#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১০
#নন্দিনী_নীলা
এভাবে যদি বিয়ে হয়ে যায় ছোঁয়ার তাহলে আমি আমার প্রতিশোধ কখনোই নিতে পারবো না। ও এভাবে আমার হাতে পার পেয়ে যাবে। এই ব্যাগটা নিয়ে আমি ওকে দিয়ে যা যা করাতে চাইছিলাম তার কিছু ই করানো হলো না। আমি জানতাম ও এই ব্যাগের জন্য হলেও আমার কাছে আসবে। কারণ ওর এই ওর সব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে এই ব্যাগের জন্য হলেও আমার কাছে আসবে মাথা নিচু করবে। খুব জেদ ওর কখনই আমার সামনে মাথা নিচু করে না। সব সময় আমার চোখে চোখ রেখে চিৎকার করে কথা বলে। ওকে আমি আমার সামনে আকুতি মিনতি করতে দেখতে চেয়েছিলাম। ও মাথা নিচু করে আমার কথা শুনবে। আমার ইশারায় নাচবে। তাই চেয়েছিলাম কিন্তু এই বিয়েটা এসে সবকিছুতে জল ঢেলে দিল। ধ্যাত। যেভাবেই হোক ওর বাসার ঠিকানাটা যদি আমি জানতে পারতাম তাহলে বিয়েটা আমি কিছুতেই হতে দিতাম না এত সহজে তো ওকে আমি ছেড়ে দেবো না। সারা কলেজের সামনেও আমাকে ইসাইড করেছে আমার কথা শোনেনি। তার মাশুল তো দিতেই হবে।
এদিকে আবার কাকার বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করছে। তোর মেয়ে পছন্দ হয়েছে বিয়ে করে নে না। কিন্তু না তার আবার মেয়ের বয়স কম সেটা চোখে পরেছে। আরে ভাই বয়স কম সেটা সেটা নিয়ে তোকে মাথা ঘামাতে হবে কেন ? মেয়ে রাজি হলে বিয়ে করে নে। না সেটা নিয়ে আবার এখন আমাকে মেয়ের সাথে দেখা করতে হবে তার মনের খবর জানতে হবে। এখন আমাকে হবু চাচির সাথে কথা বলতে হবে আর সে রাজি না হলেও বিয়েতে রাজি করাতে হবে এতদিন পরে আমার একমাত্র দেবদাস কাকা তার জীবনে কাউকে আনতে চাইছে সেখানে তার ভাইপো প্লাস ফ্রেন্ড হয়ে আমার তো একটা কর্তব্য আছে।
কাকার সাথে কথা বলে আসার পরে বাসার সবাই আমাকে ঘিরে ধরেছিল কাকা কি বলেছে? আমি সব বলেছি। আর সবার এখন একটাই কথা মেয়েকে যেহেতু আমাদের রাফসান পছন্দ করেছে ওই মেয়েকে রাজি করাতেই হবে।
সবার কথা ভেবে চিন্তে আর আমার একমাত্র দেবদাস কাকার কথা ভেবে আমিও রাজী হয়ে গেলাম কিন্তু না আমি একা কিছুতেই যাব না যতই হোক চাচী বলে কথা তাকে তো সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। সেই মেয়ে ভবিষ্যৎ আমার চাচি হবে তার সাথে যদি বুঝে-শুনেই সুন্দর হবে কথা বলতে না পারি তাই আমি নিজের নার্ভাসনেস কাটাতে,
আমার ছোটভাই আবিরকে সাথে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করলাম। ও থাকলে সুবিধা হবে কারণ ও চাচিকে চেনে আমি যেহেতু চাচিকে চিনি না ওকে নিয়ে যাবো।
.
এদিকে মামী আমাকে জানালো ছেলে নাকি কালকে আমার সাথে আলাদা দেখা করতে চায়। নিবিড় যে আসবে সেইটা ও বাসায় থেকে মামিকে জানানো হয় নাই কারণ ছেলে না আসলে আবার দেখা করতে দেয় কিনা তার শিওরিটি নাই এজন্য মিথ্যা বলা হয়েছে। মামির এই কথাটা শুনে আমার শয়তানি বুদ্ধি গুলো মাথায় এসে ভিড় করলো আমি খুশি হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি বললা?’
‘কালা নাকি কানে শুনিস না। কাল ছেলে তোর সাথে দেখা করবে। একদম কোন মতলব করার চেষ্টা করবি না। সুন্দর মত সুন্দর করে কথা বলবি। আবার সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবি। তোর বিয়েতে মত নেই এটা যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায়। আবার আজেবাজে কথা বলে বিয়েটা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আমাকে চিনিস তো আমি তোর মামী।’
‘আজব কথাবার্তা তোমাকে আমি চিনতে পারব না কেন! তুমি যে আমার শয়তান মামি সেটা সবাই জানে।’
মামি চিৎকার করে বললো কি বললি??
আমি বললাম, ‘ কিছুনা যাও তো।’
আমার মনে তো এখন লাড্ডু ফুটছে কাল দেখা হলো তাহলে তো ভালোই হবে আমি তো খুব করে চাইছিলাম লোকটার সাথে আলাদা করে কথা বলতে।
মামি আমাকে বকাঝকা করে চলে গেল বকবক করতে করতে। আমি কাল কি বলবো লোকটাকে কিভাবে বললে লোকটা বিয়ে ভেঙে দেবে। সেই সব ভাবতে ভাবতে আমার দিনটাই কেটে গেল ।
রাতে রবিনকে অনেক বলে কয়ে ফোনটা এনে আমি লিলি কল করলাম। ওর থেকে জানতে পারলাম ও নিবিড়ের থেকে ব্যাগ নিতে পারে নাই। প্রচন্ড রাগ হল নিবিড়ের উপর আমি আর কলেজে যাব না আমার বিয়ে হয়ে যাবে এইসব শোনার পর উনি আমার ব্যাগটা কেন রেখে দিয়েছেন। আমার ব্যাগ দিয়ে কি করবে। ওখানে তো আর সোনাদানা টাকাপয়সা রেখে দেই নাই আমার কিছু ইমোশনাল জিনিস আছে সেই সব জিনিস নিজের কাছে রেখে কি করবেন।
বিয়েটা বাই এনি চান্স হয়ে গেলে আমি ওনাকে ধরবো কিভাবে? আল্লাহ বিয়েটা যেন না হয় যেভাবে হোক এই বিয়েটা ভেঙে দাও।
ব্যাগটা তো আমি নেবই তার আগে বিয়েটা কিভাবে ভেস্তে দেওয়া যায় সেসব ভাবতে হবে।
পরদিন চারটায় দেখা করার কথা।
মামি আমার পেছনে শাড়ি নিয়ে ঘুরলো তারপর জোর করে আমাকে শাড়ি পরিয়ে পাঠানো হলো।
যে রেস্টুরেন্টের কথা বলেছে আমি সেই রেস্টুরেন্টের সামনে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটাকে দেখতে পাচ্ছিনা ভেতরে এজন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। 5 মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে কাকতাড়ুয়া মনে হল। যারাই রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আসলে রেস্টুরেন্টে না ঢুকে এরকম বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তার উপর আবার শাড়ি পড়ে বউ সেজে আছি। সবাই জোকারের মতো আমাকে দেখছে আর যাচ্ছে আর বের হচ্ছে। আমার খুব অস্বস্তি বোধ হল তাই আমি ভেতরে গিয়ে একটা ফাঁকা কেবিন দেখে বসে রইলাম। আরো 10 মিনিট চলে গেল কারো আসার নাম গন্ধ নাই রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। এদিকে বারবার অর্ডার চাই অর্ডার চাই বলে ওয়ার্ড বয় জ্বালিয়ে মারছে। আমি দাঁত কেলিয়ে উনাকে বিদায় করছি একটু পর আমার লোক আছে বলে। হঠাৎ আমার নজর দরজার দিকে পড়তেই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। যার জন্য বসে ছিলাম তাকে না পেলেও। নিবিড় কে দেখে আমার রাগটা মাথায় চড়ে বসলো। চট করেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম আচমকা। এমন কাকতালীয়ভাবে নিবিড়ের সাথে আমার এই রেস্টুরেন্টে দেখা হয়ে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবেনি। নিবিড় কে দেখে আমার ব্যাগটা হাতে নেওয়ার কথা আমার মনে পড়ে গেল। আর আমি দুনিয়াদারি ভুলে রাগে গমগম করতে করতে নিবিড়ের দিকে এগোতে লাগলাম।
কথা নাই বার্তা নাই গিয়ে একটা কথাই বললাম, ‘ আপনি লিলিকে আমার ব্যাগটা ফেরত দেন নাই কেন? শুনেছেন আমি আর কলেজে যাব না আমার বিয়ে হয়ে যাবে তাও আপনি আমার ব্যাগটা নিজের কব্জায় রেখে দিয়েছেন। আপনার মতলব কি? আমি কি আমার ব্যাগে কোটি কোটি টাকা রেখে দিয়েছি। যে টাকার জন্য আপনি আমার ব্যাগ নিয়েছেন। শুনেছিলাম আপনি নাকি খুব বড়লোক বাড়ির ছেলে। আর এখন আপনার স্বভাব দেখি আমাদের থেকেও খারাপ…
নিবিড় অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও আমাকে দেখে যে চরম অবাক হয়েছে তা ওর মুখ দেখে প্রকাশ পাচ্ছে। মুখটা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি বাঁচালের মতো কথা বলে নিজেই থেমে গেলাম আসলে রেস্টুরেন্টের অনেকেই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আসলে উত্তেজিত হয়ে উঁচু গলায় কথাগুলো বলছিলাম। এজন্য লজ্জা পেয়ে নিজেই তাড়াতাড়ি কথা অফ করে দিলাম। আর নিচু গলায় নিবিড় কে বললাম, ‘ এদিকে আসুন একটু প্লিজ।’
আমি যে টেবিলটায় বসে ছিলাম সেখানে ওদের নিয়ে আসলাম নিবিড়ের পাশে যে ছেলেটা আছে তাকে আমি ভুল করে লক্ষ করি নাই। তাহলে ওকে আমি চিনতাম কারণ এটাকে আমি কালকে খুব ভাল করে দেখেছি। নিবিড় চেয়ার টেনে বসে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখল দেখে গালে হাত দিয়ে বলল,, ‘হে তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে? হাসবেন্ড নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছো নাকি?
আমি চকিতে ফিরে বললাম, ‘কি বললেন আপনি?’
‘কেন ভুল কি বললাম শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে। আর তোমার সাজ পোশাক দেখে তো মনে হচ্ছে ম্যারিড হয়ে গেছো। আর হাসবেন্ড নিয়ে সেজেগুজে রেস্টুরেন্ট এসেছো। কিন্তু এটা কিন্তু তুমি ঠিক করলে না আমরা তোমার সিনিয়র ভাই তোমার কিন্তু আমাদেরকে বিয়েতে ইনভাইট করা উচিত ছিল। আর কেউ না আসলেও আমি কিন্তু তোমার বিয়েতে অবশ্যই আসতাম এভাবে লুকোচুরি করে বিয়ে করে ফেললে কেনো? ‘
‘একদম ফালতু কথা বলবেন না। আমার বিয়ে হয়নি আর আমি না এসেছি এখানে হাসবেন্ড নিয়ে। তাই আপনার ফালতু কথা বন্ধ করুন দয়া করে। আপনি আমার ব্যাগ কেন দেননি সেটা বলুন। আপনি এখনই আমার ব্যাগ দিবেন আমি কিছু জানিনা।’
‘ আচ্ছা তারমানে এখনো বিয়ে হয়নি তাহলে দাওয়াত টা অবশ্যই পাচ্ছি।’
‘ হয় নি আর হবে ও না।’
‘ মানে?’
‘আপনার এত মানে জানতে হবে না আপনাকে আমি যেটা বলছি সেটা করুন।’
নিবিড় ঠাস করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সো সরি। তোমার সাথে এখন আমার বসে ঝগড়া বা গল্প করার টাইম নাই। আমি এখানে এসেছি একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে তাই তুমি এখানে বসে থাকো আমি আমার কাজ করতে যাই বাই।’
বলেই নিবিড় ওর পাশে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আবির আমাদের হবু চাচির কোথায় দেখতো। এই ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে ঝগড়া করে আমি টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনা। চল হবু চাচির সাথে আড্ডা দিয়ে আসি।’
আমি পাশে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম সাথে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। এটাতো রাফসানের ভাইপো।
এই পোলা নিবিড়ের সাথে কি করছে আর নিবিড়ই বা হবু চাচির সাথে দেখা করবে মানে কি এসবের?
#চলবে…..
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_নীলা
আবির উঠছে না দেখে নিবিড় বিরক্তি কর গলায় বলল, ‘ এখানে থম মেরে বসে আছিস কেন? যাবিনা!’
আবির বলল, ‘ভাইয়া কোথায় যাব চাচি তো এখানে বসে আছে?’
নিবিড় চমকানো গলায় বলল, ‘ এখানে বসে আছে কই?’
বলে নিবিড় এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। এবার রাগী গলায় আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুই কিন্তু আমার হাতে এবার মার খাবি আবির।’
‘ তুমি রাগছো কেন ভাইয়া? এতক্ষণ এত কথা বললে চাচির সাথে আর এখন তুমি তাকে রেখে আশেপাশের খুজছি চাচিকে। তুমি কি পাগল হয়েছ নাকি?’
‘ কি বললি আমি পাগল হয়েছি?’
‘ তোমার সামনে তো হবু চাচি বসে আছে। তুমি চাচিকে কি আগে থেকেই চেনো কিভাবে চেনো ভাইয়া?’
নিবিড় থমকানো চোখের সামনে ছোঁয়ার মুখের দিকে তাকালো। ছোঁয়া হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে আছে। দুজনে চোখে বিস্ময়কর চাহনি।
নিবিড় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলল, ‘হোয়াট ছোঁয়া?’
ছোঁয়া বলল, ‘ আপনার ঐ বুইড়া চাচা এই বয়সে আমার মত বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে গেছে ছিহ লজ্জা করেনা আপনাদের। দাদুর বয়সী একজন কে নাতনি বয়সী মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
নিবিড় থম মেরে বসে আছে। নড়ছে না পাথরের মূর্তির মত চেয়ারে বসে আছে। আবির একবার নিজের ভাইয়ের দিকে তো একবার নিজের হবু চাচী’র দিকে তাকাচ্ছে দুজনেই পাথরের মত বস আছে।
আমি তো হতভম্ব হয়ে গেছি। নিবিড়ের চাচা সেদিন আমাকে দেখতে গিয়েছিল আর আমি আজকে তার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছি। এমনিতেই আমি বিয়ে করতে চাই নি। এখন এইসব শুনে আমার মন একটা কথাই বলতেছে যে মরে গেলেও আমি এই বিয়ে করবো মানে করবো না।
.
নিবিড় কি কথা বলবে এর আগে ওর মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। ছোঁয়ার সাথে কাকার বিয়ের কথা শুনে নিবিড়ের মাথা গরম হয়ে আসছে।
ও ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কাকার সাথে দেখা করার জন্য বউ সেজে এসেছে তাই না? বিয়েতে তো খুব ভালোই রাজি হয়েছো দেখছি। তাহলে আবার আমার কাছে কাকাকে বুইড়া বলে টিস করছো কেন ?’
আমি চট করেই চোখ তুলে নিবিড়ের দিকে তাকালাম আর বললাম, ‘ যা জানেন না তা নিয়ে একদম কথা বলবেন না। মাই লাইফ মাই রুলস তাই আমি যা খুশি তাই করবা আপনার কি? আমি বিয়েতে রাজি কিনা সেটা আমি বুঝব আপনাকে বুঝতে হবে না।’
নিবিড় চড়াও গলায় বলল, ‘ শুনো আমার এত ঠেকা পড়ে নাই তোমার বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করার। কিন্তু তোমার মত শয়তান ফাজিল মেয়েকে আমি আমার কাকার মত একটা শান্তশিষ্ট ভালো মনের মানুষের বিয়ে হতে দিতে পারিনা। তোমার সাথে কাকার বিয়েটা হলে কাকার জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে। আর আমি তার একমাত্র ভাইপো হয় সেটা তো দেখতে পারি না। আমি তোমার মত দজ্জাল মেয়ে কে আমার কাকার লাইফে আসতে দেবো না বিয়েটা তো আমি হতে দেবো না।’
আমি নিবিড় এর কথা শুনে খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘সত্যি আপনি বিয়েটা হতে দিবেন না? থ্যাংক ইউ সো মাচ। আপনি যদি কাজটা করে দেন তাহলে আর আমাকে কষ্ট করতে হবে না প্লিজ প্লিজ কাজটা করে দিবেন। আপনি তো জানেনই আমি ভালো মেয়ে না তো আমার মতো মেয়ের সাথে কেন এতো ভালো কাকার বিয়ে দেবেন? এই বিয়েটা ভেঙে দিয়ে একটা নম্র-ভদ্র ভালো মেয়ের সাথে আপনার কাকার বিয়ে দেন এটাই ভালো হবে। আর শুনেন আমি বিয়েতে রাজি হয়ে বা আপনার কাকাকে পছন্দ করে এমন শাড়ি পড়ে সাজগোজ করে আসি নাই। এটা আমাকে জোর করে পড়িয়ে দিয়েছে। ‘
নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘তোমার এই বিয়েতে মত নাই?’
‘ একদমই নাই!’
নিবিড় বলল, ‘আমার এত সুন্দর হ্যান্ডসাম কাকাকে দেখে তুমি অপছন্দ কর কিভাবে? তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো তাকে রিফিউজ করছো?’
আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি আবার এসব কথা বলছেন কেন দেখুন একেতে আপনার কাকার বয়স বেশি সে যতই হ্যান্ডসাম হোক তার সাথে আমার একদমই যায়না। আর তাছাড়া আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।’
নিবিড় বলল, ‘শোনো তোমাকে আমি অপছন্দ করি। আর আমি চাই না কোন মতেই তুমি আমার কাকার বউ হও। আর আমি এটা হতেও দেবো না। কিন্তু তুমি আমার কাকাকে নিয়ে কোন বাজে কথা আর আমার কাকা কি রিফিউজ করার চেষ্টা করবে না।’
‘ আপনি কি পাগল রিফিউজ না করলে আমার বিয়েটা ভাঙ্গবে কিভাবে? আমিতো কোন মতেই বিয়েটা করব না।’
‘তুমি করতে চাইলেও আমি তো বিয়েটা হতে দেব না। তোমার চাওয়া না চায় তো কিছু হবে না। তোমাকে দেখে আমার একদমই মনে হচ্ছে না তুমি বিয়েতে অমত আমার তো মনে হচ্ছে তুমি বিয়েতে যথেষ্ট রাজি। কিন্তু এখন আমাকে দেখে পার্ট নিচ্ছো।’
আমি এবার কপাট রাগী গলায় বললাম,, ‘ দেখুন আপনার সাথে আমি পার্ট নিতে যাব কেন? নিজেকে কে কি মনে করে আল্লাহ ভালো জানে। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমি এখনই বিয়ে করে আরেকজনের অধীনে চলতে পারব না। আমি নিজে একটা স্বাধীনতা চাই। সারা জীবন আমি মামীর কাছে লাথি-ঝাটা খেয়ে তার অনুসারে চলেছি। এখন আমি বিয়ে করে আবার স্বামী নামক ব্যক্তির অনুসারে চলতে পারব না। নিজেকে এতো ইম্পর্টেন্ট ভাববেন না। আপনি আমার ব্যাগ ফেরত দিন এই মুহূর্তে। ওই ব্যাগে আমি কোটি কোটি টাকা ভরে রাখি নাই যে আপনার কাজে লাগবে। ব্যাগে আমার আপন মানুষের কিছু স্মৃতি আছে সেগুলো আপনার কোন কাজে লাগবে না তাই দয়া করে ঝামেলা না করে সব ফেরত দিন।’
‘ আচ্ছা দিয়ে দিব একটা শর্ত আছে!’
আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আমার ব্যাগ নিতে আমাকেই শর্ত পালন করতে হবে?’
‘ব্যাগটা তোমার হলেও যেহেতু আমার কব্জায় আছে তাহলে তো শর্ত মানতেই হবে!’
‘ আমি কোন শর্ত মানতে পারলাম না আমার ব্যাগ নিতে আমি কোন দুঃখে আপনার ফালতু শর্ত মানতে যাব।’
নিবিড় কিছু বলতে যাবে ওর ফোন বেজে ওঠে ও ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে কাকার কল।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ চুপ থাকো কাকা কল দিয়েছে।’
আমি বললাম, ‘আপনার কাকা কল দিয়েছে তো আমি চুপ থাকবো কেন আমার ব্যাগ দিন তাড়াতাড়ি।’
‘ চুপ করো নাহলে জীবনেও ব্যাগ পাবে না।’
আমি দাঁতে দাঁত চেপে থেমে যায়।
নিবিড় ফোন কানে নিতেই রাফসান বলে উঠলো, ‘নিবিড় কই তুই?’
‘কেন কি হয়েছে কাকা আমিতো দেখা করতে আসছি জানোনা। তুমি বাসায় ছিল না তাই বলতে পারিনি।’
‘ আচ্ছা সমস্যা নাই তোরা কোন রেস্টুরেন্ট আছিস আমাকে বল। আমি আসতেছি আমি ছোঁয়ার সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই।’
নিবিড় রাফসানের কথা শুনে চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। আর বলল, ‘ হোয়াট? তোমার আসতে হবে কেন তুমি না বললে আসবে না!’
‘হ্যাঁ তখন তো আসতে চাইনি কত বললি এখন ভাবলাম তোর সাথে কি কথা হবে না হবে। তুই তো আবার এই মেয়েটাকে রাজি করাতে পাগল। তুই তো রাজি করানোর জন্য একটা গেম খেলবি আমার সাথে। তার থেকে বরং আমিও সরাসরি কথা বলি আর আমি কথা বললেই বুঝে যাবো যে ওরা কিনা।’
‘মানে কি তোমার কেন আসতে হবে? তখন আসতে বললাম রাজি হলে না এখন কেন আসতে হবে। আমি তো ঠিকমত কথা বলেছি তোমার আসতে হবে না প্লিজ।’
‘বেশি পাকনামী করবি না চুপচাপ ঠিকানা দে না হলে কিন্তু আমার হাতে মার খাবি।’
নিবিড় ফোন নিয়ে অন্যদিকে চলে এসেছে এখন কি বলবে কোনভাবেই কাকার সাথে দেখা ছোঁয়ার মিট করানো যাবে না। এমনিতেই কাকা বিয়েতে রাজি। আর আজকে ছোঁয়ার লুক যদি দেখে তাহলে তো শত কিছু বলেও আমি বিয়েটা ভাঙতে পারবো না।
‘কিরে কিছু বলছিস না কেন!’
‘আরে রাগ করো কেনো বলছি। দারাও কিন্তু হবু চাচি তো চলে যাওয়ার জন্য তারা করছে খুব। তুমি কতদুর আছো আধা ঘন্টা লাগবে আচ্ছা দেখি আটকানো যায় কিনা।’
নিবিড় ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো। আর ছুটে ছোঁয়া দের কাছে চলে এলো ছোঁয়া আবিরের সাথে কি যেনো কথা বলছিল।
নিবিড় ছুটে এসেছ ছোঁয়ার এক হাত ধরে টেনে বসা থেকে দাড় করিয়ে ফেলে আর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,, ‘ তাড়াতাড়ি ওঠ!’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ আরে কি হয়েছে ডাকাত পড়েছে নাকি। এমন তারাহুরা করছেন কেন ছাড়েন আমার হাত খালি টাচ করতে মন চায় তাই না আপনি আসলেই একটা….
নিবিড় রক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘ ওই কথাটা যদি উচ্চারণ করো। আই প্রমিস তোমাকেই রেস্টুরেন্টে এখানে সবার সামনে দাঁড়ানো অবস্থাতেই কিস করবো।’
নিবিড়ের কথা শুনে আমি নাক ছিটকে বললাম, ‘ ছিহ কি নোংরা চিন্তাভাবনা আপনার।’
নিবিড় আমার কথা শুনল না উত্তর দিল না আমাকে রেস্টুরেন্ট থেকে টেনে বের করে আনল। রাগ এ আমার শরীর কাঁপছে শাড়ি পরা অবস্থায় কি টানলে হাঁটা যায়?
#চলবে…….