#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৭]
____________________
৯০.
ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে ঈশান দুই চোখ ঘুম আজ আকাশে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে।একটু পর হাতটাকে বিছানার সাথে আছাড় দিয়ে উঠে বসে সে।নিজের প্রতি নিজের জেদ কাজ করছে।বিছানার ফুল গুলো পরিষ্কার করা ছাড়া আপাতত তার কোন কাজ নেই ঠিক তাই করলো সে।পুরোটা ঘর ঝেড়ে চুপচাপ বসে রইলো বিছানায়।বাইরে পরিপূর্ণ আলো দেখা যাচ্ছে।চোখের পলকে সকাল হয়ে গেল!ঈশা রুম ছেড়েছে ফজরের আযানের সময়।যাওয়ার আগে ঈশানকে দু’চারটা কথা শুনিয়ে দিতেও আপোষ করেনি।কথা তো ছিল একটুখানি আদর করবে আর ঈশান কি করলো।রাগের মাঝে আনমনে হেসে ফেললো ঈশান।কক্ষের জানলা খুলে তাকিয়ে রইলো বাইরে।সকালের মৃদুমন্দ হাওয়া কায়া শীতল করছে।
.
ঈশা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।তাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে রুমা।সকাল নয়টা বেজে গেছে ঈশার ঘুম মনে হয় না বারোটার আগে ভাঙবে।
” রুমা এদিকে আয় ওখানে বসে হাসছিস কেন?”
মাহমুদার ডাকে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রুমা।চটপট পায়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো কক্ষ ছেড়ে মাহমুদার হাতে একটি কাগজ আর কলম সেদিকে তাকিয়ে রুমা শুধায়।
” এসব কেন?”
“বলছি আয় ডাইনিং এ বস।ঈশা উঠে যাবে মেয়েটা ঘুমাক।”
” হ্যাঁ চলো।”
মাহমুদা বসলেন কলম আর খাতাটা এগিয়ে দিলেন রুমার কাছে।
” বলেছিলাম বউ তুলে আনবো না তাই বৌভাতের আয়োজন করার প্রস্তুতি আমাদের ছিল না।এবার যখন এনেছি তখন আয়োজনটা করা যায় কি বলিস?”
” হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।এবার আমার কাজ কি?”
” মেন্যু লিস্ট কর।আমি চাই না কোন দিক দিয়ে ত্রুটি হোক।রেদোয়ান উঠেছে?”
” মনে হয় তো না।”
” ঠিক আছে থাকুক দশটায় ঈশাকে উঠিয়ে দেব আর রেদোয়ানকেও পরিবারের সবাই আজ একসাথে নাস্তা করবো।”
.
ঈশান গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিল নিচে নামবে বলে হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজে কিছুটা সন্দিহান হয়।এ ঘরের কেউ এমন সল্প আওয়াজে তো করাঘাত করে না।তবে কী ঈশা এসেছে?আচমকা মনটা পুলকিত হলো লজ্জায় মাখা হাসি নিয়ে দরজা খুলতে ছিদ্র হওয়া বেলুনের মতো মুখটা চুপসে গেল ঈশানের।
” রুদবা!”
” আমার ঈশামনি কই?তোমার কাছে নাই ঈশামনি?”
ঈশান টেনে নিলো রুদবাকে।বিছানায় বসিয়ে গাল টেনে বলে,
“তুমি ভূতের গল্প পড়েছো?
“হ্যা পড়েছি।”
” তোমার ঈশা মনিকে একটা ভূত নিয়ে গেছে দেখছো না মামার কাছে ঈশা মনি নেই।”
” তুমি মিথ্যা বলছো বাস্তবে ভূত বলে কিছু হয় না।”
” হয় রে হয়।তুমি তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করবে দেখবে বলবে ভূত নিয়ে গেছে ঈশামনিকে।”
রুদবা পিটপিট চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।যে কিছুতেই ঈশানের কথা বিশ্বাস করবে না ভূত বলে আদৌ কিছু হয়?ঈশান বুঝতে পেরে রুদবার হাতে টেনে ধরে বলে,
“চলো আমার সাথে তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে সত্যিটা জানা যাবে।”
রুদবাও চললো সত্যি উদঘাটনে।রাসেল ফ্রেশ হয়ে এসে মাত্র নিচে নেমেছে।রেদোয়ান এখনো ফ্রেশ হয়নি অথচ সে বসার ঘরে এসে টিভি অন করে চুপচাপ সোফায় বসে আছে আর তা দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে রুমা।রেদোয়ান আর রুমার তর্কবির্তক দেখছিলো রাসেল।এরা কি সত্যি সত্যি ঝগড়া করছে?মোটেও না বরং এরা খুনশুটি করছে।বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যথার অনুভব করলো রাসেল।এই মুহূর্তে অনু পাশে থাকলে কী হতো?
” এই রুমা তোমার মেয়েকে বোঝাও গতকাল তার ঈশামনি কে যে ভূতে নিয়ে গেছে তা সে বিশ্বাস করতে চাইছে না।”
ঈশানের কথায় রেদোয়ান আর রাসেল দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।মাহমুদা এখানে উপস্থিত নেই আর সেই সুযোগটা কাযে লাগালো রেদোয়ান।
“রুদবা মামুনি তোমার মামা সত্যি বলেছে।গতকাল তোমার ঈশা মামনিকে একটা ভ্যাম্পায়ার কোলে করে
ওই যে হাতের ডান দিকের একটা ঘরে নিয়ে গেছে।”
ঈশান নড়ে চড়ে উঠলো আড় চোখে তাকালো রেদোয়ানের দিকে।মানুষটার ভাব ভঙ্গিমায় মনে হচ্ছে না তিনি ঈশানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলছে।তবুও কেমন সন্দেহ হচ্ছে ঈশানের রাসেলের চোখে চোখ পড়তে দেখতে পেলো রাসেলের মিটিমিটি হাসি।গলা ঝারলো ঈশান।রুদবা আগ্রহ নিয়ে বলে,
” ভ্যাম্পায়ার রক্ত খায় তাই না বাবা।”
” হ্যাঁ মা তবে এটা বিশেষ ভ্যাম্পায়ার।এটা তোমার ঈশামনির রক্ত চুষে তারপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।”
শেষোক্ত কথাটি বলে হেসে ফেললো রেদোয়ান।ঈশানের বুঝতে বাকি নেই রেদোয়ান তাকে উদ্দেশ্য করে এসব বলছে।তারা কি তবে দেখে ফেলেছে?হায় আল্লাহ!ঈশান টেনে নিল রুদবাকে রেদোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” বাচ্চা মেয়েটাকে এসব কি বলছো”
” আমার মেয়েকে আমি খারাপ কি বললাম?আমার মেয়ে সব এনিমেলসের নাম জানে।তাই না মামনি?”
” এই রুদবা যাও একটু রান্না ঘর থেকে ঘুরে আসো।”
রুদবা দাঁড়ালো না এক দৌড়ে চলে গেল রান্নাঘরে।ঈশান বসলো রাসেলের পাশে।রাসেল তাকে টিপ্পনী কাটতে বলে,
” গতকাল ফুলগুলো তোকে খুব পীড়া দিয়েছে তাই না?আহারে তোর থেকেও বেশি কষ্টে ছিলাম আমি কত কি করলাম সব ভেস্তে গেল।”
” একদম নাটক করিস না।তোর আন্টি কাল রাতে যা করেছে তা কী ঠিক করেছে?”
” একদমি না।অবশ্য মন্দ কিছু করেনি তুই আন্টিকে প্রতিটা কাজে কাজে থ্রে ট দিয়ে উসুল করেছিস।আন্টিও ঝোঁক বুঝে কো প মেরেছে।”
রাসেলের কথায় গা দুলিয়ে হাসলো ঈশান।পায়ের উপর পা তুলে আয়েশী ভঙ্গিমায় বসে বলে,
” ভুলে যাবি না আমি কার ছেলে।আবিদ শাহরিয়ারের ছেলে আমি।ঈশান শাহরিয়ারের পাঁকা ধানে দেওয়া এত সহজ নয়।”
” তার মানে…”
” চুপ কর কিছুই করিনি।মুখে তালা লাগা।”
রাসেল চুপ হয়ে গেলো এখন মুখ খুললে ঈশানের চোখ রাঙানো দেখতে হবে তাই চুপচাপ কেটে পড়া ভালো।বেশ কিছুক্ষণ পর ঈশা ডাইনিং এ আসলো।ঈশানের পাশের চেয়ারটি খালি ছিল ঈশান ভেবেছিল ঈশা এসে তার পাশে বসবে।মনে মনে একটু ব্লাশিং হচ্ছিলো ঈশান।তার হাভ ভাব বুঝতে পারলো রুমা এবং রাসেল।ঈশা যখনি গিয়ে রুদবার পাশে বসলো সঙ্গে সঙ্গে ঈশানের চাহনি পালটে গেলো।মুখে ধারণ করলো গম্ভীরতা।বেচারার মনটা পদে পদে ভেঙ্গে যাচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে ঈশান আঙুলের সাহায্যে চুলে ব্রাশ করছে সে তার রাগ দমনে ব্যস্ত।
” ঈশা উঠো।”
রুমার কথায় হকচকালো ঈশা।প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকাতে রুমা বলে,
” ঈশানের পাশে বসো যাও।”
ঈশা উঠলো তবে ভাঙা মনে জোড়া লাগলো না ঈশানের।ক্রুদ্ধ গলায় বলে,
” ওটা আমার বউ নাকি যে আমার পাশে বসবে?”
” তাহলে কার বউ ঈশান?”
ফোড়ন কাটলেন মাহমুদা।মায়ের প্রশ্নে ঈশান বলে,
” আমি কি জানি কার বউ?কবুল বলেছি বিয়ে করেছি শেষ।উনি হলেন আমাদের অতিথি নাকি ভাড়াটিয়া?নাকি আমি ভাড়াটিয়া?নাকি শৌপিস এনেছি ঘরে সাজিয়ে রাখতে!”
ছেলের অভিমান বুঝতে পারলেন মাহমুদা।মুচকি হেসে ঈশাকে ইশারা করে ছেলের পাশে বসতে।ঈশা চুপচাপ বসে পড়ে ঈশানের পাশে।ঈশান আড় চোখে একবার তাকালো ঈশার দিকে পরনে খয়েরি রঙের শাড়ি, হাতে স্বর্ণের বালা।ঈশান ঠোঁট বাঁকালো মনে মনে বলল,”বাহ সুন্দর লাগছে!তবে সুন্দর লাগলে আমার কী?এটা তো আমার বউ না এটা হলো আমাদের ঘরের শৌপিস।তিনি সেজেগুজে থাকবেন আর আমি তাকে দেখবো।”
রুমা সবাইকে খাবার এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।মাহমুদা একের পর এক ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত প্রায়।মায়ের কান্ড ঈশান ভ্রু কুচকে দেখছিলো হঠাৎ মায়ের আজ এত ব্যস্ততার কারণ কী?”
” ঈশান তোমায় তো বলা হয়নি আজ ঈশাদের বাড়ি থেকে সকলে আসবে।বৌভাতের আয়োজন রাখা হয়েছে রাত নয়টা থেকে।”
” এত বড় কথা তুমি আমায় বলনি কেন?”
” এখন তো বললাম।”
” গতকালের পর থেকে তুমি আমার সাথে ত্যাড়া ত্যাড়া আচরণ কেন করছো আম্মু?”
” তুমি কাল যা করেছো আমার মান সম্মান আর কিছু আছে?সবাই বললো এই ছেলে নির্ঘাত বউ পাগল হবে,কেউ কেউ তো এটাও বলেছে এই অবাধ্য ছেলের সংসার করবে কি করে ঈশা?এসব শোনার পর আমার কেমন লেগেছে তা তুমি বুঝবে না।”
” আমি জানি তো এসব অনুর আম্মু বলেছে।আমি সবার সব কথা শুনেছি।অবশ্য খারাপ কিছু বলেনি তারা।এগুলো হলো প্রশংসা শুনতে একটু কটু শোনা যায় এই আর কি।”
” ঈশান তুমি বড্ড ত্যাঁদড় স্বভাবের।”
” এই কথাও আমি জানি আম্মু।”
” সব জানো ভালো কথা অনুষ্ঠান তো আমাদের ঘরোয়া তাই হালকা কিছুর আয়োজন করেছি।এখন ঈশার আর তোমার জন্য ড্রেস কিনতে যাও মনে রাখবে যেন দুজনের কালার কম্বিনেশন এক থাকে।”
” তা তো অবশ্যই।অবশ্যই মনে রাখবো।”
ছেলের এতটা তোড় জোড় দেখে কুটিক হাসলেন মাহমুদা।ঈশানকে রাগিয়ে দিতে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
” আর ঈশা আজ কি ও বাড়ি যাবে তোমার বাবা মায়ের সাথে নাকি থাকবে।”
” মা আমি আজকে ও বাড়ি যাব।”
মুহূর্তে ভাব ভঙ্গিমা পালটে গেলো ঈশানের।হাত থেকে গ্লাসটা বিকট শব্দে রাখলো টেবিলে যার ফলে ঈশা সহ কেঁপে উঠলো অনন্যরা।ঈশান রেগে ঈশাকে বলে,
” ও বাড়ি যাবে মানে?”
“এ..এটাই নিয়ম।”
“এই নিয়ম না মানলে কী হবে?তোমার শ্রেয়া আপু গিয়েছিল বৌভাতে?যায়নি আমি জানি তো।”
” নিয়ম..”
” আবার নিয়ম।আমি না যেতে দিলে তুমি যাবে কি করে?”
ঈশানের রাগ দেখে মিটিমিটি হাসছে সকলে।তারা আজ ঈশাকে কিছুতেই ছাড়বে না তবুও ঈশানকে রাগিয়ে দিতে মাহমুদা একটু আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন।
” ঈশান তর্ক করছো কেন ঈশার সাথে?আমি কি বলেছিলাম আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে তারপর ঘর সংসারের কথা ভাববে।তুমি তো নিজেকে একটুও পালটাওনি আমার সামনে ঈশাকে ধমকাও তুমি।কত বড় সাহস তোমার।”
” সরি আম্মু।”
” খবরদার ওর সাথে ধমকাধমকি করবে না আমি কিন্তু এসব সহ্য করবো না।”
” আমিও সহ্য করবো না তোমাদের এসব।আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দিলাম দিন আমারো আসবে।”
৯১.
ঈশানের সাথে শপিং এ গিয়ে পুরো বেকুব বনে গেছে ঈশা।এই ছেলে বড্ড বেসামাল স্বভাবের।শুধুই কি ঈশার বিষয়ে বেসামাল নাকি বাকি সব বিষয়েও একই অবস্থা?ছেলেটা শেষ পর্যন্ত নিজে পছন্দ করে ঈশার জন্য অ্যাশ কালার একটি শাড়ি এবং নিজের জন্য স্যুট কিনেছে।
অ্যাশ কালার শাড়ি পরাহিত ঈশা, ভারী মেকাপে মেয়েটা চেনা বড় দায়।অনু দূর থেকে ভ্রু নাচিয়ে দেখলো ঈশাকে এক ছুটে গিয়ে থামলো ঈশার কাছে।দুজন দুজনকে দেখতে পেয়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়।
” ঈশুরে মিস করেছি তোকে অনেক অনেক অনেক।”
” আমিও।”
” মিথ্যুক তুই আমাকে মিস করার সময় পেয়েছিস?ভাইয়া তোকে রেহাই দিয়েছে নাকি?আগে বল দম ফেলার সময় পেয়েছিস।”
” অসভ্য মেয়ে চুপ কর।”
অনু মুখ কুচকালো।মিটিমিটি হাসছে ঈশা অনু কত কি ভেবে নিলো অথচ সে কি জানতো যে বেচারা ঈশান কতগুলো রেস্ট্রিকশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।ঈশার পরিবারের সবাই একে একে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে তাদের স্বাগতম জানাচ্ছে ঈশান এবং রেদোয়ান।সবার শেষে প্রবেশ করেন মুজাহিদ হাসান তাকে দেখে ঝটপট জড়িয়ে ধরে ঈশান।
” ফাদার ইন ল আই মিস ইউ।”
ঈশানের কান্ডে সকলে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।রেদোয়ান ভাবতে পারেনি ঈশান এমন কিছু করবে।বড্ড বিব্রতবোধ করছেন মুজাহিদ হাসান তিনি ঈশানের পিঠ চাপড়ে বলেন,
” মেয়ে দিয়ে দিলাম তোমাকে এখন এত তামাশা করছো কেন?”
” আমার ভালোবাসা আপনার তামাশা মনে হয়?এমন জামাই আর পাবেন?আপনার ভাগ্যের প্রতি আমার হিংসা হচ্ছে এত ভালো ভাগ্য কেন আপনার?”
” আট কপালে বুঝতে হবে।”
” ধিক্কার দিচ্ছেন নাকি?”
” না প্রশংসা করছি।”
” যাই বলেন সব মেনে নিব আসুন আসুন এই লাল ফুলে গালিচাটা আপনার জন্য করেছি ফাদার ইন ল।কিন্তু আপনি সবার শেষে এলেন।”
মুজাহিদ হাসান হেটে গেলেন বাড়ির ভেতর তার পিছু পিছু গেলো ঈশান।বাড়ির বাইরে কিছু লাইটিং করা হয়েছে এক কোনে স্টেজ।
সুলতানা মেয়েকে দেখে কান্না ধরে রাখতে পারলেন না।মেয়ের গলা জড়িয়ে তিনি নিরবে কাঁদলেন।মায়ের কান্না শূলের ন্যায় বিদছে ঈশার বুকে ঝাপসা হয়ে এলো তার চোখ যুগল।পাশ থেকে অনু তার দিকে কেমন কড়া নজরে তাকিয়ে আছে।বার বার ইশারা করে বোঝাচ্ছে। “একদম কাঁদবি না।মেকাপ চলে যাবে।”
সুলতানা মেয়ের চোখে চোখ রাখলেন আড়ালে হাত টেনে এনে বলেন,
” ঈশা মা তুমি ভালো আছো?এরা তোমায় কষ্টে দিচ্ছে না তো?”
” এই বাড়ির সকলে অনেক ভালো আম্মু।তোমরা একদম চিন্তা করবে না।”
” যদি কোনদিন আঘাত দেয় আমাকে বলবে।জোর খাটিয়ে মেয়ে নিয়েছে মেয়ে ভালো রাখার দায়িত্ব তাদের।”
” আমরা খারাপ রাখবো ভাবলেন কি করে বেয়াইন?”
মাহমুদার কণ্ঠে চমকে গেলেন সুলতানা।ঈশা দ্বিধাদ্বন্দে তাকালেন মাহমুদার দিকে এবার উনি নিশ্চয়ই ভাববেন ঈশা তাদের নামে কিছু বলছে।হঠাৎ তিনজনের মাঝে উপস্থিত হলো ঈশান।নতুন জামাই সুলতানাকে সালাম জানাতে তিনি সালামের উত্তর দিলেন না।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলেন অন্যদিকে মায়ের এমন আচরণে লজ্জায় পড়লো ঈশা।ঈশার দিকে তাকিয়ে কথা ঘুরালো ঈশান।
” ঈশা শুনছো মাদার ইন ল রেগে আছে বুঝতে পারছি।ঈশা উনাকে বেশিদিন রাগিয়ে রাখা যাবে না নতুন অতিথি এনে শীঘ্রই খুশি করতে হবে।”
কানটা ঝাঁঝাঁ করে উঠলো ঈশার।ঈশান এতটা বেল্লিক কবে থেকে হলো?ঈশান বুঝতে পারলো এখানে থাকা মানে তর্ক বাড়া সে দ্রুত ঈশার হাত টেনে নিয়ে গেলো নাজিমের মায়ের কাছে।ঈশাকে দেখে আলেয়া ভীষণ খুশি মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন মন ভরে। সবার ভীড়ে হাসিনকে দেখে দু’চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো ঈশার।হাসিন এগিয়ে এসে আলতো হাতে বুকে জড়ালো ঈশাকে।
” বোন কেমন আছিস?”
” বেশ ভালো তুমি কেমন আছো?”
” তোকে দেখে ভালো হয়ে গেছি।তোর শ্রেয়া আপু এসেছে দেখা করেছিস?”
” হ্যাঁ।”
ঈশাকে পেয়ে এক ছুটে দৌড়ে এলো নাদিম।ঈশাকে আগাগোড়া একবার জহুরি চোখে পরখ করলো সে।পাশে দাঁড়িয়ে ঈশান নাদিমের কার্যকলাপ পরখ করছে।
” তোমাকে সুন্দর লাগছে ঈশা বউ।আমার জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলে না?আমি চাকরিটা নিয়ে নিলে তোমাকে আর হারাতে হতো না।”
ছোট্ট ছেলে নাদিমের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ঈশা।ঈশান এই বাচ্চা ছেলেটাকেও হিংসা করতে আপোষ করেনি।এই ছেলেকে একদিন ঈশা গাল টেনে দিয়েছিল আর সেই একই আবদার ঈশান করতে বেচারার গালের রফাদফা করে দিয়েছিল ঈশা।
” আমার ছোট্ট বর তোমায় এই কথা কে বলেছে?”
” নাজিম ভাইয়া বলেছে।”
” তোমার নাজিম ভাইয়া ভুল বলেছে তুমি তো আমার ছোট বর।”
” সত্যি বলছো?”
” হ্যা সত্যি।”
নাদিম এক গাল হাসলো।ঈশানের দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকালো।ঈশানের দিকে।
” ঈশান ভাইয়ার সাথে মেচিং করে পড়েছো তোমাদের সুন্দর লাগছে।তবে ঈশা বউ মনে রেখো তোমাকে আমার সাথে বেশি মানায়।”
নাদিম ভাব দেখিয়ে কথাটা বলে এক ছুটে পালালো।নাদিমের কথায় ঈশান মনে মনে হাসে।
” বাচ্চা ছেলে বেশি পাকা হয়েছিস দুইদিন পর নির্ঘাত মেয়েদে পিছনে লাইন মা র বি।”
.
” তুমি আমাকে কাল কল দাওনি কেন?বিয়ে বাড়িতে নিশ্চয়ই নতুন কাউকে পেয়েছো?”
অনুর সন্দিহান প্রশ্নে বিরক্তবোধ করলো রাসেল।এই মেয়েটাকে আড়ালে ডেকেছে দুই চারটা ভালো কথা বলবে বলে অথচ শুরু করেছে অযথা বকবক।
” ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন দিতে পারিনি।”
” ওহ এখন ব্যস্ততা শেখাচ্ছো।”
” এমন এক চড় লাগাবো মুখের মেকাপ উঠে হাতে চলে আসবে।”
রাসেলের ধমকে নাক ফুলালো অনু।বড় বড় পা ফেলে চলে যেতে উদ্যত হতে হাত মুচড়ে ধরে রাসেল,
” বলেছিলাম শাড়ি পরে আসতে পরলে না কেন?”
” আম্মু বকেছিলো।তাই তো গাউনটা পরলাম।সুন্দর লাগছে আমায়?”
” ভীষণ।”
” আপনাকেও সুন্দর লাগছে।”
কথাটি বলেই মিটিমিটি হাসলো অনু।তার হাসিতে ঠোঁট বাঁকালো রাসেল।আশেপাশে পরখ করে স্বল্প স্বরে বলে,
” তুমি প্রশংসা করছো!তুমি প্রশংসা করার মেয়ে না।কি চাই সেটা সরাসরি বলো।”
” এই তো আমার বুদ্ধিমান বফটা।আগামী দুই মাসের মধ্যে বিয়েটা ঠিক করুন রাসেল।প্লিজ প্লিজ প্লিজ বলুন আমার কথাটা রাখবেন।”
” দুইমাস পর তিন মাসের মাথায় তোমাদের এক্সাম তাই বিয়ের ঝোঁক উঠেছে।কি ভেবেছো আমি বুঝি না?তোমার সবকিছুর পইপই হিসাব রাখছি আমি,এক্সাম শেষে যা হবার হবে।”
অনু ভীষণ রেগে গেলো।রাসেলের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” মিস্টার রাসেল আপনাকে বিয়ে করার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। সরি আপনাকে রিজেক্ট করা হলো।”
অনু গটগট পায়ে চলে গেলো সামনের দিকে।রাসেল কোন প্রতিক্রিয়া করলো না।সে জানে এই মেয়েটা একটুপর এসে আবার অন্য বায়না ধরবে।
.
রাতের অতিথিরা বিদায় জানিয়েছে।মাহমুদা শ্রেয়া,নাজিম,অনুকে ভীষণ কষ্টে সবাইকে মানিয়ে রেখে দিয়েছে।তারা আজ এই বাড়িতে থাকবে পরেরদিন ঈশান আর ঈশাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে যাবে।আয়োজন শেষ করে ঈশান অবসর হলো ঠিক রাত একটায়।এখন তাকে ব্লেজার পালটে পুনরায় নিচে নামতে হবে।এখনো কিছু কাজ বাকি।নিজের কক্ষের কাছে আসতে থমকে গেল তার দু’চরণ।শ্রেয়া, নাজিম,অনু,রাসেল,রেদোয়ান,রুমা সবাই দরজায় ভীড় করেছে কিন্তু এই দল চাইছে কী?
” কি হলো?এখানে কেন তোমরা।”
দল থেকে ঈশানকে পালটা প্রশ্ন করলো রাসেল,
” রুমে যাবি নাকি?”
” হ্যাঁ কেন?”
” যেতে দেওয়া হবে না।অবশেষে তোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে।”
” মাহেন্দ্রক্ষণ!মানে?”
” ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বউ কোলে..আর কিছু বলা লাগবে?”
বিচক্ষণ ঈশান রাসেলের কথা কয়েক সেকেন্ডে বুঝে ফেললো।আচমকা মনটা করে উঠলো উরু উরু। ঠোঁটের কোনে লেপ্টে গেলো লজ্জার হাসি।
” তার মানে তোরা টাকা আদায় করতে দাঁড়িয়ে আছিস?”
” অবশ্যই দুলাভাই।এবার কিন্তু পঞ্চাশ হাজার চাই কত্ত শখ ছিল ঈশার বিয়েতে গেট ধরবো তবে কিছুই হলো না।এবার ধরেছি, গেট নয় তবে দরজা।”
” ও হ্যালো এসব গেট দরজা ধরাধরি বাদ দিয়ে রাসেলের গলা ধরে বসে থাকো।”
ঈশানের কথায় ভীষণ লজ্জা পেলো অনু।সবাই শব্দহীন হাসছে লজ্জায় এক দৌড়ে পালাতে মন চাইলো অনুর।এই সময়ে লজ্জা দেওয়া কি ঈশানের খুব জরুরি ছিল।
” যতই কথা ঘুরাস টাকা দিতে হবেই।পঞ্চাশ হাজারের এক টাকা কমেও তোকে প্রবেশ করতে দিব না।”
নাজিম কথাটি বলতে সবাই একসাথে সহমত জানালো।ঈশান হাসলো ঠোঁট বাকিয়ে।
” টাকা দিতে আমি রাজি আগে বল আমার বউ কোথায়?”
” আমার রুমে যাও গিয়ে নিয়ে আসো।আর এই নাও ফুলের তোড়া আগে কিন্তু হাটু ভেঙে প্রপোজ করবে।”
শেষোক্ত বাক্যটি বললো রুমা।সবাই তার কথায় সহমত জানালো।ঈশান হাতে তুলে নিলো সাদা গোলাপ ফুলের দৃষ্টি নন্দন সুন্দর তোড়াটি।
” তোমাদের না টাকার প্রয়োজন?চেক হলে চলবে?”
” হ্যাঁ চলবে।”
“আমি এমনি এমনি টাকা দেব না আর বউ নিয়ে প্রয়োজনে ১ মাস পর বাসর করবো আমার সমস্যা নাই।কিন্তু তোমাদের মতো একদল ফাজিলকে টাকা দিতে আমার বড্ড গায়ে লাগছে।যারা কি না বিনা পরিশ্রমে আমার টাকা মেরে খাবে।”
” এভাবে বলছেন কেন দুলাভাই?আমরা তো আপনারি লোক।”
” হ্যাঁ তাই তো ভেবে দেখিনি।অনু তুমি তো ভীষণ এক্সাইটেড তাই না?”
” তা আর বলতে।”
” আমাকে একটা শব্দের বানান বলবে যদি পারো আমি তোমাদের হাতে দ্বিধাহীন পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দিব।”
” আপনাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনেছি দুলাভাই পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ যা জানতে চাইবেন ঝটপট বলুন।”
” incomprehensible বানানটা বলো।’
ধপাস করে আকাশ থেকে পড়লো অনু।তার মতো ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট কি না এই কঠিন বানান বলবে!তার তো উচ্চারণেই আসছে না।
” দ..দুলাভাই একটু ভেঙে ভেঙে বলেন।”
“কোন ভাঙাভাঙি নাই বলো incomprehensible বানান।”
দলের মাঝে সবার মুখে আধার নামলো।ঈশান এই শব্দ কোথা থেকে বের করেছে?
” কি পারবে না?”
” কোন শর্ত টর্ত নাই বউ নিয়ে রুমে যা আর টাকা দে।ঈশান তুই এসব চালাকি ছাড়।”
রাসেলের কথায় এক গাল হাসে ঈশান।মাথায় তার অন্য বুদ্ধি এসেছে।
” ঠিক আছে আমি রাজি।আমি রুমে যাব আর চেক আনবো।সন্দেহ থাকলে অনু আমার সাথে রুমে আসো।”
ঈশান কক্ষে গিয়ে চেক বইটা থেকে একটা চেক ছিড়লো।এবং সেখানে টাকার পরিমাণ বসিয়ে বাইরে ফিরলো।সবাই খুশিতে গদগদ হয়ে আছে।সাদা গোলাপের তোড়া হাতে ঈশার কাছে পৌছালো ঈশান ফুলটা বাড়িয়ে দিল ঈশার হাতে।ঈশা ফুল হাতে নিতে ঈশান তাকে ঝটপট কোলে তুলে নেয় লজ্জায় নিংড়ে যায় ঈশা।ঈশান কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
” এবার চলো তুমি আর আমি মিলে বিয়েতে কত টাকা উঠেছে কি কি উপহার উঠেছে সেই হিসেবে বসবো।”
সবার মাঝে দেখা যায় উচ্ছ্বাস।এই উচ্ছ্বাস কতক্ষণ রইবে কে জানে।
সবার মাঝে হৈ চৈ বেড়েছে।ঈশান ঈশাকে নিয়ে পৌছালো নিজের কক্ষে।তার পিছু পিছু প্রবেশ করলো বাকিরাও।পকেট থেকে চেক নিয়ে ঈশান দিয়ে দিলো অনুর হাতে।বাকিদের সবাইকে বের করে দরজা রুদ্ধ করলো ঈশান।
” কি সুন্দর লাগছে তোমায়।আসো কাছে আসো আদর করি।”
” শুরু হয়েছে আপনার।”
” শুরু তো গত রাত হয়েছে শেষ কবে হবে জানি না।”
ঈশান জড়িয়ে ধরলো ঈশাকে।পরপর বার বার চুমু খেলো ঈশার গালে।হাতে হাত ঠোঁট ছুঁইয়ে ঈশান বলে,
” কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।সত্যি কি তুমি আমার!”
.
খুশিতে আত্মহারা দলের সকলে। অবশেষে ঈশানকে তারা জব্দ করতে পেরেছে।ছেলেটার মন নিশ্চয়ই আজ ভালো তাই তো দশ হাজার টাকা বাড়তি দিয়েছে।চেয়েছে পঞ্চাশ আর দিয়েছে ষাট হাজার এই নিয়ে সবার আনন্দের শেষ নেই।অনুর হাত থেকে চেক নিয়ে বাকরুদ্ধ রাসেল।একি এখানে তো তার সাইন!ভালো ভাবে চেকটা উলটে পালটে বেকুব বনে যায় সে।চেকে লেখা ষাট হাজার টাকা।এখানে তার চেক এলো কি করে?একটু মাথা খাটাতে বুঝতে পারলো রাসেল।এটা তার চেক বইয়ের একটি পাতায় যেই পাতায় সব লেখা ছিল শুধুমাত্র ঈশান টাকার পরিমানটা বসিয়ে টাকা তোলার কথা ছিল।এই টাকা তাদের বিজনেসের জন্য ঈশান পরবর্তীতে টাকা নেয়নি আর চেকটাও পড়ে রইলো ঈশানের কাছে।বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে চেক পড়ে আছে এতে চিন্তার কি আছে?কিন্তু আজ বিশ্বস্ত বন্ধু তাকে বাশ দিয়ে দিল।রাসেলের মাথা ঘুরছে দ্রুত বিছানায় বসে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে,
” মানে বাসর করবে ও আর টাকা যাবে আমার একাউন্ট থেকে!এ হতে পারে না এই চেক বাতিল।”
রেদোয়ান দ্রুত পকেটে চেক পুরে বলে,
” এতকিছু জেনে আমাদের কাজ নেই আমরা আমাদের চেক পেয়েছি।কাজ না থাকলে গিয়ে খৈ ভাজো যাও।”
#চলবে___
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৮ক]
_____________________
” তোমাদের বাড়িটা সুন্দর।এই বাড়ি করত কত দিন লেগেছে?ধরো তোমরা সবাই মিলে দেশের বাইরে চলে গেলে এই বাড়ি খালি রেখে চলে যাবে কষ্ট হবে না?”
” আমার ষাট হাজার টাকা জলে গেলো।”
” আমি তোমায় কি বলি আর তুমি কি বলো”
” আমার ষাট হাজার টাকা।”
” রাসেল..”
অনুর ধমকে চোখ তুলে তাকালো রাসেল।মধ্য রাতে ছাদে তারা একাই আছে।মূলত অনু তাকে টেনে এনেছে ছাদে কিন্তু ষাট হাজার টাকার শোকে রাসেলের পাগল প্রায় অবস্থা।ঈশান তাকে এভাবে বাশ দিয়ে দিলো!
” অনু ষাট হাজার টাকা এভাবে চোখে পলকে ভ্যানিশ হয়ে যাবে আমি মানতে পারছি না।সবাই মিলে অযথা টাকা গুলো খরচ করবে।”
” তুমি তো বড্ড হিংসুটে এই রাসেল তাকাও আমার দিকে।”
” তোমার কাছে আমাকে হিংসুটে লাগে?এটা দশ পনেরো হাজার টাকা নয় যে আমি চুপচাপ রইবো এখানে ষাট হাজার টাকা।দাঁড়াও করাচ্ছি ঈশানের বাসর।”
রাসেল পকেট থেকে ফোন বের করলো একে একে পাঁচ ছয়বার ঈশানের ফোনে টানা কল দিলো কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না।এবার ফোন করলো ঈশার নাম্বারে অদ্ভুত মেয়েটার নাম্বারো বন্ধ।নিজের প্রতি নিজের রাগ লাগলো রাসেলের যে কোন উপায়ে আজ ঈশানকে বিরক্ত করতে হবে কিন্তু কি করে?সব মিলিয়ে গোলমাল লাগছিলো রাসেলের।সে উপায়ন্তর না পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতে ঈশানের মেসেজ দেখে দ্রুত চেক করে এই মেসেজটা আরো এক ঘন্টা আগে দেওয়া যেখানে লেখা ছিল,
“ফোন বন্ধ করে দিচ্ছি আমি জানি তোরা সব বাদর এক হয়েছিস এখন ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবি।অযথা কোন বিরক্তি চাইছি না তাই আগ্রীম সতর্ক হলাম।খবরদার আমার পেছনে লাগতে আসবি না রাসেল।যদি উলটা পালটা গন্ডোগোল করিস তবে তোর বাসর তো দূরের কথা তোর অনুরূপীকে নিজে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করিয়ে দেবো মাইন্ড ইট।আর তোর ষাট হাজার টাকা মে’*রে দেওয়ার মূল কারণ, তুই বন্ধু বন্ধুর দলে থাকবি তুই কেন প্রেমিকার কথায় আমার বিরুদ্ধে গিয়ে উঠবস করবি?”
দমে গেলো রাসেল ঠোঁট কুচকে কয়েকটা গালি দিল ঈশানকে।পাশে তাকিয়ে দেখলো অনু নেই।অদ্ভুত মেয়েটা গেল কোথায়?অনু কি তার প্রতি বিরক্ত হয়ে চলে গেছে?
৯৩.
আজ ঈশাদের বাড়ি যাবে ঈশান।সকাল থেকে মেয়েটার তাড়াহুড়োর শেষ নেই ব্যাগপত্র ঘুছিয়ে নিজেকে বার বার প্রস্তুত করছিলো কিছুক্ষণ বাদে তারা রওনা দেবে। ঈশান চুলে ব্রাশ করতে করতে আনমনে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটার ব্যাগে জায়গায় নেই অথচ ঠেসে ঠেসে ব্যাগে জামা কাপড় পুরাতে ব্যস্ত।
” তুমি এত জামা কাপড় কেন নিচ্ছো?”
“এখানে কি একা আমার জামা?আপনার জামাও আছে।”
” আমি মাত্র দুই সেট জামা নিলাম।এতেই কি বেশি হয়ে গেছে?তুমি যাচ্ছ একদিনের জন্য এত জামাকাপড় নিয়ে লাভ নেই।”
” একদিন মানে?”
ঈশান হাত থেকে ব্রাশটা রেখে এগিয়ে এলো ঈশার কাছে।পেছন থেকে জড়িয়ে গালে গাল মিশিয়ে বলে,
” আজ যাবে কাল রাতে আবার চলে আসবো ঠিক আছে?”
ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ঈশা।রোমান্টিক মুডে এসে ব্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে।একদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাবে মানে কী?অন্তত দুইদিন তো সে থাকবেই।ঈশান ধাক্কা সামলাতে না পেরে দু কদম পিছিয়ে গেল।
” তুমি সবসময় এমন করো আমার আবেগে ঝাড়ু মেরে দাও।”
“আমি দুইদিন থাকবো ঈশান।প্লিজ বাড়াবাড়ি করবেন না।”
“ঠিক আছে থাকবে।কোন প্রবলেম নেই কোন সমস্যা নেই।এখন সমস্যা হচ্ছে দ্রুত কাছে আসো।”
ঈশা এগিয়ে গেলো ঈশানের কাছে ভেবেছিলো ধাক্কা দেওয়ায় হয়তো চোট পেয়েছে।কিন্তু এই ঈশানের মনে কি চলে তা তো বুঝতে পারলো না ঈশা।ঈশা এগিয়ে যেতে তাকে দৃঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে ঈশান বেসামাল ওষ্ঠ ছড়িয়ে যায় ঈশার সারা মুখে।লজ্জায় নিজেকে ছাড়াতে চাইলো ঈশা কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না ক্রমশ ঈশানের ছোঁয়া অবাধ্য হচ্ছে।
” দুলাভাই আমার বান্ধবীটা তো মরে যাবে এবার অন্তত ছেড়ে দিন।”
অনুর কন্ঠে লাফিয়ে উঠে ঈশান।যার ফলে ঈশা ছিটকে পড়ে দেয়ালে।অনু ছোট ছোট পা ফেলে বারান্দা থেকে এগিয়ে আসে।
পর্দার দরুনে অনুকে দেখতে পায়নি তারা।ঈশান পড়েছে বেকায়দায়।তবুও নিজেকে যতটা পারা যায় সংযত করে বলে,
” তুমি এখানে কি করছো অনু?দেখেছো চুপচাপ দেখতে আবার সামনে এসে আমাদের লজ্জা দিতে কে বলেছে হুহ?”
” আ..আমার দোষ নাই।আমি ঈশার কাছে এসেছিলাম ঈশা ওয়াশরুমে ছিল ভাবলাম একটু বারান্দায় বসি।এর মাঝে আপনি এলেন ঈশাও বের হলো আমি ভাবলাম আপনি চলে গেলে আমি বের হবো।কিন্তু আপনি দুম করে ঢুকে ধাম করে রোমান্স শুরু করে দেবেন এটা কে জানতো।”
অনু এগিয়ে এলো ঈশার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
” বেচারি তোর জন্য মায়া হচ্ছে।ভালো থাকিস আমি গেলাম।”
অনু চলে গেলো ঈশান তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রোমান্সেও ডিস্টার্ব!দুনিয়ার কোথাও শান্তি নাই,আজকাল রোমান্সেও শান্তি নাই।ঈশা বড় বড় পা ফেলে বসলো বিছানায় এখনো তার গা কাঁপছে ভাগ্যিস ওটা অনু ছিল যদি শ্রেয়া বা রুমা হতো তবে কী হতো!
.
নীল রঙের পাঞ্জাবিটা হাতের সাহায্যে ঠিক ঠাক করে নিজেকে একবার দেখে নিলো ঈশান।বউ নিয়ে এই প্রথম শ্বশুর বাড়ি এসেছে তাই এই অনুভূতি তো অন্যরকম।গাড়ি থেকে নামতে দেখা হলো হাসিনের সাথে ছেলেটা তাদের এগিয়ে নিতে এসেছে।নাজমুল-শ্রেয়া,আর রাসেল অনুও তাদের সাথে এসেছে।ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে ঈশান মুখোমুখি হলো মুজাহিদ হাসানের কিন্তু আজ আর ঈশানকে আগের মতো উচ্ছ্বাস দেখালো না এখন সে নতুন জামাই তাকে থাকতে হবে ভদ্রতার বেশে।দুজনের মাঝে কুশল বিনিময় শেষে ঈশার বাবা তাকে বসতে বললেন।সুলতানা দৌড়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন সবার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও ঈশানের সালামের উত্তর নিলেন গম্ভীর মুখে।তিনি মেয়ে জামাই হিসেবে কিছুতেই ঈশানকে মেনে নিতে পারছেন না।
৯৩.
এই দুইদিন বাড়িটা আনন্দে পরিপূর্ণ ছিল অথচ আজ আবার নিরিবিলি।অবসন্ন মনটা নিয়ে বসে রইলেন মাহমুদা।যেদিন জানতে পেরেছেন ঈশানের বিয়ে ভাঙায় তার বাবার হাত আছে সেদিন যোগাযোগ ছিন্ন করেন আবিদ শাহরিয়ারের সঙ্গে।এত নোংরা খেলায় তিনি কেন মেতেছেন?ঈশানের বিয়ের ব্যপারে কিচ্ছু জানানো হয়নি তাকে, মাহমুদা একা হাতে সবটা সামলে গেছেন।অতীতের কথা মাথায় আসতে মনটা কেঁদে উঠে তার।আবিদ শাহরিয়ার ছিলেন একরোখা জেদি,রাগী মানুষ।তিনি ছিলেন বউ পাগল স্বভাবের।শ্বশুর বাড়িতে মাহমুদার স্থান ছিল রানীর হালে সবাই তাকে আদর যত্নে ক্রুটি রাখনি।কেউ মাহমুদাকে একটু উচু গলায় কথা বললেও আবিদ সহ্য করতেন না।ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সংসারটা তখনি পূর্ণতা পায় যখন কোল আলো করে সন্তান আসে।ঈশানের জন্ম নেওয়ার আগ পর্যন্ত সবটা ঠিক ছিল কিন্তু ছেলেটা জন্ম নেওয়ার পর পালটে গেলো তাদের সবকিছু।আবিদ শাহরিয়ারের ইচ্ছে ছিল তাদের ঘরে কন্যা সন্তান আসবে কিন্তু তার ভাগ্য সহায় হয়নি।জন্ম নিলো পুত্র সন্তান।
আবিদ শাহরিয়ারের জীবনে ঈশান ছিল কাটার মতো সন্তানের কারণে স্ত্রীর দূরত্ব তাকে বড্ড পীড়া দিত।একরোখা মানুষ যখন যা মাথায় আসে তা নিয়ে চলে কারো কথার ধার তিনি ধারেন না।সংসারটা তবুও ভালো ছিল আবিদ যথাসম্ভব নিজেকে মানিয়ে নিতো।ঈশান বড় হলো ছেলেটা হলো বাবার মতো।আবিদ শাহরিয়ার ঘর সংসারের মায়া কমিয়ে দেশ ছাড়লেন টাকার পেছনে ছুটতে থাকা তার নেশায় পরিণত হলো।তিনি যাওয়ার পর সংসারটা আরো পাল্টে গেলো সন্তানের ভবিষ্যতে ঝুকলেন মাহমুদা ঈশানকে আগলে রাখতেন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে।ধীরে ধীরে জীবনটা কত রঙে পালটে গেলো প্রথমে বাবার মৃত্যু,রাসেলকে ছেলে হিসেবে কাছে পাওয়া সব মিলিয়ে জীবনটা তার কাছে কখনো অপূর্ণ লাগেনি।আবিদ স্বামী হিসেবে একজন যোগ্য মানুষ হলেও বাবা হিসেবে নন এই কথা বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন মাহমুদা।
” মেডাম ঈশান স্যারের বাবা এসেছেন।”
দারোয়ানের কথায় চমকে গেলেন মাহমুদা।আচমকা বুকের ভেতরটায় চাপা ব্যথার অনুভব হলো।উঠে দাঁড়াতে কানে এলো হাই হিলের ঠকঠক শব্দ।মাহমুদা বিচলিত হলেন এগিয়ে যেতে দেখতে পেলেন ঈশানের বাবা,ফুফাতো বোন লিজা এবং ফুফু লিপি এসেছে।এই দিনে মাহমুদার নিশ্চয়ই খুশি হওয়ার কথা ছিল?কিন্তু আতঙ্কে তার মুখ নীল বর্ণ ধারন করেছে।
” মামীমা জানো তোমায় কত মিস করেছিলাম?”
মাহমুরা নীরব রইলেন এই মেয়েটাকে তিনি মোটেও সহ্য করেন না।অসভ্য মেয়ের জন্য তার ছেলের জীবন ছারখার।লিপির ক্রুদ্ধ চাহনি চোখ এড়ালো না মাহমুদার নিশ্চয়ই তার ভাইয়ের জন্য সামনা সামনি কিছু বলার সাহস করছে না।আবিদ শাহরিয়ার এখনো একটি বিষয়ে অটল আর সেটি হলো স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা।
” কেন এলে?আবার নতুন নাটক করতে?আমার ছেলের সংসারে কোন ঝামেলা চাই না আমি।”
” ছেলে তোমার একার না।আমারো আমায় না জানিয়ে বিয়ে পর্যন্ত দিয়ে দিলে।ডাকো তোমার ছেলেকে এবার একটা বিহিত হবেই।”
.
রাতের খাওয়ার শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সকলে আজ ঈশান ঈশাদের বাড়িতে থাকবে।রাসেল বিদায় নিয়েছে সে সন্ধ্যায়।শ্রেয়া-নাজিম,হাসিন,অনু যে যার বাড়ি চলে গেছে।এই বাড়িতে আসার পর একটুও মন খারাপ হয়নি ঈশানের বরং মনে হয়েছে এটা তার নিজের বাড়ি।তবে সুলতানার আচরণ একটু খারাপ লেগেছে তার। ঈশান সারাজীবন শুনেছে জামাইদের যত্নে শ্বাশুড়িরা ক্রুটি রাখেন না অথচ ঈশানের ভাগ্যে পড়লো এক জাঁদরেল শ্বাশুড়ি যে কি না কথায় কথায় তাকে তিরস্কার করতে ছাড়ে না।
রাত বারোটা বেজে গেলো এই মুহূর্তে ঈশানের মাথায় ঝোঁক উঠেছে সে দাবা খেলবে আর তার কথায় তাল মেলালেন মুজাহিদ হাসান।ঈশা চুপচাপ তাদের কান্ড দেখছিলো।ঈশান আর মুজাহিদ হাসানের মাঝে ফোঁড়ন কাটলো সুলতানা।
“পেট পুরে খেয়েছো এবার যাও রুমে যাও।”
” মাদার ইন ল আপনি কি আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না?”
” তুমি এমন কে যার সাথে আমার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে হবে?আমার মেয়েকে তোমার হাতে দিয়েছি এটা তোমার ভাগ্য। মনে করো দয়া দেখিয়েছি।”
” সিরিয়াসলি দয়া?আপনার মেয়ে কি এমন কেউ যাকে আপনি দয়া দেখিয়ে অন্যর হাতে তুমি দিবেন?যদি দয়া হয় তবে আমি ধন্য।সেই দয়ার প্রতিদান হিসেবে আপনাকে কয়েক জোড়া নাতি-নাতনি গিফট করবো।”
সুলতানা অবাক হলেন,তার এই চাহনি দেখে ঈশান মিটিমিটি হাসছে।ঈশা চুপচাপ তাকিয়ে তাদের ঝগড়া দেখছে এই ঈশানটা এমন কেন?মুজাহিদ হাসান গলা ঝারলেন তিনি দাবার গুটি নিয়ে বসে আছেন এখনো খেলা শুরু করতে পারছেন না বলে অস্থির লাগছে।ঈশান সুলতানাকে জব্দ করতে চায় সে চায় এই মানুষটার আদর যত্ন পেতে তাই তো বুদ্ধি খাটিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন সুলতানাকে।
” মাদার ইন ল আপনার সাথে একটা বৈঠক আছে আমার।এই বৈঠক ভীষণ জরুরি।”
” আবার কি চলছে তোমার মাথায়?”
“ফাদার ইন ল আর মাদার ইন ল আপনারা দুইজন এক দল। আমি আর ঈশা আরেক দল।আমার শর্ত হলো যদি আপনাদের দল জিতে যায় তবে মাদার ইন ল জিতে যাবে আমি প্রতিটা ধাপে ধাপে মাদার ইন ল’য়ের কথা মেনে চলবো।যদি আমি জিতে যাই তবে মাদার ইন ল আমাকে মেয়ে জামাই হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন।আপনারা রাজী?”
সুলতানা এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন।তিনি জানেন মুজাহিদ হাসান দাবা খুব ভালো খেলেন তাকে হারানো চারটে খানি কথা নয়।তিনি খুশি মনে মেনে নিলেন।খেলা শুরু হয়ে গেলো দুই দলের মাঝে শুরু হলো টান টান উত্তেজনার।মুজাহিদ হাসান আড় চোখে তাকালেন ঈশানের দিকে।প্রতিটা ধাপে ধাপে সেচ্ছায় তিনি হেরেছেন ঈশানের কাছে। অপরদিকে ঈশান নিজেও জানে মুজাহিদ হাসান সেচ্ছায় হেরেছেন কেননা এর আগেও উনার সাথে খেলায় বারবার হেরেছিলো ঈশান।বিজয়ের উল্লাসে ঈশান আর ঈশা যখন চিৎকার করছিলো তখন
সুলতানার মুখটা পাংশুটে হয়ে গেলো।এই হতচ্ছাড়াকে এখন মেয়ে জামাই বলে আদিখ্যেতা করতে হবে!
” মাদার ইন ল দেখলেন তো জিতে গেলাম।”
” তো তাতে কী?যাও ঘুমাতে যাও।”
সুলতানা গটগট পায়ে চলে গেলেন।ঈশান হাসি মুখে মুজাহিদ হাসানের হাতে হাত মেলালো।
” ফাদার ইন ল আপনি একটু বেশি কিউট আমি এমন একটা শ্বশুর ডিজার্ভ করেছিলাম।এখন আমি পেয়ে গেছি।”
.
সবার সাথে হাসি মুখে থেকে রাতে ঘুমাতে এলেও ঈশানের মনে শান্তি নেই।মাথায় চেপে আছে চিন্তার বোঝা।সন্ধ্যার পর রাসেল ফোন করে জানিয়েছে তার বাবা এসেছে এখন নিশ্চিয়ই বাড়িতে যুদ্ধ শুরু হবে!বেচারি ঈশাকে কত কিছুর সম্মুখীন হতে হবে কে জানে।সবকিছু সহ্য করে গেলেও ঈশার অপমান সহ্য করবে না ঈশান প্রয়োজনে বাড়ি ছাড়বে তবুও এই সম্পর্কে আর কোন উটকো ঝামেলা চায় না।সকল চিন্তা এক কোনায় রেখে ঘুমিয়ে পড়লো ঈশান কিন্তু মাঝ রাতে একটি স্বপ্ন দেখে আচমকা ঘুমটা তার ভেঙে গেল।প্রচন্ড গরমে দরদর করে ঘামছে ঈশান হঠাৎ উঠে বসতে বিছানার ঝাকুনিতে ঘুম ছুটে যায় ঈশার পিটপিট চোখে তাকাতে ঈশানকে বসে থাকতে দেখে বলে,
” কি হয়েছে?”
” কিছু না।”
” তাহলে বসে আছেন কেন?”
ঈশান পুনরায় শুয়ে পড়লো ঈশার পাশে।এবার আর তাদের মাঝে কোন দুরত্ব নেই ঈশান আরো ঘেষে এলো ঈশার পাশে।
” আমার ভালো লাগছে না।খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।”
” স্বপ্ন সত্যি হবে নাকি একটু ভয় পেয়েছেন এবার নিজেকে স্থির করুন।”
” তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।”
ঈশা আলতো হাত ঈশানের চুলে বিলি কেটে দিলো এর মাঝে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ঈশা, ঈশান অপলক তাকিয়ে রইলো ধীরে ধীরে ঘুমের সাগরে অতলে ডুবতে থাকা ঈশার দিকে।হঠাৎ ঈশানের মাথায় এলো দুষ্টু বুদ্ধি ঈশার গাল টেনে তাকে বিরক্ত করার ইচ্ছে জাগলো মনে।ঈশা নিভু নিভু চোখে তাকালো ঈশানের দিকে,
” ঘুমোতে দিন ঈশান।”
” না দিলে?”
” ভুলে যাবেন না আমার বাড়িতে আছেন যে কোন সময় যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।”
” বাড়ি তোমার হলেও তুমি তো আমার।আমার মানুষটাকে আমি যখন ইচ্ছে জ্বালাতে পারি।”
ঈশান টেনে নিলো ঈশাকে।ঈশার ঘুমন্ত চোখে গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মেয়েটাকে বিরক্ত করতে উদ্যত হলো।ঈশা কপট রাগ দেখালো ঈশানকে দ্রুত ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে পেছাতে গেলে ঝোক সামলাতে না পেরে মেঝেতে উলটে পড়ে।ঈশান মেয়েটার হাত টেনেও ধরতে পারলো না।আকস্মিক পড়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঈশা!ঈশান উঠে গিয়ে কোলে তুলে নিলো ঈশাকে এভাবে পড়ে যাওয়ায় ভীষণ লজ্জা পেল সে।তার লজ্জা দেখে ঈশান বলে,
” তুমি যে পড়ে গেছো এই কথা আমি কাউকে বলবো না তবে একটা শর্ত আছে।”
” কি শর্ত?”
” আমি এখন তোমায় বিরক্ত করবো তুমি চুপচাপ হজম করবে।”
” কখনো না আপনি পারলে মাইকিং করুন গিয়ে।”
” যাই আগে আমার ফাদার ইন ল কে বলে আসি।”
ঈশান সত্যি সত্যি রুমের দরজা খুলতে দৌড়ে গেল ঈশা।ঈশানকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে বলে,
” করুন বিরক্ত।আমি বিরক্ত হয়েও বিরক্ত হবো না।”
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৮খ]
______________________
৯৪.
” এই মাছটা নিব?”
” না অনেক হয়েছে এবার বাড়ি চলো।”
” কিন্তু আমার তো পছন্দ হয়েছে আপনি মাছটার সাইজ দেখুন।”
” পছন্দ হলেই কি নিতে হবে?বাজারটা উঠে তো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে না।এবার চলো বাড়ি যাই তুমি সিএনজিটা ভরিয়ে দিয়েছো এত বাজার কতদিনে শেষ হবে?”
মুজাহিদ হাসান শেষোক্ত বাক্যটি বলেই ঈশানের হাত টেনে ধরলেন।ঈশান মনমরা হয়ে তাকিয়ে রইলো বোয়াল মাছের দিকে এই মাছটা আগে কেন তার চোখে পড়েনি?এত বড় মাছ দেখতেও কি সুন্দর রূপার মতো ঝকমক করছে।ঈশানের মনের বাসনা অপূর্ণ রেখে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
ঘুম ভাঙতে আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসে ঈশা।হাত হাতড়ে ঈশানকে না চেপে পিলে চমকে উঠে সে।বিছানায় ঈশান নেই!ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ওয়াশরুমে চেক করলো ঈশা তবে ফলাফল শূন্য।বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিলটায় ঈশানের ফোন,ঘড়ি কিছুই নেই তবে কি চলে গেল ছেলেটা?তাকে না বলে চলে গেল কেন?ঈশা দ্রুত ওড়না নিয়ে কক্ষের বাইরে যায় সুলতানা তখন রান্না ঘরে ছিল তিনি রুটি সেঁকে ঝুড়িতে রাখছেন।অনু আরেক পাশের চুলায় ডিম ভাজতে ব্যস্ত।এত সকালে অনুকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো ঈশা।
” মা ঈশান কোথায়?”
” তোমার মহারাজ বর কি করেছে জানো?”
“ঈশান আবার কি করলো।”
“সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে তোমার বাবাকে ফোন করেছে সে নাকি বাজারে যাবে।তোমার বাবা জানতে চাইলো বাজারে কি দরকার?মহারাজ জানালেন তিনি আজ বাজার করবেন এবং শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে একটা ঘরোয়া আয়োজন করা হবে।তোমার বাবা বললো ফ্রিজে তো জায়গা নেই নতুন মেয়ে জামাইয়ের জন্য সব রকমের বাজার করা শেষ।কিন্তু কে শুনে কার কথা?অনুকেও নাকি সাতটায় ফোন করে জানিয়েছে সে যেন আসে এবং তার পুরো পরিবাকে আসতে হবে।”
“কই সে তো আমাকে কিছু জানালো না।ছয়টায় বের হলে এখন তো নয়টা বাজে এতক্ষণ বাজারে কি করছে।”
” গিয়ে দেখো বাজারটা তুলে আনছে।”
সুলতানা ঠোঁট বাঁকালেন।জামাই হিসেবে ঈশানকে তার একটুও মনে ধরছে না অথচ প্রথম প্রথম ঈশান বলতে পা গ ল ছিল এই মানুষটা।ঈশা নিজ কক্ষে ফিরে চুপচাপ বসে রয়। সারারাত ঈশান তাকে ঘুমাতে দেয়নি,এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে ঈশানের উপর জ্বীনের আছর আছে।মাঝ রাতে ঈশাকে গান গাইতে বাধ্য করেছে,কখনো বলছে একটা ছড়া বলো, না থাক কবিতা বলো।শেষ রাতে তো ঈশান গান চালিয়ে কাপল ডান্স করতে বাধ্য করেছে।ঈশা ঘুমালো ভোর পাঁচটায় তার মানে ঈশান আর ঘুমায়নি সে ছয়টায় উঠে বাজারে চলে গেছে।আনমনে মিহি হাসলো ঈশা।
৯৫.
এতদিনের আনন্দ চাপা পড়েছে কালো মেঘের আস্তরণে সর্বদা ভয়ে তটস্থ থাকেন মাহমুদা।এই বুঝি ঈশান বাড়ি এলো আর এই বুঝি বাপ ছেলের মাঝে সৃষ্টি হলো হাঙ্গামা।ডাইনিং এ বসে গোগ্রাসে খাবার গিলছে লিপি তার দিকে তাকিয়ে মনটা বিষিয়ে উঠে মাহমুদার।এই একজন মহিলার কারণে তার ছেলের জীবনটা রসাতলে গেল।লিজার জন্মের চার বছর পর তার বাবা মারা যায়।ফলে লিজাকে নিয়ে একাই সংসার গড়েন লিপি সবার সহানুভূতি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে পাড়ি জমালেন ভীনদেশে এতে অবশ্য বিদ্বেষ নেই মাহমুদার তবে লিপির অপরিণামদর্শিতা মোটেও পছন্দ না মাহমুদার।বিয়ের পর থেকে লিপির একেরপর এক অযথা যুক্তিহীন ঝামেলার শিকার মাহমুদা যদিও জল কখনোই বেশি দূর গড়ায়নি কেননা আবিদ শাহরিয়ার ছিলেন স্ত্রীর অন্ধ ভক্ত।যেহেতু লিজার বাবা নেই সেহেতু লিজাকে কখনো চোখের আড়াল করেন না আবিদ।সেদিনের পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঈশান যেহেতু এমন নোংরা অন্যায় করেছে সেই হিসেবে তার স্ত্রী হবে লিজা।
” তুমি এখানে!তোমার ছেলেকে ফোন করতে বলেছিলাম তা কি ভুলে গেছো?”
আবিদের রুক্ষ স্বরে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলেন মাহমুদা।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে নিজের অপ্রস্তুত ভাবটা কাটালেন তরান্বিত ।
” ঈশানের সময় হলে সে ফোন করবে।”
” তুমি আমার অবাধ্য হচ্ছো দিন দিন।”
” তুমি আমার ছেলের সংসার ভাঙতে উঠে পড়ে কেন লেগেছো?আমার ছেলেকে মুক্তি দাও।”
” তুমি ভালো ভাবে জানো আমি আমার কথার খেলাপ করি না।”
” তোমার ছেলে তোমার মতো হয়েছে এই বাবা ছেলের লড়াইয়ে আমি নেই।”
আবিদ শাহরিয়ার মুচকি হাসলেন।মাহমুদার অভিমানী মুখখানি দেখে হাত টেনে কাছে আনলেন।
” খুব তো বলেছিলে ছেলের কাছে ভালো থাকবে তাহলে এতটা শুকিয়ে গেলে কেন?চামড়া তো হাড্ডিতে মিশে গেছে।”
” আমি আগের মতোই আছি।”
মাহমুদা উঠে দাঁড়ালেন গটগট পায়ে চলে গেলেন নিজের কক্ষে।প্রাণ প্রিয় স্বামীর প্রতি তার জমেছে গাঢ় রাগ ছেলেটার জীবন ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে এই মানুষটা।
.
এত এত বাজার দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন সুলতানা।এসব তিনি কতদিনে শেষ করবেন?বাজারের সব মাছ মুরগি ঈশান কি একাই নিয়ে এসেছে?ঈশা চোখ পাকিয়ে তাকালো ঈশানের দিকে ঈশান এক গাল হেসে আড়ালে ঠোঁট ইশারায় চুমু দিলো ঈশাকে।ঈশার ফুফু আতিয়া চুপচাপ তাকালেন মুজাহিদ হাসানের দিকে।হাসিনদের আজ আসার কোন কথাই ছিল না কিন্তু ঈশান তাদের আসতে বাঁধ্য করেছে।আজকের আয়োজনে উপস্থিত থাকবে ঈশার ফুফুরা এবং অনুর পরিবার।
” ভাইজান আপনার মেয়ে জামাই তো এলাহি এলাহি কাণ্ড করে বসেছে।এত মাছ রাখার জায়গা ফ্রিজে নেই।”
” আমি জানি না আতিয়া, যে এনেছে তাকে বলো এর সমাধান কি।আসার সময় বোয়াল মাছে চোখ পড়েছে আমি তো ভয়ে শেষ কখন না আবার কিনে বসে তাই টেনে হিচড়ে যেভাবে পেরেছি নিয়ে এসেছি।”
ঈশান সবার আলোচনার মধ্যমণি হয়ে বসলো চেয়ারে।সবার দিকে যেন হুমুক জারি করবে ছেলেটা।হাসিন নিগূঢ় নিশ্চুপ তার কাণ্ড দেখছিলো।এই ছেলে কি টাকার গরম দেখাতে এত এত বাজার এনেছে?
” এত চিন্তা করছেন কেন আপনারা?ভাগবাঁটোয়ারা করলে দেখবেন আর কিছুই রইবে না।যাই হোক আজ আমাদের খাদ্য তালিকায় কোন রোস্ট পোলাও থাকবে না।আজকের আয়োজন হবে সাদা ভাত, বেশ কয়েক পদের ভর্তা,ভাজি,ডাল,মাছের কয়েকটি পদ ব্যস এইটুকুই।ফাদার ইন ল বাকিটা আপনি বলুন।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে ঈশান তাকালো মুজাহিদ হাসানের দিকে।এই এভাবে সবার সামনে ডাকা কি খুব দরকার ছিল?গলা ঝেরে ঈশানের দিকে তাকালেন তিনি।
” আমার কিছু বলার নাই।জামাই যা বলেছে তাই হোক।”
ঈশান আর বাক্যব্যয় না করে রুমে চলে গেলো।তার পিছু পিছু গেলো ঈশা।
কোমড়ে হাত রেখে ঈশানের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে ঈশা।তার ভেজা চুল দেখে ঠোঁট কুচকায় ঈশান।
” গোসল কেন করেছো?আমি কি কিছু করেছিলাম?”
” বাজে কথা রাখুন এত বাজার কেন এনেছেন?”
” তুমি আমাকে ধমকাও!ও মাই গট।দেখি কাছে আসো।”
ঈশান ঈশার হাত টেনে কাছে আনলো।মেয়েটার উদরে মাথা রাখতে ঈশা আদুরে হাতে চুলে বিলি কাটলো।ঈশান মিহি হাসলো সব ক্লান্তি যেন এখানে থেমে গেছে।তবুও মনটা বড্ড আকুপাকু করছে মেয়েটাকে জ্বালাতে।
” আমি খুব ক্লান্ত ঈশা।সারারাত যে ঘুমাতে দাওনি এখন মাথা ঝিমঝিম করছে।”
” এই কিসব বলছেন আমি আপনাকে ঘুমাতে দেইনি?”
” হ্যাঁ তুমি তো দাওনি।কিসব গান বলেছো কবিতা বলেছো শেষ রাত্তিরে নেচে গেয়ে কি একটা অবস্থা।”
” ঈশান আপনার অভিনয় দেখে আমি অবাক হচ্ছি আপনি সারাটা রাত আমাকে বাদর নাচ নাচালেন এখন বলছেন আমি ঘুমাতে দি নাই।ছাড়ুন আমায় এক্ষুনি ছাড়ুন।”
” রাগ করে না, রাগ করে না….তারপর লাইন কি হবে?এই ঈশা আমি কোথায় যেন ছড়াটা পড়েছি।”
“ভুলভাল কথা বলে আমার মন ভুলাবেন না কি বলি আগে তা শুনুন।মা আর রাসেল ভাইয়াকে আজ আসতে বলুন সবাই আছে মা খুব খুশি হবেন।”
মুহূর্তে ঈশানের মুখে আঁধার নামলো।আলগা হয়েছে তার হাতের বাঁধন।ঈশানের বিভ্রান্তিতে অবাক হলো ঈশা।
” কি হয়েছে ঈশান?”
” বাবা এসেছে মা এখন আসতে পারবে না।”
” কবে এলো আমায় বললেন না তো।”
” গতকাল।বলবো বলবো করে আর বলা হয়নি।তিনি এখানে এমনি এমনি তো আসেননি এখানে এসেছেন কোন উদ্দ্যেশ্যে নিয়ে নিশ্চিয়ই আমাদের আলাদা করার উছিলায়।যখন জানলাম ফুফু এসেছে আর লিজাও আমার দিন দুনিয়া সব আঁধার হয়ে গেছে এরা আসা মানেই ঝামেলার সৃষ্টি।”
” চিন্তা করবেন না আর কী ঝামেলা করবে?যা হবার হয়ে গেছে।”
” আমি আমায় নিয়ে চিন্তিত নয় আমি চিন্তিত তোমার মুড নিয়ে তোমার চিন্তা ভাবনা নিয়ে।”
ঈশার ভ্রু কুচকে গেলো।ঈশানের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে সন্দিহান গলায় বলে,
” মানে?”
” আমার ফুফুকে চেনো না।তিনি তোমার ব্রেন ওয়াশ করে ছাড়বে। এমন ভাবে করবে যে আমায় তোমার সহ্য হবে না।তুমি উনার কথায় উঠবে বসবে তাছাড়া লিজা তো আছেই এই মেয়েকে দিয়ে তোমায় আমার বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবে।আর তুমি তো আমায় সহজে ভুল বুঝবে আমাদের নব সংসারে শুরু হবে ঝামেলা।”
” এই আমায় ভরসা করেন?”
” আগের বার যে ভুল বুঝে চলে গেছিলে তা কিন্তু আমি ভুলিনি এবার যে যাবে না সে নিশ্চয়তা কী?”
” এবার তো আপনি আমার স্বামী সেটা আশা করি ভুলে জাননি।”
” যখন যে যা বলবে আমায় বলবে মনে রাখবে লড়াইটা একা আমার নয় তোমারো।মা বলেছে তোমায় নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে কয়েকটা দিন পর বাড়ি ফিরতে আমি চাইলেই যেতে পারি কিন্তু যাব না।আমি কার কাছ থেকে পালাবো?আমি কি অন্যয় করেছি?তাছাড়া ওই বাড়িটা আমার আমার বাড়িতে আমি ফিরবো কার কি।”
৯৬.
সবাইকে নিয়ে আজ একটি সুন্দর দিন কাটালো ঈশান।শ্বশুর বাড়ির প্রতিটা মানুষের সাথে তার বনিবনা হলেও শ্বাশুড়ির সাথে খুব একটা বেশি ভাব জমাতে পারছে না।তিনি সুযোগ পেলেই ঈশানকে এটা ওটা বলে খোঁচাতে থাকে ঈশানো কম যায় না শ্বাশুড়ির এসব মুখ বুঝে সহ্য না করে হাসি মুখে পালটা জবাব ছুড়ে।মুজাহিদ হাসান চুপচাপ সহ্য করেন সবটা এদের খুনশুটি দেখে মনে হয় না শ্বাশুড়ি জামাই মনে হয় যেন জনম জনমের শত্রু।ব্যগপত্র গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো ঈশা ঈশান।সুলতানা আজ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সেই সাথে ঈশাও।রাত বাড়ছে বিধায় ঈশান বড্ড তাড়া দেখালো দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে যে।
ভয়ে ঈশার বুকের ভেতরটায় টিপটিপ করছে।বাড়িতে তো এসে গেলো এখন কী হবে?শ্বশুর তার কেমন না কেমন ভাবনার মাঝে ঈশান তার হাত টেনে ধরলো।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো দুজনে একসাথে।লিপি তখন টিভি দেখছিলেন দরজায় ঈশানকে দেখে দ্রুত টিভি অফ করে দাঁড়িয়ে পড়লেন।মাহমুদা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন ঈশাকে।
” ভালো আছো ঈশামা?বেয়াই বেয়ান কেমন আছে?”
” আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে মা।”
” ক্লান্ত লাগছে তাই না?ঈশান ঈশাকে নিয়ে রুমে যা আমি শরবত পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ঈশান পুনরায় ঈশার হাত টেনে ধরলো।ঈশা আড় চোখে একবার তাকালো ঈশানের ফুফু লিপির দিকে।তবে তার নজর কাড়লো লিপির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি।পরনে লম্বা টি-শার্ট,মাথার উপর সাদাসাদা পাখির বাসার ন্যায় এক দলা চুল ক্লিপের সাহায্যে বাঁধা।গলায় ঝুলছে হেডফোন।
ঈশা নজর সরিয়ে তাকালো ঈশানের দিকে ছেলেটার ভাজ পড়া কপাল বলে দেয় সে কতটা বিরক্ত অনুভব করছে।
” ঈশান আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছো?”
অভিমানি সুরে বললেন লিপি।ঈশার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে মিহি হাসলেন।ততক্ষণে বসার ঘরে উপস্থিত হন আবিদ শাহরিয়ার।
” যখন দেখলেন এড়িয়ে গেলাম তখন সামনে এসে দাড়াচ্ছেন কেন?”
লিপির কথায় পালটা জবাব দিয়ে এগিয়ে গেলো ঈশান।তবে তার পথ রুদ্ধ করলেন আবিদ শাহরিয়ার হাত ইশারায় থামতে বললো তাকে।ছেলের পাশে থাকা ছিমছাম গড়নের মেয়েটিকে পরখ করলেন বেশ কিছুক্ষণ।নিসন্দেহে বলতে হয় তার ছেলের পাশে মেয়েটিকে মোটেও খারাপ লাগছে না বরং মানানসই।ঈশা কি করবে না করবে ভেবে ঈশানের বাবাকে সালাম জানালো তবে সেই সালামের প্রত্যুত্তর পাওয়া গেল না।
” শ্বশুর বাড়ি ছিলে বেশ ভালো তবে বাবা যে এসেছি সে কথা কি জানো না?নাকি আমরা আসায় খুশি হওনি।”
” আমি খুশি কি খুশি নই সেটা কি আমার ভাব ভঙ্গিমায় বুঝতে পারছেন না?”
” বুঝতে চাই না আমি।এই মেয়েটা সে তাই না যে তোমার ঘিলু খেয়ে নিয়েছে।”
ঈশার ভেতরটা হঠাৎ ভয়ে নাড়া দিলো।কিছুটা চেপে দাঁড়ালো ঈশানের পাশে ঈশান বুঝতে পারলো ঈশার পরিস্থিতি সে ঈশার হাতটা আরো দৃঢ়ভাবে ধরে যেন বুঝিয়ে দিল,”ভয় নেই আমি আছি তো।”
” আমরা ক্লান্ত এখন অযথা প্যাঁচ মোটাও ভালো লাগছে না।আসছি আমরা।”
ঈশান হাত টেনে নিয়ে গেলো ঈশাকে।দুজনের এত ঘনিষ্ঠতা দেখে লিপির প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে।অপরদিকে লিজা উৎসাহ চোখে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।মনে মনে বললো, “মেইড ফর ইচ আদার।”
ঈশা দম ছাড়লো কক্ষে ফিরে বিছানায় বসে তাকালো ঈশানের দিকে ছেলেটা কেমন ছটফট ছটফট করছে।
” এই রুমের বাইরে যাবে না ঈশা।ঠিক আছে?”
“তুমি যা বলবে।”
” আমি গোসল করবো রুমের দরজা লাগিয়ে দাও।”
ঈশান জামা কাপড় হাতে নিয়ে ছুটলো ওয়াশরুমে।মনের বেখেয়ালে ঈশার দরজা লাগানো হলো না।শরীরটা বিছানায় এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ।
” এই মেয়ে তোমার নাম কী?”
অপরিচিত কণ্ঠে অতি সত্বর উঠে বসে ঈশা।সামনে লিজাকে দেখে ভীষণ ঘাবড়ে যায় সে ঈশান দেখলে এবার কী হবে?”
” নওশীন ঈশা।”
” আমাকে চেনো?”
ঈশা না জানার ভান করে বলে,
” আপনি তো আমার পূর্ব পরিচিত কেউ নন যে চিনবো।”
” আমি লিজা ঈশানের কাজিন।উডবি ওয়াইফ ছিলাম বলা চলে।তা তোমাদের লাভ ম্যারেজ তাই তো?”
” না ফোর্স ম্যারেজ।”
” মানে?”
” না বুঝলে কিছু বলার নেই।”
লিজা ঠোঁট বাঁকালো পুরো রুমটা পরখ করে বসলো ঈশার পাশে।
” ঈশানকে ভালোবাসো নাকি টাকার লোভে বিয়ে করেছো?”
” সত্যিটা বলবো?আমি ঈশান শাহরিয়ারকে বিয়ে করেছি তাবিজ করে।”
” হোয়াট?তাবিজ!”
” হ্যাঁ তাবিজ।তাবিজের সাহায্যে উনাকে পা গ ল করেছি।
লিজা ভ্রু যুগল কুচকে গেলো।তাবিজ সম্পর্কে এই মেয়েটার ততটাও ধারণা নেই তবে ঈশার মুখে এই কথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।ঈশা মুখের ভাব ভঙ্গিমা সিরিয়াস রেখে লিজাকে বলে,
” আপনি চাইলে ট্রাই করতে পারেন।”
” তুমি কি আমাকে তোমার সতিন বানাতে চাও নাকি?শুনেছি বাঙালি মেয়েরা তার স্বামীকে হায়নার মুখে ছুড়ে দেবে তবুও অন্য মেয়ের কাছে ছাড়বে না।”
” আমি আলাদা আপু।”
” এক টেস্ট সবসময় ভালো লাগে না তাই তো?তুমি তো দেখছি আমার মতো।”
ঈশা ঠোঁট চেপে হাসলো।ঈশান এসব জানলে তাকে আস্ত রাখবে না।লিজা বেশ আগ্রহ হলো ঈশার প্রতি।ঈশার চোখে চোখ রেখে সে বলে,
” ঈশানকে ছাড়ছো কবে?”
” সাহস, এতটা সাহস এখনো ফাদার ইন ল এর একমাত্র মেয়ের হয়নি।”
ঈশানের জবাবে চমকে তাকালো দুজনে।লিজা দাঁড়িয়ে পড়লো দ্রুত ঈশান কটমট চাহনিতে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটার হাত ধরে হেঁচকা টেনে বিছানা থেকে নামালো এবং চোখ রাঙিয়ে গমগম স্বরে বলে,
” তোমার আশেপাশে যে নোংরা দেখতে পাচ্ছো না?আসো গোসল করতে আসো।”
” ই..ঈশান কিসের নোংরা?কি বলছেন।”
” এসব নোংরা খালি চোখে দেখা যায় না।চলো গোসল করবে।”
” না না আমি করেছি সকালে আর করতে হবে না।”
ঈশান নাছোড়বান্দা স্বভাবের তার মাথায় যেটা ঢুকেছে সে সেটাই করবে।ঈশাকে টেনে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমের সামনে,
” দ্রুত ওয়াশরুমে যাও আমার অনেক কাজ সারা রুমটা নোংরা হয়ে গেছে খালাকে বলে সবটা মুছতে হবে।”
” ঈশান আমি গোসল করবো না।”
” তুমি করবে না? ”
” না। ”
” আমার কথা শুনবে না?”
” না।”
” আমি কিন্তু তোমায় আদর করবো না।”
“আমি বেঁচে যাবো।”
ঈশান ঈশাকে টেনে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে।অপরদিকে লিজা আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে।ঈশান কিসের নোংরা নোংরা করছে তার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।
#চলবে_