অবেলায় এলে তুমি পর্ব-২৫+২৬

0
157

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:২৫
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

সমুদ্রের পানির শব্দ ভেসে এসে কানে বাজছে। ঢেউ গুলো একটার উপর আরেকটা এসে আছড়ে পড়ছে। আর চাঁদের আলোয় পানি গুলো দেখতে নীল! নীল মনে হচ্ছে। সমুদ্রের পানি কি সত্যি নীল? ধুর আমি কি পাগলের প্রলাপ বকছি। পানির তো কোনো রং হয় না।‌ কিছু কিছু মানুষ সমুদ্রের কিনার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তো কেউ কেউ বসে আছে হয়তো বিষাদ নিয়ে নয়তো কিছু সুন্দর মূহুর্ত উপভোগ করার জন্য। ঠান্ডা বাতাস এসে শরীরে ঠান্ডা লাগছে। কিন্তু মন্দ লাগছে না। বারান্দায় এসে দাঁড়ালে সূর্যাস্ত দেখা যাবে।
সাদা রঙের শাড়ি পড়ে এলোমেলো ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে আছে এক শুভ্রপরী। যার ভেজা চুল থেকে চুয়েচুয়ে পানি পড়ছে যা পরিহিত শাড়ি ভিজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু শুভ্রপরীর কি আর সে-ই দিকে মন আছে? সে তো শরীরে শীতল বাতাস এবং সমুদ্র দেখতেই ব্যস্ত। কিন্তু সে-ই পরীকে যে নিপুণ ভাবে দু’টো চোখ অবলোকন করে যাচ্ছে। মুগ্ধ নয়নে দেখে যাচ্ছে নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে। প্রথম ভালোবাসা থেকে আঘাত পাওয়ার পর মেয়েদের প্রতি, ভালোবাসার প্রতি এক রাগ, মিথ্যে ধারণা তৈরি হয়েছিল। যা সামনে শাড়ি পড়ে থাকা মেয়েটি মিথ্যে প্রমাণিত করেছে। আবারো ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে। মেয়েটাকে যত দেখে ততই ইচ্ছে করে নিজের দুই বাহুডোরে আবদ্ধ করে রাখি। নিজের সব ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখি। কিন্তু যখন সব কিছু মনে হয় তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয় যা মেয়েটার থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করে। হঠাৎ করে কিছু মনে হতেই মনে মনে কিছু একটা ভেবে তোয়ালে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিহান।

” এখানে একা একা এভাবে ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তরী? ঠান্ডা লাগবে।”

কথা গুলো বলে আলতো করে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছে দিতে লাগলো নিহান।

” আমার থেকে দূরে থাকতে বলেছি আপনাকে। আমার কথা কি আপনার বুঝতে কোথাও অসুবিধা হচ্ছে নিহান?”

নিহানের কাছে দূরে সরে গিয়ে কিছুটা রেগে কথা গুলো বললাম। কিন্তু নিহান হঠাৎ করে আমার রেগে যাওয়ার হেতু বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু আমি কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলাম না। কেনো বলবো আমি?

” কি হয়েছে তোমার তরী? তুমি এমন ব্যবহার কেনো করছো? বাড়িতে তোমার মন খারাপ ছিলো কিছু বলেনি। ভেবেছি হয়তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এখানে এসেও তোমার ব্যবহারে একটুও পরিবর্তন দেখছি না আমি। কি হয়েছে তোমার আমাকে একটু বলবে?”

” কি হয়েছে শুনবেন? অফিসের নাম করে রাস্তায় নিজের স্বামীকে একটা অচেনা অজানা মেয়ের সাথে গায়ে গা লাগিয়ে হেসে হেসে কথা বলা, অচেনা নারী গায়ে এসে পড়ছে আর তাঁকে ভরা রাস্তায় আগলে নেওয়া হচ্ছে। হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপরে গিয়ে পড়ছে। কই কখনো তো আমার সাথে এমন করে হেসে কথা বলেননি। আচ্ছা হেসে হেসে কথা বলেননি ঠিক আছে। আচ্ছা সে-ই দিন যদি আপনার জায়গায় আমি থাকতাম! আমি যদি কোনো পুরুষের সাথে এভাবে কথা বলতাম। আপনার ঘরে একজন রেখে বাহিরেও প্রয়োজন পড়ে। এতো দিন সতীন ছিল বলে জানতাম এখন কি বাহিরে! আর আমি? তাহলে আমি কি জন্য আছি আপনার বাড়িতে নিহান! আপনার মা আর সন্তানের দায়িত্ব নিতে? স্যরি মিস্টার নিহান যেখানে আমাকে প্রয়োজন, দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয় আমি সেখানে থাকতে মোটেও ইচ্ছুক নই। আপনি সবসময় নিজের মন মতো আমার কাছে এসেছেন, বুকে টেনে নিয়েছেন কিন্তু কোথাও ভালোবাসা ছিলো না। শারীরিক চাহিদা….”

” শ্যাট আপ তরী। তখন থেকে কি বাজে কথা বলে যাচ্ছো? তুমি যেটা দেখেছো ঠিক আছে কিন্তু তুমি এর পিছনে থাকা কথা জানো না। আর রিহা আপাই এমন স্বভাবের। কথা বলতে বলতে গায়ে এসে পড়ে। আর তুমি কি-না। আর এই নিহান চাইলে শরীরের অভাব হয় না বুঝলে।””

যতটা তেজ নিয়ে আমি নিহানকে কথা গুলো বলছিলাম তার থেকে বেশি রাগ নিয়ে নিহান আমাকে কথা গুলো বললো। নিহানের দিকে তাকিয়ে যেই সাহস সঞ্চার করেছিলাম তা মূহুর্তে শেষ হয়ে গেলো। চোখে রাগের আভাস। এই চোখে তাকালে বরাবর নিজের প্রতিচ্ছবি, আমাকে একটু কাছে পাওয়ার নেশা দেখতে পারতাম কিন্তু আজ সে-ই চোখ রাগ, ক্রুধ ছাড়া আর কিছুই নেই। বেশি সময় আর দাঁড়িয়ে থাকলো না নিহান। স্থান ত্যাগ করে চলে গেলো আর আমি অশ্রু ভেজা চোখে সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর যাওয়া দেখলাম।

🍁🍁🍁🍁

দু’টো চেয়ারে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে আয়ান এবং অরিত্র। দুজনের সামনেই গরম ধোঁয়া ওঠা কফি। ফ্লাইটের এখনো অনেক সময় বাকি আছি। কিন্তু আয়ান অরিত্রিকে নিয়ে আগেই বের হয়ে এসেছে। আয়ানের ফ্লাইট যদিও আগে ছিল কিন্তু সামনে অরিত্রি থাকায় এবং অরিত্রির ফ্লাইট ঘন্টাখানেক পর তাই নিজেকেও পরের ফ্লাইটে যেতে হবে। দুজনের মাঝে পিন পিন নিরবতা। কারো মুখে কোনো কথা নেই। অরিত্রি গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর আয়ান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু অবলোকন করে যাচ্ছে।

” তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে অরিত্রি?”

ভ্রু কুঁচকে অরিত্রিকে প্রশ্ন করলো আয়ান। কিন্তু আয়ানের প্রশ্নের উত্তরের পরিবর্তে অমায়িক হাসি হাসলো। অরিত্রির হাসি দেখে কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো আয়ানের। এই হাসির প্রেমে সে পড়েছিল কিন্তু সে-ই প্রেমের পরিণতি তিক্ততা, প্রতিশোধ পরায়ণ, বন্ধুকে শত্রু করে তুলেছে। ভালোবাসা চাইলে কি না কি করে দিতে পারে।

” কি হলো তুমি হাসছো কেনো? তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে? বেঁচেই যখন আছো তাহলে নিজের মেয়ে, নিজের স্বামীর কাছে না গিয়ে এভাবে ঘুরে ফিরছো কেনো তুমি?”

” ভালো তো আমিও তোমাকে বাসতাম আয়ান।”

অরিত্রির একটা কথাতেই চুপ করে যায় আয়ান। ভালোবাসা? যদি ভালোবাসতো তাহলে কি করে নিজের প্রাক্তনকে বিয়ে করে নিলো?

“তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দেওনি অরিত্রি। এই মৃত্যুর মিথ্যে মিথ্যে নাটক কেন করলে? নিহানের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা তো আমি দেখেছি। আর তুমি এতো গুলো দিন কোথায় ছিলে বলো?”

” তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নয় আয়ান। সময় হলে সব কিছু জানতে পারবে। এতো দিন পর তোমার কাছে এসেছি কোথায় একটু ভালোবাসবে তা না। শুধু প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করেই যাচ্ছো। তুমি কি আমাকে দেখে খুশি হওনি আয়ান? আমি যে বেঁচে আছি, তোমার অরি বেঁচে আছে এতে তুমি খুশি না আয়ান?”

অরিত্রির শেষ প্রশ্ন শুনে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো আয়ান। খুশি হবে কি করে সে? নিজে যাকে মেরে ফেলার সব কিছু করেছিলো সে কি করে বেঁচে আছে সেই বুঝ আসছে না।

” খুশি হবো না কেনো? আমি অনেক খুশি হয়েছি অরি। আসলে তোমাকে হসপিটাল থেকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তোমাকে শরীয়ত মোতাবেক কবর ও দেওয়া হয়েছে তাই একটু অবাক হয়েছি। কিন্তু তুমি জানো অরি আমার কেনো জানি বিশ্বাস ছিলো তুমি বেঁচে আছো। আমার অরি কখনো মরতেই পারে না। আমার অরি বেঁচে আছে এইটা আমার বিশ্বাস ছিল।আর-আর দেখো আমার বিশ্বাস সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তুমি আমার সামনে বসে আছো।”

নিজের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় অরিত্রির নরম তুলতুলে হাত নিয়ে কথা গুলো বললো আয়ান। চোখে অশ্রু! সে-ই অশ্রু দেখে তাচ্ছিল্য হাসি হাসলো অরিত্রি।

” এবার চলো! ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে।”

আয়ানের হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত বের করে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু আয়ান তখনো অরিত্রির দিকে তাকিয়ে আছে।

” চিন্তা করতে হবে না আমি নিজেই বিল পে করে দিচ্ছি। তুমি তো বরাবর খালি পকেটেই চলতে। এবারো আমি বিল পে করে দিবো।”

আয়ানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে স্থান ত্যাগ করলো অরিত্রি। আয়ান অরিত্রির যাওয়ার পথে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ফোন বের করে কাউকে ছোট একটা মেসেজ করে উঠে দাঁড়ালো।

” আগে যদিও তুমি বেঁচে ফিরেছো কিন্তু এবার আর ফিরবে না অরি। যাচ্ছো তুমি নিজের ইচ্ছায় কিন্তু তুমি আর ফিরবে না। তুমি তো দুনিয়ার চোখে সে-ই কবেই মরে গেছো এবার সত্যি সত্যি তোমার মৃত্যু নিশ্চিত।”

মনে মনে কথা গুলো বলে আয়ান নিজেও টেবিল ছেড়ে চলে গেলো।

🍁🍁🍁🍁

” এই হাত আমি ছাড়ছি না। এই যে ধরেছি আর কখনো ছাড়বো না। যদি মৃত্যুও আসে তবুও এই হাত আমি ছাড়বো না।”

#চলবে

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:২৬
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

মন খারাপের কোনো দিক হয় না। আর না তো হয় কোনো কারণ। কিন্তু মাঝে মাঝে দুঃখের অনেক কারণ হয়। কখনো, কখনো আমাদের ছোট ছোট জিনিস গুলো অনেক কষ্ট দেয়, অনেক পোড়ায় আবার কখনো কখনো মনে করিয়ে দেয় এই কষ্টের থেকে হয়তো মরণও অনেক সহজ। আবার তো কখনো কখনো দেখা যায় অনেক বড়ো বড়ো আঘাতেও কষ্ট পায় না। হেসে খেলে সে-ই কষ্ট, দুঃখ অতিক্রম করে। কিন্তু প্রিয় মানুষ বা আপন জনদের থেকে পাওয়া কষ্ট, দুঃখ গুলো যেনো হাজার কষ্ট দুঃখ ফিকে পড়ে যায়। তেমনি নিহান এখন যেই কথা গুলোর সম্মুখীন হয়েছে তা হয়তো তরী সব কিছু না জেনেই বলেছে কিন্তু যখন বললো শারীরিক চাহিদা মেটাতে কাছে আসে সেই কথাটা কেনো যেনো বারবার নিহানকে ভিতরে ভিতরে কুড়াচ্ছে।‌

” আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি সত্যি মিথ্যে কিছু না জেনেই আপনাকে বাজে কথা বলেছি। প্লিজ আমার এই ভুল ক্ষমা করে দিন। আমি আমি আর কখনো সত্যি মিথ্যে না জেনে এমন করবো না।”

আকাশের দিকে এক মনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো নিহান। চাঁদের আলো কেমন পানিতে পড়ায় সুন্দর লাগছে। কিন্তু সেদিকে না তাকিয়ে অন্ধকারে কিছু হাতড়ে চলেছে নিহান। এরই মাঝে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললাম।

” উহু! একদম নড়াচড়া করবেন না। এই হাত আমি ছাড়ছি না। এই যে ধরেছি আর কখনো ছাড়বো না। যদি মৃত্যুও আসে তবুও এই হাত আমি ছাড়বো না।”

বুকে থেকে হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে স্থান ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল নিহান। কিন্তু বুক থেকে আমার হাত সরিয়ে দিতে পাশে গিয়ে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাত তলিয়ে দিয়ে কথা গুলো বললাম।

” ঘৃণা কাকে করে জানো তরী?”

কথাটা বলেই আমার দিকে তাকালো নিহান। কিন্তু সে-ই দৃষ্টি বেশি সময় স্থানীয় করলো না। দৃষ্টি সরিয়ে আবারো অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো। এই দিকে আমি এখনো নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি উত্তরের অপেক্ষায়।

” তরী আমার উপর তোমার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। আমি চাই আগে তোমার বিশ্বাস অর্জন করি, ভালোবাসি তার পর না হয় তোমার নরম হাতের ভাঁজে আমার হাত থাকবে? আমি যত দিন না তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারছি ততদিন আমাদের কাছে না আসায় ভালো তরী। যে কোনো সম্পর্ককে এক সুতোয় বেঁধে থাকে শুধু মাত্র বিশ্বাস আর ভালোবাসা দিয়ে তরী। যেই সম্পর্কে বিশ্বাস আর ভালোবাসা নেই সে-ই সম্পর্ক খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়। সম্পর্কে যত বেশি বিশ্বাস, ভালোবাসা থাকবে তত বেশি সেই সম্পর্ক মজবুত থাকবে। আর! আর একটা কথা জানো তরী? আজ তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখতে পেরেছি তরী। আমরা ঘৃণা তাকেই করি যে আমাদের সাথে খারাপ কিছু করেছে বা ঘৃণিত কাজ করেছে। আর আমি তো তোমার সাথে ঘৃণিত কাজ করেছিই। আর একটা কথা বলি, আমি আমার জীবন থেকে কোনো কিছু হারাতে চাই না। তাই আমি আগে তোমার বিশ্বাস আগের মতো অর্জন করি, আমার ভালোবাসা তোমাকে উপলব্ধি করায়, তুমি আমাকে আবারো আগের মতো ভালোবাসো, বিশ্বাস করে এই হাতের ভাঁজে হাত রাখো। এর আগে আমি আর কিছু চাইছি না।”

কথা গুলো বলে হাতের ভাঁজ থেকে হাত বের করে রুমের দিকে চলে গেলো। ঘৃণা! তাও আবার সে-ই মানুষকে যাকে আমি ভালোবাসি? যেই মানুষটিকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম মনের মাঝে এক অজানা ঝড় সৃষ্টি হয়েছিল সেই মানুষকে ঘৃণা? আমার অষ্টাদশী বয়সে প্রথম ভালোবাসার ফুল সৃষ্টি করা ব্যক্তিকে আমি কি ভাবে ঘৃণা করি?

“আপনি আমাকে ভুল বুঝলেন নিহান। আমি আপনাকে যে অসম্ভব ভাবে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে কি ভাবে ঘৃণা করে নিহান? আপনি আমার সে-ই অনাকাঙ্খিত পাওয়া যাকে আমি প্রতিদিন, প্রতিবার নানান ভাবে নিজের স্বপ্নে সাজিয়ে এসেছি। একটু একটু করে হৃদয়মাঝারে গড়া তোলা আমার প্রতিটি অনুভূতি গুলোকে আমি কি করে ঘৃণা করি? নিজের ভাগ্যের উপর আমি বরাবরই হেরে গিয়েছি নিহান। আপনাকে তো আমি কখনো পাবো এইটা আশা করিনি নিহান। আপনাকে ভুলে গিয়ে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চলেছিলাম কিন্তু দেখুন আল্লাহ হয়তো আমার ভাগ্যে আপনাকে রেখেছিল। এতো কিছুর পরেও আপনাকে আমি পেয়ে গেছি। কিন্তু আমি যে আপনাকে ঘৃণা করি না আমি আপনাকে ভালোবাসি নিহান। ভালোবাসি! আমি কি করে বোঝাই আপনাকে যে, ঐ মূহুর্তে আমার ভিতরে কি ঝড় বয়ে চলেছিল। আপনার আর মেয়েটির হেসে হেসে কথা বলা, একে অপরের উপর ঢলে পড়া, আর আপনি যে মেয়েটির চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়েছেন সেই ছবি গুলো আমাকে কি পরিমাণে অশান্ত করে তুলেছিল নিহান। আমি আপনাকে ঘৃণা করতে পারি না নিহান। পারি না আমি ঘৃণা করতে।”

কান্না করতে করতে সেখানে বসে গিয়ে কথা গুলো বললাম। কিন্তু আমার কথা গুলো যে এই দাম্ভিক মানুষটার কান পর্যন্ত পৌঁছল না। কখনো কি আমার না বলা কথা গুলো নিহান বুঝতে পারবে না? ভালোবাসা না কি চোখে ভেসে উঠে। কোথায় নিহান তো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারলো না। তাহলে কি কথাটা ভুল? না কি নিহান আমাকে দেখিনি? আচ্ছা নিহান কি আমাকে একটু পড়তে পারে না? আমি চাই নিহান আপনি আমার না বলা প্রতিটি কথা শুনোন। আমার ভালোবাসা গুলো বুঝোন।

🍁🍁🍁🍁

একটা রুমে ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছে আয়ান। তার সামনেই অরিত্রি একের পর এক গ্লাস শেষ করেছে। কিন্তু আয়ান নিজের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে বসে অরিত্রির খাওয়া দেখে যাচ্ছে। পাঁচ/ ছয় ঘণ্টা আগে রিসোর্টে এসেছে তারা। আয়ান শুধু অরিত্রির বদলে যাওয়া গুলো পরোক্ষ করছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এইটা অরিত্রি আবার কখনো কখনো মনে হয় এইটা অরিত্রি না। অরিত্রির মতো দেখতে অন্য কেউ। যদিও বলা আছে, পৃথিবীতে এখ রকম দেখতে চার জন মানুষ আছে। হয়তো তাদের মাঝে অরিত্রিও একজন। কিন্তু আয়ান শিউর না হয়ে কোনো স্টেপ নিতে পারছে না। আবার এইদিকে আয়ান শুধু নিজের একার জন্য রুম বুক করেছিল কিন্তু এখন অরিত্রিও এসে হাজির হয়েছে। যদিও আয়ান বলেছিল রুম নিতে অরিত্রি নিষেধ করেছে।

” তুমি আর ড্রিংকস নিও না অরি। তুমি তো নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছো। আর খেও না।”

অরিত্রির হাতে থাকা ড্রিংকসের গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে দিতে দিতে কথা গুলো বললো আয়ান। কিন্তু আয়ানের কথা শুনে শুধু হাসলো অরিত্রি, কিছু বললো না।

” ইউ নো হোয়াট আয়ান! এই নিহানের জন্য আমি সব কিছু হারিয়েছি। জীবিত থেকেও আমাকে মরতে হয়েছে। নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে এক মিথ্যে পরিচয় নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। আর তোমাকে দেখো! আমাকে দেখে তুমি কেমন ভুত দেখার মত শুধু তাকিয়ে থাকো।”

কথা গুলো বলে হাসতে লাগলো অরিত্রি।অরিত্রি যে এখন সম্পূর্ণ নেশায় আসক্ত হয়ে আছে যেটা অরিত্রির টালমাটাল হয়ে পড়ে যাওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই দিকে আয়ান এইটা ভেবে স্থির নিঃশ্বাস ফেললো যে, অরিত্রি সব কিছুর জন্য নিহানকে দোষী ভাবে।

“অরি আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেও তো।”

” কি বলো!”

আয়ানকে কথাটা বলে গ্লাসে আরেকটু ড্রিংকস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অরিত্রিকে উঠে দাঁড়াতে দেখে আয়ান নিজেও উঠে দাঁড়িয়ে অরিত্রির পিছনে দাঁড়াল।

” তুমি বেঁচে ফিরলে কী ভাবে? আর তুমি যদি বেঁচে ছিলেন তাহলে সিজার রুমে কে ছিলো? আর তুমি ভেবে কাকেই বা দাফন করা হয়েছে?”

অরিত্রিকে প্রশ্ন গুলো করেই উত্তরের আশায় অরিত্রির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল আয়ান। আয়ান প্রশ্ন করতে করতে অরিত্রি বিছানায় গিয়ে বসে পড়েছে।

” এইটা তো সিক্রেট আয়ান। সিক্রেট! ডঃ সেন! সেন…….

#চলবে