অবেলায় এলে তুমি পর্ব-১৯

0
210

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:১৯
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

(১৮+ এলার্ট)

গভীর রজনী! আকাশে মস্ত বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে। মেঘেরা পাল্লা দিয়ে ছেঁটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তরে। চাঁদের আশেপাশে হাজার ঝলমলে তারার মেলা বসেছে। চাঁদ এবং তারার আলোয় চারিদিকে অন্ধকার ছাড়িয়ে আলোয় আলোকিত করে তুলেছে। এখন সময় পরাত দুইটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। নিহানের বুকের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে বেডসিড জড়িয়ে বসে আছি ব্যালকনিতে। মৃদু বাতাস শরীরে ছুঁয়ে যাচ্ছে সাথে একটু পর পর চিবুকে নিহানের ঠোঁটের ছোঁয়া বারংবার শিহরণ বয়ে চলেছে। ধীরে ধীরে ছোঁয়া গভীর থেকে গভীর হতে শুরু করেছে। বাম হাত কোমর ছেড়ে মেদহীন পেটের বিচরণ করতে শুরু করেছে সেই সাথে নিহান নিজেও বেশামাল হতে শুরু করেছে। আমার নিজেকেও সামলে রাখা দায় হয়ে উঠেছে। চিবুক ছেড়ে ঠোঁটের ছোঁয়া গলা, গাল, চোখ স্পর্শ করে ঠোঁটে এসে স্পর্শ আরো গভীর হতে শুরু করলো। নিহানের স্পর্শে সাড়া দিতেই একটা সময় ঠোঁটের মাঝে জ্বালা করতেই বুঝতে পারলাম ঠোঁট কেটে গিয়েছে। কিন্তু সে-ই দিকে না তো নিহানের ধ্যান জ্ঞান আছে আর না তো এখন নিহানকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া শক্তি নিজের মাঝে অবশিষ্ট আছে। নিজের সম্পূর্ণ ভার নিহানের উপর ছেড়ে দিয়ে নিহানের প্রতিটি স্পর্শের সাথে নিজেও তাল মেলাতে শুরু করি। কোনো পুরুষ যেমন নারীর সংস্পর্শে এলে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়ে উঠে তেমনি নারী পুরুষের গভীর সংস্পর্শে নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। কোনো না কোনো ভাবে নিজেকে দুর্বল চিত্তের মাঝে ফেলে দেয়। নারী এবং পুরুষ দু’জনেই দু’জনের সংস্পর্শে এলে কোনো না কোনো অঘটন ঘটবেই। কিছু কিছু মিলন ঘটে বৈধতার স্পর্শে আবার কিছু কিছু মিলন ঘটে আবৈধতার স্পর্শে।

” তরী আজকের বাকিটা রাত আমি তোমাকে চাই নিজের করে।”

আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই কথাটা বলে আমাকে কোলে তুলে নিলো নিহান। নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিহানের দুহাত দিয়ে নিহানের গলা জড়িয়ে ধরলাম। গলা জড়িয়ে ধরতেই নিহানের চোখে নিজের চোখ আটকে গেলো। চোখ দুটোতে শুধু ভালোবাসার মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঠিক যেমন আফিম নেশালো সৃষ্টি করে তেমনি নিহানের চোখ দুটিতে নেশায় আসক্ত আছে। এই চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস হলো না। নিজের কন্ঠনালী দিয়ে কথা আটকে আটকে আসছে। কোনো কিছু বলতে না পারাই নিহানের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে নিলাম। ব্যালকনি থেকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের সম্পূর্ণ ভার আমার উপর ছেড়ে দিলো। দু’জনেই মত্ত হয়ে উঠলাম আদিম খেলায়।

” বাহ্! তুমি আমার পরিবারকে শেষ করে দিয়ে, আমাকে তাদের কাছে অপরাধী করে দিয়ে এখন ভালোবাসার গহীনে হারিয়ে যাচ্ছো নিহান? তোমার এই ভালোবাসা, এই সুখ আমি তোমার থেকে কেড়ে নিবো নিহান। ঠিক সে-ই ভাবে যেই ভাবে তুমি আমার থেকে আমার সুখ, ভালোবাসার মানুষ এবং পরিবার কেড়ে নিয়েছ।”

নিহানের রুমে ব্যালকনিতে দৃষ্টি রেখে কথা গুলো বলে চলে গেলো মেয়েটি। নিজের যেই কাজের জন্য “সুখবিন্দর নিবাস” এ মেয়েটি এসেছিলো সেই উদ্দেশ্য সফল করার আগেই বাগান থেকে নিহানের রুমের ব্যালকনিতে দৃষ্টি যেতেই নিহান এবং তরীর মূহুর্ত গুলো দেখে সেখানেই থেমে যায়। নিজের সে-ই অতীত মনে হতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। যেই অতীতের পাতায় যেমন সময় গুলো মধুর ছিল ঠিক তেমনি বেদনা দায়ক এবং জঘন্য ছিলো। যেই মানুষটি এক সময় নিজের সবটা জুড়ে ছিলো, হাজারো ভালোবাসা দিয়ে নিজের মনের মনিকোঠায় তাকে রাঙিয়ে ছিলো, আজ সেই মানুষটির জন্য মনে শুধু ঘৃণা এবং প্রতিশোধ দিয়ে ঘেরা হয়ে আছে‌ যাকে এতো ভালোবেসেছে তাঁকেই এতো ঘৃণা এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য কি এমন করেছিল নিহান?

🍁🍁🍁🍁

এক মিষ্টি সকাল, এক নতুন দিনের সূচনা। সকাল সকাল ঝুম বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দু’চোখ ভর্তি ঘুম। রাতে ঠিক করে ঘুম না আসায় এখনো ঘুম চোখ থেকে যাচ্ছে না। কিন্তু ঝুম বৃষ্টির শব্দে চোখ বন্ধ করে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। জানালা ভেদ করে বৃষ্টির ছিটে এসে চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে সেই সাথে বৃষ্টির কারণে হালকা শীত শীত অনুভব হচ্ছে একটু একটু করে। যা ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। অনিচ্ছা সত্ত্বে বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও আমাকে আবারো আধশোয়া হয়ে বসতে হলো। এক জোড়া শক্তপোক্ত হাত আমার কোমর আসটে পিশটে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। দু’চোখ কচলে তাকাতেই দেখি নিহান আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁট দুটো ছোট বাচ্চাদের মত উল্টে শুয়ে আছে।

” শুভ সকাল ডিয়ার হাসবেন্ড।”

নিহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কথাটা বলে গালে টুপ করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই হালকা নড়াচড়া করে কোমর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরল নিহান।

” এমন বৃষ্টিমুখর দিনে সকাল সকাল এভাবে চুমু খেও না বউ। নয়তো আমি আবারও রাতের মতো হয়ে উঠবো। যদি তুমি চাও তো আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি ভালোবাসতে বা আদর করতে কিপ্টামু করি না। হাজার হোক নিজের তিন কবুল পড়ে নিয়ে আসা বউ। আমি নিজের জিনিস গুলো একটু বেশি আদর যত্ন করি।”

কথা গুলো বলে কোমর ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে তাকিয়ে রইল।

” আপনি আমার অর্ধাঙ্গ। আপনি আমার জীবনের সে-ই মানুষ যাকে দেখে আমার মনের কোঠায় প্রথম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছিল। আপনার প্রতিটি ছোঁয়ায় আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই। আর আপনি আমার জীবনের প্রথম পুরুষ যার ছোঁয়া আমি বারবার পেতে চাই। আমি আমৃত্যু আপনার সঙ্গে, আপনার প্রতিটি ছোঁয়ায় নিজেকে বিলীন করে দিতে চাই। আমি…”

” আমি সব কিছু নতুন করে শুরু করেছি তরী। আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমি আমার পাশে তোমাকে চাই। আমি আর তোমাকে হারাতে চাই না তরী। তুমি আমার এখানেই সবটা জুড়ে থাকবে।”

আমার কথা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই নিহান আমাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে কথা গুলো বললো। নিহানের বুকে মাথা রাখতেই হৃদস্পন্দনের প্রতিটি শব্দ কানে ঝংকার তুলে দিতে শুরু করলো। ‌নিহানের বুকে আসা এই প্রথম নয় কিন্তু নিহানের বলা কথা গুলো আজকে প্রথম। নিহানের অল্প সামান্য বলা কথা গুলো মনের মাঝে ভালো লাগা সৃষ্টি করে তুলেছে। নিহানের কথার প্রেক্ষিতে আর কিছু না বলে চুপ করে নিহানের বুকের সাথে লেপ্টে রইলাম। এই স্থান ভরসার, এই স্থান ভালোবাসার, এই স্থান আমাকে রক্ষা করার এবং ভালো রাখার।

হঠাৎ করেই মামীর কথা মনে পড়ে গেলো। মনে মনে ঠিক করলাম বিকেলে মামীর সাথে দেখা করতে যাবো। মামী আমার সাথে অন্যায় করেছে নিহানের আগের বিয়ের কথা না বলে কিন্তু আজকে মামীর জন্য আমি এই মানুষটাকে নিজের স্বামী রূপে পেয়েছি। যেই মানুষটি আমাকে হারাতে ভয় পাই আমাকে নিজের করে নিতে পেরেছে। নিজেকে এখন পৃথিবীর সব থেকে বেশি সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে। এতো সুখ, ভালোবাসা সব কিছু আমার। এতো সুখ ভালোবাসা সবটা আজ মামীর জন্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

🍁🍁🍁🍁

সকাল দশটা। নিরাত্রিকে নিয়ে বসে আছি খাবার টেবিলে। আমার সামনের টেবিলেই বসে আছে নিহান। রুটি আর ডিম ভাজি সামনে নিয়ে বসে আছে। খাচ্ছে কম আশেপাশে দেখছে বেশি। যেটা আমার নজর এড়িয়ে গেল না।

“না খেয়ে এদিকওদিক কি খুঁজে চলেছেন? সব কিছু তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

কথাটা বলে নিরাত্রির মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিহানের দিকে তাকালাম। নাহ্! লোকটা এখনো এদিক ওদিক কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে।

” আপনি কি খুঁজে চলেছেন বলবেন আমাকে?”

“ঐশী কোথায় কোথাও দেখছি না যে।”

রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরতে পুরতে কথাটা বললো নিহান। হঠাৎ করে ঐশীর কথা জিজ্ঞেস করাতে ভ্রু কুঁচকে গেলো। কখনো ঐশীর কথা জিজ্ঞেস করে না কিন্তু আজকে হঠাৎ করে ওর কথা জিজ্ঞেস করতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো।

” হঠাৎ ঐশীর কথা কেনো জিজ্ঞেস করলেন?”

” না দেখছি না তো। নিরাত্রিকে তুমি তো খাওয়াচ্ছো তার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।”

” বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর ঐশী তার খালাকে দেখতে গিয়েছে হসপিটালে।”

কথাটা শোনা মাত্রই নিহানছর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিহানের মনে আবারো কিছু একটা চলছে। কি চলছে সেটা বুঝতে পাওয়া সম্ভব না যতক্ষণ না নিহান নিজেই বলবে।

#চলবে