অবাধ্য প্রেম পর্ব-১৪

0
4

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_১৪( প্রথম অংশ)
#নন্দিনী_নীলা

” তুমি কি গুলি করেছিলে?” প্রশ্ন করল নিবিড়।
আমি মাথা নেড়ে স্বীকার করলাম।
নিবিড় আমার গালে স্পর্শ করে অশ্রু মুছে দিয়ে বলল,” তোমার দ্বারা ও যদি এই খুন হয়ে থাকে তবুও তুমি নির্দোষ। কারণ তুমি নিজেকে রক্ষা করতে এসব করেছো। এখানে তোমার কোন দোষ নেই।”
” খুন ত করেছি। এই সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে না।”
বলেই ডুকরে উঠলাম। নিবিড় উঠে দাঁড়াল। ছোঁয়ার কপালে ওষ্ঠ স্পর্শ করে বলল,” ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।”
নিবিড়ের মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর হয়ে আছে।
” আপনি ও যান ঘুমিয়ে পড়ুন।”
নিবিড় গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
আমি শুয়ে পরলাম ক্লান্ত লাগছে। শুতেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
ঘুম ভাঙে চিৎকার চেঁচামেচিতে। আর মোড় ভেঙে বাইরে আসতেই নজর যায় নিবিড় সোফার উপর বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। ওনার পাশে বসে আছে নিলাশা বেগম। তিনি কি যেন বলছে নিবিড়ের ঠোঁটে হাসি। আমি দূরে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় আমাকে দেখেই বললো,,” ছোঁয়া আমাদের জন্য চা নিয়ে আসো তো।”
আমি রান্নাঘরে চলে এলাম। কি কথা বলছিল দু’জন? আমাকে দেখেই নিলাশা বেগম কথা থামিয়ে দিয়েছিল। আমি চা নিয়ে সামনে এলাম নিবিড় আগে কাপ নিল।

আমি ভেবেছিলাম নিলাশা বেগম নিবেন না‌ কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে চা নিয়েছে।
নিবিড় আমার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিল। তারপর নিলাশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,” মম দেখো ত আমাদের কেমন মানিয়েছে!”
আমি চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছি।
তিনি কটমট চোখে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে কিন্তু তবুও মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,” ব‌উদের রঙ এতো চাপা থাকলে কেমন আর লাগবে। কিন্তু তোর পছন্দ আমি আর কি বলব।”
বলেই উনি দাঁত কিড়মিড় করে চলে গেল।
আমি খুব বেশি চমকালাম।
” আন্টির কি হয়েছে? এতো স্বাভাবিক আচরন কেন?”
” এসব এখন ভেবো না ত। দুইদিন বাদে আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে একটু পর সবাই শপিং মলে যাব তৈরি থেকো।”
” মানে?”
” মানে হলো আমার রেজিস্ট্রি করা ব‌উ কে এবার কবুল বলে নিজের রুমে নিয়ে যাব। তার জন্য আয়োজন করা হচ্ছে।”
” এসব কখন করলেন? আমি এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে বসে আছি আর আপনি বিয়ে নিয়ে মেতে আছেন। দুদিন পর যখন আবার পুলিশ নিতে আসবে তখন বুঝবেন।”
” কার এতো সাহস আছে আমার ব‌উকে নিতে আসবে। তুমি ওইসব নিয়ে প্যারা নিও না। সব আমি সামলে নিব।”

খাবার টেবিলে বসেছে সবাই সাফ করছে তাহমিনা আপু। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি কি করব বুঝতে পারছি না। নিবিড় আমাকে টেনে এনেছে। বসতে বলেছে কিন্তু বসছি না। এবার জোর করে বসিয়ে দিল নিজের পাশে। তাহমিনা আপু সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে নিবিড়ের কাছে আসতেই নিবিড় বসে উঠল,,” আমার ব‌উ আছে। সেই আমাকে বেড়ে খাওয়াবে।”
তাহমিনা আপু ভাত দিতে গিয়েও চমকে উঠে হাত সরিয়ে নিলো।
এইভাবে কথাটা বলবে কেউ আশা করেনি‌।
নিবিড় এইভাবে কথা বলেছে দেখে সবাই চমকে তাকিয়েছিল। আমি নিবিড়ের গম্ভীর মুখটার দিকে তাকিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে ভাত, মাছ ভাজা, দিলাম প্লেটে।
সবাই আবার খেতে বসেছে। আমি ফিসফিস করে বললাম নিবিড়কে,” ওভাবে কথা বললেন কেন? কি ভাবছে সবাই?”
” কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার!”
কাল রাতে সব বলায় যে নিবিড় তাহমিনা আপুকে সহ্য করতে পারছে না সেটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এইভাবে সবার সামনে সেটা প্রকাশ করবে ভাবিনি।
আপু আর এদিকে আসেনি। আমার প্লেটে নিবিড় একটু পর পর গোস্ত তুলে দিচ্ছে লজ্জা আমি কারো দিকে তাকাতে পারছি না।
আবির হঠাৎ বলে উঠল,” ভাইয়া তোমার প্রিয় রানের পিস ভাবিকে দিয়ে দিছো।”
” আমি আর আমার ব‌উ কি আলাদা নাকি। একজন খেলেই হয়।”
” তুমি নিজের ভাগ ছাড়লেও আমি কিন্তু ছেড়ে ব‌উকে দিতে পারব না।”
সবাই মিটিমিটি হাসছে। ছোট চাচি বলল,” আদ্যিখেতা যতসব। এই মেয়ে খুন করছে তারে পুলিশ পর্যন্ত থানায় নিয়েছিল তারে নিয়ে এত আদিখ্যেতা।”
নিবিড় রাগী গলায় বলল,” ছোট কাকি তোমার যদি আদ্যিখেতা দেখতে অসহ্য লাগে। নিজের রুমে বসেই খেতে পারো। ”
” আমি তোমার কাকি হ‌ই নিবিড়। ব‌উয়ের জন্য আমাকে অপমান করছো?”
” যেচে অপমানিত হতে চা‌ইলে না করে কি উপায় আছে?”
” আমি যেচে অপমানিত হতে আসছি? সত্যি কথা ও বলতে আজকাল ভাবতে হবে?”
” আজ যদি ছোঁয়া খুনি হয়ে থাকে। তার জন্য এই বাসার লোকজন দায়ী।”
” তোমার মা তোমার জীবন থেকে যেতে বলেছিল খুনি হতে বলেনি।”
” যেতে না বললে আজ খুন করার প্রয়োজন পরত না।”
তিনি আর কথা বলল না। রাগে গজগজ করে চলে গেল খাবারের প্লেট নিয়ে। এদিকে ছোঁয়া ও খাবার রেখে চলে গেছে। ওর জন্য এতো ঝামেলা ও সহ্য করতে পারছে না। ছোঁয়া কে নিজের পাশে না পেয়ে নিবিড় ও খাবারের টেবিলে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
আশার দিকে তাকিয়ে বলল,” নতুন করে খাবার নিয়ে আয়।”
বলেই চলে গেল গেস্ট রুমের দিকে।

বিকেলে মাইশা আর ওর মা এসে হাজির। নিবিড় রা তখন শপিং মলে যাবার জন্য বের হচ্ছিল। মাইশা এসেই তা দেখে যাওয়ার বায়না ধরল অগত্যা ওকে নিয়ে যেতে হলো।
এদিকে নিবিড় বন্ধু মহলের সবাই এসেছে। তৌহিদ এসেই জানালো ওর সাথে নাকি রাত্রির কথা হয়। রাত্রি ওদের কথা জিজ্ঞেস করছিল।
ছোঁয়া ফোন নিয়ে নিজেও কথা বলল রাত্রির সাথে আর বিয়েতে আসতে বলল।
রাত্রি আসবে জানাল।
মাইশা শুধু নিবিড় আর ছোঁয়া কে নজরে রাখছে। ভেতর টা পুড়ে যাচ্ছে ওর।
কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। মন চাচ্ছে ছোঁয়া কে মেরে ফেলতে।
নিবিড় একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করেছিল ছোঁয়ার জন্য তখনি দৌড়ে এসে মাইশা সেটা হাতে নিয়ে বলে,” ব্রো কি সুন্দর এটা আমি নিব প্লিজ।”
বলেই টেনে হাতে নেয়। বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা। নিবিড় কিছু বলতে চাইছিল ছোঁয়া ওকে টেনে এনেছে।
“ওখানে আর কথা বলে ঝামেলা চাই না‌। আপনি এ নিয়ে আর কথা বলিয়েন না।”
অন্য দোকানে এসে শাড়ি দেখছে ওরা। রিসা একটা কাতান শাড়ি আনল মেজেন্ডা কালারের। নিবিড় উল্টে পাল্টে রেখে দিল সেটা। শাড়ি বের করতে করতে পাহাড় করে ফেলেছে দোকানদার কিন্তু নিবিড়ের পছন্দ হচ্ছে না।
আমি ক্লান্ত চোখে গালে হাত দিয়ে বসে আছি। নিবিড় একটা মিষ্টি কালারের বেনারসী হাতে তুলে নেয়। সোনালী কাজ, সুন্দর পাথর বসানো দারুন শাড়িটা। নিবিড় সেটায় আঁচল তুমি দিল আমার কাঁধে তারপর সেটা সিলেক্ট করল সেটা। এরপর এলো লেহেঙ্গা হাউজ এ।
পিন কালারের একটা লেহেঙ্গা চয়েজ করল তার ওরনা আমার মাথা দিল ঘোমটা টেনে।
” আপনি দেখি মেয়েদের থেকে ও বেশি সময় নেন। চলেন তো বিরক্ত লাগছে।”
” চুপচাপ আমার পিছনে আসো নো টক‌।”
নীল লেহেঙ্গা নিল আরেকটা।
” আমাকে নীলে ভালো দেখায় না। কালো মেয়েদের নীলে খারাপ লাগে।”
নিবিড় ধমক দিয়ে বলল,,” চুপ বেয়াদব আমি যা খুশি নেব। একদম আমার ব‌উকে কালো বলবে না। মেরে ফেলব।”
গহনার দোকানে এসে আমাকে গহনা পরিয়ে জোকার বানালো নিবিড়। গলায়, কানে, মাথায় হাতে কোমরে পরিয়ে সিলেক্ট করল।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” রানীর মতো লাগছে। এটা তো নিবিড়ের পাঠরাণী‌।”
আমি কটমট করে চেয়ে আছি‌।
” এভাবে তাকিও না এইখানে লাগে।”
বুকের বাম পাশে ইশারা করে বলল।

সবাই ডিনার করল। আমি আইসক্রিম খেলাম শুধু। বাসায় এসে দেখি আরেক সার্কাস। মাইশা পরে
ও আমার জন্য চয়েজ করা জিনিস নিতে চাইছিল তাই নিবিড় ধমক দিয়েছিল এজন্য রাগ করে চলে এসেছিল। এখন সে দেখি ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে।
মাইশার মা বলল,” আমার মেয়েকে তুমি কাঁদিয়ে বাড়ি পাঠালি? ব‌উ পেয়েই বোনদের প্রতি অবিচার শুরু করে দিছিস?”
” ফুপি তোমার মেয়েকে মার্কেট করিয়ে দিতে পারব একবার ও বলিনি। আমি এখনো কামাই করিনা। এসব আমি বাপের টাকায় কিনছি। আর তোমার মেয়েকে যে কে কি শিখিয়ে দিয়েছিল আমি ভালোই বুঝতে পারছি তাই তাকে বলো এই নাটক বাদ দিতে না হলে কিন্তু…
মাইশার কান্না অফ ও চোখ মুছে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,” আম্মু বাদ দাও তো।”
বলেই চলে গেল মাহির রুমে। মাহি নিজের ব্যাগ নিয়ে নিজেও এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে র‌ইল।

#চলবে….

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_১৪( বর্ধিতাংশ)
#নন্দিনী_নীলা

যেহেতু আমি এখন এই বাড়ির বউ। এ জন্য রান্না ঘরে এসে ছিলাম। সহযোগিতা করতে কেউ আমার সাথে অবশ্য কথা বলেননি। আমি নিজের মতো কাজে এগিয়ে দিয়েছি সকালের নাস্তার পর একটা লোক আসে নিবিড় আমাকে নিয়ে রুমে আসে। তার হাতে আর্ট পেপার তিনি আর্ট করেন। নিবিড়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”সেদিন যে অটোর ড্রাইভার এর গাড়িতে উঠেছিল। তার চেহারা তোমার মনে আছে?”
আমি ঝটপট বললাম,”হ্যাঁ স্পষ্ট মনে আছে। কেন কি হবে?”
“তুমি সেই ড্রাইভারের চেহারার বর্ণনা দিবে। উনি হচ্ছে আর্টিস্ট। উনি তোমার মুখের তার বর্ণণা শুনে আর্ট করবে। তিনি হচ্ছে এই কেসের মেইন ক্যারেক্টার। তাকে পাওয়া গেলে সব কিছু জানা ইজি হয়ে যাবে‌‌। আর তোমাকে ছাড়ানো সহজ হয়ে যাবে।”
“তাকে আপনি কোথায় খুঁজে পাবেন? তিনি ও এই সবে জড়িত ছিল।”
“সেসব তোমার ভাবতে হবে না। এখন যা বললাম তাই করো।”
অজ্ঞতা আমায় বলতে হলো। আর্ট শেষ করতে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। একদম সেই লোকটা যেন দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। নিবিড় তাকে তার পারিশ্রমিক দিয়ে কাগজ রেখে দিল আলমারি তে।

আমি নিবিড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম,”আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না!”
নিবিড় আমার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বলল,,” আসো প্রেম ভালোবাসা করি।”
আমি ছটফট করে নিবিড়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,” এইভাবে ধরবেন না কেমন কেমন জানি লাগে!”
” কেমন লাগে?”
” জানি না। অসভ্যতামি করবেন না। যা জিজ্ঞেস করেছি বলেন।”
নিবিড় এবার সোজা দেয়ালে ঠেসে ধরে দাঁড় করিয়ে দিল আমাকে। আর আচমকা গভীর ভাবে অধর স্পর্শ করে বলল,” ব‌উয়ের কাছে আসলে যে অসভ্যতামি করা হয় আজ প্রথম শুনলাম।
কিন্তু আমি তো অসভ্য ই সেই প্রথম দিন থেকেই। আজ কেন ভালো হতে যাব?”
আমি ঢোক গিলে বললাম,” আচ্ছা সরি। ছাড়ুন প্লিজ।”
” কেন জান? আদর না করেই ছেড়ে দেব?”
” দেখুন এখনো কিন্তু ধর্মীয় মতে আমাদের বিয়ে হয়নি।”
” জানি ত এজন্য শুধু ঠোঁটে চুমু খেলাম। না হলে আরো কতো জায়গায় স্পর্শ করতাম।”
” আপনার একটুও লজ্জা নাই তাই না!”
” লজ্জা তো নারীর ভূষণ। আমি কি নারী ?”
” ধ্যাত।”
নিবিড় হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। প্রখর অনুভূতি ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি থেকে থেকে ঢোক গিলছি। নিবিড় দৃষ্টি দিয়েই আমাকে মেরে ফেলবে মনে হচ্ছে।
আমি জড়ানো কন্ঠে বললাম,” কি হয়েছে?”
নিবিড় আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,” খুব বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। তুমি আমায় ছেড়ে গিয়ে কতোটা কষ্ট দিয়েছিলে জানো?”
” জানি‌।”
” আমি যখন মদ খেয়ে তাল মাতাল হয়ে পড়ে থাকতাম কি দেখতাম জানো?”
ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি।নিবিড়ের গরম শ্বাস আমার চোখ মুখে বারি খাচ্ছে আমি চোখ বন্ধ করে বললাম,” নাহ।”

“তুমি স্বার্থপরের মত আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেলেও। স্বপ্নে কিন্তু তুমি ঠিকই আসতে। এসে আমাকে ভালবাসতে অনেক বেশি ভালবাসতে। আমি এজন্য জেগে থাকার থেকে মাতাল হয়ে পড়ে থাকতাম সবসময়। সেই স্বপ্নগুলো খুব বেশি মধুর ছিল। আমি জেগে থেকে তোমার নিঃসঙ্গতা মেনে নিতে পারতাম না। কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় তোমার সঙ্গ টা খুব বেশি ভালোবাসা ময় ছিল। আমি সেই মধুর স্বপ্নগুলো বাস্তবে চাই ছোঁয়া। স্বপ্নের মত তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। প্রতিটা রাত্রিতে আমার বুকে মাথা রেখে কাটাবে। প্রত্যেকটা সকালে চোখ মেলে আমি তোমার মুখটা দেখব‌। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসি বলবে। পূরণ করবে আমার এই মধুর স্বপ্নগুলো?”
আমার চোখে পানি চলে এলো। আমি বললাম,” করব।”
নিবিড় একটু সরে আসল আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল, “সবার সাথে কিন্তু তুমি ও দোষী। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তোমার ছিল। বাধ্য করলেও নিজ ইচ্ছায় গেছিলে। সবাইকে শাস্তি দেওয়ার আগে তোমাকেও দেওয়া উচিত তাই নয় কি?”
আমি চমকে উঠে বললাম,,” কি বলছেন? আপনি আমাকে শাস্তি দেবেন?”
” অপরাধ যে করে তার ত শাস্তি পাওয়াই উচিত।”
” আমি ও কিন্তু আপনাকে ছাড়া ভালো ছিলাম না।”
” নিজের খারাপ থাকাটা ত তুমি নিজের দায়িত্বে বেছে নিয়েছিলে।”
নিবিড় আমাকে রেখেই বেরিয়ে গেল।
আমি হতভম্ব হয়ে চেয়ে র‌ইলাম। কি শাস্তি দেবে
নিবিড় আমাকে? ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।

শাস্তি আর খোঁজে পেলাম না। নিবিড় কেই আর পেলাম ক‌ই? সারাদিন বাড়ি নাই। বিকেলে তার দেখা পেলাম। এসেই তিনি কাজে লেগে গেছে। কাল হলুদ সন্ধ্যার আয়োজনে। আজকে হালকা আয়োজন করেছে ঘনিষ্ঠ চাচাতো মামাতো ভাই বোনরা। হালকা সাজুগুজু করে রাতে মেহেদী লাগাবে ও নাচানাচি করবে। এজন্য ছাদে সব কিছু নিয়ে রেডি করছে। আমি ও ওদের হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছি।
নিবিড়ের আনা নীল লেহেঙ্গা পরতে হলো আমাকে। নিবিড়ের আদেশ বলে কথা। নিবিড় নীল পাঞ্জাবি পড়েছে। লেহেঙ্গা টা যেহেতু সিম্পলের ভিতরে এজন্য পড়েছি রাত আটটায় সবাই উপরে গিয়ে বসে আছি। মেহেদী আর্টিস্ট বলতে নিবিড়ের চাচাতো বোন নার্গিস আপু।
নিবিড় বসে আছে আমার পাশে। জোর করিয়ে আমার হাতে নিজের নাম লিখিয়েছে।
এতো কিছুর মাঝে তাহমিনা আপুর দেখা পায়নি।
আজ সকাল থেকেই থেকে তাকে দেখছি না। খাওয়ার টেবিলে ও ছিল না।
আমি ফিসফিস করে বললাম নিবিড় কে,,” তাহমিনা আপু কোথায় দেখছেন?”
” ওই মহিলার কথা আমার কাছে বলবে না।”
” এতো রাগ করছেন কেন?”
” উনার জন্য আমার জীবন থেকে নয়টা মাস হারিয়ে গেছে তুমি বিহীন।”
আমি মেহেদী হাতে বসে আছি। নিবিড় ফোন কানে ধরে সরে গেল। কারণ এখানে নাচানাচি গান বাজনা হচ্ছে‌।
এজন্য দূরত্বে গিয়ে কথা বলার জন্য। আগামীকাল লিলি আর দীপা আসবে ওদের কল করেছিলাম। এদিকে মামা মামিকে ও খবর দেওয়া হয়েছে আসবে কিনা জানি না‌।
রনিকে দেখি না কতো দিন। আসলে ভালো হতো।

নিবিড় পূর্ব পাশের কোনায় চলে এসেছে এখন একটু শান্তিতে কথা বলা যাচ্ছে। ওদিকে চেঁচামেচি তে কিছুই শোনা যায়নি।
এজন্য আসতে আসতে একদম কর্ণার এ চলেছে এসেছে এদিকে অন্ধকার। ফোন রেখে পেছনে ঘুরতেই একজোড়া হাত ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে‌। আচমকা এমন ‌হ‌ওয়াতে ও চমকে পিছিয়ে রেলিং এর সাথে ঠেকে যায়।
অন্ধকারে কে ওকে জরিয়ে ধরেছে ও বুঝতে পারছে না। কিন্তু রাগে ওর কপালের রগ ফুলে উঠেছে। নিজের থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে কিন্তু তত‌ই মেয়েটি ওকে আরো শক্ত করে চেপে ধরছে।
নিবিড় ফোন পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে দুই হাতে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। মেয়েটি ওর থেকে ছিটকে সরে গেছে। সরে গিয়েও থামে নি আবার এগিয়ে এসে জোর করে চুমু খেতে চাইছে। নিবিড় হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। কে এই মেয়ে ও তাড়াতাড়ি হাত ধরে আলোতে আনতে চায় মেয়েটি ভয়ে নিবিড় কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে চলে যায়। নিবিড় ও ছুটে আসে।
এইখানে কে আমার সাথে এমন করতে পারে? মাইশা?
কিন্তু ও তো ছোঁয়ার সাথে বসে আছে। তাহলে কে ছিল ওই মেয়ে। ইভা রিসা মাহি ওরা তো এমন করবে না‌।
অপরিচিত কোন মেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে ছিল ভাবতে রাগে লাল হয়ে উঠে‌। কারো দিকে না তাকিয়ে নিচে নেমে আসে।
বাথরুমে ঢুকে বুক গলা গাল ঠলে লাল করে গোসল খানা থেকে বের হয়।
উপরে আর যায় না। ওই মেয়েকে ধরা না পর্যন্ত ও শান্তি পাবে না।

এদিকে অনেকক্ষণ ধরেই নিবিড় কে আমি খুঁজছি কোথায় গেলেন তিনি। তার দেখা আর পেলাম না‌। মেহেদী শুকিয়ে আসছে দু’ঘণ্টার মতো হাঁসফাঁস করে উঠে দাঁড়ালাম সবাইকে রেখে আমি নিচে নামতে লাগালাম। উদ্দেশে নিবিড়কে খোঁজা। প্রথম লাইনের সিঁড়ি নেমে দ্বিতীয় লাইনের সিঁড়িতে নামতেই মনে হলো কেউ আমাকে পিছন দিকে ধাক্কা মারলো। লেহেঙ্গা, যেহেতু পড়েছিলাম হাতে মেহেদীর জন্য ভালো করে ধরতে পারিনি এজন্য সাবধানে আস্তে আস্তে নামছিলাম। ধাক্কা লাগাই লেহেঙ্গা টা ভেজে উল্টে পরলাম সিঁড়ি গড়িয়ে। এদিকে তখন আশা আসছিল ও আমাকে এইভাবে পরতে দেখে চিৎকার করে বাসা মাথায় তুলে নিল। আর আমি তো কথা বলতেই পারছি না। নড়তে পারছিনা। সারা শরীর ব্যাথায় চিনচিন করছে। কপালেও বাড়ি খেয়েছি। উঠার মতো শক্তি অবশিষ্ট নাই আমার। মুখ থুবড়ে পরে আছি ফ্লোরে।
সিঁড়ির দরজার কাছেও প্রথম রুমটা ছিল তাহমিনা আপুর। চিৎকারে আপুই প্রথম দৌড়ে এলো আমার কাছে। আর জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
আমাকে ধরে উঠানোর চেষ্টা করল আমিও উঠতে পারছি না। ব্যাথায় আমার চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরছে।
নিবিড় বাদে সবাই এসেছে আমাকে তাহমিনা আপু আর আশা টেনে তুলে নিল। গেস্ট রুম দূরে বিদায় আপুর রুমে নিয়ে গেল আমাকে।
ব্যাথা ভুলে ভাবছি কে আমাকে ধাক্কা দিল আমি স্পষ্ট অনুভব করেছি কেউ আমাকে সজোরে ধাক্কা মেরেছে।
আশা দৌড়ে চলে এসেছে নিবিড়ের রুমে। সব বলতেই নিবিড় ছুটে এসেছে রাফসান কাকার রুমে।
আপু তখন আমার কপালে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিল। কারণ বারি খেয়ে রক্ত বেরিয়ে গেছে।
নিবিড় এসে আমাকে পাঁজকোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে এলো। আপুকে ব্যান্ডেজ পর্যন্ত করতে দেয়নি। আপু অপমানিত মুখে বসে তাকিয়ে ছিল।

” পরলে কীভাবে?”
” জানি না।”
” তুমি একা নামতে গিয়েছিলে কেন?”
” আপনি কোথায় ছিলেন আমি আপনাকে খুঁজতে আসছিলাম।”
” বাবাহ হাজবেন্ড কে চোখে হারাও দেখছি।”
” তেমন কিছু না‌। আপনি সেই যে ফোন কানে ধরে গেলেন আর এলেন না কেন? মুখটাও কেমন জানি লাগছে এই সময় গোসল নিয়েছেন কেন?”
নিবিড়ের মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠল। ছোঁয়াকে কীভাবে বলবে কথাটা ও বুঝতেছে না।
” কি হলো কথা বলছেন না কেন? এতো রাতে গোসল করলেন কেন? শরীর খারাপ লাগছে কি?”
নিবিড় কথা ঘুরিয়ে বলল,” কোথায় কোথায় ব্যাথা পেয়েছো বল!”
” আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন?”
” নাহ এখন বলতে চাচ্ছি না। তুমি জিজ্ঞেস করো না।”
” আচ্ছা করলাম না। কিন্তু এটাতো বলেন আপনার গালে আর গলায় কি হয়েছে এতো লাল হয়ে আছে কেন? মনে হচ্ছে অনেক ঘষেছেন।”
নিবিড় কালো টিশার্ট পরে ছিল। গেঞ্জির গলায় বোতাম দেওয়া দুইটা নিবিড় বোতাম লাগায় নি। এজন্য ফর্সা গলা লাল টকটকে হয়ে আছে দেখা যাচ্ছে। গাল দুটোও লাল হয়ে আছে। আজ সকালেই নিবিড় দাড়ি মোছ কমিয়ে এসেছে। এখন আর তাকে জঙ্গল দেখা যায় না। আগের সেই নিবিড় লুকে ফিরে এসেছে‌।
আমি নিবিড়ের গালে হাত বুলিয়ে বললাম,” কি হয়েছে আপনার!”
” নোংরা কিছু ছুঁয়ে দিছিল তাই ঘষাঘষি করছি।”
” তাই এইভাবে!”
নিবিড় কথা বলল না। আমি এগিয়ে এলাম নিবিড়ের দিকে। আর একদমই কাছে চলে এলাম। লাল হ‌ওয়া গালের কাছে মুখ এগিয়ে চুমু খেলাম। নিবিড় চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার মানুষটির আদর স্পর্শ অনুভব করল।
আমি সরে আসতে চাইলে নিবিড় আমার হাত চেপে ধরে আটকে বলল,” এখানেও একটু ছুঁয়ে যাও। নোংরা স্পর্শ চলে যাক‌ তোমার স্পর্শে।”
বলেই বুকের দিকে ইশারা করল।
আমি নিবিড় কে জরিয়ে ধরলাম। বুকে মুখ গুঁজে বললাম,,, ” এই বুকে ছোঁয়া ছাড়া কারো স্পর্শ পরতে দেবেন না কখনো। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা।”
দুজনে ভালোবাসায় মিলে মিশে একাকার হয়ে জরিয়ে বসে র‌ইল। এদিকে একজোড়া চোখ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে হিংস্র দৃষ্টি ফেলে।

#চলবে…..