলো। কিন্তু তবুও মেসেজে কথা বলেই যাচ্ছে এর মধ্যেই হটাৎ করেই ম্যাক্স আসলো নির্ভানের সাথে দেখা করতে হাই হ্যালোর পর ম্যাক্স বললো

– এই নির্ভান তুই বাসায় থেকে নিশ্চয়ই বোর হচ্ছিস চল একটু বাহিরে ঘুরে আসি।
কিন্তু সানভির সাথে মেসেজে ও এতোই ব্যাস্ত ছিলো যে ওর কথায় কোনো খেয়াল ই করলো না তাই ম্যাক্স হুট করেই ওর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিলো আর ব্যাস খুলে গেলো সব ওর চোখের সামনে।

– নির্ভান! কার সাথে কথা বলছিস তুই?

…….

– কিছু তো বল।

– ক ক কি…???

– সাকসেস?? সাকসেস ইন লাভ?

– ইয়েস।

– সেলিব্রেট তো করতেই হবে। সেলিব্রেট সেলিব্রিট…

– আরে আরে আজ না। যেদিন ওকে সবার সামনে প্রপোজ করবো আমি সেদিনই সবাইকে পার্টি দিবো।

– নাহ আমি আগে পার্টি চাই। আর যাই হোক আমি তোকে সাহায্য করেছি তোর সানভির প্রতি থাকা এই ফিলিংস টা বুঝতে। আর তুই অসুস্থ দেখে সানভি যেনো এই বাসায় থাকে এটাও আমিই সাজেস্ট করেছিলাম আমি হিউজ একটা পার্ট প্লে করেছি তোর লাভ লাইফে।

– এটা তো সত্যি। তার জন্য তোকে যতো থ্যাংক ইউ না দেই ততোই ভালো।

– চল আমার বাসায় আয় স্পেশাল কিছু হয়ে যাক।

– হবে তো। আজকে না মাত্রই রোমান্টিক ডিনার সেরে আসলাম আজকে ওইসব এর মুড নেই।

– বাহিরে গিয়েছিলি??

– নাহ বাসায় ই ওর রুমে সব আয়োজন করেছে ও নিজেই। তারপর বললো সারপ্রাইজ এর কথা আর কিভাবে সানভি কে আপন করতে পেরেছিলো তা ও জানালো।
.
এদিকে সানভি ও ইলার সাথে কথা বলছে ও এখনো জানাতে পারেনি ইলাকে ওর আর নির্ভান এর কথা কারণ এই কয়দিন ইলা ব্যাস্ত ছিলো আর ও সামনাসামনি বলতে চায়। ওর নিজের জন্য ও ব্যাপার টা লুকিয়ে রাখা কঠিন তবুও সামলে নিচ্ছে নিজেকে আর কিছুদিন ব্যাস।
.
পরেরদিন সকালে সানভির ফোনে একটা মেসেজ আসে সেটাতে ওর গিফট টা কমপ্লিট হয়েছে তার কনফার্মেশন এসেছে তাই ও বের হয়েছে গিফট টা পিক করতে। গিফট টা হাতে পেয়ে ভালো করে দেখে নিয়ে সুন্দর করে প্যাক করিয়ে নিয়ে এসেছে নির্ভান কে আবার আরেকটা সারপ্রাইজ দিবে ওর খুশি টা দেখার মতো হবে। সানভির নিজের কাছেই ভালো লাগছে ওর জন্য নির্ভান গান থেকে এখন দূরেই থাকে গান গাইতে না পারা টা ওকে ভাবায় না। একদিন সময় করে ওকে সত্যি টা বলে দিবে আংকেল আন্টি ও এটায় চাচ্ছেন। এভাবে লুকিয়ে আর কতো প্রায় এক মাস তো পার হয়েই গেছে এবং নির্ভান ও এখন সুস্থ আর ওর জন্য এখন ওর তিন তিন টা ভালোবাসার মানুষ তো আছেই। কথাটা ভাবতেই একটা শিহরণ ছড়িয়ে গেলো সানভির পুরো শরিরে। ভাবতেও অবাক লাগে ও এখন নির্ভানের সাথে ও কতোটা খুশি থাকে। নির্ভানের জন্য মনের যে দরজা টা বন্ধ রেখেছিলো তা খুলে দেয়ায় এখন ও ভালোই আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে নির্ভানের বাসায় ফিরে তো এলো কিন্তু নির্ভানের কোনো দেখা পেলো না আন্টির কাছে শুনলো ও নাকি কি কাজে হটাৎই বাহিরে গিয়েছে।

– আমি বললাম তুমি আসলে যেতে কিন্তু শুনলো না বললো একাই পারবে। আর তুমি তো জানোই ওকে থামানো যায় না।

– ইটস ওকে আন্টি এখন তো তিনি সুস্থই আছেন।

– হ্যাঁ। আচ্ছা সন্ধ্যার দিকে আমি আর তোমার আংকেল একটু বাহিরে যাবো রাতে আসতে একটু লেট হবে। তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো?

– না আন্টি সমস্যা নেই।

– ঠিকাছে। বাহিরে থেকে এসেছো একটু রেস্ট নাও।

– নাহ আন্টি আপনার সাথে থাকি অনেকদিন আপনার সাথে টাইম স্পেন্ড করা হয়না ঠিক মতো।

– ঠিক বলেছো।
সানভি হেসে মিসেস খন্দকার এর রান্নায় হেল্প করতে লাগলো। কাজ আর গল্প শেষে ফিরে এসে রুমে আসতেই নির্ভান কে কল করলো কিন্তু কল টা পিক করলো না নির্ভান। মন খারাপ হয়ে গেলো সানভির কিন্তু তখনই হটাৎ ওর মন নির্ভান ওর জন্য কোনো সারপ্রাইজ প্লান করছে না তো?? মনে মনেই আরো খুশি হয়ে গেলো সানভি অপেক্ষা করতে লাগলো নির্ভানের কিন্তু সারদিন গড়িয়ে সন্ধ্যা ও প্রায় শেষ তার কোনো খবর নেই। নির্ভানের মা ও বাবা বাহিরে গিয়েছেন পুরো বাসায় এখন ওদের কয়েকজন কাজের লোক আছেন তারাও চলে যাবেন কিছুক্ষণ এর মধ্যে নির্ভান এখনো আসলো না। এটা কিছু হলো!!!
.
অসহায় সানভি নির্ভানের অপেক্ষায় গেইট এর সামনেই একটা চেয়ারে বসে আছে নির্ভান আসলেই গেইট খুলবে। কারণ পুরো বাড়ি তে ও এখন পুরো একা। অনেকক্ষন ধরে বসে থাকায় পানি খেতে কিচেনে যেতেই গেইটের সামনে শব্দ পেয়ে দৌড়ে এসে দেখে নির্ভান গেইট ওর কাছে থাকা চাবি দিয়ে খুলে ওর রুমে চলে যাচ্ছে পেছনে থেকে সানভি ডাক দিলেও কোনো সাড়া দিলো না। তাই ভাবলো হয় সারপ্রাইজ এর জন্য এমন করছে নাহয় একটু ক্লান্ত তাই পানি আর ওর আনা গিফট টা নিয়ে নির্ভানের রুমে গেলো আর রুমে নক না করেই ঢুকলো দেখে নির্ভান ওইদিকে ফিরে ওর পরনে জ্যাকেট খুলছে।

– খুব ক্লান্ত লাগছে?? সারাদিন কোথায় ছিলেন?
কিন্তু নির্ভান কোনো উত্তর দিলো না।

– আরে কিছু বলবেন ও না এতো ক্লান্ত! একটু হেল্প করবো ক্লান্তি দূর করতে? বলেই পানি টা রেখে ওর রিং টা হাতে নিয়ে গেলো নির্ভান কে হাগ করতে তখনই পরিয়ে দিবে ভেবেছিলো কিন্তু তখনই নির্ভান ঘুরে ওকে থামিয়ে দিলো হাত দিয়ে।

সানভি অবাক হয়ে গেলো,,,, মি.কে??
তারপর নির্ভান সানভির দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো,,,, নাও অনেকদিনের একটা আশা পূরণ করে দিলাম।

– কি? বলেই সানভি কাগজ টা হাতে নিয়ে খুলতে লাগলো। কিন্তু আর ও একটু অবাক হয়ে গেলো কাগজ টা দেখে,,,, বরখাস্ত পত্র?? আর এটা কি চেক! এটা দিয়ে কি করবো আমি?

– তোমাকে চাকরি থেকে আমি বরখাস্ত করছি। দুই মাস আগে নোটিস দেইনি বলে তোমাকে দুই মাসের টাকা চেক দিচ্ছি।

– কিন্তু মি.কে….

– আমি তোমাকে ফ্রি করে দিলাম সব কিছু থেকে। আসলে I am done with you. No more excitement left in between us.

– মি.কে।

– আরে যা বলছি তাই। তুমি তোমার পথে যেতে পারো মিস সান। আমি আর তোমাকে আমার পাশে থাকতে বলবো না। ইনফ্যাক্ট আই ডোন্ট নিড ইউ এনিমোর।
কথা টা শুনার সাথে সাথেই সানভির হাতে থাকা চেক আর কাগজ টা পরে গেলো। এক সেকেন্ড এর জন্য সানভি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কিন্তু তারপরই নির্ভান মজা করছে ভেবে বললো

– হে মি.কে অনেক মজা হয়েছে আমার এটা একদম ফানি লাগছে না। প্লিজ স্টপ।

– আমি মজা করছি না মিস সান। তুমি আমাকে ভালো করেই চেনো রাইট আমি আমার প্রিভিয়াস রিলেশন গুলো তে ও আমি এরকম টা ই করেছি তাই না। আমি মজা করছি আই এম ড্যাম সিরিয়াস মিস সান।

সানভির চোখ ছলছল করছে,,,, মি.কে আমি ও আপনার প্রিভিয়াস গার্লফ্রেন্ড দের একজন? You can’t just play with me.

– Yes I can and I did.

– আমি মানি না আমি বিলিভ করি না।

– এতে আমার কিছু যায় আসে না। Just take the dismissal letter, check and leave.

সানভি এবার তাকিয়ে রইলো নির্ভানের চোখে সেদিনের নির্ভান কে খুজছে ও যে ওইদিন ওকে জরিয়ে ধরে বলেছিলো ওকে ছাড়া ওর কিছুতেই চলবে না, তাকে খুজছে যে ওকে লকেট টা পরিয়ে নিজের করে নিয়েছিলো! যে কখনো ওর চোখে পানি আসতে দিবে না বলেছিলো! কাল রাতে যে ওর চোখে তাকিয়ে ওর বলা গল্প গুলো শুনছিলো, যার সাথে ও এই কয়দিন ওর জীবনের সবচেয়ে ভালো মুহুর্ত গুলো কাটিয়েছে তাকে ও ওই চোখ দুটো তে কোনো মতেই খুজে পাচ্ছে না। চোখের পানিতে সব ঝাপসা দেখছে ও

– অনেক মজা হয়েছে নির্ভান আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারবো না এটা।

– লাস্ট টাইম বলছি আমি মজা করছি না। তুমি খুব বোরিং ইউ আর রিয়েলি নট মাই টাইপ মিস সান।

এবার বাস্তবতা টা সানভি বুঝতে পেলো অনেক টা রেগে গেলো এবার

– যখন আমি বলেছিলাম যে আই এম নট ইউর টাইপ তখন এসব মনে ছিলো না?? যখন আমি বারবার দূরে সরে যাচ্ছিলাম আর আপনি আমাকে থামিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার তখন এটা মনে ছিলো না?? হয়তো এটা আমারই ভুল যে আমি আবার বিশ্বাস করেছি। আমি আবার একজন ভুল মানুষ কে বিশ্বাস করেছি।

– হয়তো।

– আমি ই হয়তো আপনাকে চিনতে ভুল করে ফেলছি। হাহ,,,,,বলেই হাতে লুকিয়ে রাখা রিং টা বের করে বললো,,,, Again betrayed. বলেই রিং টা নির্ভানের দিকে ছুড়ে দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো।

– মিস সান। শুনেই দাড়িয়ে গেলো সানভি হয়তো কিছু আশা ছিলো।

– লেটার এন্ড চেক তো নিয়ে যাও।

কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলো তাই নির্ভান আবার বললো,,,, লাস্ট কাজ Please block yourself from my everything goodbye.
সানভি বের হতেই পেছন থেকে জোরে গেইট লাগার শব্দ পেলো।।।
.
.
.
চলবে।।