অবাধ্য প্রেম পর্ব- বোনাস +১২

0
524

#অবাধ্য_প্রেম
#বোনাস_পর্ব
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড় আমাকে টেনে রেস্টুরেন্টের বাইরে এনে নিজের গাড়িতে ওঠার জন্য ঝামেলা করতে লাগলো। আমি উঠছিনা দেখে চিল্লাচিল্লি করতে লাগল। আমি ও নাছোড়বান্দা উনার হুকুম আমি কেন মানতে যাব।

নিবিড় এবার বলল, ‘ ছোঁয়া প্লিজ গাড়িতে উঠো। সবাই কেমন করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখো। মনে হচ্ছে আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।’

আমি হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম, ‘ সত্যি তো ভাবছি ওনাদের ভাবনা একদম ঠিক আছে। আমাকে তো কিডন্যাপ করার মতোই নিচ্ছেন। না হলে আমি যাব না মাকে জোর জবরদস্তি করছেন কেন?’

দাঁত চেপে বলল নিবিড়, ‘ গাড়িতে উঠ তারপর বলছি।’

আমি বললাম, ‘ শুনেন আপনাকে না আপনার কাকা ফোন দিল‌। তার সাথে কি কথা বললেন যে তার পর থেকেই তাড়াহুড়া শুরু করে দিলেন? সত্যি করে বলেন তার সাথে কি কথা বলেছেন!’

‘ বলেছি আজকে তোমাকে ধরে কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেব।’

‘ কিহহহ? বিস্মিত গলায় বললাম।

জোর করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠানো হলো। আমিতো সাথে সাথে বেরোনোর জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু নিবিড় গাড়িতে উঠে গাড়ি লক করে দিয়েছে এখন আর আমি বের হতে পারছি না। দরজার হ্যান্ডেল ধরে আমি ঝাকাচ্ছি আর চিৎকার চেচামেচি করছি। আবির গালে হাত দিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ও ভাবছে ভাই কি পাগল হয়ে গেল নাকি এখানে এসে এমন করছে কেন? নতুন চাচির সাথে ভাইয়ের যে কোন কানেকশন আছে সেটাই বুঝতে পারছেও। ও ত মিটিমিটি হাসছে আর ভাবছে চাচি কি ভাবি হয়ে যাবে নাকি?

ভাইয়ের সাথে আজকে এখানে এসেছে আমি কত কিছু জানতে পারলাম। ভাইয়া সবসময় আমাকে চুপ করিয়ে রাখে না। কথায় কথায় ধমক বকা দেওয়া। এবার আমি ভাইয়াকে চুপ করে রাখতে পারবো। অনেক কিছু হাতাতে পারব। ফট করে ফোনটা বের করে দুজনের কয়েকটা ছবি তুলে নিল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিবিড় ছোঁয়ায় হাত ধরে টেনে আনলো।

ছোঁয়া দুই হাতে কাঁচের মধ্যে বারি মারছিল। নিবিড় হাত টেনে ধরে বলে, ‘আমার গাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে নাকি একবার আমার ফোন ভেঙে ক্ষান্ত হ‌ও নাই। এখন আমার গাড়ির ভাঙার চেষ্টা করছো‌!’

আবির ফোনটা লুকিয়ে ফেলল আবার। আর দুজনের ঝগড়া দেখতে লাগল গালে হাত দিয়ে।

আমি নিবিড়ের দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমি যদি পারতাম ওই ফোনটার মত এই গাড়িটা এখন হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা আছাড় মারতাম। পারছিনা বলে বারি মারছি। আর যদি পারতাম এতক্ষণ আপনার ফোনটার মতোই এই গাড়িটাও ভেঙে গুড়িগুড়ি হয়ে যেত।’

নিবিড় বলল, ‘ আহ কি শখ! তুমি আমার গাড়িটা ভাঙতে আর আমি বসে বসে আঙুল চুষতাম তাই না। বেশি বাড়াবাড়ি করবে না তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি না চাও বিয়েটা ভেঙে যাক। আমি তোমার বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করছি। তাই আমার কথা মত আর আমার ইশারায় চলো। বিয়েটা হবে না দেখো‌। আর যদি তা না করো তাহলে কিন্তু তোমার বিয়ে আমার কাকার সাথে হবে আর সেটা কেউ আটকাতে পারবেনা। আর তুমি যদি এখন আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কথা দিচ্ছি তোমার বিয়ে আমি আমার কাকার সাথেই দিব‌। তাই নিজের ভালো চাও তো আমার কাজে বাঁধা দিও না।’

আমি চোখ ছোট করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। নিবিড় গাড়ি স্টার্ট করল। আর ওর চাচা আমাকে পছন্দ করেছে সেই সব বলল সাথে আমার বয়স তার থেকে কম বলে তিনি একটু অমত। এজন্য দুটানায় ভুগছেন‌ আর বাসার সবাই নাকি তাকে রাজি করানোর জন্য লাফালাফি করছে। সবাই চাই বিয়েটা হোক। কিছুক্ষণ আগে নিবিড় ও চাইতো। কিন্তু এখন আর চায় না কারণ আমার মত বেয়াদ্দপ মেয়ে নাকি ওনার চাচার যোগ্য না। আমি সাথে সাথে কটমট চোখে উনার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না। বিয়েটা যেহেতু ভাঙতে সাহায্য করবে আমি আর তার সাথে তর্ক করে একজন সাহায্য কারিকে হারাতে চায় না। একবার বিয়েটা ভেঙ্গে যাক তারপর উনাকে দেখে নিবো।

নিবিড় আমাকে বাসায় সামনে নামিয়ে দিলো। আমি নামার আগে বললাম, ‘ আমার ব্যাগ কখন দেবেন?’

নিবিড় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোমার ব্যাপার তো আর আমি ব্যবহার করবো না। তাই নো টেনশন তোমার ব্যাগ সহি সালামত আছে। পেয়ে যাবে এখন কীভাবে দেব আমি কি নিয়ে আসছি সাথে করে?’

আমি বুঝতে পারলাম আসলেই তো। এখন কিভাবে দেবে।

আমি বললাম, ‘ আচ্ছা নেক্সট যেদিন দেখা হবে সেদিন নিয়ে আসবেন অবশ্যই।’

‘ ওকে দেখা যাবে আর তুমি তোমার মামিকে বলে দিও কাকার সাথে থেকেছো এতক্ষণ।’

আমি কিছু বললাম না চলে আসতে গেলাম পেছন থেকে আবির চিৎকার করে বলল, ‘ হবু চাচি- ভাবি বাই।’

আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। চোখ ছোট ছোট করে পেছনে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি বললে তুমি?’

আবির বলল, ‘ সরি আসলে কোনটা হবে বুঝতে পারছিনা। তাই দুটাই বললাম।’

আমি দাঁত চেপে বললাম, ‘ তুই কিসের ভিত্তিতে আমাকে ভাবি বললে। একদম আমাকে ভাবি চাচী কোনটাই বলবে না। আমি না তোমার ভাবি হবো আর না তোমার চাচি হবো।’

আবির মুখটা পাংশুটে করে বলল, ‘ তাহলে তোমাকে কি বলব নাম ধরে ডাকবো নাকি?’

আমি বললাম, ‘ কেন তুমি আমাকে আপু বলতে পারো।’

পাশ থেকে নিবিড় আবিরের দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ এই তুই তোর কোন ভাইয়ের বউ হিসাবে ওকে ভাবি বলতে গেলি?’

আবির গর্বিত গলায় বলল, ‘এটা কেমন কথা ভাই। আমার তো একটাই ভাই তুমি। তোমার বউ ছাড়া আমি আর কাকে ভাবি বলবো?’

নিবিড় পেছনের দিকে এগিয়ে এসে আবিরের কানের লতিতে ধরে বললো, ‘ওই বেয়াদব মেয়ে এটা কোন দিক দিয়ে তার ভাইয়ের যোগ্য যে তুই ওকে ভাবি বলে বসলি। তোর কানের লতি আজ টেনে আমি লম্বা করে ফেলব।’

আবির ব্যাথায় আহ করে উঠে বলল, ‘আই এ্যাম সরি ভাইয়া প্লিজ ছেড়ে দাও। আমি আর জীবনে কাউকে ভাবি বলবো না। এমনকি তোমার সত্যি ব‌‌উকেও ভাবি বলবো না‌।’

একথা শুনে নিবিড় কান আরো জোরে চেপে ধরল আর বলল, ‘ কি বললি তুই আমার বউ কে তুই ভাবি বলবি না? এই তুই আমার বউকে ভাবি বলবি না তো কি বলবি হ্যাঁ!’

আবির এবার বলল, ‘ আমি কোন কথাই বলব না দয়া করে আমার কান ছাড়। কি মুশকিলে পড়ে গেলাম। ‘

আমি এগিয়ে এসে বললাম, ‘ আপনারা যান না কেন আমার মামি যদি বেরিয়ে আপনাদের দেখে তাহলে তো বুঝেই যাবে যে আমি আপনাদের সাথে ছিলাম।’

নিবিড় আবিরের কান ছেড়ে নিজের সিটে বসে সিট বেল লাগিয়ে নেয় আর গাড়ি স্টার্ট করে।

.
গাড়ি কিছুদূর যেতেই অনবরত নিবিড়ের ফোনে কল আসতে থাকে। নিবিড় ফোন ধরার জন্য গাড়ি পার্ক করে ফোন কানে নেই।

সাথে সাথে রাফসানের গলা পাওয়া যায়, ‘ হ্যালো কই তুই আমি তো রেস্টুরেন্টে বসে আছি। তোদের তো কোথাও দেখছি না কোথায় আছিস?’

নিবিড় আমতা আমতা করে বলে, ‘ হ্যালো কাকা আসলে হয়েছে কি?’

‘ কি হয়েছে?’

‘ কাকা আসলে তুমি যখন ফোন করলে। তখনই দেখলাম ছোঁয়া আই মিন চা মানে মেয়েটা চলে যাচ্ছে আমি তার কাছে গেলাম তিনি বাসায় চলে যাবে নাকি এখনি। আমি তোমার জন্য ওয়েট করতে বললাম সে বলল এখন পারবে না এখন নাকি বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। একাই চলে যেতে চাইছিল আমি কি করবো একা কি ছাড়া যায় নাকি। তাই আমি তাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে এলাম। এখন বাড়ি আসছি তুমি বাড়ি আসো।’

বলে নিবিড় ঠাস ফোনটা কেটে দিলো।

#চলবে…..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১২
#নন্দিনী_নীলা

বাসায় ঢুকতেই মামি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কিরে ছেলে তোরে কিছু গিফট গিফট করে নাই।’ বলেই মামি আমাকে চেক করতে লাগলো।

আমি বিরক্তকর গলায় বললাম, ‘ কিছুই পাবে না।’

মামি ব্রু কুঁচকে বললো, ‘ কেন? তুই নেস নি! আমি তোকে বলেছিলাম যা দিব সব নিয়ে আসবি। তুই জানিস নি কেন?’

আমি মামির সামনে থেকে সরে এসে বললাম, ‘ কিছু দিলে তো আনবো কিছুই দেয়নি।’

মামি মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে বলল, সত্যি। এত ধনী। হবু ব‌উয়ের সাথে দেখা করতে এলো অথচ স্বর্ণের একটা আংটি অব্দি দিল না। কি খাইস্টা গো।’

আমি মামির সামনে থেকে রুমে চলে এলাম। আর মামি বাইরে আহারে আহারে বলছে। তার খুব আশা ছিল আজকে নিশ্চয়ই রাফসান আমাকে স্বর্ণের কিছু দেবে প্রপোজ টপোজ করবে নিশ্চয় কালকে অনেক পছন্দ করে গেছে। কিন্তু তার কোনটাই হয়নি দেখে মামী খুব আশাহত হয়েছে। আর আমি খুব খুশি হয়েছি‌।

শাড়িটা খুলে বের হতেই। মামি রান্না করতে ছিল কিন্তু যেই শুনেছে রাফসান আমাকে কিছুই দেয়নি সে রান্না-বান্না সব বাদ দিয়ে সোফায় বসে আছে আমাকে বের হতে দেখে বলল, ‘ মাথাটা খুব ধরেছে রান্নাটা একটু করতো ছোঁয়া।’

আমি মামির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এক্সকিউজ দেওয়ার কি দরকার। তুমি যে ভান ধরে আছো সেটা তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর তুমি তো আমাকে ধমক দিয়েই কাজ করাতে পারো। এখন আবার এত সুন্দর করে কথা বলার কি আছে‌।’

‘একদম মুখে মুখে কথা বলবি না। এমনি আমার মাথাটা গরম আছে। তুই তো পেট পুরে খেয়ে এসেছিস বুঝবি কি?’

‘কে বলেছে আমি খেয়ে এসেছি। কিছুই খাইনি। আমার খুব খিদে পেয়েছে। ভেবেছিলাম কিছু হয়তো রান্না করে রেখেছো। কিন্তু আগে যদি জানতাম আমাকে রান্না করে খেতে হবে জানলে নিজের টাকা খরচ করে খেয়ে আসতাম।’

মামি অবাক গলায় বলল, ‘ কিছু খাওয়ায় ও নি? হায় আল্লাহ কোন বাড়ি বিয়ে ঠিক করলাম এ তো হবু ব‌উ কেই কিছু দেয় না আমাদের কি আর দেবে।’

‘ কোটিপতি দেখে তো বিয়ে ঠিক করছ। এখন আফসোস করছো কেন আহাজারি পারছ কেন?’

‘তুই মিছা কতা ক‌ইতাছিস তোরে আমি বিশ্বাস করিনা।’

‘ না করলে আমার কিছু করার নাই। শুধু একটা কথা শুনে রাখ যদি আমি রেস্টুরেন্টে ভালো কিছু খেয়ে আসতাম তাহলে তোমার বাসার পঁচা ভাত খাইতে চাইতাম না।’

মামি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,’ আজকে তোরে কয়বার পচা ভাত খাইতে দিছি যে বললি। আর শোন আমরা জমিদার না যে তোমার মত লাক সাহেবের বেটিরে প্রতি বেলায় গরম ভাত দিমু।’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘তোমার সাথে আমি বারতি কথাই বলতে চাই না।’
রান্না ঘরে চলে এলাম ওখানে থাকলে আরো ফালতু প্যাঁচাল পাড়তে হবে মামির সাথে। কিন্তু এখন আমার মামির সাথে ঝগড়া করার মুড নাই।

মাছটা ভাজা কড়াই তে আছে। তরকারি কিছু কাটা। বাকি গুলো কাটার আগেই মনে হয় দরজা খুলতে গেছিল। দরজা খুলে যা বুঝেছ তারপরে মনে হয় না আর রান্না ঘরে এসেছে।

.
নিবিড় বাসায় ঢুকার আগে রেস্টুরেন্টে যা যা ঘটেছে তা নিয়ে আবিরকে মুখ খুলতে একদম নিষেধ করে দিয়েছে। কিচ্ছু যদি কাউকে বলেছে তাহলে ওর খবর আছে। আবির ও কম যায় না স্বীকার করেছে কিন্তু বড় মাপের অ্যামাউন্ট চাইছে। যদি না দেয় তো মুখ খুলবে। এখন ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে হবে যেভাবেই হোক। তাই নিবিড় বাধ্য হয়েই ওর কথায় রাজি হয়েছে দাঁতে দাঁত চেপে।

আর কঠিন গলায় বলেছে, ‘ আমি যে ছোঁয়াকে আগে থেকে চিনি। আর বিয়েটা যে হবে না এই বিষয়ে যেন ঘুনাক্ষরে কেউ টের না পায়। আর তুই আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে হেল্প করবি। বিয়েটা ভাঙতে যা যা করা লাগে সব করে দিবি।’

‘ আচ্ছা দেব তুমি শুধু আমার চাওয়া গুলো পুরন করে দিও ভাইয়া। ‘

‘টাকা তো দিল আমার কি চাওয়ার আছে তোর?’

আবির দাঁত কেলিয়ে বলল, ‘সেটা পরে দেখা যাবে চলো।’

বলে আগে ভেতরে চলে গেল ওর সয়তানি মনের বুদ্ধি ঠিকই ধরতে পারছে কিছুটা নিবিড়। পরে ওকে টাইট দেওয়া যাবে বড় ভাইয়ের সাথে ধান্দামী করা তাই না।

নিবিড় কে সবাই সোফায় বসিয়ে ওকে জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করছে হবু চাচি কেমন লাগলো? কি কথা বলল! মেয়েটা রাজি নাকি হ্যান ত্যান।

হবু চাচি শুনলেই নিবিড়ের মাথাটা গরম হয়ে আসছে। নিবিড় এদের সাথে আর কি কথা বলবে এর আগেও চিৎকার করে উঠল, ‘ চুপ করো প্লিজ। হবু চাচি হবু চাচি করছো কেন? অসহ্য লাগছে সরো আমার সামনে থেকে।’

সবাই বোকা চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ওর সামনে এসে দাড়ালো। নিবিড় হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সবাই হা করে ওর যাওয়া দিকে তাকিয়ে আছে। অকারণ রাগের মানে কেউ বুঝতে পারছে না। অপর পাশের সোফায় বসে ‌ ছিল আবির ও ভাইয়ের রাগ দেখে মিটি মিটি হাসছে। কেউ এই রাগের মানে বুঝতে না পারলেও আবিরের বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে না। ও শুধু মজা নিচ্ছে।

রাফসান বাড়ি এসে নিবিড়ের কাছে এসে একটু বকাঝকা করতে লাগলো। আর একটু সময় ছোঁয়া কে ধরে রাখতে পারলি না।

নিবিড় কাকাকে এতো রাগে দেখে আর ছোঁয়া যে বিয়েতে রাজী না সে সব কিছু বলতে পারল না। শুধু বলল, ‘ তুমি ঠান্ডা হও। কাকা তারপরে আমি তোমাকে কিছু কথা বলব।’
রাফসান রাগান্বিত মুখে চলে গেল।

.
পরদিন দুপুরের দিকে রাফসান আর নিবিড় বাসায় এসে হাজির। দুপুরের রান্না করে আমি কেবল রুমে যাচ্ছিলাম তখনই কলিংবেল বেজে ওঠে আমি মামিকে ডাকাডাকি করি। মামি রুমে ফোনে কথা বলছিলো আমাকে খুলতে বলে‌।
ওইভাবে আমি দরজা খুলতে চলে আসি। এই সময় আবার কে আসতে গেলে শিওর পাশের বাসার আন্টি উনিত দিনে দুইবার করে হলেও এটা ওটা চাইতে আসে। উনি নিশ্চয়ই আবার এসেছে জ্বালাতে। বিরক্তিকর মুখে দরজা খুলেই চমকে উঠি। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি নিবিড় রাফসান। আচমকা দুজনকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই।

আমি কি ঠিক দেখছি নাকি ভুল দেখছি শিউর হওয়ার জন্য আমি নিজের হাতে নিজের চিমটি কাটতে যাব তখনই নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে খুব ভদ্র কন্ঠে বলে উঠে , ‘আসসালামু আলাইকুম!’

আমি নিবিড়ের এত ভদ্র আর সুন্দর করে কথা বলাটা নিতে পারলাম না‌। বড় বড় করে ভীতু চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি কোন কথাই বললাম না। চুপ করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। না তাদের ভেতরে আসতে বলছি।

আমাকে এমন বিস্মিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফসান বলল, ‘ আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?’

আমি প্রচুর লজ্জা পেলাম শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললাম, ‘ সরি আপনারা ভেতরে আসুন।’
বলেই রাস্তা করে করে দিলাম ভেতরে আসার জন্য। রাফসান আগেই ভেতরে চলে গেল। নিবিড় গেল না আমার দিকে এক পা এগিয়ে মাথা আমার দিকে ঝুঁকে নিচু কন্ঠৈ বলল, ‘ ভদ্রতা শেখোনি মাথায় কাপড় দিতে পারো না। এভাবে কেউ কারো সামনে আসে কাজের বুয়া লাগছে তোমাকে দেখতে।’

আমি জ্বলন্ত চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। আর রাগী গলায় বলতে লাগলাম, ‘কাজ করে গরমে মরতেছি। এখন ওনার জন্য আমার নাকি মাথায় কাপড় দিয়ে ঘুরতে হবে । আর কি বললেন কাজের বুয়া তো আমি কি আপনাদের জন্য পরী সেজে বসে থাকবো। শুনুন এই বিয়েটা তোমার একদম মত নাই তাই আপনাদের সামনে বিশেষ করে আপনার ওই চাচার সামনে আমি এত সেজেগুজে আসতে পারবো না।’
দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন গলায় বললাম।

নিবিড় বলল, ‘ বলি একটা বুঝো আরেকটা। আর সাজলেও তোমাকে পরী লাগে না।’

আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, ‘ আপনি আমার সাথে কি ঝগড়া করতে আসছেন?’

নিবিড় মাথা উঁচু করে চুল ঠিক করতে করতে বলল, ‘ কিন্তু আমাকে সব সময়‌ই হ্যান্ডসাম লাগে‌।’
বলে চলে গেল ভেতরে আমি ওনার দিকে হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম।

#চলবে….