গল্প : #___অবাধ্য_পিছুটান
সাদিয়া_শওকত_বাবলি
পর্ব_৪২
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
অপরাধীর কন্ঠে বলল,
-“আসলে স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। ঐ স’ন্ত্রা’সী’টা’র হাত থেকে আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে ভুলবশত হয়ে গেছে। মাফ করে দিন স্যার।”
তুর্য হাসলো। স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল,
-“আরে মাফ চাইতে হবে না তোকে। আমি জানি তো তুই ভুল করে করেছিস। হাজার হলেও তুই আমার বোন জামাই হবি। তোর উপরে কি আমি কোনো রাগ রাখতে পারি বল?”
আরুশ ভরকে গেল তুর্যের কথায়। এতটা ভালোভাবে কথা বলার লোক তো তুর্য নয়। তাহলে আজ এত ভালোভাবে কথা বলছে হঠাৎ তাও এতকিছুর পরে। নিশ্চই এর মধ্যে ঘাপলা আছে কোনো। আবার নতুন কোনো ফন্দি আটছে না তো? আরুশের ভাবনার মধ্যেই তুর্য আবার বলল,
-“সন্ধ্যার মধ্যে আমার বাড়িতে আসিস। কে’সে’র ব্যাপারে কথা আছে।”
কথাটা বলেই পরপর কল কাটলো তুর্য। আরুশ ঘাবড়ে গেল কিছুটা। বাড়িতে যেতে বলেছে! ওখানে নিয়ে না আবার কোনো ঝামেলা করে। ভালো ভালো কথা বলে না হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু উপায় যে নেই। তাকে তো যেতেই হবে। কেসের ব্যাপারে কথা তো বলতে হবে।
৪৪.
রাতের আঁধার নেমেছে ধরনীতে। সেই আঁধারের সাথে নতুন রূপে আজ যুক্ত হয়েছে বর্ষা। হুট করেই দুপুরে পর যে বর্ষার আগমন ঘটলো তারপর আর থামাথামির নাম নেই কোনো। আরুশের সন্ধ্যার মধ্যে তুর্যদের বাড়িতে আসার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে আসতে পারেনি। বলেছে কাল সকাল সকাল আসবে। পৃথা তুর্যকে খাইয়ে, নিজে খেয়ে সব গুছিয়ে গাছিয়ে কেবলই কক্ষে ফিরলো। তুর্য শরীরে এক খানা কাঁথা জড়িয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে ছিল বিছানাতেই। হঠাৎ পৃথাকে কক্ষে ঢুকতে দেখেই নিজের কাঁথা নিয়ে এক পাশে সরে গেল সে। পৃথা আড়চোখে একবার তাকালো তুর্যের পানে অতঃপর এগিয়ে গেল আলমারির নিকটে। আলমারি থেকে আরেকটা কাঁথা বের করে গিয়ে বসলো বিছানায়, তুর্যের পাশের খালি স্থানে। ভ্রু কুঁচকালো তুর্য। পৃথার আনা কাঁথাটার পানে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-“এই উটকো ঝামেলাটাকে আবার এনেছো কেন?”
পৃথা ভাঁজ করা কাঁথাটা খুলে শরীরে জড়াতে জড়াতে জবাব দিল,
-“শীত লাগছে তাই এনেছি। বাহিরে যা বৃষ্টি।”
তুর্য মাথা উঁচিয়ে নিজের শরীরে জড়ানো কাঁথাটার পানে তাকালো। কপালে ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করলো,
-“আমার কাঁথা কি দোষ করলো তাহলে? আমার কাঁথায় আসতে তুমি।”
পৃথা অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
-“আপনি বেশি ভদ্র তো। তাই আপনার কাঁথায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।”
তুর্যের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো, কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে সে তাকিয়ে রইলো পৃথার পানে। অতঃপর নিজের শরীরের কাঁথাটা ছুঁড়ে ফেলে দিল নিচে মেঝেতে। সময় ব্যয় না করে চট জলদি ঢুকে পড়লো পৃথার কথায়। পিছন থেকে মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“কিন্তু আমি আমার বউয়ের কাঁথায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছি।”
পৃথা তেতে উঠলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-“এই! এই অসভ্য লোক আপনি আমার কাঁথায় ঢুকলেন কেন? নিজের কাঁথায় যান।”
তুর্য পাত্তা দিল না পৃথার কথায়। ভাবলেশহীনভাবে বলল,
-“আমি আমার বউয়ের কাঁথায় ঢুকেছি তাতে তোমার কি?”
-“আপনি! আপনি একটা….”
থেমে গেল পৃথা। তুর্য তাকে টেনে ঘুরিয়ে নিল নিজের দিকে। এক ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“আমি একটা মুরগির বাচ্চার জামাই বলো বলো।”
পৃথা কটমট করে তাকালো তুর্যের পানে। তবে বলল না কিছুই। একে বলে লাভ আছে কি কিছু? যত যাই বলবে গায়ে লাগবে না এর। এ যা করবে করবেই। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল পৃথা। তুর্যকে একটা ভেংচি কেটে চোখ বন্ধ করে নিল। তুর্যও আর বলল না কিছুই। চুপচাপ পৃথার মুখ পানে তাকিয়ে শুয়ে রইলো।
*****
দু’জনের নীরবতায় কেটে গেল ক্ষানিকটা সময়। বৃষ্টির তেজ আগের থেকে কিছুটা কমেছে। বাহিরের আবহাওয়া এখন বেশ ঠান্ডা হলেও ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে একই কক্ষে পাশাপাশি অবস্থানরত দুই নর নারী। নারী পুরুষ হলো আগুন আর মোমের ন্যায়। এরা পাশাপাশি থাকলে গলার সম্ভাবনাই থাকে অধিক তারপর আবার যদি থাকে ভালোবাসা। পৃথা এবং তুর্যের অবস্থাও এই মুহূর্তে ক্ষানিকটা তেমনই। এতদিন তাও তাদের মধ্যে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল, ভালোবাসাটা ছিল এক পাক্ষিক। কিন্তু এখন তারা দুজনই দুজনের মনের কথা সম্পর্কে অবগত। এমন একটা পরিস্থিতিতেও কি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা তারা বিবাহিত। একজনের উপরে অন্যজনের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। পৃথা তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলো। নিজের ভিতরকার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পেরে দূরে সরে যেতে চাইলো তুর্যের নিকট থেকে। কিন্তু তুর্য সায় জানালো না এ কার্যে। সে আরও গাঢ়ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল পৃথাকে। কিছুটা অসহায় কন্ঠে বলল,
-“আর কত শাস্তি দিবে আমাকে?”
পৃথা নিজের চক্ষুদ্বয় বন্ধ রেখেই জবাব দিল,
-“আগামী সাত বছর।”
তুর্য তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল না কোনো। বিছানায় উঠে বসলো সে। পৃথাকেও হাত টেনে উঠলো বিছানা থেকে, বসালো নিজের কোলে। দুই হাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
-“আমার তোমাকে অনেক কথা বলার আছে বউ।”
পৃথা আজ কোনো বাঁধাহীনভাবেই বলল,
-“বলুন, আমি শুনতে চাই আপনার সব কথা।”
তুর্য মাথা রাখলো পৃথার কাঁধে। শান্ত কন্ঠে বলতে শুরু করলো,
-“তোমার সাথে আমার জোর করে বিয়ে দেওয়া এবং আমার ক্রোধে বিয়ের আসর ত্যাগ কোনোটাই তোমার অজানা নয়। বিয়ের আসর ত্যাগের এক মাসের মাথাতেই আমি দেশ ছেড়েছিলাম পাড়ি জমিয়েছিলাম ইংল্যান্ডে। কিন্তু সেখানে গিয়েও আমি শান্তি পাইনি। প্রতিটি মুহূর্তে তোমার অবাধ্য পিছুটান আমাকে তাড়া করে বেরিয়েছে। বারবার মনে হয়েছে আমি ভুল করেছি। যতই জোর করে বিয়ে হোক না কেন বিয়েটা তো হয়েছে। আবার তোমার আর আমার বয়সের পার্থক্য ভেবে বার বার পিছিয়ে গিয়েছি। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেকবার ভোলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তোমাকে ভুলতে আমি অন্য মেয়েদের সান্নিধ্যে পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করেছি তাও পারিনি। কোনো মেয়ের পানে তাকালেও আমার অবচেতন মস্তিষ্ক বারংবার তোমাকে স্মরণ করিয়েছে। তোমার অদৃশ্য এক পিছুটান তোমার প্রতি আমাকে আসক্ত করে তুলেছিল ভীষণ বাজেভাবে। ধীরে ধীরে আমি বুঝেছিলাম আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া আমার একদম চলবে না। বারবার তোমার কাছে ছুটে আসার চেষ্টা করেছি কিন্তু সে পথটাও নিজের হাতেই বন্ধ করেছিলাম। দীর্ঘ পাঁচ বছর তোমার জন্য ছটফট করতে করতে নিজের পড়াশোনা শেষ করলাম, ছুটে আসতে চাইলাম দেশে। সকলের অগোচরে আমি এসেছিলামও দেশে কিন্তু আবারও বাবার ব্যবসার কাজ আর আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা সিদ্ধান্ত সবকিছু বদলে দিল। আবারও দুই বছরের জন্য আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিল। আমিও তখন সেই দূরত্ব মেনে নিলাম। কারন আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে সেদিন ছেড়ে গেলেও আমার পরিবার ঠিক তোমাকে আমার জন্য রেখে দিয়েছে। আমি দেখেছিলাম আমার মা তোমার জন্য কতটা আবেগী ছিল। কিন্তু সে যে তোমাকে আমার করে রাখতে পারেনি কিংবা মাঝখানে এতকিছু ঘটে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। আর রইলো খোঁজ খবর নেওয়ার কথা। আমি যখনই বাড়িতে কল করেছি তোমার একটা খোঁজ পাওয়ার জন্য আমার হৃদয় আঁকুপাঁকু করেছে কিন্তু লজ্জায় মুখ ফুটে তোমার কথা জিজ্ঞেস করতে পারিনি। আমিই তো তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম, তোমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম। কোন মুখে আবার বাড়ির লোকদের কাছে তোমার কথা জানতে চাইতাম? তাছাড়া ঐ যে বললাম আমি ভেবেছিলাম আমার পরিবার তোমাকে আমার জন্য রেখে দিয়েছে। তাই একটু নিশ্চিন্তও ছিলাম।”
থামলো তুর্য আবার বলল,
-“দেখো এই সাতটা বছর তুমি জানতে না আমাদের বিয়ের কথা। তাই তোমার উপরে কখনও এর প্রভাব পড়েনি, যতটুকু পড়েছে তাও তোমার অগোচরে। অথচ আমি সবটাই জানতাম। সাতটা বছর প্রতিটা দিন আমি অপরাধ বোধে ভুগেছি। একটাবার তোমাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ছটফটিয়ে ম’রে’ছি। তোমাকে ছেড়ে গিয়ে কম তো শাস্তি পেলাম না। আর কত শাস্তি দিবে আমাকে?”
পৃথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো তুর্যের সব কথাগুলো। বুঝলো সে তুর্যকে। আর এমনিও এই পুরুষের উপরে তার রাগ অভিমান নেই কিছু, যা আছে সব ভালোবাসা। পৃথা আলতোভাবে হাত রাখলো তুর্যের পিঠে। হুট করেই বলল,
-“ভালোবাসি প্রিয়।”
তুর্য থমকালো। সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত বাক্য যা শোনার জন্য এত বছর ধরে মরিয়া তুর্য। আচ্ছা সে কি ঠিক শুনেছে নাকি ভুল? তুর্য নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল পৃথাকে। মেয়েটার মুখ পানে তাকিয়ে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
-“কি বললে তুমি? আবার বলো।”
পৃথা একটু ঝুঁকে গেল তুর্যের পানে। ছেলেটার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
-“ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি প্রিয়।”
তুর্য আনন্দে আত্মহারা হলো। হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বইতে শুরু মুহুর্তেই। বেচারা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো পৃথাকে। উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
-“ভালোবাসি বউ, ভীষণ ভালোবাসি।”
কথাটা বলেই পরপর আবার ছেড়ে দিল পৃথাকে। দুই হাতের ভাঁজে মেয়েটার মুখটা তুলে টপাটপ চু’মু খেল গোটা কয়েক। অতঃপর হঠাৎ ওষ্ঠের নিকটে এসে থেমে গেল। একটু সময় নিয়ে পরম যত্মে নিজের শুষ্ক দুই ওষ্ঠ মিলিয়ে দিল পৃথার নরম উষ্ণ দুই ওষ্ঠে। উন্মাদের ন্যায় ওষ্ঠের প্রবল ঘর্ষনে নাজেহাল করে তুললো মেয়েটাকে। পৃথাও আজ আর বাঁধা দিল না। নিজেও সায় জানালো তুর্যের কার্যে। নিজের দুই হাত দ্বারা খামচে ধরলো বেচারার পিঠ। তুর্য পৃথার ওষ্ঠে চু’মু খেতে খেতেই তাকে শুইয়ে দিল বিছানায়। ধীরে ধীরে ওষ্ঠ ছেড়ে নামলো মেয়েটার ঘাড় গলায়। ছোট ছোট চু’মু’তে দিশেহারা করে তুললো পৃথাকে। তুর্যের স্পর্শ বেশামাল হলো, নাজুক হয়ে পড়লো মেয়েটা। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলে তার। তবুও দুষ্টু বুদ্ধি গেল না। ঐ যে কথায় আছে না “যে যেমন তার সাথে মিলেও তেমন।” সুতরাং তুর্য যেমন তার বউ তো তেমন হবেই। এমন এক অনুভূতিময় পরিস্থিতিতে এসেও মেয়েটা হুট করেই বলল,
-“আমার এখনও ১৮ বছর বয়স হয়নি। আইন অনুযায়ী আমি এখনও শিশু। একজন শিশুর সাথে এসব করা পাপ, ঘোর পাপ।”
তুর্য মাথা তুললো পৃথার গলা থেকে। অত্যন্ত ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
-“মা’র’তে চাও আমাকে?”
-“না শুধুমাত্র….”
আর কিছু বলতে পারলো না পৃথা। তুর্য একটু ঝুঁকে আকস্মিক বেশ শক্তপোক্তভাবে কামড় বসিয়ে দিল মেয়েটার ওষ্ঠে। চেঁচিয়ে উঠলো পৃথা। ওষ্ঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
-“এটা কি করলেন আপনি? কামড় কেন দিলেন?”
তুর্য উত্তর দিল না পৃথার কথার। উল্টো নিজের শরীরে জড়ানো টিশার্টটা খুলতে খুলতে বলল,
-“চুপ! একদম চুপ। আর একটা কথাও নয়। আর একটা উল্টা পাল্টা কথা বলবে তো জানে মে’রে দেব একদম।”
চলবে…..
গল্প : #___অবাধ্য_পিছুটান
সাদিয়া_শওকত_বাবলি
পর্ব_৪৩
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
[ প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]
তুর্য উত্তর দিল না পৃথার কথার। উল্টো নিজের শরীরে জড়ানো টিশার্টটা খুলতে খুলতে বলল,
-“চুপ! একদম চুপ। আর একটা কথাও নয়। আর একটা উল্টা পাল্টা কথা বলবে তো জানে মে’রে দেব একদম।”
পৃথা ওষ্ঠ প্রসারিত করলো। ডান হাতটা উঁচিয়ে তর্জনী আঙ্গুলটা দ্বারা আলতোভাবে স্পর্শ করলো তুর্যের নগ্ন বক্ষ। কন্ঠে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলল,
-“পৃথাকে জানে মে’রে দেওয়ার আগে তুর্য চৌধুরীরই জান চলে যাবে।”
তুর্যের দৃষ্টি শীতল হলো। পৃথার হাতটা চেপে ধরলো নিজ বক্ষে। মৃদু কন্ঠে বলল,
-“এত বিশ্বাস?”
পৃথা হাসলো। দৃঢ় কন্ঠে বলল,
-“নিজের থেকেও বেশি।”
তুর্য চোখে চোখ রাখলো পৃথার। প্রশান্তিতে ভরে উঠলো তার হৃদয়। যে চোখে এতকাল ভালোবাসা দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছটফটিয়ে কাটিয়েছে বেচারা আজ সেই চোখে পূর্ণ ভালোবাসার অস্বিত্ব দেখতে পাচ্ছে, খুঁজে পাচ্ছে অগাত বিশ্বাস। এই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া, জীবনের পূর্ণতা। তুর্য আর কথা বাড়ালো না। আজ এই বৃষ্টিস্নাত রজনীতেই সে নিজের করে নিতে চাইলো নিজ প্রিয়তমাকে। তুর্য আবারও নিজেদের দূরত্ব ঘোচালো, একটু ঝুঁকে মুখ ডোবালো পৃথার ঘাড়ে। ছোট ছোট চু’মু’তে সিক্ত করলো মেয়েটাকে। ধীরে ধীরে বেশামাল হলো তুর্যের স্পর্শ, ভারী হলো পৃথার নিঃশ্বাস। আর কোনো বাঁধা দেওয়ার সক্ষমতা হারালো মেয়েটা। ভালোবাসাময় সুখে খামচে ধরলো তুর্যের উন্মুক্ত ফর্সা পিঠ। একে অপরের মাঝে হারিয়ে গেল একটু একটু করে। অবশেষে পূর্ণতা পেল দুটি নর নারী, একটি স্নিগ্ধ ভালোবাসা।
৪৫.
ভোরের আলো ফুটেছে। চারদিকটা ইতমধ্যে ভরে উঠেছে সূর্যের তীব্র আলোক রশ্মিতে। গতকাল সারারাত ধরে বৃষ্টি হওয়ার দরুন আজ যেন একটু বেশিই চনমনে সূর্যটা। সেই চনমনে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল পৃথার। পিট পিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো তুর্যের নগ্ন বক্ষে। সাথে নিজের দেহের পানে তাকিয়েও লজ্জায় পড়লো মেয়েটা। ইসসস গতকাল রাতে কি অ’স’ভ্য’তা’মো’টা’ই না করলো তুর্য অথচ এখন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না যেন। একদম নিষ্পাপ বাচ্চাদের ন্যায় ঘুমিয়ে আছে। পৃথা চোখ তুলে তাকালো তুর্যের ঘুমন্ত মুখশ্রীর পানে। ইচ্ছে হলো হাত বাড়িয়ে ঐ মুখটা একটু ছুঁয়ে দিতে, একটু আদর দিয়ে ভরিয়ে তুলতে। পৃথা তাই করলো। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিল তুর্যের ঘুমন্ত মুখশ্রী। মাথাটা ঝুঁকিয়ে আলতোভাবে চু’মু’ও খেল স্বামীর গালে কপালে। অতঃপর কি ভেবেই হঠাৎ তুর্যকে ধাক্কা মে’রে উঠে বসলো বিছানায়। গভীর ক্রোধ তুর্য আর তার শরীরে একসাথে জড়ানো কাঁথাটা টেনে ঢেকে নিল শুধুমাত্র নিজেকে।
ঘুমের মধ্যে আকস্মিক ধাক্কায় ভরকে গেল তুর্য। ধরফরিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। ব্যস্ত হয়ে বলল,
-“কি! কি হয়েছে?”
পৃথা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তুর্যের পানে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-“অসভ্য লোক, আপনি একদম কথা বলবেন না আমার সাথে।”
তুর্য দ্বিতীয় দফায় ভরকে গেলো পৃথার কথায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই এর আবার কি হলো? কাল এত সুন্দর মধুময় এক রজনী অতিবাহিত করে আজ বলছে কথা বলবে না। তুর্য নিজের দুই হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে উদ্যত হলো পৃথাকে। কোমল কন্ঠে বলল,
-“কি হয়েছে তোমার? অন্যায় কি করেছি বলবে তো।”
পৃঁথা সরে গেল তুর্যের নিকট থেকে। শরীরে জড়ানো কাথাটা আরও ভালোভাবে শরীরে জড়িয়ে পা বাড়ালো ওয়াশ রুমের পানে। যেতে যেতে আবার বলল,
-“একদম আমাকে ছোঁবেন না অসভ্য পুরুষ। আমার আশেপাশেও যেন আপনাকে না দেখি, তাহলে হাত পা কে’টে বিছানায় বসিয়ে রাখবো বলে দিলাম।”
তুর্য যেন বেয়াক্কেল বনে গেল পৃথার কথায়। রাতে সারারাত এত গভীরভাবে ছুঁয়ে দেওয়ার পর এখন বলছে ছোঁবেন না। আবার কি বলল, পৃথার আশেপাশে গেলে হাত পা কে’টে বিছানায় বসিয়ে রাখবে? তুর্যের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কি সাহস তার বউয়ের। এ তো তারও এক কাঠি উপর থেকে আসা যাওয়া করে।
৪৬.
বেলা গড়িয়েছে কিছুটা। যদিও এখনও সকালের সময়েই থেমে আছে সময়টা তবে সূর্য তার প্রখরতা ছড়িয়েছে অনেকটা। আর এই সময়ই চৌধুরী বাড়ির বসার কক্ষে সভা বসিয়েছে তুর্য। জরুরী কথা আছে বলে আজ কাউকে অফিসেও যেতে দেয়নি। আরুশকেও টেনে এনেছে সকাল সকাল। বেচারা আরুশ তো তার সাথে কি হতে চলেছে, তুর্য তাকে শাস্তি দেয় কিনা এই ভেবেই হার্ট অ্যাটাকের উপক্রম। কিন্তু তুর্য তাকে অবাক করে দিয়ে তেমন কিছুই করলো না। উল্টো আরুশের কাঁধ ধরে বসলো বসার কক্ষের সোফায়। বাড়ির সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“তোমাদের সকলের সাথে আমার একটা জরুরী কথা আছে।”
উপস্থিত সকলে উৎসুক হয়ে তাকালো তুর্যের পানে। তবে তাহমিনা বেগম বরাবরের ন্যায়ই একটু ফোড়ং কেটে বললেন,
-“সেই তখন থেকে তো জরুরী কথা বলবে বলেই বসিয়ে রেখেছো আমাদের। এখন এত ভনিতা না করে বলে ফেলো কি বলতে চাও।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল তুর্য। সকলের পানে একবার তাকিয়ে বলল,
-“আমি চাইছিলাম আরুশের সাথে ইরার বিয়েটা দিতে।”
থামলো তুর্য। আবার বলল,
-“এমন নয় যে আরুশকে তোমরা চিনো না। সবাই আরুশকে চিনো। আরুশ যথেষ্ট ভালো ছেলে। আমার যতদূর মনে হয় ইরার জন্য ওর থেকে ভালো ছেলে আর হবে না।”
তুর্যের হঠাৎ এহেন কথায় চমকালো উপস্থিত সবাই। আরুশ নিজেও বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌছে গেছে এই মুহূর্তে। তুর্য এত ভালো কবে থেকে হলো? এভাবে বাড়িতে ডেকে এনে নিজে থেকে ইরার সাথে বিয়ের কথা বলছে। যেখানে আরুশকে তার শাস্তি দেওয়ার কথা সেখানে বোনের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে? ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না আরুশের। এর মধ্যে নিশ্চই অন্য কিছু আছে। আরুশ তুর্যের পানে চেপে বসলো। একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল,
-“স্যার আপনি ঠিক কি করতে চাইছেন বলবেন একটু?”
তুর্যও আরুশের ন্যায় ফিসফিসিয়ে জবাব দিল,
-“তোকে বোন জামাই করতে চাইছি। কেন ইরাকে তোর পছন্দ না?”
আরুশ উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুললো। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই মুখ খুললেন তাহমিনা বেগম। থমথমে কন্ঠে তিনি বললেন,
-“ইরা এখনও ছোট। এখনই ওর বিয়ের ব্যাপারে আমরা ভাবছি না কিছু।”
তুর্য তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো মায়ের পানে। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-“ইরা ছোট আর আমার বউ তো ছোট ছিল না, একদম খুন খুনে বুড়ি ছিল। মাত্র দশ বছর বয়সে পৃথার বাবা মায়ের হাত পা ধরে ঐ ছোট মেয়েটাকে বিয়ের পীড়িতে উঠিয়ে দিতে তোমাদের বুক কাঁপেনি আর এখন নিজেদের ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিতে বুক কাঁপছে। নিজের মেয়েরা মেয়ে আর পরের মেয়েরা তো মেয়ে নয় তাদের যেভাবে খুশি নাচানো যায় তাই না?”
তুর্যের কথায় চুপ হয়ে গেল সবাই। ছেলেটা ভুল কিছু তো বলেনি। সেদিন সত্যিই তারা ভুল করেছিল যার দরুন ভুগতে হয়েছে ঐ মেয়েটাকে। সকলের নিশ্চুপতার মাঝেই উঠে দাঁড়ালো তুর্য। সকলের পানে একবার তাকিয়ে বলল,
-“কি করবে ভেবে চিন্তে আমাকে জানিও। তোমাদের মেয়ে না দিলে আমি আরুশের জন্য অন্য মেয়ে দেখবো। বেচারা আর কতদিন আইবুড়ো থাকবে।”
কথাটা বলেই লম্বা লম্বা পা ফেলে বসার কক্ষ থেকে প্রস্থান করলো তুর্য। আর আরুশ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। এই লোক আবার হঠাৎ ওর বিয়ে নিয়ে আবার এত মাতলো কেন? কি চাইছে এ?
****
বসার কক্ষ থেকে বেরিয়ে তুর্য সোজা গেল ইরার কক্ষের পানে। তার বউ সকলে তার উপরে চোটপাট দেখিয়ে এ কক্ষেই এসে ঘাঁটি গেড়েছে। এতক্ষনও সকলে বসার কক্ষে উপস্থিত থাকলেও এই দুই নারী উপস্থিত ছিল না। যেহেতু ইরার বিয়ের কথাই বলবে তাই তুর্যও আর তাদের বসার কক্ষে যেতে জোরাজুরি করেনি। তুর্য দাঁড়ালো ইরার কক্ষের দরজার সম্মুখে। হাত উঁচিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
-“পৃথা রুমে এসো তাড়াতাড়ি।”
তুর্যের কথা শেষ হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই দরজার ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
-“আমি যাব না, আপনি যান।”
তুর্য ভ্রু কুঁচকালো। নিজের ভদ্রতা বাদ দিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো সে। ইরাকে আদেশের সুরে বলল,
-“তুই বাইরে যা।”
তুর্যের আদেশ দিতে দেরী কিন্তু ইরার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে দেরী হলো না। ইরা বেরিয়ে যেতেই তুর্য এগিয়ে গিয়ে কক্ষের দরজাটা আটকে দিল। অতঃপর পৃথার পানে তাকিয়ে বলল,
-“কি হয়েছে? সকাল থেকে রেগে আছো কেন?”
পৃথা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। থমথমে কন্ঠে বলল,
-“কিছু হয়নি আমার।”
তুর্য এগিয়ে গিয়ে পৃথার মুখোমুখি দাঁড়ালো। মেয়েটার একটা হাত নিয়ে নিল নিজের পুরুষালি দুই হাতের ভাঁজে। কোমল কন্ঠে বলল,
-“তোমার কি হয়েছে বলবে তো। না বললে আমি বুঝবো কিভাবে বলো।”
পৃথা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো তুর্যের পানে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-“আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিল আজ। কত প্ল্যানিং করেছিলাম। সব আপনি কাল এক রাতে ভেস্তে দিয়েছেন।”
তুর্য চমকালো। গোল গোল চোখে সে তাকালো পৃথাকে পানে। অবাক সুরে বলল,
-“আজকে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী?”
পৃথার চোখ জোড়াও বড় বড় হয়ে গেল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
-“আপনি আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর কথাও ভুলে গিয়েছেন? অথচ সারাদিন ভালোবাসি ভালোবাসি বলে হেদিয়ে ম’রে’ন।”
তুর্য হঠাৎ রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-“ঐ আরুশের বাচ্চার গুষ্টি আমি উদ্ধার করে ফেলবো। ব্যাটা মীর জাফরের বংশধর, মাথায় একটা বারি মে’রে’ই আমার বিবাহ বার্ষিকী ভুলিয়ে দিল।”
পৃথা ভ্রু কুঁচকালো। কপালে ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করলো,
-“আরুশ ভাই আপনার মাথায় বারি মে’রে’ছি’ল? আপনি না সড়ক দুর্ঘটনায় মাথা ফাটিয়েছে?”
তুর্য অপ্রস্তুত হলো। রাগের মাথায় সে কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছিল। ঢোক গিললো তুর্য। আমতা আমতা করে বলল,
-“হ্যা হ্যা সড়ক দুর্ঘটনাতেই মাথা ফেটেছে। ওটা তো আরুশ সাথে ছিল তাই বলছিলাম আর কি?”
কথাটা বলেই থামলো তুর্য। দুই হাতে পৃথাকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। দুষ্টু হেসে বলল,
-“তুমি কি প্ল্যান করেছিলে বউ? নিশ্চই আজকে এই শুভ দিনে আমাদের বাসরটা সাড়ার চিন্তা ভাবনা করেছিলে যা আমি গতকাল রাতেই সেড়ে ফেলেছি। একদম চিন্তা করো না বউ, আমরা কাল বাসর সেড়েছি আজ আবার সাড়বো। ভবিষ্যতেও প্রতি রাতে বাসর সাড়বো। একটা রাতও বাদ যেতে দেব না।”
চলবে…..