অবেলায় এলে তুমি পর্ব-১৭

0
148

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:১৭
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

বেশ কিছু সময় ধরে চুপচাপ বসে আছে আয়ান এবং নিহান। মুখে গম্ভীরভাব ফুটিয়ে তুলে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে আয়ান। পাশ থেকে নিহান শুধু আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আয়ানের মনে কি চলছে। কিন্তু আয়ানের মুখশ্রী দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার মনে কি চলছে, সে নিজের ভাবনার মধ্যে আছে। নিহানও কিছু না বলে আয়ানের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে রইল চুপচাপ।

” প্রথমে কক্সবাজার এবং তারপর সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে আয়। কিন্তু তোর আর তরীর ট্রিপের সমস্ত দায়িত্ব আমি নিবো। যাবতীয় যা যা খরচ হবে সব কিছু আমিই করবো। প্রথমে কক্সবাজার যাবি সেখানে তিন দিন থেকে তারপর সেন্টমার্টিন। আমি তোদের জন্য রুম বুক করে দিবো। তোরা দুজনে শুধু এনজয় করবি।”

পিনপিন নীরবতা ভেঙ্গে নিহানের উদ্দেশ্যে কথা গুলো বললো আয়ান। আয়ানের কথা শুনে কিছু সময় নিহান তাকিয়ে রইল আয়ানের দিকে। নিহান আয়ানকে সেখানে রেখে আগেই বাড়ির সদর দরজা
রং দিকে চলে গেল বিশেষ জরুরী কল আসায়। অপর দিকে নিহান যেতেই আয়ান একটু দূরে থাকা গেস্ট হাউসের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে সেখানে থেকে চলে গেলো।

🍁🍁🍁🍁

মন হঠাৎ করে নিজেকে সাজাতে ইচ্ছে করলো।‌ নিজেকে একটু সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার দরকার। তাই আর কোনো কিছু না ভেবে আলমারি থেকে একটা নেভি ব্লু কালারের শাড়ি বের করে পড়ে নিলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুন গুন করে বাকি সাজসজ্জা করতে লাগলাম।
সবসময় সবাইকে খুশী করার নাম জীবন না। মাঝে মাঝে নিজের খুশি, নিজের চাওয়া পাওয়াকেও মূল্যায়ন করতে হয়। সাংসারিক কাজ, বাচ্চা সামলানো, স্বামী, শশুর-শাশুড়ী এদের খুশী করতেই গেলেই আর নিজের খুশি, শখ, আল্লাদ দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনা। এদের খুশী করতে করতে দেখা যায় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কিন্তু নিজের কোনো ইচ্ছে, শখ, আল্লাদ সম্পূর্ণ করতে পারে না। তাই কখনো কখনো নিজের চাওয়া পাওয়াকেও মূল্যায়ন করতে হয়। জীবনে বেঁচে থাকায় আছে কতদিন? বেঁচে থাকতে একদিনের জন্য বা এক মূহুর্তের জন্য হলেও নিজের শখ আল্লাদ পূরণ করা প্রয়োজন।

” বাহ্! আমার বউ দেখি আমার থেকে বেশি চমকে দিতে জানে।”

ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছিলাম এমন সময় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু দিয়ে কথা গুলো বললো নিহান।

“বাহ্ রে! আমার বর মহাশয় একাই কি শুধু চমকে দিতে পারে? আমি বুঝি পারি না?”

নিহানের দিকে ফিরে দুহাত দিয়ে নিহানের গলা জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলে নিহানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

” সেটা ঠিক আছে কিন্তু আজকে এতো সুন্দর করে সাজগোজের কারণ কী ম্যাডাম?”

কোমরে ধরে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে কথা গুলো বললো নিহান। মানুষটাকে দিন দিন যত দেখে যাচ্ছি মনে হচ্ছে আমার এখনো মানুষটাকে চেনা বাকি। এখনো খুব কাছ থেকে দেখা বাকি।

” আপনি সারা জীবন এমন ভাবেই থেকে যাবেন! আমার হয়ে, আমার প্রতি ভালোবাসা সবসময় এমন বহাল রেখে দিবেন।”

“আপনি আঁচলে বেঁধে রাখলে আমার কি সাধ্য আছে আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার?”

কথা গুলো বলে আমাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে নিজেও একটা টোল নিয়ে আমার সামনে বসে গেলো।
নিহানকে এভাবে বসতে দেখে কিছুটা অবাক হলাম কিন্তু আমার অবাকের মাত্র কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে আইলাইনার হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করতে বললো।

” তোমার হাসবেন্ড সব কিছু খুব নিখুঁত ভাবে করতে পারে। হোক সেটা মারামারি, খু*নখারাবি,বিজনেস কিংবা বউকে আইলাইনার পড়িয়ে দেওয়া। তোমার হাসবেন্ড সব কিছুতেই বেস্ট।”

“আরে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? মজা করেছি। তুমি চোখ বন্ধ করে নাও তাড়াতাড়ি।”

নিহানের কথা শুনে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারও উরাক্ত কথা গুলো বললো নিহান। কিন্তু আমার নিহানের কথা গুলো হজম হচ্ছে না। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষের মাঝেই রহস্য দিয়ে ঘেরা। সবাই যেনো এক অজানা রহস্যের চাদর দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। আগের মতো এবারও কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে সব রহস্য খুঁজে বের করতে হবে আর সে-ই এলোমেলো চিঠির কি রহস্য ছিলো তাও বের করতে হবে। নিহান একে একে আইলাইনার, আইশ্যাডো, কাজল দিয়ে দিলো একদম পারফেক্ট ভাবে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন আমার চুলে খোঁপা করতে যাচ্ছিল কিন্তু সে খোঁপা বারবার খুলে যাচ্ছিল।

” এই তোমার চুলে খোঁপা করতে হবে না আমি অন্য আমার মতো করে করে দিচ্ছি।”

আমি বরাবরের মতো এবারও নিরব ভূমিকা পালন করে গেলাম। নিরাত্রি ঐশীর কাছে আছে। মেয়েটা এখন যার কাছে যাবে তার কোল থেকে সহজে আসতে চাই না। আর ঐশী নিজেও ওর সাথে সুন্দর খেলা করে।

🍁🍁🍁🍁

শহরের কোলাহল নগরী ছেড়ে বেশ কিছুটা দূরে নির্জনে জায়গায় গাড়ি দাঁড় করে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। সামনে একটা লেক, যেখানে থাকা স্বচ্ছ পানিতে নিজেরই ছায়া বিদ্যমান। প্যান্টের দুই পকেটে হাত রেখে লেকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কোনো কিছু নিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। আশেপাশে কত মানুষ নিজেদের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে কিন্তু সে-ই দিকে তাঁর নজর নেয়। নিজের মতো করে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

” নিহান আর তরী ঘুরতে যাবে। নিহানের বাড়ি সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকবে কেউ থাকবে না। এই সুযোগে তুমি এখানে থাকা বাকি কাজ শেষ করে দিবে। আর এমন ভাবে করবে যেনো কেউ কিছু জানতে বা বুঝতে না পারে। আর নিরাত্রিকে গুম করে দিবে। যদি কেউ দেখে বা বাঁধা দেওয়ার সৃষ্টি করে তোমাকে কি করতে হবে আশাকরি বলে দিতে হবে না। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টে কথা হচ্ছে, নিহানের রুমে একটা পেনড্রাইভ এবং একটা ফাইল পাবে পেনড্রাইভ নিয়ে যাবে আর ফাইল সেখানেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে দিবে। আর ফার্ম হাউসে ডঃ. সেন আছেন তাকেও মেরে দিবে।”

“কিন্তু স্যার ডঃ. সেন তো আপনার লোক। সে যা করেছে সব কিছু তো আপনার কথামতো তাহলে?”

লোকটার কথা শেষ হতেই আয়ান লোকটির কলার চেপে ধরলো।

“আমি তোকে জবাবদিহিতা করব না সোহেল। তুই ভুলে যাস না আমি তোর বস আর তুই আমার অর্ডার মানতে বাধ্য। তোকে যতটা করতে বলেছি তুই তাই করবি আর কাজ শেষে আমার থেকে টাকা নিয়ে নিবি। তুই কে আমাকে প্রশ্ন করতে পারবি না। নিজের লিমিটেডের মধ্যে থাক। নিজের লিমিট ক্রস করবি তো নিজেই শেষ হয়ে যাবি।”

সোহেলের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলে সোহেলের কলার ছেড়ে দিলো। এতো দিন শুধু চুপচাপ আয়ানের সব অর্ডার মতো কাজ করে যাচ্ছিল সোহেল। কিন্তু আজকে প্রশ্ন করার সাহস দেখিয়ে বুঝতে পেরেছে আয়ানের সাথে সামান্য কথা বলতে গেলেও বিপদে পড়তে হবে।

” স্যরি! আপনার কথা মতো কাজ হয়ে যাবে।”

” সোহেল!”

আয়ানের সাথে কথা শেষ করে বাড়ি যাওয়ার জন্য পিছন ফিরতেই আবারো আয়ানের ডাকে সেখানে দাঁড়িয়ে গেলো সোহেল। এখন আবার কি বলবে না বলবে বুঝে উঠতে পারছে না সোহেল। যতক্ষণ না আয়ান নিজে থেকে কিছু বলছে সোহেল নিজেও বুঝতে পারছে না আবার নতুন করে কি বলবে।

“ঐশীও ভবিষ্যতে আমার পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে আবার পাল্টিও খেতে পারে। ইউ নো মেয়ে মানুষ। লোভী আর যদি পুলিশের মুখে পরে তাহলে হয়তো আমার নাম বলে দিতে পারে। তুমি নিরাত্রির সাথে সাথে ঐশীকে ও। ওকে! আর তোমার জন্য একটা গিফট আছে।”

প্রথম কথা গুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলেও আয়ানের বলা শেষ কথা শুনে মাথা উঁচু করে তাকালো। চোখমুখ খুশিতে গদগদ করছে। আয়ান তাকে গিফট দিবে? নিশ্চয় দামী কোনো গাড়ি নয়তো ফ্লাট দিবে। এতো গুলো বছর ধরে আয়ানের সাথে কাজ করছে। এইটুকু তো সে পেতেই পারে।

“স্যার আমার জন্য গিফট?”

“হুঁ!”

কথাটা শেষ হতে না হতেই সোহেলের গালে থাপ্পড় মেরে বসলো। গালে থাপ্পড় পড়ার সাথে সাথে রাগী দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকায় সোহেল। কিন্তু সোহেলের সে-ই দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে আয়ান স্থান ত্যাগ করে। আর সোহেল গালে হাত দিয়ে আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছু সময়।

” তোর শেষ আমি দেখে নিবো আয়ান। আমার গায়ে হাত তোলার শাস্তি তোকে পেতেই হবে। তুই যত বড় মাফিয়া হোস না কেনো তোর দুর্বলতা কি সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না। আমি ঠিক তোর সেই দুর্বল জায়গায় প্রতিঘাত করবো। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সব কিছুর হিসেবে আমি নিবো।”

নিজে নিজে কথা গুলো বলে সোহেল নিজেও সেই জায়গা থেকে চলে গেলো।

🍁🍁🍁🍁

” আরে দেখে চলতে পারেন না? এভাবে কেউ রাস্তা দিয়ে হাঁটে? ঠিক ভাবে হাঁটতে না পারলে রাস্তায় বের হয়ে আসেন কেন? যত্তসব।”

#চলবে