অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-৩৯+৪০

0
834

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৩৯
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
মিস সান। নির্ভানের ডাক শুনেই দাড়িয়ে গেলো সানভি হয়তো কিছু আশা ছিলো।

– লেটার এন্ড চেক তো নিয়ে যাও।

কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলো তাই নির্ভান আবার বললো,,,, লাস্ট কাজ Please block yourself from my everything goodbye.
সানভি বের হতেই পেছন থেকে জোরে গেইট লাগার শব্দ পেলো।।।
.
সানভি রুমে গিয়ে সাথে সাথেই ফিরে এলো আবার তখন নির্ভান ওর রুমেই বসে ছিলো সেই চিঠি আর চেক ওইভাবেই পরে আছে সানভি ওইসব উপেক্ষা করেই নির্ভানের সামনে গিয়ে বললো

– মি.কে অনেক হয়েছে আপনি মজা করছেন তাই না! শুধু আমাকে আপনি আগে যেই কষ্ট টা পেয়েছেন তা ই বুঝাতে চাইছেন তাই না? আমি বুঝতে পেরেছি আপনার কষ্ট আমিও ভালোবাসি আপনাকে অনেক হয়েছে। বলেই নির্ভান এর দুই গালে হাত দিয়ে বললো,,,, ধরা পরে গেছেন তাই না??
সানভির এই কথায় নির্ভান হেসে দিলো আর সাথে সানভি ও হাসতে লাগলো কিন্তু তখনই নির্ভান ওর হাত দিয়ে খুব শক্ত করে সানভির হাত গুলো ধরে ওর গাল থেকে সরিয়ে দিলো।

– আমি মজা করছি না। আর এবার সত্যি বলছি আমি মজা করছি না এবং আমাদের মধ্যে যা ছিলো সব শেষ। So get out of my room Ms. Sun I need my privacy.,,,, নির্ভানের ফোন বেজে উঠলো তখনই তাই ও ফোন হাতে নিয়ে সানভিকে গেইট দেখিয়ে দিয়ে কল টা রিসিভ করলো। সানভি রুম থেকে বের হয়ে গেলো আর নির্ভান ফোনে বলছে

– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি খুব শীঘ্রই আপনার সাথে রেকর্ডিং এ যোগ দিবো। আপনার সাথে গান গাওয়া ইটস লাইক এ ড্রিম।

……

– ওকে থ্যাংক ইউ। সি ইউ সুন।

রুমে এসেই সানভি তারাতারি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো চোখের পানি থামাতেই পারছেনা। ভালোই হয়েছে নির্ভানের মা বাবা বাসায় নেই নাহলে কি বলতো ও উনাদের ওর কান্না কিভাবে লুকাতো! তাই যতো তারাতারি সম্ভব বের হয়ে গেলো। দেখে নির্ভান হল রুমে বসে আছে ওর সামনে দিয়েই যেতে হবে সানভি কে এখন যদিও সম্ভব না তবুও নিজের কান্না মুছে এগিয়ে গেলো

– এখন তো রাত কাল সকালে ও যেতে পারো।
সানভি কিছু বললো না ও ওর মতো হেটেই যাচ্ছে গেইটের বাহিরে এসে পেছনে ফিরে দেখে নির্ভান ও ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তাই যেতে যেতে বলে গেলো

– রাত!! কাল রাত পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো যে আমাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন বুন ছিলো সেই আজ আমাকে এভাবে বের করে দিচ্ছেন যেমন চায়ের থেকে মানুষ মাছি বের করে ফেলে দেয়।
বের হয়ে আসলো সেখান থেকে বিশ্বাস করতে পারছে না কি ভুল হয়ে গেলো ওর যে নির্ভান এমন ব্যবহার করছে!! নাকি এই কদিন ওকে শুধু নিজের টাইম পাস হিসেবে ব্যবহার করেছিলো!!
.
বাসায় ফিরে এসেছে সানভি চারিদিকে অন্ধকার মনে হচ্ছে ওর জীবনেও এমন ভাবতে পারেনি। বাতি না জালিয়ে ই বসে আছে আজ থেকে আবার এই অন্ধকারেই হারিয়ে যাবে। এখন কি করবে যেই কারণে প্রথমে নিজের মন টা খুলতে চায়নি তাই হলো নির্ভান কি আসলেই ওকে ঠকালো নাকি অন্য কোনো কারণ। তাই শেষ চেষ্টা করতেই ভাবলো কালকে ম্যাক্স এর অফিসে ই যাবে ও যদি কিছু জেনে থাকে।
.
সকালে চোখ খুলতেই উঠে তারাতারি রেডি হয়ে ম্যাক্স এর অফিসে যাওয়ার জন্য বের হলো কিন্তু ম্যাক্স এর সাথে দেখা করেও কোনো লাভ হলো না।

– কি হবে নির্ভানের? আমার সাথে তো ওর কালকে কোনো কথা হয়নি।

– কথা হয়নি?

– নাহ কেনো কিছু হয়েছে?

– না তিনি একটু, না অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছেন। কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছেন।

– আরে ভালোবাসায় এমন একটু আধটু হয়। মানুষ একটু হয়েই যায়।

– চেঞ্জ হয়ে যায়? তাই বলে এক রাতে এতোই চেঞ্জ হয়ে যাবে যে এক মুহুর্তেই সব শেষ করে দিলেন?

– কি??

– বের হয়ে যেতে বলেছেন আমাকে তার লাইফ থেকে। বলেই কান্না করে দিলো

– আরে সানভি প্লিজ কান্না করো না কি বলছো এসব ওইদিন ও তো কতো খুশি ছিলো ও। কতো উৎসাহ নিয়ে ও তোমাদের রিলেশন এর কথা বলছিলো ও ব্রেকাপ কেন করবে??
কিছুক্ষন ভেবে আবার বললো,,,, তুমি কি কিছু বলেছিলো ওকে?

– নাহ আমি তো কিছুই বলিনি এমন কি কালকে উনি সারাদিন বাসায় ছিলেন না রাতে ফিরে হটাৎ…. বলেই কাল কি কি হয়েছিলো বললো সানভি।
সব শুনে ম্যাক্স ও বুঝতে পারলো না আসলে কি হয়েছে নির্ভান এর কিন্তু এইটুকু আশ্বাস দিলো যে ও যদি কিছু জানতে পারে অবশ্যই জানাবে আফটার অল ও ই তো নির্ভান কে সানভি কে যে ও ভালোবাসে বুঝতে সাহায্য করেছিলো। যেই ছেলে এই কয়দিন এতো পাগলামি করলো সে ই নাকি আজ এমন করছে!!
.
ম্যাক্স এর অফিস থেকে ফিরে আসতে সময় রাস্তায় যখন ছিলো তখনই মিসেস খন্দকার এর কল এলো

– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

– ওয়ালাইকুম আসসালাম। মা তুমি নাকি জব ছেড়ে দিয়েছো নির্ভান বললো।

এক মুহুর্তের জন্য ভেবে নিয়ে বললো ,,, হ্যাঁ আন্টি মি. কে তো ঠিক হয়ে গিয়েছেন আর আমার সেখানে কোনো কাজ ও নেই তাই জব ছেড়ে দিয়েছি।

– কিন্তু হটাৎ এভাবে না বলে কেনো? নির্ভান বললো তুমি নাকি কোথায় যাবে তাই চলে গিয়েছো।

– মি. কে বলেছে!! হ্যাঁ আন্টি যাওয়াটা জরুরী ছিলো তাই।

– যেখানেই যাও ভালো থেকো মা আর দেখা করো কিন্তু একদম ভুলে যেয়ো না।

– না আন্টি আপনাদের ভুলা সম্ভব না। আচ্ছা আন্টি রাখি আংকেল কে আমার সালাম দিয়েন।

– আচ্ছা রাখি ভালো থেকো।
সাথে সাথেই ফোন টা কেটে দিলো সানভি কারণ কান্না টা আর চেপে রাখতে পারছিলো না। মি.কে এতোটুকু বলার সাহস ও পায়নি যে সে নিজেই আমাকে জব থেকে বের করে দিয়েছে। আর নিজের জীবন থেকেও…..
বাসায় এসেই ইলা কে কল করে জানিয়েছি রাতে বাসায় আসতে। সারাদিন কিভাবে কাটিয়েছে ও ই জানে তাই রাতে ইলা আসার সাথে সাথেই ওকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো ইলা তো কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।

– আরে আরে কি হয়েছে তুই এভাবে কাদছিস কেনো??? কি হয়েছে??

– ইলা… ইলা… আর কিছুই বলছে না। তাই ইলা গেইট লাগিয়ে দিয়ে ওকে রুমে নিয়ে বসিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে বললো

– চুপ করে পানি টা পান করে নিয়ে বল কি হয়েছে।
সানভি পানি নিয়ে একটু খেয়ে রেখে দিয়ে আবার ইলা কে ধরে বলতে লাগলো
– আমি কি করবো এখন আমি আমি…. ইলা আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

– আরে কি হয়েছে বলবি তো। এমন চেচাচ্ছিস কেন আমি ভয় পাচ্ছি তো তুই বলবি কি হয়েছে!!!

ইলার ধমক খেয়ে কিছুক্ষন চুপ করে ফোপাঁতে ফোপাঁতে সব বললো ইলা কে।

– কি?? এতো কিছু হয়ে গেছে তুই আমাকে আজকে জানাচ্ছিস এসব??? আর নির্ভান হটাৎ এমন কেন করবে? এক রাতে এমন কি হয়ে গেলো যে পরেরদিন সব শেষ??

…….

– সানভি…. আচ্ছা তোর আর নির্ভানের মধ্যে কিছু…. মানে ওই রাতে??

– কি বলছিস এসব! এমন কিছুই হয়নি।

– তুই তো সব বলেছিস তবুও জিজ্ঞেস করলাম সিওর হলাম।

– ইলা আমার সাথে মি.কে এমন কেন করলো তাকে তো আমি প্রথমে ভালোবাসি বলিনি উনি ই আমাকে ইমোশনাল করে এতো পথ এগিয়ে এনে এখন মাঝ পথে ফেলে চলে কেন গেলেন??

– দেখ সানু আমি জানি এখন কার ছেলে রা তো এমনই ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে ফেলে পরে ফাদে ফেলে নিজেদের মতলব ফুরিয়ে এলে ছেড়ে দিতে দ্বিতীয় বার ভাবেও না। নির্ভান অবশ্যই এমন না ওর উপর এই বিশ্বাস তো আছে। কিন্তু কিছু তো একটা হয়েছে দেখ ম্যাক্স তোকে কিছু জানায় নাকি।
.
ওইদিনের পর থেকে প্রতিদিন ইলা সানভির পাশে থেকেছে সময় দিয়েছে তবুও ওর নিজেকে একা মনে হতে লাগলো। প্রায় প্রায় এক মাস চলে গেছে ও নির্ভানের বাসা ছেড়ে এসেছে নির্ভান কোনো রকম যোগাযোগ করেনি। ম্যাক্স ও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি কেনো করেছে সানভির সাথে এমন কারণ নির্ভান একটা নতুন এলবামে কাজ করার কথা বলায় ওর বাবা মা ওকে ওর গান গাইতে না পারার কথা টুকু জানিয়ে দিয়েছে আর এটা তে ও প্রথমে ও অনেক রাগ ক্ষোভ দেখিয়েছে নিজের ঘর থেকে বের হয়নি কারো সাথে কথা বলেনি। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ম্যাক্স আর ওর বাবা মা অনেক বুঝিয়ে স্বাভাবিক করতে পেরেছে। আর এর মাঝে আর ম্যাক্স ওর সামনে সানভির কথা তুলতে পারেনি আর না ই এর পরে।। সানভি কে এই সবই জানিয়েছে ম্যাক্স ও এই কয়দিন ওকে অনেক আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু তবুও কোনো ভবিষ্যত না দেখতে পেয়ে সানভি কে বলেছে নিজের লাইফ টা গুছিয়ে নিতে।
.
নির্ভান ও খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছে নিজের জীবন থেকে মনে হয় সব চলে গেছে। হয়তো গান এর মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ছেড়ে দিতে হয়েছে তাই এমন হয়ে গেছে আর সানভি কে তো নিজেই বের করে দিলো নিজের লাইফ থেকে।
ওর পাপার অনেক বলার পর ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও ওর পাপার বিজনেস এ সাহায্য করবে। ও তো ম্যানেজমেন্ট এর উপরই পড়াশোনা করেছে তাই খুব সহজেই ও কোম্পানি তে জয়েন করতে পারবে কিন্তু তার আগে আবার নিজেকে ঝালাই করে নিতে চায় তাই ও এখন কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর আন্ডার এ কাজ সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে। গান গাইতে না পারার কষ্ট থেকেও দূরে থাকতে সারাদিন কাজ করলেও রাতে বিভিন্ন পার্টি, একেক দিন একেক মেয়ের সাথে ডিনারে যাওয়া ইত্যাদি করে সময় কাটাচ্ছে। প্রতিদিন ওর রুম পরিষ্কার করতে সময় সিগারেটের প্যাকেট বের হয়ে আসে। এসব দেখে ওর মা পাপা অনেক না করার পরও ও কোনো কথাই মানেনি।

– মা পাপা প্লিজ আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। এভাবেই আমার লাইফ থেকে আমাকে না জানিয়ে গান গুলো কেড়ে নিয়েছো প্লিজ এইভাবে যেই শান্তি টুকু পাচ্ছি তা কেড়ে নিয়ো না।

– নির্ভান এটা কোনো প্রবলেম এর সমাধান না। কিন্তু আমরা তোমাকে না জানিয়ে যা করেছি তা তোমার জীবন বাচানোর উপায় ছিলো জেনে শুনে আমরা ওই ক্যান্সার টা কে বাড়তে দিতে পারতাম না।

– আমিও গান নেই জেনে ভালো থাকতে পারছি না সময় লাগবে কিন্তু আমি নিজেকে সামলে নিবো সময় দাও এখন আমি এসব ছাড়তে পারবো না।

– যেই অভ্যাস টা গড়ে তুলেছো তা অবশ্যই তুমি বললেই ছেড়ে দিতে পারবে না। একটাই উপদেশ দিতে পারি আমরা এখনো সময় আছে নির্ভান এসব ছেড়ে দাও।
মা বাবার সাথে কথা শেষ করে এসে রুম লক করে আবার একটা সিগারেট নিয়ে বসলো নির্ভান।
.
এদিকে সানভি আজ ও সারাদিন জব খুজে পার করলো কয়েকটা জব এর খোজ পেয়েছিলো কিন্তু কোনো কাজই হলো না। তার মধ্যে পড়াশোনা কমপ্লিট না হওয়াই সবচেয়ে বড় সমস্যা আর এখানে জব পাওয়া তো আর সহজ না।
ধীরে ধীরে যা সেইভ করা ছিলো সব খরচ হয়ে যাচ্ছে ইলা ওকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে ও না থাকলে কি যে হতো সানভি তা কল্পনা ও করতে চায়না।
.
.
.
চলবে।।।

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৪০
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
সানভি আজ ও সারাদিন জব খুজে পার করলো কয়েকটা জব এর খোজ পেয়েছিলো কিন্তু কোনো কাজই হলো না। তার মধ্যে পড়াশোনা কমপ্লিট না হওয়াই সবচেয়ে বড় সমস্যা আর এখানে জব পাওয়া তো আর সহজ না।
ধীরে ধীরে যা সেইভ করা ছিলো সব খরচ হয়ে যাচ্ছে ইলা ওকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে ও না থাকলে কি যে হতো সানভি তা কল্পনা ও করতে চায়না।
.
নির্ভান যে আর গান গাইবে না তা মিডিয়া তে জানাতেই চারিদিকে ছড়িয়ে পরে ক্যান্সার হয়েছে তাই যে গাইতে পারবে না তা জানায়নি গলায় ইনফেকশন বাড়তে বাড়তেই এমন হয়েছে তা জানানো হয়েছে। আর এই খবর ছড়িয়ে পরায় এখন টিভি তে ও মাঝে মাঝে নিউজ আসে আর সোশ্যাল মিডিয়া তো পুরো ওকে দিয়েই ভরা থাকে। আর এর পরই সানভির কাছে আসতে থাকে বিভিন্ন গায়ক আর গান পরিচালক ইত্যাদি তে সেক্রেটারি হিসেবে জয়েন করার অফার কিন্তু স্বভাবতই এদের কে না করে দেয় সানভি এইসবে আর জড়াতে চায় না।

আজকে ইলার সাথে বের হবে তাই রেডি হয়ে বের হচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই কলিং বেল বাজায় ভাবলো হয়তো ইলা এসেছে তাই না জিজ্ঞেস করেই খুলে বললো

– আমার জন্য অপেক্ষা করলেই তো হতো আমিই নামছিলাম।
কিন্তু ততক্ষণে খেয়াল করলো এটা ইলা না একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে মুখে মাস্ক পরা যেমন টা নির্ভান পরতো নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য পরে থাকে কিন্তু এই লোক টা নির্ভান না।

– আপনি আমাকে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন?

– আপনি কে??

– আহ কষ্ট পেলাম আমাকে চিনতে পারলেন না?

– কে আপনি তারাতারি বলুন আমার হাতে এতো সময় নেই।

লোক টা কিছু বললো না মুখে পরনে মাস্ক টা খুলেই হাসি দিয়ে বললো,,,, So good to see you again.

এ তো নির্ভানের সবচেয়ে বড় rival আসিম খান! ওইদিন পার্টি তে আজ আবার এখানেও! তবুও হাসি দিয়ে বললো

– আপনি এখানে আমার ঠিকানা কিভাবে পেলেন?

– আমাদের জন্য এসব কোনো ব্যাপার ই।

– হুম আসলেই কোনো কিছুই কোনো ব্যাপার না। তো এখানে হটাৎ কেনো?

– আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। May I come in??
সানভি অনিচ্ছা সত্বেও আসতে বললো।

– সিম্পল রুম টা একদম আপনার মতো।

– আমি একটু বাহিরে যাচ্ছিলাম তাই যা বলার একটু তারাতারি বললে আই থিংক ভালো হতো।

– জব তো আর নেই তো কোথায় যাচ্ছেন মিস সান! হটাৎ জব আর নির্ভানের লাইফ থেকে ছিটকে পরায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন মনে হয়?

– জি?

– আহ নির্ভানের গান গাইতে না পারার ব্যাপারে আমি দুঃখিত। শুনলাম এর জন্য আপনার জব ও নাকি ছেড়ে দিতে হয়েছে।

– জি ঠিক শুনেছেন কিন্তু আমি দিশেহারা হয়ে যাইনি।

– তাহলে তো ভালোই যাই হোক আমি জানি আপনি আর নির্ভান এর সেক্রেটারি না। আর এই সুযোগ টাই লুফে নিতে এসেছি। I have a great offer for you.

সানভি কিছু বলতেই নিচ্ছিলো আসিম আবার বলে উঠলেন

– আমার সেক্রেটারি হওয়ার সুযোগ দিতে চাই আপনাকে। বলতে গেলে আমি ই চাই আপনি আমার সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করুন। আপনার কাজের সুনাম তো সবসময়ই শুনে এসেছি এবার সুযোগ এসেছে তাই….

– থ্যাংকস বাট নো থ্যাংকস। আমি আর এইসবে জড়াতে চাই না। এখন থেকে সাধারণ মানুষ দের সাথে সাধারণ ভাবে কাজ করতে চাই। এর আগেও কয়েকজন এর কাছে থেকে অফার টা পেয়েছি কিন্তু অফার টার জন্য আমি মোটেও আগ্রহি না। আপনি আমার কথা ভেবেছেন তাই অনেক।

– আপনাকে এখনি অফার টা গ্রহন করতে হবে না। আপনি সময় নিতে পারেন।

– আমার সময়ের প্রয়োজন নেই।

– আবার ভেবে দেখুন।

– মি.আসিম আমি ভেবে দেখেছি। আমি আর এই টাইপের জব করতে চাইনা।

– ওহ ওকে। তাহলে আর কি করার তবুও আপনার ডিসিশন চেঞ্জ করলে জানাতে পারেন। তাহলে এখন আসি।

– জি অবশ্যই।

এইরকম রুড বিহেভ আসিম মোটেও আশা করেনি একটু রাগি ভাব নিয়ে বের হয়ে গেলো। ও এমন ইচ্ছে করেই করেছে কারণ ও জানে নির্ভান আসিম কে মোটেও পছন্দ করে না আর আসিম ও সানভি কে অবশ্যই সাহায্য করতে আসেনি। ও ঠিক করেছে কিনা ভাবতে ভাবতে তারাতারি বের হয়ে গেলো ইলা অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই।
.
ইলার সাথে দেখা করে ওকে জানালো আসিম এসে কি কি বললো।

– উনার হটাৎ এভাবে আসার মানে কি?

– সে যতো ভালো সাজতে চাইছে ততো ভালো সে না আমি জানি। মি.কে এর সাথে থেকে এটুকু তো বুঝেছি।
সব ভুলে নির্ভানের কথা বলেছিলো খেয়াল হতেই চুপ হয়ে গেলো। আর তাই ইলা ও কথা ঘুরিয়ে দিতেই বললো তারাতারি যেতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
.
নতুন বছরের নতুন দিন আজকে নির্ভান ও এখন ওর বাবার কোম্পানি তে ওর অফিসিয়ালি কাজ শুরু করেছে। আজকে অফিসের সবার সাথে ওর বাবা ওকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এভাবে তো সবাই ওকে চেনে কিন্তু আজকে আলাদা ভাবে কোম্পানির ওয়ার্কার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সবাই ওর গান না গাইতে পারার জন্য সান্তনা আর জীবনের নতুন অধ্যায় এর জন্য শুভকামনা জানালেন। পরিচয় শেষে রুমে এসে নিজেকে সামলাতে পারলো না সব কিছু অস্থির লাগছে এখন ওর মোটেও ভালো লাগছে না তাই তারাতারি সিগারেটের প্যাকেট বের করে আবার ডুবে গেলো সেই ধোয়ায়। কিসের এতো কষ্ট কার জন্য এতো কষ্ট কি ই বা হয়েছে তা ও ই জানে কাউকে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না ও নিজের ভেতরেই নিজের কষ্ট লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে।
.
সারাদিন এর কাজ শেষে বাসায় ফিরেছে প্রথম দিন হওয়ায় তেমন কোনো কাজ ছিলো না। বাসায় ফিরেই প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো আবার বের হবে কিন্তু তার আগে একটু সময় নিলো সব কিছু নিয়েছে কিনা তা চেক করে বের হতে নিলেই গেইট খোলার শব্দেই গেইটের দিকে তাকাতেই থমকে গেলো ওর চোখ দুটো কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলো কিছু বললো না তারপরই বলে উঠলো

– তুমি এখানে?

– কেমন আছেন মি.কে?

– অনেক ভালো। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?

– ভালো আছেন শুনে ভালোই লাগলো যদিও জিজ্ঞেস করেননি তবুও বলছি আমি ভালো নেই। কেনো নেই তা অবশ্য খুলে বলতে হবে না আপনি নিশ্চয়ই জানেন।

– না জানলেও জানার প্রয়োজন মনে করিনা।

– কেনো মনে করেন না? বলেই এগিয়ে এলো সানভি মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো নির্ভানের।

– কোনো কাজের জন্য আসলে তারাতারি বলো আমি বাহিরে যাচ্ছি।

– তা তো দেখেই বুঝতে পারছি। কতোটা বদলে গেছেন তাই না? চেহারার একি অবস্থা?
বলেই গালে হাত দিলো নির্ভান প্রথমে থামালো না পরে হাত সরাতে নিলেই সানভি নিজেই আগে হাত সরিয়ে নিলো।

– এমন কেন করেছেন? কি হয়েছে? এসব জিজ্ঞেস করতে আসিনি। বলতে এসেছি এখনো সময় আছে আমার কোনো দোষ থাকলে আমাকে বলুন কি সমস্যা হয়েছে শেয়ার করুন। এভাবে নিজের হেলথ নিয়ে হেলাফেলা করছেন কেনো?

– আমার লাইফ আমি বুঝে নিবো যা করার। তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।
বলেই সাইড হয়ে চলে যাচ্ছিলো। সানভি হাত ধরে বললো

– এভাবে কষ্ট দেয়া নেয়ার মানে কি??

– আমি কষ্ট নিচ্ছি না এতে কারো কষ্ট হলে এটা তাদের ব্যাপার আমার না।
এবার সানভি হাত ছেড়ে আবার ওর মুখোমুখি হয়ে ওর জ্যাকেট এর কলার ধরে বলতে লাগলো

– সমস্যা কি তোমার? তুমি ভালো নেই সে টা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। বলবে আমাকে কি হয়েছে কেনো এমন করছো আমি সইতে পারছি না আমি উত্তর চাই এই টুকু অধিকার তো আমার আছেই। নাকি আমাকে জানে মেরেই ছাড়বে। বলো তোমার কি হয়েছে কারণ দাও আমাকে আমি আর পারছি না। খুব জোরে কাদতে কাদতে বলছে সানভি তারপর নির্ভান এর বুকে মাথা রাখলো।,,,,,,তোমার কি সত্যি ই কিছু যায় আসেনা??? আর কতো চুপ থাকবে? বলো কিছু বলো।

– মিস সান ছাড়ো আমাকে তুমি লিমিট ক্রস করছো।

– ভালোবাসা কোনো লিমিট মানে না নির্ভান। এখন আর আমি তোমাকে মি.কে বলবো না তুমি আমার নির্ভান। কিছু একটা ভুল বুঝেছো তুমি তার জন্যই এমন করছো। অবশেষে আমার ভালোবাসা পেয়েও কেনো এমন হয়ে গেলে কি ভুল আমার?

– উফফ তুমি কি বুঝছো না আমি কি বলছি?? বলেই সানভি কে জোর করে ছারিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো এতেই নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে গেলো সানভি। নির্ভান ওকে উঠাতে গিয়েও উঠালো না। সানভি নিজেই উঠলো

– নির্ভান আজ আমি এখান থেকে চলে গেলে আর কখনো আর তোমার সামনে আসবো না আমাকে খুজলেও পাবে না। আজ চলে যেতে দিলে ভাববো তুমি আমাকে শুধু নিজের টাইম পাসের জন্য ব্যবহার করেছে।

– হ্যাঁ করেছি টাইম পাসের জন্য ব্যবহার তো কি?

– মিথ্যা বলছো সব মিথ্যে তাই না। ঠিকাছে সত্যি যাই হোক আমি আর তা জানতে চাইবো না। Goodbye Nirvan and thank you for ruining my life. বলেই চোখের পানি মুছে চলে গেলো। বাহিরে আসতেই নির্ভানের বাবা মা এর দিকে তাকিয়ে মাথা হেলিয়ে না করলো। আসলে তারাই ওকে আনিয়েছেন ম্যাক্স এর কাছে ওদের কথা শুনে ভেবেছিলেন সানভি কে আবার আনলে হয়তো জানতে পারবেন কি হয়েছে কিন্তু না ওরা কেউ ই জানতে পারলো না যে আসল কারণ কি। কিন্তু সানভি বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই ওর মায়ের চিৎকার শুনতে পেলো নির্ভান। ওর মা বলছে,,,,, সানভি….. কি হয়েছে তোমার সানভি!!!
.
.
.
চলবে।