অবেলায় এলে তুমি পর্ব-০৭

0
159

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:৭
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

বিকেলে সাড়ে পাঁচটা। থানার সামনে থাকা টং এর দোকান বসে বসে চা খাচ্ছে নিহান এবং আয়ান। বিকেলের সময় টং এর দোকান গুলোতে যেনো এক আড্ডা বসে। মানুষের সারাদিন কাজের পর যেনো এই চায়ের আড্ডা না দিলে ভালোই লাগে না।

“তোর কি মনে হয়? কে বা কারা তরীর সাথে এমন করতে পারে?”

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নিহানকে প্রশ্ন করলো আয়ান।

“জানিনা! কাকে সন্দেহ করবো? তরীর মতো এমন একটা মেয়ের শ*ত্রু থাকবে কি করে? দেখি পুলিশ কি করতে পারে।”

আয়ানকে কথাটা বলে চায়ের কাপে শেষ চুমুক য়ে আয়ানকে কথাটা বলে উঠে দাঁড়ালো। আয়ান কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে।

“এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেনো? মশা যাবে মুখের ভিতর।”

আয়ানকে কথাটা বলে চায়ের বিল দিয়ে দুইজন এক সাথে বের হয়ে আসে দোকান থেকে। দোকান থেকে বের হয়ে আয়ান নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।
নিহান যখন অর্ধেক রাস্তায় চলে আসে তখন খেয়াল করলেই বুঝতে পারে তার ফোন নেই। কোথায় পড়ে গেছে তার ধারণাও নাই। থানার সামনে যাবে সেও পরিস্থিতি এখন নেই। তাই আর দেরি না করে আগে বাসার দিকে ছুটে চললো।
অপরদিকে কেউ একজন তরীর ফোন রিসিভ করে কথাটা বলে ফোনটা রাস্তার পাশেই ফেলে দিয়ে চলে গেলো নিজের গন্তব্যে।

🍁🍁🍁🍁

চোখ দুটো মেলে তাকাতে চেষ্টা করলেও মাথায় চিনচিনে ব্যাথা শুরু করে। নিরাত্রির কান্নাও যেনো মাথায় গেঁথে যাচ্ছে। কিন্তু মস্তিষ্কে সেই আগে কলে বলা লোকটির কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। যখন মস্তিষ্কে কথাটা ধারণ করতে পারলো সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে বসলাম।

“আম্মা উনি কোথায়? ওই লোকটা যে ফোনে,,,”

শোয়া থেকে উঠে শাশুড়ি আম্মাকে কথাটা বলতে গিয়ে দেখি ভদ্রলোকের কোলে নিরাত্রি কান্না করছে।। আর ভদ্রলোক পায়চারি করে চেষ্টা করছে নিরাত্রির কান্না থামাতে। কিন্তু মেয়ে কান্না থামানোর পরিবর্তে কান্না বাড়িয়ে দিচ্ছে।

” শান্ত হও তরী। ঐ তো নিহান।”

শাশুড়ি আম্মা কথাটা বলে ভদ্রলোকের কাছে গেলেন। ভদ্রলোক একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবারো মেয়েকে শান্ত করতে লেগে পড়লেন।

“নিহান তুই নিচে থেকে নিরাত্রির জন্য খাবার রেডি করে রাখা আছে ওইটা একটু নিয়ে আসবি! আমার হাঁটুতে ব্যাথা শুরু হয়েছে আবার।”

“আম্মা আপনার হাঁটুতে ব্যাথা করতেছে আমাকে তো একবারও বললেন না তাহলে আমি তেল গরম করে মালিশ করে দিতাম।”

“তুমি নিজেই তো অসুস্থ। আমার কি সেবা করবে? আর আমি এখনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ আছি। ছেলে বিয়ে করেছে বলে কি সব কিছু ছেলের বউয়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে আমি পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবো না কি? আমি নিজেই যেতাম কিন্তু।”

“তোমাকে নিচে যেতে হবে না আম্মা। আমি নিরাত্রিকে নিচে থেকে খাইয়ে নিয়ে আসবো আর তোমার জন্য তেল গরম করে নিয়ে আসবো। তুমি এখন চুপ করে বসে থাকো। আর হ্যাঁ ম্যাডামকে বলে দিও এই বাড়ি থাকতে হলে ঠিক মতো খেতে হবে আর লাফালাফি, নাচানাচি না করতে। বাড়িতে কাজের খালা আছে সে করে দিবে বাকি কাজ তাকে যেতে নিষেধ করো।”

কথা গুলো শেষ হতেই ভদ্রলোক মেয়েকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আর আমার উদ্দেশ্যে বলা কথা গুলো শুনে বেকুব হয়ে গেলাম। আমি লাফালাফি, নাচানাচি করি? মনে মনে ভদ্রলোককে ধুয়ে দিতে লাগলাম আর ভুলে গেলাম ফোনের কথা।

“তুমি শহর থেকে এতো দূরে নির্জন রাস্তায় কি জন্য ভাবে গেলে তরী? তোমার প্লান মতো তুমি তো বলেছিলে তিথির বাসায় যাবে। তাহলে তুমি তিথির বাসায় না গিয়ে এতো দূরে কি ভাবে গেলে? আর এভাবে ভয় পেয়ে গেলে কেনো?”

শাশুড়ি আম্মার কথা শুনে নড়েচড়ে বসলাম। দুইজন মিলে ঠিক করেছিলাম আমি তিথির বাসায় যাবো। আর সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি না ফিরলে নিহানকে ফোন করা হবে। নিহানের আমার প্রতি কতটা দায়িত্ব পালন করে সেটা দেখার ছিলো। কিন্তু শাশুড়ি আম্মা রাজী ছিলেন না এইসবে। আমি নিজেই এক প্রকার জোর করে রাজি করিয়েছিলাম।

“আমি তিথির বাসায় যাচ্ছিলাম আম্মা। কিন্তু ওই গাড়িওয়ালা। আর! আর ফোনের সেই লোকটা আর পাথরে মুড়ানো সেই কাগজের লেখা।”

“কিসের কাগজ? আমি তো কোনো কাগজ পাইনি রুমের মাঝে।”

আমার কথা শেষ হতেই শাশুড়ি আম্মা কথাটা বললেন।

“রুমে না আম্মা! আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন আমাকে কেউ ছুড়ে দিয়েছিল আম্মা। আপনি ব্যালকনিতে গেলেই পাবেন। আমি ওখানেই রেখে এসেছি। আপনি গিয়ে দেখুন। আমি মিথ্যে কথা বলছি…”

“কি রাখার কথা হচ্ছে বউ শাশুড়ি মিলে?”

নিজের কথা শেষ করার আগেই ভদ্রলোক রুমে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বলতেই আমি চুপ হয়ে গেলাম।

“কি হলো চুপ করে গেলে কেনো দু’জনে?”

“সোহেল ভাইয়া এসেছে! লন্ডন থেকে। মামা নাকি ফোন করেছিলো আম্মার কাছে। আমাদের যেতে বলেছে সেটা নিয়ে কথা বলছিলাম।”

চটপট করে মিথ্যে কথা বলে দিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আগের বার যেই অভিজ্ঞতা হয়েছে, এবার না জানি কি বলে বসে।

“ঠিক আছে আগামীকাল সকালে আমি তোমাকে দিয়ে আসবো আর সন্ধ্যায় নিয়ে আসবো। আর হ্যাঁ আগামী পরশু চাইল্ড কেয়ার থেকে একজন মেয়ে আসবে নিরাত্রির জন্য।”

“মেয়ে কেনো? আমি তো আছি নিরাত্রিকে দেখার জন্য না কি আমি ঠিক ভাবে মেয়েটাকে দেখতে পারছি না? আমি তো আমার সবটুকু দিয়ে নিরাত্রিকে দেখা রাখছি। তাহলে আপনি চাইল্ড কেয়ার থেকে লোক আনছেন কেনো”

চাইল্ড কেয়ার নাম শুনতেই নিহানকে কথা গুলো বলে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।

” তুমি এখন অসুস্থ তরী। আর তোমার লেখাপড়াটাও কন্টিনিউ করতে হবে। আমি চাই না তুমি কোনো কিছুর জন্য নিজের স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে পড়ো। আর আম্মা চলো তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। খালা তোমাকে তেল মালিশ করে দিবে। আর তুমি এই যে এখানে চুপ করে বসো আমি আম্মাকে দিয়ে আসছি।”

“আমি যেতে পারব একা একা তুই তরীর পাশে থাক। মেয়েটা ভয় পেয়ে আছে কিছু নিয়ে।”

মায়ের শেষ কথা শুনে নিহান একটু অবাক হয়ে যায়। ভয় পাওয়ার কি আছে? আর হঠাৎ করে এভাবে ভয় পাবে কেনো? মা’কে জিজ্ঞেস করবে তার গায়ে সে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।

🍁🍁🍁🍁

” কি জাদু আছে তোমার এই চোখে তরী? সেই প্রথম যেই দিন তোমার কাজল চোখ গুলো দেখেছিলাম আমি সেই দিন তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। প্রতিদিন তোমাকে আমি দূর থেকে দেখতাম। যখন তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে তখন তোমাকে কি মিষ্টি লাগতো। তোমার লম্বা চুল গুলো যখন হাত খোঁপা করে রাখতে আমার ইচ্ছে করতো তোমার সামনে গিয়ে বলতে, তুমি চুলে খোঁপা করো না মেয়ে। তোমার খোঁপার বেলিফুলের মালা হতে বড্ড ইচ্ছে করে। তোমার এলো কেশ আমাকে মাতাল করে তুলে। তোমাকে প্রথম যেই দিন শাড়িতে দেখেছি তখন আমার, আমার লেগেছে। ইচ্ছে করছিলো তোমার সামনে গিয়ে বলতে তুমি কি আমার হবে? আমার ঘরের ঘরণী হবে? তরী তুমি যে আমার শত আবেগের গল্প। আমার জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো ভালোবাসা তোমার জন্য এসেছিল। তোমাকে যেই ছেলেটা কলেজের বাহিরে ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মেরে ছিলো সেই ছেলের আমি কি অবস্থা করেছি জানো? তোমার সেই ফ্রেন্ড তোমার গায়ে হাত তুলেছিল তার সেই হাতও আমি থেঁতলে দিয়েছি।
আমি তোমাকে কি করে অন্য কারো সাথে সহ্য করবো বলো? একটু-একটু তৈরি হওয়া ভালোবাসা
আমি কি ভাবে অন্যের সাথে দেখবো আমি? আমি মানতে পারবো না তরী। যারা যারা তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে তাদের সবাইকে পস্তাতে হবে তরী। তুমি এতো অল্পতেই ভয় পেয়ে গেলে? ভয় পেলে তো তোমার হবে না তরী। এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। মিস্টার নিহানের সাথে তো আমার পুরোনো হিসাব এখনো বাকি আছে। তুমি শুধু দেখো ধীরে ধীরে কি হয়।”

একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলে রুমটিতে আবারো তালাবদ্ধ করে চলে গেলো লোকটি।

🍁🍁🍁🍁

“আমি মানুষ কোনো ভূ*ত প্রেতা*ত্মা না যে এতো ঘুরে ফিরে দেখতে হবে। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও।”

ভেবেছিলাম হয়তো ভদ্রলোক ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু আমি তো ভুলে গেছি ভদ্রলোক এক নাম্বারের বজ্জাত। ঘুমের ভান ধরে লটকিয়ে আছে। অসভ্য লোক একটা।

#চলবে