অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0
1443

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ৪১( শেষ পর্ব)
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা
.
সানভির বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই ওর মায়ের চিৎকার শুনতে পেলো নির্ভান। ওর মা বলছে,,,,, সানভি….. কি হয়েছে তোমার সানভি!!!
.
সানভির কিছু হয়েছে এটা শুনেই নির্ভান আর নিজেকে থামাতে পারলো না তারাতারি বের হয়ে এসে দেখে সানভি মেইন গেইট এর সামনে পরে আছে কিন্তু আসে পাসে কেউ নেই। মা বাবা কে পেলো না তাই তারাতারি গিয়ে ওকে উঠিয়ে সোফায় এনে বসালো,,,,,সানভি… সানভি এই সানভি উঠছো না কেনো? কি হয়েছে? মা পাপা তোমরা কোথায়?? সানভি প্লিজ উঠো।
কোনো দিশা পাচ্ছিলো না নির্ভান কি করবে বুঝতে না পেরে ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার জন্য উঠছিলো তখনই সানভি একটু নরেচরে উঠলো

– সানভি কি হয়েছে তোমার?

– আআমি চলে যাচ্ছি অনেক দূরে। আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না তাই চচলে যাওয়া টাই সহজ।

– এই মেয়ে কি বলছো এসব!! কি করেছো তুমি নিজের সাথে??

– বায় বায় মি.কে।। বলেই নিজের হাত উঠিয়ে নির্ভানের গালে হাত দিতে নিলেই নির্ভান ওর হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলো

– আমি যেতে দিবো না। কি বলছো এসব কি করলে? আমাকে রেখে তুমি কোথাও যেতে পারো না। তু তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না। আমি যা করছিলাম তোমার ভালোর জন্যই করছিলাম এটা কি করলে তুমি? সানভি… আমি তোমাকে এখনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।।

– এখন আর স সময় ননেই। কি করেছিলেন আমার ভালোর জন্য মি. কে অন্তত আমার আমাকে এখন বলুন…

– এখন এসবের সময় নেই। বলেই সানভি কে কোলে তুলে নিয়ে বাহিরে গাড়ি তে নিয়ে যাচ্ছিলো তখনই সানভি নির্ভান কে ভালো করে জরিয়ে ধরে বললো

– সরি মি. কে। বাট আমার কিছু হয়নি কিন্তু আপনার কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে তা তো জানতে পারলাম।

– মা মানে কি বলছো?
সানভি নির্ভানের কোল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেলো।

– আমাকে ছাড়া চলবে না তো কেনো নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিচ্ছিলেন? কি কারণ এখন তো বলতেই হবে।
হতভম্ব হয়ে নির্ভান দাঁড়িয়ে আছে সানভি এতোক্ষন ওর কাছে থেকে সত্যি টা বের করার জন্য এটা করেছে বুঝতে পেরেছে ও।

– Sanvi that’s not fair.

– Everything is fair in love and war Mr.K. সরি আপনাকে এতো টেনশন দেয়ার জন্য এখন কারণ টা বলুন মি.কে।

– যেদিন আমি তোমাকে চলে যেতে বলেছিলাম ওইদিন রাইসার সাথে দেখা হয়েছিলো।।
“ওইদিন নির্ভান বের হয়েছিলো সানভির জন্য কি একটা সারপ্রাইজ রেডি করার জন্য তখনই রাইসা যেখানে থাকে সেই এলাকার সামনে গিয়েছিলো তাই রাইসার সাথে দেখা হয়ে যায় আর তখনই রাইসা ইনসিস্ট করে কথা বলার জন্য।

– তোমাকে সুস্থই দেখাচ্ছে আমি তো ভেবেছিলাম এখন থেকে অসুস্থই থাকবে।

– এভাবে বলছো! আমার জানা মতে আমার এলার্জি, ইনফেকশন এর প্রবলেম সবই তো তোমার জন্যই হয়েছিলো একটু ও গিলটি ফিল হচ্ছে না?

– গিলটি! আমি কেনো ফাইনালি তোমার সাথে যা হয়েছে সেটা আমার জন্য হয়নি। থ্যাংকস টু মি যে আমার ভুলের কারণে তোমার এতো বড় একটা সমস্যা ধরা পরেছে!! এটা তো আমাদের ধারণা থেকে ও বড় কিছু ছিলো ।

– বড় কিছু মানে?

– কেনো তুমি জানোনা!!

– কি?

– তোমার যে ক্যান্সার হয়েছে?

– হোয়াট??

– ওহ! তার মানে তুমি জানতে না? তোমার ক্যান্সার হয়েছে আপাতত তো সেটা বের করা হয়েছে কিন্তু নিশ্চয়ই এটা ফিরে আসবে এবং আরো বেশি প্রবলেম ক্রিয়েট করবে। এইজন্যই তো আর কখনো গান গাইতে পারবে না তুমি।।

শেষের কথা টা যেন ও নিতে পারলো না হটাৎ এভাবে এমন কিছু জানতে পারায় ঘাবড়ে গেলো। তারই মধ্যে আবার রাইসা আরো বললো

– শুধু শুধুই কি আমি তোমাকে বিয়ে না করার কথা বলেছি। তোমার আশেপাশের মানুষ দের জন্য তুমি বিপদজনক বুঝতেই তো পারছো যে তোমার পাশে থাকবে তাকে কষ্ট করতে হবে। আহ আমার লেট হয়ে যাচ্ছে এখন যেতে হবে। বলেই উঠে চলে গেলো নিজের কাজ করে।
.

– How could she do that!! রাইসা কে দেখে তো মনে হয়নি ও এমন হবে। আর আপনি ওর কথায় এসব বিশ্বাস করে নিলেন? এসব কিছুই মিথ্যে আপনার ক্যান্সার ফার্স্ট স্টেজ এ ছিলো যা ধরা পরায় শুরু তেই অপারেশন এর মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে আর এতে যা ক্ষতি হয়েছে তা হয়েছে আপনার গানের আর কিছুই না। মি.কে রাইসা ওইসব কেনো বলেছে আমি জানি না কিন্তু মিথ্যে ছিলো ওইসব। আপনার কিছু হয়নি।।

– সত্যিই আমার কিছু হয়নি! আমি সুস্থ আছি??

– হ্যাঁ মি.কে আপনি টোটালি ফিট এন্ড ফাইন আছেন। রাইসা মিথ্যা বলেছে সব।

তারপরই নির্ভানের বাবা মা আর ম্যাক্স বের হয়ে এলো নির্ভানের বাবা তো খুব রেগে আছেন যে তারা এমন মেয়ে কে বেছে নিয়েছিলেন নিজের ছেলের জন্য! তাদের তিন জন কে দেখেই নির্ভান সানভি কে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো

– পাপা মা ম্যাক্স তোমরা? তিনজনকে একসাথে দেখে তো নির্ভান অবাক কিন্তু সানভি তো জানেই তারা আশেপাশে আছেন।

– হ্যাঁ আমরা এসবই আমাদের কারণে হয়েছে নাহলে তো আজ দুইজন দুইদিকে থাকতে।,,, নির্ভানের বাবা এটা বলে সানভির কাছে গিয়ে দাড়ালেন,,,, Good choice my Son.

– পাপা মা তোমরা সব জানতে?
দুইজনই এই কথায় হাসলেন। তারপর ম্যাক্স বললো

– আমি জানিয়েছি। যখন দেখলাম তোদের পরিস্থিতি কোনো ভাবেই ঠিক হচ্ছে না তাই কোনো উপায় না পেয়ে তোদের কথা আংকেল আন্টি কে জানাতেই হলো। আর…

– আর তারপরই সানভির বান্ধবী ইলা কে সাথে নিয়ে ওর সাথে দেখা করলাম বললাম আরেকবার ট্রাই করে দেখতে আর এরপরই সবাই মিলে এই বুদ্ধি বের করে তোর পেটের কথা বের করলাম। অনেক বেশি বড় হয়ে গিয়েছিস কোনো কথা কারো কাছে থেকে শুনলেই হলো! সত্যতা যাচাই করবি না। (নির্ভানের পাপা)

– হ্যাঁ শুধু শুধু মেয়ে টা কেও কষ্ট দিলি আর নিজেও কষ্ট পেলি। আজ ভেবে দেখ যদি এই কথা না বলতি তাহলে কি হতো! এইজন্যই যার তার কথায় কিছু বিশ্বাস করে নিতে নেই কাছের মানুষ দের সাথে কথা শেয়ার করতে হবে। ( নির্ভানের মা)

– I am sorry I am so sorry to everyone.

– সরি আমাদের না সানভি কে বল ওকেই তুই বেশি কষ্ট দিয়েছিস আর নিজেও পেয়েছিস। (ম্যাক্স)

– আচ্ছা এখন যাই তোমরা একটু সময় নাও কথা বলো। তারপর আমরা কালকে তোমাদের সাথে তোমাদের ব্যাপারে কথা বলবো।
নির্ভানের পাপা কথা শেষ করে ওর মা কে নিয়ে চলে গেলেন ম্যাক্স ও নির্ভান আর সানভি কে থাম্বস আপ দেখিয়ে চলে গেলো। সবাই চলে গেলে নির্ভান সানভির হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে এলো। রুমে এসেই সাথে সাথে সানভি কে আবার জরিয়ে ধরলো

– আর কখনো হারাতে দিবো না তোমাকে অনেক বড় ভুলে করে ফেলেছি এর পরে থেকে সবসময় আগে সত্যি টা যাচাই করবো তারপরই বিশ্বাস করবো। এখন কথা টা ভাবতেই ভয় হচ্ছে যে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলছিলাম কি তুচ্ছ একটা ব্যাপারে। থ্যাংকস আমার হাত না ছেড়ে এই চেষ্টা গুলো করার জন্য তুমি জানোনা তোমাকে এসব কথা বলতে আমার কতো টা খারাপ লেগেছ। আর কখনো ছাড়বো না তোমাকে তুমি শুধুই আমার।
.
না জানি কতো দিনের কথা জমে ছিলো নির্ভানের রাত হয়ে যাচ্ছিলো তবুও বাসায় যেতে দিচ্ছিলো না সানভি কে তবুও অনেক বলে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে নির্ভান ই দিতে এসেছিলো।

কতোদিন পর শান্তিতে ঘুমিয়েছে সানভি নির্ভান দুইজনই এই কয়টা দিন যে কিভাবে কাটিয়েছে!! যাই হোক সকালে থেকেই সানভি সারা টা দিন খুব টেনশনে কাটিয়েছে কারণ নির্ভানের বাবা মা আজকে কথা বলবেন কাল রাতেই বলে দিয়েছেন সন্ধ্যায় ওদের বাসায় চলে যেতে।
নির্ভানের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সানভি ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে যদিও ওর বাবা মায়ের ব্যাপারে পজিটিভ তবুও ওর খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে। কিছুটা সময় নিয়ে অবশেষে ডোর বেল বাজালো আর তার সাথে সাথেই গেইট খুললেন নির্ভানের মা, ভেতরে আসতে বললেন তিনি। সোফায় বসে আছে সানভি সামনে নির্ভানের বাবা মা বসে আছে তাদেরকে দেখে অন্য দিনের মতো মনে হচ্ছে না গম্ভীর দেখাচ্ছে তাদের। আশেপাশে নির্ভান কেও দেখা যাচ্ছে না।

– তোমার থেকে এটা আশা করিনি সানভি। আমাদের পেছনে তোমাদের সম্পর্ক এতো এগিয়ে গেলো!! ( নির্ভানের বাবা)

– হ্যাঁ সানভি আমরা তো বুঝতেও পারলাম না। যাই হোক এখন বুঝেছি এখন তো কিছু করতেই হয় এভাবে তো আর মানতে পারিনা। ( নির্ভানের মা)

সানভি এটা মোটেও আশা করেনি কালই তো তারা খুশি ছিলেন আর আজ ওর এই কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ও যেই সোফা তে বসে ছিলো তার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে সোফা টা গ্রাস করে ফেলছে ওকে কেমন এক ঘোরে চলে যাচ্ছিলো। তখনই হটাৎ কারেন্ট চলে গেলো অন্ধকারে ঘাবড়ে গেলো তখনই মনে হলো কেউ একজন ওর হাত ধরছে ভয় পেয়ে চিৎকার করতে নিলেই কারেন্ট চলে এলো আর সাথে সাথেই দেখতে পেলো ওর সামনে নির্ভান রিং হাতে ওর হাত ধরে বসে আছে ওর পেছনেই ওর বাবা মা ম্যাক্স আর ইলা দাঁড়িয়ে আছে। আর যেটা হবার তাই হলো নির্ভান সানভি কে সবার সামনে প্রপোজ করলো এবং সানভি খুশিতে কান্না করতে করতে হ্যাঁ বললো। তারপর নির্ভান সানভির আনা রিং টা সামনে এগিয়ে দিলে সানভি ও ওই রিং নির্ভান কে পরিয়ে দিয়ে হয়ে গেলো দুজন দুজনের।

এক সপ্তাহ পর!!!

আজই বিয়ে হয়েছে সানভি আর নির্ভানের আর রওনা হয়ে গেছে ওরা কিছুদিনের জন্য সব ঝামেলা চিন্তা থেকে দূরে নিজেদের ভালোবাসার একান্ত মুহুর্ত গুলো কাটাতে।

– সান অবশেষে আজ তুমি পুরোপুরি আমার।

– হুম অবশেষে আমি তোমাকে ভালোবেসে তোমার হলাম। বলেই নির্ভান এর বুকে মাথা রেখে বাকি পথ গুলো উপভোগ করতে করতে যাচ্ছে ওর ভালোবাসার মানুষ এর সাথে।
.
নির্ভান আর সানভির তরফ থেকে সবাইকে বাই বাই ভালো থেকেন। ❤❤