অবাধ্য প্রেম ২ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
7

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_নীলা

একটা বিয়ে বাড়িতে মানুষজনের অভাব থাকে না। দূর দূরান্তের পারা প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের ভর পুর হয়ে থাকে। সেখানে অবশ্যই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ উপস্থিত থাকে কিন্তু আমার এই বিয়েতে দুইটা মানুষ অনুপস্থিত। আমার একমাত্র শাশুড়ি মা যিনি রুম থেকে বের হয়নি। আমি জানি তিনি আমাকে মেনে নিতে পারে না। কিন্তু তিনি আমার সাথে এখন খারাপ ব্যবহার করার সুযোগ পায় না। এজন্য রুমের বাইরে বের হয়নি। আরেকজন মানুষ রাফসান কাকা যিনি সকালে গন্ডগোলের কিছুক্ষণ পরেই দেখেছি টলি ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছে। সবাইতো অবাক তাকে জিজ্ঞেস করল। বলেছে তার নাকি অফিসের কাজে বিদেশ যেতে হবে। এটা আমরা সবাই জানি আর্মি অফিসার প্রত্যেকটা পদের দেশের বাইরে থাকা লাগে কয়েক মাস। কাকার ও যাওয়া লাগবে দুই মাস পর কিন্তু সে আমাদের বিয়ের দিন এতো আগে কেন চলে যাচ্ছে বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলে কিছু বলেনি কিন্তু নিবিড় ছিল নির্লিপ্ত। তাহমিনা আপু কেঁদে কেটে অস্থির। আমি অবাক হয়ে চেয়ে ছিলাম কেন জানি মনে হচ্ছিল এসব কিছু হচ্ছে অন্য কারণে।
নিবিড় কে এক কোনায় টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,”আপনি সবকিছু জানিয়ে দিয়েছেন কাকাকে?

নিবিড় যেন আমার এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল।
“সবকিছু জানার পরে কাকির উপর আমার খুব রাগ। এখনো সেই রাগ যায়নি। কিন্তু আমি চাইনি এসব জেনে কাকা কষ্ট পাক। তিনি অনেকগুলো বছর কষ্ট পেয়েছে এতদিন পর তিনি আনন্দে আছে। আমি তার আনন্দটা নষ্ট করতে চাইনি। কিন্তু সত্য তো কখনো চাপা থাকে না। আমি তুমি না বললেও বলার মানুষের অভাব ছিল না। মম সবকিছু জানত। মম সব জানিয়ে দিয়েছে কাকাকে। আমি এসব কিছু জানতাম না। গতকাল রাতে কাকা এসেছিল আমার কাছে আমার সামনে মাথা নিচু করে ক্ষমা চেয়েছে। লজ্জায় কাকা আমার দিকে তাকাতে পারে নি। আমি কাকার ওই রুপ দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছি। কাকার মুখটা ছোট্ট একটুখানি হয়ে গেছিল। তিনি ভাবতে পারে নি কাকির জন্য তুমি চলে গিয়েছিলে। আর কাকির জন্য আমরা কষ্ট পেয়েছি। এজন্যই কাকা বলেছে কাকিকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তিনি আগেই দেশের বাইরে চলে যাবে।”
” আপুর জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু এমনটা হ‌ওয়ার‌ই ছিল।”
আপুর দিকে আর তাকানো যায়নি। সারাবেলা কেঁদে কেটে একবার আমার কাছে এসেছিল আমি কথা বলেনি। মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম।
বিয়ে কার্যক্রম তাড়াতাড়ি হলো। আফিয়ার দেখা পর্যন্ত পেলাম। ও আসবে আমি যেন কল্পনাই করতে পারিনি।
নিবিড় আর আমি স্টেজে বসে ফটো শুট করছিলাম। আফিয়া ও আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে পোজ দিল‌। তারপর আমাকে আচমকা জরিয়ে ধরলো।
আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম। আফিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” এতো খারাপ বিহেভ করেছি তবু ও আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছ কেন? আমি বেঁচে গেলে আবার ত নিবিড় কে কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লাগব। জানা সত্ত্বেও কেন বাঁচিয়েছ? যেচে বিপদ ঘাড়ে নেয় কেউ?”

” আমি বেঁচে থাকতে তুমি নিবিড় কে নিতে পারবে না। আরেকটা কথা কি জানো খালি মাঠে থাকতে ভালো লাগে। কাড়াকাড়ির মাঝে আমার মানুষ আমার আছে ভাবতেই শান্তি লাগে।”
” জানি না বেঁচে যাওয়ার কেন আর তোমার প্রতি রাগ আনতে পারছি না। নিবিড় কে ও আর জোর করে পেতে ইচ্ছে করে না।”
” তোমার মধ্যে থাকা ভালো সত্তা টা বেরিয়ে আসছে।”
” তোমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা র‌ইল। আর আমাকে মাফ করে দিও।”
নিবিড় এর দিকে তাকিয়ে বলল,” আমাকে ক্ষমা করে দিস। জানি আমাকে আর বন্ধু ভাবিস না। এটার যোগ্য আসলেই আমি না। কিন্তু তবুও বলব পারলে ক্ষমা করে দিস। আমি তোর মতো বন্ধুত্ব হারাতে চাইনা।”
নিবিড় কথা বলল না মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে র‌ইল।
আমি কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না। আফিয়া যা করেছে এর পর এতো সহজে তাকে ক্ষমা করতে পারবে না নিবিড় সময় লাগবে‌। আফিয়া যদি সত্যি ভালো হয়ে থাকে একদিন নিবিড় ওকে ক্ষমা করবে‌।
আফিয়া একটা গিফট আমার হাতে দিয়ে চলে গেল।
আবির একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে এলো স্টেজে। নিবিড় আর আমি তখন বসে ছিলাম।
আবির এসেই বলল,” ব্রো দেখ ত এই মেয়েকে চিনো নাকি।”
নিবিড় তাকাল। মেয়েটাকে কোনদিন দেখেছে বলে মনে পরছে না।
নিবিড় ভ্রু কুটি করে ভেবে বলল,”নাহ‌।”
নিবিড় না বলতে দেরি মেয়েটা চিৎকার করতে দেরি করল না।
” কি বলছেন? আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না? ও মাই গড এটা আপনি কি করে বললেন আমি ওই যে একদিন রেস্টুরেন্টে এর সামনে আপনাকে প্রপোজ করেছিলাম ভুলে গেছেন?”
মেয়েটার কথা শুনে আমি ও আবির দুজনেই চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছি।
আমি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছি নিবিড় এর দিকে। নিবিড় বলল,” ওহ হতে পারে আমার খেয়ালে আসছে না।”

মেয়েটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে কিছু বলবে আবির টেনে তাকে নিয়ে চলে গেল।
নিচে এসে বলল,” তুমি আমার ব্রো কে প্রপোজ করেছিলে?”
” হ্যা করেছিলাম তো।”
” আমার ব্রো কে প্রপোজ করেছিল সেই মেয়ের সাথে কিনা আমি প্রেম করতেছি ও গড। তোমার সাথে আমার আজকেই ব্রেক আপ‌।”
” আরে শুনেন না আমি তো বাজি ধরে প্রপোজ করেছিলাম। সেটা কি সত্যি ছিল নাকি। আমি তো আপনার প্রেমে পরেছি। আপনাকে ভালোবাসি।”
” চলো তোমার শাস্তি আছে।”
” এমা কেন?”
” বয়ফ্রেন্ড থাকতে বাজি ধরে আরেকজন কে প্রপোজ করার শাস্তি!”
” আর জীবন কাউকে প্রপোজ করবো না সত্যি এবারের মতো মাফ করে দেন।”
” নো‌ আমাকে ও ত বাজি ধরেই প্রপোজ করেছিলে। ভাগ্যিস আমি বাদে কেউ রাজি হয়নি। এখন এই মুহূর্তে তুমি ৫০ বার উঠবস করবে আর বলবে ‘জীবনে বাজি ধরবো না‌। আবির ছাড়া কোন ছেলের দিকে তাকাবো না। কাউকে প্রপোজ করব না‌।
কেউ প্রপোজ করলে নাক ফাটিয়ে দিব।’
নাও স্টার্ট সুমু”
নাক ফুলিয়ে সুমু উঠবস করতে লাগল আর বলতে লাগল। কিন্তু সে দশবারের বেশি আর করতে পারল না। তার আগেই ধপ করে ঘাসের উপর বসে পরল।

নিবিড় ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে। দেখে ছোঁয়া রাগি চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে ওকে।
নিবিড় অসহায় মুখ করে বলল,”জান সত্যি আমি ওই মেয়েকে চিনি না!”
“আমার বিরহে আপনি নাকি কেঁদে কেটে ভাষাতেন। তখন এই মেয়ে আপনাকে প্রপোজ করল কিভাবে? সত্যি করে বলুন রাজি হয়ে যান নি তো। প্রেম করেছেন না এই মেয়ের সাথে?”
“এই পুচকি মেয়ের সাথে নিবিড় প্রেম করবে?”
“আপনি ওই মেয়েকে চিনেছেন তাই না? ইচ্ছে করে না চেনার ভান করলেন আমার জন্য?”
“সত্যি চিনে নি। তখন আমার ধ্যানে জ্ঞানে শুধু একজন মানুষই ছিল সে হলো তুমি।”
“শোনেন ওই মেয়ের সাথে যদি আপনার কোন সম্পর্ক থেকেও থাকে আমি ওই মেয়েকে খুন করে ফেলব। আমি আবার দয়ার সাগর নয়। আপনাকে ওর জন্য ছেড়ে দেব না। এতটা উদার মনের নয় আমি। নিজের জিনিস আমি শক্ত হাতে ধরে রাখতে জানি বুঝছেন। একবার যেহেতু এই ছোঁয়ার খপ্পরে পড়েছেন। যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন এই আমার সাথে আপনাকে থাকতে হবে। ভালো লাগুক আর না লাগুক। আমার বর হয়েই থাকতে হবে আপনাকে।”
“এই যে মিসেস নিবিড়। আমি শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আপনার বর হয়ে থাকতে চাই।”

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত্রিকে নিয়ে তৌহিদ কোথায় যেন চলে গেছে। রাত্রি বুঝে উঠতে পারছে না তৌহিদ ওকে ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে দেখে পায় তৌহিদকে নিয়ে এসেছে নিবিড়দের বাগানে। যেখানে নিবিড় কে আর ছোঁয়াকে যে কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়েছে সেই কাজী সাহেব বসে আছে। রাত্রি অবুঝ চোখে তাকায় তৌহিদের দিকে।
“উনি এখানে কেন আপনি আমাকে এখানে এসেছেন কেন?”
“রাত্রি উনি আমাদের বিয়ে পড়াবে!”
রাত্রি চোখ কপালে তুলে বলে,”হোয়াট? কি সব বলছেন আবোল-তাবোল আপনার মাথা খারাপ হইল নাকি?”
“হ্যাঁ,, আমি শুনেছি তোমার ভাই একটু আগে তোমাকে ফোন দিয়েছিল তুমি বলছিলে এখনই বিয়ে করতে চাও না। তোমার ভাইয়া নাকি তোমার বিয়ে ঠিক করেছে। আজকে নাকি সেই ছেলের সাথে তোমার ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তুমি নাকি বাসায় সবাইকে না জানিয়ে এখানে এসেছ‌। আমি সব শুনে ফেলেছি‌। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্রেম করার আগে যে বিয়ের কথা বলতে হবে আমি জানতাম না। প্রপোজ করতে পারেনি অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনি কিন্তু বিয়ের কথা বলছি। এতে তুমি হয়তো অবাক হচ্ছ। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। তোমাকে আমি হারাতে পারবো না। তোমাকে সত্যি খুব ভালবেসে ফেলেছি।
আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলে আমি শান্তিতে নিশ্বাস ফেলতে পারবো। তুমি জানো তুমি ফোনে কথা বলেছি সেটা শোনার পর থেকে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে এসেছে আমার।”
“তাই বলে এভাবে বিয়ে? ভাইয়া আমাকে মেরে ফেলবে একদম?”
“প্লিজ লক্ষ্মীটি রাগ করোনা, মানা করো না, রাজি হয়ে যাও না। একবার বিয়েটা হয়ে যেতে দাও। তারপর তোমার ফ্যামিলিকে মানিয়ে তোমাকে ঘরে তুলব। প্রমিস।”
রাত্রিতে তৌহিদকে ভালবাসে কিনা জানে না কিন্তু পছন্দ করে সেই সূত্র ধরেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়। ইতস্তবোধ করে মাথা নাড়ায়। রেজিস্ট্রি না করে কবুল করে বিয়েটা হয়ে যায় ওদের সেই মুহূর্তে।

আফিয়া কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছিল। ও জানত নিবিড় ওকে ক্ষমা করবে না ও যা করেছে তারপর ও ক্ষমা পাবে না। কিন্তু তবুও একটা আশা নিয়ে এসেছিল। যাকে ভালোবাসে তার এমন ঘৃণা নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবে ও? কেন আগের মত স্বার্থপর হতে পারছে না। কেন রাগ দেখিয়ে ভাবতে পারছে না ছোঁয়া কে ওর জীবন থেকে সরিয়ে দেবে। ওকে আবার নিজের করার জন্য জোর করব। কেন এত ভালো হয়ে গেলাম? ছোঁয়া আমাকে বাঁচিয়ে কি ঋণী করে কেন ভালো করে দিল। ওর শরীরের রক্ত কি আমার শরীরে বইছে বলে আমি এতটা চেঞ্জ হয়ে গেলাম।
হঠাৎ একটা হাত আফিয়ার হাত চেপে ধরে। আফিয়া চমকে তাকিয়ে দেখে আকাশ ওর হাত চেপে ধরেছে।
“তুই?”
” হ্যা আমি চলে যাচ্ছিস?”
“হুম।”
” নিবিড় মুখ ফিরিয়ে নিছে বলে কষ্ট পাচ্ছিস?”
“আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমি এখন কি করবো আকাশ? ছোঁয়া আমাকে কেন বাঁচালো। জেদ করে মরতে গেলেও তো মরে গেলে হয়তো আমি এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতাম। না আমি নিবিড় কে ভুলতে পারছি। আর না আমি ওর জীবনে আবার ঝামেলা করতে পারছি। এ আমি কোথায় ফেঁসে গেলাম।”
” নিবিড় ছোঁয়াকে খুব ভালোবাসে। ওঁদের জীবন তুই তৃতীয় ব্যক্তি ও তোকে কখনো মেনে নেবে না‌। তাও কেন ওর পেছনে পরে আছিস। এদিকে আমি যে প্রথম থেকেই তোকে ভালোবাসি। তোকে জীবনের সব ভাবি আমাকে নিয়ে ত একটু ভাবতে পারিস!”
“তোর কষ্ট টা আমি কখনো অনুভব করতে পারিনি রে আকাশ তাই হয়তো আজকে আমি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। সেই কষ্ট অনুভব করছি। যে জায়গায় তুই এতদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছিস। তোকে আমি আমার আর নিবিড়ের মাঝে তৃতীয় পারসন ভাবতাম। আজকে আমি নিবিড়ের জীবনে থার্ড পার্সন হয়ে গেছি‌।”
“আমি তোকে এখনো সেই তিন বছর আগে যতটা ভালবাসতাম ততটাই ভালোবাসি। একটু ভালোবাসবি আমাকে? নিবিড়ের মতো করে না বাসলি। তার থেকে কম ভালোবাস। তবু একটু ভালোবেসে আমার হাত ধরবি সারা জীবনের জন্য।”
“আমি আর নিবিড় কে ভালোবাসার জন্য পাগলামি করবো নারে। সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তোকে এখনই নিজের ভালবাসি বলতে পারছি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব তোকে ভালোবাসার আর অতীত ভুলে যাবার।
আকাশ আফিয়ার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা চুমু খেল।
“ধন্যবাদ!”

ছোঁয়া নিবিড়ের সাজানো বিছানার মাঝখানে বসে আছে ঘোমটা টেনে। আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাহি ও নিবিড়ের চাচাতো বোনরা যারা এই রুমে ঢোকার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা আর্জি জানিয়েছে‌ নিবিড়ের কাছে। নিবিড় তাদের সাথে যুদ্ধ করছে। আর একটু পরপর ব‌উ বলে চিৎকার করছে।
আবার করল,” ও ব‌উগো বেরিয়ে আসো এই ডাকাত দের সাজানো রুম থেকে। তোমার স্বামীকে একদিনেই রাস্তার ফকির করে দেবে। তোমাকে নিয়ে না হয় বাসর রাত বাইরে বাগানে কাটাবো ঘাসের উপর। তবু আমি এই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে নিজের রুমে ঢুকতে পারবো না।”
” ব্রো একদম কিপটামি করবে না টাকা দাও না হলে আজ আর বউকে পাবে না।”
“নিজের বিয়ে করা বউয়ের কাছে যেতেও এত খরচ হবে জানলে কবুল বলার পরই বউকে নিয়ে পালাতাম।”
“তুমি কি টাকা দেবে? নাকি সারারাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাইবোনদের সাথে ঝগড়া করবে? ”
আবির এগিয়ে এসে বলল,” ব্রো যাও তোমার জন্য মায়া হচ্ছে এজন্য আমি পাঁচ হাজার কমিয়ে দিলাম। এবার তো টাকাটা দাও!”
নিবিড় খুশিতে পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে আবিরের হাতে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,,” এই না হলো আমার ভাই। যা তোর বাসর ঘরের দরজার সামনে আমি টাকা কমিয়ে দেব এবার সর ঢুকতে দে আমাকে।”
বলেন নিবিড় আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে হাঁপাতে লাগে।
এদিকে আবির চিৎকার করে উঠল,”তুমি ভাসুর হয়ে ছোট ভাইয়ের বাসর দরজার সামনে দাঁড়াবে?” বলতে বলতে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আবার চিৎকার করে উঠলো,” ব্রো আমি ৫ হাজার টাকা কমিয়ে ৪৫ হাজার টাকা দিতে বলেছিলাম। আর তুমি আমার হাতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়েছো।”
এদিকে মাহি সহ বাকিরা সবাই ৫ হাজার টাকা দেখি হামলে পড়লো আবিরের উপর। কারণ আবির ওদের সবাইকে সরিয়ে নিজে এসেছিল টাকা উঠানোর জন্য‌ এখন আবিরকে ঠকিয়ে নিবিড় চলে গেছে ভেতরে এখন সবার রাগ এসে পড়েছে আবিরের উপর।

ছোঁয়া নিবিড় এর দিকে তাকিয়ে আছে বিছানায় থেকেই।
নিবিড় টি টেবিলের উপর থেকে দুধের গ্লাস পানি ভেবে ঢকঢক করে পুরোটা সাবাস করে ফেলে। বোনদের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে গলা শুকিয়ে গেছে ওর। তা দেখে ছোঁয়া বিছানা থেকে ছুটে এসেছে আর নিবিড়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে দুধের গ্লাস।
নিবিড় থতমত খেয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
” কি হলো?”
” এটা আপনি কি করলেন?” রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ছোঁয়া।
” কি হয়েছে কি করলাম?”
“নিজেই দুধ খেয়ে নিলেন। কথা ছিল বউ বরকে দুধ খাইয়ে দেয়। আর আপনি একাই খেয়ে নিলেন। কতক্ষন ধরে ওয়েট করছিলাম আপনি আসবেন আমার মাথায় ঘোমটা টেনে তুলবেন। তা না এসে রাক্ষসের মত খেয়ে ফেললেন।”
“আমার কি দোষ ওদের সাথে ঝগড়া করে খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল।”
“কি দরকার ছিল এত ঝামেলা করার টাকাটা দিয়ে দিলেই হত!”
” মগের মুল্লুক নাকি। বাপের হোটেলে খাই তোমার স্বামী এখনো কিন্তু বেকার এত টাকা ওদের দেবো কোথা থেকে?”
“বিয়ে করেছেন বউকে খাওয়াবেন কি এখন। সেই তো বাপের হোটেলেই খাওয়াবেন!”
” জি না মিসেস নিবিড় তোমার স্বামী এতটা অপদার্থ না। আমি জবের চেষ্টা করছি। পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।”
” তা বিরহে ত লেখাপড়া চান্দে তুলেছেন। পরীক্ষাটা কি এবারো দিবেন না।”
“দেব! এখন এসব কথা রাখো‌। কত প্রতীক্ষার পর এই রাতটা এসেছে। তুমি শুধু আমার। সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে তোমাকে আমি নিজের এতটা কাছাকাছি পেয়ে ছি। আজকে রাতে কোন কথা না শুধু ভালোবাসা, ভালোবাসা। এতদিন নিবিড়ের অবাধ্য প্রেম দেখেছো। আজ থেকে দেখবে নিবিড়ের অবাধ্য ভালবাসা। নিবিড়ের অবাধ্য ভালবাসার সহ্য করতে পারবে মিসেস?” বলতে বলতে নিবিড় ছোঁয়ার কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
ছোঁয়া নিবিড়ের এলোমেলো অবাধ্য চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,” এই অবাধ্য ভালবাসার যতই কষ্টের হোক তা আমার জন্য হবে স্বর্গীয় সুখের। আমি তা সাদরে গ্রহণ করলাম‌।”
” আমার এই ভালোবাসা গ্রহণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। নিবিড় তোমাকে তার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে যতদিন বেঁচে আছে।” বলে কপালে গাঢ় চুম্বন করল।
সকল ভালোবাসা গুলো পূর্ণতা পাক‌‌। নিবিড় ছোঁয়ার ভালোবাসা পূর্ণতা পেল। অনেক গুলো দিন ধরে গল্পটা চলছিল। আমার খুব প্রিয় উপন্যাস ছিল এটা। শেষ করতে নিজের ও কষ্ট হচ্ছে। জীবনে ঝড় ঝামেলা আসবেই কিন্তু সমস্ত ঝড় ঝামেলা সামলাতে পারলেই জীবনটা সুন্দর হয় ভালোবাসা ময় হয়। নিবিড় আর ছোঁয়া ও অনেক কষ্টের পর এক হয়েছে আরো বাঁধা আসবে তখন ই দুজন হাতে হাত ধরে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে।
আফিয়া আকাশ, রাত্রি তৌহিদ, লিলি রায়ান, দীপা শ্রাবণ, আবির, সুমু , রাফসান তাহমিনা সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক‌‌।
এরা উপন্যাস এর একটা চরিত্র মাত্র তবুও সবাইকে আপন লাগে পরিবারের মতো। মিস করব পাঠকদের ও উপন্যাস টাকে। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আমার জন্য দোয়া করবেন।

সমাপ্ত।

অবাধ্য প্রেম সিজন-০১ গল্পটি পড়তে লিখাটির উপর ক্লিক করুন