অবাধ্য প্রেম পর্ব-২১+২২

0
520

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২১
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড় আমাকে ধমকে চলে গেল। এদিকে দেখি তাহমিনা আপুও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমার দিকে আসছে আমি ঢোক গিলে তার দিকে এগিয়ে গেলাম আমাকে রেখে চলে গেল। আমি হাঁ করে অটোর দিকে তাকিয়ে আছি‌। এটা কি হলো ? রাগে মুখ রাফসান কাকার দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বললাম, ‘ আপু এতো রেগে আছে কেন? কি করেছেন?’

রাফসান কাকা বলল, ‘ আমি কিছুই করিনি। আমাকে দেখেই রাগে আগুন হয়ে গেছে। আর তুমি আমাকে সাহায্য করেছো তাই তোমার উপর রাগ করেছে।’

‘আপনার জন্য এতো সুন্দর বোনের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল। আপনাকে আমি কেন যে হেল্প করলাম। আপুর রাগ ভাঙাব কি ভাবে?’

‘ এখন রেগে আছে কালকের আগে আর কথা বলতে যেও না।’

আমি নাক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আমি কাল বাসা থেকে চলে আসব‌। মনে নাই আপনার।’

‘ হ্যা থাকবে না কেন? তোমার বাসা রুম সব ঠিক করে ফেলেছি ডোন্ট ওয়ারি।’

আমি বললাম, ‘ কোথায় কেমন বাসা ঠিক করেছেন? আপু তো চলেই গেছে চলেন আমি দেখব এখন গিয়ে।’

‘ এখানে থেকে অনেকটা দূর রাত হয়ে যাবে আমার উপর আস্থা রাখো। কাল সকালে এসে নিয়ে যাব তোমাকে!’

‘ আচ্ছা। আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসেন ভাড়া নাই।’

রাফসান কাকা বলল, ‘ এখন একটা জরুরী মিটিং এ যেতে হবে তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছি দাঁড়াও।’

বলেই গাড়ি ঠিক করতে রোডে চলে গেল। আমি ও এগিয়ে এসে দাঁড়ালাম।
অটো ঠিক করে আমাকে পাঠিয়ে দিল। একটু যেতেই কেউ একজন লাফিয়ে অটোতে উঠল। আমি চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি বদমাইশ নিবিড়। আমার দিকে শয়তানি চাহনিতে তাকিয়ে আছে।

আমি চিল্লিয়ে উঠে বললাম, ‘ আপনি আপনি এখানে কি করছেন? এভাবে কেউ গাড়িতে উঠে। আর আপনি গাড়িতে উঠলেন কেন? আপনার নিজেরই তো গাড়ি আছে আপনি আমাকে ফলো করছেন? কি উদ্দেশ্যে আপনি গাড়িতে উঠলেন আপনার মতলব তো আমার ঠিক লাগছে না।’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কুল ডাউন। আমি গাড়ি টাড়ি কিছুই নিয়ে আসিনি আজকে।’

‘কেন নিয়ে আসেননি। আমাকে জ্বালিয়ে মারার জন্য।’

‘জি না তোমাকে মেরে তো আর কোন লাভ নাই। আমি কাকাকে ফলো করতে করতে এসেছি। গাড়ি সাথে আনলে ধরা পড়ে যেতাম না।’

‘ তাহলে ভালো করেছেন।আমার সাথে আসলেন কেন? তখন আমার সাথে মিস বিহেভ করে আমাকে ধমক দিয়ে এখন আবার আমার সাথে গাড়িতে উঠলেন। আপনার কি লজ্জা শরম নাই?’

‘ আমার ছোটবেলা থেকে লজ্জা একটু বেশি।
দেখনা এক সাথে বসে ও কিন্তু মাঝখানে আমি আরো দুজন বসার মত জায়গা রেখে দিছি। আমি এত বড় দেহের একজন মানুষ হয়েও চিপকে আছি একপাশে। মেয়েদের সাথে টাচ লাগলেও আমি লজ্জায় লাল হয়েছে।’

বলে মেয়েদের মত লজ্জা পাওয়া শুরু করল। আমি এখন কি করব কি বলব বুঝতে পারছি না।‌ এতো অ্যাক্টিং করতে পারে এই মানুষটা।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘এই শুনেন আপনাকে ইঞ্জিনিয়ারিং করতে বলেছিল কে? আপনি তো একজন ভালো অ্যাক্টার্স এত ভাল অ্যাক্টিং করতে পারেন। আপনার একজন অভিনেতা হওয়া উচিত ছিল।’

‘আচ্ছা অভিনেতা হয়ে যাব কিন্তু নায়িকা কিন্তু তোমাকে হতে হবে। যেহেতু তুমি প্লান টা দিয়েছে তোমাকে ও ওইখানে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

‘ রাখেন রাখেন চলে আসছি। উফফ আল্লাহ বাঁচিয়েছে।’
আমি গাড়ি থেকে নামতেই নিবিড় ও গাড়ি থেকে আমার বাসার সামনে নেমে গেছে। অটোআলা চলে গেছে আমি নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করি,

‘আপনি এখানে নামলেন কেন?’

‘হবু কাকির সাথে দেখা করতে যাবো। কাকি আমার কাকার সাথে কি রাগ তাই না করেছে যে তোমার দিকে ও তাকালো না। তাকে কনভেন্স করতে হবে না।’

বলেই আমাকে রেখে চলে গেল কি ছেলেরা বাবা। আমি এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি বাইরে। নিবিড়কে বাইরে দেখছি না। আমি সাহস করে দরজা ধাক্কা দিলাম।
দরজা খুললোই না আমি ১০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকে উপরে চলে গেলাম।
উপরে এসে বারান্দা থেকে দেখতে পেলাম নিবিড় চলে যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি নিচে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।

পরদিন সকালে আমি সবকিছু গুছিয়ে মলিন মুখে বেরিয়ে এলাম আশেপাশে সবাই বিশেষ করে যাদের পড়াতাম কান্নাকাটি করল। সবার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক ছিল অনেক পছন্দ করত না। আবার অনেকে পছন্দ করত যাদের আমার হেল্প দরকার হতো। যাইহোক কমবেশি সবার সাথে একটা সম্পর্ক ছিল হয়ত তিক্ততার সম্পর্ক না হলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

আমি ভাবছিলাম এখনো বোধহয় রাগ করে তাহমিনা আপু আসবে না। কিন্তু তিনি এসেছেন।

আমি মাথা নিচু করে বললাম, ‘ সরি আপু রাগ করে থেকো না প্লিজ।’

‘ এসব কথা বাদ। সাবধানে থাকিস। আর আমার সাথে দেখা করতে চলে আসিস।’

‘ ওকে আসবো।’

নিচ পর্যন্ত আমাকে দিতে আসছিল । কিন্তু মাঝ পথে থেমে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলাম গেটের বাইরে রাফসান কাকা দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে। তাকে দেখেই আর গেল না আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল।

গাড়িতে উঠে আমি বললাম, ‘ আচ্ছা এখান থেকে আমার নতুন বাসার দূরত্ব কতখানি? আমি কি প্রতিদিন একবার করে আপুর সাথে দেখা করতে আসতে পারবো?’

কাকা বললেন,, ‘ ২০০ টাকা খরচ হবে যদি ২০০ টাকা খরচ করে আসতে পারো এসো!’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ বলেন কি তাহলে আমি তো টিউশনি করাতে পারবো না এখানে। আমার জীবন চলবে কিভাবে?’

‘ নতুন বাসার কাছাকাছি না হয় নতুন স্টুডেন্ট খোঁজ করা শুরু করে দিবা। বাসায় ও স্টুডেন্ট আছে তুমি চাইলে নিজের বাসায় পড়াতে পারো।’

‘ তাই তাহলে তো খুব ভালো হয়। কিন্তু আমি যে আপু কে বলেছিলাম প্রতিদিন না হলেও এক দুই দিন পর পর দেখা করব সেটার কি হবে?’

‘ তুমি বাসা ঠিক করতে বলেছ আমি করে দিছি। কিন্তু সবকিছুই সমাধান আমি কিভাবে দেব?’

আমি আর কিচ্ছু বললাম না উনাকে কিন্তু মনে মনে ঠিক‌ই গালিগালাজ করলাম।
একটা রাজপ্রাসাদের মত বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। আমি গাড়ি থেকে নেমে গালে হাত রেখে চোখ বড় বড় হলে বাসার দিকে তাকিয়ে আছি।

কাকার দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ কাকা এ বাসা তো দেখে মনে হচ্ছে না ভাড়ার বাসা। এটা তো মনে হচ্ছে কোন মিনিস্টার এর বাসা। এই বাসায় আমার জন্য ভাড়া নিয়েছেন? কিভাবে সম্ভব! আর এখানে ভাড়া থাকে তো মনে হয় ভিআইপি মানুষ আমি এই বাসার ভাড়া দিমু কেমনে?’

রাগী চোখে কাকার দিকে তাকিয়ে আছি। এইভাবে আমাকে ঠকালো।এখন নিশ্চিত বলবে এ বাসায় তোমার জন্য ভাড়ায় নেয়নি।এই বাসা দেখানোর জন্য আনছে আমাকে নিয়ে আসছে। এখন বলবে তোমার জন্য কোন বাসা আমি ঠিক করিনি। তুমি তোমার জন্য বাসা ঠিক করে নাও।

আমি এসব ভেবে চিৎকার করে বললাম, ‘ এভাবে আমাকে ঠকালেন। আমার জন্য বাসার ঠিক না করে। ঘুরার জন্য নিয়ে আসছে। এখন আমি কোথায় যাব? হায় আল্লাহ কি সর্বনাশ হয়ে গেল। ‘

নিজে আহাজারি করে চিৎকার করতে লাগলো কাকা আমার কাছে এসে বলল, ‘আরে কি ব্যাপার এমন করছ কেন মানুষ কিন্তু খারাপ বলবে। এটা আমার বাসা। এখানে আমি থাকি। আর আমার পরিবার থাকে। এই বাসা আমাকে থাকার ভাড়া দেই না। কিন্তু তোমার জন্য আমি কোন বাসা খুজে পেলাম না কোথাও। তুমি যে বাজেট বলেছো এই বাজেটে আমি কোন বাসায় খোঁজে পাইনি। এজন্য ভাবলাম তুমি আমাদের বাসায় থাকো। তোমার টাকা দেওয়া লাগবে না। এখানে ফ্রিতে থাকতে পারো।’

আমি হত বিহ্বল হতাম তাকিয়ে বললাম, ‘ তাই আপনি নিজের বাসায় আমাকে নিয়ে আসবেন? আপনার পরিবারের সামনে আমি কিভাবে থাকবো! ও মাই গড তারা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে আপনার জন্য ভুলে গেছেন?’

আমি মনে মনে ভাবছি, শেষে কিনা নিবিড়ের বাসায় এসে পড়লাম। আমি এ কোন সাইকো কে বলেছিলাম বাসা ঠিক করতে। উনি নিজের বাসায় ঠিক করে ফেলব আমার জন্য আগে জানলে জীবনে তার আশায় বসে থাকতাম না। নিজেই বাসা খোঁজ করতে বেরিয়ে পরতাম।

#চলবে….

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২২
#নন্দিনী_নীলা

আমি এখন এই আমার এতগুলা ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাব। বাসার পাওয়া তো মুখের কথা না। উনার সাথে রাগ দেখি এখন আমার কি লাভ হবে উল্টা বিপদ হবে। এখন ওনার সাথে ওনার বাসায় চলে যায়। যা হওয়ার হবে উনি নিয়ে এসেছে উনি সব সামাল দিক। আমাকে এখানে এখন থেকেই বাসার খোঁজ করতে হবে। বললেই তো পাওয়া যাবে না কয়েকদিন ঘুরতে হবে।

রাফসান কাকা তাদের এক লোককে ডেকে আমার ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলল। আমি ওনার পেছন পেছন ভেতরে এসে ঢুকলাম। ফিসফিস করে উনাকে বলতে লাগলাম, ‘ আমি আপনার সাথে আপনাদের বাসায় এসেছি এখানে কিন্তু আমার কোন হাত নাই। আমি আপনাকে বাসা ঠিক করে দিতে বলেছিলাম। আমি বলি নাই আপনি নিজের বাসায় আমার জন্য একটা রুম ঠিক করে দিন। এখন যদি আপনার বাড়ির কেউ আমাকে কিছু বলে সেই সব কিছু সামাল আপনি দিবেন।’

রাফসান কাকা বলল, ‘ কেউ কিচ্ছু বলবে না চলো তো। আমাকে কেউ কিছু বলবে সেই সাহসী বাসায় কারো নাই‌।’

‘ কেন কাকা আপনি কি বাসার কর্তা নাকি?’

কাকা বললেন, ‘ না তেমন কিছুই না কিন্তু সবাই আমাকে একটু ভয় পায় তো তাই কিছুতেই কিছু বলার সাহস পায় না।’

‘ ওহ কিন্তু কাকা আপনাকে আমি কিন্তু একটু ও ভয় পাই না।’

‘ ও আচ্ছা। নিবি ও আমাকে ভয় পায় না। ‘

‘ নিবিটা আবার কে?’ বলেই আবার বলে উঠলাম, ‘ নিবিড় ‘

উনি বললেন ,, ‘ হুম।’

কলিং বেল বাজানোর দরকার পড়েনি দরজা খোলা আছে। আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ ভেতরে এসেছি। যে যাই বলুক আমি কোনো কথা বলবো না। আমি শুধু ভাবছি নিবিড় আমাকে নিজের বাসায় দেখে কি রিয়েক্ট করবে। এই বাসায় এসে আমার একটা হেল্প হয়েছে। কাকা আমাকে অজান্তেই অনেক বড় উপকার করে দিয়েছে। এবার আমার জিনিস টা আমি নিজে উদ্ধার করতে পারব। আর ওই নিবিড় কে শায়েস্তা করতে পারব। কাকা তো আছেই আমার পাশে ঠিক বাঁচিয়ে দেবে।

বাসার ভেতরে ঢুকতেই এই বাসার সব মানুষ আমার দেখে আর কাকার চমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কাকার ছোট ভাইয়ের বউ তিনি তার ইয়া বড় মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছিল। তাঁর হাতে ছিল কাচের প্লেট তিনি আমাদের দুজনকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দেখে ঠাস করে হাতের প্লেটটা নিচে ফেলে দেয়। কাঁচের প্লেটটা পড়ে ভাঙার যে শব্দটা সেই শব্দটাই অধিকাংশ মানুষ এই দিকে চলে আসে আর তখন সবাই তাকেও আমাদেরকে দেখে অবাক হয়ে যায়। তাদের রিঅ্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে তারা ভেবেছে আমি আর কাকা লুকিয়ে বিয়ে করে এসেছি।
সবাই মুখে হাত দিয়ে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কাকার যে বয়স্ক মা তাকে তার বড় ভাইয়ের বউ মানে কাকার ভাবি। আমার মনে হয় এটাই নিবিড়ের মা দেখতে অনেকটা নিবিড়ের মতো। তিনি উপরে গেল আর তার বয়স্ক মাকে ধরে নিয়ে এসে বলল, আম্মা দেখেন। আপনার মেজ ছেলের কি করেছে! একাই বিয়ে করে ব‌উ নিয়ে এসেছে।’

তিনি ভাঙা গলায় বলল, ‘ রাফু বাপ আমার তুই এইডা কি করলি। এই মাইয়ারে বিয়া করবি না বলে কতো চিল্লাচিল্লি করলি শেষ এই মাইয়ারে একাই বিয়া ক‌ইরা নিয়া আইলি।’

তাদের সবার এমন ভুল ভাবনার জন্য আমার খুব জোর হাসি পেয়ে গেলো। আমি সবার সামনে হিহিহি করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে সবাই আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো আর একজন তো বলেই উঠল, ‘ কি বেয়াদব মেয়ে রে বাবা। সবার সামনে কি রকম নির্লজ্জের মত হাসছে। এই মেয়েটাকে রিজেক্ট করা ঠিক হয়েছিল আবার কেন এটাকে বিয়ে করতে গেল?’

প্রথমেই আমাকে দেখে প্লেট ফালিয়ে দেওয়া মহিলাটা বললো‌ আমি স্পষ্ট শুনলাম রাগী চোখে মহিলা টার দিকে তাকিয়ে আছি।
রাফসান কাকা কাকে যেন ডেকে উঠল।
তার ডাকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলে, ‘ আইছি!’

‘ আশা যে রুমটা ঠিক করতে বলেছিলাম করেছিস?’

‘ হ করছি তো ক্যান।’

‘ ওই রুমে ছোঁয়া কে নিয়ে যা‌। ওর ব্যাগ রাশেদুল নিয়ে আসতেছে বলে দে।’

‘ আইচ্ছা’

সবাই হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে সব প্রশ্ন কে উপেক্ষা করে আমাকে আশা নামের মেয়েটার সাথে পরে পাঠিয়ে দিল। এক তলা দু তলা করে আমাকে ছাদের চিলেকোঠার রুমে নিয়ে এলো।
আমাকে রুমে এনে বলল, ‘ এই রুম আপনার জন্য ঠিক করাইছে স্যার।’

‘ ওওও আচ্ছা। তুমি কে?’

‘ আমি এই বাসায় কাজ করি। আপনেরে কি স্যার বিয়া ক‌ইরা আনছে?’

আমি আশার কথা শুনে হাসতে হাসতে খাটে বসে বললাম, ‘ তোমার কি আমারে দেখে মনে হয় আমি ওনাকে বিয়ে করব।’

‘ না মনে হয় না‌। কিন্তু সবাই তো তাই বলতাছিল তাই বললাম।’

‘ আমার পুরাতন বাসা থেকে বের করে দিছে। এজন্য আমি বাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কাকাকে বলছিলাম উনি বলল এখানে থাকার কথা।’

‘ তাই সবাই বলতাছে আপনারে বিয়া কইরা আনছে। আমিও তো তাই ভাবি। কয়দিন আগে বিয়ে নিয়ে কত তুলকালাম চলল স্যার তো বিয়া করবা না বলে কত কিছু করল। এখন আবার বিয়ে করতে যাইবো কেন?’

আমি আর কিছু বললাম না। আশা আমার নাম জিজ্ঞেস করে তারপর চলে গেলো আমাকে রেখে। আমি রুমটা দেখলাম রুমে একটা খাট একটা বালিশ আর একটা আলনা আছে। পুরাতন হয়তো এগুলো অনেক আগের আমার জন্য বের করে পাঠিয়েছে।

কাকা উপরে এলো এক ঘন্টা পর। আমি ততক্ষণে আমার জামা কাপড় জিনিসপাতি সব কিছু বের করে ঠিকঠাক করে রেখেছি।

কাকা এসে আমাকে বলল, ‘রুমটা খুব ছোট তোমার কি এখানে থাকতে কোনো সমস্যা হবে?’

আমি বললাম, ‘ছোট তাতে সমস্যা নাই। এটা আমার জন্য পারফেক্ট। আমি ছোট রুমে থাকতে অভ্যস্ত। কিন্তু সমস্যা আপনার এই পরিবারের সাথে থাকাটা।’

‘ওদের আমি সব বুঝিয়ে বলে দিয়েছি। কোন সমস্যা হবে তোমার। আর আমি তোমাকে উপরে পাঠিয়েছি তুমি একা এখানে নিজের মত থাকতে পারবে এজন্য। নিচে থাকলে তোমার ওদের সাথে সবসময়ই দেখা হতো আর যেহেতু তোমাকে ওরা আমার জন্য পছন্দ করেছিল সেজন্য আন‌ইজি ফিল হবে।’

‘একদম ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু আমি রান্না করবো কোথায় উপরে তো আপনার রান্নার কোনো ব্যবস্থা নাই। আমি তো না খেয়ে মরে যাব।’

‘বাসায় রান্না হয়ে গেলে তুমি না হয় নিচে গিয়ে রান্না করো।’

‘ আচ্ছা। আর বাসা ভাড়া কত নিবেন? ওই বাসায় আমি তিন দিতাম তার বেশি দেব না কিন্তু বলে দিচ্ছি।’

‘ তোমার ভাড়া দিতে হবে না।’

‘ভাড়া তো দেবোই না হলে আবার বলে দেবে আমি আপনার সত্যিকারে ব‌উ না কাকা আমি এই বাসার কোন বউ ট‌উ না ভাড়া না দিয়ে ফ্রিতে আমি থাকতে পারবো না।’

.
এই বাসায় আশার আজ দুইদিন হয়ে গেল। কিন্তু আমার চির শত্রু নিবিড় কে আমি এখনো দেখতে পায়নি। রোমার সবার তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে আমি নিবিড়ের রুমটাও খুজিনি। প্রথম দিন রান্না করতে পারেনি আশা আমাকে দুবার খাবার দিয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিন থেকে আমি রান্না করেই খাই। সবার রান্না কোন টাইমে হয়ে যায় সেটা আমাকে আশায় বলেছে তারপর আমি যাই। তাদের জন্য সকালে রান্না আমি করতে পারিনা। আটটার পর আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে হয় এর আগে তাদের রান্না হয়। দুই দিন কলেজে অফ ছিল বলে বাসার বাইরে বের হয়নি। আমার কাছে সামান্য কিছু ছিল সেগুলো আমি রান্না ঘরে রেখেছি।আশা কে বলে।

সকাল ৯ঃ০০ টার সময় আমি কলেজে চলে এলাম। আজকে রান্নার করতে পারিনি। আর কলেজে গেলে আমি রান্না করতে পারবো না। কারণ তাদের রান্না শেষ হওয়ার পর আমার রান্না করতে গেলে আমার আর কলেজ যাওয়া হবে না। আমাকে তাদের রান্নার আগে উঠে রান্না করতে হবে বিরক্তকর। খুব তাড়াতাড়ি একটা বাসার ঠিক করতে হবে। কম টাকায় বাসা পেলেই হয়।

কলেজে এসে আমি লিনিকে সব কিছু বলতেছি। ও সব শুনে বলল, ‘ জমের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিলে আর জায়গা পেলি না।’

‘কিছু করার নাই রে আমার খুব খিদে পেয়েছে চল দোকান থেকে কিছু খেয়ে আসি। আসার দিন বিশ দিনের পড়াটা হয়েছিল সেই টাকা দিয়েছে এজন্য হাতে টাকা আছে। আজকে কিছু বাজার করতে আর দরকারি কিছু কিনে নিয়ে যাব। আমার সাথে তুই যাবি।

‘ আচ্ছা। নিবিড়কে তুই একদিনও দেখি না?’

‘নারে দেখলাম না। আমি অবশ্য দেখব কি করে আমি দু দিনে একবার নিচে নেমেছিলাম। আর আজকে একদম বের হয়ে এসেছি কলেজে।’

‘ ওহ ওর থেকে সাবধানে থাকিস। আর শোন আমি ভেবেছিলাম আজকে দীপার শ্বশুর বাড়ি যাব।’

‘কেন সেখানে আবার কি হয়েছে?”

‘ কিছু হয়নি কালকে ফোন দিয়ে বলল তোকে নিয়ে যেন আজকে যায়।’

‘ আজকে আমি কোথাও যেতে পারব না কাল যাব নি।’

‘ আচ্ছা।’

ছুটির পর কলেজে আমি নিবিড়ের দেখা পেলাম নিবিড় আমাকে দেখলো কি না জানি না। কিন্তু বাসায় আসার পর আমি ফ্রেশ হয়ে রান্না করতে চলে আসি। বেশি করে রান্না করি যাতে একদম রাত কবার হয়ে যায়। আমি রান্না করতেছি তখন ওই নিবিড় রান্নাঘরে এসে আমাকে আশা নামে ডেকে বলে কফি দিতে। আমি ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে বলি,,

‘ আমি আশা না। আমাকে আশা বলছেন কেন? আমি ছোঁয়া।’

নিবিড় আমাকে রান্নাঘরে দেখে চিৎকার করে উঠল। আমি নিজেও নিবিড়ের চিৎকার করা দেখে চিৎকার করে উঠলাম।

#চলবে….
Nondini Nila