অবেলায় এলে তুমি পর্ব-২১+২২

0
132

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:২১
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

গভীর রজনী। বাহির থেকে কুহুক পাখির ডাক ভেসে আসছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে শহর। সোডিয়ামের আলো এবং চাঁদের আলোয় অন্ধকার ডেঙিয়ে দিনের মতোই আলোকিত করে তুলেছে চারপাশ। ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছে আমি শূন্য ভেসে চলেছি। নিজের স্বপ্ন ভেবে আবারো আগের ন্যায় ঘুমিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করলাম। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে আমি শুধু শূন্যে ভেসে চলেছি না বরং পাশাপাশি উপরের দিকে অগ্ৰসর হচ্ছি। দুচোখের পাতায় ঘুম থাকা সত্ত্বেও ঘুম জড়ানো চোখে তাকানো মাত্রই ঘুম চোখ থেকে বিদেয় নিলো। এতো সময় যেটা স্বপ্ন ভেবে এসেছি সেটা আমার স্বপ্ন নয় বরং সত্যি আমি শূন্য ভেসে চলেছি। কারো বলিষ্ঠ হাত এবং বুকের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে রেখেছে। কোমর এবং পেটের অংশে শক্ত করে চেপে ধরায় মাংসপেশীতে লাগছে। যার দরুন ব্যাথাও করছে। শূণ্যে ভাসানো লোকটাকে দেখতে গিয়ে ভয়ে বাকশক্তি লোপ পেয়ে যায়।

” চিৎকার করবে না। চিৎকার করলে এখান থেকে ফেলে দিয়ে কোমর ভেঙে দিবো। কি ভেবে ছিলে তোমার ফোন অফ করে রেখে আমাকে টেনশন দিয়ে তুমি আরাম মতো ঘুম আসবে? আর আমি বাড়িতে বসে থাকবো? তা কি করে সম্ভব হয় বউ বলতো? আমার সাথে লাগতে আসার শাস্তি তো পেতেই হবে।”

এমনিতেই এতো রাতে লোকটাকে এখানে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার উপর আবার ঠান্ডা গলায় কথা বলে আরো ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। তখন মামীর বলা কথা গুলো রাগিয়ে তুলেছিল আর সব রাগ গিয়ে পড়েছে বেচারা ফোনের উপর। যার ফলস্বরূপ ফোন দুখন্ড হয়ে পড়ে আছে আর এইটার জন্য ফোন অফ আর এই অসভ্য লোক ফোন দিয়ে না পেয়ে চলে এসেছে।

” আমাকে নিচে নামিয়ে দিন। আর আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন? ভিতরেই বা এলেন কি ভাবে?”

দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলতেই নিহান ছাদের মাঝ বরাবর নিয়ে এসে নামিয়ে দিলো। নিজের যতটা রাগ, অভিমান, অভিযোগ ছিল সব চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলে রেখে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু সামনের ব্যক্তি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে দাঁড়িয়ে আছে।

” আমি কি ভাবে ভিতরে এসেছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আর তুমি যেই আটার বস্তার মতো ভারি তোমাকে কোলে নিয়ে সিড়ি গুলো বেয়ে আসতে আসতে আমার হাত, পা সব শেষ হয়ে গেছে। কম কম করে খেতে পারো না? একটা আটার বস্তা।”

কথা গুলো বলেই হাত পা নিজে নিজেই টিপতে লাগলো। মনে হচ্ছে ব্যাথায় হাত পা খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। যাক তাতে আমার কি? কিন্তু আমাকে আটার বস্তা বললো কোন দিক দিয়ে? আমি কি এতোই মোটা আর আমার ওজন এতোই না কি? আটার বস্তা বলায় তরতরিয়ে রাগ মাথায় উঠে গেলো।

” আমি আটার বস্তা?”

“হুম! তুমি তো আটার বস্তায়। কোনো সন্দেহ আছে নাকি? সন্দেহ হলে এই দেখো ব্যাথায় আমার হাত পা কেমন ফুলেফেঁপে উঠেছে।”

” আমার মতো স্লিম ফিগার মাত্র চল্লিশ কেজির মেয়ে আপনার কাছে আটার বস্তা?”

কোমরে দুই হাত দিয়ে নিহানের দিকে এক পা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলাম।

” মাই গড! তুমি চল্লিশ কেজি ওজনের মেয়ে হয়ে নিজেকে স্লিম ফিগার বলে দাবি করছো? তাহলে যারা সত্যি স্লিম ফিগারের তারা তো তোমার কথায় লজ্জা পেয়ে যাবে।”

অবাক হয়ে যাওয়ার ভান করে কথা গুলো বলে বারবার চোখের পলক ফেলতে লাগলো। নিহানের এমন ভান দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয়। তুই ছেলে মানুষ ছেলে মানুষের মতো থাকবি। বউয়ের সুন্দর, সুন্দর প্রশংসা করবি। কিন্তু তুই তা না করে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে মানুষের মতো ঢং করছিস কেনো?

” আমি যদি আটার বস্তা হই তাহলে আপনি একটা হাতি। শুধু হাতি না সাথে একটা জলহস্তী, গন্ডার, জিরাফ। দুনিয়ার সব আজগুবি প্রাণী আপনি। যদি নিজের বউকে কোলে নিতে না পারেন তাহলে হাতির মতো শরীর বানিয়েছেন কেনো? মেয়েদের নিজের এ্যাবস দেখাতে? না কি যারা হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে পড়ে তাদের আগলে নিতে?”

এক নিঃশ্বাসে নিহানকে কথা গুলো বলে একটা দম নিলাম। কত বড় বদ হলে নিজের বউকে আটার বস্তা বলে। অথচ নিজে যে রাস্তাঘাট হেসে হেসে গায়ে পড়া মেয়েদের আগলে নেয় তখন একদম শক্তি চলে আসে।

” আমার এই বডি তো তাদের জন্যই। তারা গায়ের উপর এসে পড়ে যাবে আর আমি তাদের টুপ করে ধরে নিবো। কিন্তু তোমার মতো আটার বস্তাকে কোলে নিতে গিয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছে তুমি নিজেই দেখো।”

কথাটা বলেই নিহান নিজের হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলো দেখাতে তার হাত ফুলেফেঁপে উঠেছে। নিহানের হাত বাড়িয়ে দিতেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। বুদ্ধিটা আসতেই মনে মনে নেচে নিলাম কিছু সময়। রাগি ভাব দূর করে মুখটা বাচ্চাদের ন্যায় করে নিলাম।

” তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না বাবু? দেখি দেখি কোথায় ব্যাথা করছে?”

কথাটা শেষ হতেই নিজের দাঁত গুলো বসিয়ে দিলাম নিহানের হাতে। সাথে সাথে নিহান মৃদু শব্দে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এতো সময় ঢং করা আমার সাথে! এবার সত্যি সত্যি তোর হাতে আমি ব্যাথা করিয়ে ছাড়বো। ইচ্ছে মতো হাতে কামড়ে দিয়ে হাত ছেড়ে দিলাম।

” রাক্ষুসীর মতো আমার হাত কামড়ে দিলো। আল্লাহ আমার মা শেষ পর্যন্ত আমার জন্য একটা রাক্ষুসী বউ নিয়ে এসেছে। এই রাক্ষুসী তো আমাকে কামড়ে শেষ করে দিবে।”

এক হাত দিয়ে অপর হাত ধরে ঝেড়ে নিতে নিতে কথা গুলো। কিন্তু নিহানের এক হাত কামড়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করতে পারছিলাম না। তাই অপর হাত চেপে ধরে কামড় বসিয়ে কিছু সময় দাঁত দিয়ে ধরে রাখলাম। ব্যাথা পাচ্ছে তা নিহানের দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে রাখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমি সেদিকে তোয়াক্কা না করে নিজের রাগ মেটানো আগ পর্যন্ত হাত ছাড়লাম না।

” আমার হাত কামড়ে দেওয়া তাই না? তোমার এই দাঁত আমি হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলে দিবো। তুমি দাঁড়াও শুধু!”

কথাটা আমার কর্ণপাত হতেই আর এক মুহূর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে ছাদের দরজার দিকে দিলাম দৌঁড়। কিন্তু কথায় আছে না, “অভাগী যে দিকে যায় নদী শুকিয়ে যায়।” আমার হয়েছে সেই অবস্থা। দৌড়ে আসতে গিয়ে ছাদের দরজার সামনে শাড়িতে পা আটকে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম। পড়ে যাওয়া মাত্রই পিছন থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো। নিহান যে আমার মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া নিয়ে হাসছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই দিকে আমার হাত জ্বালা করতে শুরু করেছে অপর দিকে নিহানের হাসি যেনো থামছেই না।

” এবার ভালো হয়েছে না? দেখলে স্বামীকে আঘাত করলে নিজেকেও আঘাত পেতে হয়। স্বামীর অবাধ্য হয়েছো তো এমন শাস্তি পেলে। বাবু খুব লেগেছে তাই না! দেখি! দেখি!”

আমার পাশে এসে কথা গুলো বলেই আবারো হাসতে লাগলো। এতো সময়ে আমিও পড়ে যাওয়া থেকে উঠে বসে পড়েছি। ব্যাডা মানুষ সত্যি বজ্জাতের হাড্ডি। হাতি গর্তে পড়লে চামচিকাও লাথি মারে। এই দিকে আমার কান্না চলে আসতেছে অপর দিকে নিহানের হাসি।

” শালা আমার পড়ে যাওয়া দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তাই না। শালা আমি তোর বউ পড়ে গেছি কোথায় তুই আমাকে তুলে উঠাবি সেটা না করে তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছিস আর হি হি হি করে দাঁত দেখাচ্ছিস। শালা ব্যাডা তোর বউ থাকবে না। থুক্কু এই ব্যাডার বউ তো আমি নিজেই। কি সব বলে চলেছি।”

মনে মনে কথা গুলো বলে নিহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। নিহান আমার দৃষ্টির তোয়াক্কা না করে মুখ ভেংচে দিল।

“যে ভাবে পড়ে গিয়েছো সেই ভাবে উঠে আসো। আমার শরীরে এতো এনার্জি নাই আটার বস্তা তোলে রুমে নিয়ে যাওয়ার। যাই বাই অনেক রাত হয়েছে আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক।”

কথাটা বলেই নিহান স্থান ত্যাগ করার পূর্বেই নিজেও আমার মতো মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। না! না! নিজে থেকে পড়ে যায়নি। আমি নিহানের পথে পা দিয়ে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছি। আমার পড়ে যাওয়া নিয়ে বড্ড হি হি হুঁ হুঁ করে হাসা হচ্ছিল। এবার দেখ কেমন লাগে পড়ে গেলে।

“কেমন লাগলো পতিদেব? নিজের বউ পড়ে যাওয়া দেখে অনেক হাসি হচ্ছিল তাই না? এবার নিজেও দেখেন বউয়ের উপর হাসির মজা। বউয়ের উপর হাসলে আল্লাহ পাক শাস্তি দেয় বুঝলেন।”

কথা গুলো বলে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নিহান উঠে দাঁড়ানোর আগেই আমাকে রুমে যেতে হবে নয়তো এই লোক একবার আমাকে ধরতে পারলে আমার সব দাঁত হাতে ধরিয়ে দিবে। তাই নিহান উঠার আগেই আমি নিজের রুমে চলে গিয়ে লক করে দিলাম। যাতে করে নিহান রুমে প্রবেশ করতে না পারে। আজকের রাত সে ড্রয়িং রুমে পার করুক। আমার রুমে আজকে তার ঠাঁই নেই। নেই মানে নেই। হুঁ!

🍁🍁🍁🍁

” চোর! চোর! চোর! চোর এসেছে গো। বাড়িতে চোর এসেছে। কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি করে আসো। আমি চোর ধরেছি। চোর! চোর।”

#চলবে

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:২২
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

রাত তিনটা বেজে তেইশ মিনিট। তীব্র তৃষ্ণায় চৌচির হয়ে আছে সালমা বেগমের গলা। বেড সাইড টেবিলে রাখা জগে পানির ছিটে ফোঁটাও পাওয়া গেলো না। এই দিকে ঘুমের জন্য ঠিক ভাবে বসে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না তো তৃষ্ণায় জীবন যায় যায় অবস্থা। ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই জগ হাতে নিয়ে বের হয়ে আসেন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হঠাৎ করে কারো ছায়া সরে যেতে দেখেই চোখে থাকা ঘুম টাটা! বায়! বায়! করে পালিয়ে যায়। হঠাৎ করে কারো ছায়া দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এতো রাতে ড্রয়িংরুম থেকে কিচেনের দিকে কারো ছায়া যেতে পারে ভেবেই দিশেহারা হয়ে গেলেন। এতো বছর ধরে এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছে কোনো ভূতপ্রেত নেই বলেই জানেন তিনি। তাই মনে মনে ভেবে নিলেন হয়তো বাড়িতে চোর এসেছে। কিন্তু উনার বোধগম্য হচ্ছে না চোর বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো কি ভাবে?
বুকে সাহস সঞ্চয় করে টিপ টিপ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে কিচেনের দরজার পাশে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।
বউয়ের উপর রাগ ঝারতে গিয়ে বাড়ি থেকে কিছু না খেয়েই বের হয়ে আসে নিহান। রাস্তায় রিহার সাথে কথা বলার আবারো অফিসে যেতে হয় নিহানকে। সেখানে জরুরি মিটিং থাকায় তরীকে ফোন করার সময় পাইনি তাই ভেবেছিল একেবারে বাড়ি ফিরে কথা বলবে। কিন্তু অফিস থেকে ফেরার পর তরীকে দেখতে না পেয়ে আবারো এখানে চলে আসে যার ফলস্বরূপ আর কিছু বলার সময় পাইনি। অন্যদিকে আসার পর থেকেই দুজনে ঝগড়াঝাঁটি শুরু করে দিয়েছিলো। তরী নিজের রুমে চলে গিয়ে লক করে দিয়েছে ভিতর থেকে এতো রাতে কাউকে ডাকাডাকি করে ঘুম নষ্ট করতে চাই না বলে অজ্ঞাত ড্রয়িংরুমে শুতে হয়েছে। কিন্তু পেটে খিদে থাকার ফলে ঘুম ঠিক মতো হচ্ছিল না। যার জন্য কিচেনের দিকে যায় কিছু খাওয়ার জন্য। তার উপর মশা তো পারে না উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতে। এক দিকে খিদে তো অন্য দিকে মশা। বিরক্ত হয়ে গুনগুন করে কাউকে কিছু বলে চলেছে।

” এতো বড় সাহস আমার বাড়িতে চুরি করতে আসছে। আর কোন বেয়াক্কেল মানুষ সদর দরজা এভাবে খুলে রেখেছে সেটাও আমি পরে দেখছি। আগে এই চোরের ব্যবস্থা করি। আজকে নিজের হাতে চোর ধরে পুরো মহল্লায় নাম করে দিবো। আজকে চোরের একদিন কি আমার যতদিন লাগে।”

মনে মনে কথা গুলো বলে কিচেনের দরজার পাশে থাকা ছোট একটা বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সালমা বেগম। বালতিটা মূলত রাখা হয়েছে কিচেনের ময়লা( সবজির খোসা) গুলো ফেলে দেওয়ার জন্য। সেই বালতি হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল দরজার পাশে চোরের অপেক্ষায়।

” ধ্যাত! কোনো জায়গায় কোন কিছু দেখছি না। শুধু শুধু বউকে ঝাড়তে গিয়ে এখন নিজেই না খেয়ে আমশত্ত হয়ে আছি।”

কথা গুলো বলেই ফ্রিজ থেকে একটা আপেল বের করে খেতে খেতে বের হয়ে আসে নিহান। কিন্তু দ্বিতীয় কামড় দিতে গিয়েও দিতে পারলো না সে। তার আগেই সব কিছু একেবারেই অন্ধকার হয়ে গেল সাথে কিছু কথা কানে ভেসে আসতে লাগলো।

” চোর! চোর! চোর! চোর এসেছে গো। বাড়িতে চোর এসেছে। কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি করে আসো। আমি চোর ধরেছি। চোর! চোর। আমার বাড়িতে চোর এসেছে। কই গো তোমরা তাড়াতাড়ি করে আসো। আমার বাড়িতে চুরি করতে আসা তাই না! চোর আজকে তোর হাড়গোড় আমি ভেঙে দিবো। এই সালমার বাড়িতে চুরি করতে আসা তাই না। আজ পর্যন্ত আমার হাত থেকে কেউ সহজে পালাতে পারেনি আজকে তুইও পারবি না।”

অন্ধকারেই বালতি ধরেই ঘুরাতে ঘুরাতে চিৎকার করে কথা গুলো বলতে লাগলো সালমা বেগম।”
পর দিকে সালমা বেগমের চিৎকার শুনে সবাই নিচে চলে আসে। মাত্র কিছু সময় আগেই ঘুমিয়েছি আর এরই মাঝে মামীর এমন বাজখাঁই গলা শুনে ঘুম যেনো কোথায় পালিয়ে গেলো। এতো জোরে চিৎকার করছে যেনো বাড়িতে ডা”কাত এসেছে। শোয়া থেকে উঠে বসে একবার মেয়ে দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়ে আমার ঘুমিয়েই আছে।

“কি রে তাড়াতাড়ি আয়! চোর তো পালিয়ে যাবে। এতো বড় ধামড়া চোরকে আমি কি আটকে রাখতে পারি? আমার বাড়িতে চুরি করতে এসেছে। এই সালমার সাথে কেউ কোনদিন পারেনি আর ছিঁচকে চোর কি-না আমার বাড়িতে চুরি করতে আসে। আবার আমার ফ্রিজ থেকে খাবার নিতে যায়।”

নাহ্ এবার না বাহিরে না গেলেই না। মামী যেই ভাবে চিৎকার শুরু করেছে তাতে করে একটু পর দেখা যাবে পাশের বাড়ির মানুষজনও চলে আসবে।

” চোর? চোর? কোথায় চোর? আমি আমার বেত নিয়ে এসেছি। আজকে চোরের পিঠের ছাল আমি তুলে দিবো।”

ড্রয়িংরুমের লাইট অন না করেই অন্ধকার হাতড়ে কথা গুলো বললো মামা। এতে মামী বড্ড বেশি বিরক্ত হয়ে গেলেন।

“তুমি অন্ধকারে কি করবে? আগে লাইট অন করে আসো যাও। ততক্ষণে আমি এই চোরকে ধরে রাখছি।”

মামা লাইট অন করার আগেই আমি নিজেই লাইট অন করে দিলাম। কিন্তু লাইট অন করে চোরকে দেখতে গিয়ে উপস্থিত সবাই ড্যাবড্যাব করে চোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মামাও নিজের পুরানো স্কুল বেত নিচে ফেলে দিলো। কিন্তু আমি সেকেন্ড খানিক নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলেও আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। উচ্চ শব্দে হেসে দিলাম।

” মামী চোর কিন্তু সত্যি একটা ধামড়া আর হ্যাঁ উচ্চ শিক্ষিতও।”

কথাটা বলেই আবারো হাসতে লাগলাম। এইদিকে নিহান রেগে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু সে-ই দিকে তোয়াক্কা না করে নিজের হাসি অব্যাহতি রাখলাম। মামী মামা ও কিছু সময় মিটমিট করে হাসলেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মামী শাশুড়ির হাসাহাসি করা দৃষ্টিকটু।

” চুপ ফাজিল মেয়ে। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! কি লজ্জা। আমি বুঝতে পারিনি জামাই। এতো রাতে অন্ধকারে হাঁটাহাঁটি করতে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো চোর এসেছে। তাই এমন ভুল হয়েছে। আর তুমিই বা কখন এলে সেটাও তো আমি জানিনা। তুমি কিছু মনে করো না জামাই।”

আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে নিহানকে বাকি কথা গুলো বললেন মামী। কিন্তু আমি যেনো নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। নিহানের মাথায় কিছু সবজির খোসা আর অল্প ময়লা পানি দিয়ে চিপচিপ হয়ে আছে। সামনের চুল থেকেও টপটপ করে হালকা পানিও পড়ছে।

” না মামী ঠিক আছে। শশুড় বাড়িতে মাঝ রাতে এসে এইটুকু জামাই আদর আমার কাম্য। আমি কিছু মনে করিনি মামী। কিন্তু এই যে বালতি! এই বালতিটা একটু কাজের খালাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবেন।”

শেষ কথাটা যে খোঁচা দিয়ে বললো এইটা বুঝতে মামীর সময় লাগলো না। নিহানের এমন কথায় মামী বেশ লজ্জাবোধ করলেন।

” একি তুমি এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছো কেনো? পায়ে কি হয়েছে?”

মামীকে কথা গুলো বলে নিহান হালকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে রুমের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু নিহানের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলা মামী লক্ষ্য করতেই নিহানকে প্রশ্ন করলেন।

” মামী আপনাদের বাড়িতে লম্বা চুল ওয়ালী, সুন্দর দেখতে ডাইনি আছে এইটা আমাকে আগে কেন বলেননি? আগে যদি বলতেন তাহলে আমি সাবধানে থাকতাম।”

” আমি ঠিক বুঝলাম না বাবা।”

মামা মামী কেউই নিহানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারেনি। কিন্তু কথা গুলো যে আমার উদ্দেশ্যে ছিল সেটা বুঝতে আর বাকি নেই। পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় একটু মায়া হচ্ছিল কিন্তু নিহান আমাকে সবার সামনে ডাইনি বলায় আমার মায়া জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলো।

” মামা আপনাদের বাড়িতে আসার পর এক লম্বা চুল ওয়ালী, সুন্দরী, অল্প বয়সী ডাইনি ল্যাং মেরে ফেলে দিয়ে আমার এই করুণ অবস্থা করেছে। কিন্তু ডাইনির একটুও মায়া হলো না আমার উপর। নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো আর আমাকে এখানে ফেলে রেখে গেলো।”

কথা গুলো বলে এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় না করে রুমের দিকে চলে যায় নিহান। অন্যদিকে মামী এখনো কিছু বুঝতে না পেরে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

” এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে একটু তেল গরম করে রুমে গিয়ে নিহানের পায়ে মালিশ করে দে। আর কিছু নিয়ে যাস খাওয়ার জন্য। আর তুমি পরের বার থেকে চোখে দেখে চোর! চোর! করবে। এখন এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলো। মানসম্মান সব শেষ করে দিলে তুমি।”

প্রথম কথা গুলো আমাকে বলে শেষ কথা গুলো মামীকে বলে মামা মামী নিজেদের রুমের দিকে চলে যায়। আর আমি নিহানের জন্য তেল আর খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য কিচেনের দিকে চলে গেলাম।

🍁🍁🍁🍁

” নিহানক কিছুর বিনিময় রাখে না বেবি। নিহানকে দিলে নিহান সেটার বিনিময়ে তীব্র ভালোবাসা, জ্বালা গিফট করে।”

নিজের নরম ঠোঁট এবং কোমরে তীব্র ভাবে জ্বালা অনুভব হতেই চোখ দিয়ে আপনাআপনি টপটপ করে বর্ষন হতে শুরু করলো। কিন্তু সামনের মানুষের সে-ই দিকে তোয়াক্কা না করে নিজের কাজ হাসিল করতে লেগে গেল আবারো।

#চলবে