অবেলায় ভালোবাসি পর্ব-১৭+১৮

0
389

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১৭+১৮
পর্ব-১৭
“হাচ্ছু!”

নাক টেনে বারান্দায় তোয়ালে মেলে দিলো আয়ুশী।কিছুটা ঠাণ্ডা লেগেছে ওর।

“হেই আয়ু!”

“জি আপু?”

“এই নেও গরম গরম আদা চা,নাহলে ঠাণ্ডা ভালো করে লাগবে!”

“থ্যাংকস,বাট এত কষ্ট কেনো করলে?আমাকে বলতে!”

“আমার অতটাও লাগবে না,তোমরা বেশি পানিতে লাফালাফি করেছো।তোমাদের একটু বেশি প্রয়োজন!”

আয়ুশী হেসে চা টা নিলো।বারান্দার রেলিং এর উপর হাত দিয়ে চা খেতে লাগলো দুইজন!

“আচ্ছা আয়ুশী!”

“হুমম?”

“তোমার ফাহিনকে কেমন লাগে?”

“ভালোই তো!”

“বেশি ভালো?”

“মানুষটা ভালো খুব,আমার সব কিছুতে ভীষণ সাহায্য করেছে।”

“ওকে নিয়ে কি তোমার মনে কিছু হয়?”

আয়ুশী ইহরার দিকে তাকালো।ওর চোখে মুখে কৌতূহল!কেমন একটা অসহায়ত্বের ছাপ!

“কিছু কি হয়েছে আপু?”

ইহরা কেমন নার্ভাস হলো।তারপর হেসে বললো,”না আসলে তোমার আর ওর বন্ডিংটা অনেকটা ক্লোজ!তাই একটু আরকি!”

“আছে তো অনেক কিছুই!”

ইহরা মলিন হাসলো।

“সত্যি?”

“হুমম!একজন ভালো বন্ধু হিসেবে!”

“বন্ধু?”

“হুমম ,বন্ধু! ফাহিন ভাইয়া,শুরু থেকেই আমাকে সব রকমের সাহায্য করেছে।এমনকি এখনও আমি যাতে মা বাবা কে মনে করে কষ্ট না পাই তাই আমাকে হাসানোর দায়িত্ব নিয়েছে।এজ আ ফ্রেন্ড সে খুবই ভালো মানুষ!আর তাকে আমি একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই মানি…অন্য কিছু নয়!”

“তুমি ওকে বন্ধু ভাবো,কিন্তু ও তো তোমাকে বন্ধু নাও ভাবতে পারে!তাই না?”

“আমাদের মেয়েদের একটা স্পেশাল গুন আছে।কোন ছেলে তাকে তাকে কি নজরে দেখছে তা অল্প সময়েই ধরে ফেলতে পারে। ফাহিন ভাইয়ার মাঝে কখনো এমনটা লক্ষ করিনি আমি!যদিও এটা সব ক্ষেত্রে ফলে না!”

“কেনো?”

“মেয়েদের এই সিক্সেন্স সব সময় আবার সত্য নাও হতে পারে।কারণ অনেক সময় কেউ আমাদের প্রতি দায়িত্ব আর মানবিকতা নিয়ে কাছে আসলে সেটাকে তাদের আবেগী মন ভালোবাসা হিসেব ধরে ফেলে!”

“বুঝলাম না ঠিক!”

আয়ুশী মলিন হেসে বললো,”একজনকে ভালোবাসতাম, বাসিও!জানো তার কথা বার্তা,আমাকে নিয়ে উতলা হাওয়া,আমার জন্য চিন্তা করা সব কিছু দেখে ভেবেছিলাম সে ভালোবাসে আমায়!যখন মনের কথা তাকে জানালাম,সে বললো…এগুলো কেবল দায়িত্ব আর মানবিকতা!কোনো ভালোবাসা নয়!শুধু দায়িত্ব আর মানবিকতার খাতিরে এসব করা!”

“সেদিন যখন জিজ্ঞেস করলাম কাউকে ভালোবাসো কিনা!বললে না কেনো?আর কে সে?”

আয়ুশী আবার হেসে বললো,”তোমার শেষের প্রশ্নের জন্য বলতে চাইনি!”

ইহরা মুখ ভার করে বললো,”ওহ আমাকে বলতে চাও না তুমি ,তাই তো?”

আয়ুশী ইহরার হাত মুঠোয় নিল,”এমনটা নয়,তুমি প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে নিজের বোনের মতো ভেবে সবটা বলে গেছো।আমি চাইলে বলতেই পারি।কিন্তু বর্তমানের মাঝে অতীত আনতে চাচ্ছি না!যেই অধ্যায় কখনো শুরু হওয়ারই ছিল না,সে অধ্যায়কে আর ঘাটতে চাই না!যে অধ্যায়ে সে আমার নয়,সেই অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি করলে নিজের সাথে বেই’মানি করা হবে!”

“ইসস,ছেলেটার জন্য মায়া হচ্ছে!”

“কেনো?”

“তোমার মত মিষ্টি মেয়েকে হারিয়ে ফেললো!”

আয়ুশী মৃদু হেসে বলল,”হয়তো ওর জীবনে তোমার মত বেশি মিষ্টি মেয়ে আছে বলেই হারিয়ে ফেললো!”

ইহরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আয়ুশীর এই কথা কি কোনো ইঙ্গিত?নাকি ওর মনের ভুল ধারণা!আর কিছু বলতে যাবে ,তার আগেই খেতে যাওয়ার ডাক পড়লো!দুইজন নিচে গেলো।

__________________________________

“বাবা ,নেও তোমার ওষুধ!”

সীমা তার বাবার দিকে ওষুধ বাড়িয়ে দিল!তিনি কোনপ্রকার ভনিতা না করেই নিলেন!
“কিছু হয়েছে বাবা?”

সীমার বাবা একটু হাসার চেষ্টা করে বললেন,”কি হবে রে মা?”

“তাহলে এমন মুখ ভার করে আছো কেন?”

তিনি দীর্ঘশ্বাস নিলেন ।

“অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে কেমন লাগে রে মা?”

বুক মোচড় দিয়ে উঠলো সীমার!

“এসব কেনো বলছো?”

“এতদিন তোর বোঝা হয়ে ছিলাম,আজ তোর মামার!এই শারীরিক প্রতি’বন্ধী মানুষটাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবি রে মা?”

সীমা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো!
“হুশ,এসব কি বলছো?আমি আছি তো?আর কয়েকটা বছর!পড়াশোনাটা শেষ হতে দেও,তখন নিজে জব করবো!তারপর আর মামাকে আমাদের ভরণপোষণ করতে হবে না!আর মামা তো আমাদের ভালোবেসে দিচ্ছে।আমি চেষ্টা করেও মানাতে পারলাম না তাকে!”

“তোর মামা তোর মায়ের মতই ভালো!”

“হুমম,এবার ঘুমাও!এসব ভেবো না।”,বলেই বাবাকে শুইয়ে দিল ও।বেরিয়ে নিজের রুমে যেতেই দেখলো নাহিম ওর বিছানায় বসে ফোন গুতাচ্ছে!

“ভাইয়া আপনি?”

নাহিম তাকালো না!

“ভাইয়া?”

তাও নিরুত্তর!
“ব’য়রা নাকি?”

“কি বললি?”

“কখন থেকে ডাকছি ,শুনছেন না কেনো?”

“তুই তো তোর ভাইয়াকে ডাকছিলি,আমাকে কখন ডাকলি?”

“আজব,এই রুমে আপনি ছাড়া কে আছে?”

“তো নাম মেনসন করা উচিত ছিল!”

“হ্যাঁ,এখন সব দোষ তো আমার!যাক গে,এখানে এত রাতে কেনো?”

“রুমটা পছন্দ হয়েছে,সাজানো গোছানো!ভাবছি এই রুমে শিফট হবো!”

“মানে কি?এটা আমার রুম!আপনি আপনার রুমে যান!”

“কোথাও লেখা আছে?বা প্রমাণ আছে?”

“কিসের লেখা?কিসের প্রমাণ?”

“এইযে এটা তোর রুম!”

“উফফ,আপনি যাবেন?আমার সকালে ভার্সিটি আছে!”

“ভার্সিটি? আই সি!আচ্ছা ঘুমা!সকালে আমি দিয়ে আসবো।”

“ওমা,আপনি কেনো দিয়ে আসবেন?”

“তোর বান্ধবীদের একটু দেখবো আরকি, যাই হোক!তোর ভাই বলে কথা,একটা ভাবির ব্যাবস্থা করতে হবে না তোর জন্য?”

বলেই বেরিয়ে গেলো।সীমা বেকুব বনে গেলো!এই লোকের মাথার সিট খালি নাকি?

__________________________________
টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে ইভা!পড়ছে কম,ভাবছে বেশি!বাড়ি থেকে এখনও খবর আসেনি বিয়ে ভাঙার!হয়তো উনি এখনো ভাঙ্গে নি!তাতে ওর কি?নিজেই ভাঙবে!আর যাই হোক,এমন লোকের সাথে ও থাকতে পারবে না।প্রথম মিষ্টি মিষ্টি কথায় ভুলালো,এমন ভাবে নিজেকে জাহির করলো যেনো ওকে জান প্রান দিয়ে ভালোবাসে,আর যখন ও ভালোবাসলো তখন ব্যস্ততা, ইগনোরেন্স!প্রথমে কাজের চাপ ভাবলেও,সেদিনের ওই মেয়ের কলটা ওকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে।চোখের কোণে জমে আসা জল মুছে নিলো।সীমা আর আয়ুশীর কথা মনে হতেই মুখে হাসি ফুটলো!তিন বান্ধবীর মাঝে কিছু মিলুক আর না মিলুক,সব পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে স্বাভাবিক,আর কঠিন হতে জানে!ফোনের স্ক্রিন আবারও জ্বলে উঠলো।আবারও আরেক আননোন নাম্বার!সেদিনের পর জুনাইদকে সব কিছু থেকে সরিয়ে দিয়েছে। নাম্বারও ব্লকে,কিন্তু ও একের পর এক নাম্বার পাল্টে ওকে ফোন দিচ্ছে।বুঝতে পারলো না তার কারণ।হয়তো ফ্যামিলির কথা ভেবে ওকে মানাতে চাইবে!ফোন কেঁ’টে গিয়ে আবার বেজে উঠলো।এভাবে আরো কিছুক্ষন হলো।ইভার চোখ ছোট ছোট হয়ে গেলো।জুনাইদ ওকে কল দিচ্ছে,কিন্তু এক রিং হওয়ার সাথে সাথেই আবার কেঁ’টে ব্যাক করছে!বেশ বিরক্ত হলো।ইভা ফোন হাতে রিসিভ করতে যাবে,তখনই আবার কেঁ’টে গেলো।রেগে ফোন শব্দ করে টেবিলের উপর রাখলো।এবার ওত পেতে বসে রইলো,কখন ফোন আসবে আর ও রিসিভ করবে।ঠিক সেই সময় ফোন এলো।আর ইভা খট করে রিসিভ করে নিলো।মুখে বিশ্বজয়ের হাসি!যেনো এতে চরম তৃপ্তি পেয়েছে।ফোনের ভিতরে হাসির আওয়াজ শুনতেই ফোন কানে নিলো!

“পাকদাম পাকদাই খেলা শেষ?”

“মানে?”

“এই যে,ফোন রিসিভ করতে গিয়ে…”

“এরকম উদ্ভট ভাবে ফোন দিচ্ছেন কেনো?বিরক্ত হয়ে রিসিভ করেছি!অন্য কোনো কারণ বের করবেন না!আর এভাবে কল দেয়ার মানে কি? ওহ,আপনি এটা প্রমাণ করতে চাইছেন যে আপনি আমাকে অনেক ফোন দিয়েছেন,কিন্তু আমি ধরিনি!সবাইকে এটা বলবেন,দোষ আমার!এরপর অটোমেটিক বিয়ে ভাঙবে ,তাই না?”

“হোয়াট ননসেন্স!কি বলছো এসব?”

“আরে স্বীকার করে নিন!আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না,আমি নিজেই সব ব্যাবস্থা করবো!”

“ইভা আমার কথাটা একটু শুনো!এক্সপ্লেইন করতে তো দেও?”

“রাত বিরেতে একটা মেয়েকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন কেনো?আপনি এসব বন্ধ করুন,নয়তো আমি…”

“কি?কি করবে?”

“আব..কি করবো?আমি…কি করা যায়?ও হ্যাঁ!নাম্বার পাল্টে ফেলবো!”

“আবার নাম্বার খুঁজে ফোন দিবো!”

“ফোন ইউজ বন্ধ করে দিবো!”

“হোস্টেলের অ্যাড্রেস আছে আমার কাছে?”

“চাইছেন টা কি?”

“তোমাকে!”

ইভা ফোন রেখে দিল, আলতু ফালতু কথা শোনার টাইম ওর নেই!টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লো!

__________________________________
পরের দিন সকালে!

“আয়ুশী!”

ভার্সিটিতে ঢুকতে যাবে এমন সময় কারোর ডাক শুনে পিছে তাকালো আয়ুশী।আয়ানের সাথেই এসেছে ও। আয়ান পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি পার্ক করতে গিয়েছে।ছেলেটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ও।
“আপনি…”

“আরে আমায় চিনলেন না?আমি ওই যে স্টুডেন্টের চাচ্চু!”

“সেটা ঠিক আছে!আপনি এখানে?”

ছেলেটি ইতস্তত করে বললো,”কিছু কথা ছিল আপনার সাথে?”

“কি কথা?”

“প্লিজ কিছু মনে করবেন না,কিন্তু না বলে থাকতেও পারছি না!”

“বলুন!”

“আপনি আমার নাম জানেন?”

আয়ুশী হতভম্ভ।দাতে দাত চেপে বললো,”আপনি এই কথা বলতে এসেছেন?মশকরা করছেন?”

“আরে না না!বলেন না!জানেন নাকি?”

“আরে ভাই,আমি আপনার নাম জেনে কি করবো?”

“বেশ এবার তাহলে শুনুন!”

“আমার আপনার নাম শুনার কোনো ইন্টারেস্ট নাই রে ভাই!”

“আরে একটু শুনুন তো!”

“ভাই অন্য কথা থাকলে বলুন তো!”

“সেই জন্যই তো শুনতে হবে!”

“ধুর!”

“বইন ,একটাবার শুনেন!”

ছেলেটির অসহায় কণ্ঠ আর কাঁদো স্বর শুনে আয়ুশীর হাসি পেলো!

“আচ্ছা বলেন!”

পার্কিং এরিয়া থেকে এসে আয়ুশীকে গেটের কাছে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ান ওর কাছে যেতে লাগলো।কিছুদূর যেতেই বুঝলো ও কোনো ছেলের সাথে কথা বলছে।বেশ হেসে হেসে।মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।আরো কাছে যেতেই শুনতে পেলো, আয়ুশী হেসে হেসে বলছে,”আপনি চিন্তা করবেন না,আমি আপনার পাশে আছি!”

ছেলেটিও হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলো।আয়ুশী আবার ভার্সিটি তে ঢুকতে যাবে তখনই আয়ান বল উঠলো,”এইজন্য বুঝি ভার্সিটি আমার সাথে আসতে চাও না?”

“মানে?”

আয়ান ওর পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল,”বয়ফ্রেন্ডের সাথে পিরিত করতে পারবেনা!তাই তো আসতে চাও না!রাইট?”

“কখন থেকে কি যা তা বলছেন?”

“ভুল কি বললাম?বয়ফ্রেন্ডের পাশে সব সময় থাকতেই পারো! এটা তোমার ব্যাপার!”

“কোন বক্তা যেনো বলেছিল মেয়েরা এক লাইন বেশি বোঝে!”

“তো কি হয়েছে?”

“সে বলতে হয়তো ভুলে গিয়েছিল,ছেলেরা তার থেকেও চার লাইন বেশি বোঝে!”

“কি বললে তুমি?”

“যা শুনলেন!”

“তোমাকে আমি…”

“স্যার!এটা ভার্সিটি!”

আয়ান আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই আড়চোখে ওদের দেখছে!ফিস ফিস করে বললো,”বাসায় যেয়ে নেই!খবর হচ্ছে তোমার!”

“ওকে!”

আয়ান বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।আয়ুশী তখন হেসে দিলো!মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটা ওকে নিয়ে জেলাস!কিন্তু পরক্ষণেই সেই ভাবনা মুছে যায়!দায়িত্ব নিয়ে কেউ জেলাস হয় নাকি আবার!ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ও!অদ্ভুত চক্রে ঘুরছে ও,কখনো ওর মনে হয় লোকটা ওকেই ভালোবাসে!আবার কখনো মনে হয় সবটাই দায়িত্ব!

#চলবে

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১৮

নিজের সিটে বসতেই আয়ুশী দেখলো সীমা একধ্যানে ইভার দিকে তাকিয়ে আছে।আর ইভা আনমনে বইয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ুশী সীমার কানে ফিস ফিস করে বললো, “এভাবে কি দেখছিস?”

“বুঝার চেষ্টা করছি।”

“কি?”

“ইভা ছ্যাকা ট্যাকা খেলো নাকি?”

“মানে?”

“না মানে আসার পর থেকে দেখছি বই উল্টো করে কি যেনো দেখেই যাচ্ছে। কিন্তু সেটাও সূচীপত্রের পেজ। আমি যে তাকিয়ে আছি সেটাও ওর খেয়ালে নেই। কিছুই বুঝলাম না !”

“ব্রেকআপ হয়েছে। ”

সীমা চমকে গিয়ে বললো, ” ইভার রিলেশন ছিলো?”

“আরে রিলেশন কেন থাকবে?”

“তাহলে ব্রেক আপ কিসের ?”

“রিলেশন ছাড়া ওর কি আছে ?”

“কি?”

“উফফ!বিয়ে…”

“ওর বিয়ে ভেঙে গেছে ?” ,মৃদু চিৎকার করে বললো সীমা। ইভার কানে আওয়াজ গেলেও ওর কানে কথার বুলি যাচ্ছে না।

“আরে কচু, না! একটু আগে জুনাইদ ভাইয়া এসেছিল!”

সীমা লাফিয়ে বলে উঠলো, “ইভার ফিয়ন্সে? ”
“হুমম!”

“কেনো?”

“শুন তাহলে!”

__________________________________
“আমি জুনাইদ নীরব?”

“তো আমি কি করবো?”

জুনাইদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।ওর আগেই বোঝা উচিত ছিল ইভার বান্ধবী ইভার মতোই হবে!

“ইভার ফিয়ন্সে!”

চোখ বড় বড় করে তাকালো আয়ুশী ।

“সিরিয়াসলি?”

“জি!”

“ওহ…আপনি নিশ্চয়ই ইভাকে খুঁজছেন?দাড়ান,আমি ওকে ডেকে আনি!”

“আরে না না,দাড়ান প্লিজ!”

“কি হলো?”

“আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে আমাদের মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছে!”

জুনাইদ আয়ুশীকে সব খুলে বললো।

“এখন আপনারর একটু হেল্প লাগবে!কোনো ভাবে ওকে একবার কথা বলতে ম্যানেজ করে দিবেন প্লিজ?”

“বেশ,চিন্তা করবেন না!আমি সবসময় পাশে আছি আপনার!”

__________________________________
“ওহো,তাহলে এই ব্যাপার!”

তখনই কিছু মেয়ে এলো।এদের সীমা সহ্য করতে পারেনা।কয়েকদিন ক্লাস মিস যাওয়ায় ওদের কাছে নোট চেয়েছিল!কিন্তু না দিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে অপমান করেছিল!সেই থেকে দুই চক্ষে সহ্য হয় না ওদের!

“হাই সীমা!”

সীমা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!আজকে এত ভালো ব্যাবহার!

“বাবা,সূর্য কোন দিকে উঠেছে রে আয়ু?”

আয়ুশী ফিক করে হেসে দিল।ইভা এবার ওদের দিকে তাকালো।

“বারে,এভাবে বলছো কেনো?”(প্রথম মেয়ে)

“না না,বলো বলো! তো হটাৎ আমাদের কাছে কেনো?”

মেয়েগুলো যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।ঝটপট ওদের সামনের সিটে বসে গেলো!

“তোমার সাথে ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটা কে ছিল?”

সীমা এতক্ষণে বুঝতে পারলো।আজ নাহিমের সাথে এসেছে ও।

“কেনো?”

“না মানে এমনি!বলো না!”

“কাজিন!”

“ওহ,কি করে?”

সীমা চওড়া হেসে বললো,”বউ বাচ্চা সামলায়!”

ইভা চোখ বড় বড় করে ফেললো।ওর জানামতে নাহিম এখনও অবিবাহিত!

“কি বলছো কি?বিবাহিত?”

“হ্যাঁ,দুইবছর হলো বিয়ে হয়েছে!দুইটা বাচ্চাও আছে!”

আয়ুশী ঠোঁট চেপে হাসলো মেয়েদের অবস্থা দেখে!বোঝাই যাচ্ছে অনেক বড় ঝটকা লেগেছে!ব্যাগ থেকে পানি বের করে মুখে নিলো ও।তখনই মেয়েটি ওকে বলে উঠলো,”আয়ুশী,তুমি আর আয়ান স্যার কি ভাই বোন?”

ফুস করে মুখের সব পানি সামনের মেয়েটির গায়ে ফেলে দিল।মেয়েটি নাক ছিটকে উঠে দাড়ালো।আয়ুশীর নাকে মুখে পানি উঠে গেছে! কাশতে লাগলো ও!

“ইয়াক!এটা কি করলে?”

আয়ুশী কাশতে ব্যাস্ত!

“তুমি এটা কি প্রশ্ন করলে?”(সীমা)

“ওকে দেখলাম স্যারের সাথে আসতে,আবার নামেও দেখলাম মিল!ভাবলাম ভাই বোন হবে!”

“ভাবনা গুলো তে একটু তালা মেরো বোন!স্যার হয়…তোমাদের ভাই হলেও ওর ভাই না!”

আয়ুশী সীমার পেটে কুনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।মেয়েটি না বুঝে বললো,”মানে?”

ইভা সামাল দিতে বললো,”আসলে স্যারের বাবা আর আয়ুশীর বাবা একে অপরের বন্ধু!সেই সূত্রেই ওরা চিনা পরিচিত!আর আসা যাওয়া!”

“ওহ!”

মেয়েটি আরো কিছু বলতে নিলেও ক্লাস শুরু হওয়ায় চলে গেলো!

__________________________________

রাস্তার এক পাশে স্কুটি নিয়ে বসে আছে ইহরা।টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে!এখন এতটা পথ ও কিভাবে যাবে?আর মেকানিক এর দোকান কোথায়..কোন দিকে ঐটাও জানে না!বান্ধবীর সাথে ঘুরতে বের হয়েছিল!ওকে বাসায় দিয়ে নিজের বাসার দিকে যাচ্ছিল ও!বান্ধবীর বাসা ওর বাসা থেকে অনেক দূর!কি করবে ভেবে না পেয়ে স্কুটির পাশেই ঠোঁট উল্টে বসে রইলো।

“ফকিরের মত রাস্তায় বসে আছো কেনো?”

কারো কর্কশ কন্ঠে মাথা তুলে তাকালো ইহরা! ফাহিনকে দেখে চমকালো!

“আপনি?”

“ছি ছি,তোমার ভিক্ষা করার এত শখ?”

ভরকে গেলো ও!

“আরে কি বলছেন?”

“রাস্তার মাঝে বসে বলছো কি বলছি?”

ইহরা উঠে দাড়ালো!

“রাস্তার মাঝে না,এক সাইডে!কি করবো আমি? স্কুটির টায়ারের হাওয়া ফুস!এখন মেকানিক কই পাবো?আর এত দূর কি স্কুটি ঠেলে নিয়ে যাবো?”

“রিকশা নিয়ে নিতে!”

ইহরা বুকে হাত গুজে বললো,”আর স্কুটিটা তো উড়ে উড়ে বাড়ি চলে যেতো রাইট?”

“মাথায় ঘিলু থাকলে এখানে থাকতে না!”

“কি বললেন?”

“সামনেই মেকানিকের দোকান!একটু হাঁটলেই হতো!”

“আমি কি জানি নাকি?না থাকলে কি হতো?”

“না থাকলে যতদূর হাঁটতে পারতে হাঁটতে,তারপর পা ব্যাথা হয়ে গেলে ওখানে বসতে!রেস্ট নেয়া শেষ হলে আবার হাঁটতে!”

“ধুর,আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!বাই দা ওয়ে,আপনি এখানে কেনো?”

“তোমাকে ফকির ভেবে সাহায্য করতে আসলাম!”

“আজব!”

“ডাক্তার আমি!কোনো বেকার না!কাজে আসতেই পারি!”

বলে স্কুটি ঠেলে সামনে নিতে লাগলো।

“স্কুটি নিয়ে কই যান!”

“বিক্রি করতে!”

ইহরা বিড়বিড় করে বললো,”অসহ্য!”

মেকানিকের দোকানে স্কুটির টায়ার বদলে বেরিয়ে এলো ওরা! ফাহিন যেতে নিলেই ইহরা বলে উঠে,”আপনি কোথায় যান!”

“বাসায়!”

“গাড়ি এনেছেন?”

“না!রিকশা নিয়ে নিবো!”

“আব….আমার সাথে যেতে পারেন!”

“লাগবে না!”

বলেই বেরিয়ে গেলো দোকান থেকে।ইহরাও পিছু পিছু বের হলো।

“এই ভর দুপুরে রিকশা এখানে আসবে না!”

“কে বলেছে তোমায়?”

“গত ত্রিশ মিনিট এখানে বসে ছিলাম!একটা রিকশাও আসেনি!”

ফাহিন চিন্তিত হলো।

“স্কুটি বেটার অপশন!”

“ড্রাইভ আমি করবো!”

“ওকে!”

মনে মনে খুশি হলো ইহরা!কিছুক্ষণের জন্য না হয় একসাথে থাকলো!

“এখানে কি কাজে এসেছিলে?”

স্কুটি চালাতে চালাতে বললো ফাহিন!

“বান্ধবীর সাথে দেখা করতে!দেশে আসার পর দেখা হয়নি!তাই…সাথে একটু ঘুরলাম!”

“আমি না থাকলে তো ওই মাঝ রাস্তাতেই বসে থাকতে!”

“ছিলেন তো!”

“সারাজীবন তো আর থাকবো না!”

মুখ চুপসে গেলো ইহরার! ফাহিন ব্যাক মিরোরে তা দেখলো!

“তুমি চাইলেই সারাজীবন থাকা সম্ভব ছিল!”

মুখ ঘুরিয়ে নিলো ইহরা!চোখের কোণে পানি আসতেই মুছে নিলো! ও নিরুপায়! ফাহিন আর কিছুই বললো না!
__________________________________

কেঁটে গেলো বেশ কিছুদিন!নিজের ব্যাবসার কাজ শুরুর জন্য কিছুটা ব্যাস্ত সময় কাটছে আয়ানের!ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে আসতেই নিজের মাকে বিচলিত অবস্থায় ইহরার কাঁধে মাথা রাখতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো ওর।দৌড়ে মায়ের কাছে গেলো।

“মা কি হয়েছে তোমার?”

নাহার কথা বলতে পারছেন না।

“আয়ান ,আয়ুশী এখনও ফিরেনি!”(ইহরা)

“ফিরেনি মানে?”

“ও টিউশনি করে,একই বাসার দুই স্টুডেন্ট!সামনে ওদের পরীক্ষা।তাই বলেছে আজ সাড়ে ছয়টা বাজবে আসতে আসতে! সাড়ে ছয়টা বাজলেও আয়ুশীর আসার কোনো খবর নেই! সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম!তাও আসেনি…ফোন দিতেই দেখি সুইচড অফ! ফাহিন ভাইয়াকে ওই বাসার অ্যাড্রেস দিলাম!কিন্তু ওখানে গিয়ে উনি শুনলেন আয়ুশী ছয়টায় বেরিয়ে গেছিলো! ফাহিন ভাইয়া অনেক জায়গায় খুঁজেছে!এখনও খুঁজছে…কিন্তু পেলো না!”

আয়ান ঘড়িতে সময় দেখলো।রাত সাড়ে নয়টা!মানে সাড়ে তিন ঘণ্টা যাবৎ আয়ুশী মিসিং!

“আমাকে ফোন করলে না কেনো?”

“তোমার ফোন আনরিচেবল ছিল!”

“মা ,তুমি চিন্তা করো না ! ও ঠিক এসে যাবে…”

বলেই বেরিয়ে গেলো। ফাহিনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোথায় কোথায় খুঁজেছে!আয়ুশীর সকল পরিচিত জায়গায় গিয়েছে ও!কিন্তু পায়নি ওকে! আয়ান ওই বাড়ির দিকে গেলো। ওখান থেকে শুরু করে ওর বাড়িতে আসার সকল রাস্তায় ঘুরলো!আয়ুশীর কোনো চিহ্ন পেলো না।আয়ুশী যেতে পারে সব জায়গায় খোঁজা শেষ!আর কি করবে ভেবে না পেয়ে বাইকে হেলান দিয়ে বসে চুল খামচে ধরলো!আয়ুশীর লাস্ট লোকেশন স্টুডেন্ট এর বাড়ি থেকে একটু দূরে ছিল।এরপর ফোন অফ!

“কোথায় তুমি আয়ুশী?কেনো বারবার এমনটা করো! আই সোয়ার,একবার পেলে তোমায় আস্ত রাখবো না!বার বার কেনো চিন্তায় ফেলো আমাদের!কেনো…..”

বিচলিত হয়ে ওখানেই বসে রইলো ও!পুলিশ কেস করবে ভেবে ফাহিনকে কল দিল!

“থানায় ডাইরি কর!আমার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হয়েছে?”

“ওকে!”

বলেই রেখে দিল!চোখ বন্ধ করে বসে আছে ও!মুহূর্তেই ভেসে উঠলো ওর আর আয়ুশীর প্রথম দেখার স্মৃতি!ওর হাসি!হসপিটালে পড়ে যাওয়া!ভার্সিটিতে ওকে দেখে চমকানো!বার বার হোচট খাওয়া!নিজের ঘরে ওকে টাওয়াল পরে বের হতে দেখে ঘাবড়ে যাওয়া!সব শেষে কাঠগোলাপ কানে গুঁজে লজ্জা মাখা হাসির অধিকারিণী!না,চোখ খুললো না ও!ভাবতে ভালো লাগছে ওর….

“আই লাভ ইউ আয়ুশী!”

হেরে গেলো ওর সকল মিথ্যে অনুভূতি!পারলো না আর ইহরার জন্য মিথ্যে অনুভূতিকে সত্য করতে।কিন্তু মনের অজান্তেই সব অনুভূতি আয়ুশীর মাঝে সীমাবদ্ধ করে দিলো ও!জানে এ চরম অন্যায়!কিন্তু কি করবে ও?মন মস্তিষ্কের লড়াইয়ে মন যে জিতেও হেরে গেছে!

“কোথায় তুমি আয়ুশী?কোথায় খুজবো আমি আর?কোথায়?”

#চলবে