#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৪৯
#নন্দিনী_নীলা
পরপর সময়গুলো কাটছেন নিবিড়ের ভালোবাসা ময়। ছোঁয়া এখন প্রতিদিনই আসে আর ওর সাথে সময় কাটায়, ওকে খাইয়ে দেয়। নিবিড় কথা বলে গুনে গুনে একটা দুটো। আর বাকি সময়টা কাটে ছোঁয়াকে দেখতে দেখতে। ছোঁয়া যখন পাশে বসে থাকে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ওকে ঘুমাতে বলে তখন নিবিড় চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া হাতের নরম পরশ অনুভব করে। তারপর ফট করেই সেদিন ও ছোঁয়ার গালে চুমু খেয়ে বসে মাথা উঁচু করে। ছোঁয়া হতবিহ্বল চোখে নিবিড়ের দিকে তাকায়। ওর হাত থেমে গেছে। আচমকা স্পর্শে ও স্তম্ভ হয়ে গেছে। তারপর আর এক সেকেন্ড সেখানে বসেনি। হনহনিয়ে কেবিনের বাইরে চলে এসেছে। নিবিড় কিছু বলার সুযোগ টাই পায়নি।
সেদিন নিবিড় একটা মেসেজ পাঠায়,
‘ তুমি আমার মদ ছাড়া মাদকতা নেশা। যারা আসে পাশে থাকলে আমি নিজের মধ্যে থাকি না ঘোরে চলে যায়। সীমার বাইরে চলে যায় আদর আদরে ভরিয়ে দিতে মন চায়। আমার এই স্পর্শকে খারাপ ভাবে নিও না। নিবিড় তুমি ছাড়া দ্বিতীয় নারীতে আসক্ত হয় না। তুমি ছাড়া অন্য কোন নারীকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু তুমি আমার মাদকতা যেন আমাকে টানো নিজের কাছে।’
মেসেজটা পড়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। আজকে লিলির গায়ে হলুদ সেখানে যাচ্ছিলাম তখনই মেসেজ টুনটা বেজে ওঠে। মেসেজটা পড়ে আপনা আপনি ডান গালে আমার হাতটা চলে যায়। এখানে স্পর্শ করেও যেন আমি কেঁপে ওঠে মনে হয় এখনো যেন নিবিড়ের অধর স্পর্শ লেগে আছে জায়গাটায়। গাল থেকে হাত ছাড়িয়ে হাতটা নিজের বুকে চেপে ধরলাম। বুকের ভেতর ধরফর করছে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে নিচে আসলাম হলুদ জামদানি শাড়ি পড়ে মেয়েটা বসে আছে ও আমাকে শত বলেও শাড়ি পড়াতে পারিনি আমাকে। আমি একটা ভালো ড্রেস পরে নিচে আসি। ওর পাশে বসলাম দীপার এখন আসেনি। হঠাৎ আমি জসিমকে দেখি ফট করে দাঁড়িয়ে নিচে নেমে এলাম। জসিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ে আত্মা উড়ে যাবার উপক্রম।
আমি ভয়ার্ত মুখ করে জসিমের দিকে তাকিয়ে আছি। জসিম চোখ মুখ উজ্জ্বল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কত দিনের শিকার ও খুঁজে পেয়েছে। তখনই কোথা থেকে দীপা দৌড় এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। ওর গায়ে শাড়ি গায়ে গহনা হাতে চুড়ি ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে গায়ের গহনা ঝমঝম করে উঠছে। এসে চিৎকার করে উঠেছে ছোঁয়া বলে।
ও আমার দিক দিয়ে কোন রেসপন্স না পেয়ে আমাকে ছেড়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে? মুখটা এমন কালো করে রেখেছিস কেন? আর এমন ভয় পাচ্ছিস কেন?’
আমি দীপার কানে কানে জসিমের কথা বললাম। দীপার পেছনে ফিরে জসিমের দিকে একবার তাকাল। ছেলেটার লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
‘ওই ওই ক্যাবলা টা। আমার বান্ধবী রে ভয় দেখায় ডিস্টার্ব করে না। দাঁড়া ওর বিয়ে করার শখ আমি মিটিয়ে দেবো আজকে।’
‘আর কি করছিস একটা বিয়ে বাড়ি এখানে কিছু করিস না। আর সবার মাঝখানে ও ও কিছু করবে না কিন্তু পরে যে আমাকে জ্বালিয়ে খাবে সেটা আমি খুব ভালোই জানি।’দীপার হাত টেনে থামিয়ে বললাম।
দীপা আমাকে টেনে আবার স্টেজে নিয়ে বসালো বলল , দেখি তো ফেলেছি আর সরে কি করবি।’
লিলি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,’অমন করে ছুটে গেলি কেন?’
দীপা সবটা খুলে বলল। নিলি সব শুনে বলল, ‘ওই বেটা বেশি ঝামেলা করলে আমি আছি তো ওর চাকরির নট করে দিমু। আমার বান্ধবীরে কেমনে ডিস্টার্ব করে আমিও দেখমু।’
আমি আর দীপার কথা শুনে হেসে দিলাম। দীপাকে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের ছোট সোনামনি কেমন আছে?
দীপা বলল, ‘ওরে জিজ্ঞেস কর আমি কেমনে জানব! বাইরে আসলে নিজেরা জিজ্ঞেস করে শুনে নিস!’
গায়ে হলুদটা আনন্দে কাটলো জসিমের ভয়ে থাকলেও তিন বান্ধবী আনন্দ করা থেকে কমতি দিলাম না। আবার কবে তিনজন এরকম একসাথে আনন্দ করার সুযোগ পাবো কে জানে।
দীপা রা চলে গেল তাড়াতাড়ি কারণ ওর এই অবস্থায় বেশি রাত বাইরে থাকা উচিত না। লিলি অবশ্য থাকতে বলেছিল কিন্তু সেটা সম্ভব না। শ্বশুর বাড়িটা এটা মানবে না ও মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ না করল তারা তো তেমন একটা মুসলিমদের পছন্দ করে না তাদের জিনিস খেতে চায় না।
.
আজ লিলির বিয়ে। লিলি আমাকে ওর কাছ থেকে সরতেই দিচ্ছে না আমি এবার অনুরোধ সরে বললাম, ‘আমাকে একটু হসপিটালে যেতে হবে! নিবিড়ের আজকে হসপিটালে শেষ দিন কাল থেকে ও বাসায় শিফট হবে ও এখন বসে থাকতে পারে। হাঁটতে কবে পারবে জানিনা। বাসায় চলে গেলে আর চাইলে দেখা করা যাবে না। কারণ ওর মা আমাকে দু চোখে সহ্য করতে পারেনা। তাই আজকে আমার শেষবারের মতো নিবিড়ের সাথে দেখা করতে হবে।’
লিলি আমার দিকে চোরা চাহনি দিয়ে বলল, ‘ এমন ভাবে বলছিস যেন আর কোনদিন দেখাই হবে না।’
আমি বিরবির করে বললাম, ‘ তাও তো হতে পারে।’
লিলি বলল , ‘ কি বিরবির করিস।’
আমি মাথা নেড়ে না করলাম। তারপর বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। লিলি আমাকে বারবার করে বলেছে আমি যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসি। আমি অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি একটু দূরে গিয়ে মুখ ঢেকে যে কোন সময় জসিম চলে আসতে পারে।
আমি দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ অদূরে দেখতে পেলাম জসিম বাসার ভেতরে ঢুকছে হন্তদন্ত হয়ে ওকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি পেছন ঘুরে গেলাম।
পেছন ঘরে আমি দাঁত কামড়ে মুখে হাত দিয়ে আছি
তখনই সামনে একটা পরিচিত কন্ঠে ভেসে আসল।
লিহান আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখানে আসার পর লিহানের সাথে অনেক বারই দেখা হয়েছে আমার। কলেজ যাওয়ার সময় মাঝেমাঝে দেখা হয়েছে লিহানের সাথে। কিন্তু মাঝখানি এক সপ্তাহ ধরে দেখা হয়নি আজকে আবার এক সপ্তাহ পর দেখা হলো।
‘ হাই ছোঁয়া, কেমন আছো? তুমি তো আবার বিয়ে খাচ্ছ! তোমার বান্ধবীর বিয়ে শুনলাম!’
আমি মুখে মেকি হাসি টেনে বললাম, ‘ ভালো। তুমি ভাল আছো?’
‘ জি ভালো আছি। নিবিড় ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে জানো?’
‘ হুম শুনছি।’
লিহান বলল, ‘ দেখতে যাবে না? আমি তো দেখতে গিয়েছিলাম।’
‘ ভালোই। আমি একটু দরকারি কাজে যাব তুমি থাক আমি যাই!’
আজকে আসার আগে আবিরকে আমি জানাতে পারিনি যে আমি আসছি। আমার সেসব খেয়ালই ছিল না আমি হসপিটালে গিয়ে দেখলাম ফাঁকা আছে চারপাশ। আমি পা টিপে টিপে ভেতরে চলে গেলাম। নিবিড় ভারী নিঃশ্বাস ছাড়ছে। আমি দৃষ্টি নিবিড়ের উপর নিবদ্ধ রেখে এগিয়ে গেলাম। বসেই ঘুমিয়েছে নাকি? আমি কাছে গিয়ে ডাকলাম, ‘ জেগে আছেন?’
নিবিড় নড়ল না তাকাল ও না। আমি আরেকবার ডেকে চুপ করে গেলাম। তৃষ্ণার্ত চোখে নিবিড়ের দিকে চেয়ে রইলাম। আমি নিবিড়ের পাশে বসলাম খুব কাছ ঘেঁষে আর ওর মুখে খুব নিকটে গিয়ে ঝুকে রইলাম। আমার চোখ ছল ছল করছে ভেতরটা হাহাকার করছে। বুকটা ফেটে আসছে। এই মানুষটাকে তো আমি মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি কিভাবে তাকে ছেড়ে দূর বহুদূর চলে যাব।
কেন এই পরীক্ষার মাঝে আমাকে ফেললে তুমি আল্লাহ। কেন এমন একজন মানুষের জন্য মনের ভেতর ভালোবাসা তৈরি করলে? যাকে পাওয়া দুঃসাধ্য আমার জন্য। যাকে কল্পনাতেও আমি নিজের ভাবতে পারি না। যে আমার ধার ছোঁয়ার বাইরে। কেন এত কষ্ট হচ্ছে আমার? মনকে এত বোঝালাম, এত কঠিন হলাম এত খারাপ আচরণ করলাম। তবুও সেই তো ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেল। উনি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করল। কেন করল আমি ত জানতাম তাকে আমার পাওয়া সম্ভব না। তবু তার প্রতি এই অনুভূতি এই প্রেম কেন জেগে উঠল। এই যন্ত্রনার থেকে মৃত্যু শেয়।
আমি চোখ বন্ধ করে চাপা দীর্ঘশ্বাস বের করলাম। হঠাৎ একটা পরিচিত স্পর্শ যেন আমার ললাটে ছুঁয়ে চুলে হাত ডুবিয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিল। আমি চোখ মেলে তাকালাম। নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আঁতকে উঠলাম। সরে আসতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না নিবিড় মাথার পেছনে হাত ডুবিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি নড়তে পারছি না তাহলে মাথা আঘাত পাচ্ছি চুলে টান পড়ে। নিবিড় বাম হাত ওঠিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, ‘ এই চোখে অশ্রু মানায় না। কাঁদছ কেন?’ আদুরে কন্ঠে বলল নিবিড়।
আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। নিবিড়ের এই আদুরে কন্ঠ স্বর শুনে আমার বুক চিরে কান্না আসছে। নিজেকে থামাতে পারলাম না। হু হু করে কেঁদে উঠলাম। নিবিড় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা আমার কান্নার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। নিবিড় ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমার কান্না দেখে।
খুব কোমল গলায় বলল, ‘ কি হয়েছে জান? বলো আমায় কেউ কিছু বলেছে এমন করে কাঁদছ কেন? তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না।’
আমি ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম তারপর নিজে ই থেমে গেলাম এভাবে নিবিড়ের সামনে কাঁদা উচিত না। ওর মনে সন্দেহ জাগবে। আমি কান্না থামিয়ে ফেললাম নিবিড় বিস্মিত গলায় বলল,’ কি হয়েছে তোমার?’
আমি ঢোক গিলে বললাম, কি হবে? কিছু হয়নি ত।’
নিবিড় বলল, ‘ মিথ্যা বলছো। কিছু ত হয়েছে আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করছো তুমি? দেখ পা ভেঙে বিছানায় পরে আছি বলে আমাকে দূর্বল ভাবা বন্ধ কর। আমার কিন্তু তোমার তোমার সব খবরাখবর জানতে এক দিন ও লাগবে না।’
‘ আমার কিছু হয়নি।’
‘ তাহলে ওমন করে কাঁদলে কেন? এখন ও ফুঁপিয়ে যাচ্ছ ! কিছু না হলে অযথা কাঁদবে কেন?’
আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে ফুপানো বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পরছি থামছে না আমি চোখ বুজে বললাম, ‘ ছাড়ুন আমাকে এভাবে ধরে রাখবেন না। আমি সহ্য করতে পারি না। আপনার এত কাছে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।’
নিবিড় মোহিত নয়নে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোয়ার মুখের দিকে। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে আছে ওর চোখের পাতা কাঁপছে, ঠোট কাঁপছে, ঠোঁট কামড়ে নিজের ফুপিয়ে কান্না থামাচ্ছে কাঁপাকাঁপি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বন্ধ চোখের পাতাও ভেজা চোখের জলে। নিবিড় আচমকায় ঘোরের মধ্যে চলে গেল আর দুঃসাহসিকতার একটা কাজ করে বসল। ছোঁয়া ফট করে বন্ধ চোখ মেলে তাকালো স্তব্ধ নয়নে চেয়ে। ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। বিস্ময় হতভম্ব হয়ে গেছে। নিবিড় নিজের অধর দুটির মাঝে ছোঁয়ার অধর চেপে ধরেছে। ছোঁয়ার বাম চোখে কুলটি বেয়ে আরেক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। নিবিড় শরীর এখন দুর্বল ছোঁয়া চাইলেই নিবিড় কে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ছোঁয়া সেই কাজটা করলো না ছেড়ে দিল নিবিড় কে। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে না হয় একটু সুখময় স্মৃতি সাথে করে নিয়ে যাওয়াই যায়।
ছোঁয়া আবেশেই চোখ বন্ধ করে ফেলল। নিবিড় যেন ছোঁয়ার থেকে কোন বাধা না পাওয়ায় আরো সাহসী হয়ে উঠল। সুখের প্রহর কাটলো। ছোঁয়াকে ছেড়ে দিতেই ছোঁয়া নিবিড়ের বুকে মাথা রাখল খুব আস্তে করে। মাথাটা একদম নিবিড়ের বুকের সাথে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখল।
এদিকে নিবিড় নিজের করা কাজে অপরাধী ন্যায় ছোঁয়ার দিকে তাকাবে ভেবেছিল। নিজের এই কন্ট্রোল লেস কাজের জন্য নিজেই নিজেকে মনে মনে ধমকাচ্ছে। ছোঁয়া নিশ্চিত এবার কঠিন রাগ করবে। ছোয়াকে কিভাবে মানাবে সেসব ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু ছোঁয়া ওর সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করে ওর বুকে মাথা রাখে।
নিবিড় স্তম্ভিত। বিমূঢ়, এরূপ আশ্চর্যকর ঘটনা জীবনে ওর সাথে ঘটেছে কিনা ওর জানা নেই। ছোঁয়া স্বেচ্ছায় ওর বুকের মাথা রেখেছে আর এমন একটা কান্ড ঘটানোর পরও ওকে কিচ্ছু টি বলছে না। এর থেকে বিস্ময়কর ঘটনার কি হতে পারে? ছোঁয়া চোখ মেলে দরজা দিকে তাকাতেই মনে হলে একটা ছায়া সরে গেল। ও ধরফরিয়ে নিবিড়ের বুকে থেকে মাথা তুলে উঠে বসলো।
দ্রুত গতিতে পা ফেলে দরজার দিকে উঁকি মারল। বাইরে কেউ নেই ওর সাথে সাথে আবিরকে কল দিল আবির হসপিটালেই নাই। ও বল আমি এসেছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো আবির বলল আচ্ছা।
নিবিড় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
আমি এগিয়ে এসে বললাম,’মনে হল কেউ দরজা আর এখানে ছিল। আমি এসেছি সেটা আপনার বাসায় কেউ দেখে নেয় যদি তাই আবীর আসতে বললাম।’
নিবিড় বলল, ‘দেখলে দেখবে। সমস্যা কোথায় একদিন আগে পরে তো জানতেই হবে তাদের সাথে তাদের পরিচয় হতেই হবে। আগে জানলে সমস্যা কি?’
আমি কিছু বললাম না এগিয়ে এসে বললাম আপনি কিছু খেয়েছেন?’
‘তুমি চাইলে কিছু খাওইয়ে দিতে পারো। আজকে তো আমি খুব খুশি। তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো আগে কেন বুঝতে দিলে না। এখন দেখ তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারছি না। তোমার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারছি না। দেখো না পা ভেঙে বসে থাকতে হচ্ছে। তুমি কাছে এসে ধরা না দিলে আমি তোমার কাছে যেতেই পারছি না।’
নিবিড় নিজের মত কথা বলছে আমি পাশ থেকে কমলার খোসা ছাড়িয়ে নিচ্ছি। একটা ডালিম বাটিতে নিলাম তারপর নিবিড়ের সামনে আসলাম। আমি নিজেই নিবিড়ের মুখে তুলে দিচ্ছি। নিবিড় আমার দিকে চেয়ে আছে অপলক হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া তুমি এখন আমাকে ভালবাসলেও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছো। যেন রোবট! রোবটের মত কাজ করে যাচ্ছে! জিজ্ঞেস করছো! ভালোবাসছো! কিন্তু আগের মতো সেই প্রাণবন্ত চেহারাটা নেই! এর থেকে তো সেই ঝগড়াটে ছোঁয়ায় ভালো ছিল। যে মুখ খুললে ই আমাকে বাজে কথা অপদস্ত করার কথাটাই বের করত। তুমি এমন নীরব শান্ত হয়ে গেলে কেন? আমার এক্সিডেন্ট কি তোমার মনে খুব বেশি আঘাত করেছে বলো না!’
‘এত যে কথা বলছেন মাথা ব্যথা করে না?আবার তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’
‘কথা না বলে কি থাকা যায়! তুমি কথা বললে তো আমার এত কথা বলার দরকার পড়তো না। তুমি কথা বলতে আর আমি শুনতাম। কিন্তু তুমি তো কথা বলোনা। মনে হয় বোবা হয়ে গেছে এর জন্য আমাকে সব বলতে হচ্ছে।”
আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। আর বললাম, ‘ খান ত কথা বাদ দিয়ে।’
নিবিড় অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, ‘ আমাকে এলোমেলো করার জন্য এই হাসিই যথেষ্ট।’
#চলবে…